শুরুটা অন্যরকম পর্ব ৩

0
444

#শুরুটা_অন্যরকম
#পর্ব_০৩
#অধির_রায়

নির্বণের চোখ ছেড়ে দিতেই নির্বণের চোখে জল এসে পড়ে। নির্বণ খুশি হয়ে নিয়তিকে জড়িয়ে ধরে।
নির্বণের কোন দিকে তেমন খেয়াল নেই৷ এক মুহুর্তের মাঝে ভুলে গেছে তাদের ছাড়া এখানে তৃতীয় কোন ব্যক্তি আছে৷ নির্বণ তার মায়ের কাশির শব্দে নিয়তিকে ছেড়ে দেয়৷

— নির্বণ আনন্দের সাথে বলে উঠে, ” নিয়তি আমি খুব খুব খুশি। তুমি আজ আমার মাকে বসাতে সক্ষম হয়েছো। তোমার এই ঋণ আমি কোনদিন শোধ করতে পারব না৷ ”

— উনি আমারও মা হন৷ আমি আমার মায়ের জন্য সব রকম চেষ্টা করব৷ কিছুতেই উনাকে এমন অবস্থায় থাকতে দিব না৷ আমি উনাকে ঠিক করে তুলবই৷

— কিন্তু নিয়তি ডাক্তার তো বলেছিল….

— আপনি নিশ্চয় ভুলে গেছেন আমি আপনার অফিসে কাজ করার আগে আমি ফিজিওথেরাপি হসপিটালে কাজ করেছি৷ সেখান থেকে আমার এমন অভিজ্ঞতা। প্যারালাইসিস বলতে কিছু হয় না৷ মানুষের অঙ্গ কাজ বন্ধ করে দেয় কিন্তু রক্ত চলাচল নয়৷ তখন কোন কিছুই সাহায্যে সেই অঙ্গের অনুভূতি জাগাতে পারলে ধীরে ধীরে ঠিক হয়ে যায়৷

— নির্বণ নিয়তির দিকে তাকিয়ে মুচকি হেঁসে নিয়তির হাত ধরে , ” নিয়তি প্লিজ তুমি আমার মাকে সুস্থ করে দাও৷ আমি তোমার কাছে এর থেকে বেশি কিছু চাই না৷ আমার মা আমার পৃথিবী।”

— নিয়তি বড় করে একটা নিশ্বাস নিয়ে বলে উঠে, ” ডোন্ট ওরি। আমি আমার সর্বোচ্চ দিয়ে ট্রাই করব৷ আমি মাকে সুস্থ করেই তুলবো।”

নিয়তির হাত ছেড়ে দিয়ে নির্বণ তার মার কোলে মাথা রেখে শুয়ে পড়ে৷ নির্বনের মাথায় নির্বণের মা হাত ভুলিয়ে দিচ্ছে। নিয়তি দূরে দাঁড়িয়ে থেকে চোখের জল ফেলে যাচ্ছে। এভাবে সে কোনদিন মায়ের ভালোবাসা পাই নি৷

— মা আমি আজ খুব খুশি। আমি কতটা খুশি তোমাকে বলে বুঝাতে পারব না৷ (নির্বন)

— শান্ত কন্ঠে বলে উঠেন, ” আমি চাই আমার ছেলে সব সময় সুখী থাকে যেন৷ সৃষ্টি কর্তার কাছে আমার একটাই চাওয়া৷”
নিয়তিকে উদ্দেশ্য করে বলে উঠে, ” নিয়তি তুমি দূরে দাঁড়িয়ে আছো কেন? কাছে আসো।”

নিয়তিকে ডাক দেওয়াতে নিয়তি যেন হাতের তলায় চাঁদ পায়৷ নিয়তি এক প্রকার দৌড়ে নির্বণের মায়ের কাছে যায়৷

— নিয়তি নির্বণের মাকে জড়িয়ে ধরলে নির্বণ কিছুটা ইতস্ততভাবে বলে উঠে, ” মা আমি আসছি৷ অফিস থেকে ফিরে ফ্রেশ হয়নি৷ ”

— নির্বণের মা নির্বণের মাথায় হাত রেখে, ” ওকে বাবা৷”

নির্বণ দরজার কাছে এসে আবার থেমে যায়৷ মার কাছে এসে বলে উঠে, ” মা আজ আমাদের কোম্পানি একটা বিশাল বড় প্রজেক্টের কাজ পেয়েছে৷ এতে লাভ থাকবে ১ কোটি টাকার বেশি৷ আমি সব টাকা কর্মচারীদের বোনাস হিসেবে দিয়ে দিব৷”

— মহান কাজের কথা ভেবেছো তুমি। কর্মচারীরা এতে খুশি থাকবে। তোমার বাবাও মাঝে মাঝে এমন সিদ্ধান্ত নিত৷ অল দ্যা বেস্ট।
___________

নির্বণ ফ্রেশ হয়ে ওয়াসরুম থেকে বের হয়৷ খালি গায়ের জলের ফোঁটা মুক্ত মতোর ঝলমলে করছে৷ টাওয়াল প্যাঁচিয়ে রুমে আসে৷ এমন সময় রুমে বসে ছিল নিয়তি৷

নিয়তি নির্বণকে খালি গায়ে দেখে জোরে চিৎকার করে উঠে। নিয়তির চিৎকার শুনে নির্বণ দৌড়ে এসে নিয়তির মুখ চেপে ধরে।

— চোখ পাকিয়ে বলে উঠে, ” এভাবে চিৎকার করার মানে কি?”

— উম… উম …

— কোনদিন কি আমাকে দেখো নি? আজ কি প্রথম দেখছো? কি হলো কথা বলছো না কোন?

নিয়তি হাত দিয়ে তার মুখের দিকে ইশারা করে৷ নিয়তি ইশারা করে বুঝিয়ে দেয় তার মুখ চেপে ধরে আছে। মুখ চেপে ধরলে কি করে কথা বলবে?

নিয়তি মুখ ছেড়ে দিলেও নিয়তিকে ছেড়ে দেয়নি৷ নিয়তি ঠিক একইভাবে জড়িয়ে ধরে আছে।

— লজ্জা লজ্জা ভাব নিয়ে বলে উঠে, ” আপনি এভাবে খালি গায়ে বের হয়েছেন কেন?”

— ক্ষেপে বলে উঠে, ” তুমি আমার রুমে কি করছো?”

— আমি আপনার রুমে ইচ্ছা করে আসিনি৷ আমি রাতে কোথায় ঘুম আসবো ? বাড়ির সবাই তো জানে আপনি আমার হাসব্যান্ড। এখন আমি কি করব?

নির্বণ নিয়তিকে ছেড়ে দিতেই নিয়তি আবার চিৎকার করতে নেয়৷ নির্বণ এবার নিয়তিকে সামনে থেকে মুখ চেপে ধরে৷

— চোখ পাকিয়ে বলে উঠে, ” এই মেয়ে তুমি চিৎকার ছাড়া আর কিছু করতে পারো না৷”

— আপনার লজ্জা করে না একটা মেয়ের সামনে এভাবে খালি গায়ে ঘুরে বেড়াতে।

— নির্বণ চোখ বড় করে, ” আমাকে খালি গায়ে দেখে তোমার লজ্জা করছে। আমি কি মেয়ে যে খালি গায়ে থাকতে লজ্জা পাবো।”

— ইতস্ততভাবে শান্ত গলায় বলে উঠে, আপনি মেয়ে নয়৷ কিন্তু আপনার কোন বুদ্ধি নেই৷ আপনি একটা মাথা মোটা৷ মেয়েদের সামনে এভাবে খালি গায়ে যেতে নেই৷ ”

— নির্বণ অট্টাহাসি দিয়ে, ” আমি খালি গায়ে থাকলে তোমার লজ্জা লাগে। তাহলে তো আমি সব সময় খালি গায়েই থাকবো। তাহলে তোমার মাঝে লজ্জার ভাব ফুটে উঠবে৷ আমার তো কোনদিন মনে হয়নি তোমার লজ্জা বলতে কিছু আছে?”

— চোখ পাকিয়ে বলে উঠে, ” কি বললেন আপনি? আমার লজ্জা নেই। আমাকে কোন দিক থেকে মনে হয় আমার লজ্জা নেই।”

— লজ্জা থাকলে এভাবে তুফান মে হতে না৷ কথা বলতে নিলে তো থামতেই চাও না৷ তুমি একটা টকেটিভ গার্ল।

— নিয়তি চেচিয়ে বলে উঠে, ” দূরে সরে দাঁড়ান৷ এভাবে আমাকে চেপে ধরে আছেন কেন? আপনার লজ্জা করে না, আমাকে এভাবে চেপে ধরে আছেন৷”

নির্বণ নিয়তিকে ছেড়ে দিয়ে দূরে সরে আসতে নিলেই নির্বণের পা স্লিপ কাটে। নির্বণ নিয়তিকে নিয়ে ফ্লোরে পড়ে যায়৷ নিয়তির ঠোঁট জোড়া নির্বণের ঠোঁটে লেগে যায়৷ দু,জনের চোখ কলকাতার রসে গোল্লায় মতো হয়ে যায়৷ কি বলবে বুঝে উঠতে পারছে না? একে অপরকে দেখে যাচ্ছে।

নিয়তি নিজেকে সংযত করে নির্বণের উপর থেকে উঠে যায়৷ নিয়তি লজ্জা পেয়ে রুম থেকে বাহিরে চলে যায়৷ নির্বণ ফ্লোর থেকে উঠে টু কোয়াটার এন্ড ট্রি শার্ট পড়ে নেয়৷ বিছানা গা এলিয়ে দিতেই নিয়তির কথাগুলো কানে বাজে৷ লিপ কিস চোখে ভাসে।

নির্বণ তারাতাড়ি বিছানা থেকে উঠে নিয়তির কাছে যায়৷ কোথায় গিয়ে ঘুম আসবে নিয়তি সেটা মাথায় আসে। ডাইনিং রুমে এসে দেখে নিয়তি সোফায় বসে ঘুমিয়ে পড়েছে।

— স্যার ম্যাম তো এখানেই ঘুমিয়ে পড়েছে৷ আপনাকেই ডাকতে যাচ্ছিলাম। সার্ভেন্ট

— তোমাদের সবার খাওয়া হয়ে গেছে।

— স্যার আমরা সবাই খেয়ে নিয়েছি৷ আমাদের কাউকে নিয়ে চিন্তা করতে হবে না৷ ম্যামকে ডেকে দেয়৷

— না লাগবে না৷ আমি তোমার ম্যামকে নিয়ে যাচ্ছি৷

— ওকে স্যার।

নির্বণ তার মায়ের রুম থেকে ঘুরে আসে৷ তার মায়ের রুমের নার্স সার্ভেন্ট দুইজনেই আছে৷ নির্বণ নিশ্চিত হয়ে আসে৷ নিয়তির ঘুম ভেঙে যেন না যায় সেজন্য নির্বণ নিয়তিকে কোলে করে রুমে নিয়ে আসে৷ রুমে নিয়ে এসে নিয়তিকে বিছানায় শুয়ে দেয়৷ নির্বণ চলে আসতে নিলেই নিয়তি নির্বণের হাত ধরে ঘুমিয়ে পড়ে।

নির্বণ কোন উপায় না পেয়ে নিয়তির পাশে বসে থাকে৷ নিজের হাত ছাড়ানোর অনেক চেষ্টা করছে কিন্তু নিয়তি কিছুতেই হাত ছাড়ছে না৷ আজ নির্বণ নিয়তিকে এত কাছ থেকে দেখছে। নিয়তির চেহারা মায়ায় জড়ানো। দেখলে মন ভরে যায়৷ ঘুমের মাঝে একদম নিষ্পাপ লাগছে।

নির্বণ কখন যে নিয়তিকে জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়ে পড়েছে জানা নেই৷
__________

আঁধার কেটে আসে দিনের আলো। শুরু হয় মানুষের জীবনে নতুন অধ্যায়। সকলে ছুটে চলে নিজ নিজ কাজে। জীবনটাকে উজ্জ্বল করার জন্য সকলে ব্যস্ত হয়ে যায়। শান্ত পরিবেশ ধীরে ধীরে ব্যস্ততায় পরিণত হয়৷

পাখির কিচির মিচির শব্দে নিয়তির ঘুম ভেঙে যায়৷ ঘুম ঘুম ভাবে নিয়তি অনুভব করে কেউ তাকে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে ধরে শুয়ে আছে৷ নিয়তি ঘুম ঘুম চোখে তাকিয়ে দেখে নির্বণ তাকে জড়িয়ে ধরে শুয়ে আছে৷

নির্বণকে এত কাছে দেখতে পেয়ে নিয়তি রেগে যায়। নিজের রাগ কন্ট্রোল করে বুঝার চেষ্টা করে রাতের ঘটনা৷ রাতে তার সাথে কি হয়েছে? নিয়তির মাথা কাজ করা বন্ধ করে দিচ্ছে। নিয়তি কিছুই বুঝে উঠতে পারছে না সে এখানে কি করে আসলো।

— নিয়তি নির্বণকে ধাক্কা দিয়ে বলে উঠে, ” আপনার সাহস কি করে হলো আমার সর্বনাশ করার? আপনি আমার দুর্বলতার সুযোগ নিলেন।”

— নির্বণ ঘুম ঘুম চোখে, ” কি হয়েছে মা? প্লিজ মা আর একটু ঘুমাতে দাও না৷ প্লিজ ডিস্টার্ব কর না৷”

— নিয়তি চিৎকার করে, ” আমি আপনার মা নয়৷ আমি নিয়তি।”

— নিয়তি নাম শুনে নির্বণ ঘুম থেকে উঠে বসে৷ হুংকার দিয়ে বলে উঠে, ” সকাল বেলা আমার ঘুম না ভাঙলে হতো না৷ তোমাকে এই কাজের জন্য এখানে নিয়ে আসা হয়নি৷”

— নিয়তি চোখ পাকিয়ে, ” আমি কি আপনার হুংকারে ভয় পাই৷ আপনি কিভাবে পারলেন আমার সর্বনাশ করতে৷” রাতে আপনি আমার সাথে… বলেই কান্না করে দিল।

— স্টপ। তুমি নিজেকে কি মনে কর? তোমার প্রতি আমার কোন ইন্টারেস্ট নেই৷

— ইন্টারেস্ট নেই৷ তাহলে এভাবে জড়িয়ে ধরে শুয়ে ছিলেন কেন? আমি তো এখানে আপনার রুমে ছিলাম না৷

— হ্যাঁ তুমি আমার রুমে ছিলে না৷ তুমি ডাইনিং রুমের সোফায় ঘুমিয়ে পড়েছিলে। তোমাকে আমি এখানে নিয়ে এসেছি৷

— আপনি আমাকে এখানে নিয়ে এসেছেন কেন? আপনার উদ্দেশ্য ভালো ছিল না তাই আপনি এখানে নিয়ে এসেছেন!

— আমার কোন বাজে উদ্দেশ্য ছিল না৷ আমি সবার সামনে তোমাকে স্ত্রীর পরিচয় দিতেই এখানে নিয়ে এসেছি৷

— এই তো আসল কথা ভের হয়েছে৷ আপনি কি আমাকে বিয়ে করেছেন? আমাকে কিভাবে স্ত্রীর মর্যাদা দিতে চান?

— আমার কথাটা বুঝার চেষ্টা কর৷

— কি বুঝার চেষ্টা করব৷ আপনি একটা ধর্ষক।

ধর্ষক নাম শুনে নির্বণের মাথার রক্ত চেপে উঠে। নির্বণ বেশ রেগে যায়৷ নির্বণ নিয়তির গালে কষিয়ে একটা থাপ্পড় বসিয়ে দেয়।

— নিয়তির মুখ চেপে ধরে বলে উঠে, ” সব সময় বেশি বুঝ কেন? আমি তোমার সাথে শারীরিক সম্পর্কে লিপ্ত হয়নি৷” তোমার সাথে ঘুমানোর কোন ইন্টারেস্ট ছিল না৷ তুমি আমার হাত ধরে রেখে ছিলে। তাই বাধ্য হয়ে তোমার সাথে ঘুমাতে হয়েছে।

নির্বণ বিছানা থেকে উঠে বেলকনিতে চলে যায়৷ ভাবতে থাকে এই মেয়ে শুধু নেগেটিভ ভাবে কেন সব সময়? মেয়ে হয়েছে বলেই সব সময় নেগেটিভ ভাবতে হবে।

— নিয়তি নিজের গালে হাত রেখে মনে মনে বলে উঠে, ” সরি স্যার! আমি আপনাকে জেনে বুঝে কষ্ট দেয়নি৷ আমি মেয়ে, আমি সব সময় নিজের সম্মান নিয়েই ভাবি৷ মেয়েদের সম্মান মেয়েদের কাছে অমূল্য সম্পদ।

চলবে….

,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here