#শুধু_তুই
#পার্টঃ১৪
#Rifat_Amin
-মনের টান থাকলে অবশ্যই আসা যায়। বাই দ্য ওয়ে, কোথায় রশ্নি? তোমার আদরের বোন বলে কথা। একটু দেখা করতে এলাম। (সোনিয়া)
সোনিয়ার কথাগুলো শোনামাত্র আমার মাথায় রাগের ফুলকি উড়লো। আমি প্রহরভাইয়ের বোন হই বা বউ হই, তাতে তোর কি? মনে মনে হাজারটা গালি দিলেও মুখে কিছু বলতে পারলাম না। প্রহরভাই মুচকি হেসে বললেন,
– এখানে সিনক্রিয়েট করতে খুব ইচ্ছে করছে বোধহয়? (প্রহর)
– এমনভাবে বলছো কেনো প্রহর? (সোনিয়া)
আমি প্রহরভাইয়ের দিকে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে ভাবছি, মানুষটা অনেক ধৈর্য্যবান হয়েছে। যার সামনে গেলেই আমার মুখের কথা ওলটপালট হয়ে যেতো। তার সামনে আজকাল বড্ড কথা বলছি৷ অথচ উনি শুনেই যাচ্ছেন। রাগারাগি তেমন করছেন না৷ এটা উনার স্বভাববিরুদ্ধ। মানুষ হঠাৎ করেই মনে হয় পরিবর্তন হয়ে যায়। অতঃপর তাদের আর আগের রাস্তায় ফিরিয়ে আনা যায় না৷ প্রহরভাই সোফায় আয়েশ করে বসে বললেন,
– কেমনভাবে কথা বলছি? সোনিয়া শোনো, তুমি এখান থেকে চলে গেলেই আমি খুশি হবো৷ আজকে আমার জন্য একটা বিশেষ দিন। আমার আর রশ্নির বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে। এই শুভ দিনটাতে তোমার সাথে কথা বলতে ইচ্ছে করছে না। একদম ইচ্ছে করছে না। (সোনিয়া)
প্রহরভাইয়ের কথা শুনে আমার মনটা খুশিতে নেচে উঠলো। এই না হলে আমার স্বপ্নের মানুষ। এদিকে প্রেম আমার পাশে দাঁড়িয়ে সব কথা মনোযোগ দিয়ে শুনছে। তাই আর নাচার সৌভাগ্য হলো না৷ শুধু লজ্জায় নিজেকে আবৃত করে রাখলাম। সোনিয়া প্রহরভাইয়ের কথা শোনামাত্র চেঁচিয়ে উঠলেন,
– হোয়াট দ্য হেল। তুমি যদি বিয়ে করো, সেটা শুধু আমাকেই করবা৷ আর কাউকে তোমার লাইফে যায়গা দেবো না আমি। (সোনিয়া?
প্রহরভাই মাথা নিচু করে মনোযোগ সহকারে সোনিয়ার কথা শুনলো৷ মনে হচ্ছে সোনিয়া খুব গুরুত্বপূর্ণ লেকচার দিচ্ছে। আর প্রহরভাইয়ের সেটা গুরুত্বপূর্ণ ক্লাস। এদিকে সোনিয়ার চিৎকারে ছুটে এলো সবাই। ভাগ্যিস ইতোমধ্যে পুলকভাইয়ের পরিবারের সবাই চলে গেছে। শুধু বাকি আছে প্রহরভাই, প্রেম আর আঙ্কেল-আন্টি। সবাই সোনিয়াকে দেখে অবাক। এত বড় বিজনেসম্যানের একমাত্র মেয়ে এখানে! সবাই যেনো অবাকের চুড়ায় পৌঁছে গেলো। প্রেম ওখানে চলে গেলো। বাকি একাই আমি এখানে চুপটি করে দাঁড়িয়ে রইলাম। আজ বোধহয় ঝামেলা একটা বাঁধবেই। আঙ্কেল সোনিয়াকে দেখেই বললো,
-আরে সোনিয়া, তুমি এখানে? (আঙ্কেল)
সোনিয়া সাধু সেজে বললো,
– হ্যাঁ আঙ্কেল। প্রহর ডেকেছিলো, কিন্তু ডেকে এনে যে এমন অপমান করবে তা জানা ছিলো না। আসি আঙ্কেল, কষ্ট দিয়ে ফেললাম আপনাকে। আসসালামু আলাইকুম। (সোনিয়া)
কথাটা বলেই হরহর করে সেখান থেকে চলে গেলো সোনিয়া। সে জানে, ভেতরে এখন ঝামেলা হবে। পরিবারের সবার মাঝে কলহ সৃষ্টি হবে। এটাই তো সে চায়। সোনিয়া দোতলা বাড়িটা থেকে বেড়িয়ে আসলো। সামনেই চিরোচেনা পাজেরো। অদ্ভুত মনে হেসে উঠলো সে। শুধু ফোন বের করে একজনকে টেক্স পাঠালো ” Sonia kokhono hare na,, sesh hasita amiei hasbo. be ready cuty. dakha hcce rate. love you. ”
এদিকে প্রেম, প্রহর নিশ্চুপ। তাঁরা কোনো কথা বলছে না৷ আঙ্কেল বারবার একটা কথা জিজ্ঞেস করেই চলেছে,
– সোনিয়াকে কি বলেছো প্রহর? আমার জানামতে সোনিয়ার এখানে আসার কথা না। কিন্তু সে আসলো। এসেছে ভালো কথা। কিন্তু সে কেনো তোমার কাছ থেকে অপমানিত হবে? উত্তর দাও। (আঙ্কেল)
প্রহর চুপ করে আছে। প্রেম বললো,
– বাবা, এখানে ভাইয়া কিছুই বলেনি। ঐ মেয়েটাই প্রহরভাইকে মেন্টালি টর্চার করছে। (প্রেম)
আন্টি নীরবতা ভেঙ্গে বললো,
-তুই চুপ কর। নিজে তো একটা মাস্তান হচ্ছিস। তোর চুলগুলো আজকের মধ্যে কেটে ফেলবি। তার আগে বাড়িতে ঢুকবি না৷ (আন্টি)
এবার প্রহরভাই বললেন,
– বাবা আমার ভালো লাগছে না। এই নিয়ে পরে কথা হবে। (প্রহর)
– পরে কথা হবে মানে! সোনিয়া যদি একবার স্যারকে এই কথা বলে তাহলে আমার চাকরি চলে যাবে। একবার ভেবেছো সেটা? (আঙ্কেল)
প্রহরভাইয়ের ধৈর্যের বাঁধ ভেঙ্গে গেলো। দাঁতে দাঁত চেপে বললেন,
– তোমার ছেলে যথেষ্ট বড় হয়েছে বাবা (প্রহর)
আঙ্কেল রেগে গিয়ে কিছু একটা বলতে যাবেন, তাঁর আগেই সেখানে উপস্থিত হলো আমার আম্মি। সবটা শুনে তিনি পরিস্থিতি স্বাভাবিক করলেন। তখন সেখান থেকে বেড়িয়ে গেলেন প্রহরভাই। আমার মনটা তিতিয়ে উঠলো, আজকেও বোধহয় উনার সাথে আর কথা হবে না। আই মিন, আমার কথা বলার সাহস জুটবে না। তবুও ভয়ভয় করে ওনাকে ফোন লাগালাম,
-হ্যালো! (আমি)
– ভয় পাওয়ার দরকার নেই। আমি তোর সাথে রাগ করবো না। এখন কয়টা বাজে দেখতো। (প্রহর)
আমার কন্ঠস্বর একদম পরিষ্কার ছিলো। তবুও উনি আমার ভয়টা কিভাবে ধরতে পারলেন জানি না। হঠাৎ মনে হলো, এ আমার প্রহর নয়। প্রহর হবে রাগি। অত্যন্ত গম্ভীর একজন মানুষ। কিন্তু তিনি বদলে গেলেন। এতদিন যেটা চেয়ে এসেছি সেটা পূর্ণ হলো। কিন্তু আমার ভালো লাগছে না কেনো? আমি ফোন দেখে বললাম,
– রাত ৮ টা ২ বাজে। কেনো?
– রাত ১০ টার মধ্যে তোর আমার বিয়ে হচ্ছে। আমি তোকে মেন্টালি স্বাভাবিক থাকার জন্য জানালাম। বাসরঘরে দেখা হচ্ছে। আল্লাহ হাফেজ।
মহুর্তেই ভেতরটা কেঁপে উঠলো আমার। কি হলো এটা? কি বললেন উনি? ফোনের দিকে তাকিয়ে দেখলাম ফোনটা কেটে গেছে। আমার মাথায় একটা কথাই ঘুরপাক খাচ্ছে। ” রাত ১০ টার মধ্যে তোর আমার বিয়ে হচ্ছে “। উনার কন্ঠস্বর এত গম্ভীর কখনো দেখিনি। এই মহুর্তে যে উনি ফান করছেন না, সেটা স্পষ্ট। আমি কিছুই ভাবতে পারলাম না। রাগের মাথায় বিয়ে করবেন আমায়! এটা কি আদৌও ঠিক? আমি জানি, প্রহরভাইয়ের কথার কোনো পরিবর্তন হয় না।
———-?️
রাত ন’টা। ব্যস্ত রাস্তার একপাশ দিয়ে ফোনে কথা বলতে বলতে হেঁটে যাচ্ছে প্রেম। পায়ে জুতো নেই, একদম বোহেমিয়ান বলা যায়। উদ্দেশ্য আজ হিমুর মতো হাটবেন। আরও একটা উদ্দেশ্য আছে। সেটা হলো মাথার চুলগুলো কেটে ফেলা। প্রেম সাধারণত কারও কথা শুনে না। এমনটা না যে মা বললো আর ওমনেই প্রেম চুল কাটাতে আসছে। সারা এখনো লাইনে আছে। সে বললো,
– তুমি কোথায় এখন? (সারা)
– রাস্তার মাঝে। চুল কাটাবো নিজের। (প্রেম)
– তোমার বড় বড় চুলগুলো অনেক সুন্দর। থাকনা। সমস্যা কি? (সারা)
– হ্যাঁ। আমার নিজেরও ভালো লাগে। কিন্তু আজ আম্মুকে চমকে দেবো। তার কথা না শোনা ছেলেটা আজ কথা শুনবে। ব্যাপারটা দারুণ ইন্টারেস্টিং। আসবা নাকি? দেখে যাও কিভাবে চুল কাটি। (প্রেম)
-হ্যাঁ। অবশ্যই আসবো। (সারা)
প্রেম জানে, সারা আসবে। খুব তারাতারি আসবে, এই রাতের বেলায় একটা অপরিচিত ছেলের সাথে দেখা করতে। নিজের
মা’কে কি মিথ্যা বলে আসবে?সেটাও জানা আছে প্রেমের। দশমিনিটের মধ্যে সারা উপস্থিত হলো প্রেমের কাছে। সাথে সাথে আরো একজন উপস্থিত হলো সেখানে। সাব্বির! সে মহাবিরক্ত এই প্রেমের প্রতি। এই ছেলে কখনো নায়ক তো কখনো ভিলেন, আবার আজ বোহেমিয়ান, হিমু। কি বাকি আছে? সারার দিকে দৃষ্টি রেখে বললো,
– এই ছেলে পাগল। এর সাথে তুমি দেখা করতে আসছো ভাবতেই মনটা খারাপ হয়ে যাচ্ছে! (সাব্বির)
মহাবিরক্ত কন্ঠে কথাটা বললো সাব্বির। সারা চুপ করে রইলো। প্রেম মুচকি হেসে বললো,
– হিংসে হয়? নিজেও ট্রাই কর। আমার মতো বিন্দাস লাইফ যাপন করতে পারবি। হা-হা-হা। (প্রেম)
– শালা! তোর সিকিউরিটি দেয়ার মতো মেন্টালিটি আমার নাই। তুই একটা সাইকো! থাক, আমি চললাম। (সাব্বির)
কথাটা বলেই বাইক ছুটিয়ে সেখান থেকে হারিয়ে গেলো সাব্বির। সারা এবার কথা বলার সুযোগ পেয়ে বললো,
– তুমি এমন কেনো বলো তো। তোমার ফ্রেন্ডরা তো তোমাকে অপমান করলো। তাও তোমার যায় আসে না? (সারা)
প্রেম বড় বড় চুলগুলোকে পিছনে স্পাইক করতে করতে বললো,
– অপমানিত হতেও যোগ্যতা লাগে। হিহি। বাদ দাও, চলো এখন পার্লারে যাবো। তার আগে একটা স্যান্ডেল কেনা জরুরী। ঠান্ডা লেগে যাচ্ছে। ভেবেছিলাম, খালি পায়ে রাস্তার ধারে একটা ছোট খাটো সেলুনে চুল কাটবো৷ তা আর ইচ্ছে করছে না। (প্রেম)
সারা অযথাই হেসে উঠলো প্রেমের পাগলামোতে। সে সুতীক্ষ্ম দৃষ্টিতে প্রেমকে আরো একবার স্ক্যান করলো। সাদামাটা মানুষ। বলিষ্ঠ শরীর, আর ব্যাক্তিত্ব দেখলে যে কেউ আকৃষ্ট হয়ে যাবে। ফর্সা তেমন নয়, উজ্জ্বল শ্যামসুন্দর মানব। আর লম্বা, বাপ্রে। এই বয়সে কেমন শরীর বানিয়েছে। মারামারি করার জন্য পার্ফেক্ট। আমার উনার বয়স সম্পর্কে সন্দেহ জাগে! নিশ্চই বয়স ২০+।
চলবে?
(ছোট পর্বের জন্য দুঃখিত। মন খারাপ একটু, ৩০০+ শব্দ লিখেছিলাম একবার। সেটাও চাপ লেগে ডিলেট হয়ে গিয়েছিলো ?)