#হঠাৎ_মেঘে_বৃষ্টি
#পর্ব_০২ (অন্তিম পর্ব)
#নুর_নবী_হাসান_অধির
মৌসুমের প্রথম বৃষ্টিতে ভেজার জন্য জ্বরে গা পুড়ে যাচ্ছে ইরার৷ জ্বরের ঘুরে বারবার সাব্বিরের কথাগুলো মনে পড়ছে৷ জ্বরের মাঝেও বিরাজ করছে ভালোবাসাময় মুহুর্ত। বৃষ্টিতে হাট ধরে হাঁটা। প্রতিটি ফোঁটা গায়ে ভালোবাসার স্পর্শ একে দিয়েছে। সাব্বিরের ফোনে ইরার ধ্যান ভাঙে৷ ফোনের অপর পাশ থেকে রাগান্বিত কন্ঠে বলল,
“বৃষ্টিতে ভিজতে মানা করছিলাম৷ তবুও কেন বৃষ্টিতে ভিজলে? এখন জ্বর আমার আসছে!”
ভীতু গলায় বলল,
“মৌসুমের প্রথম বৃষ্টিতে না ভিজলে ভালো লাগত না৷ আমার কাছে বৃষ্টিটা ছিল এত ভালো ছিল বলে বুঝাতে পারব না৷ পাশে প্রিয় মানুষটা থাকলে আমি সারাজীবন বৃষ্টিতে ভিজতে পারি৷”
“এরপর বৃষ্টিতে ভিজতে চাইলে পা ভেঙে রুমে ফেলে রাখব৷ বাহিরে বের হতে পারবে না৷ বৃষ্টির ছোঁয়ার তুমি কোনদিন পাবে না৷”
ইরা মুচকি হেঁসে বলল,
“ভালোই হবে। আমি যা ভাবছি তুমি কি তাই ভাবছো?”
সাব্বির ব্রো কুঁচকিয়ে বলল,
“আমি আবার কি ভাবতে যাব? আমার মনে তোমায় নিয়ে ইতিমধ্যে কোন ভাবনা নেই৷ শুধু একটাই ভাবনা আছে তোমার হাত পা ভেঙে বিছানায় ফেলে রাখা৷ তোমার ভাবনা কি?”
“তুমি আমায় কোলে নিয়ে বৃষ্টিতে ভিজতে। সেজন্য আমার হাত পা একবার নয়৷ বারং বার ভাঙতে পারি৷ তোমায় ছোঁয়ায় আমার সমস্ত শক্তি নিহিত৷”
“এত প্রেম আসে কোথা থেকে? আমার তো প্রেম আসে না৷ আমাকে একটু প্রেম ধার দাও৷”
“আমি কাউকে প্রেম ধার দেয় না৷ আমার যা সবই তোমার৷ তুমি আমাকে আদেশ করবে৷”
“হয়েছে৷ এখন কথা না বলে ঘুমিয়ে পড়৷ কাল সকালে কথা হবে৷ খবরদার নির্ঘুম রাত কাটিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করবে না।”
ইরা মুচকি হেঁসে ফোনটা কেঁটে দিল৷ চোখের সামনে প্রতিচ্ছবি হচ্ছে সাব্বিরের সাথে কাটানো মুহুর্তগুলো৷
_____________
“আমাকে তোমার পায়ে একটু ঠায় দাও৷ আমি তোমার ঘরের এক কোণে পড়ে থাকব৷ প্লিজ আমাকে ছেড়ে দিও না৷ আমি তোমার ব্যথা মেনে নিতে পারছি না৷”
ইরা কথা বার বার আটকে আসছে৷ মুখ থেকে প্রতিটি বুলি বের করছে অনেক কষ্ট করছে৷ সাব্বির কিছুতেই সত্য কথা বলতে পারছে না৷ কিছু দিনের আয়ু আছে সাব্বিরের হাতে৷ এই জীবনে কিছুতেই ইরাকে জড়াতে চাইনা৷ সাব্বির কাঁপা কাঁপা গলায় বলল,
“ইরা তুমি বুঝার চেষ্টা করো। আমি কিছুতেই নিহাকে ঠকাতে পারব না৷ আমার জীবনের সাথে ঘনিষ্ঠভাবে জড়িয়ে পড়েছে নিহা৷ আমাকে তুমি ক্ষমা করে দিও৷”
ইরা রাগ নিয়ে বলল,
“ক্ষমা চাইলে আর আমি ক্ষমা করে দিলাম৷ ক্ষমা করা সহজ নয়৷ সবাইকে যদি ক্ষমা করা যেত তাহলে কেউ অপরাধী থাকত নয়৷”
“আমি জানি আমি ক্ষমার অযোগ্য। তবুও বলব পরলে আমায় ক্ষমা দিও৷ আমার কোন অধিকার নেই ক্ষমা চাওয়ার৷ আমি সে অধিকার হারিয়ে ফেলেছি৷”
“আমি শেষ বারের মতো বলছি, তুমি আমাকে তোমার জীবনে জায়গায় দিবে? একটু জায়গা দিলেই হবে৷ ঘরের এক কোণে পড়ে থাকব৷”
সাব্বির এবার কঠিন হয়ে বলল,
“আমি এক কথা কতবার বলব৷ এক কথা বারবার বলতে ভালো লাগছে৷ আমার জীবনে ইরা মানের কোন চিহ্ন নেই৷ ইরাকে আমার জীবনে জায়গা দিতে পারব না৷”
ইরা চিৎকার করে বলল,
“প্রেম করার আগে মনে ছিল না৷ আমি তোমাকে নিজের থেকে বেশি ভালোবাসি৷ পারব না তোমায় ছাড়া থাকতে৷”
“যতটা ভালোবেসে এসেছো আজ থেকে তার থেকে বেশি ঘৃণা করবে।”
“যাকে একবার মন থেকে ভালোবাসা যায় তাকে হাজার চেষ্টা করেও ঘৃণা করতে পারব না৷”
“এত ভালোবাসা পাওয়ার যোগ্য নয় আমি৷ আমি ভুল করে তোমার নাম লিখে ফেলছিলাম৷ আজ তার জন্য শাস্তি পাচ্ছি৷ নিজেকে খুব অপরাধী লাগছে৷ আর একবার আমাকে বিরক্ত করলে আমি নিজের জীবন উৎসর্গ করব৷”
“আর বিরক্ত করব না৷ তবে তোমার কাছে আমার একটা অনুরোধ আছে৷ আমার শেষ অনুরোধ টুকু রাখবে৷”
সাব্বির ভেজা গলায় বলল,
“হুম বল। তোমার অনুরোধ রাখার চেষ্টা করব। তবে তোমাকে আমার জীবনে জায়গা দিতে পারব না।”
“তেমন কিছু বলব না৷ শুধু তোমাকে এক পলক দেখতে চাই। প্লিজ একটু ভিডিও কলে আসবে৷ আর কোনদিন বিরক্ত করব না৷”
“আমাকে পাঁচ মিনিট সময় দাও৷ আমি পাঁচ মিনিট পর তোমায় ফোন দিচ্ছি”
সাব্বির ফোন কেটে দিয়ে দ্রুত পায়ে ওয়াসরুমে চলে গেল৷ কান্নায় চোখের পাতা লাল বর্ণ ধারণ করেছে৷ চোখে মুখে পানির ছিঁড়া দিয়ে নিজেকে যথেষ্ট শান্ত রাখার চেষ্টা করল৷ উসকো এলোমেলো চুলগুলো চিরনি দিয়ে ঠিক করে নিল৷ তারপর ইরাকে ভিডিও কলে ফোন দিল৷ ইরা ছাঁদের দোলনায় অধীর আগ্রহে বসে ছিল ফোনের৷ ফোন দেওয়ার সাথে সাথে রিসিভ করব৷ ফোনের ওয়ালপেপার ভেসে উঠল ইরার মুখখানা। একদম শুকিয়ে গেছে৷ চোখের নিচে কালচে দাগ৷ অনবরত কান্নার জন্য চোখ দু’টো লাল বর্ণ ধারণ করেছে। ইরার এমন রুপ সাব্বিরের মনে কষ্ট জাগিল তুলল৷ তবুও নিজেকে সামলিয়ে নিল। অপরাধী কন্ঠে বলল,
“একদিনেই নিজের কি অবস্থা করছল? একবার নিজেকে আয়নার সামনে দাঁড়া করাও৷”
“ইরা মুচকি হেঁসে জবাব দিল,
” আমাকে নিয়ে ভাবতে হবে না৷ কার জন্য সাজব? যে আমার জীবনে শরতের সাদা মেঘ, বসন্তের হাওয়ার মতো এসে কালবৈশাখীর মতো চলে গেছে৷”
“জীবনটা অনেক কঠিন৷ প্রতিটি মুহুর্ত লড়াই করে বেঁচে থাকতে হবে৷”
“বেঁচে থাকার ইচ্ছা হারিয়ে গেছে। এখন শুধু তোমাকে দেখানোর পালা৷”
ইরা কোন কথা বলল না৷ নেই কোন কথা সাব্বিরের কন্ঠনালিতে। বসা থেকে উঠে ছাঁদের কর্ণারে গেল৷ ইরা মুচকি হেঁসে বলল,
“তুমি তোমার জীবনে অন্য কাউকে জায়গায় দিতে পারলেও আমি কাউকে নিজের জীবনে জায়গা দিতে পারব না৷ আমি তোমার জন্য হাশরের ময়দানে অবস্থান করব৷”
ফোনের ওয়ালপেপারে সাব্বিরের মুখে আলতো করে ঠোঁট জোড়া স্পর্শ করে ছাঁদ থেকে ঝাঁপিয়ে পড়ল৷ মুহুর্তের মাঝেই সবকিছু অন্ধকার হয়ে গেল৷ সাব্বির চিৎকার করেই সে জায়গায় জ্ঞান হারিয়ে ফেলল৷
_____________
ইরার মৃত দেহ জড়িয়ে কান্না করে যাচ্ছে সাব্বির। নিজেকে খুব অপরাধী মনে করছে৷ কিছুতেই নিজেকে সামলিয়ে রাখতে পারছে না৷ না পারছে সাব্বিরকে কেউ আটকাতে৷
সাব্বির নিজ কাঁধে বহন করছে ইরার মৃত দেহ৷ কবরের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে আর মনে মনে বলছে,
“ইরা তুমি কিভাবে এমন করতে পারলে? আমি তোমাকে কঠিন মনের মানুষ ভাবতাম৷ কখনও ভাবিনি তুমি এমন করবে৷ আমি এখন কাকে নিয়ে অল্প সময়টুকু বেঁচে থাকব?”
ইরাকে অন্ধকার কবরে রেখে এসে সাব্বির নিজেও ছাঁদ থেকে ঝাঁপিয়ে পড়ে জীবন উৎসর্গ করল৷
সমাপ্ত
আসসালামু আলাইকুম। সবাইকে রমজানের শুভেচ্ছা।