সিন্ধু ইগল, পর্ব:৬

0
674

সিন্ধু ইগল – (৬)
ইসরাত জাহান দ্যুতি

১৬
রেজা আজ প্রচণ্ড বিস্মিত জায়িনের কাজে। সাতটা বছর ধরে সে জায়িনের সঙ্গে আছে। এই সাত বছরে জায়িনের প্রেমিকার সংখ্যা হাতে গুনেও বলতে পারবে না সে। শুধু এটুকুই বলতে পারবে, এই প্রেমিকাদের মাঝে জায়িনের হাতে খুন হয়েছে কতগুলো প্রেমিকা। বর্তমান ঢাকা শহরে জায়িন তিনটি প্রেমিকাতেই আপাতত আটকে আছে। তাদের মাঝে অত্যাধিক সুন্দরি ফারজানা। এই মেয়েটির কাছে গেলে জায়িন সেই রাতটি কোনোভাবেই ফারজানার সাথে না কাটিয়ে আসে না। কিন্তু আজ প্রথমবার জায়িন মাত্র চারঘণ্টা ফারজানার সঙ্গে আমোদ ফুর্তি করে এই রাত দু’টোর সময় সেখান থেকে বেরিয়ে এসে তাকে কল করে জানাল গাড়ি নিয়ে হাইওয়েতে চলে আসতে। আর এখন তারা দু’জন রওনা হয়েছে গাজীপুরের উদ্দেশ্যে। জায়িন সিটে মাথা এলিয়ে চোখ বুঁজে চুপচাপ বসে আছে। কী হয়েছে আজ তার? তা রেজা অনুমানও করতে পারছে না। ড্রাইভিংয়ের ফাঁকে ফাঁকে তাকে লক্ষ করছিল। অন্ধকারের মাঝেও জায়িনের লাল ফর্সা মুখটা জ্বলজ্বল করছে। ফারজানার কাছ থেকে চলে আসার পর এবং গাড়িতে ওঠার আগে প্রায় বিশ মিনিট ধরে শুধু ঠান্ডা পানিতে মুখটা অনর্গল ধুয়ে যাচ্ছিল জায়িন। মুখের ভারী মেকআপের আস্তরণ উঠিয়ে ফেলার অবিরত চেষ্টা। অবশেষে মুখটা পরিষ্কার হলে নিশ্চিন্তে গাড়িতে উঠে বসে সে।

রেজা বুঝতে পারছে না, জায়িন ঘুমিয়ে পড়েছে না কি। তার ভারী নিশ্বাস পড়ার শব্দ পাচ্ছে সে ঘনঘন। আড়চোখে তাকাল একবার জায়িনের দিকে। আর তখনই চমকে উঠল সে। চোখ বুজে তার স্যার মিটিমিটি হাসছে। রেজা এবার কৌতূহল দমাতে না পেরে জিজ্ঞেস করে উঠল, ‘স্যার? কিছু হয়েছে কি? আপনি ঠিক আছেন তো?’
জায়িন এ প্রশ্নের উত্তর দিলো না। উলটে প্রশ্ন রাখল রেজার কাছে, ‘আম্মা কি আজ তরকারিগুলোতে একটু বেশিই ঝাল দিয়েছিলেন, রেজা?’
কী প্রশ্নের উত্তরে কী বলল তার স্যার? এমন সময়ে এই প্রশ্নটি উদ্ভট ধরনের কথা ছাড়া কিছুই মনে হলো তার। হতবুদ্ধি চেহারা বানিয়ে উত্তর দিলো সে, ‘মানানসই-ই তো ছিল স্যার।’
-‘তাহলে আমার বোকা রানির ঠোঁটদু’টো অমন লাল মরিচের মতো হয়ে গিয়েছিল কেন? আমি তো আজ সারাটাদিনেও ভুলতে পারছি না ওই ঠোঁটদু’টো।’
ড্রাইভিং থেকে মনোযোগ নিমিষেই সরে গেল রেজার এমন কথায়। এই মুহূর্তে সে চাইলেও স্বাভাবিকভাবে ড্রাইভিং করতে পারবে না। তাই গাড়িটা রাস্তার এক পাশে ব্রেক করে রেখে তাজ্জব বনে যাওয়া চোখদু’টোতে চেয়ে তাকাল জায়িনের দিকে। সে বিশ্বাস করতে পারছে না, জায়িন মাহতাব কোনো নারীর ঠোঁটে আটকা পড়েছে! এই মানুষটির কাছে নারী বলতেই শুধু নারীদেহের নেশা বোঝে। আজ অবধি কোনো নারীতে সে দু্র্বল হয়নি। শুধু তাদের সুন্দর শরীরে আসক্ত হয়েছে। তবু কোনো প্রেমিকার ঠোঁটদু’টোতে আকৃষ্ট হয়নি। আর যা-ই করুক তাদের সাথে, কোনোদিন কারও সাথে ওষ্ঠচুমুতে লিপ্ত হয়নি। জায়িনের এমন কোনো জিনিস নেই, যা রেজার অজানা। তার প্রতিটা অভ্যাস, বদঅভ্যাস, পছন্দ, অপছন্দ সব জানে রেজা। তাই এটুকুও খুব ভালো করে জানে রেজা, জায়িন আজ অবধি কোনো নারীর ঠোঁটে ঠোঁট ছোঁয়ায়নি, এমনকি তার ঠোঁট অবধি কাউকে এগোতেও দেয়নি। আর সেই মানুষ কিনা আজ কারও ঝালে লাল হয়ে যাওয়া ঠোঁটের চেহারা ভুলতে পারছে না?

রেজা নিজেকে ধাতস্থ করে জায়িনকে জিজ্ঞেস করল, ‘আপনি মজা করছেন না তো স্যার? আর কাকে বোকা রানি বলে সম্বোধন করলেন? আজ অবধি আপনি কাউকে রানি বলে ডাকেননি। স্যার কি তবে এবার বিয়ের পরিকল্পনা করছেন?’

রেজার প্রশ্নগুলোতে জায়িন যেন সম্বিৎ ফিরে পেল। রেজার দিকে গম্ভীর দৃষ্টিতে কয়েক সেকেণ্ড চেয়ে থেকে কড়া সুরে আদেশ করল, ‘রেজা, ভুল করেও ওর মুখের দিকে তাকাবে না। আর ঠোঁটের দিকে তো নয়-ই। গাড়ি থামিয়েছ কেন? জলদি গাড়ি স্টার্ট দাও।’
-‘আপনার কোনো প্রেমিকার দিকে আজ অবধি আমি চোখ তুলে তাকিয়েছি স্যার? আর সেখানে আপনি রানি বলে সম্বোধন করে উঠলেন। চোখ তুলে তাকানো তো দূরে থাক৷ আপনাকে যেমন সম্মানের চোখে দেখি, ম্যামকেও তেমন চোখেই দেখব। কিন্তু আমি বুঝতে পারিনি আমার ম্যাম কে? মিস জাদু না মাধু?’
এবার জায়িন আবার চোখ বন্ধ করে ফেলল। মিটিমিটি করে হাসতে হাসতে বলল, ‘দেখতে পারলে শোনে কে? অপেক্ষা করো।’
কথাটা শেষ করেই আবার বলল, ‘তোমাকে লন্ডন যেতে হবে এ মাসেই। জাদু আর মাধু কোথায় থাকত? যে ভার্সিটিতে পড়াশোনা করত, সব সঠিক তথ্য চায় আমার।’
-‘সেটা তো স্যার আমরা মাধুর সিভি থেকে দেখলামই। আর ওদের আসল বাড়ি সিলেট। সেখানে তো আমরা ভালো করেই খোঁজ খবর নিলাম ওদের ব্যাপারে।’
-‘আমি শতভাগ নিশ্চিত, এ সবই মিথ্যা।’
-‘লন্ডনে গিয়ে ওদের সঠিক তথ্য বের করা এত সহজ নয় স্যার। ওটা লন্ডন, ঢাকা নয়। আমার পক্ষে কী করে সম্ভব?’
-‘বিচলিত হইয়ো না রেজা। তোমার একার পক্ষে সম্ভব নয় তা কি আমি জানি না? তুমি কি ভুলে গেছ আমার হাত কতটা লম্বা? তোমাকে পুরোপুরি সাহায্য করার জন্য ওখানে লোক রয়েছে। তারা তোমাকে সাহায্য করবে।’
রেজা যেন এবার সত্যিই শিউরে উঠল। সে শুধু জায়িনের মুখেই শুনেছে, আন্ডার ওয়ার্ল্ডের সঙ্গে এই মানুষটি বহু বছর ধরে জড়িয়ে আছে। দিনে দিনে জায়িনের টাকার পাহাড় গড়ে উঠছে এমনি এমনি নয়। এই আন্ডার ওয়ার্ল্ডের সঙ্গে যুক্ত থাকার ফলেই বেশ কয়েকটি বড়ো বড়ো রাজ্যে সে নিমিষেই আধিপত্য বিস্তার করতে পারবে বলে শুনেছে সে। আর আজ তাদের মুখোমুখি হওয়ার সুযোগ এসেছে রেজার কাছে৷ এই সুযোগ রেজা কখনোই হাতছাড়া করবে না৷ সে সচক্ষে দেখতে চায়, তার স্যার মানুষটি সত্যিই এত বড়ো মাপের খেলোয়াড় কি না? তাই সে চট করেই বলে ফেলল, ‘আমাকে যেতে হবে কবে স্যার?’
-‘খু্ব শীঘ্রই।’
-‘কিন্তু স্যার আমাকেই কেন যেতে হবে? আপনি তো ওনাদের মাধ্যমেই সব জানতে পারবেন।’
-‘সবটা ওদের হাতে ছেড়ে দেওয়া মানে শেয়ালের কাছে মুরগি বর্গা দেওয়ার মতো হয়ে যাবে, রেজা। সব কাজ তোমাকেই করতে হবে। শুধু প্রয়োজনীয় সাহায্যটুকু ওরা দেবে।’
-‘কিন্তু আমার স্যারের রানি হওয়ার মতো ক্ষমতা কার? আমি তো তা জানতে ভীষণ আগ্রহী হয়ে পড়ছি।’
-‘সময় এলে তোমাকে আমার থেকে জানতে হবে না। তুমি নিজেই জেনে যাবে। কারণ, তুমি নিজেও কম ঘাঘু নও।’
বলেই বাঁকা হেসে তাকাল জায়িন রেজার দিকে। এমন কথাটিতে রেজা খানিকটা লজ্জায় পেয়ে গেল। সে যেমন জায়িনের খুটিনাটি সম্পর্কে অবগত, তেমন জায়িনও রেজার পেটের খবরও সবটা জানে।

কেউ আর কোনো কথা বাড়াল না। বাকিটা পথ জায়িন ঘুমিয়ে ঘুমিয়েই কাটিয়ে দিলো। বাসায় এসে পৌঁছল ওরা ভোরবেলা। জায়িন তখন মুখোমুখি হয় মাহতাব সাহেবের। মাথা ঝুঁকিয়ে আব্বাকে সালাম জানিয়ে জায়িন ওপরে যাবার জন্য পা বাড়াতেই মাহতাব সাহেব ছেলেকে ডেকে বললেন, ‘আমি নিচে অপেক্ষা করছি৷ জাগ্রত অবস্থাতেই আছ যখন, আযান শুনেও নামায় আদায় করবে না তা তো হয় না। ফ্রেশ হয়ে আসো। মসজিদে যাব এক সঙ্গে।’

এসব ব্যাপারে জায়িন একটু আধটু বিরক্ত হলেও কিন্তু কখনো আব্বা বা আম্মার কথা ফেলতে পারে না সে। যেহেতু দু-তিন ঘণ্টা ঘুমিয়েছিল, তাই শরীর অতটাও খারাপ লাগল না তার। ঘরে গিয়ে জলদি জলদি গরম পানিতে গোসল নিয়ে নিচে চলে এলো। যেখানে ঘণ্টাখানিক লাগার কথা গোসলের জন্য, সেখানে মাত্র দশ মিনিটে গোসল পর্ব সেড়ে তার একটুও ভালো লাগছে না। তবুও যেতে হলো আব্বার সাথে। তবে মসজিদে গিয়ে নামায শেষ করে আর এক মুহূর্ত বসে থাকেনি সে। সোজা বাসায় ফিরে গায়ের পাঞ্জাবিটা খুলেই বিছানাতে যাবার জন্য প্রস্তুতি নিলো। কিন্তু এবার তার বিশ্রামের বাধা হলো আরও একটি মানুষ। চারদিকে ভোরের আলো পুরোপুরি ফুটতে আরও কিছুটা দেরি। জানালার সামনে এসে দাঁড়াল সে। বাউন্ডারির ওপাশের মেয়েটিকে গম্ভীর দৃষ্টিতে তাকিয়ে দেখতে থাকল। বিছানার ওপর থেকে ফোনটা নিয়ে কল করল মুখস্ত করে রাখা একটি নাম্বারে। আর দেখতে থাকল, মেয়েটি তার প্যান্টের পকেট থেকে ফোনটা বের করছে আর উদাসী দৃষ্টিতে চেয়ে দেখছে ভোরের আকাশ। আজ আর তার পাশে কুকুরটি নেই।

এই সময়ে ফোনে জায়িনের নাম্বার দেখে জাদু অবাক না হলেও খানিকটা বিরক্ত হলো। কলটা ধরবে না, প্রথমে এমন সিদ্ধান্তই নিলো সে। কিন্তু পরবর্তীতে আবার কী ভেবে সিদ্ধান্ত বদলালো। চুলগুলোর মাঝে আঙুলগুলো চালাতে চালাতে কল রিসিভ করল সে। আর তখনি জায়িন ওপাশ থেকে বলে উঠল, ‘যেহেতু নতুন দিনের শুরুটা তোমাকে দেখে হলো, তাই নিশ্চয়ই বলব আমি সুপ্রভাত।’

জাদু এ কথায় কপাল কুঁচকে আশেপাশে তাকিয়ে খুঁজতে থাকল জায়িনকে। কিন্তু খোঁজাটা তার ব্যর্থ গেল। জায়িন তখন বলল, ‘তোমাকে দেখা জরুরি আমার জন্য। আমাকে দেখা তোমার জন্য জরুরি নয়। নয়তো আরও আগেই আমগাছটাকে গুরুত্ব দিতে।’

এ কথার বিপরীতে জাদু কী উত্তর দেবে বুঝতে পারল না। তবে আম গাছের কথা শুনে বাউন্ডারির ওপাশটা দেখতে চেষ্টা করল। কিন্তু কিছুই চোখে পড়ল না তার। জায়িন এবার কেমন কোমল আর মৃদুস্বরে ডেকে উঠল তাকে, ‘প্রিয়?’

ডাকটি শুনে জাদুর কুঞ্চিত কপালের সঙ্গে চোখজোড়াও ছোটো ছোটো হয়ে এলো। যেন ডাকটি তার কাছে একেবারেই সস্তা কোনো জিনিসের মতো। জায়িন আবারও আগের মতো করেই ডেকে শুধাল তাকে, ‘প্রিয়, তুমি আমার চোখের দিকে কেন তাকাতে চাও না?’
-‘আপনি কি ক্লান্ত, জায়িন? আপনার কণ্ঠ দুর্বল লাগছে।’
-‘আমি তোমার চাউনির সীমানা শহরে নিখোঁজ হতে চাই। কিন্তু তুমি আমায় কেন সুযোগ দাও না? তুমি অবুঝ নও প্রিয়। তুমি সব বোঝো।’
জাদু মিনিটখানিক চুপ থেকে বলল, ‘আমি ভয় পাই, জায়িন। আপনার দৃষ্টির গভীরতাকে।’
-‘খু্ব সত্য কি এ কথা?’
জাদু আবারও কিছু সেকেণ্ড নীরব থেকে কেমন সঙ্কোচের সুরে জবাব দিলো, ‘খুবই সত্যি।’
-‘কেন ভয় পাচ্ছ তুমি?’
-‘হয়তো আমার জন্য তা সর্বনাশ।’
-‘ভালো তো বাসো না। তাহলে?’
-‘আপনি নিশ্চয়ই ক্লান্ত জায়িন। আপনার ঘুম প্রয়োজন। কলটা রাখা আপনার জন্য জরুরি।’
ওপাশ থেকে আর কোনো সাড়া পেল না জাদু৷ কয়েক মিনিট দু’জন নীরবেই ফোনটা কানে ধরে দাঁড়িয়ে রইল। তারপর জাদু খেয়াল করল, জায়িন কলটা কেটে দিয়েছে। সে সময় জাদু আকাশটার দিকে আবার তাকাল। কয়েকটা মুহূর্তে আকাশ কিছুটা স্বচ্ছ হয়ে উঠেছে। ফোনে আবার টোন বেজে উঠল। তবে তা স্বল্প মুহূর্তের জন্য৷ মেসেজ টোন। জাদু অতি দ্রুতই মেসেজ ওপেন করে দেখল জায়িন লিখেছে ‘তোমাকে আমি সত্যিই খুন করব প্রিয়। আমি অবজ্ঞা একদমই সহ্য করতে পারি না।’

মেসেজটার দিকে চেয়ে থেকে জাদু বুঝতে চেষ্টা করল, জায়িন কেন এমন করছে হঠাৎ? সে তো এতখানিও তার আচরণে মনের ভেতরের গভীরতা প্রকাশ করেনি। এসব ভাবনার মাঝে জায়িন আবার কল করল তাকে। জাদু রিসিভ করতেই সে কেমন শীতল আওয়াজে বলল, ‘আমার সত্যিই ঘুম প্রয়োজন৷ বহুদিন আমার ঘুম সীমারেখা লঙ্ঘন করে না। আমি ঘুমের যত্ন নিই না। আমার ঘুমের যত্ন প্রয়োজন, প্রিয়।’

জাদু এবার কিঞ্চিৎ হাসল, শ্লেষের হাসি। বলতে চাইল জায়িনকে, ‘অন্ধ তার চিরচেনা পথটাকে চাইলেও পারবে না কখনো চেনাতে।’
কিন্তু জায়িনের কথার আর উত্তর দিলো না সে। কলটা কেটে বাংলোর বাইরে চলে গেল, দৌঁড়ানোর জন্য।

আর জায়িন, সে এক দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে চলে এলো জানালার পাশ থেকে। ক্লান্ত দেহখানা অবহেলার সাথে এলিয়ে দিলো বিছানাতে। তারপর বিড়বিড় করে বলতে থাকল, ‘বদলে যাক এই ধরাধাম, আর বদলে যাক আমার পরিচিত আমি।’

_______
প্রিয় পাঠক, আমার ভুল-ত্রুটি জানতে চাই। আপনাদের গঠনমূলক মন্তব্য দেখতে চাই।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here