শ্রাবনের মেঘ পর্ব ৬

0
636

গল্পের নাম : #শ্রাবনের_মেঘ
লেখিকা : ফারিয়া
পর্ব : ৬

মেঘার মা রহিমা বানু এলে তাকে জিজ্ঞেস করা হয়,
” মেঘা কি আপনারই মেয়ে? কোথায় পেয়েছেন আপনি ওকে? ”

এই প্রশ্ন শুনেই রহিমা বানু ঘামতে থাকে, সিফাত সাহেব উনাকে আশ্বস্ত করে বললেন,
” ভয় পাবেন না, বলুন ”

রহিমা বানু বলা শুরু করলো।
🍂ফ্ল্যাশব্যাক 🍂
আসলে মেঘা রহিমার মেয়ে নাহ, পেটে না ধরলেও নিজের মেয়ের থেকে কম ভালোবাসে নি ওকে। ওরা নিঃসন্তান ছিলাম, আমি জানতাম না মেঘার বাবা জসিম কিসের সাথে জড়িত। তবে জসিম এসব করতেন নাহ! হঠাৎই পরিবর্তন হতে শুরু করে, হয়তো তখন থেকেই এসবে জড়িয়েছে। এক ঝড়ের রাতে জসিমের ফিরতে দেরি হওয়ায় জসিমের জন্য অপেক্ষা করছিলো রহিমা বানু। হঠাৎ উঠানে একটি ছায়া দেখতে পান, একটু এগিয়ে যেতেই দেখে ছাতা হাতে আধভেজা জসিম, কোলে একটি ছোট্ট ফুটফুটে মেয়ে। রহিমা অবাক হয়ে তাকে জিজ্ঞেস করে,
” এই বাচ্চা কার? কোথায় পেয়েছো তুমি? ”

জসিম বলে,
” পরে সব বলছি, আগে দুধ গরম করে এনে বাবুটাকে খাইয়ে দাও। ওর খুব ক্ষুদা পেয়েছে বুঝছো না? ”

রহিমা বানু তাই করলো, কাপড় পালটে এসে জসিম বললো,
” জানো, আজ বাজার থেকে আসবার পথে দেখলাম একটা বাচ্চা রাস্তার পাশে একা বসে আছে। কেউ নেই আশেপাশে, মানুষ রাস্তা দিয়ে হেটে গেলেও পাত্তা দিচ্ছিলো না। আমি সামনের দোকানে গিয়ে জিজ্ঞেস করতেই বললো, একজন মহিলা এবং একজম পুরুষ এই মেয়েটাকে এখানে ফেলে গিয়েছে। আমি ভাবলাম, অযত্নে এই ফুটফুটে মেয়েটাকে রেখে না এসে আমার সাথেই নিয়ে আসি। একদিন এই মেয়ে জীবনে অনেক বড় হয়ে আমাদের নাম উজ্জ্বল করবে, তখন যারা ওকে ফেলে গিয়েছিলো, তারা আফসোস করবে। তবে আজ থেকে ও আমার মেয়ে, ওর আসল বাবা মা ফিরে এলেও আমি দেবো না আমার মেয়েকে। ”

নিজের স্বামীর মুখে এসব কথা শুনে আবেগে আল্পুত হয়ে কেদে দিলো। বলে উঠলো,
” আচ্ছা ওর নাম কি দেওয়া যায় বলো তো? ”

জসিম মিয়া বললেন,
” তুমি কি খেয়াল করেছো, ওর গলায় একটি চেইন লকেট আছে। যেটাতে ওর নাম ‘ মেঘা আহম্মেদ ‘ লিখা আছে। তাই ওর নাম আমরা পাল্টাবো না, আর শত অভাব হলেও এই চেইন আমরা বিক্রি করবো না কথা দিলাম ”

তখন থেকেই মেঘাকে ওরা মানুষ করে। শত অভাব পড়লেও, একবেলা না খেয়ে থাকলেও এই চেইন ওরা বিক্রি করে নি। আর ১০ম শ্রেনী অবধি পড়ার কারনে, ওরা শুদ্ধ ভাষায় কথা বলতো। হঠাৎই জসিম মিয়া পরিবর্তন হতে শুরু করে, আর লোভে পড়েই মেঘার প্রতি তার ভালোবাসা ফিকে হয়ে যায়।
🍂ফ্ল্যাশব্যাক এন্ড 🍂
সবশুনে ইশা বেগম মেঘার ঘাড়ের কাছ থেকে চুল সরিয়ে দেখতেই চিৎকার দিয়ে উঠলো। আর বলে উঠলো,
” তোমরা দেখেছো? এটাই আমার মেঘা। দেখো সেই জন্মদাগ এখনো আছে, আর এই লকেট তো কারো কাছেই থাকার কথা না। আমি আমার মেয়েকে পেয়েছি ”

এই বলেই উনি জ্ঞান হারালো। মেঘার কাছে এতোক্ষনে সব পরিষ্কার, সবাই ইশা আহম্মেদের জ্ঞান ফিরানোর চেষ্টা করলো। জ্ঞান ফিরতেই উনি মেঘাকে জড়িয়ে ধরে হাউমাউ করে কান্না করে বললো,
” দেখো আমি আমার মেয়েকে পেয়েছি, যাকে মৃ/ত বলে জানতাম সে আজ আমার বুকে। প্রথমদিন থেকেই ওকে দেখলে আমার বুক কেপে উঠতো। আমি আমার হারানো মেয়েটিকে পেয়েছি, এবার ওর বিয়েটা আরও ধুমধাম করে হবে৷ শ্রাবন বাবা, তোর প্রতি আমি কৃতজ্ঞ। তুই না থাকলে ওকে পেতাম না ”

শ্রাবন মুচকি হাসলো। আর ভাবলো, শ্রাবন এর আগে এসব লক্ষ্য করেনি কেনো। মেঘা নিজের আসল পরিবারকে পেয়ে আনন্দে কেদে দিলো। রহিমা বানুর চোখ ছলছল করে উঠলো, মেঘা তা লক্ষ্য করে বললো,
” আমি সবার উদ্দেশ্যে একটা কথা বলতে চাই, আমি জানি তোমরা আমার নিজের পরিবার এবং আমি এই আহম্মেদ পরিবারেরই মেয়ে। তবে, যারা আমায় ছোট থেকে বড় করেছে, আমি তাদের ছাড়তে পারবো না। এটা সম্ভব নয়, তোমরা তো আমায় ফেলে এসেছিলে। কিন্তু, ওরা তো আমায় আগলে নিয়েছিলো। জসিম বাবা খারাপ হলেও, আমায় নিয়ে তার স্বপ্ন ছিলো। আমি তা পূরন করতে চাই। হয়তো তাদের ঋণ শোধ করা সম্ভব নয়, তবে আমি তাদের স্বপ্নপূরণ করতে চাই ”

সিফাত সাহেব বলে,
” দেখো মা, তুমি ভুল বুঝছো। তোমায় আমরা কেউ ফেলে আসি নি। তুমি খুব ছোট ছিলে, তোমার বয়স ছিলো এক বছর। তাই তুমি জানো না, পুরোটা শুনলে বুঝতে। আমরা এক অনুষ্ঠানে গিয়েছিলাম, সেখান থেকেই তুমি হারিয়েছিলে। হ্যাঁ, ভাবতে পারো এতোজন থাকতেও কি করে সম্ভব হলো। কিন্তু, এর পিছনের রফস্য খুব শীঘ্রই আমরা বের করবো। তুমি ভুল বুঝো না ”

মাহিন সাহেব বলে উঠলো,
” আর তোমার ওই মাকে আমরা ছাড়তে বলছি না। আমরা উনার প্রতি কৃতজ্ঞ, উনি না হলে তোমার যে কি হতো। তুমি উনাদের স্বপ্ন পূরন করবে, তোমার মায়ের থাকা এবং ব্যবস্থা আমরা করে দেবো ”

মেঘা নিজের ভুল বুঝতে পারলো, ইফতি তাকে জড়িয়ে ধরে বললো,
” মেঘুপাখি, তুই আমার বোন? তুই জানিস, রোজ রাতে তোর বালিশ জড়িয়ে কান্না করতাম আমি। স্কুল, কলেজে বন্ধুর বোনকে দেখলে তোর কথা আমার মনে পড়তো অনেক। ভাবতাম, আমার ছোট্ট পরিটা থাকলে আমিও ওকে অনেক ভালোবাসতাম। আমায় ভাইয়া বলে ডাকবি? ”

মেঘা ‘ ভাইয়া ‘ বলে ডেকে জড়িয়ে ধরলো। পাশ থেকে শান্ত বললো,
” হুহ, নিজের আপন ভাইকে পেয়ে এই ভাইয়ের কথা ভুলেই গেছে মানুষ ”

মেঘা হেসে বললো,
” নাহ, আমার তো তিনটে ভাই ”

শেফালী আহম্মেদ বললো,
” তিনটে মানে? ”

মেঘা হেসে বললো,
” কেনো, ইফতি ভাইয়া, শান্ত ভাইয়ু আর শ্রাবন ভা.”

পুরোটা শেষ করার আগেই জিহবায় কা/ম/ড় দিলো। উপস্থিত সবাই কান্নার মাঝেও হেসে দিলো। শ্রাবন চোখ ছোট ছোট করে মেঘার দিকে তাকিয়ে বললো,
” বাহ! বউ পেয়েছি একটা ”

আজ রহিমা বানু থাকবে, বিয়েটা গ্রামে হবে না। অনেক ধুমধামে হবে। আহম্মেদ বাড়ির দুই ছেলেমেয়ের বিয়ে বলে কথা! মেঘা তো আহম্মেদ বাড়ির বউ এবং মেয়ে দুটোই।
🍂
রাতের বেলা খাওয়া শেষ করে সবাই কিছুক্ষন আড্ডা দিলো। রুমে যেতেই, কি যেনো মনে করে শ্রাবন বললো,
” মেঘপরী, তুমি আজ আমায় একটা সত্য বলবে? ”

মেঘা বললো,
” আমি মিথ্যা বলা পছন্দ করি নাহ ”

শ্রাবন বলে উঠলো,
” কাউকে ভালোবাসো? বা কাউকে ভালো লাগে তোমার? ”

মেঘা এই প্রশ্ন শুনে অবাক হয়ে গেলো। আর বললো,
” হটাৎ এই প্রশ্ন? ”

শ্রাবন বললো,
” পালটা প্রশ্ন করবা না, যা বলছি উত্তর দাও ”

মেঘা ঠোঁট ভিজিয়ে বললো,
” ভালোবাসি কিনা জানি না, তবে তাকে আমার খুব ভালো লাগে। আমি তার ব্যক্তিত্বের প্রেমে পড়েছি। যদি জীবনের প্রথম ভালো লাগা বলে কিছু থাকে, সেটা উনি। উনি আমায় চেনে না, তবে আমি চিনি। কিন্তু, মজার ব্যাপার হলো আমি তাকে আজও দেখি নি। ”

শ্রাবনের বুকটা ধক করে উঠলো। তার মেঘপরী অন্য কারো প্রেমে ব্যাকুল। শ্রাবন জিজ্ঞেস করলো,
” কে সে? ”

মেঘা বললো,
” সব কি একদিনেই শুনবেন নাকি জামাই সাহেব? কিছু কথা রেখেই দিন। সব জানা হয়ে গেলে আকর্ষণ কমে যায়, যেহেতু সারাটা জীবন আপনার সাথে কাটাতে হবে তাই সবই বলবো। চিন্তা নেই ”

শ্রাবন ভাবলো, আজ এতো ঘাটাঘাটির প্রয়োজন নেই। একদিনে তার বাচ্চা বউটার উপর অনেক মানসিক প্রেসার পড়েছে, এতো প্রেসার দেওয়া ঠিক না। কিছুক্ষন চুপ থেকে শ্রাবন আবারও জিজ্ঞেস করলো,
” তোমার কোন প্রফেশন ভালো লাগে মেঘপরী? ”

মেঘা হালকা হেসে বললো,
” সিক্রেট ডিটেকটিভ, ছোট থেকেই এই প্রফেশনের প্রতি আমার একরাশ ভালো লাগা। ”

শ্রাবন নিঃশব্দে হাসলো আর ভাবলো, বাহ! তার বউ যেই প্রফেশন পছন্দ করে, সে সেটাতেই আছে। ওত কিছু না ভেবে আবারও জিজ্ঞেস করলো,
” আচ্ছা কোনো সিক্রেট ডিটেকটিভকে চেনো? ”

মেঘা থমকে গিয়ে বললো,
” হ্যাঁ, আচ্ছা আজ যেহেতু সব সত্য জানা হচ্ছে তার আজই সব বলে দেই ঠিক আছে? ”

শ্রাবন খুশী হলো। মেঘা বলা শুরু করলো,
” হ্যাঁ, আমি একজন সিক্রেট ডিটেকটিভকে চিনি। আমি যার কথা বলেছি সে.”

চলবে,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here