#শূণ্যতার_পূর্ণতা_তুমি
#রোকসানা_আক্তার
#পর্ব-০৭
আমি আকাশের হাত ধরে টেনে আকাশকে নিয়ে বাসার ভেতর ঢুকি।কপালটা সেই ভালো প্রথম কদম ফেলতেই শাশুড়ী মায়ের মুখখানা সামনে এসে দগদগ করে হাজির!উনি চোখমুখ তীব্র কুঁচকে ফেলেন।কুঁচকানো ভাবটায় আকাশ ছুঁই ছুঁই রাগ।আমাকে কিছু আর দম ফেলার সুযোগটা না দিয়েই,
“সে-কি আকাশ,এই মেয়েকে এই বাসায় এনেছিস কেনো?!কেনো নিয়ে এসেছিস একে?বললাম না একে আমি বউ হিসেবে মানি না।আর মানবোও না!”
আমি রাশভারী হাসলাম।আসলে শাশুড়ী মায়ের কথায় কেনজানি হাসতে ইচ্ছে হলো।হাসি হাসি মুখখানা নিয়েই সুস্পষ্টভাবে জবাব দিলাম শাশুড়ী মাকে,
“মা?আপনার ছেলে তো আমাকে নিয়ে আসে নি।আমি নিজেই আপনার ছেলেকে এই বাসায় নিয়ে আসলাম।শুনলাম আপনি ছেলেকে আপনি বাসা থেকে নাকি বের করে দিয়েছেন।ছেলে রাস্তায় রাস্তায় ঘোরে।মানুষ পাগল বলে!কথা হলো ঘরের ছেলে বাইরে কেন থাকবে?তার বউ আছে,আবার বাচ্চাও হবে।দুঃখিত মা বাচ্চার কথা বলে ফেললাম।এখন না হোক,ভবিষ্যতে তো হবে।
সে তার এই বাসায় এত সুন্দর সাজানো একটা সংসার রেখে বাইরে থাকার তো প্রশ্নই আসে না!ঠিক বললাম না?”
আকাশের দিকে তাকিয়ে শেষ কথাটা বললাম।আকাশ নিচের দিকে তাকিয়ে মিটমিট করে হাসতেছে আমার কথায়।সুবর্ণাও আমার কথার আওয়াজ পেয়ে রুম থেকে বেরিয়ে আসে,
“ভাবী এসেছো তোমরা!”
আমার শাশুড়ি মা আরো ক্রোধে ফেঁটে চৌচির হয়ে যান,
“আকাশ!?তোর এতবড় সাহস হলো কিভাবে একে এই বাসায় আবার নিয়ে এসেছিস!আমি আজকেই তোর জন্যে মেয়ে দেখবো।আজকেই একে ডিভোর্স দিবি!আমার একটাই কথা বারবার এত বেয়াদব মেয়েকে এই বাড়িতে না,এঁকে আমার দুই চোখের সামনেও না দেখি!এ এই বাড়ির বউ হবারই যোগ্য না!আকাশ?আবারো সাফ সাফ বলতেছি একে বল চলে যেতে!বল!আমার রাগ উঠাস না!”
“মা রাগটা একটু কন্ট্রোল করুন।ছেলে তো আর আপনার কথা শুনবে না!”
“আকাশ!”
আকাশ বললো এবার,
“মা তুমি তোমার রুমে যেয়ে ফ্যান ছেড়ে দিয়ে একটু ঘুমাও।তাহলে তুমি আর উলটাপালটা কথা বলবে না!”
এ বলে আকাশ আমাদের সবাইকে পাশ কেঁটে রুমে চলে যায়।আমি হেসে দিই।সাথে সুবর্ণাও হেসে দিই।শাশুড়ী মা আরো জ্বলে উঠেন।তারপর আমিও সামনে থেকে চলে আসি!রুমে আসতে আকাশ বেলকনি তে দাঁড়িয়ে বাইরে তাকিয়ে আছে।আমি আকাশের পাশে যেয়ে দাঁড়াই।আকাশ আমার দিকে হালকা চোখে তাকায়।বলে,
“তুমি হঠাৎ এভাবে ফিরে আসবে আর এতটা চেইঞ্জ হবে আমার যেন বিস্ময়তা এখনো যাচ্ছে না!সত্যিই তুমি সেই সুপ্রভা!?সেই রাগী সুপ্রভা?”
আমি আকাশের দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকালাম।তাকিয়েই রইলাম এভাবে!আকাশ ভড়কে গেল এবার,
“কী ব্যাপার এভাবে তাকিয়ে আছো যে?”
আমি এবার সব কথা ব্যতিক রেখে একটা কথাই বলে উঠলাম,যেটা আমার ভেতরে চাপা ছিল এতদিন।যেটার প্রচন্ড ভাবনায় সিদ্ধান্তও নিতে পারি নি,
“আপনি আমাকে ভালোবাসেন তো?”
আকাশ আমার হঠাৎ এহেন কথায় অবাক হলো হয়তো।তবে তা প্রকাশ করার চেষ্টা করলো না।যদিও আমি তা ধরে ফেললাম।আকাশ সাবলীলভাবেই বললো,
“এটা কেমন কথা?”
“আপনার তো আগে একজন ছিল।সবকিছু ই তো জানি। কিন্তু আপনি তো বললেন প্রথম ভালোবাসা দ্বিতীয় কাউকে বা তারপরের কাউকেই দেওয়া যায়না।আপনি আমাকে সত্যিই ভালোবাসেন তো?নাকি আমার ভালোবাসাটা এখনো তার প্রতি রয়ে গেল!?”
আকাশ চুপ করে রইলো!কোনো কথা বললো না।জানি হুটহাট জবাব দিতে পারবে না।ভালোবাসাটা একটা গভীর অনুভূতি, যা প্রকাশ করা যায় না।আকাশও হয়তো পারবে না এখন।তারপরওনআমি একটু মজা নিলাম।বললাম,
“বুঝেছি আপনি আমাকে ভালোবাসেন না।বাসবেনও না আর কোনোদিন!আচ্ছা তাহলে বাপের বাড়ি চলে যাই।”
বলে ভণিতায় পা বাড়াই।আকাশ পেছন থেকে হাত ধরে ফেলে!বলে,
“যার জন্যে বাসা থেকে বের হলাম তার জন্যেই আনার ফিরে এলাম।এখন সে বলছে চলে যাবে?তাহলে ভালোবাসাটা তারজন্য কতটুকু সে কি এখনো বুঝলো না?”
আমি হাসলাম।আকাশের দিকে তাকালাম না।তাকালেই লজ্জাটা লুকাতে পারবো না।আকাশ আবার বলে উঠে,
“আমি সব ভুলে যেতে চাই সুপ্রভা।আর আমার সব শূণ্যতা তোমাকে দিয়েই পূর্ণ করতে চাই।শুধুই তোমাকে দিয়ে!আমার অতীতে কি ছিলো, কি হলো আমি তা আর মনে রাখতে চাই না।তোমার চাঞ্চল্যকর কারসাজিতে নিজেকে ব্যস্ত রাখতে চাই।এখন আমার সবটুকুই তোমার দায়িত্ব!”
এ বলে আকাশ আমার হাতটা আরো শক্ত করে ধরে।আমার সারা শরীর বিদ্যুৎ চমকানোর মতন করে উঠে।চোখমুখ খিঁচে রেখে নিজেকে শক্ত রাখার চেষ্টা করি।আকাশ আবার বলে,
“সুপ্রভা?”
“হু…!”
“আজকে আমরা কোথাও ঘুরতে যাই।চলো?”
“কোথায়?”
“জানি না!”
এ বলে আকাশ আমার সামনে এসে দাঁড়ায়।গাঁ থেকে ঘামের বুদবুদ গন্ধ আসতেছে।তবে গন্ধটা মারাত্মক নেশাক্ত!আমি ভারী একটা শ্বাস টানলাম।আকাশ আমার চিবুক আলতো করে ধরলো এবার।আমি চোখবুজে আছি।আর হালকাভাবে কাঁপছি।এমন সময় চিবুকে আলতো উষ্ণতা পাই।চোখ মেলি তরহর!আকাশ কিস করেছে!কতটা মায়াবী দৃষ্টি দিয়ে তাকিয়ে আছে আমার দিকে!কতট স্মুথ চেহারা।ঠোঁটজোড়া তীব্র লাল!এতটা সুন্দর এই ছেলে!তাই বলে এতটা!ভাবনার মাঝে জড়িয়ে নিতে চায় আকাশ আমাকে তার দিকে।কিন্তু তা আর হলো না।কল বেজে উঠে আমার।আকাশের থেকে সরে এসে কল রিসিভ করি,
“মা সুপ্রভা?তুই কোথায়?এত রাত হয়ে গেল।তুই যে আসছিস না?টয়ার বাসায় থাকবি আজ?”
পাশ থেকে আকাশ আমার হাত থেকে ফোনটা কেড়ে নিয়ে বাবাকে বলে উঠে,
“আসসালামু-আলাইকুম,বাবা?”
বাবা হঠাৎ পুরুষালী কন্ঠতে বুঝে উঠতে পারলো না কন্ঠটা ঠিক কার।ঠাহর করতে ত্রিশ-পঁয়ত্রিশ সেকেন্ডস সময় নিল আর কি।তারপর বলে উঠলো,
“আকাশ!”
“জ্বী,বাবা।”
“বাবা সুপ্রভা কোথায়!”
“জ্বী,বাবা সুপ্রভা এখন আমাদের বাসায় আছে।আর আমাদের বাসায়ই থাকবে এখন থেকে।”
বাবা চুপ করে রইলেন।তারপর বললেন,
“যাক!আলহামদুলিল্লাহ! বাবা আমার মেয়েকে দেখে রেখো।তোমার হাতে তুলে দিয়েছি।একটা মাত্র মেয়ে আমাদের। বড়ই আদরের রে বাবা!যদি কোন ভুলত্রুটি করে সোঁজা আমার বাসায় তুমি নিজেই আমাকে এসে বলবে।আমি দেখবো সব।”
আকাশ হাসলো বাবার কথায়।আমি আকাশের থেকে ফোনটা নিয়ে,
“বাবা এখন রাখো।পরে কথা বলবো।”
বলেই কেটে দিলাম।আকাশ বললো,
“কেঁটে দিলে যে?”
“এখন ইতিহাস তুলবে বাবা!আপনি জানেন না আমার বাবার ব্যাপারে..দুঃখের কোনো কথা তুললে তার সাথে যত যুগের মিল আছে সব ইতিহাস টানবে।”
আকাশ আবারো হাসলো।খুব নিঁখুতভাবে হাসলো।আমি মুগ্ধ হলাম তার হাসিতে।আসলে ছেলেটা একটু বেশিই কিউট।এমন সময়,
“ভাইয়া-ভাবী?”
আমরা সুবর্ণার দিকে তাকালাম।সুবর্ণা দরজার কাছে দাঁড়িয়ে আছে।চোখমুখে হতাশার ভঙ্গি।আকাশ বললো,
“কিছু হয়েছে, সুবর্ণা?”
“ভাইয়া মা নেই।রাগ করে খালামণির বাসায় ব্যাগপ্যাক গুছিয়ে নিয়ে চলে গেছে। যাওয়ার সময় আমাকে ডেকে বলেছে আর ওদের বলবি আমাকে যেনো এই বাসায় ফেরার জন্যে না বলে,যেদিন ভাবী যাবে তারপর সেদিন তিনি এই বাসায় আসবেন!”
সুবর্ণার কথা শুনে আমি এবং আকাশ অবাক হয়ে গেলাম!আকাশ বললো,
“কখন গেলো?”
“মাত্র।গিয়ে থামাও ভাইয়া মাকে!”
চলবে…..