শ্রেয়সী পর্ব ৮

0
273

#শ্রেয়সী
#পর্ব_৮
#লেখনীতে_নাদিয়া_সিনহা

আমি স্তব্ধ হয়ে অন্ধকারে আবছা অব্যয়ের থাকা মুখশ্রীর দিকে দৃষ্টি আবদ্ধ করি। বেশ বুঝতে পারছি। তার ওষ্ঠে পূর্বের সেই বক্র হাসি। দ্রুত নেমে যায় সে। বরফের ন্যায় সর্বাঙ্গ জমে গেছে আমার। থেকে থেকে কেঁপে কেঁপে উঠছি। তার বক্র হাসির দরুন কেমন যেনো অনুভূতি অনুভব হচ্ছে। যার দরুন আমার এত ঘোর লাগা কাজ করছে। সে কি শুধুই মজার ছলে বলেছে? নাকি সত্যি বলেছে। আমার অনুভূতি রাজ্যে রাজত্ব করতে কি সত্যি কোনো শাসক চলে এসেছে?
এ কেমন অনুভূতি? এই অনুভূতির সাথে নতুন পরিচায়। জানা নেই আমার কি নাম এই অনুভূতির। কেবল জানি নতুন অনুভূতির সঙ্গে সন্ধি ঘটতে যাচ্ছে। প্রণয়ের সন্ধি!
না প্রণয় জীবনে আসতে দেওয়া যাবে না। প্রণয় আমার জন্য নিষিদ্ধ!
____________________

কলেজের গেট দিয়ে ঢোকার সঙ্গে সঙ্গে কেউ নাম ধরে ডেকে উঠে। আশেপাশে ভালো করে তাকাতেই খেয়াল করলাম ডাকটা আরাবীর বন্ধুমহল থেকেই ভেসে আসছে। সেদিকে দৃষ্টিপাত হতেই সাজ্জাদ ভাই হাতের ইশারায় ডেকে পাঠায়। অনিচ্ছা সত্ত্বেও সেদিকেই পা বাড়াই।
আরাবী সহ তাদের পুরো বন্ধুমহল ওখানে উপস্থিত। কাছাকাছি আসতেই সাজ্জাদ ভাই বলে,
-“আজ গরম বোধ হয় একটু বেশিই পরেছে। না আশেপাশে জলন্ত অগ্নি কান্ড থাকলে যা হয় আর কি।”

শার্টের কলার ঠিক করতে করতে কথাটা বলেন। এদিকে রোদ্দু রাগে ফোঁসফোঁস করছে। সে খুব ভালো করেই বুঝতে পারছে তাকে দেখেই এমন ঠাট্টা-তামাশা করছে এরা। আরাবী বসা থেকে উঠে আমার সম্মুখে এসে দাঁড়ায়। আবারও সেই বক্র হাসি ওষ্ঠে ঝুলিয়ে বলে,
-“প্রেয়সী আজ কে তোমাকে কি পানিশমেন্ট দিব?বলো?”

রোদ্দুর মেজাজ খারাপ থাকায় সে আরাবীর মুখের উপর জবাব দেয়,
-“ভীতুর ডিম। দোষ আমি করেছি শাস্তি আমাকে দে। শ্রেয়ু কে কেনো টানছিস?”

পাশ থেকে সাজ্জাদ ভাই বলে,
-“কি অ’স’ভ্য মেয়ে৷ সিনিয়র দের তুইতোকারি করছে। কত বড় সাহস।”

-“সাহসের কি দেখলি? আমি শ্রেয়ু নই। যে চুপ করে থাকব।”

-“তাহলে ম্যাডাম চলেন আপনাকে ছোটখাটো একটা শাস্তি দেওয়া যাক। চলুন আমার সাথে।”

সাজ্জাদ ভাই রোদ্দুর হাত টানতে টানতে নিয়ে যায়। আমি আঁটকাতে গিয়ে থমকে যাই। কেননা আমার ডান হাত খুব শক্ত করে চেপে ধরে রেখেছিলো আরাবী। রোদ্দু কে নিয়ে যাওয়ার পর। আরাবী আমার হাত ধরে জোরে টান দেয়। যার দরুন আমি তার অনেকটা কাছে চলে আসি। তবে দ্রুত আবার তার থেকে নিজেকে সরিয়ে নেই। আরাবী তার স্কন্ধ বাকিয়ে তীক্ষ্ণ চোখে পরখ করে। অতঃপর আমার হাত ধরে হাঁটা শুরু করে।

-“কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন? ছাড়ুন আমার হাত। আমি রোদ্দুর কাছে যাব।”

-“চুপ করে থাকলে তোমার শাস্তি কম হবে। যত বেশি কথা বলবে শাস্তি ততো বেশি বাড়বে।”

-“যা ইচ্ছে শাস্তি দিন তবুও আমাকে ছাড়ুন।”

আরাবী হাঁটা থামিয়ে পিছনে মুড়ে আমার অক্ষিদ্বয়ে তার গভীর দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বলে,
-“ছেড়ে দেওয়ার জন্য ধরিনি। তুমি চাও বা না চাও এই হাত আরাবী আর ছাড়বে না। কখনও না।”

আরাবও সেই অজানা শিহরণ। এই অনুভূতির নাম কি? আমার জানা নেই। পায়ে তাল মিলিয়ে আরাবী সাথে হাঁটছি শুধু। গন্তব্য আমার অজানা!
_______________

প্রায় ঘন্টাখানেক যাবত নির্জন নিস্তব্ধ নদীর ধারে বসে আছি। আমার সম্মুখে বসে আছে আরাবী। তার দৃষ্টি আমাতেই আবদ্ধ। যেনো তার চোখের পলক ফেলা বারণ। খানিক সাহস সঞ্চয় করে তাকে প্রশ্ন করি,

-“আমরা আর কতক্ষণ এখানে বসে থাকবো?”

-“যতক্ষণ না আমার দেখা শেষ হয়।”

আমি ঢোক গিলে প্রশ্ন করি,
-“এভাবে তাকিয়ে আছেন কেনো?”

-“জানা নেই।”

-“আমি এখানে আর থাকবো না।”

ব্যাস্ত কন্ঠে আরাবী বলে,
-“কেনো খারাপ লাগছে? কিছু খাবে? পানি খাবে?”

-“না! আমার ওসব কিচ্ছু চাই না। আমি হলে ফিরব।”

-“আমাকে ভয় করছে? বিশ্বাস হচ্ছে না?”

-“না সেরকম কিছু না। আমাকে দিয়ে আসুন প্লিজ।”

-“আসব। তার আগে তোমাকে ছোট্ট একটা জিনিস দেখাই। খুব ভালো করেই দেখো কেমন।”

কথাটা বলেই ফোনে কিছু একটা করছে। আমি অপলক তাকিয়ে রই বক্র হাসির যুবকের পানে। যার ওষ্ঠের বক্র হাসিটা আমার প্রতিটা শিহরণের কারণ। মানুষটার গায়ের রঙ্গ শ্যামবর্ণের নয়। আবার শুভ্র বর্ণেরও নয়। শুভ্ররাঙ্গা শরীরে হালকা হলদেটে আভা। ওষ্ঠদ্বয় হালকা গোলাপি বলা যায়। ছোট ছোট তীক্ষ্ণ অক্ষিদ্বয়। গাল ভর্তি খোঁচ খোঁচা চাপ দাঁড়ি। পরনে কালো রঙ্গের টিশার্ট। সব মিলিয়ে তাকে অপূর্ব সুন্দর বলে মনে হচ্ছে আমার কাছে। নিসন্দেহে সে সুঠাম দেহের অধিকারী সুদর্শন যুবক। যে কেউ তার প্রতি আকর্ষিত হবে নিসন্দেহে। তাকে পরখ করতে করতে কখন যে ভাবনার জগতে পদচারণ শুরু করে দিয়েছি। তা ভ্রুণাক্ষরেও টের পাইনি।
-“এই যে প্রেয়সী! কি দেখছো? তুমি এভাবে আমার দিকে তাকিয়ে থাকলে আমার বুঝি লজ্জা করে না?”

কথাটা বলেই দুষ্ট হাসি হাসে আরাবী। আমি বেশ লজ্জায় পরে যাই৷ নিজের লজ্জা আড়াল করতে বসা থেকে দাঁড়িয়ে বলি,
-“আমি আর এখানে থাকব না। আপনার থাকার ইচ্ছে হলে থাকুন।”

-“তুমি যদি চলে যাও তাহলে তোমার বান্ধবী রোদ্রসীর অবস্থা খুব খারাপ হয়ে যাবে।”

আরাবী হাতে থাকা ফোনটা আমার সম্মুখে এনে ধরে। সেখানে দেখা যাচ্ছে রোদ্দুকে জোর করে ঝাল খাবার খাওয়াচ্ছে। রোদ্দু কখনও ঝাল খেতে পারে না। আর আজ ওকে এভাবে শাস্তি দিচ্ছে। আমার আর সহ্য হয় না। টপটপ করে জল গড়িয়ে পরে চোখ থেকে। আরাবী আমাকে কাঁদতে দেখে
বিচলিত হয়ে বলে,
-“কাঁদছ কেনো প্রেয়সী? কি হয়েছে?”

আমার চোখের পানি বাধ মানছেই না। আমার জন্য রোদ্দু এত শাস্তি পাচ্ছে। আমার সহ্য হচ্ছে না। আরাবী ফোন পকেটে পুড়ে আমার সন্নিকটে এসে তার বৃদ্ধা আঙ্গুল দিয়ে সযত্নে আমার চোখে জল মুছিয়ে দিচ্ছে।
-“কাঁদছ কেনো বলো? তুমি যদি না বলো তাহলে রোদ্রসী কে আরো শাস্তি দেওয়া হবে।”

-“না প্লিজ ওকে আর কিছু করবেন না। আপনি যা বলবেন আমি সব শুনব, সব মেনে নিব। তবুও রোদ্দু কে শাস্তি দিবেন না। ও না একদম ঝাল খেতে পারে না। কখনও খায়ও না। ওর ঝালে সমস্যা হয়। প্লিজ আপনি ওদের বলুন না ওকে ঔষধ আর পানি খাওয়াতে।”

কাঁদতে কাঁদতে হেঁচকি উঠে যায় আমার। আরাবী আমার দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে ফোন করে কাউকে। কথা বলা শেষ হলে আমার দিকে তাকিয়ে বলে
-“রোদ্রসী কে আর শাস্তি দিব না। এবার কান্না থামাও।”

আমি নাক টেনে জোরে জোরে শ্বাস নিচ্ছি। আরাবী আমার দিকে তাকিয়ে আছে। সেই একই ভাবে পলকহীন। আচমকা সে বলে,
-“প্রেয়াসী!”

-“হ্যাঁ।”

ওষ্ঠদ্বয় প্রসারিত করে স্নিগ্ধ হাসে আরাবী।
-“কিছু না। চলো তোমাকে হলে পৌঁছে দিয়ে আসি।”
আমি মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ সম্মতি প্রদান করি। আরাবী আমার হাত ধরে হাঁটাছে। আর আমি অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে।
_____________

-“ও বাবা গো, ও মা গো। মরে গেলাম। ব’জ্জা’তে’র হাড্ডি গুলো আমাকে আজ কি ঝালটাই না খাওয়ালো। যদি কোনো দিন হাতের কাছে পাই। একেকটার মুখের নকশা যদি না পালটেছি আমিও রোদ্দু দ্যা রৌদ্রসী নই। হ্যাঁ!

বিছানায় বসে পেটে হাত চেপে ধরে হাহুতাশ করছে রোদ্দু। আমি পাশে বসে চুপচাপ ওর কথা শুনছি। অন্তরালে তীব্র অপরাধবোধ কাজ করছে। আমার জন্যই তো আজ রোদ্দুর এই অবস্থা।
-“রোদ্দু সরি। আমার জন্যই আজ এমনটা হলো।”

-“কি যা তা বলছিস। তোর জন্য কেনো হবে? তুই তো ওখানে ছিলিসও না।”

-“আমার জন্য ওরা তোকে অত্যাচার করেছে। ঝাল খাইয়েছে। তাই।”

-“তোর জন্য ঝাল খেয়েছি কে বললো?

-“কেনো আরাবী।”

-“কি ব’জ্জা’ত দেখছিস? তোর সাথে থাকার জন্য একটা বাহানা দিয়েছে।”

-“মানে? বুঝিয়ে বল।”

-“সাজ্জাদের সাথে ঝগড়া করার এক পর্যায় সে আমাকে বলে আমি নাকি ভীতু৷ আমিও ডায়লগ দিয়ে বললাম আমি সবচেয়ে সাহসী। তখনই শুরু হলো ঝাল খাওয়া প্রতিযোগিতা।”

-“ভিডিও করেছে কে?”

-“জানি না। সর এখান থেকে আমার পেট জ্বলছে আর গুড়গুড় করছে।”

-” আমি তোর জন্য লেবুর শরবত নিয়ে আসি।”

হলের রান্না ঘরে দাঁড়িয়ে ভাবছি আরাবী ছেলেটা খারাপ নয়। কারো ক্ষতি করে না এই যে আজ আমাকে একা নির্জন নিস্তব্ধ জায়গায় নিয়ে গেলে তবুও চেয়ে থাকাহীন কিচ্ছু করেনি। নিসন্দেহে তাকে বিশ্বাস করা যায়।

ভোরে তীর্যক সূর্যের আলো চোখে পরতেই ঘুম ভেঙ্গে যায় আমার। কেনো জানি আজ ঘুম থেকে উঠতে একদমই ইচ্ছে করছে না। বাড়ি থেকে এখানে আসার পর এই বোধ হয় প্রশান্তির ঘুম ছিলো। সেই করাণটা আমার অজানা। হয়তো জানি! তবে প্রকাশ করতে একদম ইচ্ছুক নই। থকুক না কিছু অনুভূতি অন্তরালে নিজের মত করে।
হঠাৎ দরজার করাঘাত ধ্যান ভাঙ্গে আমার। আড়মোড়া ভেঙে বিছানা থেকে উঠে পা বাড়াই দরজার দিকে। দরজা খুলে দেখি হল এ্যাসিস্টেন্ড দাঁড়িয়ে আছে।
-“তোমার সাথে কেউ দেখা করতে এসেছে। গেস্ট রুমে চলো।”

-“কে এসেছে?”

-“তা জানি না। মনে হয় তোমার আত্মীয়।”

-“আচ্ছা আপনি যান আমি চোখ-মুখ ধুয়ে আসছি।”

-“আচ্ছা জলদি করো।”

কথাটা বলেই তিনি প্রস্থান করেন। আমার মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে হাজার চিন্তা। কে দেখা করতে আসতে পারে। কারো তো আসার কথা নয় তাও এত ভোর বেলায়। হাজার চিন্তা মাঝে এক অনাকাঙ্ক্ষিত প্রশ্নের উত্তর আবিষ্কার করে আমার মস্তিষ্ক। তবে কি আরাবী? না না! আর দেরি করা যাবে না এক্ষুনি গিয়ে দেখতে হবে কে এসেছে।
আমি দ্রুত ফ্রেস হয়ে দৌড় দিলাম গেস্ট রুমের পথে।
গেস্ট রুমের কাছে আসতেই দেখি কোনো এক যুবক শুভ্র রাঙা শার্ট পরিহিত। ফোনে কারো সাথে কথা বলছে। দেখে বোঝাই যাচ্ছে তার ফোনে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। আমি কাঁপা কাঁপা পায়ে গুটিসুটি মেরে আগন্তুকের সম্মুখে যাই। তার দিকে দৃষ্টি আবদ্ধ করতেই চমকে উঠি।
কারণ সে আর কেউ নয়। আমার তনুভ ভাইয়া। নিজের উপর প্রচন্ড রাগ হচ্ছিলো। কত কি উল্টোপাল্টা ভেবে এসেছি। তনুফ ভাইয়া আমাকে দেখা মাত্র ফোন রেখে উঠে দাঁড়ায়। দ্রুত পায়ে এসে আমাকে জড়িয়ে ধরে বলে,
-“কত দিন পর দেখলাম তোকে। জানিস কত মিস করি। তবুও নিরুপায়।”

নিজে বিস্ময়তা দমিয়ে ভাইয়া কে প্রশ্ন করি,
-“তুমি এই ভোর সকালে এলে যে?”

-“একটা গুড নিউজ আছে।”

-“কি নিউজ?”

-“তোদের বাড়ি নিয়ে যাবো।”

ভাইয়ার বলা বাক্য কর্ণপাত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে জোরে চিৎকার করে উঠি। ভাইয়া আমার মাথাটা তার বুকে চেপে ধরে বলে,
-“তুই আসার পর বাড়িটা একদম খালি হয়ে গেছে। কেউ হাসে না। কেউ খুশি না।”

-“সত্যি আজ বাড়ি নিয়ে যাবে?”

তনুফ ভাইয়া মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ সূচক সম্মতি দেয়। আমি ভাইয়া কে দাঁড়াতে বলেই দৌড়ে রুমের মধ্যে চলে যাই। প্রথমেই রোদ্দু কে ডাকি। তবে তার কোনো সাড়াশব্দ নেই। সে ঘুমোচ্ছে অঘোরে নিজের মতো করে। আমি নিজের ব্যাগ পত্র গুছানো কাজে লেগে পরি। যত দ্রুত সম্ভব রেডি হতে হবে। ভাবনার মাঝে আবার রোদ্দুকে ডাকলাম।

-“রোদ্দু উঠ। আমাদের রেডি হতে হবে।”

-“কয়টা বাজে শ্রেয়ু? এত তাড়াতাড়ি কলেজ টাইম হয়ে গেলো?”

-“আরে না রোদ্দু কলেজের সময় এখনও হয়নি। আর আমরা আজ কলেজেও যাবো না।”

-“কিন্তু কেনো শ্রেয়ু?”

-“কারণ আমরা বাড়ি যাচ্ছি।”

-“ধূর এই জন্য আমার এত সাধের ঘুম নষ্ট করে দিলি। কেনো করলি…..”

লাফিয়ে উঠে বসে রোদ্দু। আমার দিকে দৃষ্টি আবদ্ধ করপ বলে,
-“কোন বাড়ি যাবো আমরা?”

-“তোর শশুর বাড়ি।”

-“হেঁয়ালি করিস না সত্যি করে বল।”

-“তোর বাড়ি কয়টা?’

-” একটা৷ কেনো?”

-” তাহলে আর কোন বাড়ি যাওয়ার কথা বলব গাধা?”

-” ভেবেছি নতুন সংসার পেয়েছিস আমার জন্য সেই বাড়িই নিয়ে যাবি।”

-“চুপ কর তো সব সময় বাজে কথা। যা গিয়ে রেডি হয়েনে। নিচে তনুফ ভাইয়া অপেক্ষা করছে।”

-“কি বলিস? সত্যি বাড়ি যাবো?”

-“হ্যাঁ! তোর কি মনে হয় মিথ্যা?

-“আমি তো ভেবেছি আমাকে ঘুম থেকে উঠানোর জন্য তুই মিথ্যা বলছিস। এই শ্রেয়ু সত্যি বাড়ি যাবো বল না?”

-“বিশ্বাস না হলে নিচে গিয়ে দেখে আয়। তনুফ ভাইয়া অপেক্ষা করছে।”

রোদ্দু সত্যি সত্যি নিচে গেছে দেখার জন্য। কিছুক্ষণ পর দৌড়ে এসে আমাকে জড়িয়ে ধরে চিৎকার করে উঠে।
-“কত দিন পর বাড়ি যাব। আমি তো অনেক অনেক এক্সাইটেড।”

-“তাড়াতাড়ি ব্যাগ গুছিয়ে নে।”

সারা ঘরে ছোটাছুটি করে ব্যাগ গোছাচ্ছে রোদ্দু। ওর খুশি সবচেয়ে বেশি। বেচারি আমার জন্য ওকে এখানে থাকতে হচ্ছে। পরিবার থেকে দূরে। খুব মায়া হয় ওর জন্য।
__________________

আমি রোদ্দু আর তনুফ ভাইয়া ট্রেনে বসে আছি। রোদ্দু এটা ওটা বলছে আমি ‘হু’ ‘হা’ জবাব দিচ্ছি। কেনো জানি না কথা বলতে ইচ্ছে হচ্ছে না বক্ষস্থলে কেমন ফাঁকা ফাঁকা লাগছে। মনে হচ্ছে কিছু ফেলে যাচ্ছি। কিন্তু কি? তা কিছুতেই বুঝতে পারছি না। আমার ভাবনার মাঝে তনুফ ভাইয়া গর্জন দিয়ে ‘চুপ’ করতে বলে। পাশে তাকিয়ে দেখি রোদ্দু কাঁচুমাচু হয়ে বসে আছে। আর ভাইয়া বিরক্তিকর দৃষ্টি নিক্ষেপ করে আছে রোদ্দুর পানে। নীরবতা ভেঙ্গে তনুফ ভাইয়া বললো,
-“এত পটর পটর করিস কেনো? একটু চুপ থাকতে পারিস না? এই তোর মুখ ব্যথা হয় না? আজাইরা ফালতু।”

-“আপনার সমস্যা হলে আপনি কান বন্ধ করে রাখুন আমার মুখ কেনো বন্ধ করতে বলছেন?”

-“আবার কথা বলে। দিব ঠাটিয়ে এক চ’ড়।”

নীরবতা ভেঙ্গে আমি বলি,
-“ভাইয়া তুমি রোদ্দুর উপর রাগ করো না। তুমি তো জানো রোদ্দু চুপ থাকতে পারে না।”

বিরক্ত হয়ে ভাইয়া বসা থেকে উঠে কোথাও চলে যায় পাশ থেকে রোদ্দু রাগে ফুসতে ফুসতে বলে,
-“দেখলি তোর ভাই কেমন অ’স’ভ্য, ব’জ্জা’ত। দোয়া দিলাম জীবনেও এর কপালে বউ জুটবে না।”

-“তোর কাছে তো দুনিয়ার সব ছেলেই অ’স’ভ্য এ আর নতুন কি? আর কি বললি? ভাইয়া বউ পাবে না? দেখ তোর কপালে ভাইয়ার নাম লেখা আছে কি না?”

-“কক্ষণও না।”

আমি মৃদু হেসে জানালার বাইরে দৃষ্টি আবদ্ধ করি। মনটা কেমন হাহাকার করে উঠছে। কতদিন পর বাড়ি যাচ্ছি খুশি হয়েও হতে পারছি না। কেনো? উত্তরটা ঠিক ধরছে পারছি না।

~চলবে……

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here