শেষ ঠিকানা পর্ব ৩

0
154

#শেষ_ঠিকানা
#পর্ব_৩
#মেহরিন_রিম
_অপূর্বর মা নাকি ওর জন্য পাত্রী ঠিক করেছেন। ওদের গ্রামের বাড়িতেই বিয়ের আয়োজন করা হয়েছে বোধ হয়, তার কারণেই ওদের পুরো পরিবার গ্রামে গেছে আরো এক সপ্তাহ আগে।
অপূর্বের খবর পাওয়া গেছে কথাটা শুনেই যেনো ঠোঁটের কোণে হাসি ফুটে উঠলো হিমির। তবে সেই হাসির স্থায়িত্বকাল ছিল খুবই কম। দিবার পরবর্তী কথা যেন বিশ্বাস করতে পারলো না হিমি। জিহ্বা দিয়ে ঠোট ভিজিয়ে বললো,
_ত তুই আমার সঙ্গে মজা করছিস তাইনা? অপু এভাবে আমাকে ছেড়ে অন্য কাউকে বিয়ে করতেই পারেনা,দেখ তোর কোথাও ভুল..

কথা শেষ করতে পারলো না হিমি, তার কথার মাঝেই দিবা বলল,
_আমি মজা করছিনা হিমি। অপূর্বর ফ্রেন্ড ই বললো আমাকে। ওদের বাড়িতে তালা দেখে আশেপাশের মানুষকে জিজ্ঞেস করার পর তারা সকলে একই কথা বলেছে।

চোখের কোণে জমে থাকা জলটুকু এবার গাল বেয়ে গড়িয়ে পরলো। অপর পাশ থেকে দিবা বলে চলেছে,
_হ্যালো হিমি?তুই শুনতে পারছিস?হ্যালো..

কোনো কথাই যেনো কানে যাচ্ছেনা হিমির। চোখের সামনে ভাসতে লাগলো অপূর্বের সঙ্গে কাটানো সকল সুন্দর মুহূর্তগুলো। দিবার কথা বিশ্বাস করতে চাইলো না হিমি,কাপা কাপা হাতে ফোনটা নিয়ে অপূর্বের নম্বরে ডায়েল করতেই অপর পাশ থেকে শোনা গেলো,
_আপনার কাঙ্ক্ষিত নম্বরটি এই মুহূর্তে বন্ধ আছে।

শেষ আশাটুকুও যেনো একটু একটু করে ভেঙে যাচ্ছে হিমির। না চাইতেও বিশ্বাস করতে হচ্ছে দিবার বলা কথাগুলো। অশান্ত মনে আরো কয়েকবার কল দিলো অপূর্বর নম্বর এ, কিন্তু প্রতিবারই একই কথার পুনরাবৃত্তি ঘটতে লাগলো। ফোনটা রেখে চোখ বন্ধ করে নিলো হিমি। ধীরে ধীরে বিছানা থেকে নেমে হুইল চেয়ারে বসলো। জানালার কাছে গিয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে ভাবতে লাগলো,
_কি হচ্ছে আমার সাথে এসব? আমি তো কারোর ক্ষতি করিনি, তাহলে কেন এমনটা হচ্ছে আমার সঙ্গে?

____
নিজের ঘরে মাথা চেপে ধরে বিছানার পাশে বসে আছে অর্ণব। এমন সময় হাতে খাবারের প্লেট নিয়ে দরজার কাছে এলেন আমেনা আহমেদ। দরজায় সামান্য টোকা দিয়ে বললেন,
_আসবো বাবা?

মায়ের গলার আওয়াজ শুনে অর্ণব দরজার দিকে তাকালো। তারপর উঠে দাঁড়িয়ে বললো,
_আরে মা তুমি,দাঁড়িয়ে আছো কেনো? ভিতরে এসো, তুমি আবার কবে থেকে আমার ঘরে ঢোকার জন্য পারমিশন নিতে শুরু করলে?

আমেনা হালকা হেসে ঘরে প্রবেশ করলেন। খাবারের প্লেটটা টেবিলে রেখে অর্নবকে তার পাশে এসে বসতে বললেন। মায়ের কথামতোই অর্নব তার পাশে গিয়ে বসলো। আমেনা এবার পাশে থাকা প্লেটটা হাতে নিয়ে ভাত মাখাতে মাখাতে বললেন,
_কতদিন তোকে নিজের হাতে খাইয়ে দেইনা বলতো! আজ তোকে আমি নিজের হাতে খাইয়ে দেবো।
কথাটা বলেই আমেনা এক লোকমা খাবার অর্নবের মুখের সামনে ধরলো। অর্নবের খাওয়ার ইচ্ছে না থাকলেও মায়ের মুখের উপর না বলতে পারলো না। হালকা হেসে খাবার টা মুখে নিলো অর্নব। আমেনা মনের সুখে ছেলেকে খাইয়ে দিতে লাগলেন।
খাবার শেষ হতেই আমেনা প্লেটটা পাশে রেখে বাম হাত দ্বারা অর্নবের হাত চেপে ধরলেন। করুন সুরে বলতে লাগলেন,
_তুই যেমনটা চেয়েছিস সবটা সেভাবেই হচ্ছে বাবা। তোর সব সিদ্ধান্ত আমি মেনে নিয়েছি। শুধু এবার আমার একটা অনুরোধ রাখ, আমাদের ছেড়ে আর দূড়ে চলে যাসনা বাবা।

অর্নব কিছুক্ষন মায়ের দিকে সরু চোখে তাকিয়ে চোখ নামিয়ে দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো। দুহাত দিয়ে মায়ের হাত ধরে তার দিকে তাকিয়ে নরম সুরে বললো,
_আমি এমনিতেও যেতাম না মা। তুমি এ বিষয়ে ভেবো না তো।
আমেনার চোখে মুখে খুশির আভা ফুটে উঠলো,চোখের কোণে অশ্রুরা এসে ভিড় জমালো। ছেলের হাত দুটো মুখের সামনে এনে চুমু খেলেন তিনি,বাম হাতে নিজের চোখদুটো মুছে প্লেটটা হাতে নিয়ে চলে গেলেন।
অর্নব এখনো একই ভাবে বসে আছে। হঠাৎ তার চোখ মুখের শান্ত আভার পরিবর্তন ঘটলো। নিচের দিকে তাকিয়েই শক্ত গলায় বললো,
_একবার আমি যে ভুল করেছি, দ্বিতীয়বার সেই ভুল আমি করবোনা মা। নেভার এভার..

___
হিমি এখনো একইভাবে জানালার পাশে বসে আছে। নিজের রুমে অন্য কারোর উপস্থিতি টের পেয়ে চোখ টা মুছে পিছনে ঘুরলো সে। রিপাকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে তার কাছে গিয়ে বললো,
_মা,কখন এলে তুমি? আমাকে ডাকলেনা তো।

রিপা একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে খাটের পাশে বসলেন। কিছুক্ষন চুপ থেকে হিমির দিকে তাকিয়ে বললেন,
_আশা করি তুমি তখনকার সব কথাই শুনতে পেরেছো।

হিমি অশান্ত চোখে মায়ের দিকে তাকিয়ে চুপ করে রইলো। হিমিকে চুপ থাকতে দেখে তার মা বললেন,
_আমি তোমাকে কখনো কোনো বিষয়ে জোড় করিনি হিমি,আজও করবো না। আমি শুধু একটা কথাই বলবো, যা সিদ্ধান্ত নেবে ভেবে চিন্তে নেবে।

হিমির এবার মায়ের দিকে তাকিয়ে বললো,
_কিন্তু মা, আমিতো লোকটাকে চিনিও না। আর..

হিমির কথার মাঝেই রিপা বললো,
_তুমি ওকে চেনো হিম, অনেক ভালো করেই চেনো।

হিমি অবাক চোখে রিপার দিকে তাকিয়ে বললো,
_আমি চিনি?
_হুম চেনো।
_তাহলে তোমরা আমাকে লোকটার নাম বলছো না কেনো? তার পরিচয় জানাচ্ছো না কেনো আমাকে?

রিপা বেড থেকে উঠে দাঁড়িয়ে হিমির সামনে এসে বললেন,
_জানতে পারবে,খুব তাড়াতাড়িই জানতে পারবে।

কথাটা বলেই রিপা চলে যেতে নিলে হিমি তার দিকে তাকিয়ে বললো,
_কিন্তু মা, এই অবস্থাতে কোনো ছেলে কেনো আমাকে বিয়ে করতে চাইবে?

রিপা পিছনে ঘুরে হিমির দিকে তাকালেন,তারপর আবারো তার সামনে এসে বললেন,
_উত্তর টা আমার থেকে ভালো সে নিজেই দিতে পারবে।

হিমি এবার বিরক্তির সুরে বললো,
_তাহলে দিচ্ছে না কেনো? সবাই মিলে কেনো তার পরিচয় আমার থেকে লুকাচ্ছো?

রিপা কোনো উত্তর দিলেন না। হিমির দিকে একনজর তাকিয়ে বেড়িয়ে গেলেন ঘর থেকে। হিমি চোখ বন্ধ করে নিলো, তার চোখে মুখে ফুটে উঠেছে বিরক্তির ছাপ। অপূর্বের কথা ভেবেই নিজেকে সামলাতে পারছে না হিমি,তার মাঝে এই নতুন ব্যাক্তির উদ্ভব। এতকিছুর চাপ যেনো সহ্য করতে পারছে না হিমি।
হিমির ধ্যান কাটলো ফোনের মেসেজ এর আওয়াজে। ভ্রু কুচকে ফোন হাতে নিতেই দেখলো একই আননোন নম্বর থেকে মেসেজ এসেছে,
_আমার কথা ভাবছিলে বুঝি?

ভিতরে জমে থাকা রাগটা তড়তড় করে বারতে লাগলো হিমির। রেগে গিয়ে মেসেজ এর রিপ্লাই দিলো,
_আপনি কে হন আমার যে আপনার কথা ভাবতে যাবো?

অপর প্রান্তে থাকা লোকটি মুচকি হেসে লিখলো,
_রেগে আছো বুঝি আমার উপর?

হিমি আবারো রিপ্লাই দিলো,
_স্বাভাবিক নয় কি? আপনি হুট করে এসে আমার জীবনে ঢুকতে চাইছেন, তার উপর নিজের পরিচয় ও গোপন করছেন। আমার রাগ হওয়াটাকি অবান্তর?

অপর প্রান্তে থাকা ব্যাক্তি এবার লিখলো,
_আমাকে দেখতে চাও তুমি?

_হ্যা চাই, সাহস থাকলে সামনাসামনি কথা বলুন আমার সঙ্গে। চোরের মতো নিজেকে লুকিয়ে রাখছেন কেনো?

_ওকে, কাল বিকেল চারটায় এই ঠিকানায় চলে এসো।
মেসেজ টা দিয়েই সঙ্গে সঙ্গে জায়গার নামও বলে দিলো সে।

হিমি এবার খানিকটা অবাক হলো। ও বুঝতেই পারেনি লোকটা সত্যি সত্যি ই দেখা করতে চাইবে। তবুও মনে মনে কিছুটা খুশি হলো হিমি, সামনাসামনি ই লোকটাকে বিয়েতে না করে দেবে ভেবে নিলো সে। এত চিন্তার মাঝেও কিছুটা স্বস্তি পেলো হিমি। বিছানায় গিয়ে শুয়ে পরতেই ঘুম চলে এলো তার চোখে,রাতে ঘুমের ঔষধ খাওয়ায় আর জেগে থাকতে পারলো না হিমি। পারি দিলো ঘুমের রাজ্যে।

___
লোকটার বলা ঠিকানা অনুযায়ী একটা পার্কে এসে বেঞ্চে বসে আছে হিমি। একা একা আসা তার পক্ষে সম্ভব ছিলো না বলে দিবাকে সাথে করে নিয়ে এসেছে, তবে সে সামনে থাকবে না বলে দূড়ে এক বেঞ্চে বসে আছে।
প্রায় দশ মিনিট ধরে এখানে বসে আছে হিমি, তবে যার কথায় এসেছে সে এখনো উপস্থিত হয়নি। খানিকটা বিরক্ত হলো হিমি,মনে মনে ভাবতে লাগলো,
_লোকটা আমাকে মিথ্যে কথা বললো না তো!

তবে হিমির চিন্তা ভুল প্রমাণিত হলো। পিছন থেকে একটি পুরুষালি কণ্ঠে শুনতে পেলো,
_বেশি দেড়ি করে ফেললাম বুঝি?

কণ্ঠটা কেমন পরিচিত মনে হলো হিমির কাছে। তবে পিছন ফিরে তাকাতেই অবাকের চরম সীমায় পৌঁছে গেলো সে। অস্ফুট স্বরে বলে উঠলো,
_অর্ণব!…

#চলবে

[যারা এখনো পর্যন্ত গল্পটি পরেছেন তাদের কাছে একটি প্রশ্ন রইলো। আপনাদের কি মনে হয়,গল্পের আসল নায়ক কে?]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here