#শেষের_পাতায়_তুমি?
#পর্ব-০৩
#writer_Shanta_islam
পানের বাটি ফেলে দিয়েছি তাই নানি আমাকে আর তানিয়াকে দিয়ে ডেকোরেশনের সব কাজ করাচ্ছে।
– বুড়ি দোষ করেছে তোমার মেজো নাতিন আর কাজ করাচ্ছো আমাকে দিয়ে?এটা কেমন বিচার!
তানিয়ার কথা শুনে নানি পান চাবাতে চাবাতে বললো,,
তোর চোপা চলে বেশি। এভাবে চোপা করলে জামাই বাড়ি তিন বেলা ঝাটার বাড়ি খাবি।
নানির কথায় তানিয়া ভেংচি কেটে বললো,,,শুনো বুড়ি আমার জামাই হবে কোটি পতি শ্যামলা হেন্ডসাম চাপ দাড়িওয়ালা কোরিয়ান ছেলে।
নানি তানিয়াকে একটা গুতো দিয়ে অলুকখুনে মেয়ে কোথাকার বলে চলে গেলো।
-দূর ছাতার মাথা,,কোথায় বর পক্ষের ছেলেদের একটু দেখবো তা না আমাকে এখানে বসে কাজ করতে হচ্ছে। সব হয়েছে তোর জন্য। কি দরকার ছিলো বুড়ির পানের বাটি ফেলার।
আমি তানিয়ার হাতে কয়েকটা গাধা ফুল ধরিয়ে দিয়ে বললাম,,,আমি কি সাধে বাটি ফেলেছি নাকি,,ওই ছেলেটাই তো! কথাটা বলতে যেয়েও থেমে গেলাম। তানিয়া যেই মেয়ে ওকে যদি ওই ছেলের কথা বলি তাহলে ও ইশা আপুকে বলবে। আর ইশা আপু জানতে পারলে ডোল পেটানোর প্রয়োজন হবে না। ছাগলের তিন নাম্বার বাচ্চার মতো চিল্লিয়ে চিল্লিয়ে বলবে আমার বোন একটা ছেলের উপর পরেছে আর কেলেংকারী কান্ড বাধাবে। তাই আর কিছু বললাম না। কিন্তু তানিয়া কথাটা হালকা হলেও শুনেছে! তাই বার বার প্রশ্ন করে যাচ্ছে,,কোন ছেলে?কি করেছে?
আমি মাথা নাড়িয়ে না বলার ভংগি করে বললাম,,কই কোন ছেলে? এমন সময় ইশা আপুকে গাড়ি থেকে নামানো হয়। ইশা আপুর আসার কথা শুনে আমি আর তানিয়া দৌড়ে যাই। কিন্তু সমস্যা হলো ইশা আপুকে চিনা যাচ্ছে না। আমি গাড়িতে উকি মারছি আর তানিয়া বার বার ইশাপু ইশাপু করে চেচাচ্ছে,,,হঠাৎ আমাদের পাশে একটা মেয়ে এসে দাঁড়ায়,,মেয়েটা আমাদের দুজনকে ধাক্কা দিয়ে বললো,,কি রে চোখের মাথা খেয়েছিস নাকি! গলাটা চেনা চেনা লাগছে,,,আমি বললাম আসলে আমরা আমাদের ইশাপুকে খুজছি,,,উনি মনে হয় ইশাপুর মেকাপ আর্টিস,,,ইস কি মেকাপ লাগিয়েছে। একদম ভুতের মতো লাগছে।
হঠাৎ মেয়েটা একটা হুংকার দিয়ে বললো,,,সত্যিই রে আমাকে তোরা চিনতে পারছিস না। আমাকে দেখতে এতোই সুন্দর লাগছে?
কথার ভংগিতে বুঝতে পারলাম এটা আর কেও না আমাদের ইশা আপু। আপুকে চিনতে পেরে মুখ থেকে আপনা আপনি বের হয়ে গেলো,,ওরে আপুরে তোকে এভাবে ভুত বানিয়েছে কেনো?
আমার কথায় ইশাপু ভ্রু কুচকে উত্তর দিলো,,,আমার সুন্দর্য দেখে হিংসে হচ্ছে সেটা বলতে পারিস না।
-আমার বয়ে গেছে তোর সৌন্দর্য দেখে হিংসে করতে।
ইশাপু আর হবু দুলাভাইকে এক সাথে হলুদ লাগাবে,,তাই ইশাপু কে নিয়ে আমি আর তানিয়া স্টেজে যাচ্ছি।
স্টেজে উঠবো এমন সময় চোখ থমকে গেলো একি,,হবু দুলাভাইয়ের পাশে দেখি ওই ছেলে দাঁড়িয়ে আছে।
দারা বেটা তুই ওখানেই দারা তোর খবর আছে। মনে মনে কথাগুলো বলতে বলতে আপুকে হবু দুলাভাইয়ের সাথে বসালাম। আশ্চর্য ছেলেটা আমাকে ফেলে দিলো! একবারও সরি পর্যন্ত বললো না। আর এখন স্টেজে এমন ভাবে মুখ ঘুরিয়ে তাকিয়ে আছে জেনো আমাকে চেনেই না। ছেলেটার পাশে দাড়ানো আরেকটা ছেলে তানিয়ার সাথে মজা করছে হয়তো এরা হবু দুলাভাইয়ের ভাই হবে। তাই তো বেয়াইন বেয়াইন বলে ডাকছে।
ভেবেছিলাম ইশাপু নতুন দুলাভাইকে সহজে এক্সেপ্ট করতে পারবে না। সারাক্ষণ সুধু নিলয়ের কথা বলে আমাদের কান জালাপালা করে ফেলতো। ইনফেক্ট বলেছিলো বিয়ের দিন রাতে নাকি পালিয়ে যাবে। এখন দেখি উল্টো কেস,,এই মেয়ে নতুন দুলাভাইয়ের হাত ধরে একেক পোজে সেলফি তুলছে।
আপুর কানের কাছে যেয়ে ফিসফিসিয়ে বললাম,,,কিরে তুই না বিয়ের দিন পালিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা করলি।
ইশাপু আমার হাতে চিমটি কেটে বললো,,আস্তে বল! তোর নতুন দুলাভাই কি হেন্ডসাম দেখেছিস। পালিয়ে যাওয়া কেন্সেল। আমি একেই বিয়ে করবো। বুড়িকে ধন্যবাদ না দিয়ে পারছি না,,বুড়ি এজীবনে একটা ভালো কাজ করেছে। বুড়ির মুখে বিষের বদলে দই মিষ্টি পড়ুক।
ইশা আপুকে দেখে অবাক না হয়ে পারছি না। এতো তারাতারি প্লটি খেলো কীভাবে মেয়েটা।
,
,
-রাফি আমার ভালো লাগছে না। তোরা মজা কর,,কথাটা বলে সাদিক স্টেজ থেকে নেমে গেলো।
ওই যে বদমাশটা স্টেজ থেকে নেমে যাচ্ছে। আমিও বদমাশটার পিছু নিলাম,,,মানুষটাকে কয়েকটা কথা না শুনালে আজ আমার শান্তি হবে না। উনার জন্য অনেক হেনোস্তা হয়েছি। পা টিপে টিপে উনার পিছু নিচ্ছি,,হঠাৎ মানুষটা একটা কোলাহল মুক্ত নিরিবিলি জায়গায় যেয়ে একটা চেয়ারে বসে পরলো। নাহ এখনি সুযোগ কেও নেই। সোজাসোজি যেয়ে কয়েকটা কথা শুনিয়ে আসি। উনার কাছে যেয়ে যেই বললাম শুনেন আপনার জন্য,,,,কথাটা বলতে না বলতেই হঠাৎ কতোগুলো বাচ্চা খেলতে খেলতে আমার সাইড দিয়ে যাচ্ছিলো তখনি ওদের দৌড়ো দৌড়িতে আমি হোচট খাই। আর হোচট খেয়ে ধপাস করে উনার কোলের উপর যেয়ে পড়ি। ভেবেছিলাম মাটিতে পরে কোমড় ভাংবে কিন্তু না কপালের দোষে যেয়ে পড়লাম উনার কোলেই। আমি উনার কাধ শক্ত করে দুহাত দিয়ে ধরে রেখেছি
আর মানুষটা আগুন্তক দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে আছে।
-এই যা কেস খেয়ে গেলাম এখন কী হবে?
আমি তরিগরি করে সরি বলতে বলতে উনার উপর থেকে উঠে দিলাম এক দৌড়।
এক কোনায় দাড়িয়ে হাপাচ্ছি এর মধ্যে নানি এসে বললো,,সুচরিতা যা তো আমার আয়নাটা নিয়ে আয়।
নানি এখন আয়না দিয়ে কি করবে। ওহ হয়তো হলুদের কোনো নিয়ম হবে। আয়নাটা এনে নানির হাতে ধরাতেই নানি একটা ধমক দিয়ে বললো,,,আয়নাটা ভালো করে আমার মুখের সামনে ধর। আমি নানির সামনে আয়না ধরে দাঁড়িয়ে আছি,,,নানি তানিয়ার মেকাপের ব্যাগ থেকে একটা লিপস্টিক বের করে গুন গুন করে গান গাইছে আর লিপস্টিক দিচ্ছে। আহ হা বুড়ির মনে আসলোই রঙ লেগেছে। ইশা আপু আর তানিয়া মন্দ বলে না। এমন সময় তানিয়া এসে নানির হাত থেকে মেকাপের ব্যাগ ছিনিয়ে নিয়ে বললো,,, ইস বুড়ির মনে রঙ কত! এক ঠ্যাং কবরে গেছে কোথায় আল্লাহর নাম নিবে তা না এখানে ডংগের সাজগোজ করছে। এই বয়সে তোমার দিকে কে তাকাবে শুনি যে এতো রঙ মাখছো!
নানি তানিয়াকে একটা গুতো দিতেই তানিয়া ওহ শব্দ করে বললো দূর বাল কথায় কথায় গুতো মারো কেনো?
নানি রাজ্যেজয়ী হাসি দিয়ে বললো,,,ওরে মুখপুরি আমি কী তোদের মতো নাকি,,,এই বয়সেও আমার জন্য ছেলেরা জান দিতে প্রস্তুত। অবশ্য আমার সৌন্দর্য এখনো বিন্দু মাত্র কমেনি সেটা আমি ভালো করেই জানি। নানির কথায় কেমন যেনো সরকোস খুজে পাচ্ছি! নানিকে বললাম,, নানি তুমি ঠিক আছো তো? তোমার কি শরীর খারাপ লাগছে?
তানিয়া আমার কথার উপর কথা কেটে বললো,,আরে রাখ বুড়ির আসল ঠিক আছে। এই বুড়ি তোমার কি হয়েছে বলো তো! মনে এতো রং লেগেছে কেনো?
নানি আমার হাতে একটা কাগজ ধরিয়ে দিয়ে বললো,,,দেখ মুখপুরিরা দেখ এখনো আমার জন্য প্রেম পত্র আসে।
নানির কথাশুনে সাথে সাথে কাজটা খুলে দেখলাম আসলেই তো এটা একটা প্রেমপত্র। কাগজে লিখা ছিলো,,প্রথম দেখায় আমি তোমাকে ভালোবেসে ফেলেছি,,আমার জান প্রান আর আমার মধ্যে নেই,,আই লাভ ইউ ব্লা ব্লা ব্লা প্রেম পত্রে যা যা থাকে আর কি।
তানিয়া আমার হাত থেকে কাগজটা কেরে নিয়ে বললো,,,ওরে বুড়িরে এই প্রেমপত্র তোমার না এটা আমার প্রেমপত্র। নানি আর তানিয়া কাগজটা নিয়ে টানাটানি শুরু করলো। আমি ওদের ঝগড়া থামিয়ে বললাম আগে বল চিঠিটা কে দিয়েছে?
– ওই যে ইশাপুকে স্টেজে বসানোর সময় দুলাভাইয়ের পাশে একটা ছেলে দাঁড়িয়ে ছিলো মনে আছে! ওই ছেলেটা দিয়েছে। চিঠিটা ব্যাগের উপর রেখেছিলাম হয়তো বুড়ি ওখান থেকেই চিঠিটা পেয়ে নিজে সাত আসমানে উরছে।
বুঝতে আর বাকি রইলো না যে এটা ওই বদমাশ ছেলেটার কাজ। মেজাজটাই গেলো বিগড়ে,,,কত বড় সাহস ওই ছেলে কীভাবে তার থেকে কম বয়সি মেয়েকে প্রেমের প্রস্তাব দেয়। তানিয়ার হাত থেকে চিঠিটা নিয়ে ওই ছেলেকে খোজা শুরু করলাম। তানিয়া আমাকে রেগে যেতে দেখে ও আমার পিছু নেয়।
ওই তো ওইখানে দাঁড়িয়ে আছে বদমাশটা,,কাছে যেয়েই ঠাস ঠাস করে লাগিয়ে দিলাম এক চর।
– আপনার সাহস তো কম না আপনি আমার বোনকে প্রেমপত্র পাঠান। উনি কোনো কথা না বলে আমার দিকে প্যালপ্যাল করে তাকিয়ে আছে। হয়তো বুঝে উঠতে পারছে না কি হচ্ছে!
তানিয়া- আপু তুই এটা কি করলি,,উনি আমাকে চিঠিটা দেয়নি,,
চলবে,,,,