সুতোয় বাঁধা সংসার পর্ব-১০

0
925

#সুতোয় বাঁধা সংসার
writer::প্রিয়া
১০
স্বপ্না আর ওর শাশুড়ী দুজনেই বাজার সেড়ে বাড়িতে ফিরলেন।স্বপ্না নিজের বাসায় গেলো ওর শাশুড়ি সালমানের বাসায়।
-সালমান বাইরে আয়।
ড্রইংরুমে বসে উনি চিল্লিয়ে কথাগুলো বললেন।
সালমান শুইয়ে ছিলো মায়ের চিৎকারে ছেলেকে কোলে নিয়ে উঠে আসলো।
-মা কি হয়েছে?
-শেষ পর্যন্ত ছিনতাইকারী বিয়ে করলে।
-কি বলছো?
-তোর বউকে ডাক দে।
-ও তো বাসায় নেই, বাজারে গেছে।
-বাজারে না কয়েকটা ছেলেকে নিয়ে স্বপ্নার ব্যাগ ছিনতাই করতে গেছিলো।
-মা তুমি কিসব বলছো।
-শোন আমি আর স্বপ্না ব্যাংক থেকে ফেরার পথে তোর বউ স্বপ্নার ব্যাগ ছিনতাই করিয়েছে।আমি ওকে নিজ চোখে দেখেছি।
-মা তুমি রুমার নামে মিথ্যা অপবাদ দিচ্ছো।
-তোর কি মনে হয় আমি মিথ্যা বলছি?
-মা হয়তো ভুল হচ্ছে কোথাও।
-তোর বউ আসলে সত্য মিথ্যা জিজ্ঞাসা করে নিস।
-মা বসো, আমি চা করে দিই?
-চোরের ঘরে আমি কিছুই খাবো না।
-তাহলে আমাকে চা বানিয়ে খাইয়ে দাও।

ছেলের কথা ফেলতে পারলেন না।দু কাপ চা বানিয়ে নিয়ে বসলেন টেবিলে।
চুমুক দিতে দিতে ছেলের মুখের দিকে তাকাচ্ছেন।
-তুমি খুব সুন্দর করে শুদ্ধ ভাষা শিখে গেছো।
-রিদ্ধ দাদু ভাই শিখিয়েছে।
-কেমন আছে ওরা। রিহান কি আমার জন্য কান্না করে না?
-বুঝে গেছে ওর বাবার আরেকটা ছেলে আছে।যে ওর চাইতে প্রিয়।
-রিহান আমার বেশি আদরের।
-তাই বুঝি?তো ছেলের কাছে গিয়েছিস কখনো,আদর করেছিস?
-…….
-উত্তর নেই জানি।

ওদের কথার মধ্যেই রুমা চলে আসে।শাশুড়ী কে দেখে গুটিসুটি মেরে দাঁড়িয়ে আছে।
-মা কে তুমি দেখছো না নাকি?

ছুটে এসে সালাম করে।
-কোথায় ছিলে?
-বা বা বাজারে ছিলাম।
– তোতলানোর কি হলো।মা কি বলছে জানো?
-কি?
-তুমি স্বপ্নার ব্যাগ ছিনতাই করিয়েছো কেনো?
-না না এসব মিথ্যা। আমি এসব করবো কেনো?
-মা নিযে তোমাকে দেখেছেন।
-মায়ের বয়স হয়েছে কাকে না কাকে দেখেছেন।
-আমার চোখের দিকে তাকিয়ে কথা বলো।
-বলছি তো আমি এসব জানিনা।

সালমানের মা উঠে গিয়ে রুমার মুখোমুখি দাঁড়ালেন।
-তা ১৫লক্ষ টাকা কি করলে?
-আমি কি করবো?
-ছিনতাই করিয়ে কাকে দিয়েছো?
-বললাম তো আমি কিছু করিনি।
-ওহ তাহলে পুলিশের কাছে বলবে। স্বপ্না পুলিশ আনতে গিয়েছে।
-পু পু পুলিশ আসবে।ও গো আমাদের বাড়িতে পুলিশ আসবে। মা পাগল হয়ে গেলেন না কি।
-পাগল হবো না ১৫লাখ টাকা।তুমি টাকা কি করেছো।
-মিথ্যা বলছেন ব্যাগে মাত্র ২০টাকা ছিলো।
-তাহলে স্বীকার করছো।তুমি ব্যাগ ছিনতাই করিয়েছিলে?
-ন না নাহ আমি কিছু করিনি।

সালমান তোর বউ স্বীকার করলো। ও স্বপ্নার ব্যাগ ছিনতাই করিয়েছে ১৫লাখ টাকার জন্য।
কথায় আছে না লোভে পরলে মানুষ অন্ধ হয়ে যায়।তোর বউয়ের এই অবস্থা।ব্যাংক থেকে আমরা কেনো ১৫লাখ টাকা তুলবো।ডিপিএস থেকে তুলে আবার একাউন্টে টাকা রেখে আসছি।
আর ইচ্ছে করেই আমি স্বপ্নার ব্যাগে ২০টাকা রেখে সব কাগজপত্র সড়িয়ে রেখেছিলাম।
আমার আগেই ধারণা হয়েছিলো তোর বউ কিছু তো করবে।শোন মেয়ে আমার চুল শুধু বয়সে পাঁকে নি।তোর মতো মেয়েরা কি করতে পারে সেটা তোর চোখ দেখেই বুঝতে পারছি।

সালমান মাথা নিচু করে আছে।
-তোর বউকে সামলে রাখিস। দু দিন পর আর কারো ব্যাগ ছিনতাই করতে পারে।

উনি বেড়িয়ে গেলেন সালমান ছেলেকে শুইয়ে আসলো।
-রুমা এসবের মানে কি?
-কি করবো,তোমার টাকা ওই মেয়েটা ভোগ করবে আমি মানতে পারছিলাম না।
-ছিঃ ছিঃ এতো ছোট বানিয়ে দিলে আমাকে।

**দুপুরে খাবার টেবিলে রিদ্ধের দাদা কথা তুললেন।
-আজ যা হলো আমার মন চাইছে রুমাকে পুলিশে দেই।
-সালমানের বাপ আমি যা বলছি সেটাই অনেক।

স্বপ্না-মা আপনি সবকিছু আগেই বুঝে যান।
-বুঝতে হয় রে মা।

রিদ্ধ আর তরী খেয়ে উঠে গেলো।রুমে যেতেই তরীর ফোন বেজে উঠলো।
আননোন নাম্বার কে হতে পারে।ভাবতে ভাবতে ফোন কেটে গেলো।আবার ফোন বেজে উঠলো।
তরী হ্যালো হ্যালো করছে ওপাশ থেকে নিঃশব্দ।
-কথা বলছেন না কেনো,কে আপনি?
-প্লিজ ফোন কাটবে না,আমি উল্লাস।
-আপনি, আপনি আমার নাম্বার কি করে পেলেন।
-অনেক কষ্টে পেয়েছি।দু দিন গিয়েছিলাম তোমার কলেজে কিন্তু সামনে যেতে ভয় হয়েছিলো।
-আমি রাখছি প্লিজ ডিস্টার্ব করবেন না।
-মিষ্টি প্লিজ রাখবে না।আমি তোমার জন্য আমেরিকা যাওয়া ১সপ্তাহ পিছিয়ে দিয়েছি।
-কেনো, কি চাই আপনার।
-আমার তোমাকে চাই।
-সেদিন আমি আপনাকে বলেছি তো।আপনার ফ্যামিলিকে আমরা কতোটা ঘৃণা করি।
-সেটা আমার ফ্যামিলি না।আমার মায়ের বাপের ফ্যামিলি। আমি কিংবা আমার ফ্যামিলি এসবে কিছুই জানিনা।
-তবুও আমি ওই মহিলার সকল আত্মীয়কে ঘৃণা করি।
-প্লিজ মিষ্টি একজনের অপরাধের শাস্তি অন্যজনকে দিয় না। আমি কি করবো বলতো, আমার দোষ কি?
-আপনি প্লিজ ফোন রাখুন।অযথা প্যাঁচাল ভালো লাগে না।
-মিষ্টি এরকম করো না।তুমি জানো তোমাকে প্রথম দেখেই আমি মুগ্ধ হয়ে গিয়েছিলাম।আমাকে দেখে তোমার পালিয়ে পালিয়ে যাওয়া আমাকে পাগল করে দিয়েছে।বিলিভ মি তোমাকে দেখার পর আমার মধ্যে যে ফিলিং হচ্ছে সেরকম আগে কখনোই হয়নি।ট্রাস্ট মি আই লাভ ইউ।

তরী ফোন কেটে দিলো।পিছনে তাকিয়ে দেখে রিদ্ধ দাঁড়িয়ে। ওকে দেখে তরী ভয় পেয়ে যায়।
-কে ছিলো আপু?
-আসলে পরিচিত একজন।
-সে কে।
-তুই চিনবি না।
-উল্লাস।
-তুই চিনিস।
-ছাদে দেখা হয়েছিলো।ছেলেটা খারাপ না।
-কি বলছিস?
-ও তো জানতো না আমি তোর ভাই।আমাকে বলছে -তুমি এই বাসায় থাকো,আমি বললাম হ্যা।
-ওই যে আপু গেলেন উনাকে চিনো।
-হুম
-খুব মিষ্টি তাই না।
-হ্যাঁ
-আমি উনার নাম দিয়েছি মিষ্টি।
-কেনো?
-মিষ্টি দেখতে তাই।
-ফ্লাট করা হচ্ছে।
-শোন ছোটোভাই মিষ্টির সাথে সারাজীবন কাটাতে চাই।তুমি বুঝবে না ভাই ওকে আমি কি পরিমাণ ভালোবাসি।
-লাভ নাই এই জায়গায় চিড়া ভিজবে না।
-সত্যি ভালোবাসা হেরে যায় না।
-ভুল করছেন।
-ভয় দেখিও না ভাই।
আরো অনেক কথা হয়েছিলো। সব কথায় তোকে নিয়ে।
-তুই জানিস ছেলেটা রুমার বোনের ছেলে।
-তো দোষের কি আপু।
-ওই পরিবারের সবাই খারাপ।
-ধ্যাত পাগল সব খারাপ না।
-তুই কি বুঝাতে চাইছিস।
-তুই ছেলেটার সাথে কথা বল।সময় দে যদি ভালো লাগে তবে অন্যকিছু ভাবিস।
-সেটা সম্ভব না।তুই যা এখন।

রিদ্ধ চলে যেতেই তরী ভাবতে বসলো।রিদ্ধ ছেলেটার মাঝে কি এমন গুণ দেখছে যার কারণে এরকম কথা বলছে।যাই বলুক রিদ্ধ উল্লাসের সাথে কিছু হতে পারে না।এতে আমার মা নতুন করে কষ্ট পাবে।

কেটে যায় আরো চারদিন এরমধ্যে উল্লাস একবারও ফোন করেনি।
কিন্তু আজ বারবার ফোন দিচ্ছে তরী বিরক্ত হয়ে ফোন ধরলো।
-মিষ্টি প্লিজ রাগ করো না। আমি কাল চলে যাবো।প্লিজ একবার তোমার সাথে দেখা করতে চাই।
-সম্ভব না।
-প্লিজ মিষ্টি শুধু একবার কাল তো চলেই যাবো।
-না বললাম তো।
-প্লিজ আর তো কখনোই আবদার করবো না।
-আপনি কেনো বুঝতেছেন না।
-বুঝতে চাইছিনা প্লিজ মিষ্টি আসবে বলো।
-নাহ।
-আমি বিকেলে তোমাদের এখানকার শিশু পার্কে থাকবো।আমার বিশ্বাস তুমি আসবে।
-শুনেন।
-তুমি আসবে।

উল্লাস ফোন রেখে দিলো।তরী দুটানায় ভুগছে যাবে কি যাবে না।রিদ্ধ এসে জানতে চাইলো। তরী সব বলতে রিদ্ধ আগ্রহ দেখালো যাওয়ার জন্য।
বিকেলে তরী শুইয়ে ছিলো, রিদ্ধ এসে তাড়াহুড়ো করে তরীকে তৈরি হতে পাঠালো।
তরী সাদা রঙের থ্রি পিস পরলো।বের হতে গেলেই মায়ের ফোন বেজে উঠলো। ফোন রান্না ঘরে মাকে দিতে গেলে দেখলো দাদূর নাম্বার থেকে কল।
-মা দাদু ফোন দিয়েছেন।
ফোন কানে লাগিয়ে স্বপ্না চিৎকার করে উঠলো।
-তোর দাদু বুকে ব্যথা বেড়েছে সবাই উনাকে নিয়ে হসপিটালে গেছে।তুই তাড়াতাড়ি দাদিকে নিয়ে আয়।
স্বপ্না রুমে গিয়ে ব্যাগ আর রিহানকে নিয়ে আসলো।তরী দাদিকে নিয়ে গাড়িতে উঠলো।
আল্লাহকে ডাকা ছাড়া উপায় নেই।স্বপ্না অনবরত কান্না করেই যাচ্ছে।

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here