শ্রাবণ ধারা পর্ব ২+৩

0
684

#শ্রাবণ_ধারা
#পর্ব-২+৩
#সাদিয়া

ধারাকে অজ্ঞান হতে দেখে শ্রাবণ প্রথমে কিছুটা অবাক হলেও পরে বুঝতে পারলো আজকে ধারার উপর দিয়ে ঠিক কি তুফান বয়ে গেছে।শ্রাবণ ধারাকে সুন্দর করে বালিশে শুইয়ে দিয়ে সোজা হতে যাবে তখনই তার নজর পরে ধারার গালের দিকে।ধারার দুই গালেই অস্পষ্ট চার আঙুলের ছাপ দেখা যাচ্ছে। ধারার হাতের দাগ গুলোও আস্তে আস্তে নজরে এলো শ্রাবণের।দাগগুলো দেখেই শ্রাবণের বুকটা মোচড় দিয়ে উঠলো।সে জানে এই দাগ গুলোর এক মাত্র কারণ সে!

ধারার গালে আলতো করে হাত বুলালো শ্রাবণ।শ্রাবণের ভাবনা এখন একটাই, সে কি কোনো ভুল করেছে?বিশাল বড় ভুল?না!কোনো ভুল করেনি সে।কোনো ভুল করেনি।ভালোবাসায় কোনো ভুল থাকে না।সে তো শুধু ভালোবেসেছে।আর যা করেছে তা নিজের ভালোবাসাকে পেতে করেছে।কথায় আছে “Everything is fair in love and war” তাহলে সে ভুল করবে কি ভাবে।না করেনি সে কোনো ভুল।যা করেছে একদম ঠিক কাজ করেছে।ভালোবাসায় কোনো ভুল থাকতে পারে না।কোনো ভুলের স্থান নেই ভালোবাসায়।

ধারার জ্ঞান ফিরেছে আধ ঘন্টার বেশি সময়।জ্ঞান ফেরার পর থেকেই ধারা অনবরত কেঁদে চলেছে।আজ যেন তার চোখের জল বাধা মানছে না।তার নামে এতো বড় মিথ্যা রটানো হয়েছে তা সে কল্পনাও করতে পারেনি।যে মেয়ে ছেলেদের থেকে সবসময় দশ হাত দূরে থাকতো সেই তাকেই আজকে চরিত্র নিয়ে এতোগুলো কথা শুনতে হচ্ছে। ভাবতেই ধারার ভেতর থেকে কান্নারা দলা পাকিয়ে আসছে।এমন সময় রুমে প্রবেশ করলো ধারার মা।ধারার মা রুমে প্রবেশ করতেই ধারা তার পায়ে পড়ে যায়।

—আম্মু বিশ্বাস করো শ্রাবণ স্যার যা বলেছে সব মিথ্যা।তার সাথে আমার কোনো কালে কোনো ধরনের সম্পর্ক ছিলো না আর না আছে।উনি সব মিথ্যা বলছেন আম্মু।আমি অমন কিছুই করি নি যা তিনি সবাইকে বলে বেড়াচ্ছেন।এই বিয়েটা হতে দিয়ো না আম্মু। দয়া করে এই বিয়েটা ভেঙে দাও।এই বিয়েটা হতে দিয়ো না।

ধারার মা এক ঝাড়ি দিয়ে ধারারকে সরিয়ে দিয়ে বলে,
—দেখ ধারা এমনিতেই অনেক তামাশা হয়েছে।আর কোনো তামাশা চাইছি না।যা করার তা তো করেইছিস এখন লোক জানাজানি হওয়ার আগে বিয়েটা হয়ে যাওয়ায় মঙ্গল তোর জন্যও আর আমাদের জন্যও।

—আম্মু তুমি অন্তত আমার কথাটা বিশ্বাস করো।আমি এমন কিছুই করি নি।তর সাথে আমার কোনো সম্পর্ক নেই আর না ছিলো।

—দেখ ধারা আর নাটক করিস না অনেক হয়েছে।যে অঘটন ঘটিয়েছিস তা ঢাকতে বিয়ে হওয়াটা খুব দরকার।
এবার ধারা রেগে যায়।
—আরে তোমরা বুঝতে কেন চাইছো না কিছু করি নি আমি।কিচ্ছু না।যা করিনি তার শাস্তি কেন পাবো বলো তো?কেন পাবো?

—একদম চেচামেচি করবি না বলে দিলাম।একদম চেচামেচি না।তুই যদি এতোই নিরপরাধ হতিস তাহলে শ্রাবণ নিশ্চয় নাজমুলের কাছে বলতো তা শ্রাবণের সাথে তো শারীরিক…ছিঃ ভাবতেও আমার ঘেন্না হয় তুই আমার পেটের সন্তান।

—বিশ্বাস করো আম্মু সব মিথ্যা সব।

—হ্যাঁ সেই সবাই একসাথে মিথ্যা কথা বলছে আর তুই একমাত্র সত্যবাদী এসেছিস তাই না।শোন ধারা তুই যদি বিয়েতে রাজি না হোস তাহলে সমাজে মুখ দেখাতে পারবো না আমরা। তখন গলায় দঁড়ি দেওয়া ছাড়া আমাদের আর কোনো পথ থাকবে না।

মায়ের এমন কথায় ধারা দমে যায়।আমাদের রক্ষণশীল সমাজে যেকোনো বিষয়ে সবার আগে আঙুল মেয়েদের দিকে উঠে।তাদের নামের পাশে ক্ষুদ্র থেকে ক্ষুদ্রতর দাগকেও হাইলাইট করে সেখানে দেখানো হয় সেখানে তো ধারার নামে কত্তো বড় কেচ্ছা রটানো হয়েছে। যদিও ধারা এমন কিছুই করেনি তবুও দোষ এখানে ধারার।কই কেউ তো শ্রাবণকে একটা ধমকও দিলো না।আর ধারার উপর চলছে অমানবিক মানসিক আর শারীরিক অত্যাচার।ছেলে আর মেয়েদের মধ্যে কেন এতো পার্থক্য করা হয় আমাদের সমাজে?কেন করা হয়?

মায়ের কথায় একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে ধারা বলে,
—আমি সম্পূর্ণ নির্দোষ আম্মু।কথাটা যেদিন বুঝতে পারবে হয়তো আমাকে হারিয়ে ফেলবে।তখন শত চেষ্টা করেও আমাকে ছুঁতে পারবে না।হায়হুতাশ করা ছাড়া কোনো রাস্তা খোলা থাকবে না তোমাদের সামনে।

কথাটা বলেই ধারা দরজা ঠেলে বাহিরে চলে যায়।আর ধারা মা সেখানেই দাঁড়িয়ে থাকে।আচ্ছা তার মেয়ে কি সত্যিই নির্দোষ? সত্যিই কি তার নামে মিথ্যা রটানো হয়েছে? কিন্তু এতে করে শ্রাবণের কি লাভ?সে কেন ধারাকে বদনাম করতে চাইবে?আর যদি বদনামই করার হতো তাহলে ধারার সাথে নিজের নাম কেন জুড়ে দিলো?
অনেকগুলো প্রশ্ন এখন ধারার মায়ের মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে। যার একটার উত্তরও তার কাছে নেই।এই সকল প্রশ্নের উত্তর জানা যে খুব দরকার।খুব দরকার।

?
ধারা আর শ্রাবণের বিয়েটা অবশেষে সম্পন্ন হলো।বিয়েতে শ্রাবণের বাড়ির তেমন কেউ ছিলো না।শুধু শ্রাবণের বাবা, বড় ভাই আর শ্রাবণের চাচা উপস্থিত ছিলো।ধারা বাসা থেকেও শুধু ধারার বাবা আর কাকা।আবির এই বিয়ের ঘোর বিরোধিতা করেছিলো।যে জানে তার বোন কখনোই এমন নিচু মানসিকতার কাজ করতে পারে না।সে বার বার তার বাবা কাকাকে বুঝানোর চেষ্টা করেছে।এক পর্যায়ে পরাজিত হয়ে ঘর থেকেই চলে গেছে।

বিয়ের ঝামেলা মিটতেই ছাঁদে চলে যায় ধারা।এখন রাত নয়টা।চারদিকে নিরবতা।ধারা আকাশের দিকে মুখ করে চোখ বন্ধ করে দাঁড়িয়ে আছে।আজ বড্ড অসহায় লাগছে তার নিজেকে।কেউ তাকে বিশ্বাস করলো না।নিজের আপন জনেরা তাকে দূরে ঠেলে দিলো।সেই আপন জনদের চোখের মনি ছিলো সে আজ সেই আপন জনদের চোখের বালি সে।ধারার চোখের কার্নিশ বেয়ে গড়িয়ে পড়লো এক ফোটা তপ্ত অশ্রু।আপন জনদের অবহেলায় এতো পীড়া থাকে তা ধারা জানতো না।শ্রাবণের একটা মিথ্যার কল্যাণে তাও জানা হয়ে গেলো।বাবা বলতো জীবনে ভালো খারাপ সকল কিছুর অভিজ্ঞতা থাকা প্রয়োজন।হয়তো এই অভিজ্ঞতাটাও তার প্রয়োজন ছিলো।

পাশে কারো উপস্থিত টের পেয়ে চোখ খুলে তাকায় ধারা।পাশে শ্রাবণ দাঁড়িয়ে আছে। কিয়ৎকাল নিরবতা পালন করে ধারা শ্রাবণকে উদ্দেশ্য করে বলে,
—কেন করলেন এমন?
শ্রাবণ নিরব।ধারা আবার বলে,
—কি পেলেন আমার নামে এতো বড় মিথ্যা অপবাদ দিয়ে?

এবার মুখ খোলে শ্রাবণ,
—যা পেতে চেয়েছিলাম তা তো পেয়ে গেছি।আর তো কিছু চাই না।তবে চাওয়ার জিনিসটা যে এভাবে পেতে হবে ভাবতে পারি নি।তবে অবশেষে পেয়েছি এটাই বা কম কিসে!

—কি এমন পেতে চেয়েছিলেন যার জন্য আমাকে এমন করে বদনাম করতে হলো?

ধারা প্রশ্নে শ্রাবণ কিছু সময় নিরবতা পালন করে বলে,
—তোমাকে।
এতটুকু বলেই শ্রাবণ হনহন করে ছাঁদ ত্যাগ করলো।ওই দিকে ধারা অবাক হয়ে শ্রাবণের যাওয়ার দিকে তাকওয়ে আছে।কি বলে গেলো শ্রাবণ?সে তাকে(ধারাকে)পেতে চেয়েছিলো মানে কি?ধারার মাথা কেমন যেন ফাঁকা ফাঁকা লাগছে।মনে হচ্ছে যে আবারো জ্ঞান হারাবে।কিন্তু নাহ এবার সে নিজেকল শক্ত রাখবে।আর জ্ঞান হারালে চলবে না।হুটহাট অবাক যে এখন তাকল মাঝেমধ্যেই হতে হবে তা সে এতোক্ষণে খুব ভালো ভাবেই বুঝে গেছে।এতো চাপ কি নেওয়া যায়!আরো কিছুক্ষণ ছাঁদে কাটিয়ে ধারা নিজের রুমের দিকে পা বাড়ায়।এখন একটা ঘুমের তার খুব প্রয়োজন।সারাদিন অনেক ধকল গেছে তার উপর দিয়ে।এখন একটা ঘুম না দিলে সে পাগল হয়ে যাবে নিশ্চিত।

#চলবে….ইনশাআল্লাহ।

#শ্রাবণ_ধারা
#পর্ব-৩
#সাদিয়া

পরদিন শুক্রবার।সবার ছুটির দিন।তাই সবাই বাসাতেই আছে শুধু আবির ছাড়া।সে কালকে সন্ধ্যায় যে বের হয়েছে বাসা থেকে আর বাসায় আসে নি।ধারা ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে রুমে বসে আছে।রুম থেকে বের হবে নাকি হবে না তা সে বুঝতে পারছে না।কালকে এতো কিছু হয়ে যাওয়ার পর এখন সে রুম থেকে বের হওয়ার সাহস পাচ্ছে না।তার ভয় হচ্ছে যদি আবার আজকেও কালকের মতো কিছু হয়।থাক বাবা এর চাইতে রুমে বসে থাকায় শ্রেয়।

—ধারা এই ধারা।

মায়ের ডাকে তাড়াহুড়ো করে রুম থেকে বের হয় ধারা।

—ক..কি হয়েছে আম্মু।

—না তেমন কিছু হয়নি।তুই নাস্তা করে রেডি হয়ে নে।

—রেডি হবো কেন?

—শ্রাবণ আসছে তোকে নিয়ে ওদের বাড়িতে যাবে।

—তাদের বাড়িতে কেন যেতে হবে আবার।

ধারার মা চোখ গরম করে তাকাতেই ধারা কিছু না বলে রুমে চলে যায়।

—জীবনটা কেমন যেন হয়ে গেছে।কোনো ভ্যালু নেই।একদিনে ভাগ্য আমায় কোথা থেকে কোথায় এনে দাঁড় করালো।

এর মধ্যেই ধারার মায়ের গলার স্বর পাওয়া গেলো,
—ধারা শ্রাবণ এসে গেছে।তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে আয়।

—আসছি।

বলেই রেডি হতে শুরু করে ধারা।তৈরি হয়ে ড্রয়িং রুমে যেতেই চোখ যায় শ্রাবণের দিকে। নীল শার্ট আর অফহুয়াইট প্যান্টে শ্রাবণকে বরাবরের মতোই মাশাল্লাহ লাগছে দেখতে।কিন্তু ধারার তাকে সহ্য করতে কষ্ট হচ্ছে। শ্রাবণকে ধারার এখন দুনিয়ায় সবচেয়ে নিকৃষ্ট লোক বলে মনে হয়।

—ধারা ওখানে এভাবে দাঁড়িয়ে আছিস কেন?আয় খেতে আয় তাড়াতাড়ি।

—আসছি আম্মু।

নাস্তা শেষ করে শ্রাবণ আর ধারা শ্রাবণদের বাড়ির উদ্দেশ্য বেরিয়ে পড়লো।পুরো রাস্তা শ্রাবণ দু’একটা কথা বললেও ধারা ছিলো নির্বাক।ঘন্টাখানেক বাদে তারা শ্রাবণদের বাড়ি পৌঁছালো। ঘরে ঢুকতেই তারা শ্রাবণের মাকে পেলো তিনি সোফায় বসে বসে চা পান করছেন আর পত্রিকা পড়ছেন।কারো উপস্থিতি টের পেয়ে তিনি ঘাড় বাঁকিয়ে পিছনে তাকালেন। শ্রাবণের সাথে ধারাকে দেখে তার যে খুব একটা ভালো লাগেনি তা তার চেহারায় স্পষ্ট ফুটে উঠেছে।ধারা নিচু স্বরে তাকে সালাম দিলো।শ্রাবণের মা সালামের জবাব দিয়ে আবারো পত্রিকা পড়ায় মনোনিবেশ করলো।
.
শ্রাবণের রুমের বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছে ধারা।বারান্দায় হরেকরকমের ফুল গাছ রয়েছে।ধারা মনোযোগ সহকারে ফুল গাছগুলো দেখছে।

—আমার ছেলেটাকে কেন ফাঁসালে?

কারো আওয়াজে ধারা পাশ ফিরে তাকায়। শ্রাবণের মা দাঁড়িয়ে আছে। তিনি ধারাকে উদ্দেশ্য করে আবারো প্রশ্ন করলেন,
—বলো কেন ফাঁসালে আমার ছেলেকে?

শ্রাবণের মায়ের কথায় ধারা অবাক।সে কখন শ্রাবণকে ফাঁসালো? শ্রাবণ নিজেই তো ধারার জীবনকে নরক বানিয়ে দিয়েছে।ধারা কিছু না বলে বাইরের দিকে নজর রাখলো।কোনো জবাব না পেয়ে শ্রাবণের মা রেগে আগুন।এতোটুকুন একটা মেয়ে তার কথার জবাব দিচ্ছে না তাকে এড়িয়ে যাচ্ছে ভাবতেই তার শরীরে যেন আগুন জ্বলে উঠে। তিনি এক হাতে ধারার বাহু ধরে নিজের দিকে ঘুরিয়ে ধারার গালে বসিয়ে দেয় এক চড়।

গালে হাত দিয়ে ছলছল চোখে শ্রাবণের মায়ের দিকে তাকিয়ে আছে ধারা।

—বলো কেন ফাঁসালে আমার ছেলেকে?টাকার জন্য ফাঁসিয়েছো তাই না?বলো কতো টাকা চায় তোমার?কতো টাকা পেলে তুমি আমার ছেলের জীবন থেকে চলে যাবে।কত টাকা পেলে মুক্তি দেবে তুমি
আমার ছেলেকে?

এতোক্ষণ ধারা যে কান্না আটকে রেখেছিলো তা যেন এখন বড্ড অবাধ্য হয়ে গেছে। কিছিতেই থামছে না।

—একদম কান্না করবে না। একদম না।এই সব ন্যাকা কান্না অন্য কোথাও গিয়ে করো।আমার সামনে তোমার এইসব ন্যাকামি চলবে না।তোমার বাবা-মায়ের শিক্ষা এইসব তাই না?এই শিক্ষা দিয়ে বড় করেছে তোমার মা-বাবা তোমাকে কিভাবে ছেলেদের নিজের জালে ফাঁসাতে হয়।আমার ছেলেটাকেই পেলে ফাঁসানোর জন্য? আর কাউকে পাওনি?চরিত্রহীন মেয়ে একটা।

ধারার এবার হিচকি উঠে যায়।হিচকির কারণে সে কিছু বলতে পারছে না।
—মা..

ধারা এবং শ্রাবণের মা দুজনেই পিছনে তাকালো।শ্রাবণ অগ্নি দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।শ্রাবণের রাগ সম্পর্কে তার মা অবগত তার তিনি কয়েকটা শুকনো ঢোক গিললেন।কিন্তু দমলেন না।

—শ্রাবণ এই রাস্তার মেয়ের জন্য তুই আমাকে চোখ রাঙাচ্ছিস?কি জাদু করেছে এই মেয়ে তোকে?

শ্রাবণ শান্ত কন্ঠে জবাব দেয়,
—মুখ সামলে কথা বলো মা।যা জানো না তা নিয়ে কথা বলো না।

—কি জানি না আমি বল?আমি তো চাই জানতে।জানতে চাই আমি। আমি জানতে চাই এই মেয়ে কেন তোকে ফাঁসালো?

—আমি আবারো বলছি আজেবাজে কথা বলো না।আমাকে কেউ ফাঁসায়নি।দোষ সব আমার।

—অসম্ভব আমি বিশ্বাস করি না।তুই কোনো দোষ করতে পারিস না। সব দোষ তো এই নষ্টা মেয়ের।

শ্রাবণের মায়ের দেওয়া একের পর এক অভিযোগে ধারার কান্নার বেগ বেড়ে যায়। ধারার কান্নার আওয়াজে শ্রাবণের রাগ দ্বিগুন হয়।রাগে শ্রাবণের মাথা যেন ফেটে যাচ্ছে। রুমে থাকা কাঁচে সেন্টার টেবিলে এক লাথি দেয় শ্রাবণ।ঝনঝন আওয়াজে পুরো ঘরে কাচঁ ছড়িয়ে যায়।শ্রাবণের এমন রূপে শ্রাবণের মা ঘাবড়ে যায়।

—আজ যা বলেছো তা বলেছো কিন্তু এর পর যেন তোমার মুখে ধারা বিপক্ষে একটা শব্দও না শুনি।আর যদি শুনেছি তো আমার চেয়ে খারাপ কেউ হবে না।চলো ধারা তোমাকে তোমাদের বাসায় পৌঁছে দিয়ে আসি।

শ্রাবণের এই কথায় ধারা হনহন করে বেরিয়ে যায়। এই জায়গায় সে আর এক মূহুর্তও থাকতে পারছে না।তার দম বন্ধ হয়ে আসছে।নিঃশ্বাস আটকে আসছে তার।এখান থেকে বের হতে পারলে তার জীবন বাঁচে।

গাড়িতে বসে ধারা অনবরত কেঁদে চলেছে।ঘ
থামাথামির নাম নেই।ধারার কান্নার এক একটা শব্দ শ্রাবণের বুকে অজস্র ক্ষতের জন্ম দিচ্ছে। শ্রাবন ধারার কান্না সহ্য করতে পারছে না কিছুতেই। শ্রাবণ জানে না তার একটা মিথ্যার জন্য ধারাকে আর কতকিছু সহ্য করতে হবে।

—ধারা প্লিজ এবার তো কান্না থামাও।এতো কাঁদলে শরীর খারাপ করবে তোমার।

শ্রাবণের কথায় তাছ্যিলের হাসি হাসলো ধারা।একবার শ্রাবণের দিকে তাকিয়ে ঘৃণায় চোখ সরিয়ে নিলো।শ্রাবণ ধারা চোখে নিজের জন্য স্পষ্ট ঘৃণা দেখতে পেলো।কই ওই চোখে তো আগে এতো ঘৃণা সে দেখতে পেতো না সে তাহলে আজ কেন সব পাল্টে গেলো? তার একটা মিথ্যার জন্য?কিন্তু সে তো ধারাকে পেতেই মিথ্যা বলেছিলো।ওইদিন মিথ্যা কথাটা না বললে যে সে সারাজীবনেরজন্য ধারাকে হারিয়ে ফেলতো।ধারা সারাজীবনের জন্য অন্য কারো হয়ে যেতো।তা শ্রাবণ কিভাবে মেনে নিতো।সে একবার ভালোবাসা হারিয়েছে।জীবন তাকে দ্বিতীয়বার কাউকে ভালোবাসার সুযোগ দিয়েছে দ্বিতীয়বার কাউকে নিয়ে স্বপ্ন দেখার সুযোগ দিয়েছে।সে কি করে আবারো একই ভুল করতে পারতো।না সে দ্বিতীয় বার আর একই ভুল করেনি।সে নিজের ভালোবাসার মানুষকে নিজের করে পেয়েছে হোক সেটা একটা মিথ্যার বিনিময়ে।

শ্রাবণ ধারাকে পেয়েছে ঠিকই কিন্তু সে কি ধারার ভালোবাসা পাবে?ধারার চোখে তো সে নিজের জন্য এক আকাশ পরিমাণ ঘৃণা দেখতে পায়।সে তো ধারার ভালোবাসার পাত্র হতে চেয়েছিলো।ঘৃণার পাত্র সে হতে চাই নি।কিন্তু আজ নিজের কারণেই সে ধারার ঘৃণার পাত্র হয়ে গেলো। শ্রাবণের জন্য ধারার এই ঘৃণা কি কখনো শেষ হবে? নাকি শ্রাবণের জন্য এই ঘৃণা ধারার মনের এক কোনে সারাজীবন রয়ে যাবে?শ্রাবণ কি ধারার এই ঘৃণা সহ্য করতে পারবে? ভালোবাসার মানুষের ঘৃণা সহ্য করা যে খুব কঠিন।খুব কঠিন।মানুষ সব সহ্য করতে পারলেও নিজের ভালোবাসার মানুষের ঘৃণা কখনও সহ্য করতে পারে না। ভালোবাসার মানুষের ঘৃণা সহ্য করার মতো ক্ষমতা কোনো মানুষের নেই।শ্রাবণেরও নেই।কিন্তু শ্রাবণকে তা সহ্য সহ্য করতে হবে।হয়তো আজীবন!

#চলবে…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here