শ্রাবণের এক সন্ধ্যায় পর্ব ৩

0
303

#শ্রাবণের_এক_সন্ধ্যায়
#লেখনীতে_জেনিফা_চৌধুরী
#পর্ব_তিন

রাস্তায় সবার সামনে হুট করে গালের মধ্যে থাপ্পড় পড়ায় রাগে কপালের রক গুলো ফুলে উঠলো তারিনের। চেহারার রঙ বিভৎস করে ঘুরে তাঁকিয়ে থকমে গেলো অনাকাঙ্ক্ষিত মানুষ’টাকে চোখের সামনে দেখে। এই মুহূর্তে মানুষ’টাকে একদম আশা করেনি তারিন তা ওর মুখ দেখেই বোঝা যাচ্ছে। মুখের মধ্যে থেকে রাগের রেশ’টা কে’টে গেলো তৎক্ষনাৎ। ভয়েরা এসে গ্রাস করলো সর্বাঙ্গে। মাত্র’ই হসপিটালে থেকে আর্জেন্ট ফোন আসায় হন্তদন্ত হয়ে বের হয়েছিলো তারিন। এর মধ্যে এই মানুষ’টাকে দেখে দেহের সমস্ত শক্তি ক্রমশ কমে যাচ্ছে ওর। এই মানুষ’টা যে ওর দূর্বলতা। মানুষ’টা’কে ও খুব ভালোবাসে কিন্তু এই মানুষ’টা তার পরিবর্তে শুধু ঘৃনা, অপমান ছাড়া কিছুই দেয়’নি তারিন’কে। নাহ! কিছুতেই এই মানুষ’টার সামনে নিজেকে ছোট করবে না তারিন। মুখের উপর জবাব দিতে’ই হবে মানুষ’টা তারিন’কে কিছু বলে উঠার আগে’ই তারিনের চোখে মুখে রাগের আভা ফুটে উঠলো। চিৎকার করে বলে উঠলো…..

—হু গেভ ইউ দ্যা রাইট টু টার্চ মি? এন্সার মি….

রাগে ওর চোখ দিয়ে মনে হচ্ছে আগুন ঝড়ছে। আশেপাশে ছোট খাটো ভীড় জমেছে। তারিনের কথা শুনে ওর সামনে থাকা ব্যাক্তি’টা চোখ গরম করে বলে উঠলো…..

—তুমি আমার পছন্দ করা ছেলের গায়ে হাত তুলেছো কোন অধিকারে?

প্রতিউওরে তারিন রাগী স্বরেই জবাব দিলো….

–আপনি ভাবলেন কি করে যে? আপনার পছন্দ করা পাত্র’কে আমি বিয়ে করব। হাউ ফানি…

বলে শব্দ করে হাসলো তারিন। শাহানাজ বেগম এইবার আগের চেয়ে দ্বিগুন চেঁচিয়ে বলে উঠলো….

—তুবা আমি আর তোমার বাবা মিলে তোমার ভালো’টাই চাইব….

তারিন ভ্রু কুচকে শাহানাজ বেগমের দিকে তাঁকিয়ে বললো….

–বাবা! কে আমার বাবা?

শাহানাজ বেগম বিরক্ত নিয়ে বললো….

–রায়….

এইটুকু বলে আর বলতে পারলো না। তার আগেই তারিন চেঁচিয়ে বলে উঠলো…

–ওই নোংরা লোক’টার কথা আমার সামনে ভুলেও উচ্চারন করবে না। বাবা মাই ফুট। আর হ্যাঁ, রাস্তার মধ্যে আপনার নাটক দেখার জন্য অপ্রয়োজনীয় সময় আমার নেই। সো সাইড প্লিজ…..

শাহানাজ বেগমের শিরায় শিরায় তারিনের বলা কথা গুলো কাটার মধ্যে বিধে গেলো। সে এইবার শান্ত স্বরেই বললো……

–ভুলে যেও না উনি তোমার বাবা না হলেও আমি তোমার গর্ভধারিণী মা। তাই তোমার ভালো চাওয়ার পাশাপাশি শাসন করার অধিকার ও আমার আছে?

তার কথা শুনে তারিন শব্দ করে হেসে উঠলো। ও’কে এমন বেপরোয়া ভাবে হাসতে দেখে শাহানাজ বেগম বিচলিত হলো খানিক’টা। তারিন হাসতে হাসতে বললো…..

–আপনি আমার মা। হাসালেন মিসেস শাহানাজ খান ওহ সরি সরি আপনি তো এখন দ্যা গ্রেট রায়হান দেওয়ানের সো কল্ড ওয়াইফ…

বলে তাচ্ছিল্যের হাসি হাসলো। ওর কথা শুনে শাহানাজ বেগম ওর দিকে তেড়ে এসে আঙ্গুল উঠিয়ে চেঁচিয়ে বলে উঠলো…..

–একদম লিমিট ক্রোস করবে না তুবা। এটা পাব্লিক প্লেস। তোমার বাড়ি নয় যে তুমি আমাকে যা খুশি তাই বলবে। আমার সাথে বাড়ি চলো…..

বলে তারিনের হাত’টা ধরতেই তারিন এক ছিটকে হাত সরিয়ে নিয়ে চোখ গরম করে দাতে দাত চেপে বলে উঠলো…..

—ডোন্ট টু ডেয়ার টার্চ মি। আর কি বললেন আপনার সাথে যাবো আমি তাও কার বাসায় ঐ নোংরা লোক’টার বাসায়। এটা দুঃস্বপ্নে ও ভাববেন না। একটা সুযোগের অপেক্ষায় আছি নয়তো কবেই ওই নোংরা লোক’টাকে টা টা বায় বায় খতম করে দিতাম। আমার সাথে করা সমস্ত অপরাধের শাস্তি আপনারা পাবেন খুব শিঘ্রই। শুধু সময়ের অপেক্ষা….

কথাগুলো বলতে তারিনের গলা ধরে আসচ্ছিলো। চোখের কোনে পানি জমতে শুরু করছে। টলমলে চোখের কোন থেকে খুব শিঘ্রই পানি নামতে শুরু করবে। কথাগুলো বলে গাড়ির দিকে যাওয়ার জন্য শাহানাজ বেগমের পাশ কাটিয়ে যাওয়ার জন্য পা বাড়িয়েও থেমে গিয়ে আবার পেছনে কয়েকপা ফিরে এসে শাহানাজ বেগমের দিকে আঙ্গুল উঠিয়ে বললো…..

–জাস্ট এ চান্স। দেন, রায়হান দেওয়ান ইজ ফিনিশড…..

বলেই বাঁকা হেসে সানগ্লাস’টা গলার থেকে নিয়ে চোখ পড়ে গাড়ির চাবি’টা আঙ্গুলের মাথায় ঘুরাতে ঘুরাতে শাহানাজ বেগমের পাশ কাটিয়ে তাকে ধাক্কা দিয়ে চলে গেলো। আর শাহানাজ বেগম রাগে ফুঁসতে লাগলো। নিজে নিজেই রাগে কড়মড় করতে করতে বললো….

–তোমার উড়াউড়ি খুব তাড়াতাড়ি বন্ধ করব আমি….
____________________________________________তাজওয়ার এখনো “থ” মেরে বসে আছে। কিছুক্ষনে আগে মেয়ে’টা কি বলে তা তাজওয়ারের মাথার উপর দিয়ে গেলো। আর ওর সামনে বসে তাসনিম হা হা করে হেসেই যাচ্ছে। হাসতে হাসতে ওর পেটে ব্যাথা হয়ে তাও পেট ধরে হেসেই যাচ্ছে। মেয়ে’টা যে এমন করে মুখের উপর ঝামা ঘষে দিবে তা ভাবতেও পারেনি তাজওয়ার। ওর মুখ’টা চুপসে আছে এখনো। নিজেকে শান্ত করার জন্য চোখ বন্ধ করতে’ই কিছুক্ষন আগের মুহূর্ত’টা ভেসে উঠলো ওর চোখের সামনে….

কিছুক্ষন আগে…
তাজওয়ার মেয়ে’টাকে দেখে হা করে তাঁকিয়ে আছে। মেয়ে’টা যে ওর দিকে হাত বাড়িয়ে দাএইয়ে আছে সেদিকে ওর খেয়ালেই নেই। প্রায় কয়েক মিনিট অতিক্রান্ত হয়ে গেলে মেয়ে’টা বিরক্ত হয়ে নিজেই তাজওয়ারের হাত টেনে হ্যান্ডশেক করে নিতে’ই তাজওয়ায়ের ধ্যান ফিরে আসলো। ভ্যাবাচেকা খেয়ে নিজের পরিচয় দেওয়ার জন্য মুখ খুলতে’ই তারিন ওর দিকে তাকিয়ে চাঁপা স্বরে বললো….

–আপনার পরিচয় আর কষ্ট করে দিতে হবেনা। আমি জানি আপনি কে?

ওর কথা শুনে তাজওয়ার মুচকি হেসে একটু ভাব নেওয়ার জন্য মজা করেই বললো…..

–আই থিংক আমাকে চেনে না এমন মেয়ে খুব কম আছে। আমার মতো একটা হ্যান্ডসাম,ড্রেসিং,কিলার লুকের ছেলেকে প্রায় প্রতিটি মেয়ের ড্রিমবয়। বাই দ্যা ওয়ে মুভী দেখেন বুঝি খুব….

তাজওয়ারের কথা শুনে তারিন তাজওয়ারের হাতে স্যালাইন লাগিয়ে দিতে দিতে শান্ত স্বরে বললো…..

—ড্রিম বয় নাইস জোক্সস। আর আপনাকে চেনার জন্য মুভী দেখার প্রয়োজন হবেনা মেবি। বিকজ, যেভাবে লুজারের মতো একটা মেয়ের হাত মা’র খেয়ে মাথা ফাটিয়ে হসপিটালে সুয়ে আছেন। তাতে, এখন আপনাকে সবাই হিরো বলে না চিনলেও জিরো বলে ঠিক চিনবে….

বলে মুখ চেপে হাসলেও মুখে গম্ভীর্য ভাব ধরে রেখে স্যালাইন লাগানো শেষ করে সব ঠিকঠাক আছে কিনা তা চেক করে নিতে নিতে বললো..

–আমার ড্রিম আপনার মতো জিরো নয়। এক্সকিউজ মি……

বলে তারিন ব্যস্ত ভঙ্গি’তে ঘড়ি দেখতে দেখতে বাইরে বেড়িয়ে গেলো। আর তাজওয়ার সেই তখন থেকে থম মে’রে বসে আছে। তাসনিমের তুরি বাজানোর শব্দে হুশ ফিরে আসলো তাজওয়ার। তাসনিম তুরি বাজিয়ে বলে উঠলো….

–হেই জিরো সাহেব কোন দুনিয়ার চলে গেলেন…..

বলে আবার হেসে উঠলো। তা দেখে তাজওয়ার বিরক্তি ভঙ্গি’তে বলে উঠলো…..

–স্টপ তাসু। তোর সামনে আমাকে একটা মেয়ে অপমান করে গেলো আর তুই হাসচ্ছি…..

তাসনিম হাসতে হাসতেই উওর দিলো….

—ভাই মেয়ে’টা তোকে অপমান করেছে কিনা জানিনা তবে মেয়ে’টার কথা গুলো জোস ছিলো….

এইবার তাজওয়ার থমথমে মুখ করে কপাল কুঁচকে বসে রইলো। মনে মনে বলতে লাগলো…..

—আমাকে অপমান করার শাস্তি তোমাকে পেতেই হবে রুবাইতা তারিন….
____________________________________________
তারিন গাড়ি ড্রাইভ করছে আর ওর চোখ বার বার অশ্রুসিক্ত হচ্ছে। এক হাতে চোখের জল বার বার মুছে ফেলছে আরেক হাতে ড্রাইভ করছে। এর মধ্যে ওর ফোন’টা বেজে উঠতে’ই তারিন গাড়ি’টা সাইডে দাড় করিয়ে ফোন’টা রিসিভ করে কানে ধরতে ওপাশ থেকে একজন বলে উঠলো…..

–ম্যাম তাজওয়ার স্যার’কে আঘাত করা ব্যাক্তি’র খোঁজ পেয়ে গেছি…..

কথা’টা কানে আসতে’ই তারিন খুশি মনে বলে উঠলো…..

–গ্রেট নিউজ। ওর উপর নজর রাখো। আমি আসচ্ছি……

বলে ফোন কে’টে মুখে রহস্যময় হাসি টেনে বললো…..

—আমি জানি তুমি কে? আর কেনই বা আঘাত করেছো হিরো’কে। কিন্তু, তোমার উদ্দেশ্য তো আমি কিছুতে’ই সফল হতে দিব না…….

#চলবে

[বিশ্বাস করেন প্রচুর ব্যস্ত। অনেক কষ্টে এক ঘন্টা সময় হাতে নিয়ে লেখাটুকু শেষ করেছি। তাই ভুল ত্রুটি গুলো ক্ষমা করবেন প্লিজ। ইন শা আল্লাহ নিয়মিত পাবেন ]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here