সন্ধি হৃদয়ে হৃদয়ে পর্ব ৭

0
1571

#সন্ধি_হৃদয়ে_হৃদয়ে
#লেখিকাঃ আসরিফা সুলতানা জেবা
#পর্ব___৭

প্রিয়ুর মা ও মামীর মাঝের আসনে বসে আছে শ্রেয়া। তাদের দু’জনের চারপাশে গোল করে বসেছে ছোট বড় সকলে। সবই মহিলা,ছোট বাচ্চা-কাচ্চা,যুবতী। বেশ বড়সড় প্রিয়ুর মা’য়ের কক্ষ টা। সেখানেই বিছানা,মেঝে যে যেখানে পারে বসে আছে, আড্ডা জমিয়ে তুলেছে। আড্ডা বাঙালী জাতির যেন এক অনিবার্য চাহিদা। কার না ভালো লাগে আড্ডা দিতে?চেনা পরিচিত লোক পেলে তা আরও জমে উঠে। টপিক প্রিয়ুর বিয়ে নিয়ে। বাড়ির মুরুব্বি,প্রিয়ুর ফুপাতো,মামাতো ভাই যারা এসেছে সব ছেলেরা ছাদে। আজ রাত তারা চন্দ্রিমার আলো গতরে মেখে ছাদেই গভীর নিদ্রায় তলিয়ে যাওয়ার ভাবনা-চিন্তা করেছে। শ্রেয়ার মনে হচ্ছে কালই বোধহয় প্রিয়ুর বিয়ে। কতসব আয়োজন!শুধুমাত্র ডেট ফিক্সড করতে আসবে তাতে কি রাজকীয় ভাবসাব!

প্রিয়ু সত্যিই খুব ভাগ্যবতী। সবাই কত ভালোবাসে ওকে। সামান্য কিছুতেই কল্পনা জল্পনার শেষ নেই। এই যে আসছে পর্যন্ত ওর মামী,মা,কাজিনদের ওর বিয়ে নিয়ে কত প্ল্যান। কোথায় থেকে শাড়ি কিনবে। বেনারসি নাকি লেহেঙ্গা পড়লে প্রিয়ুর জন্য মানানসই হবে আরো কত কি!এছাড়া আয়ুশের চোখেও দেখেছে ও অসীম প্রেম। বোনের মতন বান্ধবীর এত আনন্দে শ্রেয়া নিজেও আনন্দিত না এমন নয়। বরং একটু বেশিই মনটা শীতল প্রিয়ুর খুশিতে।

কিন্তু এখন এত মানুষের ভিড়ে একদমই থাকতে ইচ্ছে করছে না। লং জার্নি করে আসার পর পরই ফ্রেশ হয়ে সেই যে এখানে এসে বসেছে প্রায় ঘন্টার পর ঘন্টা অতিবাহিত হয়েছে। কোথাও গিয়ে একটু একান্তে কাটাতে মন স্পৃহা জাগছে শ্রেয়ার। তবে এভাবে গুরুজন রেখে উঠে যাওয়া চরম বেয়া/দবি বৈকি কিছুই নয়। কোনো ছুতো মিলছে না। প্রিয়ুও গায়েব। শ্রেয়ার অন্তঃপুরের ডাক প্রিয়ুর কর্ণ অব্দি পৌঁছালো হয়ত। মেয়েটা দরজার সামনে এসে হাজির। উচ্চ আওয়াজে ডেকে বললো,
‘ শ্রেয়া আয় খাবি। মা খাবার দাও আমাদের। সেই যে আসলাম এখনও না খেয়ে। মেয়েকে কংকাল বানিয়ে বিদায়ের ফন্টি এঁটেছ বুঝি?সাথে আমার কলিজার বান্ধবীটাকেও। ‘

প্রিয়ুর আহ্লাদী কন্ঠ শুনে তড়িঘড়ি করে আসর ছেড়ে উঠে দাঁড়ালেন রাশেদা। শ্রেয়াকে হাত টেনে উঠিয়ে বললেন,

‘ চল মা খাবি। আমার একদম খেয়াল ছিল না। দেখলি কথা বলতে বলতে ভুলেই গেলাম। নিচে হয়ত সবাই খেয়ে নিয়েছে তোরা কয়েকজনই বাকি। ‘

প্রিয়ুসহ ওদের কয়েকজন কাজিন ঠোঁট টিপে হাসে। রাশেদা এমনই। কথায় একবার মশগুল হলে ওনার দিন দুনিয়ার খবর থাকে না। রাত কেটে নতুন প্রভাত ধরণী স্পর্শ করবে তবুও ওনার কথার অন্তিমকাল আসবে না। কেউ কেউ তো অগোচরে বাঁচাল বলে বেড়ায়। বিশেষ করে ওনার শাশুড়ি কথায় কথায় সেই রাশেদার বিয়ের পর হতে ওনাকে বাঁচাল বলে সম্বোধন করে আসছে। তবে প্রিয়ুর বাবার স্ত্রীর এই গুণ টা খুবই প্রিয় ও মনকাড়া। তার ভাষ্যমতে,কথা ভিতরে চেপে রেখে গুমরে গুমরে ম’রবার চেয়ে অতিরিক্ত কথা-ই ভালো। এতে স্বাস্থ্যের ক্ষতি হবে না। সবসময় এমনটা করেন না রাশেদা। আপনজন কাছে পেলেই কথার ফুল ঝরে।

শ্রেয়া পাতের ভাত নাড়তে নাড়তে মিহি স্বরে প্রিয়ুর উদ্দেশ্যে বললো,
‘ কাল এতিমখানায় যাবো একবার প্রিয়ু। চলে আসবো বিকেলের দিকে। এখন শুধু বিয়ের ডেট ফিক্সড করা হবে,আমি না থাকলে চলবে না?এখানে আসার পর মনটা আনচান করছে এতিমখানায় যেতে। শৈশবের স্মৃতি টানছে খুব। ‘

প্রিয়ু সবে এক নলা মুখে দিয়েছিল। শ্রেয়ার কথা শ্রবণ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ভাত গিয়ে আটকালো গলায়। নাকে মুখে কাশতে আরম্ভ করে মেয়েটা। অতর্কিতে এমন কান্ডে শ্রেয়া ভড়কে গেল। পানির গ্লাস এগিয়ে দিয়ে পিঠে হাত ঢলতে ঢলতে অস্থির হয়ে পড়ল শ্রেয়া,
‘ পানি পান কর। হঠাৎ কি হলো তোর?পানি নে জলদি। ‘

প্রিয়ুর দাদি বেজার মুখে বলে উঠলেন,
‘ এই মাইয়া এমনিতে সবকিছুতে দেরি করে। এখন আবার তাড়াতাড়ি খাইতে গেছে ক্যান?দেরি করার মানুষ তাড়াতাড়ি করতে গেলে এমনই হয়। ‘

প্রিয়ুর চোখে মুখে পানি চলে এসেছে। দাদির দিকে ক্ষিপ্র দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বললো,
‘ আমি দেরি করি?হিং-সায় জ্বলো রুফায়া?আমার সুন্দর একটা জামাই হইব। বুঝি,বুঝি। এ কারণেই আমার নামে মিথ্যে রটাও। ‘
‘ এ্যা। তোর যেই একটা জামাই। চার চোখ লেকচারার। এমন লেকচারার আমার জীবনে কত আইছে গেছে, পাত্তা দিলাম। তোর দাদা ম্যাজিস্ট্রেট আছিল বইলা আব্বা জোর কইরা বিয়া দিছিল,নাহলে তারেও গুনার টাইম আছিল না। ‘

দাদি-নাতিনের খুনশুটি দেখে শ্রেয়া হাসি আটকে রাখতে পারল না। সবকিছু কত সুন্দর, পরিপূর্ণ একটা পরিবার। ওর যদি এরকম একটা পরিবার থাকত!বুকটা হাহাকার ধ্বনি তোলে বারবার। নিঃশ্বাস ক্রমশ ভারী হয়ে আসে। পরিবার, ভালোবাসা কিছুই পেল না। সব হাতের নাগালের বাহিরে যেন। চাইলেই কি চাঁদে যাওয়া যায়?শ্রেয়ার জীবনটা হয়েছে ঠিক এরকম- “অভাগা যেদিকে যায়, সাগর শুকিয়ে যায়।” আপনজন,পরিবার কিছুই নেই এই তুচ্ছ জীবনে। আগেও বলত,এখনও মনে মনে সহস্র, কোটি বার আওড়ায়–‘ ভালোবাসার বড্ড অভাব। ‘

প্রিয়ু পানির গ্লাস রেখে তীক্ষ্ণ চাউনিতে চেয়ে দেখে শ্রেয়ার অঙ্গভঙ্গি। মেয়েটার বিস্বাদ চেহারা ওর অন্তরআত্মা কাঁপায়। শ্রেয়া যদি কাল এ বাড়িতে না থাকে তাহলে যা ভেবেছিল তার কিছুই হবে। কত আর লুকিয়ে থাকবে ও?প্রিয়ু চায়,মন থেকে চায় অতীত তিক্ত হলেও শ্রেয়া সেটা আঁকড়ে ধরেই অভিনব রূপে রাঙিয়ে তোলুক নিজেকে। শুভ্র রং ভালো কিন্তু সবসময় যে এটা মানায় না। প্রিয়ু চাওয়া হলো শ্রেয়ার জীবনে রংধনু উঠুক। মেয়েটার নামে একটা আকাশ হোক। সেই আকাশে দিনের বেলায় রংধনু উঠুক এবং রাতে একটা থালা সমান চন্দ্র ও কোটি কোটি নক্ষত্র। তাই সে আয়ুশের বিরুদ্ধে গিয়ে নিজ থেকে একটা সিদ্ধান্ত নিয়েছে। যেই মেয়ে বিবাহিত হওয়া স্বত্বেও স্বামীর মুখ না দেখে কিশোরী জীবন ফেলে এসেছে, তিন তিনটে বছর পেরিয়ে এসেছে কাল দেখবে স্বামীর মুখ। শুভ দৃষ্টি হবে। দৃঢ় বিশ্বাস প্রিয়ুর কোনো একদিন দুটো হৃদয় মিলিত হবে। স্পন্দিত হবে সমান তালে।

শ্রেয়া আজও ওকে বলেনি ওর অতীতের সত্যগুলো। প্রথম যখন আয়ুশের ফোন পেয়ে সাথে রিয়াকে নিয়ে সকল বাসস্ট্যান্ডে শ্রেয়াকে খুঁজে বেড়ায় প্রিয়ু তখনও জানত না শ্রেয়া নামের মেয়েটা আয়ুশের কি হয়,কেন খুঁজতে বলছে!আয়ুশ ওকে সচরাচর ফোন দিত না,কথাও হতো না। ঢাকা শহরে এলে মাঝে মাঝে সম্মুখে পড়ে গেলে দু’ একটা কথা বলত। ওই নিশ্চুপ স্বভাবের পুরুষের দুই একটা গম্ভীর কথা-ই যেন প্রিয়ুর হৃদয় উতলা করে তুলত। সেদিন যখন ফোন দিয়ে বললো প্রিয়ু তোমার একটা সাহায্য লাগবে, আমাদের বাড়ির সম্মান রক্ষা করতে হবে তখনই সে বিনা বাক্যে জানায় যা বলবেন তা-ই করবো আয়ুশ। আয়ুশ বললো সবকটা বাস স্ট্যান্ড চেক করতে যদি সম্ভব হয় একটা লাল টুকটুকে বেনারসি পড়া বিধস্ত মেয়েকে খুঁজে বের করে নিজের কাছে আশ্রয় দিতে হবে। লাল রঙের ড্রেস পরিহিতা একটা মেয়ের ছবিও পাঠিয়ে দেয়। আয়ুশ কিছু উচ্চারণ করার আগে প্রিয়ু বুঝে নেয় এই মেয়েটাকে ওর জীবন দিয়ে হলেও খুঁজে বের করতে হবে। শত হলেও ভালোবাসার মানুষের যে আদেশ,তবে শর্ত ছিল এমনভাবে মেয়েটার কাছে নিজেকে উপস্থাপন করতে হবে ও যেন কখনও বুঝতে না পারে আয়ুশ কিংবা চৌধুরী বাড়ির কেউ ওকে পাঠিয়েছে।

সেদিন শ্রেয়াকে নিয়ে আসার পর সে জানায় ও তার স্বামীর বাড়ি থেকে পালিয়ে এসেছে। কেন পালিয়ে এসেছে, স্বামী কই এসব জিজ্ঞেস করলেই চুপ থাকে মেয়েটা। পরিচয়ে জানায় ও এতিম। প্রিয়ু আর জোরাজোরি করে নি। বাকি সবটা আয়ুশের কাছ থেকেই শুনে নেয়। আয়ুশ ওকে কড়াভাবে নিষেধ করে দেয় শ্রেয়াকে যেন এ বিষয়ে আর জিজ্ঞেস করা না হয়। কস্মিনকালেও ভাবনায় আসে নি প্রিয়ুর চৌধুরী বাড়ির মানুষ এতিম একটা মেয়েকে এভাবে ঠ-কাবে। আয়ুশ কে জিজ্ঞেস করলে বলে বিয়ের কথা ও ঘূনাক্ষরেও টের পায় নি। ইউনিভার্সিটি থেকে ট্যুরে গিয়েছিল রাঙামাটি। যেদিন ফিরল এসে দেখে শ্রেয়াকে বধূ রূপে। প্রিয়ু অচেনা মেয়েটার জন্য ভেবে কষ্টে জর্জরিত হয়ে পড়ে দিনকে দিন। কখন যে মেয়েটা ওর কাছের হয়ে গেল খবরও রাখে নি। সহমর্মিতা দেখাতে গিয়ে আপন মানুষ হয়ে উঠলো পরিপূর্ণভাবে।

তূর্য ভালো হওয়ার পর চট্টগ্রামে আসার ব্যাপাার টা শুনে আয়ুশ ও প্রিয়ু চিন্তায় পড়ে যায় শ্রেয়া তো নিজের হাসবেন্ড কে দেখলেই চিনে ফেলবে। তূর্য চিনবে না এতে ওরা নিশ্চিন্ত। কারণ পাগলামির দিনগুলোর কোনো কিছুই তূর্যর মস্তিষ্ক ধরে রাখতে পারে নি। ওদের সেই চিন্তায় গরম জল ঢেলে আরো উত্তপ্ত করে তোলে শ্রেয়া।

তূর্যকে দেখার পরও শ্রেয়ার না চেনার বিষয়টা ভাবিয়ে তুলে ওদের। একটা সময় ঠাওর করে নেয় সেই অমানিশায় শ্রেয়া নিজের স্বামীর মুখই দেখে নি। আয়ুশ বুদ্ধি করে প্রিয়ুর পাশের বাসা খালি আছে জানায় তূর্যকে। উদ্দেশ্য শ্রেয়ার প্রতি তূর্যর মনে অনুভূতি জাগানো। অজান্তেই হোক কাছাকাছি থাকলে না জানা বউয়ের প্রতি অনুভূতি তো জাগবে!কিন্তু তূর্য জেনে গেল সে বিবাহিত এবং অদেখা বউকে প্রচন্ড ঘৃণা করে এতেই সব চেষ্টা বিফলে চলে গেল আয়ুশের। তূর্যর চট্টগ্রামে ইউনিভার্সিটিতে লেকচারার হিসেবে নিয়োগ দিচ্ছে জেনে আশার আলো খুঁজে পেয়েছিল শ্রেয়াকে সসম্মানে চৌধুরী বাড়িতে ফিরিয়ে আনার অথচ সেই আশার প্রদীপ নিভে যায় তার মনের কথা জানতে পেরে। যে না দেখেই বউকে ঘৃণা করে চোখের সামনে এলে কি করবে ভেবে কূল পায় না। ফলস্বরূপ আয়ুশ চায় শ্রেয়াকে আগে ভালো মেয়ে হিসেবে জানুক তূর্য। শ্রেয়া ঠিক কেমন মেয়ে নিজ চক্ষে দেখুক। শ্রেয়ার প্রতি পজিটিভ ভাবনা আসলেই তা আচ করে আয়ুশ জানিয়ে দিবে তূর্যকে এই মেয়েই তার বউ। কিন্তু শ্রেয়ার জানতে বাধা কই যে তূর্য স্যারই ওর স্বামী?প্রিয়ু কৌশলে ঠিক জানিয়ে দিবে শ্রেয়াকে। মেয়েটা অতীতের অধ্যায় না খুলতে চাইলেও তাতে সমস্যা নেই।

শ্রেয়ার নরম,রিনঝিনে স্বর কানে আসলো পুনর্বার। ডাকলো প্রিয়ু বলে। বললো,
‘ কাল যাবো আমি?রাগ করিস না প্লিজ। আর কবে ফিরি এই শহরে তা অনির্দিষ্ট। এসেই বা করবো কি আমার কোনো পরিচিত মুখের দেখা মিলবে না এখানে। কার টানে আসবো?মাদারের সাথে দেখা করে যাবো। ‘
প্রিয়ু বিচলিত কন্ঠে বললো,
‘ যেতে পারবি। তবে সকালে গিয়ে বারোটার আগে চলে আসিস প্লিজ। তোকে ছাড়া আমি একা হয়ে যাবো। ‘
‘ সেকি!কোথায় যাবে শ্রেয়া মা?’
রাশেদার উৎকন্ঠা। শ্রেয়া কাল বিলম্ব না করে প্রতুত্তরে জানালো,
‘ এতিমখানায় যাবো আন্টি। চলে আসবো বারোটার আগেই। ‘
প্রিয়ু স্বস্তির নিঃশ্বাস ছাড়ল। এঁটো হাতেই শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো শ্রেয়াকে। অতীব খুশিতে গদগদ হয়ে মুখ ফস্কে বলে বসল,
‘ আমরা দুই বান্ধবী, দু জা যেন এমন করেই সবসময় একসাথে থাকতে পারি। ‘
শ্রেয়া কি ভুল শুনল?জা?প্রিয়ুকে ছেড়ে চোখ বড় বড় করে অবাক গলায় জিজ্ঞেস করলো,
‘ জা?’
‘ জা?’– প্রিয়ুর দ্বিরুক্তি।
‘ হ্যাঁ। তুই এখন এটা বললি না?’
প্রিয়ু মেকি হাসি ফুটিয়ে বলে উঠল,
‘ মুখ দিয়ে ‘ন’ টা বের হতে দেরি হয়ে গেছে। ওটা দু জান হতো জানেমান।’
শ্রেয়ার সন্দেহাতীত দৃষ্টি দমে যায় মুহুর্তেই। প্রিয়ুর হাত টা ধরে নির্দ্বিধায় স্বীকার করে,
‘ আপন বলতে তোকেই চিনি প্রিয়ু।’
___________

তিন বছর পর চেনা জায়গা টায় এসে খন্ডিত হলো শ্রেয়ার হৃদপিন্ড। কাছের মানুষ টা আর নেই। নেই মাদার বলে যাকে ডাকত সেই সুন্দর চেহারার মহিলা টা। হঠাৎ স্ট্রোক করে মারা গিয়েছেন তিনি প্রায় বছর দেড়েক হবে। এসব শুনে শ্রেয়ার পায়ের নিচের মৃত্তিকার ফাটল শুরু হলো যেন। কেঁপে উঠে ওর সমগ্র ধরিত্রী। কান্না চেপে রেখে বেরিয়ে আসে এতিমখানা থেকে। প্রায় ঘন্টা দুয়েক ছিল। এখন ফিরতে হবে। কোথায় ভাবলো মাদারের কোলে মাথা রেখে মায়ের সুগন্ধ টুকু নেওয়ার সৌভাগ্য হবে। কিন্তু ভাগ্য বড়ই নির্ম-ম। বলাই হলো না মাদার আপনার মারফতে সেই কোচিং সেন্টারে এখন আমি জব করছি,দিব্যি চলে যাচ্ছে জীবন। অবক্ত হয়ে রইল বাক্যটা। গেট থেকে বেরিয়ে সাদা ওড়না টা মাথায় টেনে সিধা সড়ক ধরে হাঁটা ধরে শ্রেয়া। তখনই একটা গাড়ি সজোড়ে ব্রেক কষে ওর সন্নিকটে,পাশে। সহসা ধরাস করে উঠলো শ্রেয়ার সমস্ত কায়া। তড়িৎ বেগে পাশ ফিরতেই ভেতর হতে ভেসে আসে কিছুটা পরিচিত রুক্ষ কন্ঠস্বরের ডাক,

‘ শ্রেয়সী। ‘
শ্রেয়া হকচকালো আকস্মিক ডাকে। ভালো করে গাড়ির ভিতরে দৃষ্টি তাক করতেই মানুষটাকে দেখে যতটা না চমকালো তার চেয়েও ভারী বিস্ময়াবিষ্ট হয়ে পড়লো আজ মিস অর মিসেস শব্দমালা শুনতে না পেয়ে।

#চলবে,,,!
(ভুল-ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here