#শুরুটা_অন্যরকম
#পর্ব_০৪
#অধির_রায়
— ” স্যার আজ আপনি এত সকালে অফিসে এসেছেন যে। কোন দরকার আছে কি?” অফিসের পিয়ন নির্বণকে উদ্দেশ্য করে বলে উঠে।
— নির্বণ নিস্তব্ধ নয়নে পিয়নের দিকে তাকিয়ে, ” না, তেমন কোন গুরুত্বপূর্ণ কাজ নেই৷ গতকালের প্রজেক্টটা নিয়ে একটু সমস্যা ছিল তাই সকাল বেলা এসে পড়েছি৷”
— স্যার আপনি তো কিছু খেয়ে আসেননি। আমি আপনার জন্য খাবার নিয়ে আসতেছি৷ আপনি দুই মিনিট অপেক্ষা করেন৷
— ব্যস্ত হতে হবে না৷ আমার ক্ষুধা নেই৷ আমি খাবার খেয়েই বের হয়েছি৷
নির্বণ পিয়নের সাথে কথা শেষ করে নিজের কেবিন চলে যায়৷ কেবিনে বসে বসে নিয়তির কথাগুলো ভাবছে৷
— নিয়তি কিভাবে আমাকে একজন ধর্ষক বানিয়ে দিল৷ আমি তার সাথে কোন অন্যায় কাজ করলাম না৷ তাকে আমি যথেষ্ট সম্মান করি৷ আমারই ভুল হয়েছে তাকে আপন ভাবা৷
___________
নিয়তি চোখের জল মুছে ফ্রেশ হয়ে নির্বণের মায়ের রুমে চলে আসে৷ নিয়তি একজন সার্ভেন্ট দিয়ে নির্বণের মায়ের জন্য হুইলচেয়ার নিয়ে আসে। নিয়তি মাথায় হাত রাখতেই নির্বণের মা চোখ মেলে তাকায়৷
— মা আপনার ঘুম কেমন হলো? নিশ্চিয় কোমরের আজ অনেক ব্যথা করেছে।
— হ্যাঁ মা আজ কোমরে অনেকটা ব্যথা করেছে৷ তবে আমি সেই ব্যথা সহ্য করে নিয়েছি৷
— এইতো মা আপনি মনে সাহস জুগিয়েছেন৷ এভাবে সাহস জুগিয়ে সব সময় চলবেন৷ দেখবেন খুব তারাতাড়ি আপনি সুস্থ হয়ে যাবেন৷
— “আমি আমি আবার আগের মতো হতে চাই৷ প্লিজ সোনা মা আমাকে সুস্থ করে দাও৷ আমি তোমাদের সাথে বেঁচে থাকতে চাই৷” কান্না করে বলে উঠে।
— নিয়তি চোখের জল মুছে ” মা আমি আপনাকে কি বলেছি চোখের জল মানুষকে দুর্বল করে তুলে? আমার সামনে একদম চোখের জল ফেলবেন না৷ ” আমি যদি আবার চোখে জল দেখি তাহলে আমিও কান্না করে দিব৷
— আচ্ছা সোনা মা আমি আর চোখে জল নিয়ে আসবো না। তোকে কথা দিচ্ছি৷ এভার একটু হাসো। তুমি হাসি আমার খুব ভালো লাগে৷
— নিয়তি মুচকি হেঁসে বলে উঠে, ” এই তো আমি হাসছি৷ আমি আপনার মুখে হাসি দেখতে চাই৷
নিয়তি নির্বণের মাকে একজন সার্ভেন্টের সাহায্যে হুইলচেয়ার বসিয়ে দেয়৷ তারপর নির্বণের মায়ের পায়ে বৈদ্যুতিক থেরাপি দেয়৷ থেরাপি দেওয়ার পর নিজ হাতে নির্বণের মাকে খাইয়ে দেয়৷
__________
নির্বণ অফিস থেকে ফিরে আজ কোন কথা বলেনি৷ মার সাথে দেখা করে রুমে গোমড়া মুখ করে বসে আছে৷ নিয়তি বুঝতে পারে তার ব্যবহারে নির্বণ রেগে আছে৷ নিয়তি নির্বণের জন্য বেশি করে ফিফার দিয়ে চা বানিয়ে রুমে নিয়ে আসে৷
নির্বণ বেলকনির গ্রিল ধরে রাতের আকাশের তারা দেখছে৷ মনটা খুব খারাপ৷ অফিস থেকে এসে পোশাক পরিবর্তন করেনি। নিয়তি ভয়ে ভয়ে বেলকনিতে যায়৷
— নিয়তি শান্ত গলায় বলে উঠে, ” স্যার আপনার চা৷ খেয়ে নেন ঠান্ডা হওয়ার আগে।”
— নির্বণ চোখ বন্ধ করে নিজের অভিমানটা থামিয়ে, ” আমার কিছু খেতে মন চাইছে না৷ মিস নিয়তি তোমার চা তুমিই খেয়ে নাও৷”
— স্যার আজ আপনি এভাবে কথা বলছেন কেন? আপনার কিছু হয়েছে কি? অফিসে কোন সমস্যা হয়েছে কি?
— নির্বণ নিয়তির দিকে ঘুরে বলে উঠে, ” আমি কিভাবে কথা বলি৷ এখন কি তোমার কাছে আমার কথা বলা শিখতে হবে? যাও এখান থেকে বিরক্ত করবে না৷”
— স্যার আপনি এভাবে কথা বলছেন কেন? আপনি আমার সাথে এমন ভাবে কথা বলছেন কেন? আপনার রাগ আমার উপর দিয়ে তুলছেন? ”
— চোখ পাকিয়ে, ” তুমি কি করনি বল? তোমার কাছে তোমার সম্মানের যতটা গুরুত্বপূর্ণ ততটাই আমার কাছে আমার সম্মান গুরুত্বপূর্ণ। আর তুমি কিনা আমাকে ধর্ষণের অপবাদ দিলে।”
— স্যার তখন আমি কি বলে ফেলেছি আমি নিজেও জানি না? প্লিজ স্যার আমাকে ক্ষমা করে দেন৷
— এটা অফিস নয় বার বার স্যার বলতে হবে না৷ আর হ্যাঁ ধর্ষকের সাথে কথা বলতে তোমার লজ্জা করে না৷ একজন ধর্ষক তো সমাজে সব থেকে কলঙ্কিত হয়৷ তাকে সবাই ঘৃণা করে।
— নিয়তি কান্না করে দিয়ে, ” স্যার প্লিজ আমাকে ক্ষমা করে দেন৷ আমি আপনাকে কষ্ট দিতে চাইনি৷ প্লিজ আমাকে ভুল বুঝবেন না৷”
— তোমার প্রতি আমার কোন বিদ্বেষ নেই৷ আর আমি ক্ষমা করার কে? ক্ষমা চাওয়ার হলে সৃষ্টি কর্তার কাছে ক্ষমা চাও। তিনি সকল সৃষ্টির আঁধার। তিনি পারেন না এমন কোন কাজ নেই৷
— নিয়তি সিদ্ধ নয়নে নির্বণের দিকে তাকিয়ে, ” তাহলে আমাকে কেন উপেক্ষা করছেন? আমার সাথে কেন গুরুচন্ডালীভাবে কথা বলছেন? কেন আমাকে ইগনোর করছেন?”
— মিস নিয়তি তুমি হয়তো ভুলে যাচ্ছো আমরা স্বামী স্ত্রী নয়৷ তাই আমাদের মাঝে দূরত্ব থাকাই ভালো। তুমি এখান থেকে চলে যেতে পারো।
— আমি চলে যাব না৷ আগে বলেন আমাকে ক্ষমা করে দিয়েছেন৷
— ক্ষেপে বলে উঠে, ” নিয়তি আমি একা থাকতে চাই৷ আমাকে একা ছেড়ে দাও।”
— আপনি যতক্ষণ পর্যন্ত আমাকে ক্ষমা না করবেন ততক্ষণ পর্যন্ত আমি এখানেই দাঁড়িয়ে থাকবো। সকালে ঘটনাটা ভুলে যান৷ আমি সব সময় আপনার হাসি মুখ দেখতে চাই৷ অবশ্য হাঁসবেন কিভাবে? আপনি তো সব সময় রেগে থাকেন৷ গোমড়া মুখু একটা৷
নির্বণ এভার নিজের ভিতরের রাগ আর ধরে রাখতে পারল না৷ নির্বণ নিয়তির হাত চেপে ধরে৷ নিয়তির হাতে গরম চা থাকাতে নিয়তির পায়ে গরম চা পড়ে যায়৷ সাথে সাথে নিয়তির পায়ে ফোঁসকা পড়ে যায়। নিয়তি যন্ত্রণা সহ্য করতে না পেরে নির্বণকে খাঁমচে ধরে। নির্বণ নিয়তিকে সেখানে ফেলে চলে আসে৷
নিয়তি পায়ের দিকে তাকিয়ে কান্না করে যাচ্ছে। অনেকটা ঝলসে গেছে। নিয়তি দাঁড়াতে চেষ্টা করছে। কিন্তু নিজ থেকে দাঁড়াতে পারছে না৷ নির্বণ রুমে এসে বিছানায় ধপাস/ধাপ করে বসে পড়ে। কিছুতেই নিজেকে আটকে রাখতে পারছে না৷ বুকের ভেতর চিনচিন ব্যথা করছে৷
নিয়তি উঠে পড়ে যেতে নিলেই নির্বণ দৌড়ে এসে নিয়তিকে ধরে ফেলে৷ নিয়তিকে কোলে করে রুমে নিয়ে আসে। নিয়তিকে বিছানায় শুয়ে দেয়৷ এন্টিসেপ্টি মলম লাগাতে নিলে নিয়তি পা সরিয়ে নেয়৷
— নির্বণ নিয়তির পা ধরে, “আর যদি একবার পা সরিয়ে নাও তাহলে পা ভেঙে রেখে দিন৷”
— প্লিজ স্যার পায়ে হাত দিবেন না৷ পায়ে হাত দিলে আমার পাপ হবে৷
— মিস নিয়তি তুমি এই যুগের মেয়ে। তাই এসব চিন্তা চেতনা বাদ দাও৷ আমাকে মলম লাগাতে দাও৷
— আপনি কেন আমার পায়ে মলম লাগিয়ে দিবেন? আমি কি হয় আপনার? আপনার কোন অধিকার নেই আমার পায়ে মলম লাগানোর৷
— সাট আপ! তুমি আমার সাথে থাকো৷ তাই তোমার ভালো মন্দ দেখার সব দায়িত্ব আমার৷ আমি তোমার কোন কথা শুনতে চাই না৷
— আমার পা পুড়ে গেছে তার জন্য তো আপনার খুশি হওয়ার কথা৷ আমি আপনাকে কত কষ্ট দিলাম৷ ধর্ষণ না করাতেও আপনাকে ধর্ষণ বানিয়ে দিলাম।
— এই মেয়ে এত বেশি বুঝ কেন? চুপ করে শুয়ে থাকো৷ আর একটা কথা নয়৷
নিয়তি নির্বণের হুংকার শুনে ভয় পেয়ে যায়৷ নির্বণ নিয়তির পায়ে মলম লাগিয়ে দিয়ে ফ্রেশ হয়ে আসে। ফ্রেশ হয়ে নির্বণ সোফায় শুয়ে পড়ে।
— নিয়তি জোর করে উঠে বসে, ” স্যার আপনি সোফায় ঘুমাতে পারবেন না৷ আপনি বিছানায় ঘুম আসেন৷ আমি ফ্লোরে শুয়ে পড়বো। ”
— তুমি বিছানায় আছো বিছানায় থাকবে। বিছানা থেকে পা ফেললে পা ভেঙে রেখে দিব৷ আর আমাকে বিরক্ত করবে না৷ আমার ঘুম পাচ্ছে।
নির্বণ এমনিতেই রেগে আছে। তাই আর নির্বণকে রাগাতে চাইনা নিয়তি তাই নির্বণের কথামতো নিয়তি বিছানায় ঘুমিয়ে পড়ে।
মাঝ রাতে নিয়তির ঘুম ভেঙে যায়৷ নিয়তি পায়ের ব্যথার জন্য ঘুমাতে পারছে না৷ নিয়তি ধীরে পায়ে ওয়াসরুমে চলে যেতে নিলেই….
চলবে…