স্তব্ধের স্নিগ্ধতা পর্ব ১৩ +১৪

0
1069

#স্তব্ধের_স্নিগ্ধতা
#মাশফিয়াত_সুইটি(ছদ্মনাম)
পর্ব:১৩

অরিত্রি শিকদার,রুশি,নাতাশা একসঙ্গে পাশাপাশি বসে আছে তাদের ঠিক সামনে সোফায় বসে আছে স্তব্ধ।অরিত্রি শিকদার একটা কাগজ স্তব্ধের দিকে এগিয়ে দিতেই স্তব্ধ প্রশ্ন করল,

– এই পেপারটা কিসের মম?

– তোর আর স্নিগ্ধতার ডিভোর্স পেপার চটজলদি সাইন করে দে।

স্তব্ধের মুখটা গম্ভীর হয়ে গেল তিক্ষ্ম কন্ঠে বলল,
– আর ইউ ক্রেজি মম স্নিগ্ধকে কেন ডিভোর্স দিতে যাব আমি?

– ভুলে যাস না তোর ড্যড তোকে জোর করে বিয়েটা করিয়েছে অন্যের কারণে কেন নিজের জীবন নষ্ট করবি?

– তোমাকে কে বলেছে আমি অন্যের জন্য নিজের জীবন নষ্ট করছি?

– মানে?

– আচ্ছা ধরো তোমার কথায় পেপারে আমি সাইন করে দিলাম তারপর কি হবে?

– নাতাশার সঙ্গে তোর বিয়ে দিব।

স্তব্ধ মৃদু হেসে বলল,
– কিন্তু নাতাশাকে তো আমার জীবন সঙ্গিনী হিসেবে পছন্দ নয়।

নাতাশা বিচলিত কন্ঠে বলল,
– স্তব্ধ কি বলছো এসব?

– আমি আমার মমের সঙ্গে কথা বলছি কেউ মাঝখানে কথা না বললে খুশি হতাম।

রুশি হাত দিয়ে নাতাশাকে থামিয়ে দিল অরিত্রি শিকদার বললেন,
– আমার নাতাশাকে পছন্দ এছাড়া বিয়ের পর সব ঠিক হয়ে যাবে ভালো লাগা শুরু হবে।

– আমিও তো এটাই বুঝাতে চাচ্ছি তোমায়, স্নিগ্ধর সঙ্গে বিয়েটা যখন হয়ে গেছে ধীরে ধীরে সম্পর্ক ঠিক হয়ে যাবে আর এ ক’দিনে স্নিগ্ধর প্রতি আমার একটা মায়া জম্মে গেছে ওকে ছেড়ে দেওয়া আমার পক্ষে সম্ভব নয়।

– স্তব্ধ মুখে মুখে তর্ক করবি না যা বলছি তাই কর এতে সাইন করে দে তুই সাইন করলে স্নিগ্ধতাও সাইন করতে বাধ্য থাকবে।

স্তব্ধ মায়ের হাত থেকে পেপারটা নিয়ে দেখতে লাগল উপস্থিত সবার মুখে হাসি স্পষ্ট। কিন্তু হাসিটা বেশিক্ষণ স্থায়ী হলো না স্তব্ধ পেপারটা ছিঁড়ে অসংখ্য টুকরো করে অরিত্রি শিকদারের হাতে ধরিয়ে দিয়ে বলল,

– ড্যড না হয় আমায় জোর করে বিয়ে দিয়েছে কিন্তু তুমি কি করছো? বিবাহিত ছেলের ডিভোর্স করিয়ে অন্য মেয়ের সঙ্গে বিয়ে দিতে চাচ্ছো তাও আবার অমতে।

– তুই বুঝার চেষ্টা কর।

– আমি কিছু বুঝতে চাই না স্নিগ্ধকে আমি ছাড়ছি না বিয়ে যেভাবেই হোক ও আমার ওয়াইফ এটাই বড় পরিচয়, ওর প্রতি আমার একটা মায়া জম্মে গেছে এই মায়া থেকে বেরিয়ে আসা সম্ভব নয় এছাড়া আমার এমন কোনো পিছু টান নেই যে ওকে ছেড়ে দিতে হবে জীবনটা আমার, কে আমার জীবনে থাকবে আর থাকবে না আমাকেই ডিসাইড করতে দাও তুমিও স্নিগ্ধকে ছেলের বউ হিসেবে মেনে নাও এটাই ভালো হবে।

রুশির দিকে তাকিয়ে,
– আন্টি বাংলাদেশে ছেলের কি অভাব পড়েছে যে বোনের ছেলের সঙ্গে মেয়ের বিয়ে ঠিক করতে হবে? ঠিক করেছ মানলাম এখন তো আমি বিবাহিত তারপরেও কেন বিবাহিত ছেলের সঙ্গে মেয়ের বিয়ে দিতে চাইছো? ছেলের অভাব পড়লে ড্যডকে বলো ভালো একটা ছেলে খুঁজে দিবে যেভাবে আমার জন্য স্নিগ্ধকে খুঁজে এনেছে।

স্তব্ধ উঠে অরিত্রি শিকদারের ঘর থেকে বেরিয়ে গেল রুশি আর নাতাশার মুখটা চুপসে গেছে অরিত্রি শিকদার ছেলের কথাগুলো শুনে অবাক হয়ে গেছেন।

রাতুল শিকদার এদের কানাঘুষা টের পেয়ে আজ অফিসে যাননি।অরিত্রি শিকদার যখন স্তব্ধকে ঘরে ডাকলেন তখনি সতর্ক হয়ে আরিয়াকে নিয়ে দরজার আড়ালে দাড়িয়ে ছিলেন সবটা শোনার জন্য প্রথমে এদের কথা শুনে বেশ রেগে গিয়েছিলেন কিন্তু স্তব্ধের বলা কথাগুলো শুনে মুহূর্তেই মনে মনে খুশি হয়েছেন।

রাহেলা বেগমের ঘরে রাতুল শিকদার আর আরিয়া এসে বসলো ওদের সঙ্গে তিহানও যোগ দিল। রাহেলা বেগম পান চিবোতে চিবোতে বললেন,

– কিরে তোদের বাপ মেয়েকে এত খুশি লাগছে কেন?

– আরে মা আর বলো না তোমার নাতি তো স্নিগ্ধতাকে মেনে নিয়েছে উহু মেনে নিয়েছে বললে ভুল হবে অরিত্রির মুখের উপর কথাও বলে দিয়েছে।

– বিস্তারিত বল।

আরিয়া পুরোটা রাহেলা বেগমকে বলতেই তিনিও খুশি হয়ে গেলেন। সবার হাতে একটা করে পান দিয়ে,
– এই খুশিতে একটা পান খা, আমি বলেছিলাম না আমার স্তব্ধ দাদুভাই আর যাই করুক না কেন সম্পর্কের মান বুঝে।
______________

আজ কলেজে তিহানের জয়েনিং ডেট। নতুন কয়েকজন শিক্ষক জয়েন করায় কলেজের শিক্ষক এবং শিক্ষার্থীদের নিয়ে একটা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে।তিহান কলেজে প্রবেশ করে আশেপাশে তাকালো প্রিন্সিপালের সঙ্গে দেখা করতে হবে কিন্তু প্রিন্সিপালের রুম কোনদিকে তা জানা নেই কাকে জিজ্ঞেস করবে ভাবতে ভাবতে সামনে এগিয়ে গেল একটা মেয়েকে দেখে ডেকে বলল,

– এই পিচ্চি মেয়ে শুনো।

মেয়েটি আশেপাশে তাকিয়ে তিহানের দিকে দৃষ্টি দিল তিহান মৃদু হেসে বলল,
– তোমাকেই ডেকেছি আচ্ছা প্রিন্সপাল স্যারের রুম কোথায় বলতে পারবে?

মেয়েটি রাগী দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল,
– আমাকে দেখে আপনার পিচ্চি মনে হয়? চোখে সমস্যা নাকি?

– তোমাকে দেখে তো পিচ্চিই মনে হচ্ছে।

– ইডিয়ট।

বলেই মেয়েটি রাগে ফুঁসতে ফুঁসতে হাঁটা ধরলো তিহান পুনরায় ডেকে বলল,
– পিচ্চি প্রিন্সিপালের রুমটা তো দেখিয়ে দিয়ে যাও।

মেয়েটি যেতে যেতে বলল,
– পারবো না খুঁজে নিন।

তিহান ক্লান্ত কন্ঠে বলল,’ছোট ছোট মেয়েদের পিচ্চি বললেও দোষ?

কলেজের একজন স্টুডেন্টকে জিজ্ঞেস করে অবশেষে প্রিন্সিপালের রুম খুজে পেল তিহান।প্রিন্সিপালের রুমে ঢুকতেই বেশ অবাক হলো মনে মনে বলল,’এই পিচ্চি ঝগড়ুটে মেয়ে এখানে কেন?’

তিহানকে দেখে প্রিন্সিপাল খুশি হয়ে স্বাগতম জানালো এবং বাকিদের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিচ্ছে এবার সেই মেয়েটিকে দেখিয়ে বললেন,

– ইনি হচ্ছেন শিরিন সুলতানা ফাইন্যান্সের শিক্ষিকা হিসেবে কলেজে নতুন জয়েন করেছেন।

তিহানের চোখগুলো বড় বড় হয়ে গেছে চমকায়িত দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল,
– ইনি শিক্ষিকা!

– হ্যা।

– আমি তো ভেবেছিলাম কলেজের স্টুডেন্ট।

প্রিন্সিপাল হেসে দিলেন শিরিন দাঁত কিড়মিড় করে বলল,
– মাথায় গোবর থাকলে এসব ভাবাটাই স্বাভাবিক।

– আমার মাথায় গোবর?

– তা নয় তো কি? আপনার মাথায় অনেক গোবর আছে সাথে সমস্যাও থাকতে পারে সময় থাকতে ভালো ডাক্তার দেখান।

– মিস ঝগড়ুটে বেশি বেশি হয়ে যাচ্ছে আপনি মেয়ে বলে কিছু বললাম না।

– আপনি কিছু বললে আমি কি ছেড়ে দিব? আপনার সব কয়টা চুল ছিঁড়ে দিব।

– মেয়েরা এছাড়া পারেটা কি? আমি আপনাকে মাথায় তুলে আছাড় মা’রবো।

শিরিন প্রিন্সিপালের দিকে রাগী দৃষ্টিতে তাকিয়ে,
– স্যার দেখুন এই অসভ্য লোকটা আমার সঙ্গে কেমন ব্যবহার করছে।

প্রিন্সিপাল ঝগড়া থামানোর জন্য,
– আহা আপনারা এখন এভাবে ঝগড়া করবেন না ঝগড়ার জন্য বাকি দিন পরে আছে।

শিরিন ক্রুব্ধ স্বরে বলল,
– আমায় কেন বলছেন? ঝগড়া তো এই খাটাস ব্যাটায় করছে।

তিহান ধমক দিয়ে,
– এবার কিন্তু সত্যি সত্যি আপনাকে মাথায় তুলে আছাড় দিব।

শিরিন কিছু বলতে যাবে তৎক্ষণাৎ প্রিন্সিপাল থামিয়ে দিল অনেক কষ্টে দু’জনের ঝগড়ার ইতি টেনে দু’জনকে দু’দিকে সরিয়ে দিল।

পুরো অনুষ্ঠানে ঝগড়া করতে না পারলেও দৃষ্টি দিয়ে দু’জন দু’জনকে ঝলসে দিয়েছে।
_________

রুশি দুই মেয়েকে নিয়ে গতকাল নিজের বাড়িতে চলে গেছে তবে ফোন করে অরিত্রি শিকদারকে বারবার কু বুদ্ধি দিয়েই যাচ্ছে।তিহান সোফায় বসে আছে আর বিড়বিড় করে কিছু বলছে, স্নিগ্ধতা কফির মগ এগিয়ে দিয়ে জিজ্ঞেস করল,

– ভাইয়া কাকে বিড়বিড় করে বকা দিচ্ছেন?

তিহান কফির মগ হাতে নিয়ে বলল,
– আজ একটা ঝগড়ুটে মেয়ের সঙ্গে দেখা হয়েছে জানো ভাবী মেয়েটা অনেক ঝগড়ুটে।

– ভাইয়া আপনি তো কলেজে গিয়েছিলেন।

– হুম মেয়েটার সঙ্গে তো কলেজেই ঝগড়া হয়েছে।

– কেন ঝগড়া হলো?

– মেয়েটা দেখতে পিচ্চিদের মতো তাই আমি পিচ্চি বলে ডেকেছি কিন্তু পরে শুনি সে নাকি আমার মতোই কলেজে নতুন টিচার হিসেবে জয়েন করেছে এতে আমার দোষ কিসের তাকে দেখলে বয়স বুঝা যায় না।

স্নিগ্ধতা মৃদু হাসলো,তিহান ব্রু নাচিয়ে,
– তুমি হাসছো ভাবী?

– কই না তো।

– যত খুশি হেসে নাও ওই ঝগড়ুটে মেয়েকে যদি টাইট দিতে না পেরেছি আমার নামও তিহান শিকদার না হু।

– আগে কফি খেয়ে নিন তারপর কিভাবে টাইট দিবেন ভেবে দেখা যাবে।

– আচ্ছা।
.
.
.
নিশ্চিন্তে স্তব্ধ ঘুমাচ্ছে আর তার ঠিক পাশে শুয়ে ঘুমন্ত স্তব্ধকে এক দৃষ্টিতে দেখে যাচ্ছে স্নিগ্ধতা। ঠোঁটে লাজুক হাসি, জাগ্ৰত স্তব্ধের থেকে ঘুমন্ত স্তব্ধকে অধিক ভালো লাগছে স্নিগ্ধতার। জেগে থাকলে লজ্জায় স্তব্ধের দিকে তাকানোরও সাহস নেই কিন্তু ঘুমালে দীর্ঘ সময় তাকিয়ে থাকলেও সমস্যা নেই কেউ দেখতেও পারবে না লজ্জায়ও পড়তে হবে না। স্নিগ্ধতার ইচ্ছে হচ্ছে স্তব্ধকে ছুঁয়ে দিতে যদি ঘুম ভেঙ্গে যায় সেই ভয়ে ইচ্ছেটা দমিয়ে রাখলো।

স্তব্ধের দিকে তাকিয়ে মনে মনে বলল,’একেই কি বলে ভালোবাসা? আমিও কি আপনাকে ভালোবাসি স্তব্ধ? হয়তো ভালোবাসি তবে কখনও হয়তো মুখ ফুটে বলা হবে না আপনি কি বুঝে নিতে পারবেন আমার ভালোবাসা?’

তাকিয়ে থাকতে থাকতে একসময় চোখের পাতা বুজে গেল ঘুমে তলিয়ে গেল স্নিগ্ধতা।

আজানের ধ্বনিতে স্তব্ধের ঘুম ভেঙ্গে গেছে রাতে দেরিতে ঘুমানোয় স্নিগ্ধতা এখনও ঘুমিয়ে আছে। স্তব্ধের একবার স্নিগ্ধতাকে ডাকতে ইচ্ছে করল কিন্তু মন সায় দিল না স্নিগ্ধতার কপালে আলতো করে ঠোঁট ছুঁইয়ে ওয়াশরুমে চলে গেল।

একে একে সব ছেলেরা নিজেদের কর্মক্ষেত্রে চলে গেছে। তিহান ইংরেজি শিক্ষক হিসেবে জয়েন করেছে সেকেন্ড ইয়ারের ব্যবসায় বিভাগের প্রথম ক্লাসটাই আজ তার কিন্তু রাস্তায় জ্যামের কারণে ক্লাসে আসতে পনের মিনিট দেরি হয়ে গেছে।

তিহান ক্লাসের দরজার সামনে দাড়াতেই ভেতরে শিরিনকে দেখতে পেল। শিরিন নিজের মতো ক্লাস নিচ্ছে, শিরিনের ক্লাস ছিল থার্ড পিরিয়ডে কিন্তু তিহানের দেরি হওয়ায় প্রিন্সিপাল তাকে এই ক্লাসে ঢুকিয়ে দিল। তিহান ডায়রীতে রুটিন চেক করে বলল,’রুটিন তো ঠিকই আছে তাহলে এই ঝগড়ুটে এই পিরিয়ডের ক্লাসে কি করে?’

তিহান গলা খাঁকারি দিয়ে শিরিনকে উদ্দেশ্য করে বলল,
– হ্যালো মিস শুনুন।

শিরিন ব্রু কুঁচকে তিহানের কাছে এসে,
– কি?

– এখন আমার ক্লাস নেওয়ার কথা আপনি কেন এসেছেন?

– প্রিন্সিপাল স্যার বলেছেন তাই।

– আচ্ছা আপনি যান আমি আমার ক্লাস নেই।

– উহু আমি যখন এসেছি আমিই ক্লাস নিব আপনি থার্ড পিরিয়ডে এসে নিজের ক্লাস নিয়েন।

– বললেই হলো নাকি? রুটিন অনুযায়ী আমার ক্লাস সো আমি নিব।

– একজন টিচার হয়ে টাইম মেইনটেইন করে চলতে পারেন না আবার বড় বড় কথা বলেন আপনার পনের মিনিট লেইট হয়েছে তাই বাইরে গিয়ে দাড়ান আমাকে আমার ক্লাস করতে দিন।

বলেই শিরিন ক্লাসের ভেতরে ঢুকে গেল।তিহান বাইরে গিয়ে দাড়িয়ে দাড়িয়ে বলতে লাগল,’আমি কি ইচ্ছে করে দেরি করেছি নাকি? সব দোষ তো ওই জ্যামের।’

দুপুরের খাবার খেয়ে বিছানায় শুয়ে আছে স্নিগ্ধতা মোবাইলের রিংটোন বাজতেই ঠোঁটের কোণে হাসি প্রশস্ত হলো। ফোনটা কানে ধরতেই অপরপাশ থেকে স্তব্ধ বলল,
– খেয়েছ দুপুরে?

– হুম, আপনি?

– খেয়েছি, কি করছো?

– কিছু না।

– আচ্ছা বিকেলে রেডি হয়ে থেকো আমরা ঘুরতে বের হব।

কোনো উওর না শুনে স্তব্ধ কল কেটে দিল,স্নিগ্ধতা যেন এটাই চেয়েছিল খুশি মনে কোন পোশাক পরবে ঠিক করতে লাগল।
_____________

বর্ষায় হাওরের ভিন্ন এক সৌন্দর্য দেখা যায় এই সৌন্দর্য মন ভালো করতে বেশ পটু, বর্ষায় হাওর ভ্রমণ কম বেশি সবারই ভালো লাগে।স্তব্ধ প্রতিবছর বর্ষায় বন্ধুদের সঙ্গে হাওর ভ্রমণে বের হয় এখনও বর্ষাকাল চলছে হাওরগুলো পানিতে পরিপূর্ণ।

হাওরের নাম শুনলেই প্রথমেই মনে পড়ে কিশোরগঞ্জের মিঠামইন হাওর।দুপাশের জলাধার এবং কনকনে শীতল বাতাস যেকোন মানুষের মন ভালো করার ওষুধ।

দীর্ঘক্ষণ ড্রাইভিং করে স্নিগ্ধতাকে নিয়ে মিঠামইনে পৌঁছালো স্তব্ধ। গাড়িতে বসেও স্নিগ্ধতা জানতো না কোথায় যাচ্ছে তারা জায়গাটা দেখে চিনতে অসুবিধা হলো না।গাড়ি একপাশে সাইড করে স্নিগ্ধতার হাত ধরে সামনে এগুতে এগুতে স্তব্ধ বলল,

– এটা হচ্ছে মিঠামইন হাওর আগে অনেকবার বন্ধুদের সঙ্গে আসা হয়েছে ভাবলাম এবার না হয় বউ নিয়ে আসি।

স্নিগ্ধতা মুচকি হেসে বলল,
– একবার আমার সব বান্ধবীরা মিলে এখানে ঘুরতে আসার প্লান করেছিল আমারও আসার ইচ্ছে ছিল বাবা রাজি হলেও মা রাজি হয়নি তাই কখনও আসা হয়নি আজ আপনি ইচ্ছেটা পূরণ করে দিলেন।

স্তব্ধ স্নিগ্ধতার সঙ্গে আরেকটু ঘেষে দাড়িয়ে,
– এর জন্য তো আমি একটা গিফট তোমার থেকে ডিজার্ভ করি তাই না?

– কি গিফট?

– বেশি কিছু না একটা চুমু দিলেই হবে আমি কিছু মনে করবো না।

স্নিগ্ধতা চোখ গরম করে,
– আপনার মুখে কিছু আটকায় না লজ্জা শরম নেই?

– লজ্জা নারীদের ভূষণ এছাড়া বউকে চুমু দিতে লজ্জা কিসের দিনে দশ বারোটা চুমু খাওয়া স্বামীদের প্রধান কর্তব্য।

– নিয়মটা নিশ্চই আপনি বানিয়েছেন?

– আশ্চর্য জানলে কিভাবে!

– আপনার সঙ্গে কথা বলা মানে লজ্জা শরম বিসর্জন দেওয়া।

চলবে…..
#স্তব্ধের_স্নিগ্ধতা
#মাশফিয়াত_সুইটি(ছদ্মনাম)
পর্ব:১৪

নৌকায় করে হাওর বিলের মাঝামাঝি অবস্থান করছে স্তব্ধ,স্নিগ্ধতা। বাতাসে স্তব্ধের সিল্কি চুলগুলো বারবার কপালে চলে আসছে আর স্তব্ধ হাত দিয়ে সেগুলো কপাল থেকে সরিয়ে দিচ্ছে স্নিগ্ধতা আড়চোখে স্তব্ধকে দেখতে ব্যস্ত মনে মনে বলছে,’এই ছেলেটা একটু বেশিই সুন্দর।’

স্নিগ্ধতাকে পেছন থেকে গিয়ে জড়িয়ে ধরল স্তব্ধ, স্নিগ্ধতা পূর্বের ন্যায় দাড়িয়ে আছে স্তব্ধের এমন কাজ কর্মে স্নিগ্ধতা অভ্যস্ত হয়ে গেছে।স্তব্ধ আহ্লাদি কন্ঠে বলল,

– মহারানী এবার চলুন এখান থেকে বাড়িতে যেতে হবে তো।

– এত তাড়াতাড়ি? এখনও তো পুরো হাওর ঘুরাই হলো না।

– এখন পুরো হাওর ঘুরতে গেলে বাড়ি ফিরতে ফিরতে ভোর হয়ে যাবে আরেকদিন হাতে অনেক সময় নিয়ে এসে পুরোটা ঘুরে যাব।

স্নিগ্ধতা মনটা খারাপ করে বলল,
– আচ্ছা চলুন।

– রাগ করেছ?

– উহু।

– আমার তো মনে হচ্ছে আমার বউ রাগ করেছে।

স্নিগ্ধতা কিছু বলল না স্তব্ধ ঠোঁটে দুষ্টু হাসি এনে বলল,
– বউ রাগ করেছে জামাই হয়ে এটা মেনে নেওয়া অনৈতিক কাজ আসো তোমাকে হাম্মি দিয়ে রাগ ভাঙিয়ে দেই।

স্তব্ধের এমন কথা শুনে স্নিগ্ধতা কিছুটা চেঁচিয়ে,
– না আমি রাগ করিনি চলুন বাড়িতে যাব।

– উহু স্নিগ্ধ বেইবি এসব বললে আমি শুনছি না আমি তোমার রাগ ভাঙাবোই।

– আমি এবার জোরে জোরে কান্না করবো।

স্তব্ধ অস্থির হয়ে জিজ্ঞেস করল,
– কান্না করবে কেন? কোথায় কি হয়েছে?

– এখনও কিছু হয়নি কিন্তু আপনি এখানে আমার সঙ্গে কিছু করলে কান্না করবো।

– আমার মতো একটা ভদ্র ছেলে তোমার সঙ্গে কি করবে? আমি তো শুধু হাম্মি দিতে চাইলাম।

– দেওয়া যাবে না মানুষ দেখবে।

– ওহ এই ব্যাপার দাড়াও ওদেরকে অন্যদিকে ঘুরতে বলি।

– এ কেমন লোক আমার কপালে জুটল? লাজ লজ্জা কিছু নেই।

– কি বলো আমার অনেক লজ্জা।

– তার নমুনা দেখতেই পাচ্ছি বাড়িতে যাব চলুন।

– বাড়িতে যাওয়ার এত তাড়া কিসের? দু তিনটে বাচ্চা রেখে এসেছ নাকি?

– আপনিই তো বললেন বাড়িতে যেতে হবে।

– আমি হাম্মি খাওয়ার কথাও বলেছি।

স্নিগ্ধতা কপালে হাত দিয়ে দাড়িয়ে রইল এবার সে সিদ্ধান্ত নিয়েছে আর একটা কথাও বলবে না। স্নিগ্ধতাকে চুপ থাকতে দেখে স্তব্ধ বলল,
– আচ্ছা বাড়িতে যাই চলো তারপর হাম্মি দিব।

স্নিগ্ধতা এবারও কথা বলল না। নৌকা পাড়ে গিয়ে থামলো, স্তব্ধ এবং স্নিগ্ধতা দু’জনে নেমে গিয়ে গাড়িতে উঠল।
.
.
স্নিগ্ধতাকে নিয়ে শপিং করে রাতের ডিনার সেরে তারপর বাড়ি ফিরল স্তব্ধ।বাড়ি ফিরতে ফিরতে বেশ রাত হয়েছে বাড়ির সবাই শুয়ে পড়েছে। স্নিগ্ধতা বালিশে শুতেই স্তব্ধ স্নিগ্ধতার আঙুলে চামটি কেটে বলল,

– বাড়িতে এসে তোমায় হাম্মি দেওয়ার কথা ছিল।

– এখনও ভুলেননি!

– হাম্মি কি ভুলার জিনিস নাকি? বউকে ঘুমানোর আগে হাম্মি দেওয়া জামাই হিসেবে আমার একমাত্র গুরুত্বপূর্ণ কাজ আর আমি আমার কাজে অবজ্ঞা করতে পারি না।

স্নিগ্ধতা মুখ বাঁকিয়ে বলল,
– আপনার মতো কাজের ক্ষেত্রে ফাঁকিবাজ ছেলে আমি দু’টো দেখিনি আপনার বাবা তো আপনাকে টেনে হিচড়ে অফিসে নিয়ে যায় আবার বড় বড় কথা বলেন।

– তুমি বউ বউয়ের মতো রোমান্টিক কথা বলবা তা না করে তুমি কেন ঠেস দিয়ে কথা বলে অপমান করবে আজব।

– গুড নাইট।

– আমার হাম্মি?

– ঘুমান।

স্নিগ্ধতা চোখ বুজে নিলো, স্তব্ধ পরাজিত ভঙ্গিতে ঘুমানোর জন্য চোখ বন্ধ করল।
______________

রাত পেরিয়ে আরো একটা দিনের আগমন হলো। তিহানের গাড়ি চলছে কলেজের দিকে,ড্রাইভার গাড়ি চালাচ্ছে তিহান পেছনে বসে জানালা দিয়ে বাইরের দৃশ্য দেখছে হঠাৎ কাউকে দেখে ড্রাইভারকে সাইড করে গাড়ি থামাতে বলল। তিহান জানালা দিয়ে তাকিয়ে বলল,

– এই পিচ্চি থুরি এই শিরিন ম্যাডাম।

শিরিন কন্ঠস্বর অনুসরণ করে তিহানের দিকে তাকিয়ে ব্রু জোড়া কুঁচকে নিলো।তিহান আবারো ডেকে বলল,

– এখানে দাড়িয়ে আছেন কেন?

– রিক্সার জন্য।

– মনে হয় না এখন রিক্সা পাবেন আমিও কলেজে যাচ্ছি গাড়িতে উঠুন একসঙ্গে যাওয়া যাক।

– দরকার নেই আপনি যান।

– আপনাকে রেখে তো যেতে পারি না এক জায়গায়ই তো দু’জনে যাব।

– বললাম তো আপনি যান।

– আপনি কি আমার সঙ্গে যেতে ভয় পাচ্ছেন?

শিরিন রেগে গিয়ে বলল,
– শিরিন কাউকে ভয় পায় না।

– তাহলে গাড়িতে উঠছেন না কেন?

শিরিন আর উপায় না পেয়ে গাড়িতে উঠে গেল।তিহানকে মুখ বাঁকিয়ে বলল,
– গাড়িতে উঠেছি বলে এই নয় আপনার সঙ্গে ঝামেলা মিটে গেছে।

– আপনি কি আরো ঝগড়া করতে চান!

– ঝগড়া করা আপনার স্বভাব আমি তো শুধু উওর দেই।

– ওহ আচ্ছা।

তিহান আড়চোখে তাকিয়ে বিড়বিড় করে বলল, ‘নিজে ঝগড়া করে আমার নামে দোষ দেয় অসভ্য মেয়ে।’

গাড়ি কলেজের সামনে থামতেই শিরিন দ্রুত নেমে গিয়ে ভেতরে চলে গেল।তিহান আহত দৃষ্টিতে তাকিয়ে,’একটা ধন্যবাদ দেওয়ার প্রয়োজন মনে করলো না!’

রাহেলা বেগমের পায়ে ব্যথা বেড়েছে স্নিগ্ধতা কুসুম গরম তেল দিয়ে পা টিপে দিচ্ছে। রাহেলা বেগম চোখ বন্ধ করে বললেন,
– ব্যথাটা কমেছে তোর হাতে জাদু আছে নাত বউ, এবার আমার পাশে এসে একটু বস।

স্নিগ্ধতা রাহেলা বেগমের পাশে গিয়ে বসল। রাহেলা বেগম আবারো বললেন,
– একটা পান বানিয়ে দে।

– একটু আগেই পান খেলে এখন আবার।

– দে না।

– ডাক্তার তোমায় এত পান খেতে নিষেধ করেছে দিদান।

– তুইও বাকিদের মতো বলছিস?

– তোমার ভালোর জন্যই বলছি।

রাহেলা বেগমের ঘরে এলেই স্নিগ্ধতার একাকীত্ব দূর হয়। রাতুল শিকদার ইদানিং অফিসে খুব ব্যস্ত থাকেন তবে স্নিগ্ধতার খবর নিতে ভুলেন না সানজিদ ওয়াজেদ বাবা হয়ে মেয়ের জন্য যা করতে পারেননি রাতুল শিকদার স্নিগ্ধতার জন্য তাই করছেন নিজের মেয়ের মতো আগলে রাখছেন।স্তব্ধ আগের থেকে কিছুটা ম্যাচিউর হয়েছে।

স্নিগ্ধতার মোবাইলে একটা নাম্বার থেকে আটটা কল এসেছে। পরিচিত ভেবে স্নিগ্ধতা কল ব্যাক করতেই আদ্রিক কল রিসিভ করে বলল,

– অতঃপর তুমি কলটা ধরলে স্নিগ্ধতা।

আদ্রিকের কন্ঠস্বর শুনে স্নিগ্ধতার ভেতরে পুরনো ভয়ের সঞ্চার হলো কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বলল,
-আ..আদ্রিক!

– চিনেছ তবে? যাই হোক অনেকদিন তোমার সঙ্গে দেখা সাক্ষাৎ হয় না একবার কি আমার সঙ্গে দেখা করবে?

– আপনি কেন আমার পেছনে পড়ে আছেন? কেন এমন করছেন?

– তা তো তুমি বেশ ভালো করেই জানো, তোমার সঙ্গে আমার অনেক হিসাব নিকাশ বাকি আছে, তোমার হাজব্যান্ড স্তব্ধ শিকদার শুধুমাত্র তোমার কারণে আদ্রিক খাঁনের গায়ে হাত তুলেছে তোমাদের দু’জনকেই এর ফল ভোগ করতে হবে তবে তোমাকে অত কষ্ট দিব না।

– স্তব্ধ আপনাকে আমার কারণে মে’রেছে!

– কেন তোমায় কিছু বলেনি?

– বাবার কাছ থেকে শুনেছি আপনাকে মে’রেছে কিন্তু কারণটা জানি না আমার জন্য কেন মা’রলো?

– স্তব্ধের কাছ থেকে জেনে নিও আর হ্যা খুব শিঘ্রই আমাদের দেখা হবে আর সেদিন তোমাকে আমার হাত থেকে কেউ বাঁচাতে পারবে না স্নিগ্ধা রানী।

কল কেটে দিল আদ্রিক। মোবাইল পাশে রেখে বিছানায় বসে পড়ল স্নিগ্ধতা বিষ্মিত স্বরে বলল,’আমার কারণে আদ্রিককে উনি মে’রেছেন কি এমন ঘটেছে কি বলেছে আদ্রিক আমার নামে? পুরোটা যদি জানে তাহলে কি হবে আদ্রিকের! আবারও ঝড়ের মতো জীবনে আসতে চাইছে আদ্রিক স্তব্ধের কোনো ক্ষতি করে দিবে না তো?

সন্ধ্যা থেকে নিজেকে ঘরবন্দি করে রেখেছে স্নিগ্ধতা নিচে যেতে ইচ্ছে করছিল না রাতে খাওয়া হয়নি। ঘরে সন্ধ্যাবাতিও জ্বালানো হয়নি। রাতে বাড়ি ফিরে নিজের ঘর অন্ধকার দেখে বেশ বিরক্ত হলো স্তব্ধ। আলো জ্বালাতেই বিছানায় স্নিগ্ধতাকে শুয়ে থাকতে দেখল। স্নিগ্ধতা টের পেয়েছে স্তব্ধ এসেছে কিন্তু স্তব্ধ চুপচাপ আলমারি থেকে পোশাক নিয়ে ওয়াশরুমে ঢুকে গেল।

ফ্রেশ হয়ে এসে বিছানায় বসলো,স্নিগ্ধতা ভয়ে ভয়ে জিজ্ঞেস করল,
– এখানে খাবার নিয়ে আসব নাকি নিচে যাবেন?

– খেয়ে এসেছি।

– ওহ।

কিছুক্ষণ দু’জনের মধ্যে নিরবতা চললো স্তব্ধ নিরবতা ভেঙ্গে গম্ভীর গলায় বলল,
– একটা কথা কি জানো স্নিগ্ধ? কাউকে কাছে টেনে নিতে যেমন আমার সময় লাগে না তেমনি কাউকে নিজের থেকে দূরে সরিয়ে দিতেও সময় লাগে না।

স্নিগ্ধতা অস্থির গলায় বলল,
– হঠাৎ এই কথা? আমাকেই বা কেন বলছেন?

– বলতে বাধ্য করেছ তুমি, তোমাকে যেমন নিজের ওয়াইফ হিসেবে মেনে নিতে এবং কাছে টানতে বেশি সময় লাগেনি তেমনি তোমাকে আমার থেকে দূরে সরাতে বেশি সময় লাগবে না তবে তোমাকে আমি নিজের থেকে দূরে সরাবো না কারণ তুমি এ ক’দিনেই আমার জীবনের বিশেষ একটা অংশ হয়ে গেছ যাই করো না কেন আমাকে জানিয়ে এবং ভেবে চিন্তে করবে তুমি না জানালেও আমি কিন্তু কোনভাবে সব জেনে যাব আর যদি জেনে যাই আর তোমার কারণে আমি কষ্ট পাই সেদিন তুমি আমার ভয়ংকর রূপ দেখতে পাবে আশা করি কথাগুলো মাথায় রাখবে আমি চাই না তোমার সঙ্গে খারাপ কিছু করতে।

স্তব্ধের ঠান্ডা হুমকি গুলো স্নিগ্ধতার ভেতরে কম্পন সৃষ্টি করছে।স্তব্ধ উল্টো পাশ হয়ে শুয়ে পড়েছে, স্নিগ্ধতাও পাশে শুয়ে পড়ল শরীর গরম হয়ে যাচ্ছে শীত লাগছে একের পর এক ঝড় তার জীবনেই কেন আসে বুঝতে পারে না যখনি সুখ ধরা দেয় তখনি কষ্ট গুলো এসে মাঝখানে বাঁধা সৃষ্টি করে। চোখ জোড়া ভিজে উঠেছে নিজের মায়ের মুখটা ভেসে উঠেছে চোখের সামনে,স্নিগ্ধতার চেঁচিয়ে বলতে ইচ্ছে করছে,’মা কেন এই নিষ্ঠুর পৃথিবীতে আমায় একা ফেলে গেলে আমার যে তোমাকে খুব দরকার, তোমার কোলে মাথা রেখে ঘুমানোর দরকার একটু ভালোবাসার দরকার।’

কথাগুলো ভেতরেই আটকে আছে বলা আর হচ্ছে না। চোখগুলো খুলতে পারছে না মাথায় অসহ্য যন্ত্রনা হচ্ছে এই যন্ত্রনা নিরাময়ের ওষুধের খোঁজ এখনও স্নিগ্ধতা পায়নি। শরীর যেন অবশ হয়ে গেছে চেষ্টা করেও নড়াতে পারছে না বাবার কথা মনে পড়ছে কেন জানি মনটা কু ডেকে উঠছে হঠাৎ করেই বাবাকে দেখতে ইচ্ছে করছে স্নিগ্ধতার। বিড়বিড় করে বলছে,’বাবা তোমায় দেখতে ইচ্ছে করছে একটু আমার মাথায় হাত বুলিয়ে স্নিগ্ধা মা বলে ডাকবে?’

স্নিগ্ধতার গুঙরানির শব্দে পাশ ফিরে তাকালো স্তব্ধ, নরম কন্ঠে ডাক দিলো,
– স্নিগ্ধ কি হয়েছে?

কোনো উওর এলো না স্নিগ্ধতা বিড়বিড় করে কথা বলেই যাচ্ছে স্তব্ধ শোনার চেষ্টা করল কিন্তু কিছুই বুঝতে পারলো না।স্তব্ধ স্নিগ্ধতাকে নিজের সঙ্গে মিশিয়ে নিলো,স্নিগ্ধতার শরীর অনেক গরম জ্বর এসেছে স্তব্ধ শোয়া থেকে উঠে আলো জ্বালিয়ে থার্মোমিটার দিয়ে পরীক্ষা করতেই চমকে গেল বিষ্মিত স্বরে বলল,

– ১০৪ ডিগ্ৰি জ্বর!

ভয় আর অস্থিরতা একসঙ্গে দেখা দিলে স্নিগ্ধতার জ্বর উঠে এটা যেন তার এক রোগ। ছোট থেকেই অনেক এমন হয়েছে তখন ভয়ের কারণ ছিলেন শাহিলী ওয়াজেদ। এমন অনেক রাত গেছে স্নিগ্ধতা জ্বর নিয়ে বিছানায় ছটফট করেছে কিন্তু কাক পক্ষীও টের পায়নি শাহিলী ওয়াজেদের ভয়ে কখনও মুখ ফুটে সানজিদ ওয়াজেদকে কিছু বলতে পারেনি। সানজিদ ওয়াজেদও বাড়িতে অশান্তি হওয়ার ভয়ে কখনও অন্যায়ের প্রতিবাদ করেননি তবে এ নিয়ে মনে মনে অনেক অভিমান পুষে রাখলেও বাহিরে কখনও প্রকাশ করেনি স্নিগ্ধতা। কোনো অভিযোগও করেনি। আজ স্নিগ্ধতার এই জ্বরের ছটফটানি দূর করার জন্য সেবা করার জন্য একটা নিজের মানুষ হয়েছে ভালো মন্দ দেখার মতো একটা মানুষ হয়েছে।

সুখ বারবার তার কাছে আসতে চাইছে আবার চলেও যাচ্ছে।

চলবে……..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here