শ্রাবন সন্ধ্যা পর্ব:-৪০

0
1142

শ্রাবন সন্ধ্যা পর্ব:-৪০
#আমিনা আফরোজ

সময় তার আপন খেয়ালে মত্ত। সে যে কারো জন্য অপেক্ষা করে না। আকাশটাও আজ শুভ্র মেঘের পরোতে পরোতে ঢেকে আছে। বাতাসে শুভ্র মেঘ খণ্ডগুলো মনের আনন্দে নীল আকাশের এদিক-সেদিক উড়ে বেড়াতে ব্যস্ত। কখন যে দিন গড়িয়ে বিকেল চলে গেল তা বুঝতেই পারলো না সন্ধ্যা। সকালবেলা শ্রাবণকে বিদায় দিয়ে ঘরের টুকটাক কাজ করতেই প্রিয়ন্তীকে দেখে ও নিজেও চলে এসেছিল রোদের ঘরে । দিনের বাকি সময়টুকু বেশ ভালোই কেটেছে ওদের। আড্ডার মাঝপথে ওদের সাথে যোগ দিয়েছিল তুলি। এতে অবশ্য মনোয়ারা বেগম বেশ চটে গেললেন।তিনি সন্ধ্যার উদ্দেশ্যে বলে উঠলেন,

–“বাড়ির বউদের কি এসব করা মানায়। তোমার পরিবার কিছু শেখাই নি তোমাকে? ভালো সংস্কার না শিখিয়ে শুধু বেহাল্লাপোনা শিখিয়েছে।অবশ্য তোমাকে বলেই বা কি হবে বাড়ির মেয়েই তো ভালো না। বাহিরের ছেলেদের সাথে এদিক-সেদিক ঘুরে বেড়ায়। ”

মনোয়ারা বেগমের ধমক শুনে চুপসে গিয়েছিল ওরা চারজন।রোদ আর সন্ধ্যা মাথা নিচু করে বসেছিল বেশ কিছুক্ষণ। তুলি ওর মাকে কিছু বলতে নিলে ওকেও ধমকে চুপ করে দিয়েছিল মনোয়ারা বেগম। এদিকে মনোয়ারা বেগমের চিৎকার শুনে রাবেয়া বেগম বেরিয়ে এলেন ঘর থেকে। তারপর তুলির থেকে পুরো ঘটনা শুনে বলে উঠলেন,

–“ওদেরকে ওদের মত থাকতে দাও না মনু।”

–“কিন্তু ভাবি বাড়ির বউদেরকে কি এভাবে হেসেখেলে সময় কাটালে চলবে। দুপুরে রান্না কে করবে তুমি বলো?

–“রান্না করার জন্য তো আলাদা লোক আছে মনু। তাছাড়া সন্ধ্যাকে রান্নাবান্নার কাজের জন্য ছেলের বউ করে নিয়ে আসি নি আমি।”

–“বাড়ির বউ থাকতে কিনা কাজের লোকের রান্না খেতে হবে আমাদের?”

–“কেন মনু এর আগে যখন এসেছিলে সন্ধ্যা তখন ছিল না তখন তো তুমি কাজের লোকের হাতেই খেয়েছ। তবে আজ কেন খেতে পারবে না ? তোমার সমস্যাটা কোথায় মনু ? সন্ধ্যা গল্প করাই নাকি সন্ধ্যা নিজেই ?”

রাবেয়া বেগমের কথা শুনে মনোয়ারা বেগম থতমত খেয়ে বলল,

–“এসব তুমি কি করছো ভাবী?”

–“এ সব তোমায় বলতাম না মনু কিন্তু তোমার এমন আচরণে আমাকে বলতে হচ্ছে।আশা করি তুমি ওদের আর কিছু বলবে না।আজকের দিনটা না হয় ওদের মতো করেই ওরা কাটাক।”

রাবেয়া বেগমের কথার পৃষ্ঠে আর কোনো কথা বলেনি মনোয়ারা বেগম । চুপচাপ নিজের ঘরে চলে গেছে। মাথায় যে তারা এখন অনেক চিন্তা। সন্ধ্যার একটা স্থায়ী ব্যবস্থা না করা অব্দি ওনার শান্তি নেই। কি করে সন্ধ্যার ক্ষতি করা যায় এই নিয়েই রাতদিন ভেবেছেন তিনি কিন্তু কোন পথে খুঁজে পাচ্ছেন না।তবে যে করেই হোক এই সন্ধ্যার একটা বিহিত করবেন তিনি। আজ সন্ধ্যার জন্য এতো কথা শুনতে হলো ওনাকে।

এদিকে চারজনে হেসে-খেলে, ছবি দেখে আর গল্প করে পুরোটা দিন কাটিয়ে দিল ওরা। গল্পের ফাঁকে ফাঁকে সন্ধ্যা অবশ্য অপরাধী দৃষ্টিতে রোদের দিকে তাকাচ্ছিল। এরকম বেশ কয়েকবার রোদের সাথে চোখাচোখি হলে রোদও মিষ্টি হাসি উপহার দেয় সন্ধ্যাকে। সন্ধ্যা অনেকবার রোদকে নেহালের কথা বলতে চেয়েছে কিন্তু পরমুহুর্তে কানে বেজে উঠেছে নেহাল আর রোদের বিয়ের কথা। আবার কখনও কখনও মনের এককোণে জেগে উঠেছে আত্মবিশ্বাস। হয়ত রোদ আবার নেহালের এলোমেলো জীবনটাকে নিজের রঙে সাজিয়ে দেবে। তবুও মাঝে মাঝে বড্ড ভয় হয় সন্ধ্যার। ওর জন্য মেয়েটার জীবনটা শেষ হয়ে যাবে না তো ? আচ্ছা তবে কি সন্ধ্যার উচিত ছিল সবাইকে সত্যি কথা বলে দেওয়ার? না কি যেমন চলছে তেমনটাই চলতে দেওয়াটাই ঠিক হবে?

হেমন্তের পড়ন্ত বিকেল বেলায় প্রকৃতি সেজেছে নিজের রূপে। পশ্চিম আকাশে এখনো ধূসর রংয়ের ছায়া । গোটা আকাশের গায়ে যেন একটা স্পষ্ট ঘুমের পলেস্তরা লেপ্টে দিয়েছে কেউ।

ছাদের একপাশে দাঁড়িয়ে আছে রোদ। প্রিয়ন্তি চলে গেছে প্রায় বেশ কিছুক্ষণ আগে। পুরোটা দিন মন খারাপ থাকলেও তা কাউকে বুঝতে দেয়নি রোদ। কিন্তু প্রিয়ন্তী চলে যেতেই মন খারাপ নামক বদ রোগটা যেন আবারো জেঁকে বসেছে ওর মনে। ঘরে যেন দম বন্ধ হয়ে আসছিল রোদের। তাইতো খোলা আকাশের নিচে একটু স্বস্তির নিঃশ্বাস নিতে এসেছে ও।

হঠাৎ রোদের হাতে থাকা ফোনটা মৃদু কেঁপে উঠলো। সেই সাথে ভঙ্গ হলো রোদের নিজের সৃষ্টি করা ভাবনার রাজ্য। ফোনের স্কিনে নিহালের নাম দেখে ভ্রু কুঁচকে গেল রোদের। সাধারণত এই সময় কখনো কল করে না নেহাল। আজ হঠাৎ কল দেওয়াতে একটু অবাক হয়েছে ও। কিন্তু রোদ অভিমানে কল রিসিভ না করে চুপ করে দাঁড়িয়ে রইলো।পরপর তিনবার ফোন বেজে আপনাআপনিই থেমে গেছে। এবার চতুর্থ বারের মত আবারো বেজে উঠলো রোদের হাতে থাকা ফোনটি। অবশেষে অভিমান দূরে রেখে কল রিসিভ করল রোদ তবে হ্যালো বলার আগেই ওপাশের জোরালো চিৎকার কানে এল রোদের।

–“এতক্ষণ লাগে তোমার কল রিসিভ করতে? কখন থেকে কল দিচ্ছি আমি? তোমার কোন পাত্তাই নেই। কোথায় ছিলে তুমি?”

–” অন্য খেয়ালে মঙ্গ ছিলাম তাই বুঝতে পারিনি।”

–” তা কি এমন ভাবনায় মগ্ন ছিলে শুনি?”

রোদ দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল,

–” কি কারনে কল দিয়েছেন আপনি?”

–” কারণ তো অনেক আছে। কোনটা বলি বলো তো?”

–” এক এক করে সব বলে ফেলুন।”

নেহাল মুচকি হেসে বলল,

–” এভাবে তো বলা যাবে না।”

–“তো কিভাবে বলবেন শুনি?”

নেহাল কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলল,

–” সন্ধ্যার পর বাইরে বেরোতে পারবে?”

নেহালের এমন কথা শুনে আরো অবাক হয়ে গেল রোদ। আজ কি হয়েছে নেহালের? এত ঠান্ডা মেজাজের কথা বলছে ওর সাথে। রোদ কিছুক্ষণ ভেবে বলল,

–” সন্ধ্যার পর কিভাবে বেরোবো? ফুপি দেখলে আমাকে আস্ত রাখবে না ।”

নেহাল দুষ্টামির ছলে বলে উঠলো,

–“তুমি যে এতো ভীতু আগে জানতাম না তো?”

নেহালের এমন কথা শুনে রোদ রেগে বলে উঠলো,

–“আপনি কি আমাকে কথা শোনানোর জন্যই কল দিয়েছেন ?”

–“না তো।”

–” কিন্তু আমার তো তাই মনে হচ্ছে ।”

নেহাল গম্ভীর স্বরে বলল,

–” দেখো কিভাবে বাসায় ম্যানেজ করবে তা আমি জানিনা । আমি তোমায় লোকেশন মেসেজ করে পাঠাচ্ছি তুমি চলে এসো। বাকি কথা না হয় সামনাসামনি হবে। আজ তোমার জন্য একটা সুখবর আছে । যা শুনলে তোমার মন আপনা-আপনি ভালো হয়ে যাবে। তাড়াতাড়ি চলে এসো,আমি তোমার অপেক্ষায় থাকব।”

কথাগুলো বলে নেহাল রোদের উত্তরের অপেক্ষা না করেই কল কেটে দিলো। নেহাল কল কেটে দেওয়ার পর রোদ খেয়াল করল এখন আর ওর অতটা খারাপ লাগছে না বরং মন খারাপের মেঘ সরে গিয়ে সেখানে হাসি ফুটেছে। মনে জেগেছে অন্য এক অনুভূতি।

রোদের শরীরের দুপাশ দিয়ে একটা আলতো মিষ্টি হওয়ার স্রোত বয়ে যাচ্ছে। শীতের অগ্রিম খবর জানানোর ওসিলায় যেন জানতে চাইছে সব গোপন খবর , তারপর তার কোমল আবদার ক্রমশ আচ্ছন্ন করে ফেলেছে রোদের মনকে। তার সঙ্গে মেঠো ধুলোর মতো উড়ে আসুক রাজ্যের যত বেনামী কবিতারা।

আজ না হয় খোলা থাক চুল, নিজের সুরে সুর মিলিয়ে আবছা সোনা আলোয় জাল বুনুক নিজে। জন্ম হোক আরও একটি বেনামী কবিতার।

চলবে

(আসসালামুয়ালাইকুম। কেমন হয়েছে জানাবেন আর ভুলত্রুটিগুলো ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন। আজকের পর্ব কেমন লাগলো আপনাদের তা কমেন্ট করে জানাবেন। যারা এখনো নিরব পাঠক আছেন তারা দয়া করে সাড়া দিবেন। আপনাদের সাড়া পেলে লেখার আগ্রহ বেড়ে। ভালো থাকবেন সবাই।হ্যাপি রিডিং ???)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here