শাপলার মৃত্যু পর্ব ৫

0
248

#শাপলার_মৃত্যু (৫)

পরের দিন হোসেনের বড় ভাই মোমেনের বাড়ির সামনে পুলিশের গাড়ি এসে থামল। মোমেন অবাক দৃষ্টি মেলে তাকিয়ে আছে। তার অবাক হওয়ার কারণ বাড়ির সামনে পুলিশের গাড়ি এসে থামা নয়। তার অবাক হওয়ার কারণ পুলিশের জীপ থেকে একজন মহিলা নেমে এসেছে। মোমেনের নিকট মেয়ে মানুষের সংজ্ঞা মানে সে ‘হেঁসেল ঠেলবে’ জাতীয়।
এসব কেস কাসারির সমস্যা কেন দেখবে? এজন্যই মেয়ে মানুষদের উচ্চশিক্ষিত হওয়া উচিত না। এতে লাভের চেয়ে ক্ষতি বেশি হয়। খবরদারি শুরু করে। এজাতীয় মহিলাদের জন্যই দেশে ডিভোর্সের সংখ্যা এত বেশি।
নিরূপমা মোমেনের সামনে গিয়ে দাঁড়াতেই সে জাফরের দিকে তাঁকিয়ে সালাম জানাল।

‘স্লামালিকুম স্যার!’

‘ওয়া আলাইকুমুস সালাম’

‘ ওই কেরা কনে আছস? স্যাররে বসার ব্যবস্থা কইরা দে’

উঠোনে একটা চেয়ার ফেলা হল।

জাফর নিরূপমার দিকে তাঁকিয়ে ব্যস্ত হয়ে বলল,

ম্যাডাম আপনি বসুন।

মোমেন একটু ইতস্তত করে বলল,
ইয়ে মানে স্যার, আপনি দাঁড়িয়ে মহিলা মানুষকে বসতে দিলেন যে!

জাফর ধমক দিয়ে বলল,
মহিলা মানুষকে বসতে দিলাম মানে! আপনি চিনেন উনি কে? আপনার ভাতিজি মানে শাপলা মার্ডার কেসের প্রধান ইনভেস্টিগেটিং অফিসার। কথা না বাড়িয়ে আরেকটা চেয়ারের ব্যবস্থা করেন জলদি।

ধমক খেয়ে মোমেন চুপসে গেলো। সে দ্রুত আরেকটি চেয়ারের ব্যবস্থা করল। এবার নিরূপমা তার জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করল।

‘ভালো আছেন মোমেন সাহেব?’

অনিচ্ছা সত্ত্বেও মোমেন বিরস মুখে উত্তর দিল।

‘জি।’

আপনার ভাতিজিকে কোথায় মৃত অবস্থায় পাওয়া গেছে তা অবশ্যই জানেন?

জি।

কি মনে হয়, কে করেছে এই কাজ?

আমি ক্যামনে কমু? এক গ্রামের বাসিন্দা হইলে হয়ত আঁচ করতে পারতাম। থাকি অন্য গ্রামে। আরেক গ্রামের খবর ক্যামনে কমু?

হুম! হক কথা বলেছেন মোমেন সাহেব। আচ্ছা ভিটা বাড়ি নিয়ে আপনাদের দুই ভাইয়ের মাঝে একটু সমস্যা চলছে শুনেছিলাম।

হ। চলছে।

একটু খুলে বলবেন বিষয়টা কি?

বিষয় কিছুই না। সেই ভিটা বাড়িটা আমার। হোসেনরে এতদিন থাকবার দিছি। অহন আর দিমু না। তাই ভিটা খালি করবার কইছি।

ভিটা কিভাবে আপনার হয়?

আব্বায় মরনের সময় লেইখা গেছে।

এবার জাফর হেসে বলল,

তাই নাকি! কিন্তু আমরা যে শুনলাম আপনার বাবা মারা যাওয়ার সময় জোর করে টিপছাপ নিয়ে নিয়েছেন।

মোমেন আমতা আমতা করে বলল,
এত বড় মিথ্যা কথা ক্যারা কইল?

জাফর বলল,
গ্রামের লোকেরা মিথ্যা বলবে? জমি জমা বেঁচে অন্য গ্রামে পাড়ি জমিয়ে এখন ছোট ভাইয়ের শেষ সম্বল নিয়ে টান দেওয়ার চেষ্টা?

মোমেন শরীরের সবটুকু শক্তি দিয়ে মাথা ঝাঁকাল। নিরূপমা বলল,
শাপলাকে মেরে ভিটা বাড়ি মেরে দেওয়াটাই আপনার উদ্দেশ্য ছিল। তাই না মোমেন সাহেব?

মোমেন এবার কেঁদে ফেলল। বলল,
এসব কি কইতাছেন ম্যাডাম? আমি আমার ভাতিজিরে ক্যান মারুম?

যে মানুষটা মৃত্যুশয্যায় বাবার টিপছাপ নিয়ে সব সম্পত্তি নিজের নামে করে নিতে পারে, সে একটি ভিটার জন্য খুন করতে পারবে না?

মোমেন হাউমাউ করে কেঁদে উঠল। বলল,
খোদার কসম কইতাছি! এই কাম আমি করি নাই। আমার ভাতিজিরে আমি খুন করি নাই!

নিরূপমা একরাশ সন্দেহ চোখে নিয়ে তাকিয়ে রইলো মোমেনের দিকে।

চলবে…..

লিখাঃ আতিয়া আদিবা

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here