#সুপ্ত_বাসনা
লেখিকা সুরিয়া মিম
পর্ব- ১২
ওদিকে মিম জানতে পারেনি দু’জনের মাঝে কি কথা হয়েছিল কেবিনে বসে? না চাইতেও, তার দু’চোখ ভিজে গেছে ইমান এবং উর্মির কথা ভেবে।ইমান বাহিরে বেড়িয়ে এসে দেখে,
মিম একা একা বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছে।আজ কেমন যেন ছেলেটা’কে খাপছাড়া খাপছাড়া লাগছে তার,একদম ছেলেটির মন নেই কোনো কাজে।ইমান এগিয়ে এসে হঠাৎ মিমের কাঁধে হাত রেখে বলল,
– “মিহ! তুমি হয়তো আমার থেকে বয়সে অনেক ছোটো’ই হবে,তবুও আমি তোমার বন্ধুর মতো,তুমি চাইলে তোমার কষ্ট শেয়ার করতে পারো আমার সাথে।” মিম মৃদু হেসে ইমান’কে বলে,
– “আমি একটু একা থাকতে চাই, স্যার! প্লিজ এই…ফেভার টুকু করবেন আমাকে?”
– “কেন? কোনো ঝামেলা হয়েছে না কি তোমার ওই… গার্লফ্রেন্ডের সাথে?” মিম নিজেকে সামলে নিয়ে বললো,
– “কই না তো স্যার! জাস্ট এমনি বললাম আপনা’কে।” ইমান কি ভেবে বললো,
– “ইউ নিউ রেস্ট,মিহ! প্লিজ খেয়াল রাখো নিজের দিকে।” মিম কোনো কথা না বাড়িয়ে ছুটি নিয়ে বাসায় চলে আসে অফিস থেকে,তারপর দিলো জম্পেশ করে একটা ঘুম,ঘুম থেকে উঠে তার মন মেজাজ ভালো হয়ে গেছে।তবে সে ফ্রেশ হয়ে বাহিরে বেড়িয়ে এসে দেখে,
ইমান রাগে আগুন হয়ে বাহিরে দাঁড়িয়ে আছে,ও কিছু বুঝে ওঠার আগেই ইমান মিম’কে হেঁচকা টান দিয়ে জিজ্ঞেস করে,
– “তোমার বাসায় কে কে আছে?” মিম থতমত খেয়ে ইমান’কে বললো,
– “তেমন কেউ না স্যার,নিজের বলতে কেবল ওই…..একমাত্র ছোটো চাচাই বেঁচে আছে।” ইমান মেজাজ খারাপ করে মিম’কে বলে,
– “আজ ইয়াবা সহ, তোমার সেই চাচা ধরা পরেছে ভ্রাম্যমাণ আদালতের কাছে।” মিম মেকি হেসে ইমান’কে বললো ,
– “খেটে খাওয়া মানুষ স্যার! রাগ করে কি হবে? একটা বিয়ে করেছিলো,টাকা-পয়সার নেই বলে বউ ছেড়ে চলে গেছে।” ইমান বেশ অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে মিমের দিকে,তারপর কথায় কথায় জিজ্ঞেস করে
– “তোমার খতনা হয়েছিল ক’বছর বয়সে?” মিম বিরক্ত হয়ে বলে,
– “মনে নেই স্যার! কেন কি হ’য়েছে?”
– “জানো? আমার খতনার সময় দাদাভাই হাজাম ধরে নিয়ে এসেছিলেন এই….বাড়িতে,আমি তো চাকু দেখে ভয়তে অজ্ঞান,তারপর বাবা-মা আমায় হাসপাতাল থেকে খতনা করিয়ে নিয়ে এসেছিলো সেদিন কে আমি সারাদিন লুঙ্গী পরে ঘরে বসে থাকতাম,খেলতে যেতে পারতাম না বন্ধুদের সাথে আর গেলে শালারাই লুঙ্গী ধরে টানাটানি শুরু করে দিতো আশেপাশের ফ্লাটের মেয়েরা মজা নিতো আমাকে দেখে,সে কি লজ্জা ভাই! হয়তো আমি কখনো ভুলতে পারবোনা সেই দিন গুলো’কে।” মিম মনেমনে বলে ওঠে,
– “শালা! নিষ্কর্মা,কোনো কাজ নেই কাম নেই হুদাই খতনার গল্প দিতে এসেছে আমার কাছে!…….বলি স্যার? একটা কথা জিজ্ঞেস করি?
– ” কি? বলো?”
– “আপনার লজ্জা পাওয়ার নিয়ে আমার সংশয় আছে,প্লিজ ডোন্ট মাইন্ড,এ্যাকচুয়ালি কিউরিয়াস মাইন্ড’স ওয়ান্ট’স টু নো ওঁকে?” ইমান মিমের পেটে একটা খোঁচা মেরে বলে,
– “লাইক সিরিয়াসলি? তোমার মনে হয় আমি ফাজলামো করছি তোমার সাথে?” মিম হাসতে হাসতে বললো,
– “আসলে আপনার লজ্জা পাওয়ার বিষয় টা আমার কাছে বড্ড অদ্ভুত লাগে! না মানে, আমি বুঝতে পারিনি স্যার! আপনার জীবনে ও এমন বিষ্ময়কর লজ্জাজনক ঘটনা আছে? যেখানে আপনি নিজেই চরম লেভেলের নির্লজ্জ হে হে হে।” ইমান গাল ফুলিয়ে মিম’কে বলে,
– “ডোন্ট ইনসাল্টিং মি,ব্রো! আমারো লজ্জা লাগে।” মিম মিটিমিটি হেসে বলে,
– “ফুফাতো বোন’কে জানিয়েছেন,আপনি বিয়ে করতে চান তাকে।”
– “নাঃ! ইয়ার,আগে দেখা করি তার সাথে।” মিম ইমানের হাবভাব দেখে বলে,
– “আপনার চেয়ে চেহারা দেখে মনে হচ্ছে,সে আপনা’কে বিয়ে করার জন্য বসে আছে?”
– “জানি না,তবে প্রস্তাব দিতে কি অসুবিধে আছে? আমার ফুফি যদি শোনে আমি তার মেয়ে’কে বিয়ে করতে চাই,তাহলে সে এক পায়ে রাজি হয়ে যাবে।”
– “কিন্তু তার মেয়ে? বিয়ে তো হবে তার সাথে? মেয়ে আপনা’কে পছন্দ করলো না,ভালোই বাসলে নাঃ! তার মা রাজি হলে কি হবে? সংসার তো আপনি তার মেয়ের সাথে করবেন,কাজেই সে তো আসবে না সংসার করতে আপনার সাথে।” ইমান আনমনে বলে,
– “যদি আমার কপালে থাকে, তাহলে না হয় হবে।” মিম মুখ ভেংচি কেটে ইমান’কে উদ্দেশ্য করে বলে,
– “স্যার! যদি না থাকে?”
– “তাহলে আর কি বলো? ছিনিয়ে নিতে হবে,দেখ মানুষ মাত্রই ভুল হয়,তাই বলে কি মিম কখনো ক্ষমা করবে না আমাকে?” মিম বলল,
– “ক্ষমা মহৎ গুণ স্যার! তাই বলে সে কি করে আপনার এতো বড় বড় ভুল ক্ষমা করে দেবে? আপনি কি বুঝতে পারছেননা,সে নিশ্চয়ই চাইবে একজন ভালো এবং আদর্শ জীবন সঙ্গী পেতে, কারণ কোনো মেয়েই চাইবে না আপনার মতো একজন চরিত্রহীন আর লম্পট জীবন সঙ্গী পেতে।” ইমান এবার অনেক টা রেগে গিয়ে মিম’কে বললো,
– “মিহান,তুমি কিন্তু বড্ড বেশি বাজে বকছ,চুপ করো এখন।”
– “ঠিক আছে; তবে আপনার বোন যখন আসবে,তখন দেখবেন সে ও ঠিক আমার মতোই ভাবে আর ও কখনোই চাইবে না আপনার মতো একটা মানুষ’কে নিজের করে পেতে।”
– “হয়েছে বাজে বকা? এবার তুমি যেতে পারো এ….ঘর থেকে।” মিম বললো,
– “আমি গ্রামে ফিরে যাচ্ছি স্যার!”
– “ভালো,গেট আউট ফরম মাই আইস,চলে যাও আমার চোখের সামনে থেকে।”
– “আপনা’কে খুব মনে পরবে, স্যার!”
– “তবে আমার মনে পরবে না তোমাকে,তোমাকে আমি স্নেহ করেছিলাম,মিহ! কিন্তু তুমি আমার মাথায় চেপে বসেছ বাজে ভালো ভাবে,বন্ধু ভেবেছিলাম আর তুই অপমানে অপমানের শেষ করে দিচ্ছ আমাকে।”
– “ভালো থাকবেন, স্যার! পারলে দোয়ায় রাখবেন আমাকে।”
– “তুমিও রেখো আর এ…..বাড়িতে যেন দেখি না তোমাকে।” মিম মনেমনে বলল,
– “যার নিজের চরিত্র নেই,সে আবার ফুলের মতো পবিত্র বউ খোঁজে! আজব! মানুষ পারেও বটে।” মিম তারপর মামা এবং মামণির কাছ থেকে বিদায় নিয়ে সোজা গিয়ে বেবি ট্যাক্সিতে উঠে বসে,ইমানের খুব খারাপ লাগছে,অস্থির অস্থির লাগছে এখন কে সামলাবে ওকে? সারারাত তার ঘুম হয়নি একটা সিগারেট ধরিয়ে সে বসে ছিল বারান্দাতে,ভোর রাতে যখন তার চোখ খুলল,তখন মুবিন ফোন করে বললো,
– “স্যার! আপনার জন্য একটা পাক্কা সুখবর আছে।আমি লোক মারফত খবর নিয়ে জানতে পারলাম আজ সকাল আটটায় ম্যাম (মিম) আসবেন আপনার অফিসে,ওখানেই তার ব্রাইডাল ফটোশুট হবে”
– ” আচ্ছা,ইট’স ওকে।” ইমানের কেন যেন হা,পা শীতল হয়ে আসছে মিমের কথা ভেবে,সে আজ ভালো করে গোসল করে নিলো এবং অনেক দিন পর ফজরের নামাজ পরে নিলো কি ভেবে? তারপর নিজের ডিজাইনার প্রণব’কে ফোন করলো আর প্রণব ইমানের সুট রেডি করে পাঠিয়ে দিলো তার অ্যাসিস্ট্যান্টের হাতে…….।ইমান অফিসে পৌঁছুতে না পৌঁছুতেই ওর নির্দেশ মোতাবেক জয়নব সাহেব পুরো অফিস টা মিমের পছন্দ মতো সাজিয়ে ফেলেছে অল্প সময়ের মাঝে,
এরি মধ্যে ইমান মিটিং শেষ করে বাহিরে এসে শুনতে পায় ইলহান সাহেব মিম’কে নিয়ে এসেছে নিজের সাথে,কাজেই সে ধীর পায়ে সিঁড়ি বেয়ে নিচে নেমে এসে দেখে একটা মেয়ে হেসে হেসে কথা বলছে সবার সাথে! মিষ্টি তার সেই চোখের চাহনি,ঠোঁটে কোণে ফিচেল হাসি লেগেই আছে! ইমান এগিয়ে এসে মিম’কে জিজ্ঞেস করলো,
– “কেমন আছো তুমি?” সে পাত্তা দিলো না তাকে,সোজা ইলহান সাহেবের সাথে মেক-আপ রুমে চলে গেলো কারণ তাকে ব্রাইডাল ফটোশুটের জন্য তৈরি হতে হবে।মিম তৈরি হচ্ছে বেশ কয়েকজন ফ্যাশান ডিজাইনার এবং মেক-আপ আর্টিস্ট ঘিরে দাঁড়িয়ে আছে তার চারপাশে।মিমের ওই….এক কথা,
– “আমাকে পেত্নী সাজানো যাবে না,স্কিন টোনের সাথে ম্যাচিং করে মেক-আপ করাতে হবে।” ইমান পাশেই দাঁড়িয়ে আছে বারবার প্রেমে পরে যাচ্ছে সে এই….মেয়েটি কে দেখে,কারণ মেয়েটির কিচ্ছু বদলায়নি সে শুধু হাইটে কয়েক ইঞ্চি লম্বা হয়ে গেছে।মিমের এতো ইমান’কে দেখার সময় নেই সে ব্যস্ত আছে,তার সাজ কমপ্লিট, সে শুধু একবার চোখ বুলিয়ে নিচ্ছে আয়নায় নিজেকে দেখে,ইমান মৃদু হেসে বললো,
– “গোর্জিয়াস!” মিম এবার ও গায়ে মাখলো না তাকে।ইমান এক গ্লাস অরেঞ্জ জুস মিমের দিকে এগিয়ে দিলো,মিম বললো,
– “এতো আদিক্ষ্যেতা করবেননা,প্লিজ! অসহ্য লাগে।” ইমান ফ্যাল ফ্যাল করে চেয়ে রইল কিছু বলতে পারলো না তাকে।
চলবে,,,,,