শ্রেয়সী পর্ব ১৭

0
183

#শ্রেয়সী
#পর্ব_১৭
#লেখমীতে_নাদিয়া_সিনহা

রোদ্দু কে ওর মা বাড়ি নিয়ে যায়। রোদ্দুর মা বেশ রেগে আছেন আমার উপর। কারণ উনার মনে হয়েছে আমি ওনার মেয়ের ঠিক মতো খেয়ান না রাখায় আজ এত বড় একটা কান্ড ঘটে গেলো। অবশ্য রোদ্দুর বাড়ি যাওয়াতেই ভালো হয়েছে। কারণ কলেজের অনেকেই সেদিনের ঝামেলাটা ভিডিও করেছে। আর পুরো কলেজে ভিডিও ছড়িয়ে গেছে। যার দরুন আমাকেও হাসির পাত্রী হতে হচ্ছে। তবে আমার পাশে আরাবী থাকায় কেউ সাহস পায়নি কিছু বলার। কিন্তু আল্লাহর কাছে লাখ লাখ শুকরিয়া যে রোদ্দুকে বাড়ি পাঠিয়ে দিয়েছে। না হয় আবার বড়সড় একটা ঝগড়া বেঁধে যেতো।
দুদিন হলো রোদ্দু বাড়ি গেছে। তনুফ ভাইয়া ফোন করে সেদিনের ঝামেলার ব্যাপারে সব জানতেও চেয়েছে। আমি শুরু থেকে শেষ অব্দি সব বলি ভাইয়াকে। ভাইয়া নির্বাক স্রোতা হয়ে কেবল শুনছিলো। কথা শেষ হতেই কল রেখে দেয়। এরই মাঝে কে’টে যায় দুটো দিন। না রোদ্দুর কোনে খোঁজ পেয়েছি আর না বাড়ির৷ সবটা কেমন মরুভূমির ন্যায় শান্ত হয়ে গেছে।
তবে এই দুদিনে আরাবী আমার সঙ্গ ছাড়েনি। হোক তা দিনের ঝকঝকে উজ্জ্বল আলোয় অথবা রাতের ঘুটঘুটে আঁধারে। মধ্য রাতে মই বেয়ে একবার হলেও চোখের দেখা দেখতে এসেছে। টের পেয়েছি তবুও চুপ করে সবটা পরখ করেছি। ছেলেটা চুপিচুপি এসে চুপচাপ দেখে চলে যেতো। নিজেকে পৃথিবীর সবচেয়ে সৌভাগ্যবান বলে বোধ হয়। এত ভালোবাসা কপালে সইবে তো? ফোন আসতেই সকল ধ্যান সেখানে আবদ্ধ হয়। আরাবীর কল! দ্রুত ফোন রিসিভ করি। ওপাশ থেকে ব্যস্ত কন্ঠে আরাবী বলে,
-“পাঁচ মিনিটে রেডি হয়ে নিচে নামো।”

-“কিন্তু পাঁচ মিনিটি কিভাবে সম্ভব?”

-“কোনো কথা শুনতে চাই না। পাঁচ মিনিট মানে পাঁচ মিনিট।”

আমার বলার অপেক্ষা না করেই কল কেটে দেয় আরাবী। আমি তড়িঘড়ি করে রেডিয়ে হচ্ছি। নুসু আমার দিকে বোকার মত তাকিয়ে। কোনো মতে জামাটা পাল্টে দৌড়ে নিচে নেমে আসি। নিচে নামতেই দেখি আরাবী গাড়ির উপর হেলান দিয়ে দাড়িয়ে। আমাকে দেখে সটান হয়ে দাঁড়ায়। পা থেকে মাথা অব্দি গভীর ভাবে পরখ করে ছোট ছোট চোখ করে বলে,
-“গুড গার্ল! পাঁচ মিনিটেই এসেছো। আজ তোমাকে একটু বেশিই সুন্দর লাগছে।”

আরাবী কথায় নিজের দিকে একবার পরখ করলাম। নিজের দিকে তাকিয়ে আমি নিজেই স্তম্ভিত। মাথা ভর্তি চুল গুলো এলেমেলো পাগলের ন্যায় হয়ে আছে। পায়ের দিকে তাকিয়ে আমি রীতিমতো ভূত দেখার মতো চমকে উঠেছি। দুপায়ে দুরকম স্যান্ডেল। গাড়ির দর্পনে চোখ যেতেই দেখি চোখের কালজ লেপ্টে আছে সমস্ত মুখশ্রীতে। সকালে চোখে শখ করে একটু কাজল দিয়েছিলাম তারই এই বেহাল দশা। কাঁদো কাঁদো মুখ করে আরাবীর পানে তাকাতেই সে বলে,
-“অগোছালো অথবা এলোমেলো যে রূপেই আসো। আমার চোখে তুমি পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দর রমনী৷ সৌন্দর্য নয় তোমার চোখের গভীরতায় ডুবতে চাই। কখনও দ্বিধায় ভুগবে না। তুমি যেমন তেমন শ্রেয়সীই থাকবে। একদম পাল্টাবে না। আমি এই শ্রেয়সী কেই সারাজীবন আমার কাছে পেতে চাই। প্রেয়সী!”

হৃদয় কেমন শীতল হয়ে উঠলো। অনিচ্ছা সত্ত্বেও ওষ্ঠদ্বয় প্রসারিত হচ্ছে। ওষ্ঠের হাসিটাও চেপে রাখার ব্যর্থ প্রয়াস চালাচ্ছি। আমার ব্যর্থতার গোপনীয়তা আরাবী রাখতে দিলো কই? খানিকটা আমার সম্মুখে ঝুঁকে, ওষ্ঠে বক্র হাসি ঝুলিয়ে মিহি স্বরে বলে,
-“কোথাও একটা পড়ে ছিলাম যে মেয়েরা হাসি চেপে রাখলে বেশি সুন্দর লাগে। ভয়ংকর সুন্দর!”

আরাবী ইনিয়েবিনিয়ে আমাকে ভয়ংকর সুন্দর বলছেন। লজ্জায় আড়ষ্টতা ঘিরে ধরেছে আমার সর্বাঙ্গে। মাথা নত করে পায়ের নখ গুলো বার বার জুতার সাথে খুটাচ্ছি। আরাবী আমার আগাগোড়া পরখ করে বলে গাড়িতে বসতে। আমিও বিনাবাক্য দ্রুত গিয়ে গাড়িতে বসে পরি। আমার পিছু পিছু আরাবীও এসে গাড়িতে বলে। আমার দিকে একবার তাকিয়ে গাড়ি চালানোয় মননিবেশ করেন। আমিও আর কথা বলিনি। এমনিতেই ভীষণ লজ্জা পাচ্ছি। মুখ দিয়ে কথাও বের হচ্ছে না।
_______________________

-“আচ্ছা যখন রোদ্দু আর সাজ্জাদ ভাই ঝগড়া করছিলো আপনি থামাননি কেনো?”

আরাবী ভ্রু কুঁচকে বিরক্তিকর দৃষ্টি নিক্ষেপ করে আমার পানে। অতঃপর বলে,
-“এসব কথা তুলছো কেনো?”

-“বলুন না প্লিজ।”

-“দু’জনেরই একটা শিক্ষা হওয়ার দরকার ছিলো। তাই কিছু বলিনি।”

-“যদি ওদের স্যার কলেজ থেকে বের করে দিত?”

-“কিছুই হতো না। আমি আছি! আমি সবটা সামলে নিতাম। যেমন এখন নিয়েছি।”

-“এ্যাঁই আপনি স্যারকে কি এমন বলেছেন যে স্যার নিজের সুর পাল্টে আপনার কথা মেনে নিলো?”

-“অত সব তোমায় জানতে হবে না। আর এসব কথা তুললে তোমাকে এখন নদীতে ফেলে দিব। আমি আর তুমি ছাড়া কোনো কথা হবে না।”

আমি ভয়ে চুপসে যাই। আরাবীর কথা অমান্য করা মানেই মহা ভারত অশুদ্ধ করা। কখন কি করে ফেলে বলা বড় মুসকিল। তাই আপাতত মৌনতা বজায় রাখাই শ্রেয়।
প্রায় অনেক্ক্ষণ হলো চুপচাপ একই ভঙ্গিতে বসে আছি। আমার নীরবতা আরাবী বেশ বিরক্ত তা তার মুখশ্রী পানে ফুটে উঠেছে। বলার মতো কিছুই খুঁজে পাচ্ছি না। আরাবী আমার পানে তাকিয়ে বিরক্তি ভঙ্গিতে বলে,
-“চুপ করে কেনো আছো?”

-“কি বলব?”

আরাবী আশেপাশে বিরক্তিকর দৃষ্টি নিক্ষেপ করে উঠি দাঁড়ায়। নিজের এক হাত আমার পানে বাড়িয়ে বলে,
-“উঠে দাঁড়াও কুইক।”

দ্বিধা, অস্বস্তি, জড়তা আমাকে আষ্টেপৃষ্ঠে যাচ্ছে। আরাবী হাত ধরবো? আমার অক্ষিদ্বয় কিঞ্চিৎ বৃহৎ আকৃতি ধারণ করে। এমন তো নয় এর আগে কখনও ধরিনি। কিন্তু প্রতিবার আরাবীই আমার হাত ধরেছে আমি নই। কিন্তু আজকের ব্যপারটা অনেকটাই ভিন্ন। ধরবো কি ধরবো না তা নিয়ে দ্বিধার দহনে পু’ড়ে ছা’র’খা’র হয়ে যাচ্ছি। আরাবী আমার পানে তাকিয়ে শান্ত কন্ঠে বলে,
-“জোর করে নয়। যদি তোমার মনে কখনও আমি নামক ব্যক্তির প্রতি বিশ্বাস জন্মায় তাহলেই এই হাত ধরো। আর যদি বিশ্বাস না জন্মায় তাহলে তোমার প্রয়োজন নেই আমিই তোমার হাত ধরে পারি দিব বহু দূর অজানা গন্তব্যে। তবে কখনও অন্যের হাত ধরার সাহস করবে না। আমি নই তো কেউ না। আই থিংক বুঝেছো।”

কিছু বলার পূর্বেই আরাবী আমার হাত টেনে উঠে দাঁড় করায়। অতঃপর আমার দিকে তাকিয়ে মৃদু হেসে বলে,
-“চলো হাঁটতে হাঁটতে প্রেমনিবেদন করি।”

বলে হাঁটা শুরু করে দেয়। আমি অপলক তাকিয়ে আছি ওই শুভ্র রঙ্গের শরীরের হলদেটে মুখশ্রী পানে। অদ্ভুত এক টান অনুভব হচ্ছে তার প্রতি। কেউ আমাকে এতটা ভালোবাসে! বাসতে পারে? তা আমার কল্পনাতীত। নিজেকে পৃথিবীর সবচেয়ে সৌভাগ্যবান বলে বোধ হচ্ছে। কিন্তু মনের মাঝে একটা খটকা লেগেই আছে। আরাবী কি সত্যি আমাকে ভালোবাসে? নাকি সবটাই আবেগ, মোহ? না না! আমাকে আগে জানতে হবে আরাবী আমাকে ভালোবাসে কি না। রাস্তার মাঝে আচমকা হাঁটা থামিয়ে উত্তেজিত কন্ঠে আরাবী কে প্রশ্ন করি,
-“আপনি কি সত্যি আমাকে ভালোবাসেন? নাকি সবটাই আবেগ, মোহ?”

একে তো আমি আচমকা দাঁড়িয়ে পরি তাতেই আরাবী বেশ চমকে যায়। আর এখন এই প্রশ্নে সে যেনো আকাশ থেকে পরেছে ওমন দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে আমার পানে। নিজের বিস্মায়তা নিয়ে এগিয়ে আসে আমার দিকে আর বলে,
-“জানো নিজের উপর এখন প্রচন্ড রাগ হচ্ছে। আমি শেষমেশ একটা বাচ্চা মেয়ের প্রেমে পরলাম ভাবতেই অবাক হচ্ছি বারংবার।”

-“মানে? মানে টানে যা তা হোক কথা ঘুরাবেন না। আমি যা জিজ্ঞেস করেছি তার উত্তর দিন।”

-“কি জানতে যাও? আমি তোমাকে ভালোবাসি কি না?”

আমি মাথা নাড়িয়ে ‘হ্যাঁ’ সম্মতি দেই। আরাবী দূরত্ব খুঁচিয়ে খানিট কাছে এসে দাঁড়ায় শক্ত বন্ধনে আবদ্ধ করে আমার হাত তার হাতের উষ্ণতায়। যার দরুন তার উষ্ণ নিশ্বাস আমার মুখশ্রীতে বিচরণ করছে।
-“তোমার কি মনে হয়? আবেগ, মোহের বয়স অথব অনুভূতি এখনও আমার আছে? জীবন প্রথম কোনো রমনীকে ভালোবেসেছি। আর সে তুমি।”

-“কখনও বলেননি তো আমাকে ভালোবাসেন।”

-“ভালোবাসি বললেই কি ভালোবাসা হয়। ভালোবাসি না বলেও ভালোবাসা যায়।”

আমি নির্বাক হয়ে দাঁড়িয়ে। আরাবী তো ঠিকি বলছে ভালোবাসি না বলেও ভালোবাসা যায়। আর সেটা আরাবী বাসে। আরাবী প্রতিটা কথা বরাবরের মতো আমাকে মুগ্ধ করে। এবারও তার ব্যতিক্রম নয়। আমি মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে আছি আরাবীর পানে। সে আমার মুখশ্রীতে দৃষ্টি আবদ্ধ করে চোখে চোখ রেখে অদ্ভুত দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বলে,
-“ভালোবাসি জানার পর অন্তরালে আর কোনো কিউরিওসিটি থাকে না এটা জানার যে সে ভালোবাসে কি না? ভালো না বাসার জন্য ভয়ও কাজ করে যে সে কেনো বাসে না? শত শত দ্বিধার মাঝে আঁটকে পরে হৃদয়। আর ভালোবাসার রূপ হয় তীব্র থেকে তীব্রতর ভয়ংকর। ভালোবাসা প্রকাশ করলে হারিয়ে যায়। তাই থাকুক কিছু ভালোবাসা অপ্রকাশিত।”
__________________

অপরাহ্নের শেষ প্রহর। সূর্য রক্তিম আভা ঢলে পরেছে অম্বরে। আবহাওয়াটা কেমন শীতল ঠেকছে। বর্ষণের মৌসুম তাই বোধ হয়। তবে অম্বরে তেমন খালো মেঘের ছায়া নেই। পরিষ্কার ঝলমলে রোদের শেষ প্রহর। সন্ধ্যার কিয়ৎ পূর্বেই আরাবী আমাকে হলের সামনে নামিয়ে দিয়ে যায়। গাড়িতে থেকে নামতেই সে বলে,
-“অপরাহ্নটাও আজ লাজুকতায় নেতিয়ে পরেছে। হয়তো তোমার রক্তিমা কপোলের প্রকোপে সমস্ত অম্বর রক্তিমতায় ছেয়ে গিয়েছে।”

আমি লজুক হেসে মাথা নত করে দ্রুত হলে প্রবেশ করে। আর এক মুহূর্তও সম্ভব নয় সেখানে দাঁড়িয়ে থাকা। দৌড়ে কক্ষ চলে আসি। কক্ষ প্রবেশ করতেই দেখি নুসু বই পড়ছে। আমাকে দেখে ভূত দেখার মতো বড় বড় চোখ করে তাকায়। নুসুর দিকেও তাকাতে বেশ লজ্জা করছে। হঠাৎ এতটা লজ্জা বোধ হবে তা আগে টের পাইনি। নুসু আমার দিকে তাকিয়ে বিষ্ময়তা নিয়ে বলে,
-“তুই ধরা পরিসনি?”

নুসুর প্রশ্নে আমার ললাটে ভাজ পরে। নুসুর কথা আমার ঠিক বোধগম্য হয়নি তাই ওকে আবার পাল্টা প্রশ্ন কি,
-“ধরা পরবো মানে?”

-“এমা তুই জানিস না শাদমান ভাইয়া এসেছে তো সাথে দেখা করতে।”

নুসুর দিকে ছোট ছোট চোখ করে তাকিয়ে বলি,
-“মজা করার জায়গা পাস না তাই না? সর এখান থেকে আমি ফ্রেশ হবো।”

-“সত্যি বলছি শাদমান ভাইয়া এসেছে। সেই দুপুরে বারোটার দিকেই।”

-“ভাইয়া এলে তুই আমাকে ফোন করেই বলতি। কই তুই তো ফোন করিসনি।”

-“ফোন কি একটা দুটো করেছি। কল লিস্ট চেক করে দেখ পাক্কা একাত্তরটা কল দিয়েছি। কিন্তু তোর কোনো খোঁজ নেই। এই কল যদি আমি একাত্তর সালে দিতাম তাহলে আমার কলেই দেশ স্বাধীন হয়ে যেনো।”

-“ফালতু কথা বাদ দে।”

বলেই আমি আমার ফোন চেক করি। নুসুর কথাই সত্যি হলো। নুসুর সাথে সাথে দাদাভাইয়ের নম্বর থেকেও অসংখ্য কল এসেছে। আমার ফোন সাইলেন্ট থাকায় কলের বিন্দু পরিমাণ ইঙ্গিতও আমি পাইনি। আরাবী সম্মুখে এলে কেমন ঘোরে চলে যাই। অন্য দিকে তো ধ্যানই থাকে না৷ আমি নুসুর দিকে তাকিয়ে ভয়ার্ত কন্ঠে জিজ্ঞেস করি,
-“দাদাভাই এখন কোথায়?”

-“গেস্টরুমে বসে তোর জন্য অপেক্ষা করছে।”

আর কথা না বাড়িয়ে আমি দৌড়ে গেস্টরুমে চলে যাই। গিয়ে দেখি দাদাভাই বসে ফোনো কি যেনো করছে। আমি গিয়েই এক নাগাড়ে ‘স্যরি’ বলছি দাদাভাইকে। দাদাভাই আমার দিকে তাকিয়ে উঠে দাঁড়ায়। এক হাত দিয়ে জড়িয়ে ধরে বলে,
-“ইট’স ওকে বাচ্চা। আমি জানি তোর কোনো দোষ নেই।”

-“স্যরি আমি দেখিইনি তোমার কল। আমার ফোনটাও সাইলেন্ট ছিলো।”

-“বলেছি তো ইট’স ওকে। আর সারাদিন কোথায় ছিলে?”

দাদাভাইয়ের কথায় বিষম খেয়ে যাই। দাদাভাই পানি খাইয়ে আবারও একটি প্রশ্ন করে আমি ভয়ার্ত কন্ঠে বলি,
-“আসলে দাদাভাই আমার একটা বান্ধবীর একটু সমস্যা হয়েছিলো তাই ওর সাথে ডাক্তারের কথা গিয়েছিলাম। রাস্তায় জ্যাম থাকায় দেরি হয়ে গেছে।”

-“তা এখন সে কেমন আছে?”

-“আল্লাহ রহমতে এখন ভালো আছে।”

-“আচ্ছা ঠিক আছে। তুই এক কাজ কর গিয়ে ব্যাগ পত্র গুছিয়ে নে।”

-“ব্যাগ পত্র কেনো গুছাব?”

-“বাড়িয়ে নিয়ে যাব তোকে।”

-“কিন্তু আমার কলেজ?”

-“পরশু তো শুক্রবার তারপরের দিন তোকে দিয়ে যাব আর দুদিন তা আমি দেখি নিবো। তুই গিয়ে রেডি হয়ে নে।”

খানিক উত্তেজিত হয়ে বলি,
-“হঠাৎ বাড়ি যাব কেনো? সব ঠিক আছে তো? বাবা-মা আর ভাবি? ভাবি ঠিক আছে তো?”

-“সবাই ভালো আছে তুই নেই ভালো লাগে না আর শান পাঁচ দিন পর চলে যাবে।”

-“আচ্ছা আমি রেডি হয়ে আসছি।”

দাদাভাই কে বলে রুমে চলে যাই। কেমন যেনো একটা ঠেকছে ব্যপারটা। হঠাৎ বাড়ি কেনো? তবে যাই হোক বাড়ি গেলে মনটাও ভালো হবে। মনে হচ্ছে কত দিন হলো রোদ্দু কে দেখি না৷ বাড়ি গিয়ে ওর সাথে ঘুরতে যাব। আন্টিকে স্যরি বলব। আর আমি রোদ্দু একট সাথে ঢাকায় ফিরবো। ভাবতে ভাবতেই রুমে প্রবেশ করি। নুসু আমাকে দেখে বলে,
-“জামা-কাপড় সব ব্যাগে গুছিয়ে দিয়েছি আমি। তোর আর কিচ্ছু করতে হবে না।”

আমি জড়িয়ে ধরি নুসুকে। সত্যি আমার বান্ধবীরা যদি না থাকতো তাহলে নিজেকে সামলাতে প্রচন্ড কষ্ট পোহাতে হতো। জীবনে বেস্ট উপহারের অন্যতম আমার দুই বেস্ট ফ্রেন্ড।

বাড়ি আসার পথে আরাবী কে ছোট্ট একটা মেসেজ করি,
-“আমি বাড়ি যাচ্ছি। দাদাভাই নিতে এসেছে। দুদিন থাকব। ফিরে এসে জানাব।”

মেসেজ সিন হয়েছে সাথে সাথে। তবে ওপর পাশ থেকে কোনো উত্তর আসেনি। যদিও মনে মনে খুব চাচ্ছিলাম একটা উত্তর আসুক অন্তত। নিজের জন্য আরাবী চোখে তৃষ্ণা দেখার বড্ড লোভ হয়। ইচ্ছে করে নিজে কষ্ট দিয়ে আরাবীর চোখে আমার জন্য গভীর ভালোবাসা অনুভব করতে।
সমস্ত পথে আমার মস্তিষ্কে কেবল আরাবীর কথাই বিচরণ করেছে। তার প্রতিটা কথায় আমার সর্বাঙ্গে কেমন কম্পন সৃষ্টি করে তুলতো। হৃদয় ক্ষণে ক্ষণে কেঁপে উঠে। হৃদয়ের প্রতিটা স্পন্দন যেনো আরাবী নামেই স্পন্দিত হয়।
তীব্র জোরে গাড়ি ব্রেক করায় আমার ধ্যান ভেঙ্গে যায়। দাদাভাই ব্যস্ত হয়ে আমাকে জিজ্ঞেস করছে,
-“তুই ঠিক আছিস কিছু হয়নি তো?”

আমি মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ বলি। দাদাভাই কে জিজ্ঞেস করি,
-“কি হয়েছে?”

-“মনে হলো গাড়ির সামনে কিছু একটা চলে এসেছে তাই ব্রেক জোরে পরে গেছে।”

দাদাভাই দরজা খুলে নেমে যায়। আমি দরজার খুলতেই হতভম্ব হয়ে দাঁড়িয়ে পরি৷ চোখ দুটো বেড়িয়ে আসার উপক্রম৷ কি দেখছি এসব? আমারই চোখের সামনে আমার পুরো বাড়ি আলো দিয়ে পরিপূর্ণ। মরিচাবাতি দিয়ে পুরো বাড়ি সাজানো। আমি অবাক দৃষ্টিতে দাদাভাইয়ের দিকে তাকাই। দাদাভাই আমার কাঁধ জড়িয়ে হাঁটা দেয় বাড়ির ভেতরে। বড় বড় চোখ করে শুধু তাকিয়েই আছি। বাড়ি ভিরতে প্রবেশ করতেই দেখি মা এদিক সেদিক ছোটাছুটি করছে। ভাবি এক কোনে বসে জামা-কাপড় নিয়ে কি যেনো করছে। আমি প্রথমেই দৌড়ে মায়ের কাছে যাই। মায়ের সম্মুখে দাঁড়িয়ে গোলগোল চোখে জিজ্ঞেস করি,
-“আম্মু এসব কি হচ্ছে? বাড়িতে কি কোনো অনুষ্ঠান?”

-“হ্যাঁ! না হয় কি এত সাজ-সজ্জা থাকতো? তুই এখন গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নে। আমাকে জ্বালাবি না একদম আমার অনেক কাজ। পারলে আমাকে সাহায্য কর না হয় এখান থেকে যা।”

এক নিশ্বাসে কথা গুলো বলে মা আমাকে পাশ কাটিয়ে চলে যায়। আমি বোকার মতো দাঁড়িয়ে ভাবছি কি হচ্ছে এসব। আমি দৌড়ে ভাাবির কাছে গিয়ে বসি।
-“আচ্ছা ভাবি বাড়িতে কিসের অনুষ্ঠান গো?”

ভাবিও দেখলাম মুচকি হাসছে কিছুই বলছে না। ভাবির মুচকি হাসি দেখে আমি বলি,
-“ওহ আচ্ছা বুঝেছি। তোমার বেবি হবে তাই এত আয়োজন তাই তো? আগে বলতে আমি বেবির জন্য গিফট নিয়ে আসতাম।”

-“নিজের বিয়েতে কেউ অন্য কারো জন্য গিফট আনে?”

তনুফ ভাইয়ের কথায় আমি পেছনে ফিরে তাকাই। ভাইয়ার কথাটা ঠিক আমার বোধগম্য হয়নি। কাকে বলছে? আর বিয়ের কথা কোত্থেকে আসলো? আমি বুঝতে না পেরে আবার প্রশ্ন করি,
-“মানে? কার বিয়ে?”

-“কার আবার তোর। আমার এক মাত্র বোনের বিয়ে।”

আমার পায়ের তলা থেকে মাটি সরে যায়। আমার বিয়ে? তাও আমাকে না জানিয়ে। এত বড় সিদ্ধান্ত বাবা কিভাবে নিতে পারে? বাবা তো সব সময় বলে আমার মেয়েটা এখনও খুব ছোট তবে আজ কেনো বিয়ে দিচ্ছে? আর আরাবী সে তো উম্মাদ হয়ে যাবে। আমার মস্তিষ্ক শূন্য। চোখের সামনে সব কিছু কেমন অন্ধকার লাগছে। মাথাটায়ও বেশ ঝিম ধরে উঠছে। আমি আর দাঁড়িয়ে থাকতে পারলাম না। মাটিতে লুটিয়ে পরি। চোখ বন্ধ হওয়ার পূর্বে অনুভব করি কেউ এসে আমার মাথা জড়িয়ে ধরে ফেলেছ। কিন্তু কে? তা আমার জানা নেই……..

~চলবে…..

[অনেক বড় পর্ব দিলাম মন্তব্য চাই সবার🫣]
থ্যাঙ্কু🥰

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here