শুধু তুই পর্বঃ১২

0
1328

#শুধু_তুই
#পর্বঃ১২
#Rifat_Amin

-তোর সাহস দিন দিন বেড়ে যাচ্ছে রশ্নি। এখন তুই তোর বাড়ির সামনে। আর আমার ক্লান্ত শরীর, সবকিছু ধুলোয় মাখামাখি। এমন নোংরা অবস্থায় কেউ জড়িয়ে ধরে? (প্রহর)

প্রহর ভাইয়ের কথায় ওনার কাছ থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নিলাম। লজ্জায় মাথাটা নোয়ানো, উঠানোর সাহসটুকু পাচ্ছি না। প্রহরভাই আবার তার শুকনো গোলাপটা আমার হাতে দিয়ে বললেন,

– রুমের ভীতর চলে যা।

আবার আমার দিকে ক্ষণকাল তাকিয়ে বললেন,

– বাব্বাহ, শাড়িটা পরেছিস তাহলে। তোকে অনেক সুন্দর লাগছে তো। প্রশংসা করেছি বলে আহ্লাদে ভেসে যাস না আবার। শাড়িটা আমার পছন্দের বলেই প্রশংসা করলাম। নাহলে তোর মতো পেত্নিকে কখনো সুন্দর লাগে? এই খুশিতে একটা থ্যাংকস আমাকে দিতেই পারিস। (প্রহর)

আমি নির্লিপ্ত দৃষ্টিতে ওনার দিকে তাকালাম। এই মহুর্তে ঝগড়া করার একদম মুড নেই। তাছাড়া ওনার রেস্ট দরকার। সিলেট থেকে এসে নিজের বাসায় না ঢুকে আমাকে একপলক দেখার জন্য গেটের সামনে দাঁড়িয়ে আছে। এটাই বা কম কি? এই কাজটার জন্যই গত একমাস আমার সাথে যোগাযোগ না করার শাস্তিটা মৌকুফ করে দিলাম৷ একদিকে অদ্ভুত আনন্দে মন ছুঁয়ে যাচ্ছে, আরেকদিকে ওনার শরীরের দিকে তাকিয়ে মন খারাপ হয়ে যাচ্ছে। আমি স্বল্পস্বরে মাথা নোয়ানো অবস্থায় বললাম,

– আপনি বাসায় চলে যান প্রহরভাই। ফ্রেস হয়ে, খাওয়া-দাওয়া করে ফোন দিয়েন। (আমি)

– ব্যালেন্স নাই। তোর মতো বড়লোক না আমি। (প্রহর)

ওনার এই পাগলামোগুলো অসহ্য লাগছে। সোজা কথা সোজা ভাবে নিতে পারেনা। যতক্ষণ না আমি ক্ষেপছি, ততক্ষণ চলতেই থাকবে। আমি যথাসম্ভব ধৈর্য ধারণ করে বললাম,

– থাক, আপনাকে ফোন করতে হবে না। আমি নিজেই করবো। (আমি)

– বাহ! আঙ্কেলের টাকা চুরি করে এখন বড়লোক সাজা হচ্ছে তাইনা? (প্রহর)

– আমি মোটেও চোর নই প্রহরভাই। বাবাকে বললেই টাকা রিচার্জ করে দেয়। আপনি বিশ্বাস না করলে আমার করার কিছুই নেই। থাকেন, আমি চললাম। (আমি)

কপট রাগের সুরে কথাটা বলেই চলে যেতে ধরলাম। গেটের ভীতর পা ঢুকাবো, তার আগেই আমার বাঁ হাতটা টেনে ধরলো কেউ। হেচকা কানে নিজের সাথে মিশিয়ে নিলেন উনি। আমি লম্বায় ওনার বক্ষ সমান। উত্তপ্ত শরীরের মাঝ থেকে উনার মুখশ্রী দেখার চেষ্টা করলাম। প্রধান ফটকের সামনে, ল্যাম্পপোস্টের মসৃণ আলোয় অদ্ভুত মায়াবী ঠেকলো তার সৌন্দর্য। সাথে অনুভব করলাম ভীষণ জ্বর তার। এই জ্বরের শরীরে এখনো বাসায় ঢোকেনি। আমি নিজেকে ছাড়ানোর জোর চেষ্টা লাগালাম। এই জেদী মানুষটার প্রতি রাগ হলো। নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে বললাম,

– আপনার গায়ে ভীষণ জ্বর প্রহরভাই। নিজের খেয়াল রাখতে পারেন না! তারাতারি বাসায় যান প্লিজ৷ (আমি)

– তুই আমার মেডিসিন হয়ে যা সুন্দরী। (প্রহর)

আমি আর কথা বললাম না। উত্তপ্ত হাত ধরে টানতে টানতে নিয়ে গেলাম ওনার বাসার সামনে। মনে হচ্ছে কোনো শক্তি নেই শরীরে। আমি বাসার সামনে ওনাকে দাঁড় করিয়েই নিজের বাসার দিকে দ্রুতপায়ে হাঁটতে লাগলাম। ত্রিশ সেকেন্ডের পথ মাত্র।

—-?️

রাত দশটা বাজতে চললো। প্রেম এখনো বাসায় ফিরেনি। সাব্বিরকে সাথে নিয়ে ওর বাসায় ল্যাপটপের কিবোর্ডে দ্রুত হাত চালিয়ে যাচ্ছে। কিছু ইনফরমেশন দরকার সোনিয়ার সম্পর্কে আর ওর বাবার। ওর বাবার বিষয়টা এতটা জরুরী না। কিন্তু এই সোনিয়া নামের মেয়েটা কেনো প্রহরভাইয়ের পেছনে পরে আছে সেটাই বুঝতে পারছে না প্রেম। সোনিয়ার সাথে একবার দেখা হয়েছিলো প্রেমের। প্রেম মানুষ চিনতে পারে। মেয়েদেরকে একটু বেশীই। ওর সামনে কোনো মেয়ে মিথ্যা বলার সাহস দেখাতে পারবে না। সোনিয়াকে একপলক দেখেই প্রেম বুঝতে পেরেছিলো মেয়েটা অদ্ভুত। সুন্দরী বটে। তবে সুন্দরী মেয়েদের বাইরে থেকে মনের সৌন্দর্য বোঝা কঠিন। প্রেম সাব্বিরের কাঁধে হাত দিয়ে ওর কাজ দেখছে। লোকেশন ট্রেকিং চলছে। এই মহুর্তে সোনিয়া ঠিক কোন যায়গায় সেটা খোঁজার চেষ্টা চলছে। প্রেম বিরক্ত হয়ে বললো,

-আমায় বাসা ফিরতে হবে। তারাতারি কর। (প্রেম)

-তারাতারি বললেই আর হয় না। সময় লাগবে তো নাকি? আমি কি এখানে লিগ্যাল কাজ করছি? অবৈধ কাজ করতে গেলে ধৈর্য লাগে। (সাব্বির)

-হ কর। বাসায় টেক্সট পাঠিয়ে দিচ্ছি আজ ফিরবো না। যদিও আজ ভাইয়া আসার কথা। আসছে কি না কে জানে? (প্রেম)

– হুমম পাঠিয়ে দে। তোর ভাইয়ের সামনে আমায় কখনো নিয়ে যাস প্লিজ। ভয় লাগে প্রচুর। (সাব্বির)

প্রেম মুচকি হেসে বললো,

– ভাইয়াকে চিনলি না তুই। হা-হা-হা (প্রেম)

ঠিক তখনি সাব্বিরের কাজ সমাপ্ত হলো৷ পিসির স্ক্রিনে জ্বলজ্বল করলো ‘সাকসেকফুল’ শব্দটা। সোনিয়ার লোকেশন দেখালো বারের মধ্যে। প্রেমের ঠোঁটে ফুটে উঠলো তৃপ্তির হাসি৷ ঠিক সেটাই ভেবেছিলো, যেটা স্ক্রিনে দেখাচ্ছে। প্রেম বিছানা থেকে কালো জ্যাকেটটা গায়ে দিয়ে বললো,

– জেগে থাকিস। আমি একটু লেট করে ফিরবো। আর আন্টি যেনো কিছু টের না পায়। (প্রেম)

সাব্বির হতাশ স্বরে বললো,

– আমি যাই সাথে? (সাব্বির)

– আমি ওখানে এমন কিছুই করবো না যেখানে তোদের প্রয়োজন। আর লাইফে প্রথম বারে ঢুকবো। অনুভূতিটা নিখুঁতভাবে শুষে নিতে চাই। চিল। (প্রেম)

সাব্বিরের ইচ্ছে হলো আরেকবার জোর করতে। কিন্তু প্রেম ও তার ভাই প্রহর দুজনেই সবসময় নিজের সিদ্ধান্তে অটল। একমুহূর্তের জন্যও পিছু হটে না। প্রেম বাইক চালিয়ে দ্রুত বারের দিকে রওনা দিলো। এখান থেকে ১০ মিনিটের পথ। জ্যাম থাকলে আগামী ১ ঘন্টায় পৌঁছানো যাবে কি না সন্দেহ। তাঁর আগে বাসায় কথা বলে নিলো। প্রেমের আম্মু কখনো এসব পছন্দ করেনা। ছেলের অধঃপতনের সব দোষ প্রহরের উপর চাপিয়ে দেয়।
প্রেম যখন বারে পৌঁছালো, তখন রাত ১০ টা বেজে ৩৭। তেমন রাত হয়নি৷ তবে রাতে অযথা বাইরে থাকা কখনো পছন্দ করে না সে। প্রেম বাইক থেকে নেমেই দেখলো রাফি ঢ্যাংঢ্যাং করে তার সামনে বসে ফোন টিপছে। প্রেম মহাবিরক্ত হলো,

– যার কথায় এসেছিস। তাকে বলে দে এত টেনশন করতে হবে না। আর তুই বাসায় চলে যা। রাত হয়েছে অনেক। পরীক্ষায় সব তো আমার দেখে লেখার ধান্দায় থাকিস। (প্রেম)

রাফির মুখটা মহুর্তেই চুপসে গেলো। পড়ালেখায় সে একটু কাঁচা। সবসময় প্রেমের সাপোর্টে ভালো রেজাল্ট করে । তাই বলে এত অপমান৷
প্রেম বাইক স্টান্ড করে রাফিকে পাত্তা না দিয়ে ভীতরে ঢুকে গেলো। বিভিন্ন আলোকসজ্জায় সজ্জিত বারের চারপাশ। এখানে সবাই এডাল্ট। শুধু প্রেম ছাড়া। তবে তাকে দেখে কখনো ছোট মনে হবে না। বয়স কম হলেও প্রহরের থেকে একটু বেশীই লম্বা আর সুঠাম দেহের অধিকারী সে। প্রেম চারপাশের ভীরে সোনিয়াকে খোঁজার চেষ্টা চালালো। সোনিয়াকে পাশ্চাত্য পোষাকে যখন ড্রিংক করতে দেখা গেলো। তখন তার সামনে গিয়ে ধপাস করে বসে পড়লো প্রেম। মুখ থেকে কালো মাস্কটা খুলে বললো,

– লেট মি ট্রাই ডিয়ার। (প্রেম)

———?️

রাতে ঘুমুতে গিয়ে এপাশ ওপাশ করছি শুধু। কিছুতেই ঘুম আসছে না। বারবার ইচ্ছে করছে প্রহরভাইকে ফোন করতে৷ কিন্তু ফোন করলেই অপমান করবে জানি৷ আমায় অপমান করে তাঁর কি শান্তি বুঝি না। ঠিক তখনি ফোন বাজলো আমার। তড়িৎ বেগে ফোনটা তুলে দেখলাম প্রহরভাই ফোন করেছে। মনে মহুর্তেই রঙ্গিন প্রজাপতি উড়াল দিলো। ফোনটা রিসিভ করে বললাম,

– কি করছেন? (আমি)

– আমি কি করছি সেটা তোকে জানতে হবে? একটা দরকারে ফোন করেছিলাম। (প্রহর)

আমার হাসিখুশি ভাবটা মহুর্তেই হারিয়ে গেলো। মানুষ শুধু দরকারেই খোঁজ রাখে। এইযে স্নেহা মাঝে মাঝে ফোন করে। তাও শুধু প্রহরভাইয়ের খোঁজ নেয়ার জন্য। সবাই স্বার্থপর। আমি স্বাভাবিক স্বরে বললাম,

– কি দরকার? (আমি)

– প্রেম যে আজ বাসায় ফিরবে না। এই বিষয়ে তোকে কিছু জানিয়েছে? (প্রহর)

– না তো। কেনো? ও এখন কোথায়? (আমি)

– বললো তো ওর বন্ধুর বাসায়। তবে ওকে আমি ভালো করে চিনি। কোনো ঘাপলা তো নিশ্চই আছে। (প্রহর)

– আমি ফোন করবো পরে। আপনার জ্বর কমেছে? (আমি)

– জ্বরের ইচ্ছে হলে যাবে, নাহলে যাবে না। তাতে আমার যায় আসে না কিছু। ওকে? আচ্ছা থাক। আমার ব্যালেন্স ফুরিয়ে যাচ্ছে। (প্রহর)

প্রহরভাই ফোন কেটে দিলেন৷ আমার খারাপ লাগলো অনেক। একটু কথা বলতেও এত বিরক্তি উনার। কখন কি হয় বুঝি না আমি। একবার রোমান্টিক তো একবার কঠোর৷ তাঁর ভাইটাও হয়েছে তেমন৷ একবার হিমু হয় তো একবার মিসির আলি। এদের ঠিক বুঝি না আমি। ঠিক তখনি আমার ফোনে মেসেজ এলো। ” belknir drja khl, Ami driye asi! ” সাথে সাথেই মনটা ফুরফুরে হলো৷ আবার ভয় হলো এই ভেবে যে, রাত এখন এগারোটা। এই রাতে ওনার আগমনটা ঠিক মানায় না। তবুও কাঁপা কাঁপা হাতে দরজাটা খুললাম আমি৷ দরজা খোলার সাথে সাথেই চমকে উঠলাম। দরজার সামনে একটা কিউট টেডি। তার সামনে মরিচা বাতি দিয়ে বেলকনির গ্রিলে লেখা ” I LOVE YOU ” । তবে রাস্তা থেকে সেটা কেউ চাইনিজ ভাষা হিসেবেই চিনবে। প্রহরভাইয়ের পাগলামোতে আমার ঠোঁটে ফুটে উঠলো তৃপ্তির হাসি। তবে ব্যালকনির দরজাটা ভালোভাবে লাগিয়ে দিতে হবে। ওনার সবসময় আগমন দৃষ্টিকটু।

চলবে?

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here