শ্যামাঙ্গণা-৪
———–
ঝুমুর গুনগুন করতে একবার হাতের হাত ঘড়িতে নজর বুলালো। তার হাতে একটা পুরনো রংচটা চেইন ঘড়ি। ঘড়ির ডায়ালের গ্লাসও ফেটে গেছে। এই ঘড়ি জুড়ে তার অনেক স্মৃতি আছে। তার আগলে রাখা কানের দুলের মতো এই ঘড়ির বয়সও অনেক। হয়তো দশ বছরেরও বেশি। কিন্তু এই ঘড়ি তার কাছে অনেক মূল্যবান সম্পদ। তার সমস্ত আবেগের কেন্দ্র। মা নামক আবেগ সেটা।
ঘড়িতে সাতটা বাজে। ঝুমুর এবার বই হাতে নিয়ে বাগান থেকে বেরিয়ে গেলো। এখন তাকে খেয়ে রেডি হতে হবে তারপর কলেজ যেতে হবে। কলেজ আটটায়। তাকে কমপক্ষে আধা ঘণ্টা আগে বের হতে হবে। ঝুমুরকে বিল্ডিংয়ে ঢুকে যেতে দেখে ফাহমানও নেমে এলো ছাদ থেকে।
ফাহমান বাসায় ঢুকে দেখল সাতটা বাজে। দ্রুত হিসাব কষে নিলো তার খাওয়া দাওয়া করে রেডি হতে সব মিলিয়ে বিশ মিনিট লাগবে। এতক্ষণে তো মনে হয় ঝুমুরও রেডি হতে পারবে না। মেয়ে মানুষের তো এমনিতেই একটু বেশি সময় লাগে। কিন্তু ফাহমানের এই ধারণা ভুল প্রমাণিত হলো যখন ও সিড়ি দিয়ে নেমে দেখলো সিড়িতে বসে ঝুমুর পায়ে মোজা পড়ছে।
ঝুমুরকে এত আগে এখানে দেখে ফাহমান হতবাক। এই মেয়ে এত তাড়াতাড়ি খেয়ে দেয়ে, রেডি হয়ে নিচেও চলে এলো। একজন মেয়ে মানুষের পক্ষে এত তাড়াতাড়ি কি করে সম্ভব ? ফাহমানের জিজ্ঞেস করতে ইচ্ছা করলো কিন্তু কিছু বললো না যদি পাছে ঝুমুর কিছু মনে করে। সেও ত্রস্ত পায়ে সিড়ি দিয়ে নেমে এলো। ঝুমুর ততক্ষণে মোজা পড়ে উঠে দাড়িয়েছে। সে শু রেক থেকে তার হোয়াইট কেটস নামাতে ব্যস্ত।
ফাহমানকে সকাল সকাল নামতে দেখে অবাক হলো ঝুমুর। সে এখন ফাহমানকে আশা করেনি। তবে সে আগ বাড়িয়ে কিছু বললো না। পাছে যদি অসভ্য ছেলেটা মনে করে সে গায়ে পড়া মেয়ে, তার ছেলে দেখলেই কথা বলতে মন চায়।
কাধে ব্যাগ চাপিয়ে বাড়ির বাইরে রাস্তায় নেমে আসতেই পিছন থেকে ফাহমানের ডাক শুনতে পেলো ঝুমুর। ও পিছন ফিরে ভ্রু কুটি করলো। ফাহমান ওকে দাড়িয়ে থাকতে দেখে তার গতি বাড়িয়ে দ্রুত এগিয়ে এলো। অবাক হয়ে বললো ‘ মেয়ে মানুষ হয়ে এত দ্রুত কি করে হাটো তুমি ? আমাকে রীতিমত পিছনে ফেলে দিলে। ‘
ফাহমানের কথায় ঝুমুর তার ভ্রু জোড়া স্বাভাবিক করলো। ধীর পদক্ষেপে আগাতে আগাতে বললো ‘ আমি অত আস্তে হাঁটতে পারিনা। আমার মামা,নানু সবাই এর থেকেও দ্রুত হাটে। ‘
ফাহমান দ্রুত পায়ে ঝুমুরের পাশাপাশি হাঁটতে হাঁটতে বললো ‘ বুঝলাম, তোমার গুষ্টি ঘোড়ার স্পিডে হাঁটা গুষ্টি। ‘
জবাবে বরাবরের মতোই ঝুমুর চুপ রইলো। সে কিছুই বললো না। নির্লিপ্ত ভঙ্গিতে হাঁটতে শুরু করলো। কিন্তু কিছুক্ষন পরে যখন পিছনে ঘাড় ঘুরিয়ে ফাহমানকে তার পিছনেই দেখলো তখন বললো ‘ আপনি কি আমায় ফলো করছেন ? ‘
‘ আরে না। আমি জাস্ট জানতে চাইছিলাম ফারুক কি করছে ? আজ ওর ডিউটি কটায় ? ‘ রয়েসয়ে বললো ফাহমান।
ফাহমানের কথায় ঝুমুর বললো ‘ মামা ঘুমাচ্ছে। তার ডিউটি কয়টায় সেটা তো আমার থেকে বেশি ভালো করে আপনার জানার কথা তাইনা ? ‘
ঝুমুরের কথায় ফাহমান মাথায় হাত রেখে বোকার মতো হাসলো যেন চোরের চুরি ধরা পড়ে গেছে। ওর হাসি এক পলক দেখে আবারও হাঁটতে শুরু করলো ঝুমুর। ফাহমান দ্রুত ঝুমুরের সঙ্গে তাল মিলিয়ে হাঁটতে হাঁটতে বললো ‘ আচ্ছা তোমার পুরো নাম কি ? ‘
‘ অঙ্গনা ঝুমুর ‘ ঝুমুর সহজ স্বাভাবিক গলায় সোজাসাপটা জবাব দিলো।
ঝুমুরের নাম শুনে মুচকি হাসলো ফাহমান। বললো ‘ অঙ্গনা!! বেশ সুন্দর নাম। এই নামে কেউ তোমাকে ডাকে না ? ‘
‘ মা ডাকতো ‘
এরপর কিছু পথ পেরিয়ে গেলো নিস্তব্ধতায়। একসময় ঝুমুর তার হাটা থামিয়ে দিল। তাকে থেমে যেতে দেখে ফাহমান বললো ‘ কি ব্যাপার ? থেমে গেলে যে ? ‘
‘ এখান থেকে যে আপনাকে বাকিটা পথ একাই যেতে হবে ডাক্তার সাহেব। আমাদের পথ এতটুকুই একসঙ্গে ছিল। ‘ ঝুমুর ফাহমানের চোখে চোখ রেখে বললো।
ঝুমুরের কথায় ফাহমানের আফসোস হলো। ইশ তাদের পথ এত অল্প সময়ের কেন ছিল ? আরেকটু লম্বা হলে ক্ষতি কি হতো ? আজ যেটুকু সময় সে ঝুমুরের সঙ্গে কাটিয়েছে তার জন্য তাকে আবারও কাল সকাল পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। অপেক্ষার প্রহর যে কত যন্ত্রণাময় তার সেই অভিজ্ঞতা আছে। আগে যখন রোজ ঝুমুরকে ছাদ থেকে বাগানে ভোরবেলা দেখার জন্য গোটা চব্বিশ ঘণ্টা অপেক্ষা করতো তখনই এর জ্বালা বুঝেছিল।
ফাহমানের থেকে উত্তর না পেয়ে ঝুমুর এগিয়ে গেলো তার গলির দিকে। এখন এই গলি দিয়ে কলেজের সামনে যেতে তাকে আরও পাঁচ মিনিট হাঁটতে হবে। ফাহমান ঝুমুরের যাওয়ার পথে তাকিয়ে মনে মনে বললো ‘ আমি তোমার জন্য অপেক্ষা করবো শ্যামাঙ্গণা। হয়তো বাড়ি থেকে তোমার কলেজ অব্দি রাস্তাটাই আমাদের একান্ত সময়ের উৎস হবে কিন্তু আমি রোজ এইটুকু সময়ের জন্যই চাতক পাখির মতো অপেক্ষা করবো। সুযোগ থাকলে আবারও দেখা হবে অঙ্গনা ‘
ঝুমুর হাঁটতে হাঁটতে একবার পিছনে ফিরলো। ফাহমান এখনও তার পথ চেয়ে দাড়িয়ে আছে। ফাহমানের চোখে মুখে মন খারাপের ভাব। ঝুমুর তা দেখে হাসলো। হাসলে তার দুই গালে টোল পড়ে। ফাহমান দূর থেকে তার টোল পড়া হাসির দিকে তাকিয়ে আবারও মুগ্ধ হলো। ঝুমুর বললো ‘ দেখা হবে ডাক্তার সাহেব। সূর্য যখন তার চিকন রশ্মির মতো আভা ছড়িয়ে জেগে উঠবে তখন বাগান থেকে ছাদে তাকিয়ে দেখা হবে আমাদের। ‘
কথাগুলো বলে ঝুমুর দ্রুত পায়ে এগিয়ে গেলো। হাতের পুরনো ঘড়ির ডায়ালে ঘড়িতে এখন সকাল সাতটা পঁয়তাল্লিশ। সাধারণত তার এত সময় লাগেনা তবে আজ ফাহমানের সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে বেশি সময় লেগেছে। ঝুমুর আর পিছন ফিরল না। ফিরলে হয়তো দেখতে পেত এক জোড়া প্রেমিক দৃষ্টি মুগ্ধ চোখে তার প্রস্থান দেখছে।
—-
ক্রইসান্ট তৈরির জন্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী দেখে নিচ্ছেন মারিয়াম। কাল হাতে একটা বড়সড় অর্ডার আছে। জন্মদিন উপলক্ষে পার্টি সেন্টারে ডেলিভারি দিতে হবে। তাই অ্যাডভান্স পেয়েই সব আইটেম নিয়ে এসেছেন তিনি। পাশের চেয়ারে বসে হৈমন্তীও বাটারগুলোর এক্সপায়ার ডেট দেখে নিচ্ছে। মা মেয়ে যখন নিজের কাজ করতে ব্যস্ত তখনই বাসার কলিং বেল বেজে উঠলো।
হৈমন্তী এগিয়ে গিয়ে দরজা খুলতেই দরজার বাইরে দাঁড়িয়ে থাকা ঝুমুরকে দেখলো। তার হাতে কাচের বাটি কাচের ঢাকনা দিয়ে ঢাকা। প্রিয় সখিকে দেখে হৈমন্তীর আনন্দের শেষ নেই। ঝুমুর তার থেকে বয়সে ছোট হলেও সে তার প্রিয় বান্ধবী। হৈমন্তী ঝুমুরের হাত টেনে ঘরে ঢুকিয়ে সদর দরজা লাগিয়ে দিয়ে বললো ‘ কতদিন পর দেখলাম তোকে। তোর তো দেখাই পাওয়া যায় না। কি এত করিস তুই ? রোজ তো ঠিকই বাগানে হাটিস অথচ সময় করে দেখা করতে পারিস না। ‘
‘ কিছুদিন পরেই ইন্টার ফার্স্ট ইয়ার ফাইনাল শুরু হবে আপু। ক্যামেস্ট্রি, বায়োলজী, ফিজিক্স সবকিছুর ভিড়ে একেবারে ঠেসে গেছি। মাত্র স্যারের কাছে পড়ে এলাম। তিনজনের কাছে টিউশনি পড়ি তারপরও মনে হয় পড়া হয়না। ইংলিশের জন্য দেখি বাবাকে টিচার করে দিতে বলবো। ইন্টার লেভেলে ইংলিশটা মন দিয়ে পড়া দরকার। ‘ ঝুমুর ক্লান্ত গলায় বললো।
ঝুমুরের ক্লান্ত কণ্ঠস্বর শুনে মারিয়াম ডাক দিলেন ওকে। নিজের পাশে বসিয়ে বললেন ‘ এত প্রেসার নিচ্ছিস কেন ? আস্তে ধীরে কর। তোকে তো জর্জ ব্যারিস্টার হতে বলছে না কেউ। এত প্রেসারের কি আছে ? ‘
ঝুমুর ক্লান্ত হাসলো। মারিয়ামের হাতে হাত রেখে বলল ‘ এভাবে বললে কি হবে মণি ? মা চেয়েছিল আমি যেন ডাক্তার হই। তার ইচ্ছা তো পূরণ করতেই হয়। তার প্রথম এবং শেষ ইচ্ছা। পূরণ না করলে যে মরেও শান্তি পাবো না। ‘
‘ বুঝলাম তুই আন্টির ইচ্ছা পূরণ করতে চাস। তা এই বাটিতে কি ? ‘ হৈমন্তী পাশে চেয়ার টেনে বসে বললো।
‘ ডিমের হালুয়া বানিয়েছিলাম। ভাবলাম তোমাকে দেই, তোমার তো প্রিয় হালুয়া। ‘ কাচের বাটির ঢাকনা খুলে বাটিটা হৈমন্তীর দিকে এগিয়ে দিল।
‘ হালুয়া!! বাহ্ ঝুমুর তুই তো দেখি রাধুনী আল্ট্রা ম্যাক্স প্রো হয়ে যাচ্ছিস। দিলটা গার্ডেন গার্ডেন করে দিলি। একটু টেস্ট তো করতেই হবে। কতদিন পর তোর হাতের হালুয়া। ‘ রান্নাঘর থেকে চামচ আনতে আনতে বললো হৈমন্তী।
হৈমন্তী চেয়ারে বসে হালুয়ার সুমিষ্ট ঘ্রাণ নিলো। আহ্ শব্দ করে বললো ‘ হায় ঘিয়ের গন্ধ। মনটাই ভরে গেছে। মনে হচ্ছে খেতে না জানি কত ভালো হবে। ‘
হৈমন্তীকে হালুয়ার ঘ্রাণ নিতে দেখে হাসলো ঝুমুর। হৈমন্তী হালুয়া চামচে নিয়ে মুখে পুড়ল। ঝুমুরকে থাম্বস আপ দেখিয়ে বললো ‘ জোস হইসে দোস্ত। মা তুমিও নাও। ‘
হৈমন্তী মারিয়ামের দিকে হালুয়ার বাটি এগিয়ে দিল। হালুয়া খেয়ে মারিয়ামও প্রশংসা করলেন ঝুমুরের রান্নার হাতের। বললেন ইন্টার পরীক্ষার পর ঝুমুরকে তিনি নিজে বেকিং শিখাবেন। নতুন কিছু শিখতে পারার লোভে মাথা ঝাকিয়ে সায় দিল। আরও কিছু প্রয়োজনীয় কথা সেরে ঝুমুর উঠে দাঁড়ালো বাসায় ফেরার জন্য। তখনই ফ্ল্যাটের লক চাবি দিয়ে খুলে ফ্ল্যাটে ফাহমান ঢুকলো।
ফাহমানকে দেখে মিইয়ে গেলো ঝুমুর। নিজের সকালে বলা কথাগুলো মনে পড়লো। ভাগ্যিস সে শ্যাম বর্ণা তাই তার লজ্জায় লাল হয়ে যাওয়া গাল দুটো ধরতে পারলো না ফাহমান। ঝুমুরকে এই সময় এখানে দেখে সেও হতবাক। আপাতত সে ভাবেনি বাড়ি ফিরেই প্রেয়সীকে দেখতে পাবে।
ভাইকে দেখে হৈমন্তী সরব হয়ে উঠলো। এগিয়ে এসে ঝুমুরকে দেখিয়ে বললো ‘ ও আমার বান্ধবী ঝুমুর। এবার ইন্টার ফার্স্ট ইয়ারে। বাড়িওয়ালা আংকেলের ছেলে ফারুক ভাই আছেন না ?তোমার বন্ধু ফারুক ভাই ? উনার ভাগ্নি ? ‘
বোনের কথায় ফাহমান বললো ‘ এত ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ করতে হবে না। কাল দোতলায় যখন দুপুরে খাচ্ছিলাম তখনই দেখেছি। তা তুমি এখন এখানে ?’
ফাহমানের কথায় কিঞ্চিৎ অপমানবোধ করলো ঝুমুর। অকপটে বললো ‘ ওহ আমার বুঝি এই বাড়িতে আসা বারণ ? তাহলে চলে যাচ্ছি। ‘
ঝুমুরের উত্তরের ঝাঁঝে ফাহমান টের পেলো মাত্র সে কোন ভুল করে বসেছে। আচমকা অপ্রত্যাশিতভাবে প্রেয়সীকে পেয়ে তার কুশল বিনিময় করতে গিয়ে উল্টো তাকে রাগিয়ে দিয়েছে। ও মুখে বললো ‘ আয় কি মুশকিল!! রেগে গেলে… ‘
তবে ঝুমুর ওর কথা শুনলো না পুরোটা। তার আগেই বেরিয়ে গেলো হনহন করে। ঝুমুরকে এভাবে বেরিয়ে যেতে দেখে মারিয়াম এবার ছেলেকে এক প্রস্ত বকাবকি করে বললেন ‘ এভাবে কেউ বলে ? কি বললি ? তা তুমি এখন এখানে ? এটা কি কোনো ভদ্র ঘরের ছেলে মেয়ের কাজ ?শুধু শুধু মেয়েটাকে রাগিয়ে দিলি। যতসব গাধা আমার ঘরেই জন্ম হলো। ‘
—-
ঝুমুরকে ধপ করে সদর দরজা লাগাতে দেখে ভ্রু কুচকে ফেললেন মনোয়ারা বেগম। নাতনির মুখ আদ্যপান্ত জরিপ করছেন তিনি। ঝুমুরের মুখ দেখে বুঝা যাচ্ছে না তার মনের ভাব কি। তাই তিনি মুখেই জিজ্ঞেস করলেন ‘ কিছু হয়েছে নাকি ?’
‘ নাহ্… কি হবে ? হালুয়া দিতে গিয়েছিলাম, সেটাই দিয়ে এলাম। ‘
ঝুমুরের কথার জবাবে আর কিছু বললেন না মনোয়ারা বেগম। উনি আর এ বিষয়ে মাথা ঘামালেন না। ঝুমুরের হুটহাট মন পরিবর্তনের ঘটনা নতুন না। এই মেয়ের প্রায়শই মুড সুইংস হয়।
রাগান্বিত ঝুমুর নিজের ঘরে এসে ফিজিক্স বই নিয়ে বসলো। তার মনে হলো রাগের বশে একটু বেশিই ওভার রিয়েক্ট করে ফেলেছে। ফাহমান তো তখন তাকে সেখানে আশা করেনি কাজেই হুট করে তাকে পেয়ে হয়তো জিজ্ঞেস করে বসেছে ঝুমুরের হঠাৎ আগমনের কারণ। আর সেই প্রশ্নটা শুনেই অবিবেচকের মতো শুধু কারণে রেগে গেলো ঝুমুর। যা হলো ঠিক হয়নি। এর জন্য তার ক্ষমা চাওয়া উচিৎ।
কিন্তু ক্ষমাই বা চাইবে কি করে সেটা ধরতে পারলো না ঝুমুর। ফাহমানরা তাদের ভাড়াটিয়া। বাড়িওয়ালা হওয়ার সুবাদে বাড়িওয়ালার ভাড়াটিয়াদের বাড়িতে এত ঘন ঘন আগমন স্বাভাবিক দৃষ্টিতে অভদ্রতা। কাজেই সে চাইলেই যখন তখন যেতে পারছে না। তাই ক্ষমা চাওয়ার একমাত্র উপায় হলো কালকে স্কুল যাওয়ার সময়টা। এখন কাল ফাহমান তার স্কুল যাওয়ার পথে তার সঙ্গে যাবে কিনা এটাই দেখার পালা। নাকি ঝুমুরের কথায় রেগে গিয়ে সে যাবে না ?
—-
ভেজা চুলে গলায় গামছা পেচিয়ে ঘর থেকে বের হলো ফাহমান। বাইরে থেকে এসে সে মাত্রই গোসল সেরে বেরিয়েছে। তার আবার কোথাও গেলে বাসায় ফিরে গোসল না করলে হয়না। মনে হয় ঘামে জবজবা শরীরে অসস্তি করে। রুমের বাইরে বের হয়েই ফাহমান দেখলো টেবিলের উপর হালুয়ার বাটি রাখা আর সেটা থেকে একটু করে হৈমন্তী খাচ্ছে। এই সময় হঠাৎ হালুয়া দেখে ফাহমান অবাক হলো। জিজ্ঞেস করলো ‘ হালুয়া ? কে দিলো ? ‘
‘ ঝুমুর দিয়ে গেছে ‘ খেতে খেতেই উত্তর দিলো হৈমন্তী। সে এখন ব্যস্ত ভার্সিটির এসাইনমেন্ট নিয়ে। সে তিতুমীর কলেজে অনার্স প্রথম বর্ষের ছাত্রী।
‘ ঝুমুর!! ওই পিচ্ছি কি রান্নাও পারে নাকি ? ‘ ফাহমান অবাক গলায় বললো।
‘ ও না দেখতে পিচ্ছি, আসলে পিচ্ছি না। রান্না থেকে শুরু করে বাসার যত কাজ আছে সব পারে। ‘
‘ ওহ ‘ শব্দ করে ফাহমান চেয়ার টেনে বসল। এক চামুচ হালুয়া নিয়ে মুখে দিল। মুখে দিতেই তার মনে হলো অমৃত খাচ্ছে। চিনি আর লবণের কি সুন্দর ব্যালেন্স। ফাহমান মিষ্টি জাতীয় খাবার খায় না। কিন্তু ঝুমুরের বানানো এই ডিমের হালুয়া খেয়ে মনে হলো মিষ্টি মনে করে না খেলে বুঝি সে কত কিছুই না মিস করতো।
চলবে…
মিফতা তিমু
( বিলম্বের জন্য দুঃখিত। জরুরী কাজ পড়ে যাওয়ায় দিতে দেরী হলো। আশা করি আপনারা এতে কিছু মনে করবেন না এবং গঠনমূলক মন্তব্য করে লেখিকাকে লিখতে আরও উৎসাহিত করবেন। )