শূণ্যতার পূর্ণতা তুমি পর্ব ৮

0
521

#শূণ্যতার_পূর্ণতা_তুমি
#রোকসানা_আক্তার
#পর্ব_০৮

আকাশ বাসা থেকে বের হতে ততক্ষণে শাশুড়ী মা চলে যায়!আকাশ ব্যর্থ কপাল কিঞ্চিৎ চাপড়ে ধরে।মা হঠাৎ চলে যাবে এটা যেন আকাশ মানতে পারে নি।সুবর্ণা এগিয়ে এসে বলে,

“আরেহহহ ভাইয়া এত চিন্তা করো না তো!বোনের কাছে কেঁদে কেঁদে কথাগুলো না বললে তো মায়ের মন শান্তি হবে না।কথাগুলো বলে পেঁটটা একটু খালি করে আসুক!নাহলে বাসায় খেটর খেটর শব্দে তুমিও শান্তিতে থাকতে পারবা না।”

সুবর্ণার কথা শুনেও যদিও হাসি চলে এলো, দুঃচিন্তা ঘিরে ধরলো।হাসি এসেও হাসতে পারলাম না।আকাশ বুঝলো আমার মনটা খুব খারাপ হয়ে গেছে।বলে,
“মন খারাপ করো না।মা একটু এরকম সুপ্রভা।”

———————————————————
রাতে ঘুমতে যাবো তাও নিজেকে আশ্বস্ততা করতে পারলাম না।বসে রইলাম ফোমের মোড়াটায়।আকাশ আমার দিকে তাকিয়ে আছে।কয়ক মিনিটস কেটে যাওয়ার পর,

“ঘুমতে আসবে না?”

আমি চুপ করে বসে রইলাম।আকাশ ছোটশ্বাস ছেড়ে বিছানা থেকে নামে।হাঁটু ভেঙ্গে আমার সামনে এসে বসে।চিবুক আমার স্পর্শ করে,
“লুক সুপ্রভা?আমরা যখন ছোট্ট ছিলাম মায়ের সাথে বাবার প্রায়ই ঝগড়া হত।ঝগড়া হওয়ার তেমন কোনো কারণ থাকতো না।তারপরও ঝগড়া হত।এই যেমন বাবা অফিস থেকে ফিরে ঘামের শার্ট পড়ে শুয়ে থাকলে মা এসে চিল্লাপাল্লা শুরু করে দিতেন।বাবা চুপ করে থাকতো।হাজারটা কথা বললেও জবাব দিতেন না।মার রাগ সহজে কমাতে পারবে না তাই।আর মা সেই টুকু রাগেই খালামণির বাসায় চলে যেত।মা একটু অন্যরকম।টেনশন নিও না।”

আমি আকাশের দিকে তাকালাম।চোখে পানি আসতে চাইলো।চেপে রাখার চেষ্টা করে হাসলাম।আকাশও।খুব মিষ্টি করে হাসলো।আবার বললো,
“সুপ্রভা?”
“হু!”

আকাশ কিছু বলতে যেয়েও বলতে পারলো না।আবার উঠে দাড়ালো।জানি ঘুমানোর জন্য এরকম আনচান করতেছে।আমি বুঝলাম।মনে মনে হাসলাম।আকাশ বাথরুমের দিকে হেঁটে গেলো এবার সোঁজা।হাসিটা আওয়াজ করে বেরিয়ে এলো।তারপর মাথা নাড়িয়ে বিছানায় শুলাম।আকাশ আমাকে বিছানায় দেখে খুশি হয়কছে বৈ কি!বললো,
“বাতি নিভাবো?”

আমি হাসলাম।অন্যদিকে দৃষ্টি দিয়ে বললাম,
“বাতি না নিভালে কেউ তো আমার সব দেখে ফেলবে!”

কথাটা বলে আমিই লজ্জায় পড়ে গেলাম।চোখবুঁজে নিলাম।আকাশ হয়তো মুখ টিপে হাসতেছে।আকাশ বাতি বন্ধ করে আমার পাশে এসে শুয়ে পড়লো।অনেকটা মিনিটস কেঁটপ গেল..দুজনে চুপচাপ।বুকের ভেতরটা টগবগ করতেছে হয়তো দুজনের!হঠাৎ নিস্তব্ধতা ভেঙ্গে আকাশ বলে উঠলো,
“ঘুমিয়ে পড়েছো সুপ্রভা?”

আমি ঘুম ঘুম ভাবে বললাম,
“হু..!আসতেছে!”

আকাশ একদন্ড চুপ করে থেকে বললো,
“আমার যে আজ তোমাকে খুব কাছে পেতে ইচ্ছে করতেছে!খুব কাছে!”

আমি জবাব তুললাম না।
“সুপ্রভা?”
জবাব দিলাম না।ঠিক এমন সময়ই আকাশ তার বাম হাতটা এনে আমার কাপড়টা সরিয়ে পেটের উন্মুক্ত জায়গায় স্পর্শ করলো! সারা শরীর কেঁপে উঠলো।বললাম,
“কি করতেছেন আপনি!”

জবাব নেই আকাশের।তার উষ্ণতা জড়ানো নিশ্বাসের ধ্বনি কণা আমার মুখের উপচে এসে পড়তেছে।বুঝলাম সে আর দূরত্ব রাখতে চায়না আজ থেকে।স্ত্রীর অধিকার টুকু কষাতে চায়!

এভাবেই আকাশের সাথে আমার সম্পর্কটা দিনেক দিন আরো গাঢ় হতে থাকে।এখন আর আমাকে ছাড়া অফিসেই যেতে চায়না।হাজারো বাহানা ছেলেটার।আজকে কি হলো..!আমি তাকে তরহর নাস্তা বানিয়ে দিয়ে গোসলে গেলাম।ভাবলাম এতক্ষণে অফিসে চলে গেছে।এমনিতেই তো ঘুম থেকে দেরী করে উঠেছে।দেরী হলে বস বকে।খিটখিটে মেজাজের বসটা।রাগী মুখ থাকে সবসময়।মোটা ফ্রেমের চশমা পড়ে অফিসে বসে গ্লাস দিয়ে বাইরে কর্মচারীদের কারসাজি দেখে।কেউ দেরী করে অফিসে এলে তাকে ডেকে এনে কয়েক মিনিটস রফাদফা করবো।তারপর বকা শেষে ক্লান্ত হয়ে পিয়নকে ডেকে বলবে দুই কাপ কফি নিয়ে আসো তে।পিয়ন নিয়ে আসে।এককাপ নিজে খেয়ে,অন্যকাপ কর্মচারীকে অফার করে।মানে যাকে এই মাত্র বকাঝকা করলো তাকে!আকাশও এরকম পরিস্থিতিতে সাতবারের মতন পড়েছে।আমি আঁধ ভেঁজা শরীর নিয়ে বাইরে আসতেই আকাশ সোফায় বসা।চমকে উঠে,

“সে-কি!আজকেও বকাঝকা কফি খাবেন?”

আকাশ হাসলো।আকাশের বস যে বকাঝকার পর কফি অফার করে,তাই সেই কফির নাম রেখেছি আমি “বকাঝকা কফি”!আমার রাগ চলে এলো!বললাম,
“দেখুন আমার এসব ভাল্লাগে না!প্রতিদিন কেনো ইচ্ছে করে দেরী করেন!”

আকাশ হাতের ব্যাগটা রেখে এগিয়ে এলো আমার কাছে এবার।সামনে এসে দাঁড়িয়ে তাকিয়ে থাকলো আমার দিকে।বললাম,
“কি চাই?!”
“নেশা যে কাঁটছে না আমার!”

বলে নিচে বসে পড়লো।এলোমেলো কুঁচিগুলো ঠিক করে দিলো!শাড়ি পড়েছি তো সবে।তাই কুঁচিগুলো এলোমেলো হয়ে আছে।প্রতিদিন ই এরকম যাওয়ার সময় এরকম কান্ড করে।আর অফিস দেরী করে।বললাম,
“টাইম দেখেন তো?কয়টা বাঁজে?”
“আর দু’মিনিট থাকি। তারপর যাই!?”

কিছু বললাম না আর।প্রতিদিন ই এরকম বাচ্চা সুলভ আচরণ করে।আকাশ বুঝলো এবার আর রাগ নেই।তাই কপালে চুমু বসিয়ে দিয়ে সোফার দিকে যেয়ে ব্যাগটা হাতে নিয়ে বললো
“বায়য়,সুপ্রভা!”

তারপর চলে যায়।ও চলে যাওয়ার পর আপনাআপনি হাসি চলে এলো।এরপর আরো সপ্তাহ কেঁটে যায়।তারপর এক ভরা দুপুরেই শাশুড়ী মা বাসায় এসে আসেন।মালপত্র পাশে রেখে সোফায় চুপচাপ বসে আছে।বাসায় কেউই ছিলনা তখন।সুবর্ণা ছিল না।এবং আকাশও।আমি খুব খুশি হই উনাকে দেখে!এতদিন কতটাই চিন্তিত ছিলাম।যাক চিন্তাটা গেলো এবার।তারউপর ভাবলাম রাগটা কমেছে উনার।খুশিতে সামনে যেয়ে সালাম করতে উনি চোখমুখ কালো করে ফেলেন আরো।আমি হেসেই বললাম,
“মা কখন এলেন?”

সাথে সাথে বলে উঠেন,
“তুই যাস নাই এখনো?!”

“তুমি’র” জায়গায় “তুই” শব্দটা উচ্চারণ করতে দেখে খারাপ লাগলো খুব।আগে তো শতকিছু হলেও “তুমি” বলতো।তারমানে উনার রাগ আরে বেড়েছে আমার উপর।আমি চুপ করে রইলাম।কথাটা আওড়ানোর চেষ্টা করে বললাম,
“মা ভাত খেয়েছেন?ভাত দিই?!’
” কে তোর সাথে কথা বলতে চেয়েছে!?যেচে কথা বলা পছন্দ না!সর সামনে থেকে! ”

সরে এলাম।মনটা খারাপ হয়ে গেল।চুপচাপ বসে রইলাম।ভাবতে থাকলাম,
“আমি কি কখনোই শাশুড়ী মায়ের চোখে ভালো হবো না?!কখনোই আর উনি আমাকে পছন্দ করবেন না?”

চোখ পানিতে ভিঁজে এলো।এমন সময় আকাশের কল।বাসায় যেমন জ্বালায়।অফিসে গেলেও।অফিসে থাকলে দিনে ৩/৪ বার কল করবেই!চোখের পানি মুছে আকাশের কল রিসিভ করলাম।তারপর বললাম,
“মা এসেছে।”
“সত্যি?”
“হু।”

তারপর বিকেলেই আকাশ বাসায় ফিরে আসে।আকাশ ফেরার পর উনি আকাশের সাথেও তেমন ভালো করে কথা বলেননা!আমার সাথে যেরকম রাগ রাগ দেখান আকাশের সাথেও তাই।আকাশ রুমে এলেই বলি,
“মায়ের কিছু হয়েছে?”

যদিও আমি ধরতে পারলাম না উনার এরকম করাটা!আকাশ ঠিকই ধরতে পারলো।বললো,
“খালামণির সাথে ঝগড়া হয়েছে নিশ্চয়ই!’

তারপর আকাশের সন্দেহটাই সত্যিই হলো। রাতে খেতে বসলেই সুবর্ণাকে বলে উঠে আমাদের সবার সামনে,
“সুবর্ণা?তোর খালামণির মেয়ে রুবাইয়ার সাথে ক্লাসে গেলে কথা ই বলবি না!খাটাস একদম মেয়েটা!”

সুবর্ণা বলে,
“কেন মা?সে তো আমার বান্ধবী ক্লাসে।উরফে কাজিনও।”
“এখন আর কিছু না!কথাই বলবি না ওর সাথে!মনে থাকে যেন।’

বলে চোখমুখ শক্ত করে আবার ভাত কচলাতে থাকেন।এরমাঝে আকাশ আমাকে চোখ দিয়ে ইশারা করে,
“কি বললাম না?”

আমি মিটমিট করে হাসলাম!হাসির মাঝেই শাশুড়ী মা সম্পূর্ণ খাবার শেষ না করেই উঠে দাঁড়ান।হাত ধোঁয়ার জন্যে বেসিনের দিকে যেতে যেতে বিড়বিড় করে বলেন,
“সব পর!সন্তান, বোন কেউই আপন না!কেউই না!”

চলবে………

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here