শ্রেয়সী পর্ব ৭

0
355

#শ্রেয়সী
#লেখাঃKhyrun Nesa Ripa
#পর্বঃ৭

সকালে থেকেই আকাশ ভয়ংকরভাবে নিজেকে মেঘের আড়ালে ঢেকে রেখেছে। তার সাথে ঝিরিঝিরি বাতাসও বইছে। সূর্যের প্রখরতা বিন্দুমাত্রও নেই। এই পরিস্থিতি কী করে সাজেদা বেগমকে মিথ্যে বলে বাড়ি থেকে বেড়ুবে জানা নেই বিন্দুর। সকাল হওয়ার পর প্রচণ্ড চিন্তার মধ্যে রয়েছে সে। কিভাবে যে সাজেদা বেগমকে কনভিন্স করাবে সেটাই জানা নেই। কোনো আইডিয়াও মাথায় আসছে না। এ হলো আরও এক জ্বালা ওইদিকে শিহাবকেও কথা দেওয়া হয়ে গেছে আজ ওর সাথে মিট করবে। তখন কী বুঝতো নাকি আজ এমন আবহাওয়া তৈরী হবে। বারবার দাঁতে নখ কাটছে বিন্দু। কিন্তু কোনো প্ল্যানই মাথায় আসছে না। শেষমেশ কোনো উপায় বের করতে না পেরে মন খারাপ করে কল করলো শিহাবকে।
–হ্যাঁ বিন্দু। কখন বেড়াচ্ছো?”
বিন্দু মন খারাপ করে বললো,
–শিহাব আজ যাওয়া হবে না। ওয়েদার খুব খারাপ। এই অবস্থায় মা কিছুতেই বাড়ি থেকে বের হতে দেবে না। ”
–পাগলের মতো কথা বলবা না। আমি কত প্ল্যান করে রেখেছি আজ অনেকটা সময় তোমার সাথে কাটাবো আর এখন তুমি এসব কী বলছো!”
–স্যরি শিহাব আমার কাছে আর কোনো অপশন নেই। মা এই ওয়েদারে আমাকে কখনো কলেজেও যেতে দেয় না। আর এমনিতে আজ কলেজ বন্ধ। তাই বের হওয়ার কোনো চান্সই নেই।”
–প্লিজ বিন্দু কিছু একটা করো।”
–কী করবো? তুমি বলে দাও।”
–আন্টিকে মিথ্যে বলে বের হও।”
–কিন্তু কী মিথ্যেটা বলবো,সেটাই তো জানিনা।”
–বলো তোমার কোনো এক ফ্রেন্ডের বার্থডে। ”
–এটা শুনলে মা জীবনেও যেতে দেবে না। এর আগে একবার এক বন্ধুর বার্থডেতে যেতে চেয়েছিলাম কিন্তু মা দেয়নি। উল্টো সেদিন মায়ের হাতে মার খেয়েছি।”
–বাব্বাহ আন্টি এত রাগী!”
–হুম,খুব রাগী।”
–একটা আইডিয়া।
–কী?”
–বলো তোমার এক ক্লোজ ফ্রেন্ড ভিষণ অসুস্থ।তাহলে নিশ্চই যেতে দেবে।”
–নট বেড। দেখি কী করা যায়।”
–হুম আমাকে জানিও।”
–আচ্ছা। ”

অবশেষে বহু সাহস সঞ্চয় করে এগুলো মায়ের রুমে। সাজেদা বেগম কাঁথায় নকশা তুলছেন।দুই মেয়ের জন্য শখ করে নকশি কাঁথা সেলাই করতেছেন নিজের হাতে। বিন্দু খানিকক্ষণ সয়ম মুখ কাচুমাচু করে দাঁড়িয়ে রইলো। এরপর নরম গলায় ডাকলো সাজেদা বেগমকে।
–মা!”
–বল।”
–আমাদের সাথে একই স্কুলে পড়তো সিনথিয়াকে চিনো না?”
–হু।”
–ও ভিষণ অসুস্থ ।”
–কী হয়েছে ওর?”
–অনেকদিন পর্যন্তই জ্বর বমি এখন নাকি খুব খারাপ অবস্থা। এখন আমার অন্যফ্রেন্ডরা ওকে দেখতে যাবে। আমাকে জিজ্ঞেস করছে যাব কি না।”
–ফোন করেছিস সিনথিয়াকে?”
বিন্দুর ভয়ে গলা শুকিয়ে আসছে। বাই এনি চান্স যদি ধরা খায় তাহলে পিটা একটাও মাটিতে পরবো না। বিন্দু ঢোক গিলতে গিলতে বললো,
–নাহ্। তবে আমাকে লিজা ফোন করে বলছে ওরা নাকি দেখতে যাবে। আমি যাব কিনা জিজ্ঞেস করছে।”
সাজেদা বেগম রাগী মানুষ হলেও মনটা একদম নরম। বেশ মিইয়ে গিয়ে বললেন,
–যাবি না কী করবি। মেয়েটা এত অসুস্থ। এবার চারদিকেই খালি জ্বর আর জ্বর। এই বছরটা যেন রোগ মুখে করে এসেছে।
বলতে বলতেই একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে রুম ছেড়ে বেরিয়ে গেলেন সাজেদা বেগম। বিন্দু মায়ের পিছুপিছু আস্তে আস্তে বেরিয়ে আসলো। জটপট রেডি হয়ে বাড়ি থেকে বেরিয়ে পরলো। রিক্সা দিয়ে অনেকখানি পথ এগিয়ে আসতেই শিহাব কল করলো,
–হ্যাঁ, বলো?”
–কোথায় তুমি?”
–আমি তো যুগিরঘোলের কাছে। তুমি কই?”
–আচ্ছা তুমি ওখানেই থাকে আমি পাঁচ মিনিটের মধ্যেই আসছি।”
–আচ্ছা বেশি লেট করো না আমার ভয় করতাছে। কেউ দেখে ফেললে রক্ষে থাকবে না।”
–আরেহ চিন্তা করো না। কিছু হবে না।”

হুট করেই একটা লোক এসে বিন্দুর পাশে বসে পরলো। বিন্দু খানিকটা আৎকে উঠে পাশে তাকাতেই দেখলো শিহাব ওর পাশে বসেছে। ভয়টা কেটে গিয়ে মুখে হাসি ফুটে উঠলো বিন্দুর। শিহাব রিক্সাওয়ালাকে এগুতে বলে বিন্দুর সাথে আলাপচারিতায় ব্যস্ত হয়ে পরলো। বিন্দু আর শিহাব এই প্রথম এতটা কাছাকাছি। এর আগে কখনো এতটা কাছে আসা হয়নি। আলাদা এক শিহরণ অনুভব করছে দু’জন। কিছুটা পথ সামনে এগুতেই গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি শুরু হলো। রিক্সাওয়ালা একটা বড় পলিথিন কাগজ দিয়ে দু’জনকে ঢেকে দিলো। হঠাৎই বিন্দু খেয়াল করলো একটা হাত আলতো করে বিন্দুর কোমর স্পর্শ করলো। শরীরের সমস্ত শিরা-উপশিরা কেঁপে উঠলো বিন্দুর। লজ্জায় শিহাবের দিকে তাকাতে পারছে না। ঠিকভাবে শিহাবের সাথে কথাও বলতে পারছে না। কিছুটা শিহাবের থেকে সরে আসতেই শিহাব এক ঝটকায় নিজের কাছে নিয়ে চেপে ধরলো। এবারে লজ্জায় প্রাণটা বোধহয় বেরিয়ে আসবে বিন্দুর। লাজুক গলায় বললো,
–কী করছো প্লিজ ছাড়ো।”
–এমন সাপের মতো মোড়ালে ছাড়বো কীভাবে। আরও জোড়ে পেঁচিয়ে ধরবো। যাতে আমার থেকে দূরে যেতে না পারো।

অনেকটা সময় গাড়িতে চেপে একটা কাঙ্খিত জায়গায় এসে রিক্সা থামলো। তখন কোনো বৃষ্টি নেই। তবে আকাশটা ভিষণ মেঘলা। সূর্যটা বারবার মেঘের আড়ালে লুকিয়ে পড়ছে। চারদিকে ঝোড়ো হওয়া বইছে। এইরকম পরিস্থিতিতে ভিষণভালো লাগছে। বাতাস এসে আলতো করে বিন্দুকে ছুঁয়ে দিচ্ছে। বাতাসের স্পর্শে বারবার শিহরিত হচ্ছে বিন্দু। কিন্তু জায়গায়টা একদম অচেনা বিন্দুর। শহর থেকে অনেকটা দূরে হবে মনে হচ্ছে। এর আগে কখনো এখানে আসা হয়নি। শিহাব ভাড়া মিটিয়ে বিন্দুকে নিয়ে একটা দোতলা বাড়িতে ঢুকলো। বাড়িটা দেখেই বুঝা যাচ্ছে সদ্য নতুন একটা বাড়ি। কৌতুহল বশত বিন্দুকে চারদিকে তাকালো একদম পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন বাড়িটা পাশে একটা ছোট ফুলের বাগানও দেখা যাচ্ছে। কেয়কটা সুন্দর ফুলের গাছ শোভা পেয়েছে ছোট বাগানটায়। বিন্দু ধীর পায়ে এগিয়ে চললো শিহাবের পেছন পেছন। বাড়ির ভেতরে তেমন ফার্নিচার নেই। তবে ঘরটা পরিপাটি করে গোছানো। কোথাও কোনো মাকরাসার ঝুল,ধূলা-বালি কিছুই নেই। বিন্দু কৌতূহলী গলায় জিজ্ঞেস করলো,
–আমরা কোথায় এসেছি শিহাব?”
হঠাৎই শিহাব বিন্দুর চোখজোড়া শক্ত কাপড় দ্বারা বেঁধে ফেললো।

চলবে,,,,,,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here