স্যার I Love You পর্ব ৫

0
1155

#স্যার_I_Love_You
#লেখিকা_শারমিন_আক্তার_বর্ষা
#পর্ব_০৫
___________
স্যার– আপনাকে আমি কোথায় জেনো দেখেছি..

আমি– সকালেই তো দেখলি আর কি ঝগড়া টাই না করলি!
আর এখন ভাব ধরা হচ্ছে যে কিছুই মনে নাই!
(মনে মনে) (গত পর্বে)

স্যার– সকাল বেলা যে আপনাকে ধাক্কা দিয়ে কাঁদাপানিতে ফেলে দিছিলাম তার জন্য সরি! (সরি বলে মাথা নিচু করে রইলাম)

স্যার– হ্যা তাইতো আপনিই তো সেই মেয়েটা

আমি– স্যার আইএম সরি স্যার প্লিজ আম্মুর কাছে কমপ্লেন করবেন না প্লিজ স্যার!

স্যার— ইট’স ওকে! আপনি সরি বলছেন এটাই অনেক! আর আমি কারো নামে কমপ্লেন করা পছন্দ করি না! নেক্সট টাইম খেয়াল রাখবেন এমন কারো সাথে করবেন না!

আমি– ওকে স্যার ধন্যবাদ! স্যারের প্রতিটা কথায় জেনো আমি মুগ্ধ হয়ে যাচ্ছি! কি সুন্দর করে কথা বলে আর আপনি আপনি বলছে এত সম্মান আমাকে আগে আর কোনো স্যার দেয়নি
(মাথায় একটা আসতে করে চাটা মারলাম কি সব উল্টা পাল্টা ভাবছি)

আম্মু– আসবো বাবা?

(স্যার চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়ালো!)

স্যার–আরে আন্টি আসুন না এটা তো আপনারই বাড়ি পারমিশন নেওয়ার কি আছে!

আম্মু– নাও বাবা পড়াতে পড়াতে কিছু খেয় নেও!

স্যার– আন্টি এত কিছু আনার কি ধরকার ছিলো?

আম্মু– বাবা এইসব তো কিচ্ছু না!

স্যার– আন্টি আমাকে এইসব আর দিবেন না প্লিজ আমি এখানে খেতে আসি না পড়াতে আসি,, যেদিন এমনি আসবো সেদিন না হয় খেতে দিবেন এখন শুধু কফি টা দিন! ( মৃদু সুরে বললো)

( মনে হলো কোকিল যেনো কুহু কুহু করছে)
ভাবনা থেকে বের হয়ে আমি– উনি কি সত্যিই এত ভালো নাকি নাটক করছে? যাই হোক আসতে ধীরে জানতে পারবো!

স্যার– তাছাড়া আন্টি আমি পড়াশোনার সময় খাওয়া দাওয়া একদম পছন্দ করি না কফির মগটা হাতে নিয়ে বললো!
আপনি প্লিজ কষ্ট পাবেন না!

আম্মু– ওকে বাবা! সায়েমা খাবার ট্রেটা নিয়ে কিচেনে রাখো!

আমি অনেক উঁকিঝুকি দিলাম বসে থাকার জন্য কিচ্ছু দেখতে পেলাম না আম্মু কি কি আনছে তাই বলেই উঠলাম–
আমি– আম্মু আমাকে কিছু একটা দিয়ে যাও আমি খাবো খুব সুন্দর স্মেইল আসছে!

স্যার– একদম না! পড়তে পড়তে খেলে সব খাবারের সাথে গিলে খেয়ে ফেলবেন!
আন্টি কিচ্ছু দিবেন না পড়া শেষ না হওয়া পর্যন্ত!

আমার আম্মুও ফাজিল স্যারের সাথে তাল মিলালো!

আম্মু– ঠিক বলেছো বাবা! খেতে খেতে পড়ে তাই তো পড়াশোনা কিচ্ছু মনে থাকে! পড়া শেষ না হওয়া পর্যন্ত কিচ্ছু পাবি না!

আমি– আম্মু একটা একটা একটা প্লিজ!
যাহ চলে গেলো
সব এই বজ্জাত স্যারের জন্য!

স্যার– কফি খাচ্ছে আর হাসছে! ( হাহাহা)

আমি– হাসিটা কি সুন্দর হাসলে কত কিউট লাগে
ধুর আবারও কি ভাবছি (মনে মনে)

আমি– আপনি ৩২টা দাঁত বাহির করপ বেটকাচ্ছেন কেনো?

(ইচ্ছে করছে একটা পাঞ্চ মেরে ৩২টা দাঁত ফালাই দেই কিন্তু সেটা তো করতে পারবো কারণ অত শক্তি আমার নাই ১টা দাঁতই ফালাইতে পারমু না আর কোই ৩২টা) এবার ভাবনার সাগর থেকে বের হই!

স্যার– হাসি থামিয়ে– এটা আপনার শাস্তি আমাকে সকালে কাঁদায় ফেলে দেওয়ার জন্য!

আমি– আপনি না কমপ্লেন করা পছন্দ করেন না তাহলে?

স্যার– কমপ্লেন কখন করলাম,,, ভুলের শাস্তি দিলাম!

আমি– আমার সাথে বজ্জাতগিরী,,,
দেখাচ্ছি মজা বজ্জাত স্যার কোথাকারের!
(মনে মনে)

আমি– স্যার আমার কলমের কালী শেষ! আপনি কি একটু কষ্ট করে আমাকে ওই টেবিলের ২নাম্বার ডয়ার থেকে একটা কলম এনে দিবেন প্লিজ!?

স্যার– ওকে আপনি বসেন,, আমি এখুনি এনে দিচ্ছি!
(স্যার খুঁজছে তো খুঁজছে!)

কোথায় ইতি এখানে তো আপনার কোনো কলম নেই!

আমি– নেই মানে কি স্যার আমি এখুনি আসছি! স্যারের সামনে গিয়ে স্যারের পায়ের উপরে পা দিলাম ইচ্ছে করেই হিল জুতো পরে ছিলাম শেষ স্যারের পা!
একটু খোঁজার এক্টিং করলাম,,, পরে বললাম কোই এখানে নাই তো অন্য কোথায় আছে হয়তো!

স্যার আর সহ্য করতে না পেরে!

স্যার– আআআআআ

আমি– কি হইছে স্যার আপনি ঠিক আছেন তো?

স্যার– ইতি আপনি আমার পায়ের উপর দাঁড়িয়ে আছেন!

আমি নিচের দিকে তাকিয়ে দেখি– ওও হ্যা তাইতো এমন একটা ভাব ধরি যে আমি কিছুই জানি না?

আমি– সরি স্যার আপনার বেশি লাগেনি তো?

স্যার– আহহ আহহ আহহহ করছে

আমার তো প্রচুর হাসি পাচ্ছে অনেক কষ্টে হাসি আটকে রেখেছি!

স্যারের পায়ের দিকে তাকিয়ে দেখি স্যারের পা লাল হয়ে গেছে!
স্যার অনেক সুন্দর তাই লাল স্পষ্ট বুঝা যাচ্ছে!

আমি দৌঁড়ে নিচে আসলাম আর ফ্রিজ থেকে বরফ নিলাম আবার এক দৌঁড়ে রুমে আসলাম!

পরে নিজেই স্যারের পায়ে বরফ লাগিয়ে দিলাম!

আমি– সরি স্যার!

স্যার– ইট’স ওকে ইতি..!

প্রায় ১০ মিনিট পর—
আমি স্যার এখন কেমন লাগছে ব্যাথা কমছে?

স্যার– ধন্যবাদ আপনাকে! অনেকটাই কমে গেছে!
এখন চলুন পড়তে বসুন!

আমি– স্যার আপনি বাড়ি চলে যান,, কালকে পড়াতে আসবেন আর বাকিটা আমি পড়ে নিবো!

স্যার— না না! আজকের পড়া আজকেই পরতে হবে হাজার কষ্ট হলেও আমি কথা দিলে সেটা রাখি কথার খেলাফ করি না! আপনার আব্বুকে কথা দিয়েছি আর আমার কথা ভাঙতে পারবো না!

আমি জেনো আরও মুগ্ধ হয়ে যাচ্ছি স্যারের প্রতি এত সৎ এখনো মানুষ আছে!

২ঘন্টা পড়ানো শেষ হলেই স্যার এখন চলে যাবে!

আমি স্যারকে বাড়ির গেইট পর্যন্ত এগিয়ে দিতে যাই!

আমি চলে আসবো তখন–
স্যার– ইতি!
আমি পিছনে ঘুরে তাকাতেই উনি বললেন!

— আমি জানি আপনি ইচ্ছে করেই আমার পায়ের উপর পা দিয়েছিলেন! আপনাকে আগে যতগুলো স্যার পড়িয়ে ছিলো তারা ৩/৪ দিনের মধ্যে চলে যেতো আর আসতো না কেনো? সেটা জানার জন্য আমি তাদের সাথে কথা বলতে গিয়েছিলাম তারা আমাকে সবটা বলেছিলো আর আপনাকে পড়াতে আসতে বারণও করে ছিলো! তবুও আমি আসছি কারণ আমরা মধ্যবিত্ত আমার বাবা নেই মা আর আমি আমার পড়াশোনার পাশাপাশি একটা জব খুজছিলাম সেটা পাচ্ছিলাম না আর তখন আপনার বাবা বললো আপনাকে পড়ানোর কথা তাই আমি রাজি হয়ে যাই!
একেবারে কিছু না করার থেকে কিছু একটা করা ভালো!
সব কিছুর পর আজকে আমার একটা কাজের অফার আসছিলো অনেক খুশি ছিলাম আপনাকে চিনতাম না তবুও ভাগ্য সেই আপনার সাথে দেখা করিয়ে দেয় আর আপনি আমাকে কাঁদায় ফালিয়ে দেন! যে কারণে আমি ইন্টারভিউ দিতে যেতে পারিনি! একটা অফার আসছিলো কাজের সেটাও চলে গেলো!
এখানে পড়াতে এসে দেখি আপনি আপনাকে যে পড়াবো শান্তি মতো এটা ভাবিনি তাই হলো আমার মা অসুস্থ আর মাকে সুস্থ করার জন্য টাকা প্রয়োজন!
আমি বুঝেছিলাম আপনি সকালে যেটা করেছিলেন সেটা ইচ্ছে করে করনেনি আপনার কলেজের জন্য লেইট হচ্ছিল তাই করেছিলেন!
কিন্তু এখন ইচ্ছে করে করেছেন!
আমি রাগ করিনি কারণ আমাকে আঘাত করে আবার আপনি নিজেই আমার আঘাতে মলম লাগিয়ে দিয়েছেন!

আপনাকে দেখে এটা তো বুঝেছি, আপনি কাউকে কষ্ট দিলে তার চাইতে বেশি কষ্ট আপনি নিজে পান তাই
রাগ কনট্রোল করে ভেবে চিন্তা করে কাজ করবেন!
যাতে পরে নিজের কষ্ট পেতে না হয়!

চিন্তা করবেন না,, আমি এইসব কথা গুলো কাউকে বলবে না!
আসি!
ভালো থাকবেন,,, আল্লাহ হাফেজ…!
“আসসালামু আলাইকুম”

আমি কিছুই বলতে পারলাম না!
দুই চোখ বেয়ে অজড়ে পানি পরছে!
এইভাবে কেউ কখনো বলেনি কারো কথায় কখনো এত কষ্ট পাইনি!
কিন্তু স্যার যা বলে গেছে সবই তো সত্যি!
অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে ছিলাম চুপ করে
আর চোখ বেয়ে পানি পড়ছিলো
কিছুক্ষণ পর সায়েমা আন্টি আমার পিছনে দাড়িয়ে বললো–
আন্টি— ইতি মামনি তুমি এখানে এত রৌদ্রে কেনো দাঁড়িয়ে আছো বাড়ির ভেতরে চলে!

আমি কিছু না বলে বাহিরে থেকে সোজা রুমে চলে এলাম আর ঠাসসস করে রুমের দরজা আটকে দিলাম!
বিছানায় শুয়ে বালিশ চেপে কাঁদতে লাগলাম..!

.
.
.
.
চলবে?

“কার্টেসী ছাড়া কপি করা নিষেধ ” ❌

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here