সর্বনাশ – ২

0
1362

সর্বনাশ – ২
____________

এপ্রিলের তেইশ তারিখ..রাত বারোটা। সাথে পরিবার আর হাতে ল্যাগেজ। সামনে প্রাইভেট গাড়ি থামানো। দেশ ছাড়ার সময় হয়েছে শান্তর। যাবার পূর্বে বুনিকে দেখবে । অথচ মেয়েটা কই? বাড়ি থেকে আসতে এতক্ষণ লাগে? বুনির বাবা’কে কল করেছিলো। বলেছে, বেরিয়েছে। চলে আসবে। শেষ সময় পর্যন্ত অপেক্ষা করেছে। ঘড়ির কাঁটা তখন টিকটিক করছে, রওনা না দিলে প্লেন মিস। শেষমেশ বুনিকে না দেখেই, যেতে হবে। গাড়িতে উঠেও পেছনে, আশেপাশে তাকিয়েছে। নেই। ড্রাইভার গাড়ি ছেড়ে দিয়েছে। চলছে গাড়ি। পেছনে পরিবারের দিক, শেষবারের মতো তাকালো। ওইতো পেছনে বুনি। দৌঁড়ে আসছে। হাতে বক্স। শান্ত তৎক্ষনাৎ গাড়ি থামাতে বলল। থেমেছে গাড়ি। বুনি গাড়ির সামনে এসে, তীব্রভাবে শ্বাস নিচ্ছে আর ফেলছে। হাতের বক্স এগিয়ে দিলো,
– মায় দিছে।
শান্ত গাড়ি থেকে বেরোলো। কিছুটা সামনে স্ব-পরিবার দাঁড়িয়ে। নাহলে, যাবার পূর্বে বুনিকে একটু জড়িয়ে ধরতো। ধরার ইচ্ছেটা গোপন করে, বক্স নিল। আদুরে চোখে তাকিয়ে বলল,
– সাবধানে থাকবি। কেমন?
– আইচ্ছা। আপনিও ডাক্তার সাহেব।
মুহুর্তে সমস্ত শক্তি দিয়ে.. বাহুতে জড়িয়ে নিল বুনিকে। দু’হাতে আগলে ধরলো নিজের মাঝে। বুকের কষ্টের তীব্রতা কমে এলো। নরম গলায় ধমকালো,
– বাড়িতে কল দিলে, তখন থাকবি। না পেলে, মেরে তক্তা বানাই ফেলবো।
– আইচ্ছা।
কিছুটা সরে চট করে.. চুমু খেয়ে নিল বুনির গালে। থমকে যাওয়া বুনিকে রেখে, গাড়িতে উঠে পড়লো। আঁড়চোখে আরো কয়েকবার দেখে নিলো। গাড়ি চলছে। শান্তর বুক ভারী হয়ে আসছে নিমিষেই।

প্লেনে বসেও শান্ত ফোনের স্ক্রিনের দিক তাকিয়ে। ওয়ালপেপারে তাদের বিয়ের ছবি। বোকা বুনি লাল টকটকে বেনারসির দিক তাকিয়ে। আর শান্ত বুনির দিক। আনমনে হেসে ফেলল। কে জানতো, তার মতো চুজি ছেলে..এই বোকা মেয়েকে ভালবাসবে। তাও এমন পাগলের মতো। এখনো তার চোখে স্পষ্ট বুনির বোকাবোকা হাসি.. বোকাসোকা কথা.. তার থেকে পালিয়ে বেরানো। আর তার ডাকা ডাক্তার বাবু। অবশ্য লুকিয়ে ডাকা ‘ সর্বনাশ নামটাও শান্তর জানা। মেয়েটাকে যে সে সম্পুর্ন জানে। জানবে না কেনো? একে কাছে রাখার জন্য, জানার জন্য.. কতো মাইর না দিতে হয়েছে বুনিকে। না দিয়েই বা কী? কথা শুনতে চায়না একদম।
একটা বছর গেলেই হয়।
____________________

বুনি মুরগী দিয়ে ভাত খাচ্ছে। এদিকে মা বারবার দেখাচ্ছে, কীভাবে ভাত বারতে হয়.। কীভাবে গোছাতে হয়।
– শোন, এইযে এভাবে পাতে ভাত দিবি। ধীরেসুস্থে। তারপর.. ‘
মাঝপথে থেমে চোখ রাঙাল।
– এই মেয়ে। কী কই তোরে?
– খাইতেছি মা।
– রাখ। আজ বাদে কাল ঘর করতে হইবো। শিখতে হইবো ঘরের কাজ। নইলে লাত্থি মাইরা পাঠাইব ফেরত। ভাগ্যের নির্মম খেলায়, পাইছোস না পাওয়া জিনিস। নাহলে যেখানে ভাবছি, কে নিবো তোরে। সেখানে রাজপুত্রের মতো পোলা।
বুনি খেয়ে যাচ্ছে। মা আবারও ঘ্যানঘ্যান শুরু করেছে। সেদিকে ধ্যান নেই বুনির। সামনে চিংড়ির ভর্তা। বুনির পছন্দের। আগে খাবে পরে সব।

দুপুরে দোলা, সুজনেরা রাস্তায় ধরলো বুনিকে। মাথা থেকে পা পর্যন্ত চোখ বুলিয়ে বলল,
– কী খাস তুই? ক ত বুইন।
সুজন ভেঙালো,
– দেখ, যাদুবিদ্যা জানে। যারে পায় নিজের সাথে বাঁধে।
দোলা সুজনকে থামতে ইশারা করলো,
– চিঠি দিলাম আমি। বিয়া করলো তোরে। এটা কোনো কথা?
বুনির জবাব,
– না।
– এই জবাব দিবি না। মাথা গরম করে দেস ব্যাটা। তুই যদি এমন হ্যান্ডসাম ডাক্তার জামাই পাস। তো আমি কী করছিলাম? বুঝা আমারে।
বুনি দাঁড়িয়ে। যেমন শুনছে। বাজার করে বাবা ফিরবার সময়, বুনিকে সাথে নিয়ে চলল সাথে। কাল শান্ত আসবে। বাড়িতে বাজার তুলে ফেলল নগদে । কাল আবার একটু বিজি থাকবে। বাজার করার সময় কই? জামাই ত খাওয়াতেই হবে। দুটো না একটামাত্র মেয়ের জামাই। আদরে কমি থাকবে না, ইন শা আল্লাহ। বুনির মুখের দিক তাকিয়ে বাবা বোঝাচ্ছেন,
– তুমি আর এম্নে বেরোতে পারবা না আম্মু। মানুষ খারাপ কইবো।
– আইচ্ছা।
– আইচ্ছা কইলো ত হইবো না। মানতেও হইবো।
– আইচ্ছা।
– আমার লক্ষি মা।
– হু।
বাবা হাসতে হাসতে মেয়েকে নিয়ে বাড়ির উদ্দেশ্য চলল। যাবার পথে বেশ কয়েকজনকে উঁচু গলায় বলল,
– কাল আমার জামাই আসতেছে। বাহির থেকে।

রাতে খালা আসছে। বুনির সাথে ঘুমোবে। এই নাদান মেয়েকে অনেক কিছু বোঝানো বাকি। শেখানো বাকি। বিয়ে হয়েছে, অথচ তার কিছুই মাথায় নিচ্ছে না। আজ বাদে কাল শান্ত চলে আসবে। তখনই উঠিয়ে নিবে বুনিকে। এখনোও যদি এই মেয়ে না শেখে, তো কবে শিখবে? সময় নেই। বুনি খালার পাশে ঘুমোতেই, খালা কথা তুললেন,
– বুনি? এই বুনি।
– হু।
– তোর শান্তকে কেমন লাগে?
বুনি আবছা অন্ধকারে খালার মুখের দিক তাকাল,
– কেমন?
– বোকার বাচ্চা। কেমন লাগে বলতে? সুন্দর। বা কীভাবে দেখোস ওরে। কেমন অনুভূতি হয় ।
– ভয়াবহ অনুভূতি। আমারে মারে।
অসহায় নিশ্বাস ফেলল খালা,
– মারবে না তো চুমু দেবে?
– দিয়েছে তো। গালে, কপালে…!
খালা ঝটপট বুনির মুখ চেপে ধরলো।
– গাধা। শোন, তুই। এইযে গ্রামের মেয়েরা যে, এতো এতো প্রেমপত্র দেয়, শান্তকে। তোর সেটা নিয়ে কী মনে হয়?
– অনেক সুন্দর। চিঠি গুলো রঙিন কাগজে লিখে খালা। ওইযে দুই টাকার কাগজ গুলো আছে না? ওগুলো। কী সুন্দর। গোলাপ ফুল ও লাগায় উপরে। অথচ, ডাক্তার ফালাই দেয়। আমি নিয়ে নিছি।
অনেক গুলো গোলাপ হয়েছিল একত্রে।
– তোরে কী ওয় শুধু শুধু মারে? যাহ, ঘুমা।
খালা ওপর পাশে ফিরে ঘুমানোর প্রস্তুতি নিলো।
– তোরে ওই ডাক্তারই পারবে সামলাতে। আমাদের দ্বারা অসম্ভব।
বুনি আঁড়চোখে প্রশ্ন করলো,
– কী হয়েছে খালা?
– শান্ত আসবে। পরশু।
– সর্বনাশ।
– হ্যাঁ, তোর জন্য। না শোধরালে মাইর খেতে খেতে শোধরাবি।

এতবড় সর্বনাশ হতে চলেছে বুনির? এতবড় সর্বনাশ? এখন কী হবে? হায়হুতাশ করতে করতে প্রায় অজ্ঞান বুনি। সর্বনাশ উচ্চারণ করে যাচ্ছে একটু পর পর। গোসল.. খেতে.. বসতে.. ঘুমোতে গিয়েও সর্বনাশ উচ্চারণ করা থামেনি। বরং বেড়েই যাচ্ছে উচ্চারণের গতি। মা এবার ভিষণ রাগলেন। দুপুর দিকে চুল টেনে দিলেন,
– হয়েছে কী? কীসব অলক্ষ্যে শব্দ উচ্চারণ করে যাচ্ছিস? জুতো জোড়া দেখছিস সামনে?
বুনি কাঁথার তোলে ঢুকে গেল। সেখান হতে মাথা নাড়াল। মানে..সে জুতো জোড়া দেখেছে। মা যেতেই, বুনি এবার শব্দ ব্যতীত সর্বনাশ উচ্চারণ করছে। আনমনে বলে ফেলল,
– এই সর্বনাশ আবার আসছে। আমায় প্রতিদিন মারবে। এ-কী সর্বনাশ হলো আমার। আয়হায়!

চলবে

গ্রুপ – Nabila Ishq – নাবিলা ইষ্ক
আইডি – নাবিলা ইষ্ক

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here