শ্রেয়সী পর্ব ২

0
519

#শ্রেয়সী
#পর্ব_২
#লেখনীতে_নাদিয়া_সিনহা

তীব্র ঝড়েরবেগে বাড়ী উদ্দেশ্যে রওয়ানা দেয় আরাবী। আসার পথে শাহীর কে বলে দেয় বাইক নিয়ে চলে আসতে। শাহীরের অনিচ্ছা থাকা সত্ত্বেও জোর করে গ্রীন ল্যান্ড সিটিতে আসে। শাহীর আরাবীর বেস্ট ফ্রেন্ড। ছোট থেকে এক সাথে বড় হয়েছে। স্কুল, কলেজ, ইউনিভার্সিটি সব জায়গায় এক সাথে ছিলো। এমন কি দুজনের পছন্দও এক। শাহীর আসার সাথে সাথে আরাবী বাইকে উঠে বসে বলে,

-“যত দ্রুত সম্ভব হাই স্পিডে বাইক চালাবি।”

-“কিন্তু দোস্ত এত দ্রুত চালালে এ্যাক্সিডেন্ট হওয়ার সম্ভবনা বেশি। আর এটা মেইন রাস্তা হলে না হয় চলানো যেতো।”

-“যেটা বলছে সেটা কর। না হয় আমাকেই বাইক চালাতে হবে। তুই নেমে দাঁড়া।”

-“পাগল হয়ে গেছিস তুই? নিজের দিকে তাকিয়ে দেখ বাইক চালানোর অবস্থায় আছিস তুই? আর কি এমন কাজ যে বাসায় যাওয়ার জন্য তোর এত তাড়া? আর তোর অবস্থা এমন কেনো?”

-“এত কথা কিসের? তুই চুপচাপ বাইন স্টার্ট দে।”

-“এখানেই বা কেনো এসেছিলি? তোর হাতে ওটা কি?”

-“হাতে কি ভালো করেই দেখতে পারছিস। বাকি কথা বাসায় পৌঁছে বলব।”

শাহীর উপায় না পেয়ে বাইক স্টার্ট দেয়। আরাবীর পাগলামি উম্মাদের ন্যায় বাড়তে থাকে। বার বার শাহীর কে বলছে বাইক আরো দ্রুত চালা। শাহীরও নিরুপায় বিরক্ত হওয়া সত্ত্বেও দ্রুত বাইক চালাচ্ছে। প্রায় চল্লিশ মিনিটের রাস্তা আরাবী দশ মিনিটে পার করেছে। এই দশ মিনিট তার কাছে অনেকটা সময়। বাড়ির সদর দরজার সম্মুখে আসতে না আসতেই বাইক থেকে লাফিয়ে নেমে পরে আরাবী। নিজের সর্বশক্তি লাগিয়ে দৌড়ে ভিতরে প্রবেশ করে। শাহীর কোনো মতে বাইকটা পার্ক করে সেও আরাবীর পিছু দৌড়ে আসে।
আরাবী ফ্লাটের দরজায় এসে থমকে যায়। মস্তিষ্ক উদয় হয় নতুন প্রশ্নের চাবি কোথায়? হন্যে হয়ে চাবি খুঁজতে লাগে। শাহীর ফ্ল্যাটের দরজার কাছাকাছি আসতেই দেখতে পায় আরাবীর উম্মাদনা। সিঁড়ি ভেঙে দ্রুত এসে আবারীর বাহু ধরে হেঁচকা টান দেয়৷ আচমকা কারো অপ্রস্তুত ধাক্কায় টাল সামলাতে না পেরে হুমড়ি খেয়ে সিঁড়ি হাতলে ধাক্কা খায় আরাবী। ধাক্কা লাগার সাথে সাথে ডায়েরিটা নিচে পরে যায়। হিংস্র সিংহের ন্যায় গর্জে উঠে আরাবী। তীব্র গর্জনে পিছনে মুড়ে এক হাতে শাহীরের শার্টের কলার ধরে এবং অন্য হাত মুঠো করে শাহীরের মুখশ্রীতে মুষ্টিবদ্ধ করে উদ্যত হয় মারা জন্য। চিৎকার করে বলে,

-“কি করলি এটা? তোর জন্য যদি ডায়রিটার কিছু হয় তোকে আজ এখানেই শেষ করে দিব শাহীর।”

শাহীর ভয়ে ঢোক গিলে নিজেকে সামলে প্রশ্ন করে,
-“কি এমন আছে ওই ডায়েরিতে যে তোর কাছে সেটা অমূল্যবান।”

-“তার কৈফিয়ত কি আমার তোকে দিতে হবে? ভুলে যাস না শাহীর আমি কে?”

আরাবীর কথায় শাহীর অপমানিত বোধ করে। নিজের রাগ সংযোগ করতে না পেরে চিৎকার করে বলে,
-“আমি ছোট ঘরের সন্তান বলে আমাকে অপমান করছিস?”

শাহীরের কথায় আরাবী কিছুটা দমে যায়। অতঃপর শাহীরের কলার ছেড়ে দুই কদম পিছিয়ে দাঁড়ায় করুন কন্ঠে বলে,
-“দোস্ত আমাকে মাফ করে দিস। ডায়েরিটা শ্রেয়সীর। শ্রেয়সীর প্রতিটা জিনিস আমার কাছে অমূল্য তুই তো জানিস। আর ওর ডায়েরি যেখানে ওর জীবনের ছোট থেকে ছোট বিষয় গুলোও লেখা থাকে। সেই ডায়েরিটা আমি কি করে হরাই বল?”

অজানা এক আতংকে কেঁপে উঠে শাহীর। অক্ষিদ্বয় কিঞ্চিৎ বৃহৎ আকার ধারণ করে। ললাটে স্পষ্ট ফুটে উঠছে বিন্দু বিন্দু ঘামের শিশির। জিভ দিয়ে বারংবার ওষ্ঠদ্বয় সিক্ত করছে। আরাবীর শকুনি চোখ জোড়া তা এড়ায়নি। তীক্ষ্ণ দৃষ্টি দিয়ে কিয়ৎক্ষন পরখ করে শাহীর কে।

-“এভাবে ঘামছিস কেনো শাহীর? কী জন্য তোর এত ভয় হচ্ছে?”

আরাবীর আচমকা করা প্রশ্ন শাহীর বেশ ঘাবড়ে যায়। আমতা আমতা করে বলে,
-“কিসের ভয়? তোর সাথে এতক্ষণ ধস্তাধস্তি করেছি তাই ঘামছি। এই আর কি।”

আরাবী কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে সিঁড়ি বেয়ে নিচে নামতে উদ্যত হয়,
-“কোথায় যাচ্ছিস?”

-“ডায়েরিটা আনতে।”

-“আরাবী শোন ওই বিষাক্ত অতীতটায় আর ফিরে যাস না। শ্রেয়সীর জন্য তোকে অনেক কষ্ট পোহাতে হয়েছে। শ্রেয়সী ওর মতো ভালো আছে। শুধু শুধু শ্রেয়সী নামক মরীচিকা পিছু ছুটিস না। নতুন করে জীবন শুরু কর।”

-“শাহীর তুই আমাকে এই কথা বলছিস? আমার বেস্ট ফ্রেন্ড হয়ে। তুই জানিস না শ্রেয়সী আমার জন্য কি?”

-“দেখ আমি সব জানি। আর তোকে কাছ থেকে শেষ হয়ে যেতেও দেখেছি। আবার তুই ওই বিষাক্ত অতীতটা বর্তমানে এনে ভবিষ্যৎ অন্ধকার করিস না।”

-“আমি কি করবো না করবো তা তোকে ভাবতে হবে না। আর কি বললি? ভবিষ্যৎ অন্ধকার না করতে? আমার বর্তমান ভবিষ্যৎ শ্রেয়সী বিহীন অন্ধকার।”

-“আমার কথাটা বোঝার চেষ্টা তো কর। শ্রেয়সী অন্য কারো……”

-“আমি আর কিছু শুনতে চাই না। তুই বাড়ি চলে যা।”

কথাটা বলে আরাবী দ্রুত পায়ে সিঁড়ি বেয়ে নিচে নেমে যায়। শাহীরের সর্বাঙ্গ এক অজানা আতংকে কেঁপে কেঁপে উঠছে। তারপর মুখশ্রীতে স্পষ্ট ভয়ের ছাপ।

ডায়েরিটা হাতে নিয়ে হাঁক ছেড়ে দারওয়ান কে ডেকে ফ্ল্যাটের অতিরিক্ত চাবি নিয়ে দ্রুত সিঁড়ি বেয়ে উঠে। শাহীর আগের মতোই স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে। আরাবী শাহীর কে পাশ কাটিয়ে ফ্ল্যাটের দরজা খুলে ভিতরে প্রবেশ করে। যেই না শাহীর ফ্ল্যাটে ঢুকবে ওমনি আরাবী শাহীরের মুখের উপর দরজা বন্ধ করে দেয়।

আরাবী বিদুৎ-এর বেগে নিজের ঘরে প্রবেশ করে। ঘরে এসেই সে হন্তদন্ত হয়ে পরে ডাইরিটা শুকানোর জন্য। কি উপায়ে শুকাবে ডায়েরিটা। ডায়েরি যতদ্রুত শুকাবে আরাবী ততো দ্রুত শ্রেয়সীর কাছে যেতে পারবে। তার শ্রেয়সী যে ভালো নেই। তাকে তো দ্রুত শ্রেয়সীর কাছে যেতে হবে। আরাবী শূন্য মস্তিষ্ক কি করবে? ভেবে পায় না। চুলার আগুনের উপর নিয়ে ডায়েরিটা ধরে। আগুনের উত্তাপে ডায়েরিটা শুকানের চেষ্টা চালাতে থাকে। তবে লাভ বিশেষ হচ্ছে বলে মনে হয় না তার কাছে। তাই সে ছুটে রুমে চলে আসে৷ ডায়েরিটা ঠিক সিলিংফ্যানের নিচে টেবিলে রাখে। সর্বোচ্চ গতিতে সিলিংফ্যানে চালিয়ে দেয় আরাবী। পাশে ছোট একটা ফ্যানও চালিয়ে দেয়। যেনো ডায়েরিটা অতি দ্রুত শুকিয়ে যায়।

ডায়েরিটা শুকাতে বেশ খানিকটা সময় লাগে। কতটা সময় ব্যায় হয় তা আরাবীর অজানা। তবুও পুরোপুরি শুকায়নি। এখনও পুরোটা ডায়েরি সেঁতসেঁত ভেজা। আরাবী খুব সাবধানে ডায়েরিটা খুলে। ডায়েরির পাতার লেখা গুলো একটার সাথে আরেকটা পাতায় লেগে গেছে। লেখা গুলো বুঝতে খানিক বেগ পেতে হয় আরাবীর। তবুও প্রিয়তমার হাতে শেষ স্মৃতি। গুটিগুটি অক্ষরে লেখা গুলো মুক্তার ন্যায় ঠেকছে আরাবীর অক্ষিজোড়ায়। আরাবীর অক্ষিদ্বয় টলমল করে উঠে। আরাবী দীর্ঘশ্বাস টানে। এই ডায়েরিটা শ্রেয়সীর প্রানপ্রিয়। এই ডায়েরি শ্রেয়সী এবং আরাবীর প্রনয়ের সন্ধিক্ষণে সুন্দরতম মুহূর্তের সাক্ষী। শ্রেয়সী তার সকল অনুভূতি ডায়েরিতে টুকে রাখতো৷ শ্রেয়সী কখনও ডায়েরিটা অন্য কাউকে ধরতে দিতো না। এমনকি তার বেস্টফ্রেন্ড রৌদ্রসী কেও না। এই নিয়ে রৌদ্রসী শ্রেয়সীর সাথে প্রচুর ঝগড়া করতো। রৌদ্রসী প্রতিবার রাগ করে শ্রেয়সীর সাথে কথা বলা বন্ধ করে দিতো। আর শ্রেয়সীও সব সময় রৌদ্রসীর রাগ ভাঙ্গাত। শ্রেয়সী যখন রৌদ্রসীর মুখশ্রীর সম্মুখে গিয়ে বলতো,”বা রে তুই আমার ডায়রিটা পড়লে আমার লজ্জা করে না বুঝি? জানিস কেমন লজ্জা? একদম বাসর রাতে লাল টুকটুকে বউরা যেমন লজ্জা পায় ঠিক তেমন লজ্জা।” বলেই খিলখিল করে হেসে দিতো শ্রেয়সী। আর রৌদ্রসী শ্রেয়সীর কান্ডে হেসে দিতো।
অতীতের ভাবনা থেকে বেরিয়ে আসে আরাবী। রঙ্গিন দিন গুলো পিছনে ফেলে এসেছে সে। জীবন এতটা বিষাদে ভরা বিষাক্ততায় রূপ নিবে তা আরাবী কোনো দিন ভাবেনি। যে ডায়রিটা একদিন আরাবী হাতে নেওয়ায় শ্রেয়সী প্রচন্ড রাগ করতো আজ সে ডায়রি শ্রেয়সী ফেলে দিয়েছে নোংরা পুকুর জলে। আরাবী ঠোঁট কোনে বাঁকা হাসি তা অপূর্নতার ভরা বিষাদময় রঙ্গিন অতীতের কথা মনে পরে। যেদিন প্রথম আরাবী শ্রেয়সীর ডায়রিটা নিজ হাতে স্পর্শ করেছিলো। আর শ্রেয়সী জলন্ত আগুনের ন্যায় জ্বলে উঠে ছিলো।
________________

-“ডেকেছেন কেনো?”

-“প্রেমালাপ করতে।”

-“আপনার মতো আজাইরা না। আমার কত কাজ জানেন? এভাবে ডেকে পাঠাবেন না একদম।”

-“তোমার সাহস দিন দিন বেড়ে যাচ্ছে। তার জন্য ডোজ দিতে হবে। কি বলো?”

আরাবীর কথায় শ্রেয়সী খানিক ঘাবড়ে যায়। কিন্তু শ্রেয়সী মন প্রান দিয়ে বিশ্বাস করে ভয় পেলে প্রকাশ করতে নেই তাহলে বিপরীত প্রান্তের মানুষ আরো সাহস পাবে ভয় দেখানোর। তাই নিজের আত্মবিশ্বাস বজায় দেখে শ্রেয়সী বলে,
-“কেনো? কি এমন করেছি আমি? যে শাস্তি পেতে হবে?”

আরাবী শ্রেয়সীর সম্মুখে দাঁড়িয়ে বলে,
-“আজাইরা কাকে বললে? আর তুমি পুচকি মেয়ে একটা তোমার আবার কি কাজ?”

শ্রেয়সী কাঁদো কাঁদো মুখ করে বলে,
-“দেখুন আমিই আজাইরা আপনি ভালো আমার কোনো কাজ নেই। কিন্তু আমি পুচকি নই। আপনি জানেন আমার বান্ধবীর একটা ছোট বাচ্চা আছে। তাও দুবছরের।”

ভ্রুদ্বয় কুঁচকে আরাবী প্রশ্ন করে,
-“এখন কি তোমারও বাচ্চা চাই?”

শ্রেয়সী ভ্যাঁবাচ্যাঁকা খেয়ে যায়। বড় বড় চোখ করে আরাবীর পানে দৃষ্টি আবদ্ধ করে রেখেছে শ্রেয়সী। অতঃপর নিজের বিষ্ময়তা কা’টিয়ে বলে,
-“ছিঃছিঃ! আমার কেনো বাচ্চা লাগবে? আমি নিজেই এখনও ছোট বাচ্চা।”

-“তাহলে? তুমি তো পুচকি এটা স্বীকার করতে সমস্যা কোথায়?”

শ্রেয়সী ওষ্টদ্বয় উল্টো করে কাঁদো কাঁদো মুখ করে দাঁড়ি থেকে তেজিস্বরে বলে,
-“ডেকেছেন কেনো?”

-“বললাম না প্রেমালাপ করতে। চুপচাপ দাঁড়িয়ে থেকে আমার সাথে প্রেমালাপ করবে। তোমারতো আবার প্রেমাবেগ নেই।”

বলেই হাসতে শুরু করে আরাবী। শ্রেয়সী রাগে, দুঃখে স্থান প্রস্থান করতে নেয় ওমনি আরাবী শ্রেয়সীর হাত ধরে টেনে তার সম্মুখে এনে দাঁড় করায়।

-“আমি বলেছি যেতে?”

শ্রেয়সী মাথা নাড়িয়ে না সম্মতি বোঝায়।
-“তাহলে আমার অনুমতি ব্যাতীত এখান থেকে চলে যাওয়ার স্পর্ধা হয় কি করে?”

-“শ্রেয়ু ম্যাম তোকে ডাকছে চল তাড়াতাড়ি।”

রৌদ্রসীর আগমনে শ্রেয়সী খানিকটা সাহস পায়। আর একটু পর আসলেই হয়তো শ্রেয়সীর প্রান যায় যায় অবস্থা হতো। আরাবী আগের ন্যায় শ্রেয়সীর বাহু ধরে দাঁড়িয়ে। শ্রেয়সী থেকে দৃষ্টি সরিয়ে রৌদ্রসীর মুখশ্রীতে দৃষ্টি আবদ্ধ করে আরাবী। স্থির কন্ঠে প্রশ্ন করে,
-“কেনো ডেকেছে?”

-“তার কৈফিয়ত আপনা কে কেনো দিবো? আপনি শ্রেয়সীর অভিভাবক না।”

-“শালি আধি ঘার ওয়ালি কথাটা একদম সত্য। কিন্তু আমার তো কেনো শালি নেই টাকা-পয়সা সমস্ত শালি নামক খাত থেকে আমি বেঁচে যাবো। তাই না শ্রেয়সী?”

-“আপনি কি জানেন আপনি দুনিয়ার সবচেয়ে অ’স’ভ্য লোক?”

-“এতদিন জানতাম একমাত্র প্রেমিক পুরুষ তার প্রেয়সীর কাছে দুনিয়ার সবচেয়ে অ’স’ভ্য হয়। কিন্তু এখন তো দেখছে শালিকার কাছেও হয়। তা শালিকা আপনার সাথে কি আমি কোনো অ’স’ভ্য’তা’মি করেছি?”

-“আপনার মতো লোকের সাথে কথা বলাই বেকার। আমিও বোকার মতো কার সাথে ঝগড়া করতে আসি। এই অকর্মের ঢেঁকি চল আমার সাথে। দেরি হলে ম্যাম কথা শোনাবে।”

-“যতক্ষণ না বলছো কেনো ডেকেছে ততক্ষণ শ্রেয়সী কে ছাড়ছি না।”

-“একদম বলব না। আপনি কে যে বলতে হবে?”

আরাবী রৌদ্রসীর ঝগড়া করায় খানিকটা বিরক্ত হয় শ্রেয়সী তাই সে আরাবী কে বলে,
-“কদিন পর আমাদের কলেজে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আর তার জন্য ডাকছে। আমি এখন যাই প্রয়োজন পরলে ডেকে নিবেন। আসছি!”

-“আবার আসবে তার গ্যারেন্টি কি?”

-“একটু আগেই তো ডাকলেন। এসেছি না?”

-“তোমাকে বিশ্বাস নেই। তোমার ব্যাগ আমার কাছে রেখে যাও।”

-“শ্রেয়ু একদম দিবি না। তুই কিন্তু এই লোক কে মাথায় তুলছিস।”

-“শালিকা তোমার চার নম্বর বয়ফ্রেন্ড কি তিন নম্বরটার কথা জানে?”

-“প্রেমই করেছি একটা। এখানে তিন চার আসলো কোত্থেকে?”

-“আমি আছি না। আমি বানিয়ে দিব।”

কথাটা বলেই দাঁত বের করে হাসে আরাবী। রৌদ্রসী রাগে দাঁতে দাঁত চেপে বলে,
-“আপনি সত্যি একটা অ’স’ভ্য লোক। এই শ্রেয়ু চল।”

-“ব্যাগ টা রেখে যাও শ্রেয়সী।”

-“আচ্ছা রেখে যাচ্ছি। শুধু ফোনটা নিয়ে যাই?”

-“ওকে।”

শ্রেয়সী ব্যাগটা মাটিতে ঘাসে উপরে রেখে যায়। রৌদ্রসী রাগে ব্যাগে সজোড়ে লা/থি মেরে শ্রেয়সীর হাত ধরে টানতে টানতে নিয়ে যায়।
আরাবী তখনও দাঁত বের করে হাসছিলো। রৌদ্রসী যাওয়ার আগে চেঁচিয়ে বলে যায়,
-“আল্লাহ আমাকে শক্তি দেও যেনো এর দাঁত গুলো ভেঙে গুড়িয়ে দিতে পারি।”

মাটিতে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পরে আছে শ্রেয়সীর ব্যাগের জিনিসপত্র। আরাবী সেদিকে তাকিয়ে নিচু হয়ে গুছিয়ে ব্যাগে ভিতরে সব পুড়ছে। আরাবী হঠাৎ দেখতে পায় শ্রেয়সীর ডায়রিটা। বেশ কৌতূহল নিয়ে ডায়েরিটা হাতে তুলে নেয় আরাবী। আরাবী যেই না ডায়েরির মলাটে ধরে ডায়েরি খুলতে নেয় ওমনি কেউ হেঁচকা টান দিয়ে ডায়েরিটা আরাবীর হাত থেকে নিয়ে নেয়। আরাবী অগ্নি দৃষ্টি নিক্ষেপ করে সম্মুখে দাঁড়িয়ে থাকা ব্যক্তির পানে। সম্মুখে থাকা ব্যাক্তি কে দেখে আরাবী স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে যায়। তার সম্মুখে দাঁড়িয়ে আছে শ্রেয়সী। শ্রেয়সীর মুখশ্রীতে রাগ স্পষ্ট।

-“আপনার সাহস কি করে হয় আমার ব্যাক্তিগত জিনিসে হাত দেওয়ার?”

-“একটা ডায়েরিই তো। তার জন্য এভাবে রিয়েক্ট করার কি আছে?”

-“আপনার কাছে মনে হতে পারে এর কোনো মূল্য নেই। কিন্তু আমার কাছে অমূল্য। আমার অন্তরালের সুপ্ত অনুভূতি আছে। এই ডায়েরিটা আমার সকল অনুভূতি অভিধান।”

আর এক মুহূর্তও দাঁড়ায় না শ্রেয়সী। দ্রুত প্রস্থান করে। আরাবী স্তব্ধ হয়ে বোকার মতো দাঁড়িয়ে থাকে। কি হয়ে গেলো তা তার মস্তিষ্ক ধারন করতে অক্ষম।

~চলবে…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here