হারানো_সুর- ৬ষ্ঠ পর্ব ©শাহরিয়ার

0
4179

#হারানো_সুর- ৬ষ্ঠ পর্ব
©শাহরিয়ার

— মিহিকে নিয়ে প্রেমা সোজা নিজের রুমে চলে আসলো। মিহিকে নিয়ে বিছানায় শুয়ে পরলো। সারা রাত ঘুম হয়নি শরীর খুব দূর্বল লাগছে প্রেমার। চোখ বন্ধ করতেই এক সময় ঘুমিয়ে পরলো। এদিকে কিছু সময় শুয়ে দুষ্টমি করে একটা সময় মিহিও মায়ের বুকে ঘুমিয়ে পরলো। দুপুরে মনির ডাকে প্রেমা জেগে উঠলো, ঘড়ির দিকে চোখ পড়তেই লাফিয়ে উঠলো প্রেমা দুইটার উপরে বাজে। তাড়াতাড়ি উঠে দরজা খুলতেই, মনি হাসি মাখা মুখ নিয়ে বললো ছোট ভাবী ভাইয়া কি সারা রাত ঘুমাতে দেয়নি?

প্রেমা:- মনির মুখে এমন কথা শুনে ভীষণ লজ্জা পেলো, মনি প্রেমার বয়সী অথবা অল্প কিছু দিনের ছোট বড় হতে পারে দু’জন। কিন্তু ছোট ভাবী কেন বলবে? যে মানুষের কোন অস্তিত্ব নেই, তাকেই বা কেন এখনো স্বরণ রেখে আমাকে ছোট ভাবী বলবে। কই মা বাবা তো আমাকে ছোট বউ বলে না। তুমি আমাকে ছোট ভাবী কেন বলতাছো?

মনি:- বাহরে রোদেলা ভাবী ছিলো বড় বউ তাই সে বড় ভাবী আর আপনি যেহেতু ভাইয়ার দ্বিতীয় স্ত্রী তাইতো ছোট ভাবী।

প্রেমা:- দেখ যে নেই তার কথা কেন বলবা? শোন এখন থেকে শুধু ভাবী বলবা। ছোট ভাবী বললে মনে হয় এ বাড়িতে আরও একজন বউ আছে বুঝলে?

মনি:- মাথা নেড়ে আচ্ছা ঠিক আছে ভাবী। এখন তাড়াতাড়ি ফ্রেস হয়ে নিচে খেতে আসেন মিহি মাকে নিয়ে, খালাম্মা খালুজান অপেক্ষা করছে ডাইনিং এ।

প্রেমা:- আচ্ছা তুমি যাও আমি আসছি মিহিকে নিয়ে।

— মনি আর কোন কথা না বাড়িয়ে সেখান থেকে চলে আসলো নিচে। প্রেমা মিহিকে ডেকে তুলে দু’জন ফ্রেস হয়ে মেয়ে নিচে নেমে আসলো ডাইনিং টেবিলে। মনি সবার প্লেটে খাবার বেড়ে দিচ্ছে।

মা:- নতুন বিয়ে হয়েছে আর এখুনি ঘর বন্দি হয়ে যাচ্ছিস? ঘর বন্দি হবার জন্য সারা জীবন পরে রয়েছে আমিতো বলি দু’জন দূরে কোথাও থেকে ঘুরে আয় এতে করে দু’জন দু’জনকে ভালো করে বুঝতেও পারবি আর হানিমুনটাও হয়ে যাবে। কি বলিস মা?

— প্রেমা কোন কথা বলে মাথা নিচু করা রাখছে, বাবা বলে উঠলো ও আর কি বলবে, ঘুরতে যাবে দু’জন ঘুরবে। মন ভালো থাকবে এতে বলা বলির কি আছে? প্রেমার দিকে তাকিয়ে তোমাকেতো মা বলতে ভুলেই গিয়েছিলাম তোমার বাবা ফোন দিয়েছিলো হয়তো আজ রাতেই আসবে আমাদের এখানে। শ্বশুরের মুখে বাবার কথা শুনে মুহৃর্তেই মনটা আনন্দে ভরে উঠলো প্রেমার। ঠোঁটের কোনে হাসি ফুটিয়ে কখন ফোন করেছিলো বাবা?

বাবা:- এইতো হবে বারোটার দিকে তোমার ফোন নাকি বন্ধ পাচ্ছে তাই যোগাযোগ করতে পারেনি।

প্রেমা:- হ্যাঁ বাবা এখানে আসার পর ফোনটা এখনো চার্জে দিতে পারিনি তাই অফ হয়ে আছে আমি যেয়ে চার্জে লাগিয়ে বাবার সাথে কথা বলবো।

বাবা:- বেশতো তাই করো।

— শুরুর দিকে বাবা মায়ের প্রতি রাগের কারণে কথা বলতে চায়নি প্রেমা তাই ফোনে ইচ্ছে করেই চার্জ দেয়নি, যাতে তাদের সাথে কোন রকম যোগাযোগ না হয়। কিন্তু আজ বড্ড ইচ্ছে করছে বাবা মায়ের সাথে কথা বলতে। ইচ্ছে করছে তাদের বলতে বড্ড ভালো আছি আমি। কথা গুলো ভাবতে ভাবতে খাওয়া শেষ করে মিহিকে নিয়ে টেবিল থেকে উঠে পরলো।

মা:- কোথায় ঘুরতে যাবি তাহলে দু’জন মিলে ঠিক করে নিস।

প্রেমা:- মা এখুনি ঘুরতে হবে কেন? কিছুদিন পর না হয় যাবো। আপাতত একটু গুছিয়ে নেই। আর আমরা দু’জন কেন যাবো আপনারাও যাবেন। সকলে মিলে এক সাথে যাবো।

মা:- না না তোরাই যাবি, আমরা কেন কাবারের ভিতর হাড্ডি হতে যাবো।

প্রেমা:- হেসে দিয়ে কি বলেন না মা আপনি। আপনারা সাথে থাকলে বরং আমার অনেক ভালো লাগবে।

— কথা বলতে বলতে মিহিকে নিয়ে প্রেমা উপরের দিকে উঠতে শুরু করলো। রুমে এসে মা মেয়ে দু’জনে বসে টিভি দেখছে আর গল্প করছে এমন সময় মিহি জিজ্ঞাসা করলো মামুনি কোথায় ঘুরতে যাবে? আমাকে কিন্তু নিয়ে যাবেবে।

প্রেমা:- মিহিকে জড়িয়ে ধরে হ্যাঁ মামুনিকে না নিয়ে কি যেতে পারি বলো? আমরা সবাই মিলে ঘুরবো। আমরা পুরো বাংলাদেশটাকে ঘুরে দেখবে আস্তে আস্তে সময় নিয়ে কেমন।

— মিহি খুশি হয়ে প্রেমাকে জড়িয়ে ধরে আমার লক্ষ্মী মামুনি। আর কখনো আমাকে ছেড়ে যাবে না কিন্তু মনে থাকে যেন।

প্রেমা:- আচ্ছা আচ্ছা ঠিক আছে, এভাবেই পুরো বিকেল পার হয়ে গেলো। ছোট মিহিকে প্রেমা জিজ্ঞাসা করলো তোমার কোথায় ঘুরতে ভালো লাগে?

মিহি:- যাদুঘর, চিড়িয়া খানা, নদী সাগর সব জায়গায় ঘুরতে ভালো লাগে। কিন্তু বাবা নিয়ে যেতে চায়না বলে আমু নাকি এখনো ছোট।

— মিহির এমন উত্তরে বুকের সাথে জড়িয়ে ধরে এখন মামুনি এসেছি তোমাকে সব জায়গায় নিয়ে যাবো। মিহিও মাকে জড়িয়ে ধরলো। সন্ধ্যায় দু’জন চা নাস্তা খেয়ে পড়তে বসে। এদিকে সময় বেড়ে যাচ্ছে কিন্তু হৃদয়ের বাড়ি ফেরার নাম নেই।
অনেক সময় পড়ার পর মিহি বললো আর পড়বে না। সে এখন গান শুনবে। মেয়ের এমন আবদারে প্রিয়া প্রশ্ন করলো কি গান শুনবে?

মিহি:- সুন্দর সুন্দর গান, আচ্ছা মামুনি তুমি নাচতে পারো?

প্রেমা:- হ্যাঁ মামুনি পারি।

মিহি:- ইয়ে তাহলে তুমি আমি নাচবো আর গান গাইবো ঠিক আছে?

প্রেমা:- হেসে দিয়ে আচ্ছা ঠিক আছে।

“দূর দ্বীপবাসিনী,
চিনি তোমারে চিনি।
দারুচিনির দেশের তুমি বিদেশিনি গো,
সুমন্দভাষিণী॥
প্রশান্ত সাগরে
তুফানে ও ঝড়ে
শুনেছি তোমারই অশান্ত রাগিণী॥
বাজাও কি বুনো সুর
পাহাড়ি বাঁশিতে?
বনান্ত ছেয়ে যায়
বাসন্তী হাসিতে।
তব কবরীমূলে
নব এলাচির ফুল
দুলে কুসুম-বিলাসিনী॥”

গানের সাথে নেচে চলছে প্রেমা আর মিহি, এদিকে কখন যে দরজার সামনে এসে দাঁড়িয়ে আছে হৃদয় সেদিকে কোন খেয়ালই নাম তাদের। নাচতে নাচতে এক পর্যায় হৃদয়ের দিকে নজর যেতেই নাচ গান সব বন্ধ করে দিলো প্রেমা।

মিহি:- মামুনি থামলে কেন?

— মেয়ের এমন প্রশ্নে কোমর থেকে শাড়ির আঁচল খুলে নিতে নিতে বললো মামুনি আজ আর না এখন তোমার বাবা এসেছে দেখো। বাবা ফ্রেস হবে তারপর আমরা এক সাথে খেতে যাবো কেমন?

মিহি:- বাবার কোলে উঠে বাবা জানো মামুনি না খুব সুন্দর গান গায় আর নাচে। আমিও মামুনির সাথে নেচেছি।

হৃদয়:- তাই বাবাকে নেচে দেখাবে না?

মিহি:- হি হি আমিতো নাচতে পারি না।

প্রেমা:- আচ্ছা হয়েছে তুমি এখন দাদুর রুমে যাও, বাবা ফ্রেস হবে, তারপর তোমাকে নিয়ে ডিনার করতে যাবো।

— মিহি দৌড়ে রুম থেকে বের হয়ে গেলো। প্রেমা হৃদয়ের দিকে তাকিয়ে এমন চুরি করে দেখছিলেন কেন?

হৃদয়:- আমি চুরি করে দেখবো কেন? দরজা খোলা ছিলো ঢুকতেই চোখে পরলো তোমার লাফালাফি। চুরি করে দেখার কি হলো এখানে?

প্রেমা:- কি লাফালাফি? ঐটা লাফালাফি মনে হলো আপনার কাছে? আর ঘরে ঢুকতে হলে যে নক করে ঢুকতে হয় সেটা বুঝি জানেন না?

হৃদয়:- শরীর থেকে কোট খুলতে খুলতে নিজের রুমে ঢুকতে কিসের আবার নক করাকরি?

— কথাটা বলেই সোজা ওয়াশ রুমের দিকে হাঁটা শুরু করলো। প্রেমা মনে মনে বলে উঠলো আজব মানুষতো। গাল ফুলিয়ে ব্যালকনির দিকে হাঁটা শুরু করলো প্রেমা। আষাঢ়ের আকাশ, মেঘ চমকাচ্ছে। প্রেমা সেদিকে তাকিয়ে রয়েছে। অল্প সময়ের ভিতর হৃদয় ফ্রেস হয়ে বের হয়ে আসলো। প্রেমাকে রুমে না দেখে বুঝতে পেলো ব্যালকনিতে আছে। ব্যালকনিতে যেয়ে কি ব্যপার এখানে দাঁড়িয়ে আছো কেন?

প্রেমা:- বাবার আসার কথা ছিলো এখনো আসলো না, তাই দেখছি আসছে কিনা।

হৃদয়:- আসতে চেয়েছে চলে আসবে। এখন চলো ডিনার করতে যাবো।

— দু’জন রওনা হলো, হৃদয় চলে গেলো মিহিকে ডেকে নিয়ে আসতে আর প্রেমা সোজা নিচে ডাইনিং এ। অল্প সময়ের ভিতর একে একে সবাই চলে আসলো ডাইনিং এ, মনি আর প্রেমা খাবার বাড়ছে এমন সময় কলিং বেল বেজে উঠে। মনি যেয়ে দরজা খুলে দিতেই প্রেমার বাবা বাড়ির ভিতর ঢুকলো। বাবাকে দেখে প্রেমা দৌঁড়ে ছুটে গেলো যেয়ে বাবাকে জড়িয়ে ধরলো। বাবাকে জড়িয়ে ধরে কান্না করে দিলো প্রেমা।

বাবা:- আরে পাগলী মেয়ে কাঁদছিস কেন?

প্রেমা:- কিছুনা এমনি।

— খাবার টেবিল থেকে উঠে এসে হৃদয়ের বাবা তার বেয়াইকে ধরে নিয়ে নিজের সাথে খেতে বসালো। খেতে খেতে সকলে নানান রকম গল্প হচ্ছে। খাবার টেবিলে প্রেমার বাবা বললো প্রেমাকে আর হৃদয়কে তার সাথে বাড়িতে নিয়ে যাবে।

হৃদয়:- আমিতো যেতে পারবো না এখন আপনি বরং প্রেমাকে সঙ্গে নিয়ে যান।

বাবা:- কিন্তু,

হৃদয়:- কোন কিন্তু নাই, আমি সময় পেলে পরে যেয়ে ওকে নিয়ে আসবো।

প্রেমা:- ঠিক আছে তাহলে আমি মিহিকে সঙ্গে করে নিয়ে যাবো।

— হৃদয় কোন কথা বললো না, খাওয়া শেষে গেস্ট রুম ঠিক করে সেখানে বাবার থাকার ব্যবস্থা করে নিজের রুমে আসলো প্রেমা।

হৃদয়:- খুব চালাক তুমি তাইনা?

প্রেমা:- কেন?

হৃদয়:- এই যে মিহিকে সাথে নিয়ে যাচ্ছো যাতে আমাকেও সে বাড়িতে যেতে হয়।

— প্রেমা হাসতে শুরু করলো, এমন সময় বৃষ্টি শুরু হলে প্রেমা এগিয়ে যেতে শুরু করলো ব্যালকনির দিকে।

#চলবে…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here