সুপ্ত বাসনা পর্ব ১৬ +১৭+১৮

0
1180

#সুপ্ত_বাসনা
লেখিকা সুরিয়া মিম
পর্ব- ১৬+১৭+১৮

– “কচু জানাবো,কে জানে কি ঘটিয়ে এসেছে নিচে? লোকটা’কে দেখলেই আমার গায়ে জ্বালা ধরে,জানি না মেয়েরা কি দেখে পছন্দ করে একে?” ইমান কিঞ্চিৎ ঝুঁকে মিম’কে বলে,
– “কি ব্যাপার? ব্রো,আজ কি তুমি খুশি হওনি? আমার খুশি দেখে?” মিম বললো,
– “না তা কেন স্যার? কেন কি হয়েছে আপনার সাথে?” ইমান বলল,
– “সাউন্ড’স ইন্টারেস্টিং এখন আমি এ….ব্যাপারে কথা বলতে চাই না কারো সাথে।” মিম অবাক হয়ে ইমান’কে প্রশ্ন করলো,
– “কেন স্যার? কোনো কনফিডেনসিয়াল ব্যাপার_স্যাপার আছে?”
– “হ্যাঁ,ইট’স হিলারিয়াস ব্রো,তাই চাইলে ও এই…. মুহূর্তে আমি কথাটা শেয়ার করতে পারছিনা তোমার সাথে।” মিম এবার বিরক্ত হয়ে ইমান’কে বলে,
– “ভালোই স্যার,তাহলে কেন এসে বকবক করছেন আমার সাথে?”
– “ও জাস্ট এমনি,ইয়ার! এশার নামাজ পড়ার সময় কি এখনো আছে?” মিম বললো,
– “না স্যার! আপনি এসে কাজা নামাজ টা পড়ে ফেলুন,আল্লাহ তাআ’লা নিশ্চয়ই আপনা’কে ক্ষমা করে দেবে।” ইমান মৃদু হেসে তখন বলে,
– “তুমি’ই ঠিক ছিলে, মিহ! আমাকে বদলে যেতে হবে?” মিম এগিয়ে এসে জিজ্ঞেস করলো,
– “আপনি কি বিয়ে করবেন,স্যার!”
– “হ্যাঁ কেন? তোমার কোনো সন্দেহ আছে? আমি আসলে দুনিয়া টা কে যত সহজ ভাবতাম,সেটা এতো সহজ নাঃ! ইয়ার,প্রত্যেক জিনিসের আলাদা আলাদা একটা মানে আছে আর আমি আজ একটা বাজি ধরে এসেছি,ভাই!
সেটা আমাকে জিততেই হবে….কোনো না কোনো ভাবে।” মিম বললো,
– “শুধু বাজি ধরেছেন বলে এতো কিছু স্যার! আপনি কি সত্যি ভালোবাসেন ওই….মানুষ টাকে? নিজেই নিজেকে একবার প্রশ্ন করে দেখুন,স্যার!
– “আপনি কি সত্যি ভালোবাসেন ওই….মানুষ টাকে?” ইমান ওজু করে এলো,বললো,
– “এতো তাড়াতাড়ি তো আমি এতো প্রশ্নের কৈফিয়ত দিবো না তোমাকে।শুধু বলবো,আমার জন্য দোয়া করো আর সেটা যেন হয় মন থেকে।” মিম মৃদু হেসে বলে,
– “করলাম স্যার! তবে আপনি যে পাল্টি খাবেন না,তার কি গ্যারান্টি আছে? শুধু চ্যালেঞ্জ জেতার জন্য এতোকিছু? আপনার কি মনে হয়? তাতে মেয়ে পটে যাবে?” ইমান নিশ্চুপ এই…প্রশ্নের কোনো উওর নেই তার কাছে।আমি সাহেব বলেছিলেন,
– “আমার মেয়ে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ে,কোরআন শরীফ পাঠেও তার বিশেষ দক্ষতা আছে।শুধুমাত্র,বাজি জেতার জন্য বদলালে হবে না,তোমাকে বদলাতে হবে ভেতর থেকে…..।ইমান কাজা নামাজ পড়ে এসে নিজের ক্লান্ত শরীর টা এলিয়ে দেয় বিছানাতে,মিম একটা জরুরী কাজে ইমানের ঘরে এসে দেখে,
ইমান উল্টো করে টুপি পরে বিছায়া বসে আছে।মিমের হাসি দেখে ইমান কিছুটা বিরক্ত হয়ে জিজ্ঞেস করে,
– ” কি ব্যাপার মিহ? তুমি হাসছো কেন আমায় দেখে?”
– “আপনি দেখছি টুপি টাও পরতে জানেন না স্যার? কোন লোকে আপনা’কে মেয়ে দেবে?”
– “যে দেবে,সে অনেক ভালো মানুষ….,তার আগে দেখো ভাই আমার টুপি টা পরা ঠিক আছে?”
– “হুমম,কি ব্যাপার স্যার? এভাবে কেন তাকিয়ে আছেন? আপনি কি কিছু বলতে চান আমাকে?”
– “শুনলাম, তুমি কাল গ্রামে ফিরে যাচ্ছ?”
– “হ্যাঁ,স্যার! কিছু জরুরী কাজ আছে।” ইমান ইশারা করে মিম’কে বললো,
– “আমার পাশে এসে শুয়ে পরো,মিহ!” মিম চুপটি করে গিয়ে শুয়ে পরলো ইমানের পাশে,ইমান লাইট টা অফ করে মিমের দিকে কিছু টা এগিয়ে এলো।মিম ভয় পেয়ে গেলো হঠাৎ ইমানের কাণ্ড দেখে,ইমান মিম’কে টপকে অপর পাশে গিয়ে শুয়ে পরলো আর নিজের ফোন টা নিয়ে নিলো হাতে।মিম মুখ ঘুরিয়ে অপর পাশে শুয়ে পরলো,ইমান কিঞ্চিৎ ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেলো মিমের রাগ করা দেখে,অতঃপর নিজের পা ওর গায়ে তুলে দিলো আর শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো তাকে।মিম রাগে গজগজ করতে করতে বললো,
– “খারাপ জিনিস দেখছিলেন,সেটাই দেখেননা স্যার! এতো আহ্লাদ করতে হবে না আমাকে।” ইমান মিটিমিটি হেসে বলে,
– “আহ্লাদ কোথায় করলাম? আমি জাস্ট জড়িয়ে ধরেছি তোমাকে।”
– “কেন ধরেছেন আপনি? আপনার লজ্জা করে না? পুরুষ হয়ে ঘনিষ্ঠ হওয়ার চেষ্টা করছেন আরেক পুরুষের সাথে? লজ্জা নেই আপনার? আপনার সারা টা জীবন কি এমন নির্লজ্জতায় কেটে যাবে?” জানেন সমকামী সম্পর্কে আমাদের ইসলাম কি বলে? তাহলে শুনুন,
পৃথিবীতে যত জীব-জন্তু আছে তারা সবাই ‘কামত্তেজনা’ উঠলে বিপরীত লিঙ্গের দারস্থ হয়।এদিকে আশরাফুল মাখলুকাত তথা শ্রেষ্টজীব মানুষ হয়ে যৌন চাহিদা মেটানোর ক্ষেত্রে জানোয়ার থেকেও অধম হই কী করে? তাদেরকেই কোরআন বলছে ‘উলা- ইকা কাল আনআম বাল হুম আদ্বাল’।সমান সমান লিঙ্গধারীরা পরষ্পর এক-অন্যের সাথে যৌন চাহিদা মেটানোর নামই হচ্ছে homosexuality বা সমাকামিতা।
ইসলামের সমকাম ব্যভিচারের চেয়েও জঘন্য অন্যায় ।হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সা. বলেন, ‘যাদেরকে তোমরা লুতের সম্প্রদায়ের কাজে অর্থাৎ সমকামে লিপ্ত হতে দেখবে তাদের উভয়কেই হত্যা করো।’ (তিরমিজি: ৪/৫৭; আবু দাউদ: ৪/২৬৯; ইবনে মাজা: ২/৮৫৬)।
homosexuality বা সমকামিতাকে ইসলামে সম্পূর্ণ হারাম করে দিয়েছে এবং স্বাভাবিক ব্যভিচারের চেয়েও খারাপ।লুত (আ) এর কওমকে আল্লাহ ধ্বংস করে দিয়েছিলেন যেসব কারণে এর মধ্যে সমকামিতা ছিল একটি এবং আমি লূতকে প্রেরণ করেছি।যখন সে স্বীয় সম্প্রদায়কে বললঃ তোমরা কি এমন অশ্লীল কাজ করছ, যা তোমাদের পূর্বে সারা বিশ্বের কেউ করেনি ? তোমরা তো কামবশতঃ পুরুষদের কাছে গমন কর নারীদেরকে ছেড়ে বরং তোমরা সীমা অতিক্রম করেছ। (আরাফ ৭:৮১-৮২)
‘সারা জাহানের মানুষের মধ্যে তোমরাই কি পুরূষদের সাথে কুকর্ম কর? এবং তোমাদের পালনকর্তা তোমাদের জন্য সঙ্গিনী হিসেবে যাদের সৃষ্টি করেছেন, তাদেরকে বর্জন কর? বরং তোমরা সীমালঙ্ঘনকারী সম্প্রদায়।’ (সূরা শুয়ারা ২৬:১৬৫-১৬৬) ‘স্মরণ কর লূতের কথা, তিনি তাঁর কওমকে বলেছিলেন, তোমরা কেন অশ্লীল কাজ করছ? অথচ এর পরিণতির কথা তোমরা অবগত আছ! তোমরা কি কামতৃপ্তির জন্য নারীদেরকে ছেড়ে পুরুষে উপগত হবে? তোমরা তো এক বর্বর সম্প্রদায়।উত্তরে তাঁর কওম শুধু এ কথাটিই বললো, লূত পরিবারকে তোমাদের জনপদ থেকে বের করে দাও,এরা তো এমন লোক যারা শুধু পাকপবিত্র সাজতে চায়।অতঃপর, তাঁকে ও তাঁর পরিবারবর্গকে উদ্ধার করলাম তাঁর স্ত্রী ছাড়া।কেননা, তার জন্যে ধ্বংসপ্রাপ্তদের ভাগ্যই নির্ধারিত করেছিলাম। (কুরআন ২৭:৫৪-৫৭) ‘আমার প্রেরিত ফেরেশতাগণ সুসংবাদ নিয়ে ইব্রাহীমের কাছে আগমন করল, তখন তারা বলল, আমরা লুতের জনপদের অধিবাসীদেরকে ধ্বংস করব।নিশ্চয় এর অধিবাসীরা অপরাধী।’ (২৯:৩১) যে সমকামিতার অপরাধে একটি জাতিকে ধ্বংসের ভয়াল পরিণতি বরণ করতে হয়েছে সেই ঘৃণ্য কাজটিকেই ‘আধুনিকতা’ এবং ‘অধিকারের’ কথা বলে আবার ছড়িয়ে দিতে কিছু মস্তিষ্কবিকৃত মানুষের চেষ্টা চলছে অব্যাহতভাবে। দৈহিকভাবে মানুষ রেখে চেতনায় পশু বানিয়ে দেয়ার প্রতিযোগিতা।অভিশপ্ত সম্প্রদায় ‘কওমে লুত’ ধ্বংস হয়েছিল সমকামের অপরাধে। হজরত লুত (আ.)’র জাতি ছিল সমকামী।হজরত লুত তাদেরকে এহেন কাজ থেকে বিরত থাকার এবং হালাল পন্থায় নারীদের সঙ্গে তাদের যৌন চাহিদা পূরণ করার অনুরোধ করেছেন বারবার। কিন্তু কে শুনে লুতের কথা! হজরত লুত ব্যর্থ হলেন। এমতাবস্থায় তার ঘরে চারজন সুদর্শন যুবক মেহমান আসলো। মেহমানের আগমণের খবর পেয়ে সমকামে অভ্যস্ত লোকেরা মেহমানদের সঙ্গেই কুকর্ম করতে চাইল। হজরত লুত ভীত হলে যুবক চারজন তাঁকে বললেন, ‘হে লুত, আমরা
ফেরেশতা’। শুধু ইসলাম ধর্মগ্রন্থ কুরআনই নয়, পবিত্র বাইবেলেও সমকামিতা একরকমের
পাপ (আদি পুস্তক ১৯:১-১৩; লেবীয় ১৮:২২; রোমীয় ১:২৬-২৭; ১ করিন্থীয় ৬:৯) রোমীয় ১:২৬-২৭ পদ সুনির্দিষ্টভাবে শিক্ষা দেয় যে, ঈশ্বরের অবাধ্য হওয়া এবং তাঁকে অস্বীকার করার ফলস্বরূপ সমকামিতার শাস্তি দেওয়া হয়েছে।লোকেরা যখন অবিশ্বাসের কারণে পাপ করতেই থাকে, তখন ঈশ্বর “লজ্জাপূর্ণ কামনার হাতে” তাদের ছেড়ে দেন যেন তারা আরও জঘন্য পাপে ডুবে যায় এবং ঈশ্বরের কাছ থেকে দূরে থাকার ফলে নিস্ফল ও নৈরাশ্যের জীবন অনুভব করতে পারে। ১ করিন্থীয় ৬:৯ পদে বলা হয়েছে যে, যারা সমকামিতায় “দোষী”, তারা ঈশ্বরের রাজ্যের অধিকার পাবে না।ঈশ্বর সমকামিতার মনোভাব দিয়ে মানুষ সৃষ্টি করেন নাই। পবিত্র বাইবেল বলেছে, লোকেরা পাপের কারণে সমকামী হয় (রোমীয় ১:২৪-২৭) এবং এটা তাদের নিজেদের পাপপূর্ণ ইচ্ছার পরিণতি।যাইহোক, বাইবেল কিন্তু সমকামিতাকে অন্যান্য পাপের চেয়ে “বড়” বলে বর্ণনা করে নাই।করিন্থীয় ৬:৯-১০ পদে যে পাপগুলোর কথা উল্লেখ করা হয়েছে, সমকামিতা হচ্ছে সেগুলোর একটি, যা কিনা ঈশ্বরের রাজ্য থেকে একজনকে দূরে রাখে।হযরত ইবনে আব্বাস রা. বলেন, রাসুল সা. বলেছেন, ‘তোমরা যদি কাউকে পাও যে লুতের সম্প্রদায় যা করত তা করছে, তবে হত্যা কর যে করছে তাঁকে আর যাকে করা হচ্ছে তাকেও।’ (আবু দাউদ ৩৮:৪৪৪৭) হযরত জাবির রা. থেকে বর্ণিত, রাসুল সা. বলেছেন, ‘আমি আমার কওমের জন্য সবচেয়ে বেশি যে জিনিসটা আশঙ্কা করি সেটা হল লুতের কওম যা করত সেটা যদি কেউ করে…’(তিরমিজি, ১৪৫৭)

কাজেই পুরুষ যদি, পুরুষেই যৌন চাহিদা পুরণ করতে পারে তাহলে নিশ্চই নারীর প্রতি তার টান কমে যাবে।আর এর ফল কোথায় দাঁড়াবে? পুরুষ যদি নারীর কাছে না যায় তাহলে মানুষের বংশবৃদ্ধির কী হবে? সমকামিতার ফলে যেমন এইডস মহামারি ছড়াবে তেমনি মানুষের স্বাভাবিক প্রজনন ব্যহত হবে নিশ্চিতভাবে।হুমকির মুখে পড়বে মানবসভ্যতা,শুনুন স্যার! যৌন চাহিদা,কাম উত্তেজনা গরু,ছাগলের ও থাক।তাই বলে এভাবে? ছিঃ! আমার করুণা হয় আপনা’কে দেখে।” ইমান তখন মন মরা হয়ে শুয়ে পরে অন্যপাশে,সকালে ইমান নিচে এসে রীতিমতো চমকে যায় মিম’কে দেখে….মিম ইমান’কে দেখে বুঝতে পারলো তার মন খারাপ,কিন্তু ওর দৃঢ় বিশ্বাস…ও ভুল ছিলো না রাতে।ও নিজেই কি ভেবে এগিয়ে এসে ইমান’কে জিজ্ঞেস করে,
– “কি খবর ভাইয়া আপনার? শরীর এবং স্বাস্থ্য ঠিক আছে?” ইমান মৃদু হেসে বলে,
– “আছে,তবে কেউ-ই সে রকম ভালোবাসে না আমাকে।যার কাছে যাই,সেই ফিরিয়ে দেয়…এতো অপদস্ত হতে কার ভালো লাগে?” মিম হাসিমুখে তখন ইমান’কে বললো,
– “মুক্ত বাতাসের খোঁজে বইটি পড়ে ফেলুন,আশা করছি সেটি কাজে দেবে।এই….বইটির লেখক লস্ট মর্ডেস্টি আর বাংলা অনুবাদক আসিফ আদনান,এটা আপনার খুব সহায়ক হবে।কারণ,এই….বইটি লেখা পর্নোগ্রাফি নিয়ে,পর্ন-আসক্তি নিয়ে….আমি সবটাই শুনেছি মামুর মুখ থেকে।শুনলাম,আপনি কাওকে ভালোবাসেন? তার জন্য অন্তত নিজেকে বদলে ফেলতে হবে? কি হলো পারবেননা আপনি? এভাবে কেন তাকিয়ে আছেন আমার দিকে?” ইমান মনেমনে বললো,
– “পারবোনা কেন আমি? আমাকে পারতেই হবে।” তারপর ইমান নিচু স্বরে মিম’কে জিজ্ঞেস করলো,
– “তবে কি তুমি আমার হবে?”

চলবে……

#সুপ্ত_বাসনা
লেখিকা সুরিয়া মিম
পর্ব- ১৭

– “তবে কি তুমি আমার হবে?” মিম যেন এবারেও শুনেও শুনলো না,হাসিমুখে পা বাড়ালো ইলহান সাহেবের কাছে।যদিও ওর রাগ হয়েছিল ইমানের হাবভাব দেখে,
কারণ তার বুঝতে বাকি নেই যে ওকে নিয়ে অনেক কথা হয়েছে আমির সাহেব ও ইমানের মাঝে।ও আর অপেক্ষা না করে ফোন করে আমির সাহেবের কাছে।আমির সাহেব সবটা বলার পরে মিম চেটো গিয়ে তাকে বলে,
– “বাবা, তোমার কি ফেলনা বলে মনে হয় আমাকে? না মানে,এসব কি? তুমি কি করে ভাবলে যে আমি বিয়ে করবো ওকে? আমার রুচি এতো টাও খারাপ না।”
– “ঠিক আছে,তবে তুমি রাগ করছ কেন? আম্মু,বললেই কি বিয়ে হয়ে যায় নাকি? বলো আমাকে?” মিম রাগে গজগজ করতে করতে বললো,
– “জানি না আমি,তোমরা প্লিজ আমাকে নিয়ে খেলা বন্ধ করো ঠিক আছে? আমি পারবোনা যাকে-তাকে নিজের জীবন সঙ্গী হিসেবে মেনে নিতে আর এটাই সত্যি,এটাই আমার শেষ কথা সেটা যেন মাথায় থাকে।” আমির সাহেব চুপ হয়ে গেলেন আর কোনো কথা বাড়ালেন না মেয়ের সাথে।ইমান দরজার আড়ালে দাঁড়িয়ে ছিল,মিমের কথা শুনে তার চোখ দু’টো লাল হয়ে গেছে।….তাই সে মনেমনে স্থির করলো তাকে যেভাবেই হোক নিজেকে বদলাতে হবে।নিজের জন্য না হোক,মিমের জন্য নিজেকে বদলে ফেলতে হবে।কারণ মেয়ে টা ওকে সত্যি ভালোবাসেনা…..।ভালোবাসার ছিঁটেফোঁটা ও বেঁচে নেই ওর মাঝে।

দুপুরে ইমান,বাহিরে যাওয়ার সময় মিম’কে জিজ্ঞেস করে,
– “তুমি যে বই টার কথা বলেছিলে,সেটা কোথায় পাওয়া যাবে?” মিম মিটিমিটি হেসে ইমান’কে বললো,
– “যে কোনো লাইব্রেরিতে গিয়ে চাইলে’ই হবে।বইয়ের নাম “মুক্ত বাতাসের খোঁজে” লেখক লস্ট মর্ডেস্টি এবং বাংলা অনুবাদক আসিফ আদনান।
– “ঠিক আছে।তবে তুমি কি আমার সাথে একটু যাবে? আমার বই কেনার ব্যাপারে কোনো অভিজ্ঞতা নেই সে ভাবে।” মিম বললো,
– “চলুন,তবে আমাকে ওখান থেকে বাসায় ফিরে যেতে হবে।” ইমান গাড়িতে বসতে বসতে বললো,
– “কেন?”
– “কিছু জরুরী কাজ আছে আর তাছাড়া আমি আজকাল প্রায় ব্যস্ত থাকি নতুন নতুন কাজে।”
– “যেমন?”
– “এই….যেমন বই পড়তে আমার বেশ লাগে,বাসায় রান্নাবান্না করছি তিন বেলা….হেলপিং হ্যান্ডের রান্নাবান্না আমার ভালো লাগে না সেভাবে….যদিও সে বেশ পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন,তবে নিজের কাজ নিজে করতে ভালোই লাগে।” ইমান যখন কিছু বলতে যাবে,ঠিক তখন একটা ফোন কল আসে মিমের কাছে।মিম তাড়াতাড়ি কল রিসিভ করে গল্প করতে লাগলো,ইমানের খুব রাগ হলো তাকে দেখে।অতঃপর দু’জনে লাইব্রেরিতে এসে বই কিনে নিলো আর মিম তখনও কথা বলতে ব্যস্ত সেই লোকটির সাথে….।” ইমান রাগ সামলে রাখতে না পেরে মিম’কে বললো,
– “কি অসুবিধে তোমার? তুমি এতো কথা কেন বলছ? মাঝরাস্তা এসে…।কখনো কি ভেবে দেখেছ তুমি? হঠাৎ করে গাড়িঘোড়া চলে এলে তখন কি হবে?” মিম কিছু বলতে পারলো না,
চুপচাপ এসে বসে পরলো গাড়ির ফ্রন্ট ছিটে….।ইমান জিজ্ঞেস করলো,
– “রাগ করলে না কি?” উওর এলো,
– “আমি রাগ করি না যারতার সাথে।” মিমের মুখে এমন কথা শুনে ইমানের বুকটা কেঁপে ওঠে।বারবার ইমান দুঃশ্চিন্তায় পরে যাচ্ছে মিমের এমন আচরণ দেখে,
আজ প্রায় দশ দিন,মিম ফোন করে কথা বলছে না আমির সাহেবের সাথে,এমনি কি সে ফোন করলে ও মিম রিসিভ করে কথা বলছে না তার সাথে….।বিষয় টা মিসেস শোভার নজরে আসতেই তিনি মেয়ের বাবা’কে জিজ্ঞেস করেন,
– “কি ব্যাপার? হঠাৎ কেন মনোমালিন্য হলো বাবা-মেয়ের মাঝে? দু’জনের তিনবেলা কথা না বললে পেটের ভাত হজম হয় না আর আজ দশ দিন ধরে কোনো যোগাযোগ নেই বাবা-মেয়ের মাঝে? যদিও আমার মেয়ে রোজ দশবার করে ফোন করে আমার কাছে।”
– “আমার কথা জিজ্ঞেস করেনি?”
– “কেন করবে? ইমা বললো রাগ করেছে তোমার সাথে?”
– “ওই….আরকি,শোভা মেয়ে’কে আমি বলেছিলাম কি? ওকে আমি বিয়ে দিতে চাই ইমানের সাথে…।” সঙ্গে সঙ্গে শোভা রেগে গিয়ে বলে ওঠে,
– “শোনো,আমার মেয়ে কিন্তু ফেলনা নয়…ঠিক আছে? ইমান আমার বড় ভাইয়ের ছেলে হতে পারে,কিন্তু আমার মেয়ের জামাই হওয়ার একদম উপযুক্ত নয় সে আর সাহেব তুমি বললে কি করে হবে? আমি আমার মেয়ে’কে তুলতে দিতে পারি না যারতার হাতে।” তখন মিমের ছোটো ভাই স্পন্দন এসে বললো,
– “মম! আমি কিন্তু একমত তোমার সাথে…।ইমান ভাইয়ার যে চরিত্র,সারাজীবন কষ্ট ছাড়া সুখ দিতে পারবেনা ও আমার আপু’কে।” মিসেস শোভা ছোটো ছেলের হাবভাব দেখে বলেন,
– “হঠাৎ চুপ করে গেলে যে? তুমি কি কিছু বলতে চাও আমার কাছে?”
– “মম! ওই….আসলে আমাকে পাঠিয়ে দাও না তুমি আপুর কাছে,না মানে আমার এক্সাম তো শেষ হয়ে গেছে আমি কি করবো এখন অস্ট্রেলিয়ায় থেকে? প্লিজ আবার বড় আপুর শশুর বাড়ি বেড়াতে যেতে বলো নাঃ!
ওখানে সব ন্যাকা ষষ্ঠী টাইপ লোকজন থাকে আর আপুর ননদ টা একটা উশৃংখল মেয়ে দেখলেই ইচ্ছে করে মেয়েটির কানের নিচে দু’টো দিতে।” ছেলের কথা শুনে হাসতে হাসতে শোভা বললেন,
– “আশ্চর্য! যাবি যখন যা,আমরা কি ধরে রেখেছি না কি তোকে? বুঝতে পারছি তোমার আপু’কে ছাড়া পরাণ টিকছে না এ বাড়িতে?”
– “কোনো টিকবে? কতদিন দেখি না আপু’কে আর আমি ওকে বিয়ে ও দেবো নাঃ…..।সারাজীবন সু-কেসে সাজিয়ে রাখবো ওকে।” ছোটো ছেলের কথা শুনে আমির সাহেব হাসতে হাসতে বললেন,
– “তা বাবা! কবে টিকিট কেটে দিতে হবে?” স্পন্দন বললো,
– “টিকিট কাটার কোনো প্রয়োজন নেই বাবা! আমি কেটে ফেলেছি আরো দু’দিন আগে।আজ রাতে আমার ফ্লাইট কাল সকালে গিয়ে পোঁছাবো এয়ারপোর্টে….তারপর মামার বাসায় গিয়ে আপু’কে সারপ্রাইজ দেবো,প্লিজ বাবা তুুমি আবার বলে দিও না তাকে।” শোভা হাসতে হাসতে বলে,
– “কি করে বলবে? তার মনোমালিন্য চলছে তোর আপুর সাথে।”
– “ঠিকই আছে,দুনিয়াতে কি ছেলের অভাব নাকি? যে আমার আপু’কে যারতার সাথে বিয়ে দেবে?” শোভা ছেলে’কে বললেন,
– “আচ্ছা বাবা! এবার থাম,তোকে তো সব প্যাকিং করে দিতে হবে?”
– “ইট’স অলমোস্ট ডান মম! তুমি শুধু একটু চেক করে দিলেই হবে।” মিসেস শেভার মন খারাপ হয়ে যাচ্ছে তার ছোটো ছেলে চলে যাচ্ছে দেখে,মেয়ের কথা ভেবে তার অস্থির লাগছে কতদিন চোখের সামনে দেখেনি মেয়ে টাকে।ছোটো ছেলে এবং মেয়ে দু’টোই অনেক আদরের তার কাছে।স্পন্দন ফ্লাটে ওঠার আগে মিসেস শোভা’কে বলে,
– “চিন্তা করো না মম! আমি পৌঁছে’ই ফোন করবো তোমাকে।” এদিকে মিম কি ভেবে স্পন্দনের পছন্দের রসবড়া পিঠে বানিয়ে রাখে রাতে।ইমান এসে মিমের গুণ দেখছে আর খুব মুগ্ধ হচ্ছে সে এই…মেয়ে টি কে দেখে।মিম একটু বিরক্ত হয়ে ইমান’কে বলে,
– “শুধুশুধু,এভাবে আমার মুখের দিকে তাকিয়ে থাকবেননা প্লিজজজ…..,অসহ্য লাগে।” ইমান মিটিমিটি হেসে বলে,
– “তাহলে একটা লিস্ট করে দিন ম্যাডাম,কারণ আমি ও জানতে চাই তোমার কি কি ভালো লাগে?”

চলবে,,,,,,

#সুপ্ত_বাসনা
লেখিকা সুরিয়া মিম
পর্ব- ১৮

– “শুধুশুধু,এভাবে আমার মুখের দিকে তাকিয়ে থাকবেননা প্লিজজজ…..,অসহ্য লাগে।” ইমান দুষ্টু হাসি দিয়ে মিম’কে বললো,
– “তাহলে একটা লিস্ট করে দিয়ো,আমিও জানতে চাই, ম্যাডাম! তোমার কি কি ভালো লাগে?” মিম বিড়বিড় করে বলে,
– “আশ্চর্য! লোক একটা,”খাইতে পেলে,শুইতে চাবে?”
– “কি ব্যাপার? একা একা কথা বলছ কার সাথে? না মানে এমন নয়তো ম্যাডাম,যে আপনার সাথে স্পেশাল জিন পরী আছে?”
– “থাকলেও বাকি? আপনার কিছু যায়-আসে? হুদাই বিরক্ত করবেননা আমাকে,দয়া করে জান এখান থেকে।” ইমান ভ্রু কুঁচকে মিম’কে বলে,
– “ওই…..ফুফু কি জন্মের সময় মধু দেয়নি তোমার মুখে?” মিম বললো,
– “না ভাই! এর জন্য’ই তেতো কথা বের হয় আমার মুখ থেকে।” ইমান হাসতে হাসতে বলে,
– “ফুফু! দেয়নি তো কি হ’য়েছে তাতে? ‘হা’ করো,আমি তোমার মুখে মধু দিয়ে দিচ্ছি….।তারপর না হয়,তুমি মিষ্টি মিষ্টি কথা বললে আমার সাথে?” মিম বিরক্ত হয়ে ইমান’কে গরম খুন্তি দেখিয়ে বলে,
– “বেশি বাড়াবাড়ি করলে লাল করে দেবো আপনার ওই…পশ্চাৎদেশ টাকে,একদম আমার পিছনে লাগতে আসবেননা এই….আমি বলে দিলাম,নয়তো আপনার খবর হয়ে যাবে।” ইলাহান সাহেব এসে ছেলে’কে বলে,
– “লজ্জা নেই না তোর? এখানে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে বকা খাচ্ছিস মেয়ে টার কাছে?” ইমা হঠাৎ এসে বলল,
– “ভাইয়া,বাপ্পারাজ হয়ে গেছে বাবা! তুমি প্লিজ সময় নষ্ট করো না ওর পিঠে,বলছিলাম কি মিম তুই সাবানা হয়ে যা….আমার ভাই না হয় তোকে একটা সেলাই মেশিন কিনে দেবে? তারপর দু’জনের টোনাটুনির সংসার,আহা কি মধুর দৃশ্য ফুটে উঠেছে আমার দু’চোখে।” আচমকা ইমানের মা এসে হাসতে হাসতে বলেন,
– “হ্যাঁ,মা বুঝেছি…,চোখ মেলে দেখ এবার কে তোর মুখের সামনে খুন্তি নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে?” ইমা চোখ না খুলেই দু’পা পিছিয়ে দৌড়,মা’র খাওয়ার ইচ্ছে জাগেনি আজ তার মিমের হাতে।মিম এবার ইমানের কাছে এগিয়ে এসে বলে,
– “ভাই! আপনি যাবেন? না আপনার জন্য অন্য ব্যবস্থা নিতে হবে?” ইমান খুন্তি টা মিমের হাত থেকে নিয়ে সাইডে রেখে বলে,
– “কি আশ্চর্য? তুমি মারবে কেন আমাকে? আমার মতো ভদ্র ছেলে কি এই….এলাকায় আর দু’টো আছে? আর তাছাড়া বয়সে বড় লোকের গায়ে হাত দিলে আল্লাহ তাআ’লা পাপ দিবে।” মিম দাঁতের দাঁত চেপে বলে,
– “তাই বুঝি? তা আপনার এতো বুদ্ধি কোথায় ছিল আগে?” ইমান কয়েক পা পিছিয়ে বললো,
– “ঘাস কাটতে গিয়েছিল,এই…তো ফিরে এলো একটু আগে।” মিম চোটে গিয়ে বললো,
– “দাঁড়া,তুই! আজ তোর একদিন কি আমার একদিন….,বলদ বুঝাও তুই আমাকে?” ইমান আর সে তল্লাটে নেই।মিমের চিল্লাপাল্লায় পালিয়েছে রান্নাঘর থেকে।তারপর হাসতে হাসতে মিহান’কে ফোন করলো,তবে ফোন সুইচড অফ বললো অপর পাশ থেকে।”

সকালে মিম ঘুম থেকে উঠে নিচে এসে দেখে,ইমান মনোযোগ সহকারে পড়ছে “মুক্ত বাতাসের খোঁজে।” মিম তাকে বিরক্ত করলো না,সে তাই ধীর পায়ে এগিয়ে গেলো ইলহান সাহেবের কাছে।ইলহান সাহেব মিম’কে বললো,
– “অফিস যাচ্ছি মা! তুমি বলো কি খাবে?” মিম বলল,
– “চকলেট নিয়ে এসো।” ইলহান সাহেব ভাগ্নীর গাল টেনে ধরে বললেন,
– “আচ্ছা,ঠিক আছে।” অতঃপর মিটিমিটি হেসে মিমের কপালে চুমু খেয়ে বললেন,
– “মা তোর জন্য আজকে একটা সারপ্রাইজ আছে।” মিম বললো,
– “কি সারপ্রাইজ? মামা?।”
– “নিচে গেলেই দেখতে পাবে।” মিম কৌতুহল বশত সিঁড়ি বেয়ে নিচে নামার সময় খেয়াল করে দেখে স্পন্দন দৌড়ে আসছে ওর কাছে।ও প্রথমে ভাবলো মনের ভুল হয়তো? কিন্তু হঠাৎ স্পন্দন এসে জড়িয়ে ধরে ওকে।মিম অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে স্পন্দনের মুখের দিকে আর স্পন্দন হাসতে হাসতে মিমের গাল টেনে ধরে বলে,
– “কেন আছো আপুনি? তুমি এভাবে তাকিয়ে আছো কেন আমার দিকে।” মিম হাসতে হাসতে ভাইকে জড়িয়ে ধরে বলে,
– “দুষ্টু কোথাকার যেন একটা,এই….তোর পরীক্ষা কি শেষ হয়ে গেছে?”
– “হুমম,জানো আমি কত মিসসস…..করেছিলাম তোমাকে? তুমি জানো আপু? আমি তোমার জন্য কি কি নিয়ে এসেছি অস্ট্রেলিয়া থেকে…।”
– “সে নয় পরে জানবো,পাগল…একটু দম নিয়ে কথা বল,ঠিক আছে? এমন ভাব করছে যেন আমি পালিয়ে যাচ্ছি মামার বাবা থেকে।” ইলহান সাহেব ভাগ্নীর কথা শুনে হাসতে হাসতে বলেন,
– “তোকে সারপ্রাইজ দেবে বলে ছেলেটা ওর আসার ব্যাপারে আমাকে জানাতে বারণ করেছিল তোকে।” মিম কিঞ্চিৎ রেগে গিয়ে ভাইয়ের কান টেনে ধরে বলে,
– “ফাজিল ছেলে! এতো বড় হয়ে গেছো তুমি? যদি কোনো বিপদ-আপদ হতো পথে?” স্পন্দন মিমের চুমু খেয়ে বলে,
– “তুমি না আপু একদম মমের মতো….কোনো কথা না শুনেই বকাবকি করো আগে আরে বাবা আমি একা আসিনি জায়েদ আঙ্কেল ছিলেন আমার সাথে….আর তাছাড়া মামা-মামণি আর ইমা আপু সবটাই জানতো।”
– “আচ্ছা ঠিক আছে,যাও এবার ফ্রেশ হয়ে আসো আমি খেতে দিচ্ছি তোমাকে।”
– “বলছিলাম আপু,তুমি বাবার সাথে কথা বলে নিয়ো সে মন খারাপ করে আছে?” মিম বললো,
– “থাকুক,আমার জীবনের সবচেয়ে বড় সিদ্ধান্ত সে কি করে এভাবে নেবে? না মানে, আমি তো আর অবুঝ বাচ্চা নই ভাই! ভালোমন্দ বোঝার ক্ষমতা টুকু নিশ্চয়ই আমার আছে…বলা নেই কওয়া নেই, হুট করেই যারতার সাথে আমার বিয়ে ঠিক করে দেবে?” এবার ইমান বুঝতে পারলো মিম কেন ঠিক করে কথা বলছে না তার সাথে।তবুও সে মিম’কে অভয় দিয়ে বললো,
– “তুমি না চাইলে কেউ জোরজবরদস্তি করবে না প্রিয়,তোমার সাথে।”

চলবে,,,,,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here