সে
লেখনী – সাইমা ইসলাম প্রীতি
৬.
জ্ঞান ফিরতেই নিজেকে চিলেকোঠার ঘরে আবিষ্কার করে মৌনতা। ঘারে ব্যাথা করছে প্রচন্ড। চোখ মুখ কুঁচকে উঠে বসে সেখানে হাত দিতে দেখতে পায় রক্ত ঝরছে। অ্যালভিন তাকে আঘাত করেছে মানতে কেমন একটা খারাপ লাগছে তার। অ্যালভিন হয়তো অন্য জগতের, মৃত্যু মানুষ। তবে তার উপরে এতো আস্তা কেনো করে মৌনতা জানে না। হয়তো এতো দিন তাকে আঘাত করেনি তাই! মৌনতা নিজেকে ধাতস্থ করে নিচে এসে জায়গাটাতে ব্যান্ডেজ করে নেয়।
পূর্ণি আজ চলে গিয়েছে বাড়ি। তাই পুরো বাড়িতে কেবল মৌনতা একা। ময়না এসেও সব কাজ করে গেছে সকালে। মৌনতা দুপুরের খাবার খেয়ে টিভি ছেড়ে বসে। একটা ইংলিশ মুভি দেখলে খারাপ হয় না। একা বাড়িতে হরর মুভি দেখতে সবচেয়ে বেশি ভালো লাগে মৌনতার। খানিকটা সময় মুভি দেখার পর হঠাৎ খেয়াল হয় রান্নাঘর থেকে কেমন খটখট শব্দ হচ্ছে সঙ্গে বিচ্ছিরি একটা গন্ধও আসছে। মৌনতা অবাক হয়ে রান্নাঘরে এসে নিজের মুখ চেপে ধরে। সেদিন চিলেকোঠায় দেখা ছেলেটা অর্থাৎ অ্যালভিন ফ্রিজ খুলে কাঁচা মাংস খেয়ে চলেছে। মুখ বেয়ে বেয়ে তার টাটকা রক্ত পড়ছে। মৌনতা কিছু বলার আগেই অবয়বটা মৌনতার খুব কাছাকাছি চলে আসে। অ্যালভিনের উজ্জ্বল সোনালী চোখগুলোতে ভয়াবহ হিংস্রতা। মৌনতার হাত পা কাঁপতে থাকে। অ্যালভিন মৌনতার দিকে সামান্য ঝুঁকে বাঁকা হেসে বলে,
‘ তোমার রক্তে একটা মাদকতা রয়েছে। আমি সাধারণত মাংস খাইনা। কিন্তু আজ তোমার রক্ত আমাকে পাগল করে তুলেছিল। এর পর আমার সামনে আসলে তোমার শরীরের শেষ রক্ত বিন্দু পর্যন্ত আমি শুষে নেব। ‘
কথাটা বলেই মৌনতার চোখের সামনে অদৃশ্য হয়ে যায় অ্যালভিন। যৌনতার ভয় লাগলেও চোখে মুখে তার ছাপ পড়তে দেয় না। মৌনতা আর স্থির থাকতে পারে না। মুখ চেপে দৌড়ে ওয়ালরুমে গিয়ে বমি করে দেয়।
রাতে চিলেকোঠার ঘরে গিয়ে গিটার টা নিয়ে আসে মৌনতা। নিজের ঘরে বসে বাজানোর চেষ্টা করে। কয়েকবার গানের সুর তোলার চেষ্টা করেও যখন পারে না হাল ছেড়ে দেয়। গিটার পাশে রেখে মনমরা হয়ে বসে থাকে। হঠাৎই গিটারের টিউন কানে আসতেই পাশে দেখে তার পাশে অ্যালভিন বসে রয়েছে। মৌনতা চুপচাপ বসে শুনে তার গিটার বাজানো । একপ্রকার নেশায় ডুবে থাকে। অ্যালভিন গিটার বাজাতে বাজাতে একসময় থেমে যায়। মৌনতা ভয় নিয়ে তার দিকে চেয়ে থাকে। মৌনতাকে তার কাছে যেতে না বলে নিজেই বারবার চলে আসে। অ্যালভিনের কন্ঠ এবার নরম শোনায়,
‘ আমার নাম আর ব্ল্যাক স্টোন তুমি কোথায় পেলে? ‘
মৌনতা চরম পর্যায়ের অবাক হয়ে বলে,
‘ এমা! আপনি তো মৃত মানুষ। তাহলে আপনি জানেন না? ‘
অ্যালভিন ভ্রুঁ কুঁচকে বলে,
‘ হ্যা আমি মৃত মানুষ। মৃত মানুষের ও একটা জগৎ আছে মা সম্পর্কে সাধারণ জগতের মানুষের কোন ধারণা নেই। বিজ্ঞান এই প্যারানমাল জগতের অস্তিত্ব বিশ্বাস করে না। আমার সুপার নেচারাল পাওয়া আছে কিন্তু আমার সবকিছু জানার ক্ষমতা নেই। এখন তুমি সেটা বলবে নাকি আমি নিজেই মেনে নেব?’
‘ আমি আমার নানু ভাইয়ের একজন কাজের বন্ধুর সাথে কথা বলেছি। উনি উনার পুরোটা জীবন এসব প্যারানমাল বস্তুর বিষয়ে গবেষণা করেই কাটিয়েছেন তাই অনেককিছুই জানেন। ব্ল্যাক স্টোন দিয়ে মে আত্মাদের বশিভূত করা যায় একা তিনিই আমাকে বলেছেন। আমি তার কাছ থেকেই এনেছি এটা। ‘
‘ তো আমাকে বশে আনতে চাও নাকি! ‘
অ্যালভিনের কথায় থমকায় মৌনতা। সে এতো কিছু ভেবে আনেনি ব্ল্যাক স্টোন। কেবল চেয়েছিল অ্যালভিনকে ভয় দেখিয়ে তার সম্মন্ধে জানতে চেয়েছিল। এভাবে একজন ভূতের সাথে কথা বলবে সেটাও তার ভাবনার বাহিরে ছিল। তবে এখন সত্যিই বলে আনতে ইচ্ছা করছে। মৌনতা মুচকি হেসে বলে,
‘ হুঁ। ‘
‘ কেনো? ‘
‘ জানি না। ‘
‘ আমাকে বশে আনা অত সহজ না। এর পূর্বে অনেকেই চেষ্টা করেছে। আমার ক্ষমা সম্পর্কে খুব দ্রুত আন্দাজ করতে পারবে আসা করি। ‘
বলে রহস্য জনক হাসি দিয়ে হাওয়ায় মিলিয়ে যায় অ্যালভিন। মৌনতার বড্ড অবাক লাগে। অ্যালভিনের সাথে সময় কাটাতে কি তার ভালোলাগছে? ইদানিং অ্যালভিনের কথাই সারাটা দিন ভেবে চলে সে। নিজের ভাবনাতে নিজেরই ভয় করে মৌনতার। ভবিষ্যতে কি হতে পারে?
চলবে.