সুতোয় বাঁধা সংসার পর্ব-১১

0
854

#সুতোয় বাঁধা সংসার
writer::প্রিয়া
১১
স্বপ্নার শ্বশুরের অবস্থা আশঙ্কাজনক। ডাক্তার বলেছে আল্লাহকে ডাকতে।
স্বপ্না খুব ভেঙ্গে পরেছে,ওর শাশুড়ী যথারীতি নিজেকে সামলাচ্ছেন। তরী,রিদ্ধ সকলকে ভরসা দিচ্ছেন এই অবস্থায় কাউকে শক্ত থাকা খুব জরুরি।
স্বপ্না নিজের মনকে কিছুতেই বুঝাতে পারছেনা।সুস্থ সবল মানুষ কেমন এতো বড় অসুখ হলে গেলো।
স্বপ্না ওর ভাই তমালকে আসতে বললো।তমাল খবর পেয়েই ছুটে আসে।
সালমানকে ফোন করলো রিদ্ধ, কারো খেয়াল ছিলো না।রিদ্ধের খেয়াল হতেই ও ফোন করলো।
-হ্যাঁ রিদ্ধ বলো?
-দাদার হার্ট অ্যাটাক হয়েছে আপনি সিটি হাসপাতালে চলে আসুন।আমরা ৪তলায় আছি।

রিদ্ধ ফোন রেখে দিলো।তমাল ডাক্তারদের সাথে কথা বলছে।
উনাকে আই সি ইউতে নিতে হবে।তমাল ডাক্তারকে বললো সমস্যা নেই যা লাগে করুন।

রাতে উনাকে আই সি ইউতে নেয়া হলো।সালমান তড়িঘড়ি ছুটে আসে।
-মা কি করে হলো?
-জানিনা তো বাপ উনি তো দোকানে ছিলেন।
-সব দোষ তোমাদের কি দরকার এই বয়সে দোকান চালানোর। বাড়ি ভাড়ার টাকায় তো দিব্যি চলে যেতো তোমাদের।আর কি দরকার ছিলো আয়ের।
-তোর বাবা বাসায় বসে বিরক্ত হতেন।তাই তিনি দোকান দিলেন।
-এই বয়স কি আছে চাপ সামলানোর। তোমাদের যতো আদ্যিকেতা কি দরকার অন্যের সাথে থাকার।
-ওরা পর কেউ না তোরই সন্তান।

সালমান আর কিছু বললো না চুপ করেই ডাক্তারের সাথে কথা বলতে গেলো।
-আপনার বাবার হার্ট অপারেশন করতে হবে।
-তাহলে দেরি করছেন কেনো ডাক্তার তাড়াতাড়ি করুন।
-উনার অবস্থা কিছু ভালো হলে আমরা অপারেশন করবো।এই অবস্থায় অপারেশন ঝুঁকিপূর্ণ।
-আমার বাবার কিছু হবে না তো।
-সবকিছু উপরওয়ালার হাতে।

সালমান আর নিজেকে ধরে রাখতে পারলো না।কান্নায় ভেঙ্গে পরলো। দূর থেকে স্বপ্না দেখছে সালমানকে।ইচ্ছে করছিলো স্বান্তনা দিতে, বুকে জড়িয়ে বলতে।আমাদের বাবার কিচ্ছু হবে না গো।
সেই অধিকার নেই ওর।রুমা ছুটে আসলো সালমান রুমার হাত শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো।
-রুমা আমার বাবা।
-কিচ্ছু হবে না সালমান। তুমি ভয় পেয় না।

চোখের জল মুছে স্বপ্না করিডোরের বারান্দায় গিয়ে দাঁড়ালো।
লাইটের আলোতে পুরো শহর চিকচিক করছে।দুজন মিলে কত ঘুরেছিলো শহরের পিচঢালা রাস্তায়।কাঁধে মাথা রেখে প্রতিজ্ঞা করেছিলো কখনো হাত ছাড়বে না।সময়টা বড্ড বেঈমান, কি দরকার ছিলো স্রোতের মতো ভেসে যাওয়ার।সেই মূহুর্তে যদি সময় থেমে যেতো।

কাঁধে কারো হাত অনুভব করলো পিছনে তাকিয়ে দেখে তরী।
-মা দাদার কিছু হবে না তো?
-আল্লাহ আমাদের আর কত শাস্তি দিবেন বল।এবার নিশ্চয়ই এতো বড় শাস্তি দিবেন না।
-মা আমার বুক কাঁপছে, হাত পা অবশ হয়ে যাচ্ছে।
-চিন্তা করিস না মা আল্লাহ ভরসা।

তরী, মাকে জড়িয়ে ধরে আছে।কিছুক্ষণের মধ্যেই চিল্লাপাল্লার আওয়াজ শুনে মা-মেয়ে ছুটে যায়।
সালমানের বোনেরা এসেছে মায়ের সাথে চেঁচিয়ে কথা বলছে।
-আমাদের বাবার কিছু হলে ওই স্বপ্নাকে ছাড়বো না।
-কেনো স্বপ্নার দোষ কি?
-ওর চিন্তায় বাবার এই হাল।নিজের স্বামীকে ধরে রাখতে পারেনি।বাপ মা ঠাঁই দেয়নি আমাদের মা-বাবার মাথায় চড়ে বসেছে।
-তা এতো মা-বাবা করছো এই দেড় বছরে খোঁজ নিয়েছ একবার।
-মা তুমি এখনো স্বপ্নার পক্ষ্যে কথা বলছো।কেনো খোঁজ নিবো তোমাদের।তোমরা আমরা দুই বোনকে সব সম্পত্তি থেকে বাদ দিয়ে ছেলে আর ছেলের বউকে সব বিলিয়ে দিয়েছো।
-তাহলে তোমাদের আক্রোশ এই জন্যই।
– ছেলে মেয়ের সমান অধিকার।কিন্তু তোমরা উল্টো ছেলে আর ছেলের বউকে সমান ভাগ করে দিয়েছো।

স্বপ্না ছুটে আসে এসেই ওরা দুই বোনের হাতে ধরে।
আপু প্লিজ তোমরা রাগ করো না। এই বিষয় নিয়ে আমরা পরে আলোচনা করতে পারবো।বাবাকে সুস্থ করে বাড়িতে নিয়ে গেলে তখন কথা বলবো।তোমাদের অংশ তোমাদের বুঝিয়ে দেয়া হবে।

দুই বোন চুপ করেই রইলো।স্বপ্না মায়ের পাশে বসে চা খেতে বললো।রিদ্ধ চা নিয়ে আসলো।
সবাই মিলে চা বিস্কুট খেয়ে নিলো।রাত ঘনিয়ে আসছে দেখে সালমান ওর ছেলে,রুমা আর ওর বোনদের বাসায় পাঠিয়ে দিলো।
শেষ রাতের দিকে সালমানের বাবার জ্ঞান ফিরলো।উনি স্বপ্না আর উনার স্ত্রীকে দেখতে চাইলেন।
আই সি ইউ রুমে একজন যাওয়া যায় তাই প্রথমে স্বপ্নার শাশুড়ি গেলেন।
কথা বলতে পারছেন না তবুও চেষ্টা করছেন কথা বলার।ঠোঁট দিয়ে বারবার স্বপ্নার নাম ধরছেন স্বপ্নার শাশুড়ী ঠিক বুঝে গেছেন তিনি স্বপ্নাকে দেখে রাখার কথা বলছেন।

উনি বের হতেই সালমান ঢুকে গেলো স্বপ্নাকে যেতে না দিয়ে।
সালমানকে দেখে ওর বাবা কাছে ডাকলেন।মাথায় হাত ভুলিয়ে দিলেন।
ডাক্তার সালমানকে বের করে দিলো।এভাবে যাওয়া যায় না তিন ঘন্টা পর পর একজন যেতে পারে।

বড় ডাক্তার আসলেন সালমানের বাবার অবস্থা দেখে ওয়ার্ডবয় কে বললেন উনাদের যেতে দিতে।
স্বপ্না ছুটে গেলো বাবার হাত জড়িয়ে ধরে কান্না করছে।উনি হাত তুলে স্বপ্নার মাথায় রাখলেন।চোখ দিয়ে ইশারা করলেন কান্না থামানোর জন্য।
এক গাল হেসেই চোখ বন্ধ করে দিলেন।স্বপ্নার চিৎকারে সবাই ছুটে আসলো।ডাক্তার পার্লস চেক করলো।ডাক্তারের মুখ দেখে কারো বুঝতে বাকি নেই তিনি চলে গেছেন নিজ গন্তব্যে।
স্বপ্নার চিৎকারে আকাশ-পাতাল ভারী হয়ে উঠছে।ডাক্তার সকলকে বের করে দিলেন।হাসপাতালের কিছু ফর্মালিটি আছে যেগুলো পূরণ করতে হবে।
স্বপ্নার শাশুড়ী চুপ করেই আছেন।পাথরের মূর্তি হয়ে গেছেন তিনি।
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ লাশ নিয়ে যেতে অনুমতি দিলো।এবার বাঁধলো অন্য বিপত্তি। সালমান ওর বাসায় নিয়ে যেতে বলছে।ছেলের অধিকার বেশি বাবার উপর তাই স্বপ্না চুপ করেই রইলো।এম্বুলেন্স করে সালমান লাশ নিয়ে বাসায় যাচ্ছে।গাড়িতে সালমানের মা,স্বপ্না,রিদ্ধ, তরীরা আসছে।
সবার চোখেই জল রিদ্ধ শক্ত ছেলে তবুও নিজেকে সামলাতে পারছেনা।
মাথার উপর ছাতার মতো ছিলেন দাদা।রোদ কিংবা বৃষ্টি সবকিছু সামলে নিয়েছেন এবার কি হবে।
তরী কান্না করতে করতে শেষপর্যন্ত শ্বাস নিতে পারছেনা। ওকে বাসায় এনে ওষুধ খাইয়ে ঘুম পাড়িয়ে রাখা হয়ছে।
ওই বাসায় সবাই লাশ নিয়ে সোরগোল করছে, এ বাসায় কেবল স্বপ্না ওর ছেলেমেয়ে নিয়ে ডুকরে কাঁদছে।
ওই বাসায় যাওয়ার অধিকার নেই ওর।মন চাইছে বাবার পায়ের কাছে গিয়ে বসে থাকতে।চাইলে জোর করে বাবার লাশ এই বাসায় নিয়ে আসতে পারতো, কিন্তু মৃত মানুষকে নিয়ে টানাটানি করে ঝগড়া বাঁধাতে চাই নি ও।
বাবার মেয়েরা পর্যন্ত খেপে আছে।মা কোনদিক সামাল দিবেন এই শোক কাটিয়ে উঠতে পারবেন কি তিনি?
ফজরের আযান দিতেই স্বপ্না গোসল সেড়ে নামাজ পড়লো।উঠোনে খাটিয়ায় বাবার লাশ রাখা,স্বপ্না ছোট্র গেইট ধরে ওইদিকে তাকিয়ে আছে।

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here