শুধু তুই পর্বঃ১৩

0
1409

#শুধু_তুই
#পর্বঃ১৩
Rifat Amin

-লেট মি ট্রাই ডিয়ার (প্রেম)

হঠাৎ সামনের চেয়ারে প্রেম বসে পরায় মহুর্তেই হকচকিয়ে গেলো সোনিয়া। গ্লাসটা টেবিলের সামনে রেখে নিজেকে সাধু হিসেবে উপস্থাপন করার চেষ্টা করতে লাগলো। প্রেম আরেকটা গ্লাসে মদ ঢালতে ঢালতে বললো,

– মদ কখনো খাইনি। এর স্বাদ কেমন? (প্রেম)

সোনিয়া তটস্থ ভঙ্গিতে বললো,

– খেলেই বুঝতে পারবে। তুমি এখানে কেনো? তোমার ভাইয়াকে বলে দেবো কিন্তু। (সোনিয়া)

প্রেম আয়েশ করে চেয়ারটায় বসে পড়লো। অতঃপর সামনের গ্লাসটার দিকে অসীম কৌতুহল দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো,

– ভাইয়াকে জানানো উচিত বলেই আমি মনে করি। জানাবো? (প্রেম)

সোনিয়া কম্পিত স্বরে তোতলাতে তোতলাতে বললো,

-কককি জানাবে তুমি। (সোনিয়া)

– রিলেক্স। এখানে কি কাপলদের ডান্স হয়? আই মিন, ডু ইউ হ্যাভ পার্টনার? (প্রেম)

সোনিয়া উত্তর দিলো না। প্রেম আবারো বললো,

– ভাইয়ার লাইফে এন্ট্রি নেয়ার কি দরকার? এখানে তো তোমার পার্টনারের অভাব নেই। (প্রেম)

– প্রেম! তুমি হয়তো ভুলে যাচ্ছো তুমি কার সাথে কথা বলছো। নেহাত তুমি প্রহরের ভাই বলে কিছু বলছিলাম না এতক্ষণ। এখানে তোমাকে গুম করে ফেললেও কেউ কিচ্ছুটি জানবে না। তুমি আমাকে যতটা চিনো। তাঁর থেকে তোমায় ভালো করে চিনি আমি। (সোনিয়া)

প্রেম মুচকি হাসলো। টেবিলের উপর থেকে মদের গ্লাসটা তুলে জীবনের প্রথম চুমুকটা দিয়েই দিলো। সবকিছুর অভিজ্ঞতা দরকার জীবনে৷ প্রেম হালকা হেসে বললো,

-কি জানো আমার সম্পর্কে? (প্রেম)

– নিজের বয়সের দিকে তাকিয়ে চলাফেরা করো বাবু। নাউ গেট আউট৷ আদারউইস আই মেইক এ মিস্টেক। (সোনিয়া)

প্রেম চেয়ার ছেরে উঠে দাঁড়িয়ে বললো,

– এ্যালকোহল স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। তবে টেস্ট টা ভালো। যদি ক্ষতিকর না হতো, তাহলে নিয়মিত খেতাম। বাই দ্য ওয়ে, ডন্ট ফলো মি ডিয়ার। (প্রেম)

কথাটা বলেই সেখান থেকে দ্রুত পায়ে বেড়িয়ে গেলো প্রেম। সোনিয়া অদ্ভুত দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে প্রেমের যাওয়ার পানে। এই ছেলেটাকে সে যথেষ্ট ভয় পায়। প্রহর যেমন অদ্ভুত। এই ছেলেটা তাঁর থেকেও অদ্ভুত। পার্থক্য হলো প্রহর অসম্ভব সুন্দর। যে কেউ তার সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়ে প্রেমে পড়তে বাধ্য। কিন্তু প্রেম যথেষ্ট গম্ভীর, প্রহরের থেকেও। প্রেম যখন হাসে তখন মনে হয় এই হাসিটাই রাগের প্রতিচ্ছবি। বারের বাইরের অংশটা যতটা চমৎকার, ভেতরের অংশটা তার থেকেও জঘন্য। এরকম জঘন্য জায়গায় দ্বিতীয়বার আসতে চায় না প্রেম। বার থেকে বেরিয়েই দেখলো রাফি এখনো বাইকে মুর্তির মতো বসে আছে। প্রেম এসে বললো,

– এখনো আছিস? তোর বিরক্ত লাগে না?(প্রেম)

– লাগলেও করার কিছু নেই। রশ্নি আপু কল করেছিলো আমায়। তোর ফোন নাকি অফ? (রাফি)

-হুমমম৷ চল যাবো এখন। আজ সাব্বিরের বাসায় থাকবো। তুই চলে যা বাসা। (প্রেম)

——?️

দেখতে দেখতে কেটে গেলো আরো এক সপ্তাহ। ঐশীর বিয়ের তোরজোর চলছে। এই লকডাউনেই বিয়ে হবে৷ পরিবারের দুএকজন সদস্য থাকবে উপস্থিত আর আত্মীয় নেই বললেই চলে। পুরো বাড়িতে মানুষ গিজগিজ করছে। যেনো নিশ্বাস নেবার উপায় নেই। আগামি শুক্রবার বিয়ে। আজ বুধবার, মানে আর একদিন বাকি। বাসায় প্রহরভাইয়ের পরিবারের সবাই আর পুলকভাইয়ের পরিবারের থেকে কয়েকজন উপস্থিত। এখন কিভাবে বিয়েটা হবে সেই ভাবনায় ব্যাস্ত সবাই। প্রহরভাইও সেখানে উপস্থিত। আমি প্রহরভাইয়ের থেকে নিজেকে আত্মগোপন করে রাখার জোর চেষ্টা চালাচ্ছি। এই মানুষটার সাথে গতকাল ঝগড়া হয়েছে৷ ঝগড়াটা অবশ্যই আমি শুরু করিনি। করেছে দ্য গ্রেট প্রহরভাই। শুধু বলেছিলাম পড়াশোনা করতে আর ভালোলাগে না। তারপর শুরু হলো উনার লেকচার। এভাবে কি জীবন চলে। প্রেমটাও ওখানে বসে খুটুরখাটুর করছে। এদিকে আয় ভাই, একটু গল্প করি, ধুর! তারপর ভাবলাম প্রেমকে কল করে এখানে ডাকবো। ওর ভাইয়ের প্রতি যত রাগ, সব ঝারবো। ঐশী তো রুমের ভীতর লজ্জায় মরে যাচ্ছে একেবারে। ঢং দেখলে মরে যাই। আর প্রেয়সী, সে তো প্রহরভাইকে কাছে পেয়ে, কোলে বসে তার ফোন টিপছে। এই শয়তানটা কখনো আমার পক্ষ নিবে না। যত্তসব! ওর থেকে প্রেমের সাথে কথা বলে শান্তি। সবসময় ও আমার পক্ষ নিবে। আমি প্রেমের নাম্বারে ডায়াল করলাম। দরজার ফাঁক দিয়ে দেখলাম সে ফোনটা কেটে দিয়ে উঠলো সেখান থেকে। তারপর গুটিগুটি পায়ে আমার রুমের দিকে এগিয়ে আসলো। বাহ! এবার শান্তি। কিন্তু শান্তিটা বেশিক্ষণ টিকলো না। প্রহরভাই বুদ্ধি করে প্রেয়সীকে আমার রুমের দিকে যেতে বললো। আর প্রেয়সীতো তার দাভাইয়ের আদেশ মান্য করতে একপায়ে রাজি। প্রেম আমার রুমে ঢুকলো, সাথে ঢুকলো পিচ্চুটা। প্রেম ওকে দেখেই হাসি দিয়ে বললো,

– ভাইয়া পাঠালো? (প্রেম)

প্রেয়সী সন্দিহান দৃষ্টিতে প্রেমের দিকে তাকালো। অতঃপর বললো,

– তোমাকে বলবো কেনো? তুমি আমাকে চকলেট দাওনি। (প্রেয়সী)

– ওলে ওলে বাবুটা। আচ্ছা আজ অবশ্যই চকলেট কিনে দেবো। ঠিক আছে? (প্রেম)

-হু (প্রেয়সী)

কথাটা বলেই নাচতে নাচতে আমার বিছানায় বসে পরলো প্রেয়সী। আমি প্রেয়সীর উদ্দেশ্যে বললাম,

– সিসি ক্যামেরা হয়ে আমার রুমের দরজায় সেট হয়ে যেতে পারিস না? (আমি)

প্রেয়সী আমার কথাটার অর্থ উদ্ধার করতে পারলো না। কিন্তু বুঝতে পারলো, এই কথায় তাকে ভীষণ অপমান করা হয়েছে৷ মুখ ফুলিয়ে প্রেমের উদ্দেশ্যে বললো,

– দাভাই তোমার মোবাইলটা দাও। গেম খেলবো। (প্রেয়সী)

প্রেম বাধ্য ছেলের মতো প্রেয়সীকে ফোনটা দিয়ে বিছানায় বসে বললো,

– বলো, কি খবর তোমার? (প্রেম)

– আমার খবর বাদ দে। তোর খবর বল। দিনদিন তো মাস্তান হয়ে যাচ্ছিস। চুল কাটার টাকা নাই নাকি? (আমি)

কথাটা বলেই ওর ঝাকড়া চুলগুলো বুলিয়ে দিলাম। চুলগুলো বড় হয়ে ভালোই লাগছে। প্রেম বিছানায় গা এলিয়ে দিয়ে বললো,

-টাকা আছে। কিন্তু ইচ্ছে নাই। সাথে সময়ও নাই। সেলুনে গেলেই লাইন ধরে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়৷ (প্রেম)

-বাহ, তুইতো দেখি বড়লোক রে। তোর ভাইকে একটু টাকা-পয়সা দান করিস। তিনি কথা বলার জন্য ফোনে রিচার্জ করার টাকা পায়না। (আমি)

প্রেম কথাটা শোনা মাত্রই হো হা করে হাসতে হাসতে বললো,

– ভাইয়াই তো আমাকে টাকা পয়সা সরবরাহ করে। আম্মু-আব্বুর কাছে চাইলেই বলে কি দরকার? হেন তেন। (প্রেম)

হঠাৎ প্রেয়সী গেম থেকে মাথা তুললো। প্রেমের ফোনটা কানে দিয়ে বললো,

– আমি ভাইয়ার ফোনে গেম খেলছি। ভাইয়াও আপুর সাথে কথা বলতে ব্যাস্ত। পরে ফোন করিয়েন। (প্রেয়সী)

প্রেয়সীর কথা শোনা মাত্র প্রেম বললো,

– দেখি ফোনটা। কে ফোন করেছে? (প্রেম)

প্রেয়সী ফোনটা দিয়ে দিলো প্রেমকে। প্রেম নাম্বারটা একপলক দেখেই বললো,

-হ্যাঁ সারা বলো। (প্রেম)
– তুমি যে কেমেস্ট্রি প্রাইভেটের কথা বলছিলা। আমি স্যার ম্যানেজ করেছি। তুমি প্রতিদিন আমার বাসায় পড়তে আসবা। (সারা)

প্রেম হাসতে হাসতে বললো,

-তোমার মাথা ঠিক আছে? তোমার ভাই আমাকে দেখলে আস্ত রাখবে? হা-হা-হা। (প্রেম)
-আসলেই তো। আচ্ছা চলো মিট করি। তারপর ভেবে দেখা যাবে।

প্রেম মুচকি হাসলো। সারা বারবার শুধু দেখা করার ছল খুঁজে কেনো বুঝে উঠে না প্রেম। প্রেম বললো,

– আচ্ছা আমি জানাবো। আল্লাহ হাফেজ । (প্রেম)

সাথে সাথেই ফোনটা কেটে দিয়ে প্রেয়সীর হাতে ফোন ধরিয়ে দিলো প্রেম। আমি সন্দিহান দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললাম,

– নতুন নতুন প্রেম শুরু করছিস তাহলে? কি করলাম এই জীবনে? বড় হয়ে ছোট ভাইবোনের প্রেম দেখতে হচ্ছে। অথচ আমি এখনো সিঙ্গেল। (আমি)

কথাটা বলেই ব্রোকেন হার্টের একটা ফিলিংস নিলাম। প্রেম কথা শুনে হো-হা করে হাসলো। অতঃপর বললো,

– আমার প্রেমিকা সিলেক্ট করবে অনলি দ্য প্রেট রশ্নি আপু। হা-হা-হা। তার আগে নো প্রেমিকা। আচ্ছা ভালো কথা, তোমার আর ভাইয়ার বিয়ের কথাও চলছে কিন্তু। খুব তারাতারি বনু থেকে ভাবিতে কনভার্ট হচ্ছো। (প্রেম)

কথাটা শোনা মাত্র আমার হার্টবিট দ্রুত ছুটতে চললো। অজানা আনন্দে মনে খুশির ঠেউ বইতে লাগলো। অবশেষে সেই মানুষটা আমার হতে চলছে। কিন্তু বিয়ে হলে তো আমার জীবনটা তেজপাতা হয়ে যাবে। আবার ওনাকে ছাড়াও থাকতে পারি না। আমার জীবনের সবটা জুড়ে উনি। আমার বিরক্তিতে উনি, আমার আনন্দেও উনি। প্রহরময় এই জীবনে উনাকে ছাড়া আমার একটা প্রহরও কাটে না। আমি লজ্জামাখা কন্ঠে বললাম,

– তোর ভাইকে বিয়ে করার কোনো ইচ্ছাই আমার নেই। (আমি)

– ওকে। তাহলে সোনিয়া আপুই বেস্ট। তাছাড়া সোনিয়া আপু ভাইয়াকে অনেক ভালোবাসে। (প্রেম)

প্রেমের কথাটা শোনামাত্র আমার মেজাজ মহুর্তেই খারাপ হয়ে গেলো। কিন্তু রাগটা প্রকাশ না করে বললাম,

– ভালো। তবে ঐ মেয়েকেই ভাবি বানা। এখানে কি করছিস। ভাগ। (আমি)

– সোনিয়া আপু এতটাই ভাইয়াকে ভালোবাসে যে বারে গিয়ে ড্রিংকস করে আর ছেলেদের সাথে আড্ডা দেয়। ঐ মেয়েকে তো আমি দেখে ছাড়বো। (প্রেম)

– কি বলিস? তুই কেমনে চিনলি সোনিয়াকে? (আমি)

প্রেম বিরক্ত কন্ঠে বললো,

– আরে ভাইয়া যেদিন ওদের বাসায় গিয়েছিলো সেখানে তো আমিও ছিলাম তাইনা? তো চিনবো না কেনো? (প্রেম)

ঠিক তখনি ভেতরের রুম থেকে আওয়াজ আসতে শুরু করলো। আমি আর প্রেম দরজার সামনে গিয়ে যা দেখলাম তাতে আমার মাথার ভীতর পাঁচশো ভোল্টের বাল্ব জ্বলে উঠলো। সোনিয়া আমাদের বাসায়! তাও আবার প্রহরভাইকে জড়িয়ে ধরেছে। ভাগ্যিস সেখানে প্রহরভাই ব্যাতিত অন্য কেউ নাই। প্রহরভাই নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে বললো,

– এটা কোন ধরনের ভদ্রতা সোনিয়া? রশ্নিদের বাসায় তুমি কিভাবে এলে? (প্রহর)

-মনের টান থাকলে অবশ্যই আসা যায়। বাই দ্য ওয়ে, কোথায় রশ্নি? তোমার আদরের বোন বলে কথা। একটু দেখা করতে এলাম। (সোনিয়া)

চলবে?

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here