#সেই_তমসায়_১১
নুসরাত জাহান লিজা
২২.
সময় যেন ক্ষণেকের জন্য থেমে গেল। অদূরেই কোথাও কাক ডাকছে ক/র্ক/শ শব্দে। দুজনের তীক্ষ্ণ দৃষ্টি পরস্পরের উপরে স্থির হয়ে রইল। কারোর চোখেই ভ/য়ে/র চিহ্ন নেই, বরং একটা বন্যতা মিশে আছে।
ক্যাটক্যাটিয়ে হাসল রমজান আলী, এরপর বি/দ্রু/পে/র সুরে বলল, “আপনি দারুণ খেলা দেখাচ্ছেন মিস্টার ডিটেকটিভ।”
“আপনার কাছে এই জিনিস আশা করিনি উকিল সাহেব। খেলা তো আপনিও কম দেখাচ্ছেন না।”
ময়ূখ দৃষ্টি স্থির রেখে ক/টা/ক্ষ ফিরিয়ে দিল, ঠোঁটের কোণে যে হাসিটা এখন আছে তাতে তাকে নিষ্ঠুর বলেই মনে হচ্ছে। ময়ূখের এই হাসিটা সচরাচর দেখা যায় না। সামনের ব্যক্তির গায়ের র/ /ক্ত হিম করে দেবার জন্য এতটুকুই যথেষ্ট হবার কথা। কিন্তু রমজান আলী ঘোড়েল লোক। সে বরং আরও খানিকটা বে/প/রো/য়া হয়ে উঠল।
আচমকা লম্বা করে এক পা পিছিয়ে গিয়ে ময়ূখের হাত বরাবর লা/ /থি/ দিয়ে বসল। ময়ূখ এমন কিছুর জন্য প্রস্তুত-ই ছিল। সেও দ্রুত পিছিয়ে এসে পাল্টা আ/ /ক্র/ ম/ ণ করল। অল্প সময়ের মধ্যেই দু’জন নি/ /র /স্ত্র হলো। হাতে হাতে ধ/স্তা/ধ/ স্তি চলল আরও বেশকিছুক্ষণ। শেষমেশ বিজয়ের হাসি হাসল ময়ূখ। হাজার হলেও সে প্রশিক্ষিত, সাথে নানাবিধ কৌ/শ/ল ওর আয়ত্তে আছে। নিয়মিত শরীরচর্চা করায় টগবগে সুঠাম তরুণ সে। অপরপক্ষে রমজান আলী বয়সে এগিয়ে এবং সুস্বাস্থ্যের দিক থেকে খানিকটা পিছিয়ে।
“আমার পিছু নিয়েছিলেন কেন এতদিন ধরে? এবার বলবেন না যেন আপনি ছিলেন না, একজন নিরীহ লোক এসব কর্মকাণ্ড করে না।”
যেন খুব মজার একটা কথা শুনেছে এমন ভঙ্গিতে হাসল রমজান আলী, “আমি বলব কেন?”
“সঠিক উত্তর পেলে আপনাকে আমি ছেড়ে দেব। নইলে আইনের আশ্রয় নিতে আমার বাঁধবে না। আপনি সেই পথের লোক হলেও আমিও সেই রাস্তার অলিগলি ভালো মতো চিনি।”
খানিকটা হাঁপাচ্ছে রমজান আলী, বড় করে দম নিল বার কয়েক। এরপর যেন কিছুটা শান্ত হয়ে এলো। ময়ূখ তার পি/ /স্ত/ /ল/ কুড়িয়ে নিয়েছে ততক্ষণে।
“দেখুন, এই রাস্তা নির্জন হলেও লোকের আসায় কোনো নিষেধাজ্ঞা তো নেই, যেকোনো সময় কেউ চলে আসবে। তাই দ্রুত করুন।”
“আমার মেধা সম্পর্কে আমি ওয়াকিবহাল। কিন্তু শা/ লা এই হুটহাট রাগের জন্যই যত সমস্যা। জীবনে তেমন কোনো কেস জিততে পারলাম না। জীবন ধারণের জন্য কী করতে হলো আমাকে, একটা জ/ ঘ /ন্য লোকের চামচামি শুরু করতে হলো। সেই লোক টাকা দিত ঠিকই, কিন্তু মশা মাছি হিসেবেও গণ্য করত না। অবশ্য যে লোক নিজের সন্তানদেরই এত বাজে কথায় অ/প/মা/ন করত তার কাছ থেকে আর কি আশা করা যায়!”
“সেজন্য লোকটাকে সরিয়ে দিলেন?”
“আমি তো খুব করে চেয়েছিলাম। কিন্তু পারিনি। আমি খু*/ /নী হলে সেদিন আপনাকে ছেড়ে দিতাম না। আজও রেগে গিয়ে জিনিসটা বের করেছি। ব্যবহার করার জন্য নয়।”
“আপনাকে পুরোপুরি বিশ্বাস করতে পারলাম না, দুঃখিত।”
“দেখুন ময়ূখ সাহেব, আপনি জিজ্ঞেস করলেন না আপনাকে ফলো করি কেন? আমার টাকার প্রয়োজন। ফ্যামিলি নিয়ে থাকতে গেলে কতরকম চাহিদা থাকে। আমার অনেকদিন ধরেই কাজ নেই৷ বুড়োর চা /মা/ //র ছেলেদের কাছ থেকে কিছু আশা করা বৃথা৷ আপনি যেহেতু ওই চু/ রি/ হওয়া জিনিসপত্র খুঁজছেন, আমি কেবল তার ফায়দা নিতে চেয়েছি। যাতে আপনি সেটার নাগাল পেলে আমি সেটা হাতাতে পারি।”
ময়ূখ রমজান আলীর চোখের দিকে তাকিয়ে রইল মুহূর্ত কয়েক, এরপর বলল, “তাহলে তো আমি আপনার ছকেই হাঁটছিলাম, কিন্তু কাল কাকে সুবিধা দিতে চাইছিলেন, মৃদুলাকে কীসের জন্য সেভ করতে চাইছিলেন?”
এবার রমজান আলী হাসল বিশ্রী শব্দে, এরপর বলল, “আল্লাহ প্রত্যেককেই ব্রেইন দিয়েছে৷ ইউজ ইট মিস্টার ময়ূখ এহসান, সত্যসন্ধ। সব সত্য আমি বলে দিলে আপনার আর বাহাদুরি কী বলুন তো?” ময়ূখের জন্য ব্যঙ্গ ঝড়ল কথায়৷
“এসব বলে পার পাওয়া যাবে ভাবছেন?”
“আমি তো বললাম, আমার মোটিভ কী ছিল। এরবেশি আমার কাছ থেকে বের করতে করতে দেখবেন আপনার সময় চলে গেল আর ওদিকে আসল কা/ল/প্রি/ট হাওয়া।” আবারও হাসল রমজান আলী।
ময়ূখ দেখল এখানে এভাবে দাঁড়িয়ে থাকলে অন্যের দৃষ্টি আকর্ষণ করা বই অন্যকিছু হবে না। জায়গা ছাড়া দরকার। সে আরেকবার পূর্ণ দৃষ্টিতে মধ্যবয়সী উকিলকে জরিপ করে নিল। এরপর বলল, “আপাতত আমার অন্য একটা খুব জরুরি কাজ আছে, আপনার সাথে পরে দেখা হবে। আপনি যান তবে।”
“আমার জিনিসটা তো আপনার কাছে রয়ে গেল।”
ময়ূখ রমজানের দিকে চোখ রেখে কয়েক পা পিছিয়ে গেল। এরপর চেম্বার খুলে গু/ /লি/ বের করতে শুরু করল।
“কী করছেন এটা?”
“যারা পেছন দিক থেকে আ/ ক্র/ ম/ ণ করে তাদের বি/ শ্বাস/ ঘা/ ত/ /ক বলে। নিজেদের কা/পুরু/ষ/তা ঢাকতে এরা ধূ//র্ত গা/ /ধা/র মতো আচরণ করে। এদের বিশ্বাস করা উচিত না বুঝলেন?”
রমজানের চোখে ক্রো/ /ধ জমল, অক্ষম আ/ /ক্রো /শে /ফুঁ/সে উঠল। এরপর মেনে নিল। খালি পি/ /স্ত/ ল নিয়ে চলে যাচ্ছে সে, ময়ূখ সেদিকে তাকিয়ে রইল, এখন ওকে যেতে হবে শিরিনের খোঁজে। একটু কিছুর আভাস পেলেই যে দুই ভাইবোন হাওয়া হবার চেষ্টা করবে তা বলাই বাহুল্য।
২৩.
রেদোয়ান আর মঈদুলের দেয়া ঠিকানায় এলো ময়ূখ। ওর সামনের এই দোতলা বাড়ির নিচ তলায় ভাড়া থাকছে শিরিন। সেই ঘরের দরজায় কড়া নাড়ল ময়ূখ। একটা সুন্দরী মেয়ে এসে দরজা খুলে দিল। এই মেয়ের একটা পাসপোর্ট সাইজের ছবি একবার দেখেছিল সে, ততটা মনে নেই সেজন্য। সামনা-সামনি দেখে বুঝল এহতেশাম সাহেবের সেই ছবিতে তার পাশের ভদ্রমহিলার সাথে এর কোথাও একটা মিল আছে। সেজন্য চেনা চেনা লেগেছিল। মা-মেয়ে তো।
শিরিন দরজা খুলেছে আলতো করে, পুরোটা খোলেনি। সেটুকু জুড়েই সে দন্ডায়মান।
“কে আপনি? কার কাছে এসেছেন?”
“আপনার কাছেই এসেছি ম্যাডাম।”
“বলুন।”
“ভেতরে আসতে বলবেন না?”
“অপরিচিত কাউকে আমি ভেতরে নিয়ে বসাতে আগ্রহী নই। তাছাড়া আমি বেরুব, আপনার খাজুরে আলাপ শোনার সময় নেই।”
“শুনলাম হাসপাতালের চাকরি ছেড়ে দিয়েছেন। এখন কিছু করেন না, নতুন করে। তাহলে কীসের এত তাড়া? এ্যাম্বাসিতে পরে গেলে চলবে না? মুনিমকেও এখানে পাওয়া গেলে ভালোই হতো।”
শিরিনের মুখ যেন রক্তশূণ্য হয়ে গেল। তবুও সে সামলে নিল অবিশ্বাস্য দ্রুততার সাথে, “মুনিম ভাই, এ্যাম্বাসি? কী বলছেন এসব?”
“ভেতরে আসতে দিন, বুঝতে পারবেন।”
শিরিন আচমকা দরজা বন্ধ করতে উদ্যত হলেও ময়ূখ অর্ধেক ঢুকে পড়েছে ততক্ষণে। শিরিন তারস্বরে চেঁ/চি/য়ে বলল,
“কী করছেন? এভাবে জ/ব/র/দ/স্তি করে ভেতরে আসতে চাইছেন কেন?”
“আপনি আমাকে চেনেন, আমিও আপনার সম্পর্কে অনেককিছু জানি। যা জানি না তাই জানতে ইচ্ছুক।”
ময়ূখের হাতে উঠে এসেছে /পি/ স্ত/ /ল/ টা। দরজা খুলে ততক্ষণে ভেতরে প্রবেশ করেছে সে। একটা বিশাল বড় চামড়ার ব্যগ পড়ে রয়েছে মেঝেতে। আরেকটা ব্যাগের পাশে এলোমেলো জিনিসপত্র। তার মধ্যে দুই একটা বহুমূল্য জিনিসও উঁকি দিচ্ছে।
শিরিন তখনও ক্রু/ /দ্ধ/ বাক্যবা/ণ ছুঁ//ড়ে দিচ্ছে। ময়ুখ ওর হাতের জিনিসটা দেখিয়ে সতর্ক করে ব্যাগ খোলার নির্দেশ দিল। অনেকক্ষণ গাইগুই করে অনন্যোপায় হয়ে অবশেষে ব্যাগ খুলল। কাপড়ে ঠাসা মনে হলো। সেসব নামাতে বলল। তাও হলো, কিন্তু এটায় তেমন কিছু নেই। দ্বিতীয় আধখোলা ব্যাগের কাপড় ঢেলে কাঙ্ক্ষিত জিনিসের দেখা পেল।
“বাকি জিনিস কই?”
“সেটার জন্য আপনার দেখছি ভালোই তাড়াহুড়া ময়ূখ সাহেব।”
ঘাড়ের কাছে খানিকটা চেনা কন্ঠস্বরের বলা কথার পাশাপাশি ধা/ত/ব/ /ন/লে/র স্পর্শ অনুভব করল ময়ূখ। মুহূর্তেই ওর স্নায়ু টানটান হয়ে স্থির হয়ে এলো।
……..
(ক্রমশ)