শেষ থেকে শুরু পার্ট ১৪ +১৫

0
278

#শেষ_থেকে_শুরু
কলমে: লাবন্য ইয়াসমিন
পব:১৪

সকালবেলায় সোনালী সূর্যের কিরণ চোখে পড়তেই ঘুম ভেঙে গেলো অরিনের।নতুন পরিবেশে নিজেকে মানিয়ে নিতে বেশ কষ্ট হচ্ছে। তাছাড়া রাতে ঘুম হয়নি ভালো। সব সময় মনের মধ্যে নানারকম চিন্তা ঘুরপাক খেয়েছে। আরাফাত মানুষ হিসেবে খারাপ না। ওর সঙ্গে কোনো বেয়াদবি করেনি কিন্ত হারপিকের বিষয় নিয়ে অপমান করেছে।। গতকাল রাতে মাথা ঘুরছিল ফ্রেস হওয়ার জন্য বিছানা থেকে নামতে গিয়ে ফুল গুলো নিয়ে বিছানায় পড়ে গিয়েছিল। তারপর কিছু মনে ছিল না। ফুলের নিচে চাপা পড়ে মরার মতো অবস্থা। কথাগুলো ভেবে অরিন পাশ ফিরে তাকালো সেখানে আরাফাত নেই। হয়তো আগেই উঠে গেছে ওকে না জাগিয়ে। অরিণের ধ‍্যান ভাঙলো রুনির কথা শুনে। দরজা খোলা ছিল রুনি ভেতরে উঁকি দিয়ে আরাফাতকে না দেখে চলে এসেছে। রুনি হাসি মুখে বলল,

> ঘুম কেমন হলো? নাস্তা করবে তো? সকলে অপেক্ষা করছে।

অরিন মলিন হেসে মাথা নাড়িয়ে বুঝিয়ে দিলো ঘুম ভালো হয়েছে। রুনি ওকে নিচে যাবার তাগিদ দিয়ে চলে গেলো। অরনি দ্রুত বাথরুমে গিয়ে ফ্রেস হয়ে নিলো। পরনে লাল রঙের শাড়িটা। শাড়ি পরার অভ‍্যাস নেই বললেই চলে। ছোটবেলাতে পরেছিল একটু একটু মনে আছে। উল্টোপাল্টা করে রাতে নিজে যা পেরেছিল সেভাবে চেঞ্জ করেছে। কিন্তু এখন তো নিচে যেতে হবে। যেমন তেমন করে যাওয়া যাবে না। অনেক ভেবে চিন্তে ভিডিও দেখে মোটামুটি শাড়িটা ঠিক করে নিচে নেমে আসলো। টেবিলে সবাই বসে আছে। চয়নিকা খাবার পরিবেশন করছে। আরাফাতের পাশের চেয়ারটা ওর জন্য খালি রাখা হয়েছে রুনি ওকে দেখিয়ে দিলো। ও শব্দ না করে চুপচাপ বসে পড়লো। আরাফাত ছেলেটা রোবটের মতো মনোযোগ দিয়ে খাচ্ছে কথাবার্তা বলছে না। অরিনের লজ্জা পাচ্ছে। এই পরিবারের সবগুলো মানুষ ওর চেনাজানা। মনে হচ্ছে এই জন‍্যই লজ্জাটা একটু বেশি বেশি পাচ্ছে। রাজীব ডিমে কামড় বসাতে বসাতে আরাফাতকে উদ্দেশ্যে করে বলল,

> বিয়ে শাদী তো হলো এবার পরবর্তী পরিকল্পনা কি? বাইরে কিছু না করতে চাইলে আমার সঙ্গে ব‍্যবসাতে মনোযোগ দিতে পারিস উন্নতি করবি।

আরাফাত খাওয়া থামিয়ে ভ্রু কুচকে বলল,

> আমি এখানে নতুন করে কিছু করবো না ভাইয়া। তাছাড়া অরিনের পড়াশোনা বন্ধ হয়ে যাবে এখানে থাকলে। হৈমির খোঁজ নিতে হবে। আমরা সামনের সপ্তাহে ফেরত যাচ্ছি। তাছাড়া ওখানের জবটা আমি ছাড়তে পারছি না।

> যেটা ভালো মনে হয় কর তবে পরের দেশে পড়ে থাকার চাইতে এখানে থাকাই ভালো মনে করছি।

> স্থায়ী ভাবে থাকবো না। চলে আসবো কোনো এক সময়। তবে এখন না ভাইয়া।

অরিন চুপচাপ আরাফাতের কথাগুলো শুনলো। লোকটা ওকে নিয়ে চিন্তা করছে বিষয়টা ভেবে ওর মন ভালো হয়ে গেলো। গতকাল হারপিক নিয়ে খোটা দিয়েছিল তখন মনে হয়েছিল সত্যিই লোকটা খুব পাজি। কথাগুলো ভেবে অরিন খাওয়াতে মনযোগ দিলো। ফারজানা হক রাজীবকে ফোন করেছিল। আরাফাত আর অরিনকে ওখানে যাওয়ার জন্য অনুরোধ করা হয়েছে। আরাফাত যেতে চাইনি তবুও যেতে হচ্ছে। খাওয়া শেষ করে অরিন রুমে গেলো রেডি হওয়ার জন্য। রুমেস গিয়ে তাড়াতাড়ি শাড়িটা চেঞ্জ করে চুলগুলো বেধে নিলো। ঠিক তখনই আরাফাত রুমে ফিরলো। অরিন আয়নার সামনে নিজেকে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে দেখতে ব‍্যস্ত।মনে হলো শাড়িটা আহামরি খারাপ পরেনি। আরাফাত অরিনের মাথা থেকে পা পযর্ন্ত দেখে ভ্রু কুচকে ফেলল। অরিন পেছন ফিরে ওর চোখে চোখ পড়ে যাওয়ায় লাজুক হেসে বলল,

> সুন্দর লাগছে না? আমি সব পারি।

আরাফাত হাসলো না বরং বিরক্ত হলো। কুচকানো ভ্রু আরও কুচকে নিয়ে বলল

> সেই লাগছে। রাস্তা ঝাড়ু দিয়ে বেড়ায় ওদের মতো স্টাইল। দারুণ হয়েছে। এভাবে নিচে যাওয়ার পরিকল্পনা থাকলে বাদ দাও। ভাবিরা অজ্ঞান হয়ে যাবে।

অরিন কিছুই বুঝতে পারলো না। ঠিকই তো আছে। পাজি লোকটা ওকে আবারও অপমান করছে। অরিন রাগে ফুলছে। আরাফাত ওকে ইগনোর করে বেরিয়ে গেলো। তার কিছুক্ষণের মধ্যেই চয়নিকা এসে হাজির। অরিন শাড়িটা সম্পূর্ণ উল্টো করে পড়েছে। চয়নিকা ওকে ঠিকঠাক করে গুছিয়ে দিলো।

________________
চেয়ারে হেলান দিয়ে চোখ বন্ধ করে বসে আছে আবির। কাটা হাতে ইনফেকশন হয়েছে। ডাক্তার ড্রেসিং করে দিয়েছে। এক হাত দিয়ে কাজকর্ম করতে বেশ অসুবিধা হচ্ছে। সামনে ওর সেক্রেটারি জাবেদ বসে আছে। জাবেদ অনেক্ষণ ধরে কিছু একটা বলার জন্য চেষ্টা করছে কিন্তু ভয়ে বলতে পারছে না। আবির চোখ বন্ধ রেখেই বলল,

> জাবেদ দ্রুত বলে ফেলো। সময় নষ্ট করা ঠিক হচ্ছে না। বিকালে মিটিং আছে। ফাইল পত্র কিছুই তো চেক করা হলো না।

আবেদ নড়েচড়ে বসে ঢোক গিলে বলল,

> ম‍্যাডাম চলে গেলেন আপনি কিছু বললেন না কেনো স‍্যার? এতো পাগলামী করে বিয়েটা করলেন। অথচ কাউকে জানাতে পযর্ন্ত দিলেন না। বিষয়টা হজম হচ্ছে না।

জাবেদের কথায় আবির বিরক্ত হলো। ও ঝটপট সোজা হয়ে বসে ভ্রু কুচকে বলল,

> ঘটনাটা তোমার ভুলে যাওয়ায় ভালো জাবেদ। আমিও ভুলে গিয়েছি। ওকে আটকানোর কোনো ইচ্ছে ছিল না আমার। যা আমার ছিল সেটা আমারই থাকবে। একটু খোলা হওয়াই উড়ে আসুক। তাছাড়া ওকে বিরক্ত করা আমার উদ্দেশ্য ছিল না। ওকে সাহায্য করতে চেয়েছি আর করেছি। যাইহোক আজকের পরে ওকে নিয়ে আর কিছু বলবে না। যাও আমি কিছুক্ষণ একা থাকতে চাই।

জাবেদ আবিরের কথার অর্থ বুঝতে পারলো না। মনের মধ্যে হাজারো প্রশ্ন উঁকিঝুঁকি দিচ্ছে সেগুলোকে শান্ত করে বেরিয়ে গেলো। চাকরি নিয়ে টানাটানি পড়ে যাবে এই অতিরিক্ত কৌতূহলের জন্য। আবির পূর্বের ন‍্যায় আবারও চোখ বন্ধ করে চেয়ারে হেলান দিলো। রোহানের সঙ্গে কিছুদিন যাবত কথাবার্তা হয়না। হৈমন্তী রবিনের বাড়িতে যাবার দিন সকালবেলায় আবিরের সঙ্গে রোহানের তর্কাতর্কি হয়েছিল। আবির ইচ্ছে করলে ওর সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারতো কিন্তু করেনি। ছেলেটা হঠাৎ এমন পরিবর্তন হয়ে গেলো কিভাবে বুঝতেই পারছে না। প্রতিটা মানুষের মধ্যে হিংসা আছে। কারো বেশি আবার কারো কম। লোকের সফলতা দেখে জ্বলে না এমন মানুষ খুজে পাওয়া মুশকিল। রোহানের অবস্থাও তাই। হৈমন্তীর জন্য হঠাৎ ওর মনে অনুভূতির সৃষ্টি হয়েছে সেটা আবিরের জন্য। আবির কথাগুলো গভীরভাবে ভাবছে। হঠাৎ কারো পায়ের শব্দে ওর ধ‍্যান ভাঙলো। কিন্তু ও চোখ খুললো না। অফিসের কর্মচারী হলে ওর থেকে অনুমতি নিতো। কে হতে পারে ভাবতে ভাবতেই পরিচিত কন্ঠস্বর শুনে তাঁকিয়ে দেখলো রোহান ওর সামনে বসে আছে। ছেলেটার ঠোঁটে তৃপ্তির হাসি। আবির মুখ স্বাভাবিক রেখে প্রশ্ন করলো,

> হঠাৎ আমার অফিসে?

রোহান হাসিটা আরও চাওড়া করে বলল,

> আসতে বুঝি মানা ছিল? বন্ধুর অফিসে আসবো এতে অনুমতির কি আছে। শোন একটা ঠাণ্ডা কফি খাওয়া। বাইরে প্রচণ্ড গরম পড়ছে।

আবির ফোন করে কফির অর্ডার দিয়ে বলল,

> অরিনের বিয়ের দিন কোথায় ছিলি? আমার সঙ্গে ঝামেলা হয়েছে তাই বলে ওই বাড়ির সঙ্গেও নাকি?

> দূর ও বাড়ির সঙ্গে কেনো হবে? ওটা বোনের শশুর বাড়ি সেই সঙ্গে আমারও না হওয়া হবু শশুর বাড়ি ঝামেলার প্রশ্নই আসেনা।

আবির ভ্রু কুচকে বলল,

> হবু শশুর বাড়ি মানে?

> হৈমন্তীর সঙ্গে আমার বিয়ের কথাবার্তা হচ্ছে। দুলাভাই আপা রাজি আছে। ওর পড়াশোনা শেষ হলে আমাদের বিয়ে। আপাতত মন দিয়ে কাজকর্ম করছি। টেনশন ছিল ওকে নিয়ে এখন তো আর নেই।

আবিরের ভীষণ বিরক্তি লাগছে রোহানের কথাবার্তা শুনে। বন্ধু না হলে ঘুষি দিয়ে দাঁত ভেঙে দিতো। আবির রাগ নিয়ন্ত্রণ করে আস্তে করে বলল,

> হৈমি রাজি আছে? ওর অনুমতি নিয়েই বিয়েটা হচ্ছে নাকি?

রোহান থতমত খেয়ে বলল‍,

> ওর আবার অনুমতি কিসের? আগের বিয়ের সময় দুলাভাই যাকে বলেছে তাকেই বিয়ে করছে। মেয়েদের কথাবার্তার মূল্য আছে নাকি। বড় ভাই ভাবি আছে ওদের কথার বাইরে কথা বলার সাহস ওর নেই।

আবির দাঁতে দাঁত চেপে বলল,

> কথাগুলো হৈমির সামনে বলিস তোকে ধুয়ে দিতে সময় নিবে না। দুর্বল যদি সবল হয়ে যায় তাহলে কিন্তু পদে পদে বিপদ।

> সে যায়হোক বিয়েটা হবে দেখে নিস। তোকে বলেছিলাম তো। আমি জিদ করি না যদি করি তবে সেটা আমার করেই ছাড়ি।

> বুঝতে পেরেছি। কিন্তু রোহান এটা তো ঠিক হচ্ছে না। তুই অনিমাকে ভালোবাসিস। মেয়েটার সঙ্গে যা করেছিস ক্ষমার অযোগ্য। তবুও সে তোকে একটা সুযোগ দিচ্ছে। অনিমা আমাদের বন্ধু। তুই বন্ধু হয়ে বন্ধুর সঙ্গে এমন করতে পারিস না। মেয়েটা এই অবস্থায় কোথায় যাবে বলতো?বাড়িতে জানাজানি হলে মেয়েটা সুইসাইড করবে।

> শোন আবির তুই নিজেও কতো মেয়ের পেছনে ঘোরাঘুরি করেছিস সেকথা সবাই জানে। ক্লাস টেনে থাকতে সেলীর সঙ্গে তিনমাস চুটিয়ে প্রেম করেছিস। সেসব বলেছি আমি?

> তখন ছোট ছিলাম, কম বুঝতাম। ওর পরে আমি কখনও এসব করেছি বল? আনিমা মা হতে চলেছে। বাচ্চাটার কি হবে একটু ভাব?

রোহান তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে বলল,

> বতর্মান যুগে এসব অহরহ হচ্ছে। অনিমা এ যুগের মেয়ে ওকে নিয়ে তোর চিন্তা করা লাগবে না।ওর চিন্তা ছাড় নয়তো তুই নিজে গিয়ে বাচ্চার দায়িত্ব নিয়ে নে। বাধা দিচ্ছে কে?

আবিরের মেজাজ এবার চরম খারাপ হলো। রাগ নিয়ন্ত্রণ করতে পারলো না। টেবিল চাপড়ে বলল,

> কুকাম করার সময় মনে ছিল না এখন বাচ্চার দায়িত্ব আমাকে নিতে হবে? তোর পাপের ফল তোকেই নিতে হবে। আমি কিন্তু সবাইকে বলে দিবো।

রোহানের মধ্যে ভয় বা কোনো ভাবান্তর হলো না। আয়েশি ভঙ্গিতে কফির কাপে মুখ ডুবিয়ে বলল,

> কে বিশ্বাস করবে তোকে? তাছাড়া অনিমাকে আমি এক লক্ষ টাকা দিয়ে বলেছি আমার পেছনে না ঘুরতে। শোন বন্ধু আছিস বন্ধুর মতোই থাকবি। তাছাড়া যার জন্য এতোকিছু তাকেই যখন পেয়ে যাচ্ছি তাই তোর সঙ্গে সম্পর্ক নষ্ট করতে চাইছি না। দোস্ত পরের ঝামেলা নিয়ে আমাদের বন্ধুত্ব নষ্ট করিস না।

আবিরের শরীর জ্বলছে। এই মানুষটা এতো বেহায়া কেনো কে জানে। হৈমন্তীর সঙ্গে বিয়েটা শুধু এর জন‍্যই করেছিল। সেদিন রোহানের কথাশুনে মনে হয়েছিল হৈমন্তী ভাইদের কথায় রাজি হয়ে রোহানকে বিয়ে করে নিবে সেই ভয়ে জোরজবরদস্তি করে বিয়ে করলো। মেয়েটা নিজ থেকে বিয়ে না আটকাতে পারলে ও নিজে যাবে বিয়ে আটকাতে। বর জীবিত থাকতে বউয়ের বিয়ে দেওয়ার সাধ‍্য কোন ব‍্যাটার আছে আবির সবগুলোকে দেখে নিবে। রোহান আরও এক ঘন্টা বকবক করে বিদায় নিলো। আবির সারা সময় চুপচাপ বসে ওকে সহ‍্য করলো। আপাতত ঝগড়া ঝামেলা করার মানে হয়না। সুযোগ আসবে শুধু অপেক্ষা মাত্র।
________________________

উত্তর আমেরিকার জনবহুল নগরী মেক্সিকো সিটিতে অবস্থান করছে হৈমন্তী। দুদিন বাসা চেঞ্জ করা নিয়ে খুব ব‍্যস্ত সময় পার করেছে। বাসা খোঁজা একটা ঝামেলার কাজ। তাছাড়া শুধু বাসা হলেই তো হবে না। বাসার পরিবেশটা কেমন সেদিকেও নজর রাখতে হয়। একটা প্রবাসী বাঙালির বাসা ভাড়া নিয়েছে হৈমন্তী। ভদ্রমহিলা বিধবা। ছেলে মেয়ে আছে কিন্তু কেউ ভদ্রমহিলার সঙ্গে থাকে না। ছেলেটা জব করে অন‍্য শহরে থাকে। আর মেয়েটার বিয়ে হয়েছে। জামাইয়ের সঙ্গে থাকে। বাসার ভাড়াটাও খুব বেশি না। হৈমন্তীর একাউন্টে বেশ কিছু টাকা আছে। একটা ছোটখাটো কোম্পানিতে দুবছর কাজ করেছিল। আরাফাত ওর টাকা খরচ করতে দেয়নি ফলে টাকাগুলো জমানো আছে। এটাই এর একমাত্র ভরসা। নতুন চাকরি খুঁজতে হবে। আপাতত ছোটখাট একটা হলেই হবে। ভদ্রমহিলার বেশ মিশুক টাইপের। ওকে চাকরি খুজতে সাহায্য করবে বলেছে। ইউনিভার্সিটির আশেপাশে থাকতে চেয়েছিল কিন্তু শেষপর্যন্ত হয়নি। তাছাড়া চেনাজানা কারো সঙ্গে যোগাযোগ রাখার কোনো ইচ্ছে নেই। ক্লাস নিয়মিত করবে। হৈমন্তী কথাগুলো ভাবছিল আর বিছানা ঠিক করছিল হঠাৎ দরজায় শব্দ হলো। হৈমন্তী দ্রুত দরজা খুলে বাইরে উঁকি দিয়ে দেখলো মরিয়াম আন্টি দাঁড়িয়ে আছে। হৈমন্তী মিষ্টি হেসে জিঞ্জাসা করল,

> আন্টি কিছু বলবেন?
> আমার সঙ্গে হাসপাতালে যাবে একটু? আমার এক আত্মীয় হাসপাতালে ভর্তি আছে। যেতে হবে।

হৈমন্তী কিছু ভেবে নিয়ে বলল,

> নিশ্চয়ই। আপনি অপেক্ষা করুন আমি আসছি।

হৈমন্তী দ্রুত ড্রেস চেঞ্জ করে নিলো। লঙ ড্রেসের সঙ্গে হিজাব জড়িয়ে মুখ বেধে ভদ্রমহিলার সঙ্গে বেরিয়ে পড়লো।

(চলবে)

#শেষ_থেকে_শুরু
কলমে: লাবণ্য ইয়াসমিন
পর্ব:১৫

হাসপাতালে এসে করুণ এক দৃশ্য হৈমন্তীর কোমল হৃদয় দুমড়ে মুচড়ে ফেলল। নিয়তি এতো নিঠুর জানা ছিল না। কয়েকদিনের সদ‍্য জন্ম নেওয়া বাচ্চাটাকে রেখে বাবা মা দুজনকেই মৃত্যুর দেশে পাড়ি দিয়েছে। বাচ্চাটার চিৎকারে আকাশ বাতাস ভারি হয়ে যাচ্ছে। মারিয়াম আন্টির দূর সম্পর্কের কোন এক বোনের মেয়ে আর জামাই সড়ক দুর্ঘটনাতে মারা গেছে। মেয়েটার চারকূলে মারিয়াম বানু ছাড়া কেউ ছিল না। ছোটবেলাতে মা মারা গেছে,বাবা থেকেও নেই। মারিয়াম বানু মেয়েটাকে নিজের কাছে রেখে লালন পালন করেছেন ।পরে মেয়েটা থাইল্যান্ডের এক ছেলেকে ভালোবেসে বিয়ে করে। ছেলেটার পরিবার সম্পর্কে উনারা কিছুই জানেন না। মারিয়াম বানু মাতৃস্নেহে মেয়েটিকে পালন করেছেন তার এমন করুন মৃত্যুতে উনি একদম ভেঙে পড়লেন। কান্নাকাটি করছেন। হৈমন্তী কি বলে সান্ত্বনা দিবে বুঝতে পারছে না। পুলিশ কেস হয়েছে যেহেতু সড়ক দুর্ঘটনাতে মারা গেছে তাই। হাসপাতালে দুদিন ধরে লাশ পড়ে আছে মারিয়াম বানু জানতেন না। আজকে উনাকে একজন ফোন করে বললেন হাসপাতালে আসতে হবে একজন রোগী আছে। ময়নাতদন্তের রিপোর্ট পযর্ন্ত এসে গেছে। কয়েকজনের সহযোগিতাই লাশ দাফনের ব‍্যবস্থা করা হলো। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে বাচ্চাটাকে নিয়ে।বাচ্চার সব দায়িত্ব এখন মারিয়াম বানুর উপরে। কিন্তু উনি তো মুরব্বি মানুষ। আজ আছেন তো কাল নেই।তাছাড়া বাচ্চাটাকে লালন পালন করতে হলে উপযুক্ত মানুষের প্রয়োজন। হৈমন্তীর ভীষণ মন খারাপ হলো বাচ্চা মেয়েটাকে দেখে। এতো কান্নাকাটি করছিল দেখে হৈমি খুব যত্ন নিয়ে নিজের কোলে তুলে নিলো। বাচ্চাটাকে দেখতে বিদেশীদের মতো মনে হলেও চুলগুলো কালো একদম মায়ের মতো। হৈমন্তী বাচ্চাটাকে কোলে নিয়ে আদর করতেই শান্ত হয়ে গেলো। ওর মাতৃহৃদয় আহাজারি করে উঠলো। নিজের বাচ্চার কথাগুলো মনে হলো। চোখ দিয়ে অনবরত অশ্রু গড়িয়ে পড়লো। হৈমন্তীর মনে হলো বাচ্চাটা ওর দরকার। একাকিত্বের সঙ্গী হিসেবে এই বাচ্চাকে ওর চাই। হৈমন্তী সাহস করে মারিয়াম আন্টিকে বলল,

> আন্টি বাচ্চাটাকে আমি লালন পালনের দায়িত্ব নিতে চাই তাহলে কি আপনি দিবেন?কোনো অসুবিধা হবে না। ওকে আগলে রাখবো প্রমিজ।

হৈমন্তীর কথাগুলো শুনে মারিয়াম বানু অনেক ভাবলেন। বাচ্চা নিবো বললেই তো আর যাকে তাকে বাচ্চার দায়িত্ব দেওেয়া যায়না। তাছাড়া এখানকার একটা নিয়ম আছে। হৈমন্তী নিজের স্বামী বা পরিবারের লোকজন সম্পর্কে কিছু বলেনি। ওকে দেখলেও মনে হয়না ও বিবাহিত। মারিয়াম বানু বাঙ্গালী। উনি জানেন এটা নিয়ে পরে ঝামেলা হতে পারে তাই ভেবে চিন্তে বললেন,

> তোমাকে দিতে অসুবিধা ছিল না কিন্তু তুমি তো বিবাহিত নও। অবিবাহিত একটা মেয়েকে আমি এই বাচ্চার দায়িত্ব দিতে পারিনা। ওকে আমি এতিমখানাই দিয়ে দিবো।

হৈমন্তীর হঠাৎ আবিরের মুখটা মনে পড়ে গেলো। ওতো বিবাহিত। আর সেই বজ্জাত লোকটা ওর বর। কথাটা ভেবেই ও চট করে বলে ফেলল,

> আন্টি আমি বিবাহিত। আমার স্বামী আছে। উনি বাংলাদেশের আছেন।

ভদ্রমহিলার ঠোঁটে হাসির রেখা ফুটে উঠলো। উনি চিন্তাই ছিলেন বাচ্চাটাকে নিয়ে। হৈমন্তীর কথায় উনি সন্তুষ্ট হয়ে বললেন,

> তোমার স্বামীর অনুমতি পত্র,সঙ্গে বিয়ের রেজিস্ট্রি পেপার আর তোমাদের দুজনের পক্ষ থেকে একটা পেপার কোর্টে জমা দিলেই হবে।

মারিয়াম আন্টির কথায় থতমত খেয়ে গেলো হৈমন্তী। ভেবেছিল শুধু বিবাহিত জানলেই বাচ্চা দিয়ে দিবে কিন্তু না এখানে তো রীতিমতো যুদ্ধ করতে হবে। তাছাড়া বাচ্চার বাবা মা মারা যাবার পর বাচ্চার দায়িত্ব একটা এতিমখানার উপরে ন‍্যস্ত করা হয়েছিল। ওখান থেকে নিতে হলে প্রপার কাগজপত্র লাগবে। এগুলো ছাড়া বাচ্চা কিছুতেই দিবে না। কি একটা বিপদ। হৈমন্তী তো আগে থেকেই সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছে বাচ্চাটাকে ওর নিতেই হবে। যেকোনো উপায়ে। দরকার হলে বজ্জাত আবিরের সঙ্গে ও কথা বলবে। একটু কথা বলাই যদি বাচ্চাটা ওর হয়ে যায় তাহলে দোষটা কোথায়? হৈমন্তী কথাগুলো ভাবতে ভাবতেই একজন এসে ওর কোল থেকে বাচ্চাটা নিয়ে গেলো। হৈমন্তী হতাশ হয়ে রুমে ফিরে আসলো। মন মেজাজ হঠাৎ খারাপ হচ্ছে। আবিরের সঙ্গে যোগাযোগ করতে হবে। আগামীকালের মধ্যেই ওগুলো ওর চাই। কথাগুলো ভেবে ও আবিরের নাম্বারটা ফোনে তুলে নিলো। ফোন দিয়ে কয়েকবার কাটাকাটি করলো। মনের মধ্যে লজ্জা নাকি জড়তা কাজ করছে বুঝতে পারছে না।

হৈমন্তী এবার মনে মনে সাহস সঞ্জয় করে ফোন দিয়েই ফেলল। দুবারের মাথায় ফোন রিসিভ হলো। হেমন্তী কি দিয়ে শুরু করবে বুঝর পারল না। চুপচাপ থাকলো। ওপাশ থেকে কয়েকবার হ‍্যালো হ‍্যালো করে চুপচাপ হয়ে গেলো। দু প্রান্তে দুজন মানুষের নিশ্বাসের শব্দ ছাড়া কিছুই শোনা যাচ্ছে না। আবির এবার গলা পরিস্কার করে বলল,

> এই অধমকে তাহলে এতদিনে মনে পড়েছে? কি সৌভাগ্য আমার। বরকে হঠাৎ মনে পড়লো কারণ?

হৈমন্তী চোখমুখ খিঁচিয়ে বন্ধ করে বলল,

> আমার বাচ্চা চাই। চাই মানে এখুনি চাই। আপনি ব‍্যবস্থা করে দিবেন যেভাবেই হোক।

হৈমন্তীর এমন কথাবার্তা শুনে ও টাস্কি খেয়ে গেলো। মেয়ের মাথা কি গেছে। পাগল হয়ে গেছে।। আবির ঢোক গিলে ফিসফিস করে বলল,

> মাথা ঠিক আছে হৈমি?বাচ্চা নিতে চাইছো আমার অসুবিধা নেই কিন্তু তুমি তো দূরে আছো। আমার এখানে তোমাকেই আসতে হবে আমার ভির্সার মেয়াদ শেষ। সময় লাগবে যেতে।

আবিরের কথায় ভ্র কুচকে ফেলল হৈমন্তী। লোকটা ক বলতেই কোলকাতা চিনে গেলো? ওর নিজের উপরেই বিরক্ত লাগছে কি দরকার ছিল বিস্তারিত না বলে অর্ধেক কথা বলার। হৈমন্তী ধমক দিয়ে বলল,

> আপনি সত্যিই পাজি। পুরোপুরি না শুনেই মন্তব্য করছেনা আগে শুনবেন তো।

হৈমন্তীর ধমক শুনে আবির নিরাশ হলো। এতক্ষণ ও অফিসে ছিল। চেয়ারে বসে টেবিলের উপরে পা তুলে আয়েশি ভঙ্গিতে কফির কাপে মুখ ডুবিয়ে হৈমন্তীর কথা ভাবছিল। সেই সময় হৈমন্তীর ফোন আসলো। আমেরিকার নাম্বার দেখে ভ্রু কুচকে ফেলেছিল। পরে হৈমন্তীর নিশ্বাসের শব্দ শুনে শিউর হলো এটা হৈমন্তী। আবির একগাদা বিস্ময় নিয়ে ফোন রিসিভ করেছিল। হৈমন্তীর পক্ষ থেকে খুব দরকার ছাড়া ফোন আসবে না ওর জানা ছিল। তাছাড়া মেয়েটা যেখানে নিজের পরিবারের সঙ্গেই যোগাযোগ রাখতে চাইছে না সেখানে ওর সঙ্গে যোগাযোগ রাখার তো প্রশ্নই আসে না। হৈমন্তীর কথাই ও ধ‍্যান ভাঙলো,

> মিস্টার আবির এহসান খুব দরকার বিধায় ফোন করেছি। আমি একটা বাচ্চা দত্তক নিতে চলেছি। আপনাকে ছাড়া সম্ভব হচ্ছে না। আশাকরি আপনি আমাকে সাহায্য করবেন?

আবিরের মুখটা এবার থমথমে হয়ে গেলো বিড়বিড় করে বলল,” কপালে এই ছিল। কোথায় নিজেদের বাচ্চা হবে সেই পরিকল্পনা করবো তানা। আবিরের কথা হৈমন্তীর কান পযর্ন্ত সবটা পৌচ্ছালো না। ও আবারও আগের কথাগুলো রিপিট করলো। আবির কিছু ভেবে দাঁত বের করে হেসে বলল,

> শর্ত মানলে নিশ্চয়ই সাহায্য করবো। তোমার বাচ্চা মানে তো আমারও বাচ্চা। বলো রাজি?

হৈমন্তী বুঝতে পারলো না শর্তে রাজি হবে কিনা। লোকটা যদি সুযোগ নেওয়ার চেষ্টা করে তখন? কিন্তু না মানলে তো ঝামেলা হয়ে যাবে তাই বিড়বিড় করে বলল,

> আচ্ছা রাজি বলুন কি আপনার মহান শর্ত?

আবির পা নাচিয়ে বলল,

> বাচ্চার বাবার নামটা কিন্তু আমার হওয়া চাই সেই সঙ্গে বাচ্চাকে আমার ছবি দিনে পাঁচবার নিয়ম করে দেখিয়ে বলতে হবে,”বাবু এইটা তোমার বাবা”। আর এক ছবি বারবার দেখালে কিন্তু চলবে না। প্রতিদিনকার ছবি প্রতিদিন। এক ছবি বারবার দেখালে বেচারী বাবাকে চিনতে পারবে না। ওসব হবে না।

আবিরের কথা শুনে হৈমন্তীর চোখ কোটর থেকে বেরিয়ে আসার উপক্রম হলো। এই লোকের মাথায় সত্যি সমস্যা আছে। ওর প্রচণ্ড রাগ হচ্ছে। এইটুকু একটা বাচ্চা তাকে ওর ছবি দেখাতে হবে।ও কি বুঝতে পারবে? ছেলেটার মাথায় কি চলছে আল্লাহ্ ভালো জানে।হৈমন্তি কৌতূহল দমিয়ে রাখতে না পেরে জিঞ্জাসা করলো,

> এতে কি হবে শুনি? এইটুকু একটা বাচ্চা শুধু ফ‍্যাল ফ‍্যাল করে চেয়ে থাকে

> অনেক কিছুই হবে। ছোট থেকেই বাবাকে চিনে যাবে। তোমাকে বিশ্বাস নেই বাচ্চাকে ছোট থেকেই শিখিয়ে দিবে বাবু তুমি অনাথ। তোমার বাবা মারা গেছে। শোনো জীবিত অবস্থায় মৃতের মতো থাকতে পারবো না। শর্ত মানতে পারলে বলো এখুনি ব‍্যবস্থা করি।

হৈমন্তী উপাই না পেয়ে রাজি হলো। হৈমন্তী আবিরের সঙ্গে মারিয়াম আন্টির যোগাযোগ করিয়ে দিলো। ভদ্রমহিলা ওকে সব বুঝিয়ে দিলো। আবির তো মহা খুশী এমন একটা দিন আসবে কখনও ভাবেনি। বিষয়টা মনের মধ্যে চেপে রাখতে না পেরে সেক্রেটারি জাবেদকে ডেকে নিলো। জাবেদ ফাইল নিয়ে ঝামেলায় ছিল। হঠাৎ বসের ডাক শুনে দৌড়ে এসেছে। আবির দাঁত বের করে অমায়িক হাসি দিয়ে বলল,

> জাবেদ অফিসে মিষ্টি বিলানোর ব‍্যবস্থা করো। বাবা হলাম বুঝলে?

জাবেদ সারাদিনের কাজকর্ম নিয়ে এমনিতেই টেনশনে ছিল তারপর আবার বসের এমন উদ্ভুট কথাবার্তা শুনে হতভম্ব হয়ে গেলো। স‍্যার বিবাহিত এতে সন্দেহ নেই তাই বলে বাবা কেমনে কি? দিনদিন বসের ব‍্যবহার জানি কেমন হয়ে যাচ্ছে। পাগল টাগল হয়ে গেলে মুশকিল। এমনিতেই বড় সাহেব ওকে ভরসা করে ছেলের সেক্রেটারি পদে নিয়োগ দিয়েছিল। ওকে এভাবে হাঁ করে তাকিয়ে থাকতে দেখে আবির গম্ভীর কন্ঠে বলল,

> আমাকে বোঝার সাধ‍্য তোমার নেই জাবেদ। তোমার ছোট মাথায় এতোসব ধরবে না। বাচ্চাটা সত্যিই আমার। কৌতূহল ছেড়ে সবাইকে মিষ্টি খাওয়ানোর ব‍্যবস্থা করো। তবে বাচ্চার বিষয়টা কিন্তু গোপনী থাকা চাই। বুঝলে?

জাবেদ মাথা নাড়িয়ে চলে গেলো। এতো বোঝাবুঝির কিছু নেই। বসের মাথার তার ছিড়ে গেছে এটা অজানা নেই ওর।
_____________________________
রেললাইনের পাশে বসে আছে ফরহাদ। মুখে খোঁচা খোঁচা দাড়ি পরনে মলিন পোশাক। দুদিন আগে কোম্পানি থেকে ওকে বের করে দেওয়া হয়েছে। মায়ের সামান্য খাবারের দোকানের উপরে নির্ভর করে চলতে হচ্ছে। অভাব ওকে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরেছে। হাতে একদম টাকা পয়সা নেই। এর মধ্যে ভয়ানক সিগারেটের নেশা ওকে পাগল করে দিচ্ছে। কাছে হাজার খানেক টাকা ছিল জুয়াড়ীদের খপ্পরে পড়ে সব শেষ। কি করবে কি হবে এই চিন্তাই মাথা পাগল হয়ে যাচ্ছে। পড়াশুনা বিদ‍্যা বুদ্ধি কিছুই কাজে আসছে না। পাপের শাস্তি হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছে। হৈমন্তীর কথা খুব মনে পড়ছে। মেয়েটা ওকে ঘৃণা করে। ফরহাদ বুঝেছে ওদের বাচ্চা মারা যায়নি তবুও মেয়েটা এভাবে বলে দিলো। মনে মনে হৈমন্তীর উপরে চাপা অভিমান হচ্ছে। কেমন মা সে যে নিজের জীবিত সন্তানের কথা মৃত বলে স্বীকার করে? যদি নিজের অবস্থান পাকাপোক্ত হতো ওই মেয়েকে ও ঠাটিয়ে কয়েকটা থাপ্পড় দিয়ে ফিরিয়ে আনতো। মেয়ে মানুষের এতো জিদ কিসের? মেয়েরা হবে কোমল। তরল পদার্থের মতো। যেই পাত্রে রাখা হবে সেই পাত্রের আকার ধারণ করবে। কথাটা ভেবে ফরহাদ ভ্রু কুচকে ফেলল। না তরল পদার্থের মতো হতে হবে না। একটু নমনীয় হলেই হবে। লতার সঙ্গে ওর তেমন কথাবার্তা হয়না। লতার জন্য ঘরে ফিরতে ওর বিরক্তি লাগে। লতার কথা মনে হতেই যন্ত্রণায় হৃদয় ভেঙে যায়।বেহায়া বেলাজ মেয়ে একটা।। সব সময় আয়নায় ধরে লিপস্টিক নিয়ে বসে থাকে। বাড়িতে এই অভাব অভিযোগ চলছে তবুও তার মেকাপের কোনো ঘাটতি হচ্ছে না। ওকে কিছু বলা মানে ঘরে অশান্তি সৃষ্টি করা। ঘরে একটা বাচ্চা আছে সেদিকে লতার কোনো নজর নেই। বাচ্চাটা নিজের মতোই বড় হচ্ছে। কোথা থেকে সে পাহাড় সমান গালি শিখেছে। এইটুকু বাচ্চার মুখের গালি শুনলে চোখ কোটরে থাকতে চাইনা। ফরহাদ ঘৃণাভরে সেগুলো লক্ষ্য করে আর ভাবে মায়ের মতোই হয়েছে। কিন্তু ওতো এমনটা চাইনি। লতাকে নিয়ে সুখের স্বপ্ন দেখেছিল। মাঝখান থেকে এসব এলোমেলো হয়ে গেলো। কথায় বলে পাপ বাপকেও ছাড়ে না। ফরহাদ মুখটা কঠিন করে ভাবলো আর এভাবে বসে থাকা যাবে না। একটা উপাই খুজতে হবে। ধুকে ধুকে মরার চাইতে একবারে মরা ভালো। যা কিছু হারিয়ে ফেলেছে সব ফেরত পাবে না সত্যিই কিন্তু কিছুতো পাবে। ওর চেনাজানা এক মাদক ব‍্যবসায়ী আছে। আজ থেকে ওর সঙ্গেই থাকবে। দ্রুত টাকা কামানোর এটাইতো সহজ পথ। ভাগ‍্যকে নিয়ে আরেকবার জুয়া খেলবে। হয় হারবে নয়তো জিতবে।।।
******
মুখ গোমড়া করে বসে সেমাই খাচ্ছে অরিন। এক মিনিট পর পর সেমাই মুখে নিচ্ছে। ফরহাদের সঙ্গে ঝামেলা হয়েছে। লোকটা ওকে আরেক দফায় অপমান করেছে যা ও মেনে নিতে পারছে না। মাথামোটা কথাটা ওর বড্ড বেমানান লেগেছে। তাছাড়া ও যথেষ্ট এডাল্ট। বিদেশে পড়াশোনা করছে। সম্মান ওর নেহায়েত কম না। লোকজন ওর দিকে হা করে তাকিয়ে থাকে যেটা দেখে ওর অহংকার হয়। কিন্তু ফরহাদ ওকে এক পয়সার দাম দিচ্ছে না। বররা তো সারাক্ষণ বউয়ের কথায় চলাফেরা করে। কিন্তু ওর কপালে এ আবার কেমন বর জুটেছে? ফারজানা হক মেয়ের মুখের দিকে তাকিয়ে আছে। উনি কৌতূহলী হয়ে জিঞ্জাসা করলেন,

> ফরহাদ কোথায়? ওর সঙ্গে তুমি ঝামেলা করেছো?
অরিন ঠোঁট উল্টে বলল,

> আম্মু তোমার জামাই আমাকে অপমান করেছে। মাথামোটা বলেছে। কথায় কথায় হারপিক নিয়ে খোটা দিচ্ছে। এমন হবে জানলে কখনও হারপিক খেতাম না। তুমি দেখে নিও আমার নাতি নাতনিদের সামনেও এসব বলবে। আমি জীবনে কখনও হারপিক ধরবো না। সুইসাইডের কথা ভাববো না।

ফারজানা হকের মুখে হাসি ফুঁটলো। মেয়েটা সম্পর্কটা নিয়ে ভাবছে এতেই অনেক।ভুলকে আকড়ে ধরে বাঁচার কোনো মানেই হয়না।

(চলবে)

ভুলত্রুটি মার্জনা করবে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here