সমাপ্তির_শেষটা #পর্ব_৩

0
992

#সমাপ্তির_শেষটা
#পর্ব_৩
______________________________________
তাই সেই দ্বারেই গিয়ে ঠেকেছিল আমার জীবন । এসব ভাবতেই টুপটুপ করে দু’ফোঁটা অশ্রু গড়িয়ে পড়ল চোখ দিয়ে । সাথে সাথেই মুছে ফেললাম বেহায়া অশ্রুগুলোকে । কারণে অকারণে এভাবেই বাঁধা না মেনে ঝড়ে পড়ে ।
দাভাই এর-ই মধ্যে নিঃশব্দে এসে পাশে বসেছে আমার । খেয়ালই করিনি । মাথা উচিয়ে দাভাইয়ের দিকে তাকিয়ে হালকা হেসে বললাম,
“এভাবে চুপচাপ এসে বসে আছো কেন?”

কোনো উত্তর না দিয়ে শুধু একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে আগের মতোই চুপ করে রইল দাভাই । কিছুক্ষণ নীরবতার পর কিছু একটা বলার জন্য মুখ খুলতেই দাভাইয়ের ফোন বেজে ওঠে । একবার ফোনের দিকে তাকিয়ে ফের আমার দিকে তাকালো দাভাই । বলল,
“সাদ্দাফ..”

আমি ভাবলেশহীন ভাবে যেভাবে ছিলাম ওভাবেই বসে রইলাম । যেন আমি জানতাম এমনটাই হবে । কল রিসিভ করে সাদ্দাফের সাথে কথা বলতে লাগল দাভাই । এদিকে আমি ভাবতে লাগলাম কখন বাবাকে দেখতে পারবো! হঠাৎ-ই আমার দিকে ফোন এগিয়ে দিল দাভাই । ফোন হাতে নিয়ে কানে ঠেকিয়ে চুপ করে রইলাম আমি । অপরপাশ থেকে শোনা গেল সাদ্দাফের কণ্ঠ,
“সাহস অতিরিক্তই বেড়ে গেছে তোর । খুব জলদি সেই সাহস কমে যাবে ।”

আগে যদিও আমাকে তুমি করে বলতো কিন্তু যখন থেকে সাদ্দাফ বদলে গেছে তখন থেকেই তুই নেমে এসেছে । কণ্ঠে যেন আগুন ঝরে পড়ছে সাদ্দাফের । আমি চুপ করে শুনেই গেলাম । কোনো প্রতিউত্তর করিনি । আসলে রুচিতে বাঁধছিল কথা বলতে । আর আমার জানাই আছে সাদ্দাফ কি করতে পারে । এখনই হয়তো বলবে ডিভোর্সের কথা । মনে মনে কথাটা ভাবতে না ভাবতে সেকথাই বলল ও,
“খুব জলদি ডিভোর্স পেপার পেয়ে যাবি । আর আদরকেও হারাবি । আমার ছেলেকে আমি নিয়ে আসবো। ”

কোনো কথা না বলে কল কেটে দিলাম । এইসব কথাবার্তা শুনতে ভালো লাগছে না । আদরের দাবি করছে অথচ আদরের পৃথিবীতে আসার সংবাদ শুনে ওর মুখ ছেয়ে গিয়েছিল আঁধারে । শত কষ্টের মধ্যেও হাসি পাচ্ছিলো এই ভেবে । যাই হোক না কেন আমার ছেলে আমার কাছেই থাকবে সেটা আমি জানি । কারণ আদরকে নিয়ে যাওয়ার কথা শুধুমাত্র আমাকে ভয় দেখানোর জন্য বলেছে সাদ্দাফ । দু’একদিন ধরে তো আর ওকে চিনি না । দীর্ঘ এগারো বছর ধরে ছিলাম এই মানুষটার সাথে ।
এর মাঝে নিয়ন এসে আমার সামনে দাড়ালো। কেন জানি না ওর দিকেও তাকাতে ইচ্ছে হলো না । আমাকে নির্বিকার দেখে নিয়ন নিজেই এগিয়ে এসে পাশে বসে কথা শুরু করলো,
“আদরের সাথে তুমিও বাসায় গেলে পারতে । বাসা থেকে নাহয় একটু ঘুরে আসতে ।”
দাভাইয়ের সামনে বসেই খুব সহজ ভঙ্গিতে বলল নিয়ন । যেন ওর সাথে আগের সেই স্বাভাবিক সম্পর্কটা যেন এখনো আছে আমার। আর এখানে যেন ও আর আমি ছাড়া তৃতীয় কোনো ব্যাক্তি নেই । ও স্বাভাবিক ভাবে কথা বললেও আমি উত্তর দিলাম কাঠখোট্টা ভঙ্গিতে । বললাম,
“বাবার সাথে দেখা না করে আমি কোথাও যাব না ।”
আমার এই কথায় দাভাই আর নিয়ন একে অপরের দিকে একপলক তাকালো। বিষয়টা আমার নজরে কেন জানি খুব আটকালো । খটকা লাগলো কেমন জানি। চোখের ইশারার দাভাইয়ের সাথে কি যেন বলল নিয়ন । তারপর আমার দিকে তাকিয়ে বলল,
“তোমার সাথে কিছু কথা আছে নূহা….”
.
.
.
চলবে?

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here