শূণ্যতার পূর্ণতা তুমি পর্ব ৪

0
657

#শূণ্যতার_পূর্ণতা_তুমি
#রোকসানা_আক্তার
পর্ব-০৪

মা দরজা খুলে দিতেই আমি ভেতরে ঢুকে আমার রুমের দিকে চলে আসি।মা-বাবা আমার আকস্মিক এ কান্ডে বেশ অবাক হোন।আমি এসে বিছানায় বসে অঝরে কাঁদতে থাকি।মা-বাবা আমার পাশে এসে দাঁড়ান!আমার চোখে পানি দেখে বাবা বলেন,
“শ্বশুরবাড়িতে কিছু হয়েছে, সুপ্রভা?তুই কাঁদতেছিস কেন মা?”
“জামাই কিছু বলেছে?নাকি শাশুড়ী?নাকি ননদ?এই সুপ্রভা?”

কারো কথার জবাব দিতে পারলাম না।শুধু অঝোরে চোখের পানি ফেলতে থাকলাম।মা আমার পাশে এসে বসলেন।বললেন,
“আমার সব কষ্ট সহ্য হয়।কিন্তু তোর চোখের পানি সহ্য হয়না আমাদের।কি হয়েছে খুলে বল আমাদেরকে!”

বাবাও বলেন,
“হ্যাঁ,মা বল!তুই কিছু না বললে আমরা বুঝবো কীভাবে?”

আমি এবার কিছুটা চিৎকার দিয়ে আরো কেঁদে উঠি।আর কান্নারত কন্ঠে মাকে-বাবাকে বলতে থাকি,
“কেনো আমাকে সেখানে বিয়ে দিলে মা-বাবা!কেনো!আমি আরো পড়াশুনা করতাম..!”

বলে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে থাকি।বাবাও এবার এসে পাশে বসলেন।বললেন,
“কি হয়েছে মা।একটু শান্ত হ মা।আমাদের সব বল।আমরা আছি না?”

এবার আমি কান্না কিছুটা থামালাম।বাবার দিকে তাকিয়ে,
“আমি আর ওই বাড়িতে যাবো না বাবা!আমাকে দয়া করে ওই বাড়িতে যাওয়ার জন্যে তোমরা আর বলো না।মাফ চাই তোমাদের কাছে!আর কারণও জিজ্ঞেস করো না।আমি কারণও বলতে পারবো না।”

এ বলে উঠে চলে এলাম বাথরুমে।দরজা বন্ধ করে দরজার সাথে হেলান দিয়ে কাঁদতে থাকলাম—কী চেয়েছিলাম জীবনে,আর কি হলো!মা-বাবা দুজনেই নিস্তব্ধ হয়ে যান।ওই বাসায় কি হয়েছে মনে প্রশ্ন থেকে যায়।ঠিক সেই প্রশ্নের ঘোরপ্যাঁচে বাবা সন্ধের পর বোধহয় আকাশকে কল দেয়।আমি রুম থেকে সবই স্পষ্ট শুনতে পাই,

“বাবা আকাশ?সুপ্রভার মন খারাপ। কিছু হয়েছে বাবা?যদি খুলে বলতে…।ও আমাদের কিছুই বলছে না।যতই জানার চেষ্টা করতেছে ততই এড়িয়ে যাচ্ছে আমাদের।তুমি একটু বলো বাবা হয়েছে টা কি আসলে।চিন্তায় আছি।আমার একটা মেয়ে বুঝোই তো..।”

তারপর জানি না আকাশ কি বললো।তবে পরক্ষনে বাবার হাবভাবে মনে হলো আকাশ তেমন কিছুই বলেনি,ঠিক আমি যেমন বলিনি।রাতে ঘুমতে যাবো সূবর্ণা কল করে।রিসিভ করলাম,

“বলো..।”
“ভাবী তুমি হঠাৎ কাউকে কিছু না বলে এভাবে বাসা থেকে চলে গেলে!ভাইয়া সন্ধায় এসে তোমার কথা জিজ্ঞেস করেছে।আর ফোন করার চেষ্টা করে দেখে তুমি ভাইয়াকে ব্লক করে দিয়ছো।তাছাড়া যোগাযোগের সব মাধ্যম থেকেও নাকি ব্লক করেছো!”
“আর কিছু বলবে?”
“নাহ ভাবী।ভাইয়া আসলে তোমার সাথে..।”
“সুবর্ণা আমি তোমার ভাইয়ার ব্যাপারে আর কিছু শুনতে চাচ্ছি না।আই হেইট হিম।ওকে?রাখতে পারো এখন।আর এছাড়া যদি অন্যকথা থাকে বলতে পারো!”

সুবর্ণা চুপ করে থাকে।আমি বললাম,
“কেঁটে দিলাম।”

এ বলে কলটা কেঁটে দিই।আর বিড়বিড় করে বলি,
“জীবনটা যেন ওরা মা-ছেলে খেলার পুতুল পেয়েছে!”

———————————————————
কয়েকটা দিন যায়।এরমাঝে কেউই আর আমার সাথে যোগাযোগ করে নি।আমার শাশুড়ী মা তো তাই চাইছিলেন এতদিন..আমার বাবা কম দেয়, তা দিয়ে হবে না।আশা করেছিলেন আরো বেশি পাবেন ছেলের শ্বশুরবাড়ি থেকে।এখন আমি যদি একেবারে ওই বাসা থেকে চলে আসি তাহলেতো রাস্তা পরিষ্কার।ছেলেকে আবারো অন্য জায়গায় বিয়ে করিয়ে বেশি বেশি নিতে পারবেন।আর মেয়েতো আছেই তৈরী—আকাশের প্রাক্তন।জীবনের প্রথম প্রেমিকা!রাগ হচ্ছে আমার নিজের বাবার উপর!সেদিন কেনো বাবা আমাকে এরকম একটা ছেলে ধরে বিয়ে দিয়েছে!তাহলে আজ তো এরকম হত না।আমার ভাবনাই ঠিক হলো!শাশুড়ী মা সন্ধের দিকে বাবাকে কল করেন। আমি তখন টিভি দেখতেছিলাম সোফায় বসে।আজকাল আমি নিজেকে নিয়ে একটু বেশিই ব্যস্ত। এই যেমন ছোট্ট বাচ্চাদের দেখলে ডেকে কথা বলি।আদর করি।তাদের আবার চকোলেট কিনে দিই।তাছাড়া ছাদেও যাই বেশি।প্রচন্ড বাতাসে একা একা গুনগুন করে হাঁটি আর গান গাইতে থাকি।তা দেখে বিকেলে ছাদে আসা অন্য ফ্ল্যাটের মহিলারা দেখে বলে,

“সখী তো খুব সুখী আছে দেখি।তা সংসার কেমন যায় গো তোমার?”

আমি একগাল হেসে দিয়ে তাদের উত্তর করি,
“ভালো না হলে নি মুখ দিয়ে গান আসে,বলুন?”
তারাও হাসে।ভাবে আমি খুব খুশী!আসলেই খুশি–এই যে আগে যেমন এই স্বভাব—গান গাওয়া,টিভি দেখা,নিজে নিজে একা একা হাসা এই স্বভাব গুলো ছিল না।এখন দিনেক দিনই বাড়ছে।নাহলে মানুষ বুঝবো কীভাবে আমি সুখী?

বাবা হঠাৎ শাশুড়ী মায়ের কথায় বলে উঠেন,
“এসব কি বলতেছেন বেয়াইন?ডিভোর্স মানে?বিয়েই হলো কয় মাস আর!আমার মেয়ের জীবনটা তো ভালো করে শুরুই হলো না!আচ্ছা আমার মেয়ে কি কোনো দোষ করেছে?আমাকে বলুন?!আমি ওকে শাস্তি দেব!কঠিণতম শাস্তি দেব!”
“শাশুড়ী মায়ের কথা……”
“তাহলে?তাহলে কারণ তো বলবেন!”
“শাশুড়ী…. ”
“হ্যাঁ,জানি তো মেয়ে অনেক ভুল করে!কিন্তু এটার জন্যে তো খালি সংসার ভাঙ্গার কথা বলতে পারেন না!জীবনটা কি খুবই স্বস্তা আপা?”
“শাশুড়ী মা..”
“কি বললেন আপা!আমার নেওয়া জিনিসপত্র আপনার পছন্দ না!আপনার কি কি দরকার আমাকে বলতেন!প্রয়োজন হলে আমার বাড়ি বিক্রি করে সব দিতাম!

মা আতঙ্কিত মনে বাবার ফোনের কাছে দাঁড়ালো!আমি আর চুপ করে থাকতে পারলাম না!বলে উঠলাম,
“ফোন কাঁটো বাবা!ওই মহিলার কথা শোনার তোমার কোনো দরকার ই নেই!”

কিন্তু ততক্ষণে আমার গালে এসে চড় পড়ে খুব সজোরে!মা রাগান্ধিত কন্ঠস্বর টেনে বলে উঠে,
“কি করেছিস তুই?কি করেছিস!আর এখন এ কীভাবে কথা বলতেছিস,কীরকম তোর ব্যবহার!
ওখানেও ওইরকম ব্যবহার করেছিস!এই ধরনের ব্যবহারে আজ সংসার ভাঙ্গার কথা বলতেছে নয় কি?এই কারণেই!আরেহ শেষ হয়ে গিয়েছি আমরা তোর বিয়েতে!একবারও আমাদের কথা ভাবিস নি!বাবাটা অসুস্থ সেটাও মাথায় রাখিস নি!কি দোষ করেছি..!”

বলে মা আরো চিৎকার করে উঠেন।আর কেঁদে উঠেন।আমার বলার ভাষা নেই।জানি না কি থেকে কিভাবে কি বলবো!এমন সময় চোখ গেল বাবার দিকে।বাবা সোফার হাতলে শক্ত করে ধরে শরীরের ভার সামলানোর চেষ্টা করতেছেন।আমি দৌড়ে বাবার কাছে গেলাম,
“বাবা?বাবা?বাবা?”

বাবার কপালের রগ ফুলে যাচ্ছে খুব।
“বাবার প্রেশার বেড়ে গিয়েছে!”
বলেই বাবার রুমে যাই। প্রেশারের টেবলেট এনে
খাইয়ে দিই।তারপর সোঁজাভাবে সোফায় শুইয়ে দিই।উপরে ফ্যান চলতেছে।আমি বাবার পাশে বসে থাকি।বাবার কি অবস্থা দেখতে।প্রায় ঘন্টা খানেক পর বাবা স্বাভাবিক হয়।চোখ মেলে তাকায়।আমি কান্নারত মুখে হেসে উঠে বলি,
“বাবা!”

বিপরীতে বাবা হাসে নি।মুখ থেকে একটা কথাই তখন বেরিয়ে আসে বাবার,
“মা রে..সংসার ফেলবে মানে কি রে মা!”

ঠিক তখন কলিংবেল বেঁজে উঠে।মা পাশে দাঁড়িয়ে ছিলেন।যেয়ে দরজা খুলে দেয়।তাকিয়ে আকাশ!আর একা আসে নি।সাথে সুবর্ণাও আছে!

চলবে………

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here