শুধু তুই পর্বঃ০২

0
2014

#শুধু_তুই
#পর্বঃ০২ ও ০৩
#Rifat_Amin

প্রেম ফোন কাটার পর ভয়ে এখনো রুম থেকেই বের হইনি আমি। জানি না আমার ভাগ্যে আজ কি লেখা আছে। হঠাৎ ফোন বেজে উঠায় ধ্যান ভাঙ্গলো আমার। স্ক্রিনে একটা অপরিচিত নাম্বার। প্রথম দফায় না ধরলেও দ্বিতীয়বার ঠিক ধরে নিলাম। ফোনটা কানে নিতেই ওপাশ থেকে গম্ভীর কন্ঠে কেউ বললো,

– আপনাকে ছাদে আনার জন্য কি উচ্চআদালতে আপিল করতে হবে? নাকি একায় আসতে পারবেন? (প্রহর)

কথাটা শোনা মাত্র আমার কলিজায় যেটুকু পানি ছিলো তাও ফুস করে উড়ে গেলো। কিন্তু ভাবলাম নাহহ! এভাবে আর কত? এর জবাব আমি দিয়েই ছাড়বো। কোনোমতে কন্ঠ শক্ত করে বলেই দিলাম,

– আপনি কে হু! আপনার কথা আমাকে শুনতে হবে? আমি ছাদে যাবো না মানে যাবে না। আপনি কি আমার স্বাধীনতা টুকু কেরে নিতে চান?ননসেন্স ! (আমি)

– বাব্বাহ। মহারাণীর কন্ঠে এত তেজ? তো এখন উপরে আসবেন নাকি আমি গিয়ে টেনে উপরে তুলবো? (প্রহর)

অত্যন্ত গম্ভীর কন্ঠে কথাটা বললেন প্রহরভাই। উনার এমন কন্ঠ মানে সামনে আগত বিপদ। মংলা বন্দরে ১০ নম্বর হুশিয়ারি সংকেত। যেকোনো মহুর্তে সাইক্লোন আঘাত হানতে পারে এমন অবস্থা।

– তোর সময় শেষ। আমি তোর রুমের সামনে আসছি। ফোন কেটে দরজা খোল। নাহলে কিন্তু আন্টিকে সব বলে দিবো। এখনো কিছু বলি নাই। (প্রহর)

কথাটা বলার আগেই বোধহয় উনি ফোন কাটলেন আর দরজায় ঠকঠক করে করে দুটো আওয়াজ হলো। হায়রে! এমন কথা না বললেও পারতাম। এখন আমাকে কে বাঁচাবে আল্লাহ। তোমার কাছে বিচার দিলাম। আমি দরজার সামনে গিয়ে দরজা খুলবো না খুলবো না করেও খুলে দিলাম। খুলে দিয়েই চোখ বন্ধ করে গালে দুহাত দিয়ে দিলাম। যাতে থাপ্পড় মারলেও কিছুটা প্রোটেক্ট করা যায়। দরজা খোলার পরেও যখন দেখলাম কোনো সারা শব্দ নেই তখন চোখ খুললাম। সামনে তাকিয়ে দেখলাম আমার মা জননী খুনতি হাতে নিয়ে আমার দিকে অগ্নিদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। তৎক্ষণাৎ আমার কলিজায় পানি ফিরে এলো। কিন্তু মায়ের হাভভাব তো ভালো ঠেকছে না,

– তোর লজ্জা করে না রশ্নি? বিরিয়ানি খেতে চাস আমাকে বললেই তো বানিয়ে দিতাম। তুই কিনা বাবুকে বলছিস বাজার থেকে বিরিয়ানি এনে দিতে। ঐ, বাবু কি তোর চাকর? তোর মতো কি বসে বসে খায়? ও সারাদিন পরাশোনা করে। সেই পড়াশোনা করা বাদ দিয়ে তোর জন্য বিরিয়ানি এনেছে। আর তুই নাকি এখন ভং ধরে আছিস? দরজা খোলার নাম গন্ধ নাই। মানে নিজেকে কি তোর আমেরিকার প্রেসিডেন্ট মনে হয়? গিয়ে দেখ ড্রইংরুমে তোর জন্য অপেক্ষা করে আছে বাবু। ছেলেটাকে দেখেই আমার খারাপ লাগছে। না জানি এই সঁন্ধ্যে বেলায় কত কষ্ট করে তোর জন্য বিরিয়ানি এনেছে আর তু……. (রাহেনা বেগম)

– আম্মি স্টপ। হোয়াট ননসেন্স ইউ টকিং এবাউট (আমি)

আম্মির বকবক শুনে নিজেকে পাগল পাগল লাগছে। না জানি এই প্রহর খাটাসটা কি কি বলে আম্মিকে হাত করে নেয়। অসহ্য! এদিকে আম্মিকে থামাতে ফট করে ইংলিশ বলে দিলাম। কিন্তু পরিস্থিতিটা আরো খারাপ হয়ে গেলো। আম্মি আমার ইংলিশ শুনে তেলেবেগুনে জ্বলে উঠলেন। চেঁচিয়ে বললেন,

– তোর সাহস দিন দিন বেড়ে যাচ্ছে রশ্নি। মুখে লাগাম দে। আবার ভুলভাল ইংলিশ বলছিস! (রাহেনা)

এদিকে আম্মির ভুবন কাঁপানো চিৎকারে ড্রইংরুম থেকে এদিকে আসলেন প্রহর ভাই। আমাকে দেখেই একটা ডেভিলমার্কা হাসি দিলেন। ভাবটা এমন যেনো বাংলা সিনেমার মিশা সওদাগর। অবশ্য দেখতে পুরো হিরোদের মতো। উনাকে দেখলেই বারবার ক্রাশ খাই। কিন্তু উনার যা চরিত্র। ভাবলেও বমি পায় আমার। ইয়াক!
উনি সামনে এসেই আম্মিকে জড়িয়ে ধরলেন। ওমা! যা দেখে আমার চোখ কপালে উঠার জোগার,

– “আহ আন্টি। বাদ দেন তো। ছোট মানুষ, বুঝে কম। সমস্যা নেই, আর আপনার মুখটা এমন শুকনা লাগছে কেন? খাওয়া দাওয়া নিশ্চই করেন না। এটা কিন্তু কোনোভাবেই মানতে পারছি না আন্টি। এর পর থেকে এমন দেখলে কিন্তু কথাই বলবো না আপনার সাথে। ”

মানুষ কতটা নাটক করতে পারে তা নিজের চোখের সম্মুখে দেখতে পেলাম। আজই আন্টিকে বলতে হবে যাতে ছেলেকে ওয়েব সিরিজ করতে দেওয়া হয়। খুব তারাতারি সেলিব্রেটি হয়ে যেতে পারে। তা না করে কষ্ট করে ইন্জিনিয়ারিং পড়াচ্ছে। প্রহরভাইয়ের থেকে মিষ্টি কথা শুনে আমার সদ্য তেলেবেগুনে জ্বলে উঠা আম্মাজান মিইয়ে গেলেন। মুখে ফুটে উঠলো তৃপ্তির হাসি। আম্মি মুখে হাসি রেখে বললেন,

– কই বাবু? আমি তো ঠিক আছি।

কথাটা বলেই প্রহরভাইয়ের মাথার চুলগুলো একটু ঢং করে ঠিক করে দিলেন। এ্যা, ন্যাকামো দেখলে মরে যাই। আমার দিকে আবারো ধারালো দৃষ্টি নিক্ষেপ করে আম্মি বললো,

– দেখেন, শেখেন কিছু। জীবনে তো আমার দিকে তাকালি না। অবশ্য কাকে বলছি, যে নিজের খেয়াল রাখতে জানে না। সে নাকি রাখবে আমার খেয়াল।

প্রহরভাই আম্মিকে বললেন,

– চলেন ছাদে যাই আন্টি। ওখানে প্রেম বিরিয়ানির ব্যাবস্থা করেছে। একসাথে খাবো। (প্রহর)

– প্রেম ব্যাবস্থা করেছে মানে। তুমি করোনি? (আম্মি)

আম্মির কথা শুনে প্রহরভাইয়ের কাশি উঠে গেলো। কোনোমতে বললো,

– আরে আমিই তো সব ব্যাবস্থা করেছি। এখন প্রেম ওগুলা সার্ভ করছে। ঐশী আর প্রেয়সী ছাদে চলে গেছে, চলেন ছাদে যাই। (প্রহর)

– না না। থাক বাবু। আরেকদিন খাবো। অতঃপর আমার দিকে দৃষ্টি রেখে বললেন, এই অসহ্য মেয়েটাকেও নিয়ে যাও। (আম্মি)

আম্মির কথা শুনে প্রহরভাই স্বল্পস্বরে বললো,

– তার জন্যই আসা (প্রহর)

– আপনি কিছু বললেন প্রহরভাই। আরেক বলুন শুনি (আমি)

– চুপচাপ আমার পিছু আয়। প্রহর এককথা দুইবার বলে না। আই থিংক, ইউ নো দ্যাট। (প্রহর)

প্রহরভাই আমাকে নিয়ে ছাদে এলেন। প্রহরভাইয়ের বাড়িটা আমাদের বাড়ির পাশে হলেও ছাদটা এজাস্ট করা। একদম এজাস্ট নয়। একটা মই আছে। যেটা দিয়ে যাওয়া যায় সহজেই। ছাদটা এখন রঙ্গিন আলোকসজ্জায় সজ্জিত। চারপাশে তাকিয়ে দেখলাম একটা টেবিলের উপর বিরিয়ানির ব্যাবস্থা করা হয়েছে। ওখানে বিরিয়ানির কয়েকটা প্যাকেট। যা দেখে আমার জিভে মোটামুটি জল চলে এলো। কিন্তু না! প্রহরভাইয়ের সামনে বিরিয়ানির দিকে এভাবে একদম তাকানো যাবে না। দেখলাম প্রেম প্রেয়সীকে পিঠে নিয়ে দৌড়াদৌড়ি করছে। আর ঐশী ছাদের এক কোণে দোলনায় বসে ফোন টিপছে। কিছুদিন ধরে ওর আচরণ সন্দেহজনক। বেচারা আগে সবকিছু শেয়ার করতো আমার সাথে, অথচ এখন কেমন একা একা থাকে। মাঝে মাঝে হুটহাট হেসে দেয়। ভূতে ধরে কিনা কে জানে। আমাকে এমন নিশ্চুপ থাকতে দেখে প্রহরভাই বললেন,

– দেখ তোর বোন কত সুন্দর লুকিয়ে প্রেম করছে। কি করলি জীবনে? (প্রহর)

– আমারও তো ইচ্ছে হয় প্রহরভাই। কিন্তু আপনার মতো সিসিটিভি থাকলে সেটা কি সম্ভব হয়? যে কয়টা ছেলে পিছনে ঘুরে, দুদিন পর দেখি সেটাও উধাও। আমার সব বান্ধুবীরা প্রেম করে। শুধু আমি করিনা। মাঝে মাঝে ইচ্ছে হয় বৃন্দাবন ঘুরে আসি।

অত্যন্ত দুঃখী ভাব নিয়ে কথাটা বললাম। কিন্তু কথা বলার পর বুঝতে পেলাম ভুল যায়গায় ভুল কথা বলে ফেলেছি। প্রহরভাই কন্ঠ গম্ভীর করে বললেন,

– বৃন্দাবনের টিকেট কেটে দেই?

আমি ওনার কন্ঠে থতমত খেয়ে বললাম,

– “আমি তো এমনিই বললাম প্রহরভাই। সিরিয়াসলি নেয়ার কি আছে?”
মাথাটা হঠাৎ একটু ঘুরতে শুরু করলো। এভাবে হঠাৎ মাথা ঘুরানোর কারণটা ঠিক খুজে পেলাম না। আমি খানিক্ষণ নিশ্চুপ থেকে একটা দুঃসাহসিক কাজ করে ফেললাম। বললাম,

– আপনি অনেক সুন্দর প্রহরভাই। আই মিন একদম সুদর্শন পুরুষ।

প্রহরভাই একটু ভাব নিয়ে বললেন,

– সে আর বলতে ? তোর মাথায় সুবুদ্ধি গজালো তাহলে। ভালো!ভালো!

– আপনার গার্লফ্রেন্ড আছে প্রহরভাই? সে কি অনেক সুন্দর? আমার থেকেও সুন্দর? আপনি এমন সুন্দর কেনো প্রহরভাই? আপনাকে দেখে আমার সব বান্ধুবীরা ফিট খেয়ে যায়।

প্রহরভাই আমার দিকে সুক্ষ্মদৃষ্টি ফেললেন। ভীতস্বরে বললেন,

-তুই কিছু খেয়েছিস রশ্নি? ওহহহ! সিট! একটু আগে যেটা খেয়েছিস ওটা তো পানি ছিলো না। ওটা বিয়ার ছিলো। সর্বনাশ!

– বিয়ার কি প্রহরভাই? আপনার খোঁচা খোঁচা দাঁড়িগুলো খুবই সুন্দর। আপনাকে সুন্দর মানায়।

– কিছুনা, চল তোকে রুমে দিয়ে আসি।

– আপনি আমায় কোলে করে নিয়ে যান প্রহরভাই। আমার মাথা ঘুরছে।

একটু আগে হঠাৎ পানির পিপাসা পেয়েছিলো। প্রহরভাইয়ের পকেটে পানির বোতল দেখতে পেয়ে খপ করে নিয়ে খেয়ে ফেলি। প্রহরভাইও অন্যমনস্ক ছিলো। যার দরুণ মানা করতে পারেনি। প্রহরভাই প্রেমকে ডাকলেন। প্রহরভাই এসে বললো,

– তোর বোন বিয়ার খাইছে। আমার পকেটে ছিলো। এখন আলতু ফালতু বকছে। ওকে একটু রুমে দিয়ে আয়। আন্টি কিছু বললে বলবি এমনি মাথা ঘুরছে।

– তোমার বোন হয়না ভাইয়া? এমনভাবে বলছো যেনো তোমার বউ, আর আমি তোমার শালা।

– মারবো একটা থাপ্পর। যা করতে বলছি তা কর।

আমি ওদের কথা শুনে মনে হয় শুন্যে ভাসছি। মাথাটা ভোঁ ভোঁ করছে শুধু। প্রেম বললো,

– আমি তো কোলে নিতে পারবো না ভাইয়া। ওজন আছে তো। আবার না ফেলে দেই!

– ওলে ওলে। মাস্তানি করার সময় তো ভালোই পারো। এখন ওজন তাইনা? ভাগ এখান থেকে। আর আজকের ছেলেটাকে হাসপাতালে ভর্তি করার ব্যাবস্থা কর।

– আচ্ছা ভাইয়া।

শেষমেষ প্রহরভাই আমাকে কোলে নিলেন। এখানকার সব কথা আমার মাথার ৩৫ কিলোমিটার উপর দিয়ে চলে গেছে। যাই হোক, উনি আমাকে নিয়ে আমার বেডরুমে আসলেন। রুমের ভীতর এসে আমাকে বিছানায় রাখলেন। যখন দরজাটা ভীতর থেকে বন্ধ করলেন তখন আমার মাথার টনক নড়লো। কিন্তু মাথাটা ভার হয়ে থাকায় তেমন রিয়েকশন দেখাতে পারলাম না। উনি আমার দিকে দরজাটা বন্ধ করেই আমার দিকে এগিয়ে আসলেন। আমার দিকে ঝুঁকে বললেন,

– আমি সুন্দর তাইনা? কেমন সুন্দর বলতো?

– আপনি সুন্দর প্রহরভাই।

– আমি জানি আমি সুন্দর। আর কয়বার বলবি? আচ্ছা আমি তোর কোন জন্মের ভাই বলতো?

শক্তকন্ঠে কথাটা বললেন প্রহরভাই। আমি ভ্যাবলার মতো উনার সুশ্রী মুখের দিকে তাকিয়ে রইলাম। ক্লান্ত কন্ঠে বললাম,

– আম্মি তো এটাই বলতে বলেছে প্রহরভাই। আপনি অনেক সুন্দর।

– আচ্ছা ঘুমা। আমি যাই।

গায়ে একটা কম্বল মুড়ে দিয়ে বেলকণির দরজা দিয়ে কেটে পরলেন উনি। অথচ দরজা ভীতর থেকে বন্ধ।

চলবে?

#শুধু_তুই
#পর্বঃ০৩
#Rifat_Amin

পরদিন নবাগত ভোরের মিষ্টি সুর্য কিরণে নিদ্রা কাটলো আমার। আজকাল অবশ্য পাখির কিচিরমিচির ডাক শোনা যায়না। তাও আবার এই শহুরে জীবনে!
ঘুম থেকে উঠেই ফ্রেশ হয়ে নিলাম। কাল প্রহরভাইয়ের সাথে ছাদে যাবার পর ঠিক কি হয়েছিলো মনে করতে পারছি না। আর আমি ছাদ থেকে নিজের রুমেই বা এলাম কি করে? অদ্ভুত চিন্তাভাবনায় মাথায় তালগোল পাকিয়ে যাচ্ছে।
ফ্রেশ হয়ে নাস্তা করতে চলে এলাম। ডাইনিংয়ে আসবো এমন সময় বিয়ে শব্দটা শুনেই থমকে দাঁড়ালাম। বাবা-মা নাস্তার টেবিলে বসে কার এমন বিয়ের আলোচনা করছে? কোনো চিন্তাভাবনা না করে, রাজরাণীর বেশে ডাইনিংয়ে চেয়ার নিয়ে বসে পড়লাম। আব্বুর দিকে তাকিয়ে বললাম,

– কার বিয়ের আলোচনা করছো আব্বু?

আমার কথা শুনেই একগাল হেসে ফেললেন আব্বু। এটা সবসময়ই হয়। কিন্তু আম্মি আমার দিকে সন্দেহের দৃষ্টিতে তাকালেন,

-কেনো? তোমারো কি বিয়ের শখ জাগে নাকি?

আব্বু আম্মুর দিকে বিরক্ত হয়ে বললেন,

– ওর সব কথা এমন নেগেটিভলি নাও কেনো রাহেনা? (আব্বু)

– তোমার লাই পেয়ে পেয়ে মেয়েটা রসাতলে যাচ্ছে। আবার বলো নেগেটিভলি নিবো না? (আম্মু)

আমি তখন নীরব শ্রোতা। নাস্তার টেবিল থেকে নাস্তা না নিয়ে কাটাচামুচ দিয়ে দাঁত গুতাচ্ছি। আব্বু আমার দিকে দৃষ্টি রেখে বললেন,

– ঐশীর জন্য একটা ভালো পাত্র পেয়েছি রশ্নি ৷ এত তারাতারি ওর বিয়ে দেয়ার ইচ্ছে অবশ্য ছিলো না আমার। কিন্তু ওকে যখন বললাম তখন রাজি হয়ে গেলো। আমারো ছেলেটাকে অনেক পছন্দ হয়েছে।

আমি সন্দিহান দৃষ্টিতে তাকালাম। হতাশ কন্ঠে বললাম,

– সরাসরি রাজি হয়ে গেলো ঐশী?

– না তো। বললো তোমরা যা ভালো বুঝো।

আমি আব্বুর কথা শুনেই চেয়ার ছেড়ে দৌড় লাগালাম ঐশীর রুমে। এই মেয়ে আমারে কিছুই বলে নাই এতদিন। কাল প্রহরভাইয়ের বলা কথাটাই তাহলে কি ঠিক ছিলো? আমি ওর রুমের সামনে গিয়ে দরজায় থাপ্রানি মরলাম জোড়েসোড়ে। গলার আওয়াজ মাইকের মতো বাড়িয়ে বললাম,

– ঐ শয়তান। দরজা খোল তারাতারি। আজন্মের মতো বিয়ে করার শখ মিটাই দেবো তোর। আমাকে না বলে তলে তলে টেম্পু চালিয়েছো এতদিন? খুলবি কি না দরজা?

—–

হসপিটালের করিডোরে হাতে ফোন নিয়ে চেয়ারে বসে আছে প্রেম। এলোমেলো কোঁকড়া চুলগুলো সামনের দিকে কিছুটা ঝুঁকে আছে। ফর্সা ত্বকে লালাভ আভা। বয়সটা আর কত হবে? সদ্য ১৭ এ পা দিয়েছে। এসএসসিটাও এবার দেয়া হতো। কিন্তু করোনার কারণে ডেটটা পিছিয়ে গেলো। এই সামান্য দূধের বয়সে এমন কোনো কাজ নেই যে সে করেনি। মারামারি থেকে শুরু করে ক্ষুদে রাজনৈতিক দলে নাম লিখিয়েছে। কিন্তু ভালো দিকটা হলো কখনো কোনো মেয়ের প্রতি প্রেম ইন্টারেস্ট দেখায়নি। আর সবকিছুতেই সাপোর্ট করেছে তার প্রহরভাই। তার ধারণা মানুষের যে শখই থাকুক না কেনো। তাকে সেটা পূরণ করতে দেয়া উচিত। সে খারাপ হলেও অন্তত মনের শান্তিটা অটুট থাকে। কিন্তু সবার আগে পড়াশোনাটা ঠিকভাবে চালিয়ে যেতে হবে। এটাই একমাত্র প্যারা।

– এক্সকিউজ মি ভাইয়া। আপনি কি প্রেম?

প্রেম ফোন থেকে দৃষ্টি সড়িয়ে সামনের আগন্তুকের দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করলো। একটা সুন্দরী মেয়ে। মনে হয় সেম এজ হবে। অবশ্য সুন্দরী রমণীদের বয়স মাপা যায় না।

– জি আপু। আমিই প্রেম। কিছু বলবেন? (প্রেম)

– আমার ভাইকে গাঁধার মতো মেরে আবার হসপিটালে ভর্তি করালেন। আপনার কি মনে হচ্ছে না আপনি বাড়াবাড়ি করছেন? (মেয়েটা)

– মনে হয় নি কখনো। আর আপনি কি আপনার ভাইকে ইনডিরেক্টলি গাঁধা বলছেন? অবশ্য সদা সত্য কথা বলা মহৎ গুন। এই টাইপের মানুষদের আমি একটু বেশীই পছন্দ করি। (প্রেম)

– আসলে বাবা-মা সঠিক শিক্ষা না দিলে যা হয়। এতে আপনার কোনো দোষ নেই। (মেয়েটা)

বাবা-মায়ের প্রসঙ্গ আসতেই হঠাৎ করে মেজাজটা খারাপ হয়ে গেলো প্রেমের। মেয়েটার সাহস দেখে ক্রোধে রীতিমতো কাঁপছে প্রেম। এখানে মেয়ে না হয়ে যদি ছেলে হতো তাহলে একটা মাইরও মাটিতে পরতো না৷ প্রেম কোনো কথা না বলে হরহর করে হাসপাতাল থেকে বেড়িয়ে বাইক স্টার্ট করলো। বেশী কথা বলা একদম অপছন্দ তাঁর।

—–

-তুই এতটা খারাপ আমি জানতাম না ঐশী। তুই কিনা আমাকে না জানিয়েই বিয়েতে মত দিয়ে দিলি। লুকিয়ে লুকিয়ে প্রেম করেছিস ভালো কথা। আমাকে অন্তত জানাতি। (আমি)

এতক্ষণ রাগের ফুলকি উড়লেও হঠাৎ করে মনটা খারাপ হয়ে গেলো আমার। আমার নিজের বোন, অথচ এত সিরিয়াস একটা বিষয় জানালো না। ঐশী সদ্য ঘুম থেকে উঠে বারবার হাই তুলতে তুলতে বললো,

– আমি মোটেও লুকিয়ে লুকিয়ে প্রেম করিনি রশ্নি। তুই বোধহয় জানিস না আমি কতটা ভালো মেয়ে। আব্বুর নাকি ছেলেটাকে অনেক পছন্দ হয়েছে। তাই আমিও হ্যাঁ করে দিলাম। আমি আসলে বাবাকে কষ্ট দিতে চাইনি। (ঐশী)

-তুই আবারো মিথ্যা বলছিস শয়তানের নানী। তোর সাথে আর কথাই বলবো না। তোর বিয়েতেও এটেন্ড করবো না। (আমি)

এমন সময় রুমের ভীতর প্রবেশ করলো পিচ্চু প্রিয়সী৷ হাতে আচারের বয়াম। যা দেখে কালকের বিরিয়ানির কথা মনে পড়লো। কাল যে ছাদে গেলাম বিরিয়ানি খাওয়ার জন্য, কিছুই তো মনে করতে পারছি না। প্রেয়সী তার মিষ্টি কন্ঠে বললো,

– দাভাইয়ের আন্টি তোমাকে ডাকে? (প্রেয়সী)

– দাভাইয়ের আন্টি কিরে? (আমি)

-উফফ তুমি বুঝো না কেনো? বলছি যে দাভাইয়ের আম্মু মানে আমার আন্টি ডাকে তোমাকে। তোমার জন্য নাকি বিরিয়ানি রান্না করতেছে৷ আমাকে ডাকতে বললো। (প্রেয়সী)

বিরিয়ানির নাম শুনে আরেকদফা মনটা ভালো হয়ে গেলো। তারাতারি যেতে হবে। কিন্তু সমস্যাটা হলো প্রহর খাটাশটা ওখানে আছে কি না। আবার প্রেয়সীর দিকে সন্দিহান দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললাম,

– আচারের বয়ামটাও কি আন্টি দিয়েছে তোকে? (আমি)
-হু (প্রেয়সী)
-আমাকে দে (আমি)
-না দিবো না। তুমি গিয়ে নিয়ে আসো। তোমার জন্যও আছে। (প্রেয়সী)

আমাদের ফালতু মার্কা কথাবার্তা শুনে ক্ষেপে গেলো ঐশী। রাগান্বিত স্বরে বললো,

-আমাকে একটু ঘুমাতে দিবি তোরা? রুম থেকে বিদায় হ দুজন প্লিজ। (ঐশী)

– সারারাত প্রেম করে রাত কাবার করলে এখন তো ঘুম পাবেই মহারাণী। চল প্রেয়সী আমরা বিরিয়ানি খেতে যাই। (আমি)

ঐশীর রুম থেকে বেড়িয়ে প্রহরভাইয়ের বাসা যাবো এমন সময় মনে হলো এই পোশাকে তো যাওয়া যাবে না। আর যাই হোক, দুনিয়ার সব মানুষের কাছে আমি অপদার্থ হলেও একমাত্র আন্টি আর আমার আব্বুর কাছে আমি রাজকন্যা। আর প্রহর খাটাশের সামনে এমন পোশাকে দাঁড়ালে নিশ্চই খ্যাপাবে।
অতঃপর নিজের রুমে এসে একটা হুডি পড়ে নিলাম। ঠান্ডা ভালোই পড়েছে। শরীরে একটা শাল জড়িয়ে নিলাম। ব্যাচ! সবকিছু বোধহয় কমপ্লিট।
প্রহর ভাইয়ের বাসার সামনে এসে কলিংবেল চাপার কিছুক্ষণ পর দরজা খুলে দিলেন আন্টি। আমাকে দেখেই খুশিতে আত্মহারা একদম। আমি মাঝেমাঝে ভাবি, আমার মধ্যে এমন কি আছে যার কারণে উনি এত পছন্দ করে আমায়? মাঝে মাঝে এই ভেবে হতাশ হই যে আনার মা জননী সেটা৷ কেনো বুঝেনা।

-তুই তো আমার একটুও খোঁজ রাখিস না রশ্নি মা। আজ না ডাকলে বোধহয় তাও আসতি না। (প্রহরের আম্মু তাহমিনা চৌধুরী)

– তা কেনো হবে আন্টি? একটু বিজি ছিলাম হয়তো। এখন থেকে একটু বেশী বেশী আসবো দেখিও। (আমি)

এদিকে প্রিয়সী আমাদের কথায় কান না দিয়ে মনোযোগ দিয়ে আচার খাচ্ছে। ওরে বইন। আমারো তো খেতে ইচ্ছে করছে। লোভ দেখাচ্ছিস কেন আন্টির সামনে? আন্টি বললেন,

– তোমরা বসো। আমি আসছি চা নিয়ে। (আন্টি)
-আচ্ছা আন্টি (আমি)

আন্টি চলে যাবার পর ভাবলাম একটু প্রহরভাইয়ের রুম থেকে ঘুরে আসা যাক। উনি কি করছেন সেটাও জানা হয়ে যাবে। প্রেয়সীর দিকে তাকিয়ে বললাম,

-শোন, আন্টি আসলে বলবি একটু ওয়াশরুমে গেছে আপু। ঠিক আছে? (আমি)
-হু (প্রেয়সী)

প্রহরভাইয়ের দরজার সামনে এসে একবার উঁকি দিলাম ভীতরে। নাহ! কেউতো নেই। ভালোই হলো। আমি ভীতরে ঢুকেই উনার বেডে বসে পড়লাম। রুমটা অনেক সুন্দর। ছেলেদের রুম থাকবে অগোছালো, তা না এত দেখছি একদম ঝকঝকে। মনে হয় খুবই যত্ন নেয় সবকিছুর। আমি লাস্ট কবে নিজের মশারি টাঙ্গাইছি আল্লাহ মালুম। উনার পড়ার টেবিলে গিয়ে দেখলাম কিছু আঁকিবুঁকি করা। ইন্জিনিয়ার বলে কথা। আবার পড়ার টেবিলের সামনে ডেইলি দিনের রুটিন। বাব্বাহ! সেখানে শুরতেই লেখা ঘুম থেকে উঠার সময় ভোর ৫ টা। ওহহ আই খাট। এত তারতারি! এই ঠান্ডায়ও কি উনি উঠে? এমন সময় খট করে ওয়াশরুমের দরজা খুলে যাওয়ায় ভয়ে হাত-পা ঠান্ডা হয়ে যাওয়ার জোগাড় হলো আমার। সেই রুম থেকে যখন সদ্য গোসল করা প্রহরভাই তোয়ালে পেঁচিয়ে বেড়িয়ে আসলো তখন ভয়ে, লজ্জায় চোখ বন্ধ করে দিলাম এক চিৎকার,,,

– আম্মিইইইইইই! (আমি)

-ঐ আস্তে চিললা। কানের পর্দা ফাটিয়ে ফেললি একদম। (প্রহরভাই)

আমি দুহাত দিয়ে চোখ বন্ধ করে বললাম,

-আপনার লজ্জা লাগছে না প্রহরভাই? (আমি)

-না তো। আগে বল তোর যদি এতই লজ্জা থাকতো তাহলে নির্লজ্জের মতো আমার রুমে আসলি কেনো? (প্রহরভাই)

আমার নরমাল মস্তিষ্ক উনার সুতীক্ষ্ম অপমান স্ক্যান করতে পারলো না। বেহায়া মনটা ভাবলো একবার দেখি কেমন লাগছে উনাকে? যেই ভাবা সেই কাজ। উনার দিকে তাকিয়ে দেখলাম ফর্সা সুঠাম বক্ষে এখনো ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র পানি জমে আছে৷ চুলগুলো ভিজা, আর সেখান থেকে গড়িয়ে পড়ছে ফোঁটা ফোঁটা জল। যা উনাকে আরো বেশী সুন্দর আর মোহনীয় করে তুলছে। মানুষ এতটা সুন্দর কেমনে হয়? লোকে বলে সুন্দর মানুষদের চরিত্রটি ভালো হয় না। প্রহরভাই তার প্রমাণ।
এমন সময় সেখানে হঠাৎ উপস্থিত হলো প্রেয়সী।

– তোমরা কি ইটিসপিটিস করছো দাভাই? (প্রেয়সী)

– না সোনা। তবে অতিশীঘ্রই করবো। (প্রহরভাই)

-আচ্ছা! অতিছিগরই কি দাভাই? (প্রেয়সী)

দুজনের কথোপকথনে ভ্যাবলার মতো তাকিয়ে রইলাম আমি।

চলবে?

( পাঠকরা একটু কষ্ট করে কমেন্টে সাড়া দিন।)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here