#হারানো_সুর- ৩য় পর্ব
©শাহরিয়ার
প্রেমা:- নিজের চোখ হৃদয়ের দিক থেকে সরিয়ে নিয়ে আমি যাচ্ছি আপনি তাড়াতাড়ি চা শেষ করে ডাইনিং এ আসুন আমি অপেক্ষা করবো।
হৃদয়:- আমার বের হতে দেরী হবে তুমি খেয়ে নিও।
প্রেমা:- দেখুন আপনি না আসলে আমিও খাবো না বলে দিলাম।
হৃদয়:- তাতেও আমার কিছু করার নেই।
প্রেমা:- আপনার নাম হৃদয় কে রাখছে বলেনতো? যে মানুষের হৃদয়টা অতো কঠিন, নিষ্ঠুর তার নাম কি করে হৃদয় রাখে। আপনার নাম হওয়া দরকার ছিলো কর্কশ পুরুষ, বা কঠিণ পুরুষ।
— প্রেমার এমন সব কথা শুনে হৃদয় মুচকি হেসে খেয়ে যেয়ে রেস্ট করুণ। আমি ব্যস্ত আছি, আর হ্যাঁ চায়ের জন্য ধন্যবাদ।
প্রেমা:- হয়েছে লাগবে না আপনার ধন্যবাদ আমার।
হৃদয়:- রাতে এক সাথে খাবো।
প্রেমা:- সে আপনার ইচ্ছে, আর দুপুরের জন্য আমি সরি আপনাকে ভুল বুঝেছিলাম।
হৃদয়:- ইটস ওকে আপনি খারাপ ও বলেন নাই কিছু পুরুষ মানুষকে খুব একটা বিশ্বাস করাও ঠিক না। তারপর আপনি রূপবতী একটা মেয়ে, যে কোন পুরুষ আকর্শিত হবে এটাই স্বাভাবিক।
প্রেমা:- উফ আপনার কাছে আমি না আমার রূপের প্রশংসা শুনতে চেয়েছি, না এসব লেকচার শুনতে চেয়েছি।
— কথা গুলো বলতে বলতে প্রেমা চায়ের মগ হাতে নিয়ে হাঁটতে শুরু করলো, তবে মনে মনে প্রচণ্ড খুশি হয়েছে যা হৃদয়ের সামনে সে কোন ভাবেই প্রকাশ করতে চাচ্ছে না। প্রেমার চলে যাবার পথের দিকে চেয়ে রয়েছে হৃদয়। দরজাটা লেগে যাবার সাথে সাথে দু’চোখ বন্ধ করে নিলো সে। তারপর আবার ছবি আকায় মনোযোগ দেবার চেষ্টা করলো। কিন্তু আজ কেন জানি মনোযোগ দিতে পারছে না। এমনটাতো কখনো হয়নি, তবে আজ কেন এমন হচ্ছে হৃদয় বুঝতে পারছে না। কিছু সময় ছবি আকার ব্যর্থ চেষ্টা করে শেষে না পেরে রুম থেকে বের হয়ে আসলো হৃদয়। সামনের দিকে এগিয়ে আসতেই দেখতে পেলো প্রেমা ডাইনিং টেবিলে মাথা ঠেকিয়ে শুয়ে আছে। টেবিলের সামনে যেয়ে হৃদয় বুঝতে পারলো প্রেমা ঘুমাচ্ছে, কিন্তু এখানে ঘুমাচ্ছে তা যদি বাবা কিংবা মায়ের চোখে পরে তবে ব্যাপারটা ভীষণ রকম খারাপ হয়ে যাবে। এটা ভেবে হৃদয় প্রেমাকে ডাক দিলো, দুই তিনবার দূর থেকে ডাক দিলেও প্রেমা না জাগায় হৃদয় প্রেমার খুব কাছে যেয়ে পিঠের উপর হাত দিয়ে ডাক দিতেই প্রেমা কিছুটা লাফিয়ে উঠলো।
হৃদয়:- সরি সরি তোমার ঘুমটা ভাঙিয়ে দিলাম। আসলে এখানে কেন ঘুমাচ্ছো? বাবা মা কেউ দেখলে কি মনে করবে?
প্রেমা:- আসলে বসে থাকতে থাকতে কখন ঘুমিয়ে গিয়েছি বুঝতে পারিনি।
হৃদয়:- তুমি খেয়েছো?
— হৃদয়ের প্রশ্ন শুনে প্রেমা মাথা নিচু করে রয়েছে, হৃদয়ের বুঝতে বাকি রইলো না, এ মেয়ে যা বলেছে তাই করেছে, মেয়ের জিদ একদমই কম না। হৃদয় রাগী চোখে প্রেমার দিকে তাকিয়ে পিচ্চি একটা মেয়ে তোমার এতো জিদ কেন?
প্রেমা:- আমি মোটেও পিচ্চি নই বুঝলেন, পড়াশোনার জন্য বিয়ে করিনি ইচ্ছে করে ওকে।
হৃদয়:- হাসতে হাসতে তুমি কোন দিক দিয়ে বড় বলোতো দেখি? না তুমি আমার সমান লম্বা আর না তুমি আমার সম বয়সি, তার মানে হলো তুমি আমার কাছে পিচ্চিইতো।
প্রেমা:- নাহহহহহহহহ, খবরদার আমাকে পিচ্চি বলবেন না তাহলে ভালো হবে না।
হৃদয়:- আরে আরে তুমি রেগে যাচ্ছো কেন? শোন শোন পিচ্চি কোন খারাপ নাম না বুঝলে, আর পিচ্চি হলেই তো ভালো সবাই অনেক অনেক আদর করবে ভালোবাসবে। মাঝে মাঝে চকলেট কিনে গিফট করবে বুঝলে।
প্রেমা:- ওসব কোন কিছুই আমার চাই না তবুও আমাকে পিচ্চি বলবেন না।
— প্রেমার এমন বাচ্চামো দেখে হৃদয় হেসে চলেছে, কিছু সময়ের জন্য হৃদয় যেন ভুলেই গিয়েছিলো যার সাথে সে এমন দুষ্টমি করেছে গত রাতে তাকে কবুল বলে নিজের অর্ধাঙ্গি বানিয়ে এ বাড়িতে নিয়ে এসেছে। হৃদয় একদম বন্ধুর মত দুষ্টমি করে চলেছে প্রেমার সাথে। অনেকটা সময় দুষ্টমি করতে করতে একটা সময় হৃদয় বুঝতে পারলো তার মন অনেক অনেক ভালো হয়ে গেছে, সে হেসে হেসে কথা বলছে, মনে মনে বলে উঠলো এই পিচ্চি মেয়ে কি যাদু টোনা জানে নাকি? এতো সহজে মনটা ভালো করে দিলো, না এর থেকে দূরে থাকতে হবে। সকল রকম হাসি থামিয়ে হৃদয় বললো আমি ফ্রেস হয়ে আসতেছি খাবার রেডি করো প্লেটে। প্রেমা খুশি মনে মাথা ঝাকালো, হৃদয় ওয়াশ রুমের দিকে যেতেই প্রেমার শাশুড়িকে করা ওয়াদার কথা মনে পরলো, নিজেকেই নিজে বলতে শুরু করলো এমন কঠিন একজন মানুষ তার মন জয় করা এতো সহজ নয়। হয়তো একটা সময় আমি ক্লান্ত হয়ে যাবো, হেরে যাবো এই মানুষটাকে মানিয়ে নিজের করে নিতে। যার মন প্রাণ পুরোটা জুড়ে এখনো তার প্রথম ভালোবাসার মানুষটির স্থান তার হৃদয়ে জায়গা করতে পারা কখনোই সহজ হবে না। ভাবতে ভাবতেই হৃদয় ফ্রেস হয়ে চলে আসলো। হৃদয় টেবিলে বসতেই প্রেমা খাবার বেড়ে দিতে শুরু করলো। খাবার দিয়ে পাশেই দাঁড়িয়ে এক দৃষ্টিতে হৃদয়ের খাবারের দিকে চেয়ে রইলো প্রেমা।
হৃদয়:- খেতে খেতেই প্রেমাকে বললো খাবার নিয়ে খাচ্ছো না কেন? নাকি পিচ্চি মানুষ তাই মুখে তুলে খায়িয়ে দিতে হবে?
— প্রেমা লজ্জা পেয়ে তাড়াতাড়ি নিজের চোখ অন্য দিকে সরিয়ে নিয়ে, বলতে শুরু করলো আপনার খাওয়া শেষ হোক তারপর আমি খাবো। বলেই প্লেটের দিকে খাবার তুলে দিতে গেলে হৃদয় হাত দিয়ে প্রেমাকে বাঁধা দিলো। আমার আর লাগবে না, তুমি খেতে বসো
— প্রেমা প্লেটে খাবার নিয়ে অল্প অল্প করে খাচ্ছে আর আড়চোখে হৃদয়ে দিকে তাকিয়ে দেখছে। হৃদয়ের খাওয়া শেষ হতেই সে টেবিল থেকে উঠে বেসিং এ চলে গেলো হাত ধোয়ার জন্য, হাত ধুয়ে এসে চেয়ার টেনে বসতে বসতে প্রেমার দিকে তাকিয়ে বললো আর এক কাপ চা হলে ভালো হতো। হৃদয়ের এমন কথা শুনে প্রেমা হাত ধুতে যাবে এমন সময় হৃদয় প্রেমার হাত চেঁপে ধরে আরে আরে একি করছো?
হৃদয়:- আমি কি তোমাকে এখুনি চা দিতে বলছি? তুমি খাবার শেষ করো তারপর বানিয়ে রুমে নিয়ে এসো। আমি রুমে যাচ্ছি আর হ্যাঁ আবারো বলছি আগে নিজের খাবার শেষ করে তারপরই বানিয়ে নিয়ে আসবে। কথা গুলো বলে প্রেমার হাত ছেড়ে দিয়ে টেবিল থেকে উঠে সোঁজা উপরের দিকে হাঁটা শুরু করলো হৃদয়।
— প্রেমা লজ্জা পেয়ে গেলো, মাথা নিচু করে একা একাই হেসে চলেছে, এতো সময় হৃদয়ের মা দূরে দাঁড়িয়ে সব দেখতে ছিলো, হৃদয় চলে যাবার পর পরই মা ডাইনিং এ চলে আসে। মাকে দেখে নিজেকে স্বাভাবিক করার চেষ্টা করে প্রেমা।
মা:- প্রেমার দিকে তাকিয়ে হেসে দিয়ে বলে আমি জানি তুই পারবি। আজ কতদিন পর ছেলেটাকে এমন খুশি হতে দেখেছি তোকে বলে বুঝাতে পারবো না। শেষ কবে আমার ছেলেটা এভাবে হেসেছে আমার মনে নেইরে মা। আমি তোকে দেখেই বুঝতে পেরেছিলাম, তোর মাঝে কিছু একটা আছে যা দিয়ে তুই আমার ছেলেটাকে ঠিক আগের মতই করে তুলতে পারবি। আমি চাই এমন করেই ও হাসবে আনন্দ করবে তোকে নিয়ে মিহিকে নিয়ে সুখে সংসার করবে। যে অতীতটা হারিয়ে গিয়েছে সে অতীতটা আর ফিরে না আসুক আমার সন্তানের জীবনে। কথা গুলো যখন বলছিলেন তখন চোখের কোনে জল জমতে শুরু করে দিলো। নিজেকে সামলে নিয়ে উঠে দাঁড়াতে।দাঁড়াতে তোর কাছে আমার অনুরোধ যেমন করেই হোক না কেন আমার ছেলেটাকে তুই তোর আপন করে নিবি।
প্রেমা:- মা আমার জন্য দোয়া করবেন আমি যেন আপনার আদেশ মেনে চলতে পারি। আপনি যেমনটা চান তেমনটা পারি।
মা:- তুই পারবি প্রেমা আমি জানি তুই পারবি।
— কথা গুলো বলে মা নিজের রুমের দিকে হাঁটা শুরু করলো। প্রেমা ফ্রেস হয়ে খাবার গুছিয়ে রেখে কিচেন রুমে যেয়ে চুলা জ্বালিয়ে দিলো। এমন সময় কলিং বেলটা বেজে উঠতেই প্রেমা দৌঁড়ে যেয়ে দরজা খুলে দিলো। দরজা খুলতেই হৃদয়ের বাবা বাড়ির ভিতর ঢুকলো। প্রেমা সালাম দিয়ে প্রশ্ন করলো বাবা চা নাস্তা দিবো?
বাবা:- হুম দাও দিলেতো ভালোই হয় মা।
প্রেমা:- আচ্ছা বাবা আপনি ফ্রেশ হয়ে ডাইনিং এ বসুন আমি চা নাস্তা দিচ্ছি।
— বাবা ফ্রেশ হবার জন্য ওয়াশ রুমের দিকে চলে গেলো ততক্ষণে প্রেমা চলে আসলো কিচেন রুমে, চা রেডি হতেই প্রেমা আগে বাবার জন্য চা বানিয়ে নাস্তা সহ ডাইনিং এ এগিয়ে দিয়ে আবার কিচেনে যেয়ে হৃদয়ের জন্য চা বানিয়ে নিয়ে রওনা হলো দু’তলার দিকে নিজের রুমে। যেখানে অপেক্ষা করে রয়েছে হৃদয়। একপা, দু’পা করে খুব ধীর গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে প্রেমা। নিজেকে নিজে বলছে কোন রকম ভুল করা যাবে না। প্রতিটা মুহুর্তে সুযোগ নিতে হবে যেমন করেই হোক হৃদয়ের হৃদয়ের মাঝে আমাকে জায়গা করে নিতে হবে। ভাবতে ভাবতে দরজা খুলে ভিতরে ঢুকে গেলো প্রেমা। হৃদয় ব্যালকনির দরজা খুলে দাঁড়িয়ে সিগারেট টেনে চলছে। প্রেমাকে এগিয়ে আসতে দেখে সিগারেট ফেলে দিয়ে তা পা দিয়ে মাড়িয়ে নিভিয়ে ফেললো।
প্রেমা:- ফেলে দিলেন কেন সিগারেট বেশী করে টানেন। ঐটাতো স্বাস্থ্যের জন্য উপকারি জিনিস।
হৃদয়:- আমি পিচ্চিদের সামনে সিগারেট টানি না, বলেই প্রেমার দিকে তাকালো। প্রেমা চায়ের মগটা বাড়িয়ে দিলো হৃদয়ের দিকে। দু’জন দু’জনের দিকে চেয়ে রয়েছে, কারো মুখে কোন শব্দ নেই।
#চলবে