সেই তমসায় পর্ব ১৩

0
317

#সেই_তমসায়_১৩
নুসরাত জাহান লিজা

২৫.
“সবই বুঝলাম, কিন্তু মুনিম, আপনার হাতের ভয়ংকর দর্শন জিনিসটা এবং আপনার আচরণ কোনোটাই সুবোধ মানুষের সাথে যায় কি?”

মুনিম মৃদু হেসে /পি/ /স্ত/ /ল/টার দিকে তাকিয়ে আবার চোখ তুলে বলল, “এটা উনি নিজেই আমাকে দিয়েছিলেন। কাউকে বিশ্বাস করতে পারতেন না তো। কীভাবে চালাতে হয় সেটা শিখিয়ে পড়িয়ে তার সাথে রাখতে শুরু করলেন। শেষ দিকে তার খানিকটা অনুশোচনা হয়েছিল ভেবেছিলাম। কিন্তু…”

“কিন্তু?” মুনিম থামতে প্রশ্ন করল ময়ূখ।

এবার মুখ খুলল শিরিন, “তার সন্তানদের সারাজীবন তাচ্ছিল্য করে আসলেও উইলে ন্যায্য বি/চা/র তারাই পেল। সেসব নিয়ে আমাদের আক্ষেপ ছিল না, তার কিছু চাইওনি। কিন্তু যখন দেখলাম তার কর্মচারীদের জন্য বরাদ্দ অংশের সমান আমাদের দেওয়া হলো তখন সেটা কোথাও লাগল ভীষণভাবে। তার চাইতে কিছু নাই দিতেন, তবুও তো… কিন্তু তিনি রীতিমতো আমাদের অপমান করেছেন। তাই এই চু/রি করা।”

“আপনারা উইল আগে দেখেছিলেন?”

“রমজান আলী আর আমি ছিলাম সেখানে। আমি একজন স্বাক্ষী হিসেবে ছিলাম, সাজিদও দেখেছিল। কিন্তু কোথায় রাখা হয়েছিল সেটা কেউই জানত না।”

“তাহলে এই অপমান এবং আগের কৃতকর্ম মিলিয়ে এহতেশাম সাহেবের প্রতি রাগ থাকা স্বাভাবিক নয় কি?”

“ময়ূখ সাহেব, আপনি ভুল পথে হাঁটছেন। এসব ঢি/ল ছুঁড়ে লাভ হবে না। আমরা ক্র/দ্ধ ছিলাম ঠিকই। লোকটার প্রতি রাগ, ঘৃণা ছিল অমানুষিক। কিন্তু তাই বলে খু/ /ন? অসম্ভব। ওই লোকের রক্ত আমাদের শরীরে আছে ঠিকই, কিন্তু মায়ের রক্ত আর আদর্শও কম নেই। হ্যাঁ, একটা কাজ করে ফেলেছি, তবে এটা আমাদের প্রাপ্য অধিকার।” মুনিম গলা উঁচিয়ে কথাগুলো বলল।

“আমি আপনাদের বিশ্বাস করলাম। দেখুন, আমাকে এখানে দুই তিনদিনের জন্য আটকে রেখে কোনো লাভ হবে না। উল্টো আসল মানুষ হাওয়া হয়ে যেতে পারে এরমধ্যে। আমি আপনাদের সাহায্য করতে পারি। যে অংশটুকু ফেরত দিতে চাইছেন সেটা আপনারা ফেরত দিতে গেলে ধরা পড়ে যেতে পারেন। আমি এগুলো ওদের কাছে পৌঁছে দেব। পাশাপাশি আমার তালিকা থেকে আপনারা বাদ যাবেন। ভেবে দেখুন, আমার হাতে সময় নেই। আটকে রাখতে পারবেনও না। আমি নিজে থেকে বেরুলে আপনারা বি/প/দে পড়বেন।”

এই দুই ভাইবোন যথেষ্ট বুদ্ধি রাখে মগজে। ময়ূখের প্রস্তাব লুফে নিল। নিজের অ/ /স্ত্র/টাও ফেরত পেল।

“শিকারের সময় দুর্ঘটনা ঘটা মানুষটার পরিচয় আপনার জানা আছে?”

“নাহ্! টাকা দিয়ে ঝামেলা মেটানো গিয়েছিল, আর সেখানে যাবার প্রয়োজন মনে করেনি বোধহয় কেউ। তবে পুরোনো লোক যারা আছে তারা বলতে পারবে বোধহয়।”

ফিরে যাবার সময় দরজার হাতলে হাত রেখে পেছনে ফিরে আচমকা ময়ূখ মুনিমের চোখের দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করল,

“মৃদুলার সাথে তো আপনার ভালো সখ্যতা ছিল, তাকে ফেলে চলে যাবেন?”

মুনিমের মুখাবয়বে ক্ষণেকের জন্য একটা বিষাদী ছায়া পড়ল বলে মনে হলো ময়ূখের। তবে মুহূর্তেই তা মিলিয়ে গেল। উত্তর এলো,

“ওটা আমার ইস্যু। আপনাকে সবকিছু নিয়ে মাথা ঘামাতে হবে না।” গলাতেও যেন খানিকটা আবেগের মাখামাখি।

ময়ূখ স্মিত হেসে বেরিয়ে এলো বাড়ি থেকে। হাতে বিশাল বড় স্যুটকেস। অনেকেই সময় অতিবাহিত হলেও কাজ এগিয়েছে ভালোই। তবে নিজের কিছু অপূর্ণতায় নিজের উপরেই সে অসন্তুষ্ট। আরও চৌকস হতে হবে, আরও চ/তু/র হতে হবে। সবসময় ভাগ্য সহায়তা না-ও করতে পারে।

২৬.
ময়ূখের কদর এহতেশাম সাহেবের বাড়িতে কয়েকগুণ বেড়ে গেল। মুনিম যে এটা নিয়েছিল সেটা বলেনি, ওরাও তো এসবের অংশীদার, সারাজীবন বঞ্চিত হয়েছে, এবার কিছু অন্তত পাক। পন্থা ভুল, তবুও ময়ূখ এটা মেনে নিয়েছে।

ওকে অনেকবার ঘুরিয়ে প্যাঁচিয়ে প্রশ্ন করা হলেও সে উত্তর দেয়নি। বলেছে,

“প্রাপ্ত সম্পদ তো পেয়েছেন। কে নিয়েছিল জানাটা খুব জরুরি নয়। জানানোর হলে আমি এড়িয়ে যেতাম না নিশ্চয়ই।”

এই গোয়েন্দা যে এককথার মানুষ এটা তারা এই কয়দিনে উপলব্ধি করেছে, তাই মাথায় প্রশ্নটা ঘুরলেও আপাতত প্রসঙ্গটা সরিয়েই রাখতে হলো।

রাত বাড়তেই মাথার ব্যথাটা আবারও খানিকটা যন্ত্রণা দিল। রমজান আলীর মাথায় এমন দুইটা দিতে পারলে শান্তি পেত। ব্যাটাকে সে দেখে নেবে ঠিকই।

পরেরদিন সকাল হতেই সে এহতেশাম সাহেবের বাবার ঘরে এলো চাবি নিয়ে। একটা বড় কাঠের সিন্দুক আছে এখানে। ভীষণ ভারি। এটারও চাবি এই ঘরের চাবির সাথেই পাওয়া গেল। অনেক অনেক পুরনো কাগজপত্রে ঠাসা এটা। অনেক ঘেঁটে যা প্রয়োজনীয় মনে হলো সেগুলো আলাদা করে রাখল। প্রায় ঘণ্টাখানেক পরে কাজ শেষ করে সেগুলো নিয়ে নিজের ঘরে এসে দরজা এঁটে দিল।

সারাদিন রোদ থাকলেও রাতে ভীষণ ঠান্ডা পড়েছে। একটা ফাইলে পুরোনো কিছু চিঠি পেল। সেটা নিয়ে লেপের ভেতরে আরাম করে বসল ময়ূখ।

কয়েকটা চিঠি একটু একটু করে পড়ে রেখে দিচ্ছিল, এভাবে চার-পাঁচটা সরানোর পরে এহতেশাম সাহেবের একটা চিঠি পাওয়া গেল। প্রথম দুই লাইন পড়ে মনে হলো এটা ওর কাজে লাগতে পারে। প্রথম লাইনে সম্বোধন আর সালামের পরেই লেখা,

“আপনি আমাকে ফিরিয়া আসিবার জন্য চিঠি পাঠাইয়াছেন। আমি ফিরিয়া আসিব অবশ্যই। আপনি একটা অল্পবুদ্ধিসম্পন্না রমনীর সাথে আমার বিবাহ দিয়াছিলেন। তাহাকে আমার মনে ধরে নাই। তথাপি, সংসার ধর্মে স্থির হইয়াছিলাম। জানিয়ে সন্তুষ্ট হইবেন কিনা জানা নাই, এখন আমি আমার মনের মতো একজনকে পাইয়াছি। যে আমার সব কথার সাথে তাল মিলাইতে পারে।”

শেষের দিকে আরও কিছু কথা ছিল। ময়ূখ সব পরিকল্পনা তৈরি করে ফেলল। পরেরদিন সে রায়হান, সাঈদ আর মুনিরার পাশাপাশি বাড়ির নতুন-পুরোনো সকল গৃহকর্মীর সাথে কথা বলল।

সন্তানরা প্রথমে ততটা বলতে না চাইলেও বাবার দ্বিতীয় বিয়ের খবর শুনে এবং এই চিঠি পড়ে সাথে ছবিটা দেখে একে একে ভেতরের কথা বলতে শুরু করল। পুরোনো লোকদের কাছে চমকপ্রদ তথ্য পাওয়া গেল। প্রাপ্ত সব খণ্ড খণ্ড অংশ একসাথে জুড়ে দিতেই এহতেশাম আহমেদের জীবনের একটা ছবি ময়ূখের সামনে দাঁড়িয়ে গেল।

দু’দিন সবকিছু নিয়ে ভীষণ ব্যস্ততার মধ্যে কাটল। মুনিম আর শিরিন নিজেদের সিদ্ধান্তে পরিবর্তন এনেছে। শিরিন ঠিক সময়ে গেলেও মুনিম রয়ে গেল। সে মাস ছয়েক পরে যাবে বাইরে। এটা নিয়ে ময়ূখ মাথা ঘামালো না। সে মঈদুল আর রেদোয়ানকে বাজার থেকে টেলিফোনে নতুন নির্দেশনা দিয়েছিল। সেসব তথ্যও হাতে এসে পোঁছেছে। দুর্ঘটনায় প্রাণ হারানো লোকটার পরিবারের সদস্যের নাম দেখে খুব একটা চমকায় না সে। তবে পরিকল্পনায় রদবদল করে নতুন করে ঢেলে সাজালো।

সন্দেহভাজন কিছু নাম যুক্ত হলো, কিছু একেবারে বাদ পড়ে গেল।

এহতেশাম সাহেবের জীবনের একটা কালো অধ্যায়ের পাশাপাশি এটাও উঠে এলো, এই বাড়ির চার দেয়ালে অজস্র পা/ /প ব/ /ন্দী হয়ে আছে। এমন লোকের নিজে ছাড়া প্রত্যেকে শ/ /ত্রু হবে তাই তো স্বাভাবিক। তবুও বাইরের মানুষের কাছে নিজের স্বচ্ছ ইমেজ ধরে রেখেছিলেন কোনো এক ম/ন্ত্র/ব/লে!

ময়ূখের মনে হলো এই এহতেশাম আহমেদ মানুষটা ছিলেন আসলে আগাগোড়া একজন সেলফ অ/ব/সে/স/ড সা/ই/কো/প্যা/থ!
…….
(ক্রমশ)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here