শ্রাবন সন্ধ্যা পর্ব:-৪৮

0
1671

#শ্রাবন সন্ধ্যা পর্ব:-৪৮
#আমিনা আফরোজ

হেমন্তের বিকেলের প্রকৃতি সেজেছে নিজে রূপে। পশ্চিম আকাশে এখনো ধূসর রংয়ের ছায়া লেগে আছে । পুরো আকাশের গায়ে যেন অস্পষ্ট ঘুমের পলেস্তরা লেপ্টে দিয়েছে কেউ। পড়ন্ত বিকেলে ধূসর রঙা আকাশে এদিক-সেদিক উড়াউড়ি করছে এক ঝাঁক পাখির দল। দিনশেষে নিজ নীড়ের দিকে গমন করছে তারা।

হেমন্তের পড়ন্ত বিকেলে রোদের বাড়িতে এসে উপস্থিত হলো নেহালের পরিবার। রশিদ সাহেব আর রাবেয়া বেগম তাদের সাদরছ অভ্যর্থনা জানালেন। মনোয়ারা বেগমও লেগে গেলেন আতিথিয়তার কাজে। অতিথি বলে কথা। আপ্যায়নতো করতেই হবে।

ড্রয়িংরুমের ডানদিকে সোফায় বসে আসেন সামাদ মিয়া আর ওনার স্ত্রীর জমিলা বেগম। নেহালও ভদ্র ছেলের মতো বাবা-মার পাশে বসে আছে। রোদদের বাড়ির আতিথিয়তা বেশ ভালো লেগেছে জমিলা বেগমের। মনে মনে এমন একটা পরিবারই খুঁজছিলেন তিনি। যাক অবশেষে ছেলের জন্য একটা ভালো মেয়ের সন্ধান পেয়েছেন । এতেই খুশি তিনি। অতঃপর স্বামীর মুখ পানে তাকিয়ে বুঝতে পারলেন তিনিও ওনার মতোই মেয়ের পরিবারের আতিথিয়তায় বেশ সংন্তুষ্ট। নেহালদের বিপরীতে বসে আছেন রফিক সাহেব আর মিসেস রাবেয়া বেগম। শ্রাবণও তাদের পাশে বসে আছে । নেহাল ছেলেটাকে ওর কাছে খুব একটা ভালো লাগে নি। কিন্তু খোঁজ নিয়ে যখন নেহালের বিষয়ে কোন মন্দ তথ্য পায় নি তখন মনের দিকে তাকিয়ে এই বিয়েতে মত দিয়েছে ও। বোনকে যে অনেক ভালোবাসে ও। মনোয়ারা বেগম তখন রান্নাঘরে সন্ধ্যাকে দিয়ে নাস্তা সাজানোর কাজে ব্যস্ত।

ড্রয়িংরুমে পিন-পতন নিরবতা চলছে। শুধু মাঝে মাঝে ফ্যান থেকে একটু ক্যাচর-ক্যাচর আওয়াজ আসছে। নিরবতার সমাপ্তি কাটিয়ে সামাদ মিয়া নিজেই প্রথমে বলে উঠলেন,

–” খাওয়া-দাওয়া পড়ে করলেও চলবে । আগে মেয়েকে দেখালে ভালো হতো ভাইজান ।”

সামাদ মিয়ার কথা শুনে রশিদ সাহেব বলে উঠলেন,

–” মেয়েতো দেখবেনই ভাইজান। তবে তার আগে হালকা কিছু খাওয়া-দাওয়া আর গল্প-স্বল্প হয়ে যাক। আসলে আপনাদের সাথে তো তেমন ভালোমতো পরিচয়ই হয় নি।”

–” এইটা ঠিক বলেছেন ভাইসাব । আমিও আপনার সম্বন্ধে খুব একটা জানি না।”

–” আমার নাম রশিদুল ইসলাম। ছোটখাটো ব্যবসায়ী। তবে বর্তমানে ব্যবসা আমার ছেলে দেখাশোনা করে । বুড়ো হয়ে গিয়েছি তো তাই এখন আর এত চাপ নিতে পারি না। আমার স্ত্রী রাবেয়া গৃহিনী। বলতে গেলে এই সংসারটা ও নিজে সাজিয়ে এসেছে এতদিন। আমার মেয়ে রোদ যাকে আপনারা দেখতে এসেছেন সে ইন্টার ফার্স্ট ইয়ারে পড়ে। বলতে গেলে এখনো বাচ্চা ও। একটু চঞ্চল ও তবে মনের দিক থেকে ভালো। আমার ছেলের কথা তো আগেই বললাম আপনাদের।”

–“জি ভাইসাব ,রোদকে আগেই দেখেছি । চিন্তা করবেন না আপনার মেয়ে ভালোই থাকবে । একই শহরে যখন থাকবে মাঝে মাঝে না হয় ওদের দেখে আসবেন ।”

–“এই ভরসাতেই তো রাজি হয়েছি। সে যাই হোক। আপনি কি করেন ভাইজান?”

–” গ্রামে বসতবাড়ি আছে , জমিজমার কোন কমতি নেই। তারওপর গ্রামের চেয়ারম্যান আমি। চালের একটা আড়তও আছে ।”

–” তাহলে তো ভালোই। তা গ্রামের বাড়ি কোথায় আপনাদের?”

রশিদ সাহেবের প্রশ্ন শুনে নেহাল ওর বাবাকে বলতে না দিয়ে নিজেই বলে উঠলো,

–” সুবর্ণপুর।”

নেহালের উত্তর শুনে রশিদ সাহেব সন্তুষ্ট হলেও সামাদ মিয়া আর ওনার স্ত্রী জমিলা বেগম ভ্রু-কুচকে তাকিয়ে রইলেন ছেলের দিকে। ছেলে মিথ্যা কথা কেন বলল এইটাই বোঝার চেষ্টা করছেন তারা? সত্যি বললেই বা কি হতো? নাকি এখানেও কোন গন্ডগোল পাকিয়ে রেখেছে? কে জানে কি করে রেখেছে এ ছেলে? ছেলেকে দিয়ে তো কোন ভরসা নেই ,যখন যেখানে যা খুশি ঘটিয়ে রেখে দিতে পারে । দুজোড়া চোখ যে নেহালকে পর্যবেক্ষন করে চলেছে সেদিকে কোন ভ্রুক্ষেপ নেই ওর । ও তো সন্ধ্যাকে খুঁজতে ব্যস্ত। সন্ধ্যা যদি এখানে ওর বাবা-মার সামনে চলে আসে তাহলে যে এতো দিনের পরিশ্রম এক নিমিষেই শেষ হয়ে যাবে । এটা তো কিছুতেই হতে দেবে না নেহাল । যে করেই হোক সন্ধ্যাকে এখানে আসা থেকে আটকাতে হবে ওকে।

আলাপ-আলোচনা একপর্যায়ে মনোয়ারা বেগমের আগমন ঘটল ড্রয়িং রুমে। হাতে তার নাস্তার সরঞ্জাম। খাবারগুলো টি-টেবিলে দেখে বলে উঠলেন,

–” গল্পতো অনেক হলো এবার একটু হালকা খাওয়া-দাওয়া হয়ে যাক।”

সামাদ মিয়ার উদ্দেশ্যে রশিদ সাহেব মনোয়ারা বেগমকে দেখিয়ে বলে উঠলেন,

–” ও আমার ছোটবোন । এখানেই থাকে ওর মেয়েকে নিয়ে।”

–” ও আচ্ছা আচ্ছা। তো আপনি দাঁড়িয়ে রইলেন কেনো? বসুন। আপনার সাথে তো কথাই হলো না ।”

সামাদ মিয়ার কথার প্রতি উত্তরে মনোয়ারা বেগম হেসে বলে উঠলেন,

–” না ভাইজান এখানে বসতে পারবো না এখন। ঐদিকে এখনো ঢের কাজ বাকি পরে আছে। গল্প না হয় অন্য একদিন করা যাবে। আত্মীয় তো হতেই চলেছেন।”

–“আচ্ছা বেশ এইটা ঠিক বলেছেন , পড়ে না হয় একদিন জম্পেশ আড্ডা দেওয়া যাবে।”

রাবেয়া বেগম তখন মনোয়ারা বেগমের দিকে তাকিয়ে বলে উঠলেন,

–” ওনারা খেয়ে নিক তুমি বরং রোদকে নিয়ে আসতে বলো।”

–” ঠিক আছে ভাবি। আমি রোদকে নিয়ে আসার ব্যবস্থা করছি।”

কথাগুলো বলেই মনোয়ারা বেগম তৎক্ষণাৎ রান্নাঘরে গিয়ে সন্ধ্যাকে বললেন ,

–“যাও প্রিয়ন্তি আর তুলিকে বলো রোদকে নিয়ে নিচে আসতে।”

মনোয়ারা বেগমের কথামত সন্ধ্যা চলে যেতে নিতেই মনোয়ারা বেগম পেছন থেকে বলে উঠলেন,

–” শোনো তুমি যেন আবার ওনাদের সামনে যেও না। এখনো রান্না কিছুটা বাকি আছে। তাড়াতাড়ি চলে এসো । আমি ততক্ষণে এদিকটা সামলে নিচ্ছি।”

সন্ধ্যা ঘাড় নাড়িয়ে হ্যাঁ সূচক সম্মত্তি জানিয়ে রোদের ঘরের দিকে চলে গেল ।

এদিকে রোদ ,প্রিয়ন্তী আর তুলি তিনজনে যেন আজ কথার ফুলঝুরি নিয়ে বসেছে। ওদের বেশিরভাগ গল্প নেহাল কেন্দ্রিক। অর্থ্যাৎ আজ ওদের গল্প নেহালময়। এদিকে গল্পের ছলে যে দিনের আলো ফুরিয়ে গোধূলি লগ্ন উপস্থিতি হয়েছে সেদিকে যেন ওদের খেয়ালই নেই। ওরা তো নিজ নিজ খেয়ালে মত্ত হয়ে রয়েছে।

ওদের গল্পের মাঝেই সন্ধ্যার আগমন ঘটে সেখানে ।তিনজনকে নিরালায় গল্প করতে দেখে সন্ধ্যা কপট রাগ দেখিয়ে বলল,

–“শুধু গল্প করলে হবে ? রোদকে সাজিয়ে নিচে নিয়ে যেতে হবে না ?”

সন্ধ্যার কথা শুনে প্রিয়ন্তী বলে উঠলো,

–” রোদকে আমরা কি সাজাবো ভাবি, ও তো নিজেকে নিজেই সাজিয়ে নিয়েছে। ওর আবার বিয়ে করার খুব তাড়া আছে কি না ? যদি ওর বর ওকে রেখে পালিয়ে যায় তাই আগেভাগেই তৈরী হয়ে বসে আছে বেচারি।”

প্রিয়ন্তীর কথা শুনে রোদ রেগে বলে উঠলো,

–” এসব কি বলছিস তুই? দিনকে দিন বড্ড বেশি কুটনি হয়ে যাচ্ছে তুই।”

রোদের কথা শুনে প্রিয়ন্তি মুখ ভেংচিয়ে গান গেয়ে ওঠলো,

–“আমিতো ভালা না, ভালা লইয়াই থাইকো।”

–“প্রিয়ন্তী থামবি এবার । এমনিতেই চিন্তায় শেষ আমি। কোথায় আমাকে একটু সাহায্য করবে, তা না করে ও আছে ওর ফাযলামি নিয়ে।”

সন্ধ্যার ওদের কথা শুনে হেসে বলে উঠলো,

–” কেন গো ননদিনী ? তোমাকে আবার কিসের দুশ্চিন্তা ঘিরে ধরেছে শুনি?”

রোদ সন্ধ্যার দিকে এগিয়ে এসে বলল,

–” আমার খুব ভয় করছে ভাবী। যদি ওনার বাবা-মা আমাকে পছন্দ না করে? তখন কি হবে ?”

সন্ধ্যার রোদের মাথায় আলতো করে হাত রেখে বলল,

–” চিন্তা করো না ওনারা তোমাকে পছন্দ করবেন। আমার কথা মিলিয়ে নিও।”

–” কিন্তু ভাবি….

রোদকে ওর কথা শেষ করতে না দিয়ে সন্ধ্যা নিজেই বলে ওঠল,

–” কোন কিন্তু নয় সব চিন্তা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলে তোমার নতুন জীবনের দিকে পা বাড়াও। প্রিয়ন্তী , তুলি তোমার ওকে নিচে নিয়ে যাও । রোদকে ওনাযা ডেকে পাঠিয়েছেন।”

–” আমার এমন এমন শুভ দিনে তুমি যাবে না আমার সাথে?”

রোদের কথা শুনলে সন্ধ্যা মনে মনে বলল ,

–“আমি গেলে যে তুমি নেহালকে কোনদিনও পাবে না। নেহাল যে তখন জন্য তোমার কাছে ধোয়াশা হয়ে রবে আজীবন। আমি জানি সামাদ চেয়ারম্যানের মতো ধূর্ত লোক এতো সহজে আমাকে মেনে নেবে না তোমার পাশে। যদি কোনভাবে উনি জানতে পারেন আমার সাথে তোমার কোন সম্পর্ক আছে তাহলে তোমার আর নেহালের বিয়েটা হতে দেবেন না ওনি কিন্তু এটাতো আমি কিছুতেই হতে দেবো না নেহাল আর তোমার বিয়ে হবেই।”

সন্ধ্যাকে চুপ থাকতে দেখে রোদ হালকা ধাক্কা দিয়ে বলল,

–” কি হলো ভাবি? কী ভাবছো এত?”

রোদের মৃদু ধাক্কায় সন্ধ্যা স্তম্ভিত ফিরে পেয়ে বলে উঠলো,

–” না গো আমার সেখানে যাওয়ার অনুমতি নেই। এখনো কিছু রান্না বাকি আছে। সেগুলো শেষ করতে হবে তো, নাকি? ”

–“আমার এমন একটা দিনে তুমি আমার পাশে থাকবে না?”

–” কে বলল আমি তোমার পাশে নেই ? তোমার প্রতিটি শুভক্ষণে আমি তোমার পাশে আছি আর ভবিষ্যতেও থাকবো ।”

কথাগুলো বলে প্রিয়ন্তীর দিকে তাকিয়ে সন্ধ্যা আবারো বলে উঠলো ,

–“প্রিয়ন্তী ওকে নিয়ে যাও। দেরি হয়ে যাচ্ছে।”

–” ঠিক আছে ভাবি। রোদ চল আমরা আছি তো।”

অগত্যা সন্ধাকে রেখেই তুলি আর প্রিয়ন্তীর সাথে চলে গেল রোদ। শূন্য ঘরটিতে সন্ধ্য একাই দাঁড়িয়ে রইল। দৃষ্টি তখনও লাল রঙের শাড়ি পরিহিতা মেয়েটির দিকে। হাস্যোজ্জ্বল মুখে তাকিয়ে অস্পষ্ট স্বরে বলে উঠলো,

–” আগামী দিনের পথ চলা শুভ হোক তোমার। তোমার আগামীর সুখ-দুঃখের প্রতিটি ক্ষণে আমাকে তোমার পাশে পাবে। তোমার অগোচরে তোমার প্রতিটি বিপদের ঢাল হয়ে দাঁড়াবো আমি। এইটা তোমার কাছে ওয়াদা রইল আমার।”

কথাগুলো বলেই রান্না ঘরের দিকে চলে গেল সন্ধ্যা। শূন্য ঘরটিতে রেখে গেল কিছু গোপনকথা। কিছু কথা না হয় সবার অগোচরেই থাক।

নেহালদের সামনে বসে আছে রোদ। এতগুলো লোকের সামনে এভাবে বসে থাকতে বেশ অস্বস্তি হচ্ছেওর। প্রিয়ন্তি আর তুলি রোদের থেকে কিছু দূরে দাঁড়িয়ে আছে । রোদ অবশ্য নিচে আসার পর আড়চোখে বার দুয়েক নেহালের দিকে তাকিয়ে ছিল কিন্তু নেহাল তখন একমনে নিচের দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসেছিল। নেহালের হাসি দেখে রোদ লজ্জায় মাথা নিচু করে মনে মনে নেহালকে গালি দিতে লাগলো।

রোদকে নিয়ে আসার পর রশিদ সাহেব রোদকে দেখায়ে বলে উঠলেন,

–” এই হচ্ছে আমাদের মেয়ে রোদ।”

বাবার কথা শুনে রোদ মৃদু কন্ঠে সালাম দিল সবাইকে।

–” আসসালামু আলাইকুম ।”

রোদের সালাম এর জবাবে জমিলা বেগম বলে উঠলেন,

–“অলাইকুম আসসালাম। দূরে বসলে কেন মা? এসো আমার কাছে এসে বসো।”

ভদ্রমহিলার কথা শুনে রোদ উঠে নেহালের মায়ের কাছে গিয়ে বসলো। জমিলা বেগম রোদের চিবুকে হাত দেখে বলে উঠলেন,

–“আমাদের মেয়ে পছন্দ হয়েছে ভাইজান।”

–” আলহামদুলিল্লাহ।”

সামাদ মিয়া বলে উঠলেন,

–“মেয়ে যখন আমাদের পছন্দ হয়েছে তখন না হয় বিয়ের বাদবাকি কথা সেরে ফেলি?”

–“আমিও তাই ভাবছি অযথাই আর দেরি করে লাভ কি?”

–“তাহলে কাছেপিঠে বিয়ের দিন তারিখ ঠিক করি কি বলেন?”

–“তবে তাই হোক।”

অনেক কথাবার্তার পর পনেরো দিন পর নেহাল আর রোদের বিয়ে ঠিক করে রোদকে সোনার আংটি পরিয়ে বিদায় নিল নেহালদের পরিবার। এই পুরোটা সময় শ্রাবন চুপ থেকে নেহালকে পর্যবেক্ষন করেছে।নেহালকে ওর এখনো সন্দেহ হচ্ছে কিন্তু উপযুক্ত প্রমান না পেলে তো আর কাউকে দোষী সাব্যস্ত করতে পারে না ও। তাই চুপ ছিল এতোক্ষণ।ড্রয়িং রুমে সবাই উপস্থিত হলেও সন্ধ্যা তখনো সেখানে ছিল না। শ্রাবন সন্ধ্যার অনুপস্থিতি দেখে চুপিসারে সেখান থেকে সরে গিয়ে সন্ধ্যাকে খুঁজতে লাগল।

ধরনীর বুকে ততক্ষণে দিনের আলোকে বিদায় জানিয়ে অন্ধকার নেমে এসেছে। চারিদিক ছেয়ে গেছে নিছিদ্র নিকষ কালো অন্ধকার। ঠিক সেই মুহূর্তে রশিদ সাহেবের বাড়িতে আগমন ঘটল ইমতিয়াজ খানের। বন্ধুকে এসময় বাড়িতে দেখে ভ্রু-কুচকে গেল রশিদ সাহেবের। ইমতিয়াজ খান রশিদ সাহেবের কাছে এগিয়ে এসে বললেন,

–“কি রে এভাবে হাঁ করে তাকিয়ে কি দেখছিস?আমি কি তোর বাড়িতে আসতে পারি না নাকি?”

রশিদ সাহেব মৃদু স্বরে বললেন,

–“তা কেন হবে। অবশ্যই আসতে পারিস। তবে তুই আর বাড়িতে আসিস না দেখে একটু অবাক হয়েছি এই যা।”

–“আসলে তোর সাথে আমার কিছু কথা ছিল?”

রশিদ সাহেব বুঝতে পারলেন ইমতিয়াজ কি নিয়ে কথা বলতে চায়। তাই বলে উঠলেন,

–“আমার স্টাডি রুমে চল। বাদবাকি কথা না হয় সেখানেই হবে।”

–“ঠিক আছে চল তবে।”

রশিদ সাহেব আর ইমতিয়াজ সাহেব একসাথে স্টাডি রুমের দিকে যেতে লাগলেন।যাওয়ার আগে অবশ্য সবাইকে বলে গেলেন,

–“ওনারা আপাতত নিরিবিলিতে দুই বন্ধু কথা বলতে চান। তাই আপাতত যেন ওনাদের কেউ বিরক্ত না করে।”

সবাই ওনার কথা শুনে মাথা নাড়িয়ে সম্মতি দিলো ।এর অর্থ ওনি ডাকা না অব্দি কেউ ওনাদের বিরক্ত করবে না।

ড্রইংরুমে মুখোমুখি বসে আছে দুই বন্ধু। অনেকদিন পর আবারো একসঙ্গে বসেছে দুজন। দুইজনের মনেই কথার পাহাড় জমে আছে কিন্তু মন খুলে বলে ওঠতে পারছে না কেউই। নিরবতা রেশ কাটিয়ে রশিদ সাহেব নিজেই বলে ওঠলেন,

–“কি জন্য এসেছিস এখানে?”

ইমতিয়াজ খান দীর্ঘনিঃশ্বাস ফেলে বললেন,

–“তুই তো জানিস কেন এসেছি?”

–“না জানি না আর না জানতে চাই।”

–“তুই কেন এমন করছিস রশিদ? আমি তো আগেই বলেছি আমি পরিকে ধোঁকা দেই নি। যদি আমি ওকে ধোঁকা দিতেই চাইতাম তবে ওকে বিয়ে করতাম না।”

–“একথা আগেও শুনেছি আমি। এখন বল কি বলতে চাস?”

–“আমাকে আমার পরি আর আমার সন্তানের ঠিকানা দে।”

–“আমি আগেই বলেছি , আশরাফ কিংবা পরির কোন খবর জানি না আমি। তবুও বারবার কেন এক কথা বলেই চলেছিস? ”

–“সত্যিই জানিস না নাকি আমার কাছে লুকিয়ে যাচ্ছিস?”

–“লুকাবো কেন? আমি জানি না ওদের কোন কথা।”

–” বেশ, একটা কথা শুনে রাখ যদি আমি পরি বা আমার সন্তানের খবর কোনদিন জানতে পারি তবে সেদিন তোরা কেউ আমাকে আটকাতে পারবি না।”

কথাগুলো বলে একবুক নিরাশা নিয়ে ইমতিয়াজ খান চলে গেলেন নিজ গন্তব্যের দিকে। সতেরটা বছর ধরে নিজের স্ত্রী ও সন্তানকে খুঁজে চলেছেন তিনি। কিন্তু খুঁজে পাচ্ছেন না। কেউ যদি ইচ্ছে করে হারিয়ে যায় তবে কি তাকে খোঁজে পাওয়া যায়? নীল আকাশের দিকে তাকিয়ে ইমতিয়াজ খান বিড়বিড় করে বলে ওঠলেন,

–“আমাকে এভাবে একা ফেলে কোথায় চলে গেলে তুমি পরি। আমাকে একটিবার বিশ্বাস করতে পারলে না কেন? আমার মনের জমানো কথাগুলো কি বলার সুযোগ দিবে না পরি?জানো আমি তোমাকে ছাড়া ভালো নেই পরি,ভালো নেই আমি। একটিবার ফিরে আসো আমার কাছে তারপর তুমি যা বলবে তাই হবে পরি। শুধু একটিবার ফিরে এসো।”

ইমতিয়াজ খানের এই কান্নারোদন কথাগুলো নিশ্চুপ আকাশটি ছাড়া আর কেউ শুনতে পেলো না। কেউ শুনতে পেলো না তার দীর্ঘশ্বাসের শব্দ। রাতের আঁধারের সঙ্গে সেই দীর্ঘশ্বাসের শব্দ মিশে গেল সবার অগোচরেই।

চলবে

(আসসালামু আলাইকুম। ২০০০ শব্দ লিখেছি আজ। আজকের পর্ব কেমন হয়েছে জানাবেন আর ভুলত্রুটিগুলো ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন। নেহাল ও রোদের বিয়ের দাওয়াত রইল সবাইকে । আজকের পর্ব কেমন হয়েছে তা জানাতে ভুলবেন না কিন্তু। ভালো থাকবেন সবাই।)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here