শ্রাবনসন্ধ্যা পর্ব:-২৬
#আমিনা আফরোজ
রোদ ধীর পায়ে বারান্দা পেরিয়ে নেহালের কেবিনে চলে গেল । রোদকে নেহালের কেবিনে যেতে দেখে ভ্রু কুঁচকে গেল প্রিয়ন্তীর । এতক্ষণ রোদের পিছু পিছু আসছিল ও। রোদকে পিছন থেকে অনেকবার ডাকার পরেও রোদের কোন সাড়া না পেয়ে প্রায় দৌড়েই রোদে পিছু নেয় প্রিয়ন্তী তবে শেষ অব্দি রোদকে নাগালে না পেয়ে মনটা খারাপ হয়ে যায় ওর। গত কয়েকদিন থেকেই রোদের এমন অস্বাভাবিক আচরণ দেখে রোদকে নিয়ে কিছুটা চিন্তিত ও। আজ রোদকে নেহালের কেবিনে যেতে দেখে চিন্তার মাত্রাটা যেন শতগুণ বেড়ে গেল প্রিয়ন্তীর।
নেহালের কেবিনের সামনে হাত দুয়েক দূরে দাঁড়িয়ে আছে প্রিয়ন্তী। কেবিনের ভেতরে প্রবেশ করবে কি করবে না এই নিয়ে বেশ দ্বন্দ্বে আছে ও । অনেক ভেবেচিন্তে ঠিক করল নেহালের কেবিনে যাওয়াটা ওর উচিত হবে না , এর থেকে রোদের সাথে কথা বলার জন্য কেবিন এর বাইরে অপেক্ষা করাই ভালো হবে। তাই সিদ্ধান্ত মোতাবেক কেবিন থেকে কিছুটা দূরে রোদের জন্য অপেক্ষা করতে লাগলো ও।
এদিকে নেহাল তখন কেবিনে বসে রোদের জন্য অপেক্ষা করছিল । ক্লাসে নেহালের দিকে রোদের তাকানো ভঙ্গিই বলে দিচ্ছিল ক্লাস শেষে রোদ ওর কেবিনে আসবে। তাইতো বেশ আয়েশ ভঙ্গিতে রোদের জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছিল ও। আজ থেকেই রোদকে ওর কাছে আনার পরিকল্পনা শুরু করবে ও। এদিকে রোদ বেশ হন্তদন্ত হয়েই কেবিনে প্রবেশ করল। নেহাল ততক্ষণে রোদের আসার আভাস পেয়েই সামনে থাকা বইয়ের দিকে গম্ভীর হয়ে তাকিয়ে রইলো । যেন দেখলে মনে হয় নেহাল এই মুহূর্তে মনোযোগ সহকারে বই পড়ছে। সামনে রাখা বইয়ের প্রতি এতটাই তার মনোযোগ যে আশেপাশের কোন কিছুর প্রতিই কোন খেয়াল নেই তার।
রোদ প্রায় বেশ কিছুক্ষন নেহালের সামনে দাড়িয়ে রইলো কিন্তু কোন সাড়া না পেয়ে এবার একটু কাশি দিয়ে নেহালের মনোযোগ নিজের দিকে নেওয়ার চেষ্টা করল। এবার নেহাল বইয়ের পাতা থেকে চোখ উঠিয়ে রোদের দিকে তাকালো। তারপর অবাক হওয়ার ভঙ্গিতে বলল,
–“কি ব্যাপার তুমি এই সময়ে আমার কেবিনে কি করো?”
–“কেন আসতে পারি না বুঝি?”
–” তা আসতেই পারো কিন্তু এখন তো তোমার ক্লাস টাইম তাই না?”
–“হ্যাঁ তো?”
–“ক্লাস টাইমে আমার কেবিনে আসাটা কেমন অভদ্রতা দেখায় না?”
–“তার মানে আপনি আমাকে অভদ্র বলছেন?”
–“আমার কাছে এমনটাই মনে হচ্ছে।”
–“আপনি কি আমার সাথে একটু ভাল করে কথা বলতে পারেন না ? সব সময় আমার সাথে এভাবে কথা বলেন কেন? ক্লাসের অন্য সবার সাথে আপনি তো ভালো করেই কথা বলেন দেখি । তবে আমার বেলায় কেন এমন করেন?”
–“আমার মনে হয় তোমার সাথে আমার জমি নিয়ে কোনো রেষারেষি আছে এই জন্যই তোমার সাথে আমার কখনও পড়ে না।”
–“আপনি কি আমার সাথে মজা করছেন?”
–“তুমি কি আমার বেয়ান লাগ যে আমি তোমার সাথে মজা করবো।”
–“আপনি আসলে একটা বদ লোক । আপনার সাথে কথা বলতে আশায় আমার ভুল হয়েছে।”
–“ধন্যবাদ আমাকে এত সুন্দর একটা উপাধি দেওয়ার জন্য। যাইহোক কি বলতে এসেছেন তাড়াতাড়ি বলে বিদায় হন। আমার এখন পরবর্তী ক্লাসে যেতে হবে। তাই খুব একটা বেশি একটা সময় নেই আমার হাতে।”
–“এত অল্প সময় হবে না তো।”
–“কি এত বলতে এসেছেন বলুন তো যে এই সময় আপনার হবেনা , এর থেকেও বেশি সময় আপনার প্রয়োজন?”
–“তা না হয় পরেই জানতে পারবেন। এখন বলুন কখন ফ্রি হবেন আপনি?”
–“তাহলে স্কুল ছুটির পর দেখা করুন । তখন বেশ খানিকটা সময় পাবেন আশা করি।”
–“ঠিক আছে, স্কুল ছুটির পর না হয় বাকি কথা হবে । এখন তাহলে আসি আমি।”
–“ঠিক আছে।”
নেহালের সাথে কথা শেষ করে তড়িঘড়ি করে কেবিন থেকে বেরিয়ে এলো রোদ। আশেপাশে তাকিয়ে দেখতে লাগলো অন্য কেউ আছে কিনা? তবে কাছেপিঠে কাউকে দেখতে না পেয়ে সামনে এগোতে লাগলো ও কিন্তু রোদের থেকে হাত দূয়েক দূরে প্রিয়ন্তিকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে চমকে উঠল রোদ। রোদের হিসেব মতে প্রিয়ন্তীকে তো এখন ক্লাসে থাকার কথা কিন্তু ক্লাসে না থেকে এই মেয়ে বাইরে দাঁড়িয়ে কি করছে? এ মেয়ে কখন যে কি করে তা ঠিক বুঝে উঠতে পারে না রোদ।যাই হোক নেহালের চিন্তাটা আপাতত কিছু সময়ের জন্য মাথা থেকে বের করে দিয়ে প্রিয়ন্তীকে নিয়ে গবেষণা করতে লাগলো ও। এদিকে রোদকে আসতে দেখে এতক্ষণে যেনো প্রিয়ন্তীরর অপেক্ষার অবসান ঘটলো। তাই এগিয়ে এসে রোদকে বলল,
–“চুপচাপ লাইব্রেরীতে চল। আমার কিছু কথা আছে।”
প্রিয়ন্তীর এমন কথা শুনে অবাক হয়ে রোদ জিজ্ঞেস করল,
–“কি কথা ?এখানেই বল না?”
রোদের প্রশ্ন শুনে প্রিয়ন্তী রেগে বলে উঠলো,
–“কথাগুলো যদি এখানে বলা যেত তাহলে নিশ্চয়ই এখানে বলতাম। এখন কথা না বাড়িয়ে আমার সাথে লাইব্রেরীতে চল।”
রোদ আর কথা না বাড়িয়ে প্রিয়ন্তীর পিছু পিছু লাইব্রেরীর দিকে যেতে লাগলো। প্রিয়ন্তিকে যতোটুকু ও চিনে তাতে এখন প্রিয়ন্তীর সাথে যেতেই হবে ওকে । এ নিয়ে হাজার কথা বললেও কিছুতেই মানবে না ও তাই আর এ নিয়ে কোনো কথা বাড়ায়নি রোদ।
এদিকে সন্ধ্যা তুলিকে নিয়ে নিচে নেমে সবার থেকে বিদায় নিয়ে বাড়ির বাইরে বের হলো। শ্রাবন তখন গাড়িরর সাথে পিঠ লাগিয়ে দাঁড়িয়ে তার প্রিয়তম স্ত্রীকে দেখতে ব্যস্ত। সন্ধ্যা আর তুলি গাড়ির কাছে আসতেই শ্রাবণ বলে উঠলো,
–“তাড়াতাড়ি গাড়িতে উঠে পড়ো তোমরা। তোমাদের কাজ শেষ করে আমাকে আবার অফিসে যেতে হবে । বেশ কয়েক দিনের কাজ পড়ে রয়েছে অফিসে।”
শ্রাবণের কথা শুনে শ্রাবনকে আড় চোখে মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে রইল সন্ধ্যা। মনে মনে বলতে লাগল ছেলেটাকে আজ বেশি সুন্দর লাগছে। এতটা সুন্দর না হলেও পারতো শ্রাবণ । এখন তো শ্রাবণ কে নিয়ে বিয়ের পর থেকে বেশ ভয়ে থাকে সন্ধ্যা। বর সুন্দর হলে এই এক জ্বালা সব সময় হয়ে ভয়ে থাকতে হয় এই বুঝি ওর বরকে অন্য কেউ নিয়ে গেল। এইটা অবশ্য সম্পূর্ণই সন্ধ্যার ভাবনা।
এদিকে সন্ধ্যাকে চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে শ্রাবণ আবারও তাড়া দিয়ে বলল,
–“কি হলো দাঁড়িয়ে রইলে কেন? গাড়িতে উঠ।”
শ্রাবনের কন্ঠ শুনে ঘোর কাটে সন্ধ্যার । ঘোর কাটতেই নিজেকে কঠোরভাবে শাসাতে লাগলো ও। কি সব আলতু ফালতু ভাবনা ভাবে ও, এসব কি ভাবে মাঝে মাঝে নিজেই নিজেই ভেবে পায়না সন্ধ্যা।পরক্ষণে নিজেকে শাসিয়ে উঠে ও।শ্রাবণের কথা শুনে গাড়ির দিকে গাড়ির দিকে এগিয়ে গেল সন্ধ্যা । নিজের অনেক ইচ্ছা থাকলেও শ্রাবণের সাথে সামনের সিটে বসতে পারল না ও। শ্রাবণের সাথে সামনের সিটে বসলে বেচারী তুলি যে একা একা হয়ে যাবে তাইতো অনেক ভাবনা চিন্তা করে তুলির সাথেই পিছনের সিটে উঠে বসল সন্ধ্যা।
এদিকে শ্রাবণ ভেবেছিল সন্ধ্যা হয়তো ওর সাথে সামনের সিটে বসবে কিন্তু সন্ধ্যাকে তুলির সাথে বসতে দেখে শ্রাবণের মুখ মলিন হয়ে গেল।ভেবেছিল বাকিটা পথ সন্ধ্যাকে দেখে দেখে পাড় করবে কিন্তু তা আর হলো না। তাই মলিন মুখে গাড়িতে উঠে বসলো শ্রাবণ তারপর গাড়ি চালানো শুরু করলো। তবে আয়নাটা সন্ধ্যার দিকে দিতে ভুলল না ও, যাতে বাকিটা সময় ওর মায়াবতীকে দেখতে পারে । গাড়ি এগিয়ে চলছে গন্তব্যের পথে। তুলি আর সন্ধ্যা তখন গল্পে মশগুল আর শ্রাবন তখন আড়চোখে ওর মায়াবতীকে দেখতে ব্যাস্ত।
চলবে
(কেমন হয়েছে জানাবেন আর ভুলত্রুটিগুলো ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।যারা নীরব পাঠক আছেন তারা সবাই দয়া করে সাড়া দিবেন। আপনাদের সাড়া না পেলে লেখার আগ্রহ থাকে না। ভালো থাকবেন সবাই।হ্যাপি রিডিং ???)