শ্যামাঙ্গণা-২২
————-
কানে পেন্সিল গুঁজে হায়ার ম্যাথের ম্যাথস সলভ করছে ঝুমুর। থুতনির দিকটাতে তার কালি লেগে আছে। অধীর আগ্রহে সে অঙ্ক করতে ব্যস্ত। ঝুমুরের ধারণা এই গোটা পৃথিবীতে তার প্রথম বন্ধু ম্যাথ। তার যখন মন খারাপ করে তখন যদি সে অঙ্ক নিয়ে বসে তাহলে অজস্র সংখ্যাদের দুনিয়ায় হারিয়ে যেতে যেতে হঠাৎ করেই সে আবিষ্কার করে পূর্বের মত মন খারাপ ভাবটা তার এখন আর নেই।
এমনটা নয় যে শুধু মন খারাপের সময়টাতেই তাকে ম্যাথ সঙ্গ দেয়। এছাড়া সুখের মুহূর্তগুলোতেও ম্যাথ তার সঙ্গ দেয়। ঝুমুর যখনই ম্যাথ নিয়ে বসে তখন যেন তার হিজিবিজি হয়ে থাকা মাথার জট আরও দ্রুত খুলতে শুরু করে। ঝুমুর তখন যেকোনো সমস্যার সমাধান দ্রুত বের করে ফেলতে পারে। মোট কথা ঝুমুরের সুখ, দুঃখ সবকিছুর সঙ্গেই তার ম্যাথ ওতপ্রোত ভাবে জড়িত।
ঘন্টা কয়েক ম্যাথের সঙ্গে কুস্তাকুস্তি করে ম্যাথের গুষ্টি উদ্ধার করে রাজ্য জয়ের বেশে ঝুমুর হাস্যোজ্বল মুখে উঠে দাড়াল। হাতে কিছু সময় নিয়ে ঘরটা গুছিয়ে ফেললো তার। ঘর গুছিয়ে সে ভাবলো একবার মনোয়ারা বেগমের ঘর থেকে ঘুরে আসা যায়। কোনো কাজ থাকলে সেটা করে ফেলবে। যেই ভাবা সেই কাজ। ঝুমুর গায়ের ওরনা জড়িয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে মনোয়ারা বেগমের ঘরের দিকে গেলো। কিন্তু তার পথে বাধা পড়লো যখন আঞ্জুম আরা তাকে রান্নাঘর থেকে ডাক দিলেন।
ঝুমুর তার মামীর ডাকে এগিয়ে গেলো রান্নাঘরে। রান্নাঘরে ঢুকেই সে দেখলো পাশাপাশি দুই সিঙ্ক ভর্তি থালা বাসনে। ঝুমুরকে দেখে আঞ্জুম আরা রান্নাঘর থেকে বেরিয়ে যেতে যেতে বললেন ‘ এগুলো ধুয়ে দে তো। ‘
ঝুমুর আঞ্জুম আরার কথার বিপরীতে কিছু বললো না। ওড়না কোমরে গুঁজে জিজ্ঞেস করলো হ্যান্ড গ্লাভসগুলো কোথায়। আঞ্জুম আরা তখন রান্নাঘরের পাশে থাকা বাথরুমে বুয়ার জন্য কাপড় ভিজাচ্ছিলেন। ঝুমুরের প্রশ্ন শুনেও না শোনার ভান ধরে উত্তরে বললেন ‘ কি বলছিস ? শুনতে পারছি না। ‘
ঝুমুর বিরক্ত হলো বিধায় আর জিজ্ঞেস করলো না। সে রান্নাঘর আতিপাতি করে গ্লাভস খুঁজলো। খুঁজে না পেয়ে কি করবে ভাবতে পারলো না। ডিশ ওয়াশার দিয়ে সে ধোয়া মোছার কাজ করতে পারেনা। ওর এলার্জি আছে তাতে। তাই সে বরাবরই ধোয়ার কাজটা এড়িয়ে যায়। কোনওদিন নিতান্তই বাধ্য হয়ে যখন বাসায় মেহমান থাকে, আঞ্জুম আরা ব্যস্ত থাকেন তখন গ্লাভস পড়ে এগুলো ধোয়াধুয়ী করে।
কিছুক্ষণ খোঁজাখুঁজির পর গ্লাভস খুঁজে পেয়ে ঝুমুর বিজয়ীর বেশে থালাবাসন ধোয়াতে মন দিল। ধোয়া শেষে সে রান্নাঘর থেকে বেরিয়ে মনোয়ারা বেগমের ঘরের দিকে যাচ্ছিল কিন্তু আঞ্জুম আরা আবারও ডাক দিলেন। ঝুমুর এবারও বিনা বাক্য ব্যয়ে এগিয়ে গেলো। ওকে দেখা মাত্র আঞ্জুম আরা বললেন ‘ ফ্রিজে পায়েস আছে। বের করে খা, তোর তো পছন্দ। ‘
আঞ্জুম আরার কথা শুনে ঝুমুরের খুশি আর দেখে কে। সে আনন্দে আত্মহারা হয়ে ফ্রিজ থেকে পায়েস নামিয়ে ফেললো। তারপর একটা বাটিতে নিয়ে ছোট ছোট চামচে খেতে শুরু করলো। কিন্তু তার আর জানা হলো না পায়েসে বাদাম গুঁড়ো দেওয়া আছে। আফসোস সে যদি জানতো তাহলে আর পায়েস হয়তো খেত না।
ঝুমুরকে পায়েস খাওয়াতে পেরে বিজয়ীর হাসি হাসলেন আঞ্জুম আরা। তিনি জানেন পায়েসে বাদাম দেওয়া আছে। এখন এই বাদাম খেয়েই ঝুমুরের সমস্ত শরীর এলার্জিতে ফুলে যাবে। এই তো চান উনি। ঝুমুরকে চিরকাল উপরে উপরে মিথ্যে ভালোবাসার নাটক করেছেন। কিন্তু আসলে যে উনি ওকে ভালোবাসেন না বরং সহ্যও করতে পারেন না সেটা এই বাড়ির কারোরই অজানা নয়। শুধুমাত্র ঝামেলা এড়িয়ে যাওয়ার জন্যই এই কথা তুলে না কেউ।
আঞ্জুম আরা তার কোনো ননদ ননাসকেই পছন্দ করতেন না কোনওদিন। এতকাল শুধু ভালো সেজে থেকেছেন উপরে উপরে। কিন্তু আসল সত্যি সকলে জানে। তিনি যে উনার স্বামীর বোনদের এবং তাদের সন্তানকে দেখতে পারেন না এটা সবারই জানা। এই কারণেই তিনি নিঝুমকেও কোনওদিন সহ্য করতে পারেননি, নিজের ছেলেদের ওর কাছ থেকে দূরে রেখেছেন।
কিন্তু ঝুমুরকে উনি এত ভালোবাসার ভান ধরেন তার একমাত্র কারণ উনারা বর্তমানে যেই বাড়িতে আছেন তার পঞ্চাশ শতাংশ ঝুমুরের নামে যার অর্থ মোতালেব সাহেব বাড়ি নির্মাণের সময় আজমাঈন সাহেবকে দিয়েছিলেন। কাজেই নিজের জায়গা ধরে রাখতে ঝুমুরকে উনি নিজের হাতের মুঠোয় রেখেছেন। কিন্তু যখন থেকে ঝুমুর ফাহমানের সঙ্গে প্রণয়ে জড়িয়েছে তবে থেকে উনার মনে একটা ভয় তৈরি হয়েছে ঝুমুর হয়তো উনার হাত থেকে বেরিয়ে যাবেন।
সেই ভয়েই উনি চেয়েছিলেন ঝুমুরকে দ্রুত বিয়ে দিতে। তাইতো ঝুমুরের টেস্ট পরীক্ষা চলাকালীন ঝুমুরের বিয়ের কথা শাশুড়ির কানেও তিনিই তুলেছিলেন। কিন্তু কে জানতো ঝুমুরের বিয়ে শেষমেষ ফাহমানের সঙ্গেই হবে। তাইতো রাগে, দুঃখে ঝুমুরের পরীক্ষার সময়ে এসেই উনি ঝুমুরের পায়েসে বাদাম গুঁড়ো দিয়ে দিয়েছেন। উনি জানেন বাদাম খেয়ে ঝুমুরের বিশেষ ক্ষতি হবে না কিন্তু এই ঘটনা তাকে ভিতর থেকে ভেঙে গুড়িয়ে দিবে এবং ঝুমুর মানসিকভাবে ভেঙে পড়বে।
ঝুমুর খাওয়া দাওয়া শেষে জিনিসপত্র জায়গা মতো গুছিয়ে রেখে মনোয়ারা বেগমের ঘরে ঢুকলো। মনোয়ারা বেগম তখন বসে বসে বড় কাথায় টাক দিচ্ছিলেন। ঝুমুরকে দেখে কাছে ডাকলেন। সুই দিয়ে কাজ করতে করতে ঝুমুরকে ইশারায় পাশে বসিয়ে জিজ্ঞেস করলেন ‘ এতক্ষণ কি করলি শুনি। ‘
‘ অঙ্ক নিয়ে বসেছিলাম। অঙ্ক শেষে মনে হলো একটু চেয়ার টেবিল ছেড়ে উঠি। তারপর উঠে সিঙ্কের থালাবাসন ধুয়ে ফেললাম। ‘
নাতনীর কথায় চিন্তিত মনোয়ারা বেগম বললেন ‘ গ্লাভস পড়ে ধুয়েছিস তো ? জানিস তো এলার্জি আছে ? ‘
ঝুমুর মনোয়ারা বেগমের কথায় হাসলো। বললো ‘ হুম, প্রথমে গ্লাভস পাচ্ছিলাম না। কিন্তু কিছুক্ষন খোঁজাখুঁজির পর পেয়েছি। ‘
ঝুমুরের কথা শুনে গম্ভীর মনোয়ারা বেগম জিজ্ঞেস করলেন ‘ কোথায় ছিল গ্লাভস ? ‘
‘ প্লেটের রেকের উপর চায়ের কাপের নিচে ছিল। ‘ ঝুমুরও মনোয়ারা বেগমের সঙ্গে কাথা সেলাইয়ে মন দিল। সুইয়ে সুতা গেঁথে সে টাক দিচ্ছে।
‘ আমার মনে হয় তোর এখন ফাহমানদের বাসায় একবারে উঠে যাওয়া উচিত। ‘
মনোয়ারা বেগমের কথা শুনে ঝুমুরের চোখ দুটো যেন কোটর ছেড়ে বেরিয়ে আসছে। ও বড় বড় চোখে তাকিয়ে বললো ‘ মানে কি ? আপনি একবারও বলেননি বিয়ের পর আমি এখনই উনাদের বাড়িতে উঠবো। তাহলে এখন এই প্রশ্ন উঠছে কেন ? ‘
মনোয়ারা বেগম ঝুমুরের কথার জবাবে বললেন ‘ হ্যাঁ আমি জানি আমি এরকম কিছু বলিনি। কিন্তু তুমি জানো আমি এরকমটা কেন বলছি। তোমার আশেপাশে চব্বিশ ঘন্টা বিপদ ঘুরছে জানো তো ? ‘
ঝুমুরের মনোয়ারা বেগমের কথায় কোনো ভাবান্তর হলো না। ও নির্লিপ্ত মুখে বললো ‘ আমার কিসে বিপদ আমি জানি। কিন্তু আপাতত সময় আমি চাইছি পড়াশোনায় ফুল ফোকাস দিতে। আপনি জানেন আমি পড়াশোনা নিয়ে কতটা সিরিয়াস। ‘
ঝুমুরের কথায় তপ্ত শ্বাস ফেললেন মনোয়ারা বেগম। উনি জানেন ঝুমুরকে এখন কিছুতেই মানানো যাবে না ফাহমানদের বাসায় যাওয়ার ব্যাপার নিয়ে। উল্টো বাড়াবাড়ি করলে হিতে বিপরীত হবে। কাজেই উনি আর কোনো কথা তুলেন না।
ঝুমুর কাথায় সুতা একবার করে ঢুকিয়ে বারবার তার হাত চুলকাচ্ছে। ওর হাত,পা, ঘাড়,গলা চুলকাচ্ছে। ঝুমুর জানেনা কেন এমনটা হচ্ছে। তবে এগুলো সাধারণ চুলকানি ভেবে এড়িয়ে গেলো সে। মনোয়ারা বেগমের সঙ্গে গল্প করতে করতেই ঝুমুর অনেকটা সেলাই করলো। কাথায় সেলাই করা সে মনোয়ারা বেগমের কাছ থেকেই শিখেছে। কাজ শেষে ঝুমুর উঠে দাড়ালো। নিজের ঘরে কিছু কাজ শেষ করে ঠিক করলো এখন সে গোসল সেরে খাওয়া দাওয়া করে একটু ছাদে যাবে বিকেলের দিকে।
ঝুমুর ওর জামা কাপড় নিয়ে বাথরুমে এসে দাড়ালো। জামা কাপড়গুলো স্ট্যান্ডে রেখে ঝর্না ছেড়ে দিল। গোসল শেষে সর্বাঙ্গে টাওয়েল জড়িয়ে আয়নার সামনে গিয়ে দাঁড়ালো। কিন্তু আয়নায় চোখ রাখতেই দেখলো ওর শরীরে কিছু কিছু জায়গা কেমন লাল হয়ে উঠেছে। জায়গাগুলো ফুলেও আছে। ঝুমুর ভ্রু কুচকে আয়নায় ফুলে থাকা জায়গাগুলো পরখ করলো। কি মনে করে পিছন ফিরে পিঠের জায়গাটা আয়নায় দেখলো। সঙ্গে সঙ্গে তার মুখ থেকে বেরিয়ে এলো চিৎকার।
ঝুমুরের চিৎকারে মনোয়ারা বেগম খাবার ঘর থেকে ছুটে গেলেন ঝুমুরের ঘরে। ঝুমুরের বাথরুমের দরজায় নক করছেন অনবরত। অস্থিরতার ভান ধরে আঞ্জুম আরাও ছুটে এসেছেন। শাশুড়ির সামনে অস্থির গলায় বললেন ‘ আম্মা কি হলো ? ঝুমুর চিৎকার দিল কেন ? ‘
আঞ্জুম আরার কথায় বিরক্ত হলেন মনোয়ারা বেগম। বিরক্তিকর কণ্ঠেই বললেন ‘ তুমি যেমন মাত্র এসেছ তেমনই আমিও মাত্র এসেছি। তাহলে আমি কি করে জানবো কি হয়েছে ? ‘
আঞ্জুম আরা শাশুড়ির কথায় বোকার মতো হাসলেন। মনোয়ারা বেগম যেন সেই হাসি দেখেও দেখলেন না। আঞ্জুম আরাকে এড়িয়ে তিনি ঝুমুরের দরজায় অনবরত নক করছেন।
মিনিট দুয়েকের মধ্যেই ঝুমুর বেরিয়ে এলো। তার মেঝেতে নিবদ্ধ চোখ দুটো এবার সে উপরে তুললো। ঝুমুরকে দেখে আতকে উঠলেন মনোয়ারা বেগম। ঝুমুরের হাতের কব্জি, গলা, ঘাড় সব জায়গায় লাল হয়ে ফুলে আছে। মুখের কিছুটা অংশও এমনই ফুলে আছে। উনার বুঝতে বাকি রইলো না ঝুমুরের এলার্জি হয়েছে। মনোয়ারা বেগম জানেন এসবের পিছনে কার হাত। পুত্র বধূ আঞ্জুম আরার দিকে জ্বলন্ত দৃষ্টি নিক্ষেপ করে ঝুমুরকে ধরে ধরে নিজের ঘরের দিকে নিয়ে গেলেন।
—-
বিকেলে হসপিটাল থেকে ফিরে ফ্রেশ হতেই ফাহমান খবর পেলো তাকে জরুরি তলব করা হয়েছে দোতলায়। ফাহমান দ্রুত গায়ে টি শার্ট জড়িয়ে বাসা থেকে বেরিয়ে পড়লো। কলিং বেল দিতেই তাফিম এসে দরজা খুলে দিল। তাফিমের থমথমে মুখ দেখে ফাহমান ব্যস্ত কণ্ঠে জিজ্ঞেস করলো ‘ কি হয়েছে ? ‘
তাফিম কিছু বললো না। শুধু থমথমে মুখে ফাহমানকে ইশারা করলো ঝুমুরের ঘরের দিকে যেতে। ফাহমান ঝুমুরের ঘরের দিকে এগিয়ে গেলো। ঘরের দরজা চাপানো। ফাহমান মৃদু আওয়াজে নক করলো দরজায়। ভিতর থেকে ক্লান্ত কণ্ঠে কেউ বললো ‘ কে ? ‘
ফাহমান ঝুমুরের গলা পেয়ে দরজা খুলে ঢুকলো। দেখলো ঝুমুর বিছানায় শুয়ে আছে। ওর ট্রাউজার হাঁটু অব্দি উঠানো। হাফ হাতা টি শার্ট পড়া। জায়গায় জায়গায় ক্রিম দিয়ে দেওয়া ঝুমুরের। মুখেও অনেকটা অংশ জুড়ে ক্রিম দেওয়া। ঝুমুর ফাহমানের দেখা পেয়ে দ্রুত উঠে বসলো। কাছে থাকা ওড়না গায়ে জড়িয়ে নিলো। ফাহমানের সামনে টি শার্ট আর ট্রাউজারে থাকতে তার অদ্ভুত লাগছে।
ঝুমুরের হাতে,পায়ে,শরীরে জায়গায় ক্রিম লাগানো দেখে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়ল ফাহমান। দ্রুত এগিয়ে গিয়ে বসলো ঝুমুরের সামনে। হাত দিয়ে ভালো করে ঝুমুরের হাতে পায়ের ক্ষত দেখলো। ঝুমুরের গলা আর গলার নিচের ক্ষত দেখার জন্য ঝুমুরের ওড়না সরিয়ে ফেলতে চাইলো। কিন্তু ঝুমুর তা হতে দিলো না। বিরক্ত হয়ে ফাহমান ধমকে দিয়ে বললো ‘ উফ ঝুমুর। আমাকে দেখতে দেও। ‘
ফাহমানের ধমক খেয়ে অভিমানী ঝুমুর মুখ ফুলিয়ে ফেললো। মুখ ফুলিয়ে গায়ের থেকে ওড়না সরাতে দিবে না এই কঠিন পণে সে ওড়না চেপে বসে রইলো। কিন্তু তার এই কঠিন প্রতিজ্ঞা কাজে দিলো না যখন ফাহমান তাকে আবারও ধমক। ফাহমান টান মেরে ওড়না সরিয়ে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখতে লাগলো এলার্জি কতটা বেড়েছে। জায়গায় জায়গায় সবটা লাল হয়ে ফুলে আছে।
ফাহমানের ঝুমুরের ভীতু মুখ দেখে খারাপ লাগলো। সে কখনও ঝুমুরকে ধমক দেয় না। ফাহমান জানে ঝুমুরকে ধমক দিয়ে সে নিজেই শান্তি পাবে না। ঝুমুর জানে না ফাহমান তাকে ঠিক কতটা ভালোবাসে। ঝুমুরের সর্বাঙ্গ জুড়ে এলার্জির প্রভাব দেখে ফাহমানের মনে হলো এই এলার্জি যেন ওর শরীরে উঠেছে। ও আস্তে করে ঝুমুরের গলায় ফুলে যাওয়া অংশতে নিজের ঠোঁট ছুঁয়ে দিলো।
আকস্মিক ফাহমানের স্পর্শে ঝুমুর কেপে উঠলো। ওর চোখ দুটো নামিয়ে নিলো সঙ্গে সঙ্গে। ফাহমান ওর মুখে ওঠা এলার্জির জায়গাগুলোতেও ঠোঁট ছুঁয়ে দিলো। মন খারাপ করে বললো ‘ এগুলো কিভাবে হলো ?লাস্ট কি খেয়েছেন ? ‘
ঝুমুর নিজেকে ততক্ষণে সামলে নিয়েছে। মন খারাপ করে বলল ‘ পায়েস খেয়েছিলাম। মনে হয় পায়েসে বাদাম ছিল। কিন্তু আমি টের পাইনি। ‘
ঝুমুরের কথা শুনে ফাহমানের চোখ মুখ থমথমে হয়ে উঠলো। ও গম্ভীর গলায় বললো ‘ পায়েস কে বানিয়েছিল ? ‘
‘ মামী। ‘
‘ উনি কি জানেন না তোমার বাদামে এলার্জি আছে ? ‘
ঝুমুর জবাবে বললো ‘ মামী জানেন আমার বাদামে এলার্জি আছে কিন্তু উনি হয়তো ভুলে গেছেন সেটা। খেয়াল ছিল না হয়তো। ইচ্ছা করে তো আর বাদাম ঢেলে দিবেন না। তাছাড়া বাদামই ছিল নাকি অন্য কিছু আমি সিওর না। আমার চোখে পড়েনি সেরকম কিছু। ‘
ফাহমান না জানার ভান করে বললো ‘ হ্যাঁ এতটাই ভুলে গিয়েছিলেন যে বাদাম গুঁড়ো করে পায়েসের সঙ্গে মিশিয়ে দিয়েছেন। আমি তোমার মতো বোকা নই অঙ্গণা। আমার বউ কার কাছে সেফ আর কার কাছে সেফ নয় সেটা বোঝার মতো কমন সেন্স আমার আছে। এর বিরুদ্ধে অ্যাকশন নিবো আমি। ‘
ঝুমুর ফাহমানকে উত্তেজিত হতে দেখে ঘাবড়ে গেল। ফাহমানকে কেমন অস্বাভাবিক লাগছে। চোখ দুটো হালকা লাল হয়ে গেছে রাগে। ঝুমুর এগিয়ে গিয়ে দ্রুত ফাহমানকে জড়িয়ে ধরলো। পিঠে হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বলল ‘ শান্ত হোন। রেগে যাবেন না। এত রেগে যাওয়ার কিছু নেই। আমরা দেখবো ব্যাপারটা। ‘
ঝুমুরের কথা শুনে ফাহমান ছিটকে দূরে সরে গেলো। রাগান্বিত গলায় বলল ‘ রিয়েলি ঝুমুর ? রাগের কিছু নেই মানে ? তুমি কি বলছো বুঝতে পারছো ? ইউ কুড হ্যাভ ডায়েড ঝুমুর। ‘
শেষের কথাগুলো ফাহমান কান্না ভেজা গলায় বললো। ঝুমুর অবস্থা বেগতিক দেখে ফাহমানকে শান্ত করার জন্য ফাহমানের গালে হাত রেখে বলল ‘ যাইনি তো। আপনি আছেন না। আপনি থাকতে কেউ আমার কোনো ক্ষতি করতে পারবে না। আমার সেই বিশ্বাস আছে। ‘
ফাহমান খানিকটা শান্ত হলো। ঝুমুরের ক্ষত বিক্ষত হাত দুটোয় চুমু খেল।
চলবে….
মিফতা তিমু
ছবিয়াল: Maksuda Ratna