শ্রাবনসন্ধ্যা পর্ব:-২৪

0
1520

শ্রাবনসন্ধ্যা পর্ব:-২৪
#আমিনা আফরোজ

সন্ধ্যা যখন চা নিয়ে ঘরে আসে শ্রাবণ তখনও ঘুমে বিভোর। শ্রাবণকে ঘুমাতে দেখে ভ্রু-কুচকে গেল সন্ধ্যার।চা হাতে নিয়েই শ্রাবণের কাছে গিয়ে মৃদু স্বরে ডেকে বলল,

–“এই যে শুনছেন ,বলছি বেলা তো অনেক হলো উঠুন এবার।বাবা আপনাকে ওনার ঘরে যেতে বলেছেন।”

সন্ধ্যা এতো করে ডাকার পরেও যখন শ্রাবনের ঘুম ভাঙল না তখন সন্ধ্যার মাথায় দুষ্টূ বুদ্ধির উদয় হলো।সন্ধ্যা শ্রাবণের দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে মনে মনে বলল,

–” এতক্ষণ তো ভালো করে ডাকলাম কিন্তু আপনার ঘুম তো ভাঙল না আপনার। এখন দেখুন আমি কি করি।”

কথাগুলো বলে শ্রাবনের ডান হাতের একটি আঙ্গুল গরম চায়ে ডুবিয়ে দিলো সন্ধ্যা। এদিকে হাতে গরম উত্তাপের আভাস পেতেই দ্রুত গতিতে ওঠে বসল শ্রাবণ। হাতটা দ্রুত চায়ের কাপ থেকে উঠিয়ে সন্ধ্যার দিকে রাগী চোখে তাকাল ও।সন্ধ্যা তখনও মিটমিটিয়ে হাসছিল আর মনে মনে বলতে লাগল,

–“এখন কেমন লাগে বুঝেন?তখন কত সুন্দর করে ডাক দিলাম আর জনাব চোখ মেলে দেখলই না। এখন বেশ হয়েছে। উচিত শিক্ষা হয়েছে ওনার। কারো ডাকে সাড়া না দিলে কেমন লাগে তা বুঝুক এখন।”

সন্ধ্যাকে আপন মনে বিড়বিড় করতে দেখে শ্রাবণ সেদিকে তাকিয়ে রইল কিছুক্ষণ।তারপর সন্ধ্যার ভেজা চূলের দিকে চোখ পড়তেই সব রাগ নিমিষেই উধাও হয়ে গেল শ্রাবণের। ঘোর লাগা দৃষ্টিতে সেই দিকেই তাকিয়ে রইল ও। সকালের শিশির ভেজা শিউলি ফুলের মতোই স্নিগ্ধ দেখাচ্ছে সন্ধ্যাকে। আচ্ছা মেয়েটা কি বুঝে না ওকে এভাবে দেখলে শ্রাবন আর নিজের মাঝে থাকে না। না এই স্নিগ্ধ রূপে শ্রাবনের সামনে এসে বড় ভুল করে ফেলেছে সন্ধ্যা । এখন এর ক্ষতিপূরণ তো সন্ধ্যারই করতে হবে। মেয়েটির প্রতিটি রূপেরই যেন প্রেমে পড়ে ও। সন্ধ্যাও কি তবে এমন দহন পুড়ছে নাকি এই দহন শুধু ওর একারই হচ্ছে?

শ্রাবনকে চুপ করে থাকতে দেখে আবারো ভ্রু- কুচকালো সন্ধ্যা। শ্রাবনকে ও যতটুকু চেনে তাতে এখন তো এভাবে চুপ করে থাকায় লোক ও না সে । এতক্ষণে তো সন্ধ্যাকে ঝাড়ি দেওয়ার কথা। তাহলে শ্রাবন এভাবে চুপ করে বসে আছে কেন? শ্রাবন কি তবে সন্ধ্যার উপর রাগ করেছে? কথাটা মনে হবার পরেই সন্ধ্যার মনের কোণে একটুকরো কালো মেঘের উদয় হলো। আধার ঘনালো মনের কোনে। হয়তো এখনই টুপটাপ বৃষ্টি গড়াবে ওর চোখ দিয়ে।

সন্ধ্যা ধীর পায়ে এগিয়ে গিয়ে শ্রাবনের পাশে বসলো। আড়চোখে একবার তাকাল শ্রাবণের দিকে তবে শ্রাবণের সেদিকে কোন ভাবান্তর নেই। শ্রাবন তো তখন ওর ভাবনার রাজ্যেই বিভোর হয়ে রয়েছে।

সন্ধ্যা শ্রাবণের হাতের উপর নিজে হাত রেখে মৃদু স্বরে বলল,

–“আপনি কি আমার ওপর রাগ করেছেন?”

এতোক্ষণে সন্ধ্যার কথা শুনে ভাবনার রাজ্য থেকে বেরিয়ে এল শ্রাবণ। পাশে বসা সন্ধ্যার দিকে তাকিয়ে বলল,

–“যদি বলি হ্যাঁ।”

শ্রাবণের কথা শুনে সন্ধ্যার মন যেন দ্বিগুন খারাপ হয়ে গেল। দু চোখ ভরে গেল নোনা পানিতে। বুকের বাঁ পাশটা ও যেন চিনচিন করে ব্যাথা করছে ওর। কান্নাভেজা কণ্ঠে বলল,

–“দুঃখিত আমি বুঝতে পারিনি আপনি রাগ করবেন। আসলে তখন অনেকবার ডেকেছিলাম আপনাকে কিন্তু আপনি উঠেন নি। আর তাছাড়া বাবা আপনাকে ডেকে পাঠিয়েছিল তখন তাই আর কোন উপায় না পেয়ে আপনার ঘুমটা এভাবে ভাঙাতে হলো।আমার কারনে আপনি রাগ করে থাকবেন না প্লিজ।”

–“ঠিক আছে রাগ করব না তবে আমার একটা শর্ত আছে।”

সন্ধ্যা চোখের কোনে গড়িয়ে পড়া পানি মুছে বলল,

–“কি শর্ত শুনি?”

–“যেহেতু আমার মন খারাপের কারণ তুমি তাই এর প্রতিকার করার দায়ভারটাও তোমার।”

–“ঠিক আছে কি করতে হবে বলুন?”

–“বেশি কিছু না আমাকে আমার সকালে পাওনাটা বুঝিয়ে দিলেই হবে।”

শ্রাবণের কথা শুনেই সন্ধ্যা বেশ লজ্জা পেল। লজ্জায় শ্রাবণের দিকে তাকাতে অব্দি পারছে না ও। নিজেকে কোনরকমে সামলিয়ে নিচের দিকে তাকিয়ে বলল,

–“এইটা তো আমি পারবো না আপনি বরং অন্য কিছু বলুন।”

–“পারতে তো তোমাকে হবেই। এছাড়া কিছুতেই আমার মন খারাপ বা তোমার উপর রাগ কমবে না। এখন ভেবে দেখো কি করবে তুমি?”

শ্রাবণের কথা শুনে সন্ধ্যা যেন অকূল পাথারে পড়ে গেল। না শ্রাবনের কাছে যেতে পারছে আর না শ্রাবণের থেকে দূরে থাকতে পারছে। সন্ধ্যা শ্রাবনের দিকে এক পা এগোই তো পরক্ষনেই দুই পা পিছিয়ে আসে। বেশ কিছুক্ষন এমন করার পর মনের দ্বন্দটাকে সরিয়ে শ্রাবনের কাছে চলে আসে সন্ধ্যা।

শ্রাবন ও সন্ধ্যা মুখোমুখি বসে রয়েছে। দুজনের মাঝে দূরত্ব নেই বললেই চলে। দুজন দুজনের এতটাই কাছে রয়েছে যে দুজন দুজনের নিঃশ্বাস অব্দি শুনতে পাচ্ছে। সকালের সোনালী রোদ ততক্ষণে থাই গ্লাসের ভিতর দিয়ে ঘরে এসে পড়েছে। সেই সোনালী আভা এসে পড়েছে সন্ধ্যার মুখে। এতে সন্ধ্যা কে যেনো আরো মোহনীয় লাগছে। দুজনেই ঘোর লাগা দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে একে অপরের দিকে। শ্রাবণ সন্ধ্যাকে আরো গভিরভাবে টেনে নিল নিজের দিকে। সন্ধ্যায় যেন মন্ত্র চালিত পুতুলের নেয় নিবিড় ভাবে আঁকড়ে ধরল শ্রাবনকে। শ্রাবন ততক্ষণে সন্ধ্যার ঠোঁটের ভাজে হারিয়ে ফেলেছে নিজেকে। দুজনে একসাথে আবারো হারিয়ে গেল রঙিন শহরের কোন এক অচেনা রাস্তায়। যেখানেই হারাতে কোন বারন নেই।

শহরের চেনা জানা রাস্তার একপাশে দিয়ে হেঁটে চলেছে রোদ আর প্রিয়ন্তি। মাথায় ঘুরছে হাজারো প্রশ্ন। গতকাল নেহালের ব্যবহারটা খুব অদ্ভুত লেগেছে ওর কাছে। তার থেকেও বেশি অবাক হয়েছে সন্ধ্যার চাহনী দেখে। গতকাল সন্ধ্যার মুখে ও ভয়ের আভাস দেখেছিল। সন্ধ্যা দুচোখে ছিল আপন মানুষদের হারানোর ভয়। গতকালই এ নিয়ে সন্ধ্যাকে প্রশ্ন করতে চেয়েছিল ও কিন্তু প্রশ্ন করবো করবো বলেও সময় ও সুযোগ হয়ে ওঠে নি রোদের। আর আজ তো অনিচ্ছাসত্ত্বেও এই সকাল বেলা কলেজ আসতে হয়েছে ওকে। যদি না কতকাল নেহাল ওকে কল দিয়ে কলেজের আসার জন্য হুমকি তাহলে আজকেও বোধ হয় কলেজে আসতো না রোদ। কিন্তু রোদের ভাগ্যটাই খারাপ। বিয়ে বাড়ির আনন্দ ছেড়ে একটা বদছেলের হুমকি শুনে ধেই ধেই করে কলেজে আসতে হলো ওর। তবে প্রিয়ন্তীর অবশ্য সেদিকে কোন খেয়াল নেই। সে তো দুনিয়ার সব কথার ফুলঝুরি নিয়ে বসেছে এখন। ওকে দেখে মনে হচ্ছে পুরো দুনিয়া রসাতল গেলেও ওর কথা থামবে না আজকে। প্রিয়ন্তির উপর এ নিয়ে বেশ চটে আছে রোদ। তবে প্রিয়ন্তীর কথা চলছে বেশিরভাগ রোহান আর সৌরভকে কেন্দ্র করে। প্রিয়ন্তী এমন বকবকানি মাঝে কলেজের সামনে এসে পৌঁছল ওরা। কলেজ প্রাঙ্গণ ততক্ষণে পূর্ণ হয়ে গেছে ছাত্র-ছাত্রীদের ভীরে। এত ভিড়ের মধ্যেও একজোড়া চোখ তখনো খুঁজে চলেছে সেই মানুষটাকে। এদিক সেদিক তাকিয়ে বেশ কিছুক্ষণ পর বারান্দার একপাশে কাঙ্খিত মানুষটির দেখা পেল তৃষ্ণার্ত চোখ দুটি। তৃষ্ণার্ত দৃষ্টিতে সেদিকেই তাকিয়ে রইল একজোড়া চোখ। তারপর আকস্মিকভাবে প্রিয়ন্তীকে ফেলে সেদিকে ছুটে গেল রোদ‌। ওর মনের কণে উদয় হওয়া প্রশ্নগুলোর উত্তর যে পেতেই হবে ওকে। হাওয়ার গতিতে নেহাল এর সামনে এসে দাঁড়ালো ও। এদিকে রোদের এভাবে চলে যাওয়া দেখে অবাক দৃষ্টিতে সেদিকে তাকিয়ে রইল প্রিয়ন্তী তারপর নিজেও ছুটে চলে গেল রোদের পিছনে।

এদিকে রোদকে সামনে দেখেও কোন ভাবান্তর হলো না নেহালের। নেহাল যেন আগে থেকেই জানতো রোদ ওর কাছে আসবেই। এজন্যই তো এত কাঠ-খড় পুড়িয়ে রোদের নাম্বার যোগাড় করেছিল ও। তারপর রোদকে কলেজে আসার জন্য জোরজবস্তি করেছিল। কেননা রোদ যদি কলেজেই না আসে তাহলে তো ওর উদ্দেশ্য অপূর্ণ রয়ে যাবে। সন্ধ্যাকে পেতে হলে যে রোদকে এখন নিজের কাছে আনতে হবে। তাহলেই না নেহালের উদ্দেশ্যে পূরন হবে। কথাগুলো ভাবতেই নেহালের ঠোঁটের কনে পৈশাচিক হাসির আভাস পাওয়া গেল। এ যেন নতুন কোন গল্পের সূচনা হতে চলেছে। যে গল্পে ভালবাসার পরিবর্তে রয়েছে প্রতিশোধ,অবিশ্বাসের আর ধোঁকা।

চলবে

(কেমন হয়েছে জানাবেন আর ভুলত্রুটিগুলো ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন। যারা নীরব পাঠক আছেন তারা দয়া করে সাড়া দিবেন। আপনাদের সাড়া পেলে লেখার আগ্রহ বেড়ে যায়। আর শ্রাবনসন্ধ্যা গল্প নিয়ে আপনাদের যদি কোন অভিযোগ থাকে তা কমেন্ট করে বলতে পারেন । আশা করি সবাই পাশে থাকবেন। ভালো থাকবেন সবাই।আর আমি একটু পারিবারিক সমস্যায় আছি তাই মন চাইলেও নিয়মিত গল্প দিতে পারছি না । এজন্য আমি আন্তরিক ভাবে দুঃখিত। আশা করি আমার সমস্যা আপনারা বুঝবেন। হ্যাপি রিডিং ??)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here