শেষ ঠিকানা পর্ব ৪

0
92

#শেষ_ঠিকানা
#পর্ব_৪
#মেহরিন_রিম
হিমি চোখ বড়বড় করে তাকিয়ে রইলো সাদা পাঞ্জাবি পরিহিত অর্নব এর দিকে। আজ প্রায় চার বছর পর অর্নবকে দেখছে সে, শেষ তার সঙ্গে দেখা হয়েছিলো হিমির এসএসসি পরীক্ষার রেজাল্ট এর দিন। তারপর থেকে আর অর্নব কে দেখতে পায়নি হিমি, তার ব্যাপারে খবর নেওয়ার অবশ্য কোনো চেষ্টাও করেনি।
হিমির অবাক চাহনি দেখে নিচের দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসলো অর্নব। ধীরেধীরে এগিয়ে গেলো হিমির দিকে,হিমি এখনো একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে অর্নবের দিকে। অর্নব হিমির পাশে এসে বসলো। হিমির দিকে তাকিয়ে গলা খাঁকড়ি দিয়ে বললো,
_যাক,তাহলে আমার নামটা মনে রেখেছ অন্তত।

হিমির ধ্যান ভাঙলো এবার। চোখ সরিয়ে নিলো অর্নবের দিক থেকে, এদিক ওদিক তাকিয়ে অপ্রস্তুত ভাঙ্গিতে বললো,
_ভ ভাইয়া আপনি এ এখানে!

অর্নব ঠোঁটে হাসির রেখে টেনে বললো,
_কেন?খুশি হওনি?

_এ এখানে খুশি হওয়ার কথা আসছে কেন? আ আপনি কি কোনো কাজে এসেছেন?

অর্নব একদৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো, হিমির দিকে কিছুটা এগিয়ে গিয়ে বললো,
_তুমিই না বললে,সাহস থাকলে সামনে আসতে। আমার সাহস সম্পর্কে এতটুকু ধারণা তোমার আছে আশা করি।

হিমির মনে থাকা সন্দেহটুকুও কেটে গেলো এবার। অর্নবের দিক থেকে মুখ ঘুরিয়ে সামনের দিকে তাকালো হিমি, নিঃশ্বাস ক্রমশ ভারি হয়ে আসছে তার। সেই অচেনা লোকটি যে অর্নব তা বিশ্বাস করতে এখনো কষ্ট হচ্ছে হিমির।

_আমাকে এখানে আশা করোনি তাইনা?
অর্নবের শান্ত কন্ঠের আওয়াজে পাশে তাকালো হিমি। অর্নব দুহাত মাথার পিছনে দিয়েয়ে পায়ের উপর পা তুলে বসে কথাটা বলেছে। হিমির তাকানো দেখে সেও তাকালো হিমির দিকে। তারপর হুট করে আবারো স্বাভাবিক ভাবে বসলো। হিমির দিকে তাকিয়ে বললো,
_জানি আশা করোনি।

কথাটা বলেই উঠে দাড়ালো অর্নব। হিমি কোনো কথা না বলে শুধু অর্নবের কর্মকাণ্ড দেখছে।
অর্ণব এবার হিমির সামনে হাটতে হাটতে দুহাত নাড়িয়ে বলতে লাগলো,
_আসলে ব্যাপার টা কি জানো? আমাদের লাইফ এ এমন কিছু জিনিস আছে যা আমরা খুব করে পেতে চাই, কিন্তু শত চেষ্টা করেও পেতে পারি না।
হাটা থামালো অর্নব,স্থির দৃষ্টিতে হিমির দিকে তাকিয়ে বললো,
_আবার কিছু জিনিস অপরিকল্পিত ভাবে জীবনে চলে আসে,যা থেকে চাইলেও বের হওয়া সম্ভব নয়।

অর্নবের এমন ভারি কথার কারণ খুজে না পেলেও খুব বেশি অবাক হলোনা হিমি,তার এমন ভারি কথা আগেও অনেক শুনেছে হিমি।
অর্নব আবারো স্বাভাবিক ভাবে বসে পড়লো হিমির পাশে। হিমির দিকে তাকিয়ে শান্ত গলায় বলল,
_তোমার কথামতো কিন্তু নিজের সাহস ও প্রকাশ করে দিলাম আমি। এবার বলো,বিয়েতে রাজি তো?

হিমি অবাক হয়ে তাকালো অর্নবের দিকে তাকিয়ে বললো,
_কিন্তু কেনো? পৃথিবীতে এতো মেয়ে থাকতে আপনি আমাকে কেনো বিয়ে করতে চাইছেন?

অর্নবের মুখ থেকে বিরক্তিসূচক আওয়াজ বেরিয়ে এলো। কপালে ভাজ ফুটে উঠলো তার। চোখ বন্ধ করে দু আঙুল কপালে রেখে কিছুক্ষন চুপ করে রইলো। তারপর আবারো হিমির দিকে তাকিয়ে বললো,
_তোমার এই বেশি প্রশ্ন করার অভ্যাস টা গেলো না তাইনা?

হিমি এবার নিজেকে খানিকটা স্বাভাবিক করার চেষ্টা করলো। সামনের দিকে তাকিয়েই বললো,
_দেখুন ভাইয়া,আমি আপনাকে যথেষ্ট শ্রদ্ধা করি। তাই ঘুরিয়ে পেঁচিয়ে না বলে সোজা ভাবেই একটা কথা বলে দিতে চাই।

অর্নব বুকে দু হাত গুজে বললো,
_হুম,বলো। তোমার কথা শুনতেই তো এলাম,যা খুশি বলতে পারো।

হিমি জোড়ে জোড়ে নিঃশ্বাস নিয়ে চোখ বন্ধ করে বললো,
_আমি অন্য কাউকে ভ ভালোবাসি..

কথাটা বলে চোখ খুলে তাকালো হিমি,অর্নবের দিকে তাকিয়ে দেখতে পেলো সে একইভাবে স্থির দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। বেশ অবাক হলো হিমি, হিমিকে চুপ থাকতে দেখে অর্নব বললো,
_হুম তারপর?

ভ্রু কুচকে গেলো হিমির। অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলো,
_তারপর মানে? বললাম, আমি অন্য কাউকে ভালোবাসি।

নিচের দিকে তাকিয়ে হালকা হাসলো অর্নব। তারপর আবারো আড়চোখে হিমির দিকে তাকিয়ে বললো,
_তোমাকে একটা কথা বলেছিলাম,বোধ হয় মনে নেই তোমার। ব্যাপার না মনে করিয়ে দিচ্ছি।
কথাটা বলেই বেঞ্চ থেকে উঠে হিমির সামনে বসে পড়লো অর্নব। হিমির দিকে তাকিয়ে বললো,
_তোমার ব্যাপারে সব খবর জানি আমি,আর এই সামান্য বিষয় টা জানবো না?

অর্নবের ব্যবহারে যেন এবার অবাকের চূড়ান্ত সীমায় পৌঁছে যাচ্ছে হিমি। জিহ্বা দিয়ে ঠোট ভিজিয়ে বললো,
_যদি জেনেই থাকেন,তাহলে এসব অবান্তর কথা বলছেন কেনো?

অর্নব একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললো,
_তুমি বোধ হয় আমার কথাটা এখনো বুঝে উঠতে পারোনি হিমপরি। আমি বলেছি তুমি অন্য কাউকে ভালোবাসো সেটা আমি জানি, তবে তুমি যে ভবিষ্যৎ এও অন্য কাউকেই ভালোবাসবে সেটাতো আমি বলিনি।

অর্নবের কথার মানে বুঝে উঠতে না পেরে হিমি জিজ্ঞেস করলো,
_আপনি কি বলতে চাইছেন?

অর্নব কিছু না বলে বসা থেকে উঠে দাড়ালো। পাঞ্জাবি তে লেগে থাকা ধুলো হাত দিয়ে ঝাড়তে লাগলো।অর্নব কে চুপ থাকতে দেখে হিমি আবারো বললো,
_আমি কিছু জিজ্ঞেস করছি আপনাকে।

অর্নবের মাঝে কোনো পরিবর্তন দেখা গেলোনা। সে নিজের কাজে মনোযোগ দিলো। প্রায় এক মিনিট পর হিমির সামনে এসে বললো,
_তোমাকে আমি এক সপ্তাহ সময় দিলাম,এর মধ্যে তোমার যত চিন্তা করার করতে পারো। আমি চাই এর মধ্যে তুমি নিজে থেকে বিয়েতে রাজি হয়ে যাও, আর তা নাহলে…

_তা নাহলে?

অর্নব এবার কাধে হাত ঘষে হিমির দিকে সামান্য ঝুকে বললো,
_তুমি আমাকে ঠিক যতটা ভালো মনে করো,আমি ঠিক ততটাই খারাপ হতে পারি।

কথাটা বলেই স্থান ত্যাগ করলো অর্নব। হিমি চোখ বড়বড় করে অর্নবের যাওয়ার পানে তাকিয়ে আছে। তার বলা শেষের কথাটা একপ্রকার হুমকি মনে হলো হিমির কাছে। শুকনো ঢোক গিলে ঘনঘন নিঃশ্বাস নিতে লাগলো। এমন সময়ে হাতে হাওয়াই মিঠাই নিয়ে সেখানে উপস্থিত হলো দিবা। মনের আনন্দে হাওয়াই মিঠাই খেতে খেতে হিমির পাশে বসে বললো,
_কিরে দোস্ত? তোর উড বি আসলো?

দিবার কথা শুনে হিমি রাগে কটমট দৃষ্টিতে তার দিকে তাকালো হিমি। হিমির এমন রাগী চাহনী দেখে দিবা একবার হাতে থাকা হাওয়াই মিঠাই এর দিকে তাকিয়ে সেটা নিচের দিকে নামিয়ে নিলো। তার একদম স্বাভাবিক হয়ে কিছুটা চিন্তিত সুরে বললো,
_কি হলো দোস্ত?সব ঠিক আছে তো?

হিমি রাগি দৃষ্টিতে তাকিয়ে চিবিয়ে চিবিয়ে বলল,
_তোকে আমি এখানে নিয়ে এসেছি হাওয়াই মিঠাই খাওয়ার জন্য তাইনা?

_না, তা নয়। কিন্তু এত টেস্টি জিনিস দেখে আমি লোভ সামলাই কি করে বল তো?

হিমি এবার সোজা হয়ে বসে সামনের দিকে তাকিয়ে বললো,
_তোকে তো আমি পড়ে দেখতেছি। এখন জলদি বাসায় চল, আমার আর এক মুহূর্ত ও এখানে থাকতে ইচ্ছে করছে না।

_হ্যা হ্যা চল।

কথাটা বলেই দিবা হিমিকে হেল্প করলো হুইল চেয়ারে বসতে। তারপর দুজনে গাড়িতে উঠে বাসার দিকে যেতে লাগলো, যেতে যেতে হিমি দিবাকে সবকিছু বলতে লাগলো।
সবটা শুনে দিবা উৎসাহিত কণ্ঠে বললো,
_ওয়ে হয়ে,একদম ফিল্মি ডায়লগ। আমি যে কেন মিস করলাম সিন টা।

_দিবু…
হিমির উচ্চস্বরের ধমক শুনে চুপ হয়ে গেলো দিবা, সারা রাস্তা তাদের মাঝে নিরবতা বজায় রইলো। হিমির চিন্তা যেনো ক্রমশ বেড়েই চলেছে। মনে মনে ভাবলো,
_না,এভাবে চলতে দেওয়া যাবে না। বাড়ি গিয়ে মায়ের সঙ্গেই আগে কথা বলতে হবে।

___
ড্রইং রুমের সোফায় বসে আছে মানিক সাহেব,রিপা এবং হিমি। হুর তার এক বান্ধবীর জন্মদিনের অনুষ্ঠানে গিয়েছে বলে সে এখন অনুপস্থিত।
থমথমে পরিবেশ বিরাজ করছে বাড়ি জুড়ে। হিমি স্থির দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে রিপা এবং মানিক সাহেব এর দিকে আর তারা স্বাভাবিকভাবেই বসে আছে।
বেশ কিছুক্ষন নিরবতা শেষে হিমি বলে উঠলো,
_তাহলে তোমরা এসব প্ল্যান করে করছো আমার সঙ্গে তাইনা?

রিপা হালকা নড়েচড়ে বসে বললেন,
_এখানে প্ল্যান করার কি আছে?

হিমি করুন দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো,
_প্ল্যান না তো কি মা? তোমরা জানতে লোকটা অর্নব ভাইয়া,তাহলে এটা আমার থেকে লুকোলে কেনো?

হিমির বাবা মানিক সাহেব নিরবতা কাটিয়ে বললেন,
_কারণ অর্নব বারণ করেছিলো।

বেশ অবাক হলো হিমি। ভ্রু কুচকে জিজ্ঞেস করলো,
_কিন্তু কখন,আর কেনো?

রিপা একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলতে শুরু করলেন,
_সেদিন তোকে হসপিটালে নিয়ে যাওয়ার কিছুক্ষন পরই সেখানে অর্নব উপস্থিত হয়…..

#চলবে
[ যারা প্রথম থেকে গল্পটি পরছেন,তাদের থেকে জানতে চাই গল্পটি আপনাদের কেমন লাগছে। আসলে আমি খুবই নার্ভাস, অর্নবের ক্যারেক্টার এবং গল্পটি সম্পর্কে আপনাদের মতামত জানাবেন অনুগ্রহ করে। আপনাদের মতামতের উপর ভিত্তি করে রাতে আরেকটি পার্ট দেওয়ার চেষ্টা করবো। ]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here