সেই আদুরে দিন পর্বঃ০২

0
1867

#সেই_আদুরে_দিন
#পর্বঃ০২
#Arshi_Ayat

শুদ্ধতাকে নিশ্চুপ দেখে ছেলে আরেকটু ঝুঁকে নিজের কপালটা ওর কপালে ঠেকিয়ে বলল,’এই মেয়ে ফ্রিজ হয়ে গেলে নাকি?কথা বলো?’

শুদ্ধতা কিই বা বলবে!সে এখন শক এ আছে।আজকে শক এর ওপর শক।প্রথমত রাহাত বিয়ে ভেঙে চলে গেলো,দ্বিতীয়ত বাবার কথামতো রাহাতের বুইড়া মামাকে বিয়ে করতে হলো তৃতীয়ত এই বুইড়া মামা এখন এক চুটকি তে রুপ বদলে জোয়ান হিরো হয়ে গেলো।এমন একটার পর একটা শক খেলে কারো মুখেই বুলি থাকার কথা না।কিন্তু রাহাতের মামা এতো জোয়ান কেমনে?আর এই ছেলে বুড়া সেজে গেলোই বা কেনো?
হুট করেই এই প্রশ্নটা মাথায় আসতেই শুদ্ধতা বলল,’আপনি না রাহাতের মামা!তাহলে এতো জোয়ান কিভাবে?নাকি রাহাতের জন্মের পর পয়দা হইছেন আপনি!’

শুদ্ধতার কথা শুনে ছেলেটা মুচকি হেসে বিছানায় এসে বসলো।তারপর বলল,’আমি তো রাহাতকে চিনিই না।’

‘কিন্তু আপনি যে বললেন আপনি ওর মামা।’

‘না বললে তোমার বাবা আমার সাথে তোমার বিয়েও দিতো না।’

‘কিন্তু আপনি আমাকে বিয়েটা করলেন কেনো?সব গুলিয়ে যাচ্ছে!আর আপনি কে?’

ছেলেটা শুদ্ধতাকে ইশারায় সামনের সোফায় এসে বসার নির্দেশ দিলো।শুদ্ধতা একঝাঁক কৌতুহল নিয়ে বসলো।শুদ্ধতার কৌতুহলী উদীপ্ত মুখ দেখে ছেলেটা হেসে বলল,’সবই বলবো এতো হাইপার হওয়ার কিছু নেই।আমি রৌদ্রুপ রওনক।আপাতত আমার পরিচয়ের মধ্যে শুধু নামটাই জেনে রাখো।আমি কি করি না করি সব আস্তে আস্তে জানবে কারণ এমনিতেই আজ অনেক শক খেয়েছো তাই নতুন করে তোমার মস্তিষ্কে হাতুড়ি চালানোর প্রয়োজন নেই।আর বিয়ে বাড়িতে একটা কারণে আমি ওমন ড্রেসআপে গিয়েছি কারণটাও বলা যাবে না তবে তোমাকে বিয়ে করার কারণটা বলি।আমি যখন বিয়ে বাড়িতে আসি তখন তোমার এক্স হবু বর জনাব রাহাত তোমার পাশ থেকে উঠে গিয়েছিলো।আর ওর মা তোমার বাবার সাথে কিছু একটা নিয়ে খারপ ব্যাবহার করছিলো।আমি ঘটনাটা জানতে সেখনে গিয়ে দাড়িয়ে বুঝতে পারলাম আসলে কি হচ্ছে।তারপর ওরা চলে যাওয়ার পর আমি তোমার বাবাকে রাহাতের মামা পরিচয় দিয়ে বিয়ের প্রস্তাব দেই যাতে টোপটা গিলে ফেলেন।অবশ্য যা ভেবেছিলাম তাই হলো।আর তোমাকে বিয়ে করার দুইটা কারণ আছে প্রথম কারণ তোমার বাবার মানসম্মান রক্ষা ওনাকে দেখে আমার মায়া হয়েছিলো।আর দ্বিতীয় কারণটা একদিন তুমি নিজেই বুঝবে।’

শুদ্ধতা ভ্রু কুঁচকে মনে মনে বলল,’এমন রহস্যজনক কেনো?কে উনি?শুধু নাম বাদে আর কিছুই বললেন না কেনো?আর আমাকে বিয়ে করার দ্বিতীয় উদ্দেশ্যটা কি?’

শুদ্ধতার ভাবনা সুতো ছিড়ে রৌদ্রুপ বলল,’এতো ভাবনা চিন্তা বন্ধ করে দাও।আস্তে আস্তে সব জানবে।আচ্ছা তুমি বসো আমি কফি নিয়ে আসি।’

এটা বলেই রৌদ্রুপ বেরিয়ে গেলো।রৌদ্রুপ যাওয়ার পরই শুদ্ধতা গেলো দরজা বন্ধ করতে কিন্তু দরজা বন্ধ হয় না।দরজা বন্ধ করতে চাইলে হাতের ফিঙ্গার প্রিন্ট চায়।অনেক চেষ্টা তদবির করেও শুদ্ধতা দরজাটা লাগাতে পারলো না।আর ততক্ষণে রৌদ্রুপ চলেও এলো।আর ওকে দেখে শুদ্ধতা ধরা পড়া আসামির মতো কাচুমাচু করতে লাগলো।রৌদ্রুপ উচ্চস্বরে হেসে বলল,’লাভ নেই।এই দরজা আমার ফিঙ্গার প্রিন্ট ছাড়া খোলেও না লাগেও না।’

শুদ্ধতা শুকনো মুখে ঘরে এসে বসলো।রৌদ্রুপ ওর দিকে এক মগ কফি এগিয়ে দিয়ে বলল,’বেশি চিন্তার ফলে তোমার মাথা ব্যাথা উঠতে পারে।কফিটা খাও কাজে লাগবে।’

শুদ্ধতা কফিটা নিলেও খাচ্ছে না কারণ ওর সন্দেহ হচ্ছে কফিতে যদি কিছু মেশানো থাকে!এমনিতেও ছেলেটাকে সুবিধার মনে হচ্ছে না।দেখতে সুন্দর হলোও মারাত্মক ধড়িবাজ টাইপের মনে হচ্ছে।

শুদ্ধতার এমন সন্দিহান চাউনি দেখে রৌদ্রুপ আন্দাজ করে বলল,’কিছু মেশাই নি।খেতে পারো।অথবা আমার সাথে চেঞ্জও করতে পারো।’

শুদ্ধতা চেঞ্জ করে নিলো তবুও খেতে পারলো না।সন্দেহটা থেকেই যাচ্ছে।হতে পারে ছেলেটা আগে থেকেই সন্দেহ করে কাপটা চেঞ্জ করে নিজে নিয়ে রেখেছিলো যাতে ও সন্দেহ করলে সন্দেহ কাটানোর জন্য চেঞ্জের নাটক করতে পারে।

এবারও শুদ্ধতাকে না খেতে দেখে রৌদ্রুপ কৌতুক করে বলল,’সি আই ডি তে যোগ দেওয়া উচিত তোমার।সারাদিন সন্দেহ করতে পারবে।’

শুদ্ধতা তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে একবার রৌদ্রুপের দিকে চেয়ে কফিতে চুমুক দিলো।কফির টেস্ট’টা দারুণ!দ্বিতীয় চুমুক দিতেই শুদ্ধতার ফোনটা চেঁচিয়ে উঠলো।উঠে গিয়ে ড্রেসিং টেবিলের ওপর থেকে ফোনটা নিয়ে দেখলো বাবার ফোন।রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে আরমান সাহরীফ বললেন,’কি অবস্থা মা?তোরা পৌঁছেছিস?’

‘হ্যাঁ বাবা পৌছেছি।বাবা জানো কি….’শুদ্ধতা আর কিছু বলতে পারলো না তার আগেই রৌদ্রুপ পেছন থেকে ওর মুখ চেপে ধরে ফোনটা ছিনিয়ে নিয়ে কানে দিয়ে গলার স্বর পরিবর্তন করে ফ্যাসফ্যাসে গলায় বলল,’জ্বি আমরা পৌঁছে গেছি।’

‘আচ্ছা।শুদ্ধকে একটু দেখে রাখবেন।বাচ্চা মানুষ তো!’

‘আচ্ছা শুনুন দ্রুত বিয়ে হয়ে যাওয়ায় এখন তো আর বড়ো করে অনুষ্ঠান সম্ভব না।তাই সন্ধ্যায় একটা পার্টি এরেন্জ করছি।আপনার যাদের দাওয়াত দেওয়া প্রয়োজন দিয়ে দিন।’

‘আচ্ছা ঠিকাছে।রাখছি।’এটা বলেই আরমান সাহরীফ ফোন রেখে দিলেন।ফোন রাখতেই রৌদ্রুপ শুদ্ধতার মুখ থেকে হাত সরিয়ে বলল,’ইশ!একটু হলেও তো সব ফাস হয়ে যেতো।এই মেয়ে শোনো খবরদার কাউকে এই বিষয়ে কিছু বলবে না।’

‘আমি সবাইকে বলে দিবো আপনি ফ্রড!ধোঁকা দিয়ে আমাকে বিয়ে করেছেন!পরিচয় লুকিয়েছেন!’শুদ্ধতা ফুঁসে উঠে বলল।

‘সত্যিই বলে দিবা?’রৌদ্রুপ শুদ্ধতার কাছে অনেকটা এগিয়ে এসে বলল।রৌদ্রুপকে এতো কাছে দেখে শুদ্ধতা ঢোক গিলে বলল,’হ্যাঁ বলবোই তো!সব বলে দেবো।’

রৌদ্রুপ আচমকা শুদ্ধতার কটিদেশ একহাতে চেপে ধরে নিজের সাথে চেপে ধরে আরেকহাত প্যান্টের পকেট থেকে একটা রিভলবার বের করে শুদ্ধতার মাথায় বরাবর তাক করে বলল,’এটা চেনো তো বেবি!একবারে খুলি উড়িয়ে দেবো।কেউ কিচ্ছু টের পাবে না।পরে কাঁদতে কাঁদতে তোমার বাবাকে বলবো তুমি তোমার লাভারের সাথে পালিয়ে গেছো।এরপর সারাজীবন তিনি তোমাকে ঘৃণা করবে।কি বলে দেবে সবাই কে?’

শুদ্ধতা ভয়ে জড়সড় হয়ে গেলো।ওর ঠোঁট কাঁপতে লাগলে।রৌদ্রুপ সেটা দেখে রিভলবার টা আবার প্যান্টের পকেটে গুঁজে বলল,’এমন করার সাহসও করো না সোনা।’

এটা বলেই রৌদ্রুপ শুদ্ধতাকে ছেড়ে দিয়ে বেরিয়ে গেলো।শুদ্ধতা ধপ করে মেঝে তে বসে পড়লো।কষ্ট হচ্ছে ভিষণ শেষে কি না একটা ক্রিমিনালের সাথে বিয়ে হলো।এটা কি আন্ডারগ্রাউন্ডের মাফিয়া নাকি ডাকাত দলের সর্দার!ভিষণ কান্না পাচ্ছে শুদ্ধতার!সবদোষ ওই রাহাতের আর রাহাতের কুটনি মায়ের।শুদ্ধতা মনে মনে ওর চৌদ্দগোষ্ঠীকে ফ্রীতে ধুয়ে দিলো সাথে রাহাতকেও অসংখ্য বদদোয়া দিলো।

হতাশ আর ক্লান্ত শরীর নিয়ে শুদ্ধতা নরম বিছানার ওপর ধপাস করে শুয়ে পড়লো।আর মনে মনে বলল,’যাক এখন আর কপাল চাপড়ে কি হবে যা হওয়ার তা তো হয়েই গেলো।তারচেয়ে ভালো কতক্ষণ ঘুমিয়ে নেই।’

রৌদ্রুপ একঘন্টা পর ফিরে এসে দেখলো শুদ্ধতা ওর বিছানার একপাশ দখল করে আরামে ঘুমাচ্ছে।ও আর কিছু বলল না।খাবারের প্যাকেট গুলো টেবিলের ওপর রেখে কম্পিউটার নিয়ে সোফায় বসে পড়লো।খুব মনোযোগ দিয়ে কিছু একটা টাইপ করছিলো।

প্রায় দু-ঘন্টা পর দশটা বাজে শুদ্ধতার ঘুম ভাঙলো।সে হাই তুলে বিছানার ওপর বসলো।শুদ্ধতাকে উঠে বসতে দেখে রৌদ্রুপ বলল,’ঘুম ভাঙলো তাহলো!আমি তো চিন্তায় ছিলাম যে তুমি ঘুমালে আমি বাসর করবো কার সাথে!’

শুদ্ধতা ঘাবড়ে গিয়ে বলল,’মানে!কি বলছেন?’

‘কিছু না।খাবার এনেছি তোমার জন্য।ফ্রেশ হয়ে খেয়ে নাও।’

শুদ্ধতা কিছু বলল না শুধু ঠোঁট বাকিয়ে চলে গেলো ফ্রেশ হতে।

শুদ্ধতা খেয়ে বিছানার ওপর দম ধরে বসে রইলো আর রৌদ্রুপ ডান হাতে খেতে খেতে বাম হাতে টাইপিং করতে লাগলো।

সোয়া বারোটায় কাজ শেষ করে উঠে শোয়ার জন্য বিছানায় আসতেই শুদ্ধতা আঁতকে ওঠে বলল,’আপনি এখানে কেনো ঘুমাবেন?অন্য কোথাও ঘুমান।নাহয় নিচে ঘুমান।’

রৌদ্রুপ শুদ্ধতার কথার পাত্তা না দিয়ে শুয়ে পড়লো।ওকে শুতে দেখে শুদ্ধতা বিছানা থেকে নামতে নিলেই রৌদ্রুপ শুদ্ধতার হাত ধরে হ্যাঁচকা টানে ওকে ও নিজের পাশে শুইয়ে দিয়ে জড়িয়ে ধরে বলল,’বাড়ি আমার,খাট আমার,বউটাও আমার তাহলে আমি অন্য কোথায় ঘুমাবো কেনো?’

‘ছাড়ুন আমায়।’শুদ্ধতা মোচড়ামুচড়ি শুরু করলো।

‘চুপ একদম চুপ।আর একটা কথা বললে যা চাও না তাই হবে বলে দিলাম।’এটা বলেই রৌদ্রুপ আরেকটু শক্ত করে ধরলো শুদ্ধতাকে।শুদ্ধতা ভয়ে আর কিছু বলল না।গাল ফুলিয়ে চুপ করে রইলো আর রৌদ্রুপ মিটিমিটি হাসলো।যদিও সেটা শুদ্ধতার চক্ষুগোচর হলো না।

মাঝরাতে হঠাৎ শুদ্ধতার ঘুম ভাঙতেই ও উঠতে চেষ্টা করলো।কিন্তু এই ছেলে যেভাবে জড়িয়ে রেখেছে।এর থেকে ছুটতেই তো দম বের হয়ে যাচ্ছে।কোনমতে আস্তে আস্তে ছাড়া পেতেই শুদ্ধতা খুশি হয়ে উঠতে নিয়েই বুঝতে পারলো ওর হাত কিসের সাথে যেনো আটকে আছে।ড্রিম লাইটের আলোতে দেখলো রৌদ্রুপ নিজের হাতের সাথে শুদ্ধতার হাত শিকল দিয়ে বেধে রেখেছে।এটা দেখে শুদ্ধতা হাসবে নাকি কাদবে!কনফিউশন!

চলবে…
(ভুলত্রুটি ক্ষমা করবেন।কার্টেসী ছাড়া কপি নিষেধ।)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here