সুরমা কালো, পর্ব:২

0
285

#সুরমা_কালো

#পর্ব-২

সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখি রাশেদ আমার আগেই উঠে গেছে। নিজেই লজ্জা পেয়ে যাই দেরী করে ওঠার জন্য। হাত মুখ ধুয়ে বের হয়ে দেখি শুধু রাশেদ নয় বাড়ির সবাই উঠে গেছে।
রান্না ঘরে আমার শাশুড়ি কাজ করছেন। ছিপছিপে শরীরের আমার শাশুড়ির চেহারায় অনেক বেশি স্নিগ্ধতা রয়েছে। আমি লজ্জিত মুখে বলি, মা আমি দুঃখিত! কাল থেকে আরও সকালে ওঠার চেষ্টা করবো।
আমার শাশুড়ি বললেন, তুমি তো সকালেই উঠছো।সবার আগে উঠতে হবে এমন কোনো কথা নেই।

শুনে খুব ভালো লাগে আমার। আমার পরিবারে সবসময় শিক্ষা দেয়া হয় ঘরের বউ সবার আগে উঠবে।

গতকাল বিয়েতে রাশেদরা কয় ভাই বোন আমি এগুলো কিছুই খেয়াল করিনি অন্ধ বধির হয়ে যেন বসেছিলাম।
আজ নাস্তা পর্বে সবার সাথে নতুন করে পরিচিত হই। আমার দুজন ননদ। বড়জন তূর্ণা আপা বিবাহিত। উনি একটি হাই স্কুলের টিচার আর উনার স্বামী সরকারী কলেজের শিক্ষক। উনারা পাশের জেলায় থাকেন। গতকালই তূর্ণা আপার স্বামী অনুষ্ঠান শেষে বাড়ি ফিরে গেছেন। উনাদের চার বছরের একটা মেয়ে আছে যে পুরো ঘরে ছুটোছুটি করছে। আর ছোট ননদ স্বর্ণা যে এবার এইচ এস সি দিবে। বড় দেবর রায়হান ভাই ঢাকা মেডিকেলে পড়ে আর ছোট দেবর রবিন আমার বয়সী ঢাকা ভার্সিটি পড়ে। সবাই বেশ আন্তরিক কিন্তু অনেক বেশি চুপচাপ। সবার থেকে বেশি চুপচাপ মনে হয় তাদের বড় ভাই মানে আমার স্বামী রাশেদ।

এ পরিবারের সবাই অনেক পড়ুয়া যা আমার প্রথমেই খুব ভালো লেগেছে। আমার পরিবারের ছেলেরা পড়াশোনা করে শুধু ব্যবসা সামলানোর জন্য আর মেয়েরা করে মিনিমাম শিক্ষিত বুঝানোর জন্য।
তবে আমার বাপের বাড়ি আর শ্বশুড় বাড়ি দুই পরিবারই অনেক বেশি চুপচাপ, নিরিবিলি।
কিন্তু আমি মোটেও চুপচাপ মেয়ে না। আমি অনেক বেশি কথা বলি আর অনেক বেশি হাসাহাসি করি। এর জন্য আমার পরিবারে সব সময় বড়দের ধমক আর ভাইদের শাসন শুনতে হয়েছে আমাকে। খুব ভাল করেই বুঝছি এখানেও এর বিপরীত কিছু হবে না। হয়তো ধমক খেয়েই চলতে হবে।

নতুন বউ হিসাবে রাশেদ আমার প্রতি আলাদা কোন আদিখ্যেতা দেখাচ্ছে না। আমি যেন এ পরিবারের নিয়মিত একজন সদস্য।
ব্যাপারটা আমার বেশ ভালই লাগছে।

স্বর্ণা এসে বলল, ভাবি পার্লারে যাবে না? দুপুরে মেহমান সব চলে আসবে তো!

আমি রাজি হলাম না। আমার পরিবারে কখনও পার্লারে যাওয়ার পারমিশন নেই। তাছাড়া আমার নিজেরও পার্লারের সাজগোজ ভালো লাগে না।

আজ আমার বৌভাত। বিয়ে নিয়ে আমার মাথায় যে নেতিবাচক মনোভাব ছিল তা কেন জানি আজ আর নেই। আমি নিজেকে এ পরিবারের সাথে মানিয়ে নেয়ার চেষ্টা করছি। হয়তো গতরাতে রাশেদের কথাগুলো আমার গরম মাথা ঠাণ্ডা করে দিয়েছে। আর আমার পড়াশোনায় যদি কোন বাধাই না থাকে তবে আমি কিসের জন্য যুদ্ধের প্রস্ততি নিবো?

বৌভাতের অনুষ্ঠানের জন্য আমি নিজের মতো করে সেজে নিলাম স্বর্ণার সাহায্য নিয়ে। রাশেদ এরমধ্যে দুবার রুমে এসেছে। সে অনেক ব্যস্ত। নিজের মতো রুমে ঢুকে কি যেন নিয়ে চলে গেলো। আমার দিকে তাকালোও না।
আমি আজ গোলাপি রংয়ের হাল্কা কারুকাজ করা কাতান শাড়ি পরেছি। শাড়িটা আমার বেশ পছন্দ হয়েছে। যে কিনেছে তার রুচি প্রশংসনীয়।
শাশুড়ী মা কপালে আদর দিয়ে কাজল টিকা দিয়ে গেছেন নজর না লাগার।
স্বর্ণা জড়িয়ে ধরে বলেছে তোমার গায়ের রংয়ের সাথে শাড়ির রং তো পুরো মিশে গেছে। উফ! ভাবী তুমি এতো সুন্দরী! ভাইয়া এর জন্যই তোমাকে পছন্দ করেছে রীতিমতো পাগল হয়ে!
আমি মনে মনে বলি, তোমার ভাইয়া তো উল্টো কেন আমি এতো সুন্দরী সেই আফসোস করেছে । অন্য কি কারণে বিয়ে করেছে তাও জানলাম না।

সবাই যেখানে আমার রূপের প্রশংসায় পঞ্চমুখ সেখানে রাশেদ যেন আমাকে দেখার সময়ই পায় না।
আমি মনে মনে গজরাতে থাকি। মানলাম আমি সময় চেয়ে নিয়েছি।
কিন্তু সে তো পুরুষ মানুষ! সুন্দরী বউকে একবার দেখবেও না! কেমন মানুষ সে!

আমার বাবার বাড়ির লোক জন চলে এসেছে তবে ছোট চাচী আসে নি। উনার নাকি শরীর খারাপ করেছে।
আমি জানি বিদায়ের সময় বলা আমার কথায় উনি খুব কষ্ট পেয়েছেন। এরজন্য আর আমার সামনে আসতে চান নি।
চাচাতো বোন আর ভাবীরা আমার রুমে বসে বাসররাতে করণীয় কর্ম নিয়ে ঠাট্টা মশকারী শুরু করেছে। ওদের কথা শুনে আমার গা জ্বলা শুরু হয়েছে। স্বর্ণা তো কান লাল করে পালিয়েছে। স্বর্ণার সামনে আমার নিজেরও খুব অস্বস্তি হচ্ছিল। আমার পরিবারে স্বর্ণার বয়সী মেয়েরা বিয়ের জন্য পুরোই প্রস্তুত থাকে। কিন্তু স্বর্ণা এখনো ইচরে পাকা হয়ে উঠে নি।
কেন জানি,আমার কাছে নিজের পরিবারের মানুষদের ই বিরক্ত লাগছিল অন্যদিকে শ্বশুড় বাড়ির মানুষদের সৌহার্যপূর্ণ আচরণে তাদেরকে অনেক বেশি সহনশীল ও স্বস্তিদায়ক লাগছিল।

ফিরুনীর সময় আমি বেঁকে বসলাম যাবো না বলে। বড় চাচী আর ভাবীরা বুঝাতে ব্যর্থ হয়ে চাচাদের পাঠালেন।
বড়চাচা ও মেজোচাচা রুমে এসে আমার কাছে বসলেন। ছোট চাচা ভেজানো দরজায় দাঁড়িয়ে রইলেন। রাশেদের বাড়ির কেউ যেন জানতে না পারে আমাদের কথপোকথন।

বড় চাচা বললেন, নাজিলা আমাদের উপর রাগ করে এখন বাড়ি যেতে চাইছো না, মা?
আমি চুপ হয়ে রইলাম।

–মা রে, কাল সারারাত আমি চোখের পাতা এক করতে পারি নি। তুমি বিদায় বেলা একফোঁটা কাঁদো নি। তোমার অন্ধকার মুখ আমার মনে গেঁথে গেছে, মা। নিজেরে খুব অপরাধী লাগছে। তোমার চাওয়া তো খুব বেশি ছিলো না, তুমি তো শুধু পড়াশোনাটাই শেষ করতে চেয়েছিলে।
আমি তোমার অধম বড় চাচা, তোমার এ চাওয়াটাও পূর্ণ হতে দিলাম না।
মা রে, আমি কোনদিন তোমারে নিজের বাচ্চাদের থেকে আলাদা করি নাই। কিন্তু কাল তোমার অভিমানী মুখ দেখে কেন যেন মনে হয়েছে আমি তোমারে আমার বাচ্চাদের থেকে পার্থক্য ঠিকই করেছি। আমি নিজেরে মাফ করতে পারছি না! মরার পরে তোমার বাবা মার কাছে আমি কি জবাব দিবো মা! আমি যে অপরাধী হয়ে গেলাম, বলে বড় চাচা হাউমাউ করে কেঁদে উঠেন। আমি আর নিজেকে ধরে রাখতে পারি নি বড় চাচাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে থাকি।
বহু বছর ধরে যেন আমি কাঁদছি। এমন স্নেহ কতদিন পাই নি।

কেঁদে মন হাল্কা হয় কথাটা সত্যি। আমার নিজেকে খুব হালকা লাগছে। কিন্তু কান্না থামছে না। আমি কাঁদতে কাঁদতে বলি, চাচা আপনি নিজেকে কখনো অপরাধী ভাববেন না। আপনি আমার বাবার মতোই আমাকে স্নেহ করেছেন। পরিবারের সবার কাছ থেকেই আমি অনেক ভালোবাসা পেয়েছি।

বড় চাচা বললেন, আমাদের উপর অভিমান রাখিস না, মা! চল, আমাদের সাথে, এটাই নিয়ম।

আমি চোখ মুছে বলি, ক্ষমা করবেন চাচা! আমি যেতে পারবো না। তবে আমি অভিমান করে যাচ্ছি না তা কিন্তু না। আমি আসবো কটা দিন পরে । আমি এ সংসারটাকে আপন করতে চাই, চাচা। আমাকে একটু আমার মতো সময় দেন! আমার মনের অস্থিরতা আমি দূর করতে চাই। এ চাওয়াটুকু একটু শুনেন চাচা!
চাচা বললেন, তোমার শশুড়বাড়ির মানুষ কি বলবে? তুমি কেন যেতে চাইছো না।
—আপনি উনাদের বলুন আমি এখানে কিছুদিন থেকে তারপর আসবো। উনারা মনে হয় না কথাটা খারাপ ভাবে নিবে। যতটুকু দেখেছি উনাদের আমার খুব সোজাসরল ভালো মানুষই মনে হয়েছে।
—ঠিক আছে মা, তুমি যা ভালো মনে কর। তুমি বরাবরই অনেক বুদ্ধিমতী মেয়ে। আমার তোমার উপর পুরো ভরসা আছে। তবে আমি অপেক্ষায় থাকবো জামাই নিয়ে তোমার বেড়াতে আসার।

বড় চাচার হাত আমার মাথার উপর রেখে বললাম, আপনি শুধু দোয়া করে যান চাচা, আমি যেন হাসি মুখে সুখী মানুষের মতো আমার বাপের বাড়ি যাই। আমাকে দেখে যেন নিজেকে অপরাধী নয়, মনে মধ্যে আত্মতৃপ্তি আসে আপনার।
বড় চাচা আমার মাথায় হাত বুলিয়ে বিদায় নেন। আজ আমি আবিষ্কার করি আমার পরিবারটিকে আমি সত্যিই অনেক ভালোবাসি। সবাইকে চোখের পানি সমেত বিদায় দেই।

রাতে সবাই ঘুমাতে গেলে আমি রুমে বসে বসে রাশেদের অপেক্ষা করতে থাকি।
আমার সাজগোজ কিছুই খুলি নি। রাশেদ একবারও কি আমাকে দেখবে না!
রাশেদ রুমে ঢুকলে আমি তার দিকে তাকাই কিন্তু সে আগের মতই এক পলক দেখে চোখ নামিয়ে নেয়।
আমি ইনিয়ে বিনিয়ে বলি, আজকের গোলাপি শাড়িটা কি আপনি পছন্দ করেছেন?
—না। বিয়ের জিনিস তো একদিনে সব কেনা হয়েছে। আম্মা আর স্বর্ণা মিলে কিনেছে। আমি তো শুধু সাথে ছিলাম।
—আপনি নিজে থেকে পছন্দ করে কিছু কিনেন নি আমার জন্য??
—না আসলে ওভাবে ভাবি নি।

খুব মন খারাপ হয় আমার। শাড়ি বদলাতে জামা নিয়ে বাথরুমে চলে যাই। ধুর! এ মানুষটার কি কোন রোমান্টিকতা নেই?

রাশেদ নাজিলার বিরক্তি নিয়ে চলে যাওয়া দেখে নিঃশব্দে হাসে। মনে মনে বলে, অভিমান!

আমি কাপড় পাল্টে বিছানায় বসে বলি কাল তো অনেক কিছু জানা হলো না।

–কি জানতে চাও?

–আমার চাচী আপনার বান্ধবী কীভাবে?
আপনি আমাকে অন্য কোন কারণে বিয়ে করেছেন?

রাশেদ হেসে বলে, আচ্ছা একটা একটা করে বলি।
ছোট বেলায় তোমার চাচী শিউলি আর আমরা একই এলাকায় পাশাপাশি ছিলাম। শিউলি আমার সমবয়সী। বলা চলে একসাথে খেলা করে বড় হয়েছি আমরা। শিউলি আর আমি দুজনেই পড়াশোনায় ভালো ছিলাম। আমার আব্বার অনেকগুলো দোকান ছিল বিধায় আমাদের আর্থিক অবস্থা বেশ ভালো ছিল। আব্বা ব্যবসায়ী হলেও উনি ছিলেন সাহিত্য অনুরাগী। আমাদের বাসায় পুরাই পড়াশোনার পরিবেশ ছিল। অন্যদিকে শিউলি মেধাবী ছিল কিন্তু ওর বড় ভাইদের যেভাবে পড়াশোনায় যত্ন নেয়া হতো ওর বেলায় আলাদা কোনো যত্ন ছিল না। আমাদের বাসায় ছোটবেলা থেকেই গল্পের বইয়ের সমাহার ছিল। শিউলি সে বয়সেই গল্প পড়তে পছন্দ করত বলে আমার কাছ থেকে বই নিয়ে পড়তো।
শিউলি পড়াশোনায় সবসময় ফার্স্ট হতো আর আমি সেকেন্ড। ওকে আমি কখনোই ডিঙ্গাতে পারতাম না।

আব্বা হঠাৎ করে একদিন রোড এক্সিডেন্টে মারা গেল আমি তখন কেবল ক্লাস নাইনে পড়ি। আমাদের দুনিয়া ওলট-পালট হয়ে গেল। আমি বড় ছেলে বাকি ভাই বোন সব ছোট ছোট। আমাদের এতোগুলো দোকান চাচারা বিভিন্ন হিসাব দেখিয়ে নিয়ে নিলো। কেবল একটি দোকান আমরা পাই। আব্বার বিশ্বস্ত কর্মচারী হাসনাত চাচা আমাকে নিয়ে দোকানে বসালেন। নাইনে পড়া ছেলে আমি, হঠাৎ করে ব্যবসায় বসে চোখে সর্ষে ফুল দেখি। হাসনাত চাচা আমাকে অল্প অল্প করে সব বুঝিয়ে দিলেন। এই একটা দোকান দিয়ে আমাদের সংসার চলা শুরু হয়। আমাদের দুঃসময়ে চাচাদের এমন স্বার্থন্বেষী আচরণে আমরা খুব ভেঙে পড়ি। পরে আম্মা আমাদের নিয়ে এদিকটায় চলে আসেন। এ জায়গাটা আম্মার নামে কিনেছিলেন আব্বা। তখন এ বাসাটা এতো বড় ছিল না। ছোটখাটো টিনের ঘর করে ভাড়া দেয়া ছিল। একপাশে ভাড়াটিয়া রেখে আরেক পাশে দুরুম নিয়ে আমাদের নতুন করে জীবন সংগ্রাম শুরু হয়।
আমি দোকান নিয়ে এতো ব্যস্ত হয়ে পড়ি যে, পড়াশোনা থেকে অনেক দূরে সরে যাই। আম্মার তো ছোট ছোট ভাই বোনদের নিয়ে পাগল পাগল অবস্থা।
একদিন শিউলি তার মাকে নিয়ে আমাদের বাসায় বেড়াতে আসে। আমি লেখাপড়া ছেড়ে দিয়েছি শুনে খুব অবাক হয়। যেভাবে হোক পরীক্ষা দিতে বলে। ওর চাপাচাপিতে আম্মারও যেন হুস আসে। আম্মা আমাকে ফাইনাল পরীক্ষা দিতে বলেন। কিন্তু ততোদিনে আমি অনেক পিছিয়ে গেছি।
তোমার চাচী শিউলি আমার সত্যিকারের বন্ধু সেজে প্রতিদিন স্কুলে যাওয়ার এক ঘন্টা আগে এসে আমাকে পড়ালেখায় সাহায্য করতো। এভাবে আমি বার্ষিক পরীক্ষা দেই আর মোটামুটি ভাবে পাশ করি। এভাবে মেট্রিক- ইন্টার দুটোতেই ও আমাকে অনেক সাহায্য করেছে। শিক্ষকদের সাথে যোগাযোগ রাখা, নোট যোগাড় করা, পরীক্ষার খবরাখবর সব কিছু আমি ওর কাছ থেকেই পেতাম।

ইন্টার পাশের পর শিউলির তোমার চাচার সাথে বিয়ে হয়ে যায়। আমাকে সাহায্য করার আর কেউ থাকে না। ততদিনে অবশ্য আমি অনেক গুছিয়ে নিয়েছি নিজেকে, ব্যবসাকেও। বাইরে গিয়ে ভার্সিটি পড়া আমার সম্ভব ছিলো না। ছোট ভাই বোনদের দায়িত্ব ছিল আমার উপর। তাই আমি স্হানীয় কলেজ থেকে অনার্স কমপ্লিট করি। এখন আমার ব্যবসা আলাহামদুল্লিহ অনেক বড়, ভাই বোনগুলোকে মানুষ করতে পেরেছি।
তবে আমার জীবনে শিউলির অবদান ভুলার মতো না। আবার দেখো আমার জীবনে তোমাকে পাওয়ার ক্ষেত্রেও কিন্তু শিউলি আবার বন্ধুর মতো অবদান রাখলো।

আমি গলা নামিয়ে বললাম, স্বর্ণা বলেছে আপনি নাকি আমাকে পাগল হয়ে বিয়ে করেছেন?

রাশেদ হেসে ওঠলো।
–ওরকম কিছু না। আসলে আমার জন্য ওরা অনেক পাত্রী দেখেছিল কিন্তু আমি সব মানা করে দিতাম। সেখানে তোমার ব্যাপারে আমি নিজে থেকে আগ্রহ নিয়ে ওদের জানালাম। তারপর তোমার পরিবার দ্বিধায় ছিল বলে আমি শিউলিকে দিয়ে আবার প্রস্তাব দিলাম। আমার এমন আচরণে ওরা সবাই হয়তো ধরে নিয়েছে আমি তোমার প্রেমে পাগল হয়েছি।

আমার কেন জানি খুব আনন্দ লাগছিল। আনন্দিত মুখখানা গম্ভীর রাখার বৃথা চেষ্টা চালিয়ে ঢং মেরে বললাম, শেষ কথা তো তাই দাঁড়ালো আপনি আমাকে পাগল হয়ে বিয়ে করেছেন!

রাশেদ যেন লজ্জা পেলো। মৃদু হেসে বলল, আমি তোমাকে বিয়ে করতে চেয়েছি ঠিকই তবে যতটুকু নিজের জন্য তার চেয়ে বেশি আমার পরিবারের জন্য।

—মানে কি! উনারা তো আমাকে বিয়ের আগে দেখেই নি! তাহলে!

সবই কি আজ জানতে হবে? ওটা কদিন পর বলবো।
আজ ঘুমাও। সারাদিন অনেক খাটাখাটুনি গেছে।

রাশেদ পাশ ফিরে শুয়ে পড়লো।
আমারও ক্লান্তিতে ঘুম চলে আসলো।

চলবে।।

ঝিনুক চৌধুরী।।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here