#শেষ_বিকেলে_তুমি_আমি
#আলিশা
#বোনাস_পার্ট
স্মরণ নিজের কথাকেই শেষ কথা করে নিয়ে আমাকে বদ্ধ অবস্থাতেই রেখে দিলো। সে মিথ্যা কিছু বলেনি। হয়তো সত্যিই আমি চলে যেতাম। বড্ড মন খারাপ বুকে চেপে তার বহু কথার এক কথাও না শুনে পারি জমাতাম নিজ গন্তব্যে।
— ওন্ট ইউ গো উইথ মি, খেয়া?
আবেগে যেন সিক্ত স্মরণের কন্ঠ। আমি দ্বিধার পাহাড় বেয়ে নেমে এলাম, দ্বন্দ্বের দেয়াল ভেঙে দিয়ে তার স্থির চোখে দৃষ্টি রেখে বললাম
— এম আই ইউর বিলাভ অর নিড?
আমার হঠাৎ করা প্রশ্নই দিলো স্মরণ মোটেও প্রস্তুত ছিল না এহেন পরিস্থিতির জন্য। আমি স্থির তাকিয়ে রইলাম। স্মরণ তৎক্ষনাৎ জবাব দিতে পারলো না। বেশ কিছু সময় সে অপলক দৃষ্টিতে দেখে গেলো আমাকে। আমার আঁখি জোড়া ছলছল করে উঠলো। স্মরণ হিমায়িত। সে হিম শীতল কন্ঠে জবাব দিলো
— কি মনে হয়? আমার অনুভূতি গুলো তো আমি বলে দিয়েছি। সেসব শোনার পর যদি তোমার মনে হয় তুমি শুধুই আমার প্রয়োজন তবে তাই।
বিষন্ন স্বরের কন্ঠ তার।
— ভালোবাসা বা না বাসা সম্পূর্ণই আপনার বিষয়। আমি কখনো জোর করে কারো ভালোবাসা চাই না। তবে আপনি কি জানেন? আমার ভালোবাসার সময়সীমা?
স্মরণ বিস্ফোরিত নয়নে তাকালো আমার দিকে। আমি তার দৃষ্টি অনুসরণ করে বললাম
— ক্লাস নাইন থেকে ভালোবাসি আমি আপনাকে। অনেক বেশি ভালোবাসি। কখনো ভাবিনি আপনাকে এভাবে পেয়ে যাবো। আবার পাওয়ার পর কখনো ভাবিনি আপনি এভাবে আমাকে কষ্ট দিয়ে এতোটা পর করবেন।
কখন যেন আমার গলার স্বরটা উদাসীনতায় নিমজ্জিত হয়েছে। চোখের জল গাড়িয়ে গেছে কোনো এক সময়। স্মরণের মুখাবয়ব স্পষ্ট বলে দিলো সে আমার কথায় দারুণ অবাক। বিস্ময়ে বাকরুদ্ধ। আমি তার থেকে দৃষ্টি সরিয়ে নিয়ে দূর সমুদ্রে চাইলাম। ভয়ঙ্কর বাতাস। জলন্ত মোমের অগ্নি শিখাদের অস্তিত্ব বিলীন হয়ে গেছে।
— আমার পক্ষে ফিরে যাওয়া সম্ভব নয়। সরি। কারো প্রয়োজন হতে আমার আপত্তি নেই। তবে পাশাপাশি প্রিয়জনও হতে চাই।
— প্রিয়জনই মানুষের প্রয়োজন হয়।
— উঁহু! প্রয়োজন মিটে গেলে প্রয়োজনের জিনিসটাকে ফেলে দেওয়া হয়।
স্মরণ স্তব্ধ হয়ে গেলো। সে আগেরই মতো করে বসে আমাকে পর্যবেক্ষণ করলো কিছু সময়। অতঃপর হঠাৎ বলল
— গুরুত্ব না দিয়ে দূরত্বটা বাড়াচ্ছ।
— আমার মনে হয় আমাদের মাঝে সবসময় দূরত্বটাই ছিলো।
— ঘুচে দিতে চাইলাম কিন্তু….
— আমার হাত খুলে দেন। চলে যাবো। রাত হচ্ছে।
স্মরণ কথা বাড়ালো না। তবে যেন ক্ষিপ্ত হলো প্রকাশ্যে। উপচে পরতে লাগলো তার রাগ। তবে বেশ শান্ত ভঙ্গিতে খুলে দিয়েছে আমার হাতের স্কচটেপ। মুক্তি পেয়ে আমি উঠে দাড়ালাম। শাড়ির আচল ঠিক করে একবারও স্মরণের পানে দৃষ্টি না দিয়ে হাঁটতে চাইলাম সম্মুখ পথে। ঠিক তখনই বাঁধা পরলো। আচমকা শাড়ির আচলে টান অনুভব করলাম। অসীম কৌতুহল মনে বসিয়ে পেছন ফিরে চাইতেই সে আমাকে উপেক্ষা করলো পুরোদমে। আমাকে এড়িয়ে দৃষ্টি নিয়ে গেলো সামনের কারো দিকে। কিছুটা উঁচু কন্ঠে হাঁক ছেড়ে বলল
— গাড়িতে একটা প্যাকেট আছে নিয়ে আসো।
আমি ততক্ষণে কপাল ভাজ অপ্রস্তুত ভঙ্গিতে দাড়িয়ে আছি। লোকটা হুটহাট কাজ করে বসে। আজ বেজায় বিরক্ত লাগছে তার এই কাজ। শারির আচল টেনে ধরার মানেটা কি? তার উদ্দেশ্য কি?
— ছাড়ু…
সম্পূর্ণ কথা ব্যাক্ত করার পূর্বেই সে হঠাৎ যেন একশো নিউটন বলে টেনে আমায় ধপাস করে ফেলে দিলো চেয়ারে। কিছু বুঝে ওঠার পূর্বেই পকেট থেকে বের করলো দু’টো চুড়ি। আমি সরু চোখে তাকিয়ে রইলাম।
— হাত দাও।
— কেন?
সে জবাব দেওয়ার প্রয়োজন মনে করলো না। ফুঁসে উঠলো ভেতর থেকে। নিজ থেকেই আমার হাত টেনে নিলো নিজের কাছে। মোটা, ভাড়ি চুড়ি একে একে পরিয়ে দিলো হাতে। আমি বাজখাঁই গলায় বলতে চাইলাম কিছু। কিন্তু সে আমাকে দ্বিতীয় বারের মতো নিশ্চুপ করে দিয়ে আমার নাকের নাকফুলে হাত দিলো। আমার অন্তরাল এবার ছেয়ে গেলো বিস্ময় ও বিরক্তিতে।
— আমার নাকের ফুল খুলছেন কেন?
— প্রয়োজনে খুলছি বলবো নাকি প্রিয়জনকে সেইভ রাখার জন্য খুলছি বলবো? কোনটা বললে খুশি হবে? প্রয়োজন শব্দটা তো তোমার পছন্দ না।
আমি স্তব্ধ হয়ে গেলাম তার প্রতিক্রিয়ায়। প্রথমত তার নিশ্বাস আমার চোখে আছড়ে পড়ে অস্বস্তিতে ডুবিয়ে রেখেছে। দ্বিতীয়ত তার এমন কান্ডগুলো। আমার নাক ফুলখুলে সে নিজের আনানো নাকফুল পরিয়ে দিলো। অনেক বড়। নাকের পাটার অর্ধেকটা জুড়ে তার অবস্থান। হাতে মোটা দু’টো চুড়ি। অনেক মোটা। নাকে পুরু বড় নাকফুল।
— এবার যাও। পৃথিবীর যেখানে যেতে ইচ্ছে করে যাও। এবার অঙ্কনের মা কেন? যে কেউ দেখলে বুঝে যাবে তুমি বিবাহিত। তুমি ভাবতে পারো তুমি ফিরতে না চাওয়ার কারণে আমি ভেঙে পরবো দূরে চলে যাবো। অনেক অনেক দূরে। বাট আমি এটা করবো না। প্রশ্নই আসে না। আমি তোমার প্রতি আসক্ত হতে চাইনি। আর না চেয়েছিলাম তোমার জন্য বুকের মধ্যে একটা ব্যাথা। কিন্তু তুমি এগুলো জোর করে স্থাপন করলে। সো, এবার অনেক কিছুই হতে পারে।
কথাগুলোর ফাঁকে ফাঁকে যেন লুকিয়ে ছিলো তীব্র জেদ। আমি শঙ্কিত তার ভঙ্গিতে।
— জাহিন, দ্রুত খেয়ার জান্য মেয়ে গার্ডের ব্যবস্থা করো। আর আজ তুমি রেখে আসো।
কথাটা বলেই স্মরণ অগ্রসর হলো সমুদ্রের ঢেউয়ের দিকে। জাহিন নামের ছেলেটা আমাকে বলল
— ম্যাম প্লিজ আসুন।
চলবে….