সেই আদুরে দিন পর্বঃ০৫

0
1329

#সেই_আদুরে_দিন
#পর্বঃ০৫
#Arshi_Ayat

পুরো আলমারি চিরুনি তল্লাশি দিয়েও রৌদ্রুপের জামা কাপড় ছাড়া কিছুই পেলো না।শুদ্ধতা মনে মনে আওড়ালো ‘বহুত সেয়ানা’।তারপর টি টেবিলের ওপর রাখা ল্যাপটপটা দেখে ওটা ওপেন করে দেখলো উইন্ডোজ ওপেন হয় না।পাসওয়ার্ড চায়।কতক্ষণ আবোল তাবোল পাসওয়ার্ড দিয়েও লাভ হলো না।শুদ্ধতা হতাশ হয়ে গেলো।
————
পুরো ঘর খুঁজেও সন্দেহের কিছু না পাওয়ায় শুদ্ধতা আবারো বই নিয়ে বসলো।তবে বইয়ে মনোযোগ নেই।বারবারই রৌদ্রুপ নামক আস্তো রহস্যের গোডাউন থেকে প্রশ্ন এসে মাথার তার ছিড়ে দিচ্ছে।কিন্তু কিছু করারও নেই।কাল থেকে আজ পর্যন্ত এই কয়েকঘন্টা ব্যবধানেই শুদ্ধতা আচ করতে পারলো রৌদ্রুপ অনেক ধূর্ত একটা লোক।কিন্তু এই যে ছদ্মবেশ!রিভালবার!দরজায় ফিঙ্গার প্রিন্ট এসব কোনো সাধারণ মানুষ অবশ্যই দিবে না।তবে কি রৌদ্রুপ সিক্রেট এজেন্ট?নাকি অন্যকিছু?নাকি মাফিয়া?কিছুই খোলাসা হচ্ছে না।

রৌদ্রুপ সন্ধ্যার আগেই ফিরেছে।ওকে দেখে শুদ্ধতা বই বন্ধ করে বলল,’কাজ শেষ?’

‘হ্যাঁ।’রৌদ্রুপ ভেতরে ভেতরে কিছুটা অবাক হলো কারণ শুদ্ধতা খুব সহজেই ওকে কাজের কথা জিগ্যেস করলো যেনো সে জানে রৌদ্রুপ কি কাজ করে এসেছে।তবে রৌদ্রুপ বুঝতে পেরেছে মেয়েটা তাকে ধাঁধায় ফেলছে।বোঝাতে চাইছে ও সব জানে।কিন্তু এতো সহজ রৌদ্রুপ রওনক’কে ধাঁধায় ফেলা!রৌদ্রুপ ভেবে বাঁকা হাসে।

ফ্রেশ হয়ে এসে রৌদ্রুপ বলল,’মনে আছে তো আজ যে একটা পার্টি এরেন্জ করেছি আমি!তাড়াতাড়ি তৈরি হও।আমরা বের হবো।’

শুদ্ধতা সম্মতি জানালো।তৈরি হয়ে নিচে নামতেই শুদ্ধতাকে দেখে বুকে হা দিয়ে বিড়বিড় করে বলল,’আমি বোধহয় একদিন এই মেয়েটার কারনেই মরে যাবো।এমনিতেই ওকে দেখলে আমার হার্টবিট বেড়ে যায় তারওপর এভাবে আসলো তো পুরোপুরিই বন্ধ হয়ে যাবে।’

শুদ্ধতা আকাশী রঙের একটা শাড়ির পড়েছে সাথে হিজাবও মিলিয়ে নিয়েছে।সব মিলিয়ে যেনে মনে হচ্ছে ধরণীতে এক টুকরা শুভ্র আকাশখন্ড নেমে এসেছে।আর সেই আকাশের প্রেমে মজেছে রোদ!

রৌদ্রুপের সামনে এসে ভ্রু কুঁচকে শুদ্ধতা বলল,’এ কি!আপনি কালকের মতো আজও বুড়ো সেজেছেন কেনো?’

‘আমার ইচ্ছে হয়েছে তাই।’

রৌদ্রুপের এমন নিজের মনগড়া উত্তর শুনে শুদ্ধতা চটে গিয়ে বলল,’আস্তো পাগল আপনি!এখন আপনার জন্য আমার বান্ধবীরা আমাকে টিটকিরি দেবে।বলবে দেখ সারাজীবন মানুষের জামাই নিয়ে নাক ছিটিকিয়ে মরেছসি এখন তোর কপালে কি জুটলো।তখন তো আমি বলতে পারবো না আমার কপালে আল্লু আর্জুনই জুটেছে কিন্তু শালার ব্যাটা নিজেকে পুরো সদরঘাট বানিয়ে রেখেছে।’
শুদ্ধতার মনেই নেই সে ‘জোস মে আ কে হোশ খো ডালা।’তাই জন্যই তো রৌদ্রুপের সামনে দাড়িয়ে ওকেই শালার ব্যাটা বলেছে।বলতে বলতে যখনই রৌদ্রুপের ধারালো দৃষ্টি চক্ষুগোচর হলো তখনই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে মেকি হেসে বলল,’কি হলো যাবেন না?’

রৌদ্রুপ শুদ্ধতার গম্ভীর চোখে চেয়ে বলল,’চলো।’তবে মনে মনে শুদ্ধতার কথায় বেশ মজা পেয়েছে।মেয়েটা বড্ড চঞ্চল!

পার্টিতে পৌঁছে শ্বশুরের সাথে আগে কুশল বিনিয়ম করলো রৌদ্রুপ।শুদ্ধতা শুধু নাটকটা দেখেই চলছে।কিভাবে একটা মানুষ বেশভূষা পাল্টে অন্য মানুষে রুপান্তরিত হয় তাও ঠিক ছিলো কিন্তু গলার স্বর!সেটাও চেঞ্জ!

শুদ্ধতার ছোটবেলার বান্ধবী সিনাত এসে ওকে জড়িয়ে ধরে বলল,’সরি ইয়ার কাল আসতে পারলাম না।শুনলাম বিয়েতে কি সমস্যা হয়েছিলো!’

শুদ্ধতা কিছু বলার আগেই আরেক বান্ধবী এসে বলল,’আরে রাহাত ভাই তো বিয়ে করে নি।সে বিয়ের আসরে ছেড়েই চলে গেছে।’

‘তো কার সাথে বিয়ে হয়েছে?’

‘ওই যে দেখছিস শুদ্ধ’র বাবার সাথে বুড়ো মতন লেকটা দাড়িয়ে আছে ওইটা।’

‘কিহ!সত্যি?’সিনাত আঁতকে উঠে বলল।

শুদ্ধতা হালকা হাসার চেষ্টা করে মাথা উপর নিচ করলো।বড়ই আফসোসের গলায় সিনাত বলল,’এইজন্যই বলছিলাম মানুষের জামাই নিয়ে ভেঙ্গাইতে না।দেখলি তো তোর কপালে কি জুটলো!’

সিনাতের কথা শুনে শুদ্ধতা মনে মনে বলল,’শুধু একবার তোদের আমার জামাই দেখাইলে তোরা ফিট হইয়া থাকবি।আমার নিজেরই তো আশ্চর্য লাগছে যে আমি এতো সুন্দর জামাই পাইছি।’
নিজের স্বামী নিয়ে চাপা একটা গর্ব কাজ করছে শুদ্ধতার তার সাথে বিরক্তিও লাগছে।এতো সুন্দর জামাই দেখায় যদি বান্ধবীদের মুখ না বন্ধ করতে পারে তাইলে এই জামাই থেকে লাভ কি!

‘এই তোর সাথে কাল রাতে কি কিছু হইছিলো?’বান্ধবীদের মধ্যে একজন নিন্মস্বরে বলল।

ওর কথার রেশ ধরে আরেক বান্ধবী বলল,’শোন এই বুইড়া ব্যাটারে কোনো আকাম করতে দিবি না।এমনেই এক পা কবরে!এখন আবার বিয়ার শখ জাগছে।কোনো মতে নিজের নামে ওর সম্পত্তিগুলো লেখিয়ে নিবি।তারপর তুই সবকিছুর মালিক।এইটা আর কয়দিনই বাঁচবো।ডেটএক্সপিয়ায়!’ এটা বলেই সবাই হাসা শুরু করলো।শুদ্ধতাও হাসলো কিন্তু কিচ্ছু বলল না কারণ কেউ না জানলেও ও জানে রৌদ্রুপ কি!এসব প্ল্যান ওর সাথে খাটবে না।

শুদ্ধতার বান্ধবীরা ওকে কু বুদ্ধি দিলেও রৌদ্রুপের সামনে পুরো সাধু সেজে গেলো এবং সুন্দর করেই কথা বলল।

পার্টি শেষে রাত বারোটায় ওরা বাসায় ফিরলো।ফিরেই রৌদ্রুপ বলল,’শুদ্ধ তুমি ঘুমিয়ে পড়ো।রাতে সাড়ে তিনটায় আমাদের বেরুতে হবে।’

‘শুদ্ধতা ভ্রু কুঁচকে বলল,’কোথায় যাবো অতো রাতে?’

‘বেশি প্রশ্ন করো না।বললাম না আস্তে আস্তে সব জানবে।’

শুদ্ধতা ফুঁসে ওঠে বলল,’এমন লুকোচুরি আমার ভালো লাগে না।আমাকে এখন বলতে হবে সব তা নাহলে আমি যাবো না।’

‘জিদ করো না।এখন বলার মতো সময় নেই।’রৌদ্রুপ আদেশের সুর তুললো।

‘না এখনই বলতে হবে তা নাহলে আমি কিচ্ছু করবো না এখানেই ঠায় দাঁড়িয়ে থাকবো।’

রৌদ্রুপ কিছুক্ষণ নিরব থেকে বলল,’শুধু এতটুকুই জানো আমি একটা মিশনে আছি।এর বেশি আর কিছু বলতে পারছি না। প্লিজ জিদ করো না।’
এটা বলেই রৌদ্রুপ ঘর থেকে বেরিয়ে লাইব্রেরিতে চলে গেলো।আর শুদ্ধতা সোফায় বসে ভাবতে লাগলো কিসের মিশন!আর কেনোই বা অতো রাতে বের হতে হবে?কোথায় যাবে?

এসব ভাবতে ভাবতেই শুদ্ধতা ঘুমিয়ে পড়লো।কিছুক্ষণ পর ঘরে এসে শুদ্ধতাকে সোফার ঘুমোতে দেখে রৌদ্রুপ ওকে পাঁজাকোলা করে বিছানায় নিয়ে এলো।এরপর জড়িয়ে ধরে নিজেও শুয়ে পড়লো তবে ঘুমালো না।কারণ আজকে রাতে কিছু একটা হতে চলেছে!

শুদ্ধতার পাশে শুয়ে থাকতে থাকতে রৌদ্রুপের চোখ লেগে এসেছিলো তবে কিছু একটার শব্দ শুনে সজাগ হয়ে গেলো।সাবধানে উঠে দাড়ালো।জানালার কাছে গিয়ে পর্দার ফাঁক গলিয়ে দেখলো বাড়ির সামনে দু’টো কালো গাড়ি।এখান থেকে গাড়ি দুটোকে নজরে আসলেও ভেতরের কাউকেই দেখতে পাচ্ছিলো না।রৌদ্রুপ জানালার কাছ থেকে দ্রুত এসে শুদ্ধতা ডাক দিলো,’শুদ্ধ ওঠো।বের হবো আমরা।’

রৌদ্রুপের এমন সাবধানী গলার স্বরে শুদ্ধতার ঘুম ছুটে গেলো।উঠে বসে বলল,’কোথায় যাবো?’

‘প্রশ্ন করো না প্লিজ।আমি এক্ষুনি আসছি।

এই বলে রৌদ্রুপ ঘর থেকে বের হলো।শুদ্ধতা উঠে আলমারি থেকে একটা কালো টপস আর জিন্স বের করলো।তারপর তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে চুলগুলো পনিটেইল করে বেঁধে ফেললো।রৌদ্রুপ হন্তদন্ত হয়ে ছুটে এসে বলল,’তুমি রেডি?’

‘হ্যাঁ।’

‘আচ্ছা একটা স্কার্ফ দিয়ে মুখটা ঢেকে নাও।’

শুদ্ধতা তাই করলো।তারপর রৌদ্রুপ ওর হাত ধরে আস্তে আস্তে ছাদের দিকে চলে গেলো।ছাঁদে এসে শুদ্ধতাকে ফিসফিসিয়ে বলল,’হামাগুড়ি দিয়ে ছাদের পেছনে যেতে হবে।তুমি আমার পেছনে আসো।’

আস্তে আস্তে ছাদের পিছনে পৌঁছে রৌদ্রুপ শুদ্ধতাকে বলল এই যে এখান দিয়ে একটা দড়ি ঝুলানো আছে এটা দিয়ে নামতে হবে।আগে তুমি নামো পরে আমি নামছি।শুদ্ধতা ভীতু গলায় বলল,’আমার ভয় করছে।’

‘কিচ্ছু হবে না।আমি আছি তো!তুমি শুধু শক্ত করে দড়িটা ধড়ে আস্তে আস্তে নামতে থাকো।’

‘আচ্ছা।’
শুদ্ধতা আস্তে দড়িতে ঝুলে পড়লো।তারপর নামতে লাগলো।ওর নামতে অবশ্য একটু বেশিই সময় লেগেছে তবে নামতে পেরেছে বলে রৌদ্রুপ হাঁপ ছেড়ে বেঁচেছে।শুদ্ধতা নামার পর সেও দ্রুত নেমে গেলো।তারপর বাগানের ভেতরে হামাগুড়ি দিয়ে একবারে দেয়ালের সামনে পৌঁছালো।শুদ্ধতা ফিসফিসিয়ে বলল,’এবার?’

‘এখানে দিয়ে ছোট্টো একটা গেট আছে।খুব ছোটো।কেউ জানে না।আমি ছাড়া।এদিকে দিয়েই বের হতে হবে।’

তারপর রৌদ্রুপ একটা চাবি দিয়ে ছোট্টো দরজাটা খুললো।শুদ্ধতা এটা দেখে বলল,’এতো ছোটো জায়গা দিয়ে কিভাবে বের হবো?’

‘পারবে।আমিই সুন্দর করে বের হতে পারি।তুমি তো আরো আগে পারবে।বের হও তাড়াতাড়ি।’

শুদ্ধতা কষ্টে বের হলো।জীবনে এমন অভিজ্ঞতা হবে ভাবতেও পারে নি।তারপর রৌদ্রুপ বের হতেই একটা গুলিরে শব্দ হলো।

চলবে…
(ভুলত্রুটি ক্ষমা করবেন।কার্টেসী ছাড়া কপি নিষেধ।)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here