‘কোনো পতিতার মেয়েকে আমার ছেলের বউ করবো না আমি।রাহাত উঠে আসো।’
বিয়ের আসরে বরের মায়ের এহেন কথায় পরিবেশ থমকে গেলো।সবাই কানাঘুষা শুরু করলো।কনের বাবা বিচলিত গলায় বলল,’কি বলছেন আপনি?’
‘ঠিকই বলছি।আপনার বউ যে পতিতা ছিলো বলেন নি তো।অবশ্য বললে কি আর মেয়ে গছাতে পারতেন!আর পতিতার মেয়ে তো পতিতাই হয়।’
আজ শুদ্ধতার সাথে রাহাতের বিয়ে।বিয়ের আসরে সবাই উপস্থিত।কাজিও বিয়ে পড়ানো শুরু করেছিলো কিন্তু হঠাৎ বরের মা এমন কথা বলে বিয়ের পরিবেশ পন্ড করে দিলো।সবাই কানাঘুষা শুরু করলো।নিজের মায়ের নামে এসব কথা শুনে শুদ্ধতা কান্না করছে।আর শুদ্ধতার বাবা আরমান সাহরীফ রেগে গেলেন স্ত্রীর নামে এসব বাজে কথা শুনে।তিনি রেগে রাহাতের মা’কে বললেন,’মুখ সামলে কথা বলবেন।আপনি আমার স্ত্রী কে যা তা বলতে পারেন না।’
‘আমি যা তা বলছি না।আপনার প্রতিবেশী এবং আপনার আত্মীয় স্বজনের মধ্যেও অনেকে বলেছে।নিশ্চয়ই কেউ এমনি এমনিই মিথ্যা বলবে না।’
আরমান সাহেব অপমানে মুখ কালো করে ফেললেন।কথাগুলো সত্যি!তবে বিয়ের আগেই এই কাজ ছেড়ে দিয়েছিলো শুদ্ধতার মা।শুদ্ধতার বাবা কে ভালোবেসে বিয়ে করে।তারপর শুদ্ধতার জন্মের সময় সে মারা যায়।একমাত্র মেয়ে বাবার কাছেই বড় হয়।মেয়ের জন্যই আরমান সাহরীফ দ্বীতিয় বিয়ে করেন নি।তবে আজ যে বদনাম হলো তাতে শুদ্ধতার বিয়ে দেওয়া মুশকিল হয়ে যাবে।তিনি রাহাতের মায়ের হাত ধরে বললেন,’বেয়াইন সাহেব প্লিজ দয়া করুন।মা মরা মেয়ে শুদ্ধতা।ওর মায়ের জন্য ওকে দোষী করবেন না।ও অনেক ভালো মেয়ে।’
‘জ্বি না।আমি কোনো পতিতার মেয়েকে ঘরের বউ বানাতে পারবো না।সরি।রাহাত তাড়াতাড়ি আসো।’
মায়ের কথা মতো বাধ্য পুতুলের মতো রাহাত উঠে চলে গেলো।আরমান সাহরীফ বাঁধা দিয়েও পারলেন না আটকাতে।
আরমান সাহরীফ মেয়ের কাছে এসে বললেন কাঁদিস না মা।আমি তোর বিয়ে দিয়েই ছাড়বো।বিয়ে বাড়িতে অনেক ছেলেই উপস্থিত ছিলো যারা শুদ্ধতাকে পছন্দ করতো কিন্তু এখন কেউই বিয়ের জন্য রাজি না।আরমান সাহরীফ ভেতরে ভেতরে হতাশ হয়ে পড়লেন।এদিকে অর্ধেকের বেশি মেহমান চলেই গেছে।আর যারা আছে তারাও আস্তে আস্তে চলে যাচ্ছে।হঠাৎ একটা মাঝবয়সী লোক এসে দাড়ালো আরমান সাহরীফের সামনে।লোকটার মাথায় কাঁচা পাকা চুল,ইয়া বড়ো ভুঁড়িটা বের হয়ে আছে।চোখে চশমা।তবে লম্বা ভালোই।লোকটা আরমান সাহরীফকে বলল,’আমি আপনার মেয়েকে বিয়ে করতে চাই।’
আরমান সাহরীফ লোকটার দিকে কিছুক্ষণ চেয়ে থেকে বলল,’আপনি কে?’
‘আমি রাহাতের ফুপাতো মামা।আমি বিয়ে করি নি এখনো।’লোকটা ফ্যাসফ্যাসে গলায় বলল।আসলেই ওর গলাই ওমন।কথাও বলে এভাবে।
প্রথমে রাহাতের ফুপাতো মামা এটা শুনে আরমান সাহরীফ চটে গেলেন।কিন্তু পরক্ষণেই ভাবলেন এটা উত্তম প্রতিশোধ হবে।ঘুরেফিরে ওদের কাছেই মেয়ে বিয়ে দিবে।আরমান সাহরীফ রাজি হলেন।যে কয়জন আত্নীয় স্বজন ছিলেন তাদের নিয়েই বিয়ের আয়োজন শুরু হলো।
ঘোমটার ফাঁক দিয়ে শুদ্ধতা আধবুড়ো লোকটাকে দেখে শিউরে ওঠলো।মনে মনে বলল,’এই লোকটাকে বিয়ে করার চেয়ে বোধহয় গলায় ফাস নেওয়াই ভালো ছিলো।’ কষ্টে বুকটা ফেটে যাচ্ছে শেষে কি না বুইড়া ব্যাটা জুটলো কপালে!
শুদ্ধতা কাঁদতে কাঁদতে কবুল বলল।কবুল বলার সময় মনে হচ্ছে যেনো দম আটকে আসছে।বিয়ে শেষ হওয়ার পর বিদায়ের সময় শুদ্ধতার বাবাকে জড়িয়ে ধরে বলল,’বাবা কেনো তুমি আমাকে এই বুড়ো লোকটার সাথে বিয়ে দিলে?আমি থাকতে পারবো না এই লোকটার সাথে।’
আরমান সাহরীফ মেয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বললেন,’বয়স ম্যাটার করে না সম্পর্কের ক্ষেত্রে মা।তুই সুখে থাকবি।’
তারপর শুদ্ধতা যেতে না চাইলেও ওকে গাড়িতে উঠিয়ে দিলেন।এই লোকটা বুড়ো হলেও এর অনেক টাকা আছে।চালকের আসনে লোকটা বসলো আর শুদ্ধতা পাশের সীটে।
গাড়িতে বসেও শুদ্ধতা কাঁদছে।লোকটা শুদ্ধতাকে বারবার দেখছে।তাতে যেনো শুদ্ধতা আরো ভয় পাচ্ছে।ও শুনেছে বুড়ো লোকগুলো খুব লুচ্চা হয়।এবার নিজের পরিণতির কথা ভাবতেই আর কাঁদতে ইচ্ছে হচ্ছে ওর।
সন্ধ্যার সময় ওরা একটা বড়ো বাড়ির সামনে এসে পড়লো।লোকটা গাড়ি থেকে নেমে শুদ্ধতাকেও নামতে ইশারা করলো।শুদ্ধতা বাড়িটা দেখে মনে মনে বলল,’সবই তো আছে শুধু বয়সটা কম হইলে কি হইতো!’
লোকটা শুদ্ধতাকে নিয়ে বাড়ির ভেতরে গেলো।বাড়িটা ডুপ্লেক্স।দোতালায় একটা রুমের সামনে এসে দরজার ওপর বড়ো আঙুল রাখতেই দরজা খুলে গেলো।এতো অত্যাধুনিক সিকিউরিটি সিস্টেম দেখে শুদ্ধতা অবাক হয়ে গেলো।লোকটা ভেতরে ঢুকে বলল,’এটা আমাদের বেডরুম।’
রুমটা অনেক বড়ো আর অনেক সুন্দর।শুদ্ধতা স্পঞ্জের নরম তুলতুলে বিছানায় বসে পুরো রুমটা দেখতে লাগলো।সবকিছুতে আভিজাত্যের নিদর্শন।তবে এতো বড়ো বাড়িতে লোকটা একা থাকে!নাকি আরো কেউ আছে!তবে উপরের আসার সময় তো কাউকে দেখা গেলো না।একজন সার্ভেন্টকেও পাওয়া গেলো না!বিষয়টা আশ্চর্য লাগছে!আর এটাও খটকা লাগছে যে সে শুদ্ধতাকেই কেনো বিয়ে করতে গেলো তাও এমন পরিস্থিতিতে!
রুম দেখতে দেখতেই খেয়াল করলো বুড়ো লোকটা রুমে নেই।এই সুযোগ দরজাটা আটকে দেওয়া যায়।শুদ্ধতা উঠে দরজা আটকে দেওয়ার আগেই আবারও লোকটা এসে হাজির।সে শুদ্ধতাকে বলল,’চেঞ্জ করে নাও।তোমার লাগেজ নিয়ে এসেছি।’
শুদ্ধতা নিজের লাগজেটা থেকে ওখান থেকে একটা সুতি শাড়ি নিয়ে ওয়াশরুমে গিয়ে চেঞ্জ করে নিলো আর ভারী গহনা গুলো খুলে রাখলো ড্রেসিং টেবিলে।হঠাৎ ড্রেসিং টেবিলের আয়নায় দেখলো লোকটা ওর দিকেই এগিয়ে আসছে।শুদ্ধতা ভয়ে কাঁদো কাঁদো গলায় বলল,’দেখুন,আপনি আমার দাদুর মতো।আমার সর্বনাশ করবেন না প্লিজ!আপনার পায়ে পড়ি প্লিজ!আমি আমার বান্ধবীদের মুখ দেখাতে পারবো না।সবাই আপনাকে দাদু আর আমাকে নাতনী বলবে।’
লোকটা থমথমে গলায় বলল,’যে যা ইচ্ছে বলুক।তুমি তো আমার বউ।’
‘কিসের বউ!আমি এই বিয়েতে রাজি ছিলাম না বাবার জন্য করেছি।প্লিজ আপনি আমার দিকে এগোবেন না।তা নাহলে কিন্তু আমি নিজেকে শেষ করে দেবো।’
এটা বলেই শুদ্ধতা আশেপাশে কিছু খুঁজতে লাগলো কিন্তু আফসোস কিছুই পেলো না।লোকটা শুদ্ধতার কাছাকাছি এসে পড়লো শুদ্ধতা কাঁপতে কাঁপতে এক পা এক পা করে সরতে শুরু করলো।
লোকটা ড্রেসিং টেবিলের সামনে এসে হুট করে মাথার চুল ধরে টান দিলো।আর কাঁচা পাকা চুলের কস্টিউমটা হাতে চলে এলো।পুরো মাথাভর্তি একঝাঁক কালো চুল দেখা গেলো।সিল্কি চুলগুলোর সামনের অংশ কপালে এসে পড়লো।তারপর লোকটা মোটা চশমাটা খুললো।গালের ওপরে থাকা কালো গোটা’টা সরিয়ে ফেললো।আলগা দাড়িটাও খুলে ফেললো।তবে মোছটা আলগা নয়।দাড়িও আছে তবে কাট করে ছোটো করে রাখা চাপ দাড়ি। শার্টটা খুলে প্লাস্টিকের ভুঁড়িটাও খুললো।হাতের পাঁচ ছয়টা পাথর আংটিগুলোও খুলে রাখলো।তারপর শুদ্ধতার দিকে চেয়ে চোখ মেরে বলল,’জাস্ট এ মিনিট।’
আলমারি থেকে কাপড় নিয়ে ওয়াশরুমে চলে গেলো।আর শুদ্ধতা হা করে তাকিয়ে রইলো।কি হলো এটা!
ছেলেটা সাদা কালার একটা জিন্স আর কালো কালারের টি শার্ট পরে বের হলো।ড্রেসিং টেবিলের সামনে দাড়িয়ে চুলে একটু হাত বুলিয়ে শুদ্ধতার দিকে এগুতে লাগলো।শুদ্ধতাও পিছাতে লাগলো।একবারে দেয়ালে লেগে গেলো শুদ্ধতা।ছেলেটা শুদ্ধতার দিকে ঝুঁকে বলল,’এখনো দাদু দাদু লাগছে?’
চলবে…?
#সেই_আদুরে_দিন
#পর্বঃ০১
#Arshi_Ayat
(ভুলত্রুটি ক্ষমা করবেন।গল্পটা কাল্পনিক ধাঁচের।আর প্রথম পর্ব পড়েই কেউ জাজমেন্টে যাবেন না।অনুরোধ রইলো।)