শ্রাবন সন্ধ্যা পর্ব:-৪৩

0
1158

শ্রাবন সন্ধ্যা পর্ব:-৪৩
#আমিনা আফরোজ

আকাশের বুক চিরে সূর্যের লাল আভা উঁকি দিয়ে জানাচ্ছে নতুন দিনের আগমনের বার্তা। সূর্যের সোনালী কিরণ ছড়িয়ে পড়ছে সর্বত্র । সূচনা হলো আরেকটি নতুন দিনের। সেই সাথে পুরোনো দিনটি যোগ হলো স্মৃতির পাতায়।

সন্ধ্যা আর শ্রাবণ দুজনে একসাথে ফজরের নামাজ আদায় করল। নামাজ পড়ে শ্রাবণ আর ঘুমাতে গেল না । ভাবল সন্ধ্যাকে নিয়ে আজ সূর্যাদয় দেখবে। শ্রাবন কিছু বলার আগে সন্ধ্যা নিজেই বলে উঠলো,

–” চলুন না আজ একসাথে সূর্যউদয় দেখি?”

শ্রাবন সন্ধ্যাকে বুকের একপাশে জড়িয়ে নিয়ে বলল,

–” তবে তাই হোক। আমার মায়াবতী যখন আবদার করেছে তখন কি আর তা না পূরণ করে থাকতে পারি?”

শ্রাবণের উত্তর শুনে সন্ধ্যা বলল,

–” ঠাণ্ডা ঠাণ্ডা হাওয়ায় সূর্যদয় দেখার সময় দুকাপ কফি হলে মন্দ হয় না ।”

–“তা ঠিক তবে দুকাপ কফি নয় বরং এক কাপ কফি হলে মন্দ হবে না । দুজনে নাহয় একই কফি খেতে খেতে আজকের দিনটা শুরু করবো।”

শ্রাবণের কথা শুনে সন্ধ্যা লজ্জা পেল। তারপর ধীর কন্ঠে বলল,

–” আপনি অপেক্ষা করুন, আমি কফি করে আনছি।”

–” ঠিক আছে, আমি তোমার অপেক্ষায় রইলাম।”

সন্ধ্যা শ্রাবনের কথার প্রতি উত্তরে হেসে নিচে রান্নাঘরের দিকে চলে গেল আর শ্রাবণ মাথা থেকে টুপি খুলে রেখে বারান্দার দিকে গেল।

হেমন্তের সকালে শীতল হাওয়া এসে দোল দিয়ে যাচ্ছে শ্রাবনকে। শ্রাবনও পরম শান্তিতে চোখ বুজে রইল। নিঃশ্বাস ভরে নিল সতেজ শীতল হাওয়া। মৃদু হাওয়ার তালে তালে দোল খাচ্ছে সাদা রঙ্গের বেলিফুলগুলো। বারান্দায় বেলি ফুলের গাছ সন্ধ্যাই লাগিয়েছে। সন্ধ্যার নাকি বেলিফুল খুব পছন্দ। শ্রাবণও না করে নি, প্রিয়তম স্ত্রীর পছন্দ মতোই বেলী ফুলের শুভ্রতা দিয়ে সাজিয়েছে পুরো বারান্দা।

মিনিট দশেকের মাথায় সন্ধ্যা কফি হাতে এসে দাঁড়াল শ্রাবণের পাশে । শ্রাবণের কথা মতো এক কাপ কফিই নিয়ে এসেছে ও। শ্রাবন তখনো চোখ বন্ধ করেই ছিল। সন্ধ্যার উপস্থিতি বুঝতে পেরেই বলল,

–” এসে গেছো বেলীফুল?”

–“বেলীফুল নামটা আবার কবে দিলেন?”

শ্রাবন নেশাক্ত গলায় বলল,

–” বেলি ফুলের মতোই শুভ্রতা তোমার মুখে, তাই তোমায় বেলীফুল না ডেকে পারলাম না। ”

–“তাই বুঝি ?”

–“হুম।আমার কথা বিশ্বাস হচ্ছে না বুঝি?”

–” হচ্ছে তো ।”

–“তবে হাসছো কেন ?”

–“এমনিতেই । ধরুন আপনার কফি।”

কথাটা বলেই সন্ধ্যা হাত বাড়িয়ে শ্রাবনের দিকে কফির কাপটা বাড়িয়ে দিল। শ্রাবন সন্ধ্যার হাত থেকে কফির কাপটা না নিয়ে সন্ধ্যাকে সামনে নিয়ে এসে দাঁড় করালো তারপর পিছন থেকে জড়িয়ে নিয়ে বলল,

–” এখন চুপচাপ করে ভোরের স্নিগ্ধতা উপভোগ করো বেলিফুল।”

–” কিন্তু আপনার কফি?”

শ্রাবন সন্ধ্যার হাতের উপর নিজের হাত রেখে কাঁধের এক পাশ থেকে এক চুমুক কফি খেয়ে বলল,

–” এবার তোমার পালা বেলিফুল ।”

শ্রাবনের দিকে মুচকি হেসে সন্ধ্যাও কফিতে চুমুক দিল। ততক্ষণে সূর্যের সোনালী আভা আলোকিত করে ফেলেছে চারিদিক। মৃদু শীতল বাতাস এসে দোল দিয়ে যাচ্ছে দুজনকে । থেমে যাক না এ সময়। দুজন দুজনাতে মিশে যাক আরো নিবিড়ভাবে। শুরু হোক নতুন পথচলা।

এদিকে সকালে সন্ধ্যাকে দেখার পর থেকে মনোয়ারা বেগম দুশ্চিন্তায় আছেন। সন্ধ্যার ভেজা চুল উনার দৃষ্টিতে এড়ায় নি। সকাল বেলায় সন্ধ্যার মুখের স্নিগ্ধতা আর ভেজা চুল যেন মনোয়ারা বেগমের মনকে আরো বেশি তিক্ত করে চলেছে। মনোয়ারা বেগম ঘরে এসে বলতে লাগলেন,

–” না এ মেয়েকে আর বাড়াবাড়ি করতে দেওয়া যাবে না । কিছু একটা করতেই হবে আমাকে তবে তা সবার অগোচরে।”

কথাগুলো বলে বিছানায় শুয়ে থাকা মেয়েটির মুখের দিকে তাকিয়ে হেসে বললেন,

–” তোর সুখের জন্য আমি সবকিছু করতে পারি। এজন্য আমাকে যা করতে হয় করব। তুই কোন চিন্তা করিস না। তোর জীবন সাজিয়ে দেওয়ার দায়িত্ব আমার।”

কথাগুলো বলেই মনোয়ারা বেগম পরম মমতায় মেয়ের মাথায় বিলি কেটে দিতে লাগলেন। মেয়েটিও মায়ের কোল ঘেঁষে পরম শান্তিতে তলিয়ে গেল ঘুমের রাজ্যে ।

সময় বিকেল চারটে বেজে ত্রিশ মিনিট। বেশ কিছুক্ষণ হলো নেহালের কথামতো ছুটির পর রোদ কলেজের গেটের সামনে দাঁড়িয়ে আছে অনেকক্ষণ থেকে কিন্তু নিহাদের আসার নাম নেই। অপেক্ষার প্রহর গুনতে গুনতে রোদের মুখে বিরক্তির আভা ফুটে উঠল। রোদ বিড়বিড় করে বলে উঠলো ,

–“অপেক্ষা করার মতো বিরক্তিকর কাজ আর কিছু হতে পারে না তা যদি হয় প্রিয়জনের জন্য তাহলে তা যেন আরো বেশি খারাপ লাগার কারন হয়ে ওঠে।”

গুনে গুনে পঁয়ত্রিশ মিনিটের মাথায় নেহালের দেখা পেল রোদ। হাতে থাকা ঘড়িটির দিকে তাকিয়ে আবার নেহালের দিকে তাকালো ও । রোদকে এভাবে তাকাতে দেখে নেহাল ভ্রূ-কুচকে জিজ্ঞেস করল,

–” এভাবে তাকিয়ে আছো কেন ?”

নেহালের কথা শুনে এতক্ষণ মনের কোণে চাপা পড়া রাগটা যেন আবারও মাথাচাড়া দিয়ে উঠল রোদের। মুখ ফুলিয়ে বলল,

–“তো কি করব শুনি?”

–” আপাতত আমার সাথে গেলেই চলবে আর কিছু করতে হবে না ।”

নেহালের কথা শুনে রোদ অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করল,

–” কোথায় যাব আমরা?”

–” এইটা তো বলা যাবে না। এইটা সিক্রেট কথা । তোমার জন্য আজ একটা বড় সারপ্রাইজ প্ল্যান করেছি আমি। ভয় হচ্ছে সারপ্রাইজটা পেয়ে তুমি না আবার হার্ট অ্যাটাক করে বসো।”

নেহালের কথা শুনে রোদ কপট রাগ দেখিয়ে বলল,

–“সব সময় আপনি এতো হেঁয়ালিপানা কথা বলেন কেন?”

–“এখন আমার কথা বিশ্বাস হচ্ছে না তো পরে কিন্তু আমাকে কিছু বলতে পারবে না যে তোমাকে আমি আগে থেকে কিছু বলে রাখি নি কেন।”

–“কোথায় নিয়ে যাবেন বলুন তো?”

–“ওই যে বললাম ওটা সিক্রেট কথা বলা যাবে না তোমাকে।”

নেহাল কথাগুলো হেসে হেসে বলে ওর বাইক আনতে গেল কলেজে পার্কিং এরিয়াতে। নেহালকে এভাবে চলে যেতে দেখে রোদ মুখ বাঁকিয়ে বলে ওঠলো,

–” একেতো দেরি করে এসেছে তারওপর আবার ভাব দেখাচ্ছে যেন কিছুই হয় নি । আমাকে এতক্ষণ দাঁড়িয়ে রাখার জন্য যদি আপনাকে শাস্তি না দিতে পারি তবে আমার নামও রোদ নয় মিষ্টার নেহাল আহমেদ অভ্র। ”

মিনিট পাঁচেকের মাথায় নেহাল বাইক নিয়ে রোদের সামনে দাঁড়ালো। রোদের দিকে তাকিয়ে দেখল রোদ একনাগাড়ে কি সব যেন বিড়বিড় করে বলছে। নেহাল রোদের এমন কান্ড দেখে ভ্রু-কুঁচকে জিজ্ঞাসা করল ,

–“বিড়বিড় করে কি বলছো?”

নেহার কথায় এতক্ষণে সম্বিত ফিরে পেল রোদ। তারপর মৃদু হেসে বলল,

–“ভাবছিলাম কোথায় নিয়ে যেতে পারেন আপনি?”

নেহাল হেসে বলল,

–” তোমায় মেরে ফেলার জন্য নিয়ে যাচ্ছি.”

নেহালের কথা শোনার রোদ আতঁকে ওঠলেও পরবর্তীতে বলে ওঠলো,

–” আপনার হাতে মরতেও রাজি আছি আমি।”

–” হয়েছে হয়েছে এবার বাইকে উঠে পড়ো।”

নেহালের কথা অনুসারে রোদ বাধ্য মেয়ের মতো বাইকে ওঠে নেহালের কাধে হাত রাখল। নেহালও মুচকি হেসে গাড়ি চালানো শুরু করলো। নেহালদের গাড়ি ছুটে চলল এক অজানা গন্তব্যের পথে।

চলবে

(কেমন হয়েছে জানাবেন আর ভুলত্রুটিগুলো ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।আপনাদের কাছে কি মনে হচ্ছে ? রোদের জন্য কি সারপ্রাইজ প্ল্যান করেছে নেহাল? আপনাদের মন্তব্য কমেন্টে জানাবেন। ভালো থাকবেন।)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here