#শেষ_বিকেলের_প্রণয়
#আলো_ইসলাম
অন্তিম পর্ব
“” পরিবারের দায় দিয়ে এইভাবে নিজের মতামত এড়িয়ে যেতে পারোনা তুমি ছুটি। তাশরিফ উঠে দাঁড়িয়ে ক্ষিপ্ত স্বরে বলে। সবার অবাক চাহনি বিস্ময়কর মুখশ্রী।
– আমার একান্ত মতামত বলতে আর কিছু নেই তাশরিফ ভাইয়া। অনেক তো হলো নিজ মর্জিতে জীবন পার করা। এবার তাদের দিকটা ভাবি ছুটি বাবা-মাকে উদ্দেশ্য করে বলে।
-তার মানে এই বিয়ে করতে তোমার আপত্তি নেই?
থাকার কি কথা? তাশরিফের কথার পৃষ্ঠে বলে ছুটি। দমে যায় তাশরিফ। ছুটির দিকে বিমুঢ় দৃষ্টিতে কিছুক্ষণ চেয়ে থেকে বেরিয়ে আসে কাউকে কিছু না বলে।
– তাশরিফ বাবা এইভাবে চলে গেলো কেনো? আরমান তালুকদার বলেন চিন্তিত হয়ে।
ওর কথা ছাড়েন৷ আমরা কথাবার্তা এগিয়ে নিয়ে যায়। রোহান আর মাত্র কয়দিন আছে দেশে। এরপর ফিরে যাবে। ভাবি, ভাইয়া আসতে পারবে না। তাই সব দায়িত্ব আমার উপর। ছুটিকে বিয়ে করে নিয়ে চলে যাবে রোহান৷ আপনার আপত্তি নেই তো তাতে? মমতা খানের কথায় আরমান তালুকদার বলে আমার আর কি আপত্তি থাকবে রানীমা। আপনি যা ভালো মনে করেন তাই হবে।
-ছুটির দম বন্ধ হয়ে আসে। এক মুহুর্ত বসে থাকার ক্ষমতা নেই আর। শুনতে পারছে না আর এইসব কথা। শেষ পরিণতি এত করুণ হবে তার জানা ছিলো না। তবে ভালোই তো হবে, এক বিচ্ছেদ কাটিয়ে আরেক বিচ্ছেট আটকাবে সে। তার ভালোবাসা স্বার্থক না হোক রোহানের ভালোবাসা তো জয়ী হবে। সে তো শুনেছে রোহান নাকি ভালোবাসে তাকে। ছুটি একটা তপ্ত দীর্ঘশ্বাশ ছেড়ে উঠে দাঁড়ায়।
– আমি ঘরে যাচ্ছি কথাটা বলে আর এক সেকেন্ডও দেরি করে না ছুটি। ছায়া মলিন চোখে তাকিয়ে থাকে তার আপাইয়ের দিকে। অনেক বিষাদ দেখেছে সে তার আপাইয়ে চক্ষুদ্বয় জুড়ে।
— একদিন পর বিয়ের কাজকর্ম শুরু হবে। হাতে একদম সময় নেই। ছুটির ভ্রুক্ষেপ নেই তাতে। তাশরিফ সেই যে বেরিয়েছে বাড়ি থেকে আর বাড়ি ফিরেনি। শুধু একবার মমতা খানকে ফোন দিয়ে জানায় সে প্রোগ্রাম করতে ঢাকার বাইরে যাচ্ছে। আগে থেকে ডেট ফিক্সড ছিলো তাই ক্যানচেল করা সম্ভব না৷ রোহানের বিয়েতে থাকতে পারবে না সে। মমতা খান তাশরিফকে জোর করেনি আর না দ্বিতীয় কথা বলেছে এই নিয়ে। শুধু বলেছিলো ঠিকঠাক ভাবে যেনো প্রোগ্রাম শেষ করে ফিরে আসে আর নিজের খেয়াল রাখে৷ তাশরিফ অবাক হয়েছিলো তার মায়ের এমন আচরণ দেখে। তার থাকা বা না থাকায় কিছু এসে যায় না বুঝেছিলো সে।
— ছোট পরিসরে আয়োজন করে বিয়েটা হচ্ছে ছুটি আর রোহানের। ছায়া, আবির, ইমরান, রোহান সবাই ব্যস্ত। নিজের বিয়ে বলেও মাফ নেই রোহানের৷
– আজ গায়ে হলুদ ছুটি আর রোহানের। আর আগামীকাল বিয়ে হবে। ছুটি কেমন ঝিমাই গেছে দুদিনে৷ প্রয়োজন ছাড়া তেমন কথা বলে না কারো সাথে। মানুষ এড়িয়ে চলার চেষ্টা করে। ছায়া সব কিছুই বুঝতে পারে। কিন্তু কিছু বলে না ছুটি কে৷
– ছুটি আর রোহানের একসাথে গায়ে হলুদের অনুষ্ঠান হচ্ছে। এক জায়গায় আয়োজন করা হয়। গায়ে হলুদের জন্য ছায়া আর তার কাজিনরা সাজিয়ে দিচ্ছে ছুটিকে। সবুজ রঙের শাড়ি সাথে ফুলের গহনা। হাল্কা মেকাপে অনেক সুন্দর লাগছে ছুটিকে। মায়াবী চেহারায় আরো যেনো মায়ার মেলা বসেছে। রোহানরা কলা পাতা রঙের পাঞ্জাবি পড়েছে। ছায়াও ছুটির মতো করে সেজেছে আজ। এটা মূলত ছুটিরই ইচ্ছে ছিলো তাই।
— আপাই তুই বস আমরা আসছি। একটু পর এসে নিয়ে যাবো তোকে। আমরা গিয়ে দেখি রোহান ভাইয়ারা এসেছে কি-না। ছুটি কোনো প্রতিক্রিয়া দেখায় না ছায়ার কথায়। ছায়ারা বেরিয়ে যায়।
— ছুটি আয়নায় নিজেকে দেখছে নিখুঁত ভাবে। তাচ্ছিল্যের হাসি আসে তার নিজেকে দেখে আজ। এই সাজ নিয়ে অনেক স্বপ্ন ছিলো তার, অনেক অনেক ইচ্ছে আকাঙ্খাও জড়িয়ে ছিলো। কিন্তু আজ সবই উপহাস,মলিনতায় ভরা। সাজসজ্জা আছে ঠিকই কিন্তু সে আগ্রহ টা নেই। ছুটি এইসব ভাবছিলো নিজের দিকে তাকিয়ে তখনই আয়নায় একজনের প্রতিচ্ছবি দেখতে পাই সে। চমকানো চোখে সে প্রতিচ্ছবির দিকে চেয়ে থাকে।
– তাশরিফ তার পেছনে দাঁড়িয়ে আছে। চোখ মুখের অবস্থা বেহাল। বিষাদে ঘেরা তার বদন। নাকটা লাল হয়ে আছে, চোখ গুলো কিছুটা ফোলাভাব। আচ্ছা উনি কি কান্না করেছেন? ছুটির অদ্ভুত ভাবনা।
— ছুটি উঠে দাঁড়ায়। চোখ রাখে তাশরিফের চোখে।
তুমি ? আমি যতদুর জানি তুমি কোনো প্রোগ্রাম করতে…. এই বিয়েটা করিস না ছুটি। ছুটির কথার মাঝে বলে তাশরিফ। ছুটি ভ্রু কুচকে তাকায়৷ অনেক দিন পর তাশরিফ তুই করে সম্বোধন করলো তাকে। ঠিক সে পুরনো দিনের মতো।
— বুঝলাম না? ভ্রু কুচকে বলে ছুটি।
– কেনো বুঝিস না তুই? তোর তো বোঝার কথা ছুটি। তাহলে কেনো বুঝতে চাসনা? তাশরিফ ছুটির দিকে তেড়ে এসে বলে কথাগুলো। ছুটি বিস্ময় নিয়ে তাকিয়ে থেকে বলে কি হয়েছে তোমার? শরীর ঠিক আছে?
— তাশরিফ বিরক্ত নিয়ে বলে তুই এই বিয়ে করবি না।
– বারবার এক কথা কেনো বলছো তুমি? কেনো করবো না বিয়ে আমি? আমার কি পরিবার নেই, আমার কি কোনো ইচ্ছে আকাঙ্খা নেই৷ আমার কি ইচ্ছে করে না আমার নিজের একটা সংসার হোক সেটা চাইতে। আমি সুখী হয় সেটা কি তুমি চাও না? চিৎকারে দিয়ে বলে ছুটি।
– রোহানের সাথে বিয়ে হলে তুই কি সুখী হবি? তাশরিফের কথায় দমে যায় ছুটি। চোখ নামিয়ে নেয় সে তাশরিফের চোখ হতে।
– উঁহু চোখ নামিয়ে নিস না। উত্তর দে আমার কথার৷ ছুটি সংকুচিত হয়ে তাকায় তাশরিফের দিকে।
—
ভালোবাসো ঠিকই কিন্তু একবার সেটা বলতে পারলে না আমায়। আমি নাহয় বুঝতে পারিনি তোমার অনুভূতি, আমি নাহয় অপারগ ছিলাম কিন্তু তুমি কেনো সবটা মেনে নিলে ছুটি। অসহায়ত্ব তাশরিফের কন্ঠে।
– সব দায় কি আমারই? আমি ভালোবাসবো আবার আমি গিয়ে সেটা ঢাকঢোল পিটিয়ে বলবো। হ্যাঁ মানলাম আমি ভালোবাসি, অনুভূতিটা আমার, সেটা জানানোর দায়টাও আমার কিন্তু আমি সেটা পারিনি৷ কেনো পারিনি জানো? ছুটির কথায় তাশরিফ ছোট ছোট চোখে তাকায়।
– পারিনি এই জন্য যে, আমি যে মানুষটাকে ভালোবাসি সে মানুষটা আমাকে না অন্য একজনকে ভালোবাসে বলে। আমি যার মাঝে বন্ধুত্ব এবং ভালোবাসা দুটোই দেখেছি তার কাছে আমার স্থান শুধু বন্ধুত্বে আটকে ছিলো বলে। যার কাছে আমার অনুভূতিটা ধরাই দিতে পারিনি তার কাছে ভালোবাসি কথা বলাটা নিছকই বোকামি ছাড়া কিছু না। তাছাড়া তুমি কেনো এইসব কথা বলছো? তুমি তো কখনো ভালোবাসোনি আমাকে আর না সে অনুভূতি আছে আমার জন্য। ছুটির কথায় তাশরিফ বিমুঢ় দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে।
— আচ্ছা তুমি এখানে কেনো? প্রোগ্রাম কি শেষ হয়ে গেছে। ফাইনালি বিয়েটা এটেন্ড করতে পারছো তুমি। তোমার বন্ধুর বিয়ে আবার তোমার ভাইয়ের। কত দায়িত্ব তোমার বলো তো। ছুটি চোখের মধ্যে পানি নিয়ে কথাগুলো বলে।
-ছুটিকে অবাক করে দিয়ে তাশরিফ জড়িয়ে ধরে গিয়ে। হতভম্ব হয়ে যায় ছুটি। শিউরে ওঠে হঠাৎই।
– আমি তোমাকে ভালোবাসি ছুটি, অনেক ভালোবেসে ফেলেছি। হয়তো অনেক দেরি হয়ে গেছে আমার বলতে কিন্তু আমি তোমায় ভালোবাসি বিশ্বাস করো। এদিকে ছুটি কিংকর্তব্যবিমুঢ় হয়ে দাঁড়িয়ে। তাশরিফের বলা কথাটা কানে বাড়ি খাচ্ছে বারবার।
— একটা মানুষ ঠিক কতজনকে ভালোবাসতে পারে তাশরিফ ভাইয়া? ছুটির কথায় তাশরিফ ছেড়ে দেয় ছুটিকে।
— ছুটির চোখের দিকে তাকিয়ে বলে, ভালোবাসা কতবার হয় বা কতজনকে ভালোবাসা যায় জানি না৷ কিন্তু এটা জানি মানুষ দ্বিতীয়বার প্রেমে পড়ে, দ্বিতীয়বার ভালোবাসতে পারে। আর সে ভালোবাসাটা হয় প্রথম ভালোবাসার থেকেও প্রখর,স্নিগ্ধ । আমি ইলহামকে ভালোবাসতাম এখনো বাসি কিন্তু সেটা আমার একান্ত ভালোবাসা অন্য রকম অনুভূতি । তোমাকে আমি ভালোবেসেছি আমার ভেতরে জন্ম নেওয়া নতুন অনুভূতি থেকে। যেখানে তুমি ছাড়া আর কেউ নেই। আমি জানি ছুটি আমার কথা গুলো শুনে অদ্ভুত লাগছে বা লাগতে পারে৷ তবে বিশ্বাস করো আমি আগে উপলব্ধি করতে পারিনি এতকিছু। যখনই তুমি আমার থেকে দূরে সরে গিয়েছো তখন থেকে আমি সম্পর্কের অন্য মানে জেনেছি। আমাদের মাঝে যে বন্ধুত্বের বাইরে আলাদা একটা সম্পর্ক হতে পারতো তোমাকে হারানোর পর বুঝেছি। আর যখন থেকে সবকিছু বুঝতে পারি তখনই আমি অপরাধী হয়ে গেছি তোমার কাছে। আর এই অপরাধের প্রাশস্ত্য করার সাধ্য আমার ছিলো না সে-সময়। কারণ তখন ইলহাম আমার জীবনে চলে এসেছিলো আমি ভালোবাসতাম তাকে।
—
ছুটি অপলকভাবে তাশরিফের কথাগুলো শ্রবণ করছে শুধু৷ চোখ দিয়ে গড়ছে অশ্রুকণা।
— আমি না তোমার অনুভূতি বুঝতে পেরেছি আর না তোমার অনুভূতিকে সম্মান দিতে পেরেছি যার জন্য আমি তোমার সামনে যাওয়ার দুঃসাধ্য দেখায়নি আর কখনো। এরপর আমার জীবনে কালবৈশাখী ঝড় নেমে এলো। সে ঝড় ইলহামকে নিয়ে গিয়ে আমাকে অপরাধী করে দিয়ে গেলো। হয়তো এটাই আমার প্রাপ্য ছিলো বা শাস্তি বলতে পারো৷ কাউকে কষ্ট দিয়ে কেউ কখনো ভালো থাকতে পারেনা৷ তাই হয়তো আমিও ভালো থাকতে পারিনি তোমাকে কষ্ট দিয়ে, যদিও আমি জেনেশুনে তোমাকে কষ্ট দিইনি। তারপরও প্রকৃতির একটা নিয়ম থাকে বলো?
— এরপর যখন আবারও ফিরে এলে আমার জীবনে তখনও আমি তোমাকে গ্রহণ করতে পারিনি। ইচ্ছে থাকলেও আমি সে ইচ্ছেতে সায় দিতে পারিনি কারণ আমার জীবন ছিলো অনিশ্চিত। আর এই অনিশ্চিত জীবনে তোমাকে এনে নতুন করে কষ্ট দিতে চাইনি বলে বিয়েটা আমি ভেঙে দিই। কিন্তু বিশ্বাস করো ছুটি, নিজেকে বড় নিঃস্ব মনে হতো৷ খুব করে একটা ভরসার হাত চাইতাম। পুরনো দিন গুলো আমাকে ভীষণ যন্ত্রণা দিতো৷ তোমাকে অনেক মিস করতাম কিন্তু আমি কখনো সেটা প্রকাশ করতে পারিনি। তাশরিফ কথাগুলো বলতে বলতে কেঁদে দেয়৷ চোখ দিয়ে তারও পানি ঝরে আজ। অনেক আক্ষেপ আজ নিঙড়ে হাল্কা হতে চাই সে।
— এখন সব কিছু ঠিক হওয়ার পরও আমি তোমাকে সাহস করে বলতে পারিনি ছুটি আমার তোমাকে চাই। চলোনা বাকিটা সময় আমরা একসাথে থাকি৷ অচেনা এক অপরাধবোধ কুঁড়ে কুঁড়ে খেতো আমায়। ভয় হতো ভীষণ আবার হারিয়ে ফেলার। কিন্তু যখন মনস্থির করলাম সব বাধা সব ভয় কাটিয়ে তোমাকে নিজের করে পেতে চাইবো তখনই আম্মা তোমার আর রোহানের বিয়ের কথা বলে৷ আমার মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ে কথাটা শুনে৷ আমি তখনো প্রকাশ করতে পারিনি মনের কথা। সেদিন বলতে পারিনি আম্মাকে যে আমি চাই ছুটিকে৷ আমার অপরাধটা এতো গভীর যে আমি নিজেকে ক্ষমা করতে পারছিলাম না৷ তাই তোমাকে চাওয়ার মতো দুঃসাহস আমি করে উঠতে পারিনি ছুটি। কিন্তু আজ আর নিজেকে ধরে রাখতে পারলাম না। তোমাকে দ্বিতীয়বার হারানোর যে ভয় সেটা আমাকে শান্তিতে থাকতে দিচ্ছে না। তোমাকে আমার চাই ছুটি, ভীষণ ভাবে চাই আমি তোমাকে। আমি ভালোবাসি তোমাকে ছুটি, হোক বন্ধুত্ব কিংবা প্রেম যেকোনো কিছুর বিনিময় হলেও তোমাকে আমার চাই। ছুটি ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠে। তাশরিফ মুখে হাত দিয়ে নিজেকে শান্ত করার প্রচেষ্টা চালায়।
— তবে কি ভালোবাসা স্বার্থক হলো আজ? সত্যি কি এটা সম্ভব? আবারও কি সব ভুলে এক হওয়া যায়? কিন্তু কিভাবে? আরেকজন যে খুব করে চাই তাকে। যে মানুষটা তাকে নিয়ে স্বপ্ন দেখছে এখনো পর্যন্ত তাকে কীভাবে ফেরাবে৷ নিজের ভালোবাসা পাওয়ার লোভে কি স্বার্থপর হওয়া যায়? এতে কি খুব বড় অন্যায় হয়ে যাবে? গভীর ভাবনা ছুটির। একদিকে ভালোবাসা ফিরে পাওয়ার উল্লাস আরেক দিকে স্বপ্ন ভঙ্গের কারণ।
— কিছু তো বলো ছুটি! তুমি এই বিয়ে করবে না বলো। আমি তোমাকে বিয়ে করবো। আমরা একসাথে থাকবো। বলো তুমি রাজি? বলো যে এই বিয়ে তুমি করবে না?
– আমার হাতে আর কিছুই নেই তাশরিফ ভাইয়া৷ মেনে নিয়েছি আমি আমার নিয়তিকে৷ তোমাকে পাওয়া বোধহয় আমার ভাগ্যে ছিলো না। তাই তো অনেকবার পেয়েও ধরে রাখতে পারিনি। হতে পারিনি একে অন্যের। তাই থাক না কিছু ভালোবাসা না পাওয়াতে৷ সব ভালোবাসায় যে পূর্ণতা নামক শব্দটা আসে না।
– কে বলেছে আসেনা? যদি দুজন মানুষ খুব করে চাই তাহলে অবশ্যই সে ভালোবাসায় পূর্ণতা আসবে৷ আর তোমাদের টাও সম্ভব ছুটি। রোহান আসে কথাগুলো বলতে বলতে। সাথে আবির,ছায়া, মমতা খান সবাই আছে।। সবাইকে দেখে ভ্রু কুচকে তাকায় তাশরিফ আর ছুটি।
* তোমরা এখানে? বিস্ময় নিয়ে বলে তাশরিফ।
– কি ব্রো! আর চেপে রাখতে পারলে না তো মনের কথা। আর পারলে না লুকোচুরি করতে। ছুটিকে আবারও হারানোর ভয়ে ছুটে এসেছো তাই তো। রোহানের কথায় কৌতুহল নিয়ে তাকায় তাশরিফ। ছুটিও কিছু বুঝতে পারছে না৷ এদিকে ছায়া,আবির মমতা খান হাসছে।
— কি হচ্ছে বলবে? আমি কিছুই বুঝতে পারছি না ছুটি বলে বিরক্ত হয়ে।
– আমি সবটা বলছি ছুটি মা৷ মমতা খান এগিয়ে এসে বলে।
– তাশরিফ তোমাকে ভালোবাসে ঠিকই কিন্তু সেটা বলার সাহস করে উঠতে পারছিলো না৷ এইভাবে ছন্নছাড়া হয়ে চললে তো কোনো কিছুরই সমাধান আসবে না৷ তাই আমরা সবাই মিলে একটা প্ল্যান করি আর সেটা হলো তোমার আর রোহানের বিয়ে দেওয়ার প্ল্যান৷ যাতে তাশরিফ তোমাকে হারানোর অনুভূতিটা আবার টের পাই আর নিজেকে ধরা দেয় তোমার কাছে। প্ল্যানটা অবশ্য ছায়ার৷
– জানো ছুটি, আমি দেখেছি আমার ছেলেকে প্রতি মুহুর্তে ছটফট করতে৷ অনেক কিছু বলার থেকে না বলার যন্ত্রণা বয়ে বেড়াতে৷ আমি যে মা তাই বুঝি আমার ছেলে কি চাই না চাই। ও যে তোমাকে ভালোবাসে এটা বুঝে গিয়েছিলাম আমি তাই তো তোমাদের বিয়ে দিতে চেয়েছিলাম কিন্তু… থেমে যায় মমতা খান।
– তবে অবশেষে সব ঠিক হলো। ভালোবাসা না এমনই অদ্ভুত অনুভূতি। কখন কিভাবে আসে কেউ বুঝতেই পারেনা। ভালোবাসা একাধিকবার হতে পারে যদি সেটা হয় প্রিয় কেউ। তুই আর আমার ছেলেটাকে ফিরিয়ে দিসনা মা। অনেক তো হলো লুকোচুরি, নিয়তির কঠিন খেলা৷ সব কিছু যখন ভালোই ভালোই শেষ হয়েছে তখন তোরাও এক হয়ে জীবনটা কাটিয়ে দে৷ তবে আমি একটা কথা তোকে হরফ করে বলতে পারি, ঠিক যতটা যন্ত্রণা কষ্ট পেয়েছিস ভালোবাসার মানুষটাকে না পেয়ে ঠিক তার দ্বিগুণ সুখ,শান্তি ভালোবাসা তুই পাবি আমার ছেলের থেকে কারণ কি জানিস? কারণ তোকে একবার যে আঘাত দিয়েছে তাশরিফ সেটা যেনো তুই দ্বিতীয়বার না পাস, একই অপরাধের কাঠগড়ায় যাতে দ্বিতীয়বার উঠতে না হয় সেটারই সাধ্যি মতো চেষ্টা করবে ও। মমতা খানের কথায় ছুটি কান্নার মাঝেও হেসে উঠে। তাশরিফের চোখ দুটো চকচক করে উঠে। সবার মুখে হাসি আনন্দের ছাপ৷ সত্যি সব বিষাদ কেটে গেছে এখন। আর কোনো পিছুটান বা মলিনতা নয়৷ সচ্ছল জীবন আর একসাথে চলার নির্জাস প্রয়াস। ভালো থাক ভালোবাসা, অটুট হোক বন্ধন।
” বাসর ঘরে ছুটি আর তাশরিফ অবস্থান করছে। জীবনের সব মহিমা কাটিয়ে আজ তারা একসাথে, এক রুমে এক সুতোয় বাঁধা।
– তাশরিফ ছুটির হাতদুটো ধরে তার হাতের মুঠোয় নেয়। ভয়ার্ত চোখে তাকায় ছুটি, শরীরে মৃদু কম্পন। অন্য রকম অনুভূতি।
— জীবনের যতটা সময় নষ্ট করেছি তোমার, তার সব সুদেআসলে ফেরায় দেবো আমি। এত ভালোবাসা আর এত ভালো রাখবো যে৷ জীবনের উপন্যাসে কালো অধ্যায় বলে কিছু ছিলো সেটা মনে করতেও কষ্ট হবে তোমার। ছুটি লাজুক হাসে, প্রাপ্তির নিশ্বাস ছাড়ে। লুটিয়ে পড়ে তাশরিফের বুকে।
— ছাদের কিনারায় পা ঝুলিয়ে বসে আছে রোহান। আকাশে যে দ্বিখণ্ডিত চাঁদ সেদিকে তার খেয়াল। কেনো জানি খুব আপন লাগছে আজ চাঁদকে। তার মতো একা হয়ে আকাশে বিচরণ করছে।
– একজোড়া হাত এসে কাধ ছোঁয় রোহানের৷ বিস্মিত হয়ে পিছু ফিরে সে।
– একা একা কি করছেন ভাইয়া? ছায়া আসে সেখানে।
– তুমি এখানে? অনেক রাত তো ঘুমাওনি? হাতে থাকা ঘড়ির দিকে তাকিয়ে বলে রোহান।
– এক রাত ঘুম নাহলে এমন কিছু এসে যাবে না। আপনি এখানে কি করছেন? রোহান মুচকি হেসে বলে এমনি বসে চাঁদ দেখছি। খুব ভালো লাগছে তো তাই।
– মন খারাপ তাই না? হঠাৎই ছায়ার এমন কথায় রোহান ভ্রু কুচকে বলে আমাকে বলছো?
– আপনার কি মনে হয়? রোহান চোখ সরিয়ে নেয় ছায়ার কথায়।
– সবাই অভিনয় জানলেও আমি জানি আপনি আপাইকে সত্যি ভালোবেসে ফেলেছেন। আমার চোখ ফাঁকি দেওয়া এত সোজা না রোহান ভাইয়া।
– হকচকিয়ে উঠে রোহান৷ আমতাআমতা স্বরে বলে কি যে বলো না৷ আমি তো জানি ছুটি ব্রোকে ভালোবাসে।
সব জানাও যে এক সময় অজানা হয়ে ভুল হয়ে যায় আমাদের জীবনে আমি এটা জানি ভাইয়া। কিন্তু কি করার বলুন, আপাই যে অনেক ভালোবাসে তাশরিফ ভাইয়াকে। তাই আপাইয়ের কথা ভেবে আপনার জন্য কিছু করতে পারলাম না। সত্যি খারাপ লাগছে ভাইয়া আপনার জন্য।
– তুমি কেনো মন খারাপ করছো ছায়া? সব জানার পরও যদি কেউ ভুল করে তবে সেটা একান্ত তার দায়৷ এখানে কেউ দোষী থাকে না৷ সত্যি কখন কিভাবে হয়ে গেছে জানিনা৷ তবে ভালোবেসেছি এটা সত্যি। আমার নিয়ন্ত্রের বাইরে বলতে পারো৷ তবে আমি খুশি ওদের এক হতে দেখে৷ আমি এখানে থেকে চলে গেলে সব ভুলে যাবো৷ আবার সব স্বাভাবিক, বিন্দাস লাইফ কথাটা বলে রোহান উঠে দাঁড়ায়। ছায়া স্পষ্ট দেখে রোহানের চোখে পানি৷ আবারও একটা অপূর্ণ প্রেমের সে অশ্রুবিন্দু।
অনেক রাত হয়েছে ঘুমিয়ে যাও৷ আমি আসি বলে রোহান চলে যায়। ছায়া দীর্ঘশ্বাস ফেলে। তখনই আসে আবির।
– ঘুমাবি না? আবিরের চোখের দিকে স্নিগ্ধ হয়ে তাকায় ছায়া। আবিরও অনেক প্রেম নিয়ে তাকিয়ে থাকে ছায়ার চোখে।
– ছায়া আবিরের বুকে মাথা ঠেকিয়ে বলে, ভালোবাসার অনুভূতি সুন্দর নাকি বিষাদে ঘেরা আবির ভাইয়া? যদি বিষাদই হবে তাহলে কেনো ভালোবাসে সবাই? আর যদি সুন্দরই হবে তবে কেনো কষ্ট পাই সবাই?
সমাপ্তি –
❌কপি করা নিষেধ ❌ গল্পটা নিয়ে ভাবনা এতদুরই ছিলো আমার। হয়তো অনেকের মন মতো অন্তিম মুহুর্ত আনতে পারিনি বা মন মতো ফুটিয়ে তুলতে পারিনি৷ কিন্তু আমার যোগ্যতা এতটুকুই ছিলো। বেশি কিছু বলব না,শুধু কৃতজ্ঞতা জানায় তাদের অনেকের অপছন্দের হওয়া সত্ত্বেও ধৈর্য নিয়ে পড়েছে গল্পটা। হয়তো আবার নতুন গল্পে সাক্ষাৎ হবে৷ সবাই ভালো থাকবেন। ভুলক্রুটি মাফ করবেন। ধন্যবাদ